Getting your Trinity Audio player ready...
|
‘অকল্পনীয়!’ বললো কুমার সাহা, ‘রাজ যে আমাদের ওর বাড়িত ডাকবে তা কোনদিন ভাবিনি!’
‘তাও আবার গেট টুগেদার পার্টিতে,’ বললো সুমিত সেন, ‘যখন কিনা আমরা চারজন ওর সব থেকে বড় শত্রু ছিলাম!’
‘ভাই এসব কলেজ দিনের কথা, এত বছর পর শুধু শুধু সেই আক্রোশ নিয়ে কেন থাকবে রাজ?’ বললো বারীন সান্যাল।
‘তাও যাই বলিস, ‘শান বিশ্বাস বললো, ‘আমি কিন্তু কুমারের সাথে একমত। আমাদের ওপর ওর আক্রোশ থাকাটাই স্বাভাবিক। আমার কথাটাই ভাব, কিরম ওর সাথে রাইমার সম্পর্কের ব্যাপারটা ক্লাসে জাহির করে দিয়েছিলাম!’
‘হ্যাঁ আর তারপর রাইমা আর কোনদিনও রাজের ধারে কাছে আসেনি,’ হাসল কুমার,
‘আমি একবার ওর বাবা-মার কাছে ওর ড্রাগসের নেশার ব্যাপারটা ফাঁস করে দিয়েছিলাম! ও আমাকে পরে মেরেই ফেলত!’
‘তবে আমাদের ব্যাপারটা বেশ উল্লেখযোগ্য, তাই না বারীন?’ বললো সুমিত।
‘হ্যাঁ… এপ্রিল ফুল ডে তে কলেজে আমি আর সুমিত রাজকে মিথ্যা বলেছিলাম যে আমরা খবর পেয়েছি ওর বাবা নাকি মারা গেছে। পরে জানতে পারলাম সেদিন নাকি সত্যি সত্যি ওর বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছিলেন! স্বাভাবিক ভাবেই রাজ আমাদের কু-মন্তব্যের জেরে আমাদেরই দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওর উদ্ভট দোষারোপের কোনো ফল হলো না ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেল,’ বললো বারীন, ‘এই এতদিন পর আবার কথা হলো রাজের সাথে’।
ঠিক তখনই রাজ বসু ঘরে প্রবেশ করলো। হাতে এক ট্রলি ভর্তি খাবার-দাবার।
‘কি নিয়ে কথা হচ্ছে?’ প্রশ্ন করলো রাজ।
‘কলেজের দিনগুলি মনে পড়ছিল, তাই নিয়ে কথা বলছিলাম,’ বলল কুমার, ‘তবে খিদে পেয়েছে ভীষণ, বাকি কথা খেতে খেতে হবে।’
সবাই সায় দিল।
চিকেন কাটলেটটা খেতে খেতে সুমিত বলল,
‘তুই এত ভাল রান্না করতে পারিস জানতাম না তো!’
রাজ বলল, ‘গত কিছু মাসেই ইউটিউব দেখে শিখেছি।’
‘অবাক হচ্ছি এই ভেবে যে তুই এককালে প্রফেসারদের মিমিক করায় বেশি দক্ষ ছিলিস, আর এখন রান্নাবান্না! অদ্ভুত!’ বলল সুমিত।
‘হ্যাঁ ঠিক….ঠিক ….ঠিক..’
শান হঠাৎ বলতে গিয়ে তার কথা আটকে গেল। ‘কি ব্যাপার বিশ্বাস?’ কুমার জিজ্ঞেস করল।
শান কাশতে কাশতে, শ্বাস না নিতে পেরে মেঝেতে পরে গেল।
সুমিত সেন ছিল কলকাতার একজন বিখ্যাত ডাক্তারের সেক্রেটারি। সে তৎক্ষণাৎ বিশ্বাসের নাড়ি পরীক্ষা করে গম্ভীরভাবে বললো-
‘হি ইজ ডেড!’
‘খাবারে বিষ মেশানো ছিল বলে মনে হচ্ছে?’ বলল সেন।
‘কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? এই হয় খুন বা আত্মহত্যা!’ চেঁচিয়ে উঠলো সান্যাল।
‘আত্মহত্যা সম্ভব না, ওরকম কোনও কারণ শানের থাকতে পারে না। আমি নিয়মিত ওর সাথে কথা বলতাম,’ বলল সাহা, ‘তাছাড়া আত্মহত্যা করার থাকলে সে নিজের বাড়িতে করত। এই হাউস পার্টিতে কেন করবে শুধু শুধু? এটা হল খুন, আর সেটা অবশ্যই করেছে রাজ!’
রাজ প্রতিবাদ করে উঠলো, ‘কি যা তা বকছিস? খাবারে বিষ মেশানো থাকলে তোদের সবার একই দশা হতো না কি? তুই ওর পাশেই বসে ছিলিস না?’ বলল সাহা, ‘তোর পক্ষে বেশি সুযোগ ছিল ওর খাবারে কিছু মেশানোর।’
‘কিন্তু আমি ওরম করবো কেন?’
‘কারণ ও তোর সাথে রাইমার সম্পর্ক ভেঙ্গে দিয়েছিল যেটার জন্য তুই বেশ কিছু মাস ডিপ্রেশনে ভুগছিলি। বদলা নেওয়ার জন্য তুই এই খুনটা করেছিস!’
‘পাগলের প্রলাপ!’ চিৎকার করে উঠল রাজ। চোখেমুখে জল দিয়ে আসতে হবে বলে সে করিডরের দিকে ছুটে গেল। বাথরুমের পথে নিশ্চয়ই।
‘কোথায় যাচ্ছে দেখতে হবে,’ বলে সান্যাল করিডোরের দিকে রওনা দিলো।
পাঁচ মিনিট কেটে গেল।
কেউ ফিরল না।
‘দাঁড়া আমি দেখছি,’ বলে সুমিত এগিয়ে গেল। আরও পাঁচ মিনিট কেটে গেল।
কুমার আর অপেক্ষা না করতে পেরে ব্যাপারটা তলব করতে যাবে এমন সময় গম্ভীর মুখে সুমিত ফিরে এলো। এসে যা বললো তা কুমারের কাছে খুবই অস্বাভাবিক লাগলো।
‘সান্যাল মৃত আর রাজকে পাওয়া যাচ্ছে না!’
রান্নাঘরে পড়েছিল সান্যালের মৃতদেহ। কাঠের মতো স্পন্দনহীন শরীরটা মেঝেতে পরে ছিল। কাছেই পরে একটা সিরিঞ্জ ভালো করে দেখে পরিষ্কার হয়ে গেল কেউ সান্যাল এর শরীরে বিষ ইঞ্জেক্ট করেছিল।
‘রাজটাকে হাতে পেলে শেষ করে দেব!’ গর্জে উঠল সেন, ‘হতচ্ছাড়াটা গেলো কোথায়?’
ঠিক তখনই পাশের ঘর থেকে একটি মৃদু শব্দ শোনা গেল। কিছু একটা মেঝেতে পড়লো কি? গুটি পায়ে দু’জন রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরের দরজার সামনে হাজির হল। কুমার দরজায় টোকা মারলো।
দু’বার… চারবার…
কোন উত্তর এলো না।
কুমার দরজাটা খোলার চেষ্টা করল এবং আশ্চর্যের বিষয় দরজাটি লক করা ছিল না! দরজার হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে মৃদু ঠেলা মারতেই দরজাটি খুলে গেল।
‘এ কি!’
ঘরে ঢুকতেই আর্তনাদ করে উঠলো কুমার।
সামনেই মেঝেতে পরে রাজ বসুর মৃতদেহ।
সামনে একটি ছোট বোতল। তার থেকে বেশ কিছু ট্যাবলেট ছড়িয়ে পড়ে আছে মেঝেতে।
‘আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে,’ বলল কুমার।
সুমিত সেন কোন উত্তর দিল না। সে রাজের নাড়ি পরীক্ষা করতে যাবে, এমন সময় বসুভবনের নিস্তব্ধতা চিরে একটি মহিলার বিকট অট্টহাসি শোনা গেল!
ঘটনাটি এমন আকস্মিক ঘটে গেল যে কিছুক্ষণ দু’জনেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল।
একেই নামকাওয়াস্তে একটা পার্টি, যেখানে একের পর এক লোক মরছে, তার ওপর এই ভৌতিক অট্টহাসি!
ক্ষণিক পর সম্বিত ফিরে পেয়ে তারা দরজা বন্ধ করে ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে ছুটে গেল। অট্টহাসি কখন থেমে গিয়েছিল তারা ঠাহর করতে পারেনি।
‘তার মানে কি একজন মহিলা এইসবের জন্য দায়ী?’ প্রশ্ন করল কুমার।
‘বিশ্বাস করা মুশকিল তবে ভয়ে যে পাইনি তা বলা ভুল হবে।’
‘হয়তো বাড়িতে সত্যিই কোনও মহিলা লুকিয়ে আছে… সে-ই খুনি… আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে?’
‘কিন্তু আওয়াজটা খুব সম্ভবত এই ঘর থেকেই এসেছিল! আমার যতদূর মনে–’
সুমিতের কথা শেষ হওয়ার আগেই সেই বিকট অট্টহাসি সারা ঘরটায় গম্ গম্ করে উঠলো।
আশ্চর্যের বিষয় ডাইনিং রুম থেকেই আওয়াজটি শোনা গেল! কিন্তু কাউকে দেখা গেল না!
ভয়ে আর্তনাদ করে উঠলো কুমার।
ঘরটি ছেড়ে পালাবার মতলব করে সে ডাইনিং রুমের দরজাটি খোলার চেষ্টা করল। কিন্তু–
‘এ কি! দরজাটি লক করলো কে?’ চিৎকার করে উঠল কুমার।
কিছুক্ষণ পর অট্টহাসি থামল।
‘অদৃশ্য মহিলাটি নয়তো!’ একটু হেসে বললো সুমিত।
‘আর কোনো রাস্তা নেই এই ভূতের বাড়ি থেকে বেরোনোর?’
‘তার জন্য বাড়িটা একটু সার্ভে করতে হবে।’
‘আগে বিশ্বাসের দেহটা সরাতে হবে। একেই এই ভূতুড়ে উপদ্রব তার ওপর চোখের সামনে মৃতদেহ! উহ!’
দু’জন মিলে বিশ্বাসের মৃতদেহটি টানতে টানতে নিয়ে গেল রান্নাঘরের পাশের ঘরটায় যেখানে রাজের দেহটা দেখে ছিল ওরা। কুমার দরজা খোলার চেষ্টা করলো, কিন্তু পারলো না।
‘কি ব্যাপার? আমি তো শুধু দরজাটা বন্ধ করেছিলাম, লক তো করিনি! তাহলে খুলছে না কেন?’
দরজায় ধাক্কা দিতেও খুললো না।
‘এ কি অবস্থা!’ বলে কুমার রান্নাঘরেই বিশ্বাসের মৃতদেহ রেখে দিল। কিন্তু–কিন্তু–
‘সান্যালের মৃতদেহ কোথায়?’
চিৎকার করে উঠল কুমার।
হঠাৎ বাড়িতে যেটুকু আলো জ্বলছিল সব বন্ধ হয়ে গেল!
ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভরে গেল রাজ বোসের বিভীষিকাময় বাড়িটি।
দু’জনেই মোবাইল ফোন বার করলো। কাউকে যে কল করবে তারও জো নেই। বসুভবনের আশেপাশে সেইরকম জনবসতিই নেই, নেটওয়ার্ক পাওয়া তো দূরের কথা। অগত্যা মোবাইলের ব্যবহার তাড়া করল মোবাইল টর্চটি জ্বালিয়ে।
সুমিত বলল, ‘কুমার তুই খোঁজ তো কোনো ব্যাকডোর জাতীয় কিছু আছে কিনা। আমি দোতলায় গিয়ে একটু সার্ভে করে আসছি। যদি রহস্যের কোন কিনারা করতে পারি!’
‘তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস নাকি! আমার সাথে চল তুই!’ গর্জিয়ে উঠলো কুমার।
‘ট্রাস্ট মি!’ বলে চলে গেল সুমিত।
কুমার দুরুদুরু বুকে করিডোর দিয়ে হাঁটতে লাগল। রান্নাঘরের ডানদিকেও বেশকিছু ঘর ছিল। সবগুলোই তালাবন্ধ। তাও সে হাঁটতে লাগলো, বাইরে বেরোনোর উপায় খুঁজতে।
ওদিকে সুমিত ডাইনিং রুমে চলে গেল। সেখানে দোতলায় যাওয়ার সিঁড়ি ছিল। টর্চের আলোয় সাবধানে সিঁড়ির ধাপগুলি বেয়ে পৌঁছলো দোতালায়।
ঘুটঘুটে অন্ধকার। মোবাইল টর্চের আলোয় দেখা গেল সেখানেও বেশকিছু ঘর ছিল। সবগুলোতেই তালা দেওয়া কি? না… একটা ঘরে তালা ছিল না। বরং সামান্য খোলাই ছিল। কেউ কি সম্প্রতিই সেই ঘরে ঢুকেছিল?
কৌতূহল সামলাতে না পেরে সুমিত দরজাতে ঠেলা মারলো। বিকট শব্দে দরজা খুলে গেল। কিছু অস্বাভাবিক ঘটলো না।
হঠাৎ আলো একদম সামনে ফেলতেই চমকে উঠল সুমিত।
সামনে একটি সোফা। কিন্তু সোফাটি সুমিতের উল্টো দিকে মুখ করে রাখা ছিল।
তাতে কেউ বসে আছে কি?
হ্যাঁ… লম্বা চুল.. উল্টো দিকে মুখ করে বসে আছে।
খুব সম্ভবত, একজন মহিলা।
কুমার শেষ পর্যন্ত একটি ঘর দেখতে পেল যেটির দরজায় তালা লাগানো ছিল না। দরজা খোলার কোন ইচ্ছে ছিল না তার, কিন্তু কোনো অলৌকিক প্রভাবের দরুন সে ঘরে প্রবেশ করার তাগিদ অনুভব করল।
‘এই একটি দরজায় তালা নেই, তবে কি এটাই কোনভাবে বাইরে যাওয়ার পথের হদিস দিতে পারে?’ ভাবল কুমার।
সে দরজাটি খুলে ঘরে প্রবেশ করল।
ঘুটঘুটে অন্ধকার।
টর্চের আলোয় বোঝা গেল এটি বেশ সুসজ্জিত একটি ঘর। কিছুটা ভেতরে যেতেই দরজাটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল!
হাড় হিম হয়ে উঠল কুমারের।
ঘরের একমাত্র জানালা তো বন্ধ, হাওয়ায় বন্ধ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে দরজা বন্ধ হলো কি করে? কুমার ভয়ে পেছনে আর টর্চের আলো ফেললো না। সামনে এগোনোর সাহসও পেল না। তার সামনেই একটি টেবিল ছিল। টেবিলের ওপর রাখা একটি বই।
নারায়ণ সান্যালের “বিশ্বাসঘাতক।”
কিছুক্ষণ ধরেই একটি অদ্ভুত খেয়াল মাথায় এসেছিল কুমারের, বইটি দেখে আবার সেই ভাবনা মাথায় চাড়া দিয়ে উঠল।
“বিশ্বাসের পাশে রাজ বসেছিল ঠিকই, কিন্তু ডান পাশে তো সুমিতও বসেছিল! তার পক্ষেও তো বিষ মেশানো সম্ভব। তাছাড়া সুমিত দেখতে গিয়েছিল রাজ ও সান্যাল ফিরছে না কেন। কিন্তু তার জন্য পাঁচ মিনিটও লাগেনা, সে তো খুব বড় জোর এক মিনিটের কাজ। এই দেরি টা হল কেন?
আরেকটা ব্যাপার… সান্যালকে খুন করার জন্য রাজের কোনও বিষ দরকার পড়বে কেন? সবার আড়ালে যখন ছুরি জাতীয় কিছু অস্ত্র তার পক্ষে ব্যবহার করা সহজ, সে শুধু শুধু বিষ ইঞ্জেক্ট করবে কেন? বরং সুমিতের পক্ষে সেটা ব্যবহার করা বেশি স্বাভাবিক মনে হয়। সে ডাক্তারের অ্যাসিস্ট্যান্ট, নিজেই কিছু ডাক্তারি জানে। সুতরাং বিষের বিষয়ে তার বেশ কিছুটা জ্ঞান থাকাটাই স্বাভাবিক। তাহলে কি–”
আর কিছু ভাবতে পারার আগেই, কুমার তার ঘাড়ে পিন ফোটার মতো একটি আঘাত পেল। পরক্ষণেই সে মেঝেতে পড়ে গেল।
বিষের প্রভাবে মুহূর্তের মধ্যেই সে প্রাণ হারালো।
অন্ধকারে ওই মহিলাকে দেখে সুমিত প্রথমে আঁতকে উঠেছিল।
কেউ ওরম একা ঘরে বসে কি করছে?
সুমিত পা টিপে টিপে এগোতে লাগলো।
‘কে ওখানে?’–হাঁক দিল সে।
কোন উত্তর এলো না।
হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ সুমিতের পায়ে কি একটা ঠেকলো।
মোবাইল টর্চের আলো ফেলে দেখল, একটি বন্দুক পড়ে আছে মেঝেতে।
প্রথমে ব্যাপারটা অদ্ভুত ঠেকলেও, পরমুহুর্তেই সে বন্দুকটা তুলে নিল হাতে। আরেকবার ‘কে ওখানে’ বলতেও যখন কোনো উত্তর এলো না, তখন সুমিত গণ্ডগোল আন্দাজ করে হঠাৎ বন্দুকটা চালিয়ে দিল মহিলাটির দিকে!
তাতে যা ঘটলো তা দেখে সুমিতের হাড় হিম হয়ে গেল।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও রক্তের কোন চিহ্ন তো দেখা গেলোই না, বরং সামান্য এগোতেই সুমিত দেখলো মেঝেতে পড়ে আছে, একটি নরকঙ্কাল! পাশে পরে ফলস্ চুল।
ব্যাপারটা আন্দাজ করতেই আরেকটি জিনিস চোখে পড়ল তার।
সোফার সামনে, একটি কাঠের টেবিলের ওপর রাখা একটি ফ্রেমে বাঁধানো ছবি।
রাইমার ছবি।
সামনে একটি কাগজে লাল কালি দিয়ে লেখা কিছু শব্দ–
“আমাকে মেরে শান্তি তো তোর?”
সুমিতের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল। তার মনে হলো সে তখনিই জ্ঞান হারাবে। কিন্তু কোনওভাবে নিজেকে সামলে, সে পড়ি কি মরি ছুটে ঘর ছেড়ে পালালো। হাতে অবশ্য বন্দুকটা নিয়ে। কে জানে, আর কোন বিপদের মোকাবিলা করতে হবে তাকে!
অন্ধকারেই সে কোনোভাবে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সে টাল না সামলাতে পেরে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে গেল মেঝেতে। মাথায় দারুণ চোট লাগল তার।
হঠাৎ ডাইনিং রুমের আলোগুলো জ্বলে উঠলো। সুমিত যেন হুঁশ ফেরত পেল।
সে কোনোভাবে মাথার চোটকে অগ্রাহ্য করে হাতে বন্দুকটি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
করিডোরের দিকে এগোতে যাবে, এমন সময়– “ধপ! ধপ! ধপ!”
কেউ হাঁটছে করিডোর দিয়ে।
ডাইনিং রুমের দিকেই আসছে। কারণ আওয়াজটা বেড়েই চলেছে।
‘কুমার?’ চেঁচিয়ে উঠলো সুমিত।
করিডোরের দিকে যাওয়ার সাহস নেই তার। কোনও উত্তর এলো না।
পরমুহুর্তেই প্রবেশ করল একজন।
পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যেই নিজের কপালে বন্দুকের শেষ গুলি চালিয়ে দিল সুমিত।
পরদিন সকাল বেলা বসুভবনের সামনে দু’টি পুলিশের গাড়ি এসে থামল। আধঘণ্টা আগে একটি ১০০ নম্বরে কল এসেছিল বসু ভবনের নিকটতম পুলিশ স্টেশনে। একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি বসুভবনে কিছু মৃতদেহ পাওয়া গেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছিল। কিন্তু যে ফোন করেছিল তাকে বসুভবনের আশেপাশেও পাওয়া গেল না। বরং একটা মোবাইল ফোন পাওয়া গেল বসুভবনের পিছনে। পরে জানা গেল ওই মোবাইল থেকেই কল্ করা হয়েছিল।
বাড়ির ভেতরে ঢুকলেই লিভিং রুম। সেখানে কিছুই অস্বাভাবিক দেখা গেল না। সামনে একটি দরজা বন্ধ করা। কিন্তু আনলক্ড। দরজা ঠেলতেই সামনে একটি ডাইনিং টেবিলের উপর বেশ কিছু আধখাওয়া খাবার দেখতে পেল পুলিশ। টেবিলের একটু পাশেই সিঁড়ির সামনে পড়ে একটি মৃতদেহ। পাশে একটি বন্দুক। ‘আত্মহত্যা?’ জিজ্ঞেস করল সাব-ইন্সপেক্টর রাজন।
‘তাই তো মনে হচ্ছে,’ বলল ইন্সপেক্টর গাঙ্গুলী। ‘বাকি লাশগুলো কোথায়?’
‘সার্চ করতে হবে,’ বলল গাঙ্গুলী।
রাজন সমেত একজন কনস্টেবল করিডোরের দিকে গেল। গাঙ্গুলী অন্য কনস্টেবলকে সাথে করে গেল দোতালায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি ঘরে কঙ্কালসহ একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করলো ওরা। ফোন খুলতেই হোমস্ক্রিনের জায়গায় “ভয়েস রেকর্ডার” অ্যাপটি খুললো। তাতে একটিমাত্র রেকর্ডিং সেভ করা আছে– “আমি সুমিত সেন বলছি। আমি বসুভবনে কিছু বন্ধুর খুন করবো। আমি জানি আমি ধরা পড়তে পারি। তাই অবস্থা বুঝে আমি আত্মহত্যাও করে নেব। কিন্তু বদলা না নিয়ে তো ছাড়বো না। আর একবার মরে গেলে ধরাও পড়বো না! দিস ইজ্ হোয়াট আই কল্ এ পারফেক্ট মার্ডার প্ল্যান! চলি! বসুভবনে যেতে হবে যে!”
– “আমি কোনো লেখক নই। তবু একটা গল্প লিখতে চাই। একটা পারফেক্ট মার্ডারের গল্প। গল্পে পাঁচটি চরিত্র। পাঁচটি বন্ধু। রাজ, কুমার, সুমিত, শান ও বারীন। তারা স্কুল ফ্রেন্ড ছিল। কলেজেও তারা একসাথে পড়েছে। তাদের মধ্যে একজন ছিল খুবই ধনী পরিবারের ছেলে। রাজ। তাই জন্যই হয়তো কলেজে পড়ার সময় ওকে বাকি চারজন কিছুটা হিংসেই করত। রাজকে হেয় করার বা বিপদে ফেলার কোনো সুযোগই ছাড়তো না তারা। কিন্তু তাতে রাজের বিশাল ক্ষতি হয়েছিল। সে ডিপ্রেশনেও ভুগেছিল কিছু বছর। রাজ এই বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নিতে পারেনি। ভবিষ্যতে সেই চারজনই উচ্চপদস্থ কাজ করে স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করতে লাগলো, কিন্তু রাজ একটি সামান্য কেরানি হয়ে রইল। এই জিনিসটাও সে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। বসুভবন তার ঠাকুরদার বানানো। পয়সার অভাবে রাজ সেই বাড়িটির দেখাশোনাও করতে পারছিল না। বহুদিন তার বন্ধুদের প্রতি আক্রোশ পুষে রেখেছিল রাজ। শেষ পর্যন্ত রাজ তাদের শেষ করার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু কিভাবে করবে তা বুঝে উঠতে পারেনি। প্রথমে কিছু বছর সে বিভিন্ন বিষক্রিয়া সম্পর্কে পড়াশোনা করল। অবশেষে অনেক বছর পর একটি প্ল্যান বানালো সে। বসুভবনকে তার প্ল্যানের কেন্দ্রবিন্দু বানালো সে।
অনেক কাকুতি-মিনতি করে চারজনকে বসুভবনের হাউস পার্টি তে ডাকলো। বললো, এত দিন আগের ব্যাপার সে সব ভুলে গেছে। এবার বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে চায়। চারজন রাজি হলো। তারা সময়মতো একসাথে গেল বসুভবনে। রাজ প্রথমে সবাইকে এক গ্লাস শরবত খাওয়ালো। বিশ্বাসের গ্লাসে সে আগে থেকেই বিষ মিশিয়ে রেখেছিল। বিষক্রিয়া সম্পন্ন হতে কিছু সময় লাগতো, আর সেটা হল ডাইনিং টেবিলে খাবার সময়ে। রাজ সবার গ্লাসেই বিষ মেশাতে পারত, কিন্তু অত সহজে কাজটা করতে চায়নি। সে একটা নাট্যরূপ দিতে চেয়েছিল তার জোরালো প্ল্যানে। সে কখনোই চাইত না সন্দেহটা তার ওপর পড়ুক। তাই সে একটি ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি করল, যাতে তার বন্ধুরা মনে করে এইসব কোনো ভূতের উপদ্রব, রাজের কোন হাত নেই। আসলে ব্যাপারটা সাইকোলজিক্যাল। রাজ তার বন্ধুদের সাইকোলজি ভালোভাবেই জানতো। তারা কোন অবস্থায় কি রকম সিদ্ধান্ত নিতে পারে তা ভালোভাবেই আন্দাজ করেছিল ও। রাজ জানতো বিশ্বাসের মৃত্যুর পর সবাই ওকেই সন্দেহ করবে। সে তৈরিই ছিল। চোখেমুখে জল দেওয়ার বাহানায় সে করিডোরের দিকে চলে গেল। সে জানতো সান্যাল ব্যাংকে চাকরি করলেও সে ছোটবেলা থেকে গাদা-গুচ্ছের গোয়েন্দা গল্প পড়ে নিজেকে গোয়েন্দা বলে মনে করত। রাজ আন্দাজ করেছিল সান্যাল একাই ওর পিছু নেবে। সবাই একসাথে এলে তাদের শেষ করার জন্য প্ল্যানও ছিল। সৌভাগ্যবশত, সেটার প্রয়োজন পড়লো না। সান্যাল একাই এল। দেখল রাজ রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছে। রাজ আগে থেকেই একটি জায়গা থেকে তার কিউরারি ভরা সিরিঞ্জ হাতে লুকিয়ে রেখেছিল। সান্যাল কাছে আসতেই সে সিরিঞ্জটি ইঞ্জেক্ট করে দিল তার হাতে। কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই, সান্যাল প্রাণ হারালো। রাজ তারপরই পাশের ঘরটাতে প্রবেশ করে মেঝেতে পরে মৃত হবার ভান করল। একটি ড্রয়ার থেকে অ্যাসপিরিনের শিশি বের করে মেঝেতে ফেলে দিল। সে জানতো এরপর কুমার ও সুমিত দু’জনেই ওর খোঁজে আসবে। সে যখন রান্নাঘরে দু’জনের গলা শুনতে পেলো তখন একটা আওয়াজ করলো যাতে দু’জনে এই ঘরেই প্রবেশ করে রাজকে মৃত বলে মনে করে। রাজ যখন বুঝল ওরা এদিকেই আসছে তখন সে তাড়াতাড়ি পকেট থেকে একটা ছোট্ট রিমোট বার করে প্লে বাটন টিপে আবার পকেটে রেখে দিল। কুড়ি সেকেন্ড পর সুমিত রাজের নাড়ি পরীক্ষা করতে পারার আগেই ডাইনিং রুমের দেওয়ালে লুকানো কিছু স্পিকার থেকে একটি ভৌতিক অট্টহাসির শব্দ বের হল। ঠিক যেমনটা রাজ প্ল্যান করেছিল। রাজ জানতো ওরা ভড়কে যাবে। ওরা রাজকে মৃত কি না যাচাই না করেই দরজা বন্ধ করে ছুট দিল ডাইনিং রুমের দিকে। ওদের প্রস্থানের পরেই, রাজ তার দ্বিতীয় চাল চললো। সে রান্নাঘরে গিয়ে সান্যালের মৃতদেহটি টেনে পাশের ঘরটায় রেখে দিল। যেখানে সে আগে পড়েছিল। তারপর দরজাটি লক করে দিল। তাতে কুমার ও সুমিত আরও ভড়কে যাবে। ডাইনিং রুম থেকে বাইরে যাওয়ার দরজাটা রাজ শুরুতেই লক করে দিয়েছিল সবার আড়ালে, যখন সবাই শরবত খেতে খেতে বাড়ির এদিক-ওদিক দেখতে ব্যস্ত ছিল। আলো চলে যাবার ব্যাপারটা নেহাতই কাকতালীয়। সেটি একটি সামান্য ব্ল্যাকআউট ছিল। রাজ তাতে ভারি খুশিই হয়েছিল। ভূতুড়ে সেট-আপটি আরও জমে উঠেছিল বলে! যতক্ষণে কুমার ও সুমিত সান্যালের মৃতদেহ আবিষ্কার করলো, ততোক্ষণে রাজ অন্য একটি ঘরের তালা খুলে তার ভেতর লুকিয়ে পড়েছিল। আবার সে তার বন্ধুদের সাইকোলজি বুঝে কাজ করলো। সে জানতো বাড়ি ছেড়ে পালানোর জন্য তারা রাস্তা করতে বাধ্য হবে। খুব সম্ভবত একজন একতলা আর একজন দোতলায় খোঁজ করবে। কুমার একটু বেশিই ভীতু, সে জানতো। সুতরাং কুমার কখনোই ওপরের তলায় যাবে না যদি না সুমিত সাথে যায়। কিন্তু রাজের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল কুমার এই তলাতেই খোঁজ করবে। সুমিতের দোতলায় যাওয়ার ব্যাপারেও সে অতটা আশাবাদী ছিল না তাও সে দোতলার সেট আপটাও করে রেখেছিল। বন্দুকটা ইচ্ছে করেই রেখেছিল, যাতে সুমিত সেটা নেয়। কেন, সেটার কথায় পরে আসছি।
আগে কুমারের মৃত্যুর ব্যাপারে কথা বলা যাক। রাজ যে ঘরের ভেতর লুকিয়ে ছিল সেটি আনলক্ড রাখলো। সে আন্দাজ করেছিল এই একটিমাত্র আনলক্ড দরজা দেখে কুমার বাইরে যাওয়ার কোনো উপায়ের আশায় নিশ্চয়ই খোলার চেষ্টা করবে। আর তাই-ই হল। কুমার ঘরে প্রবেশ করল। একটু পাশেই দাঁড়িয়েছিলো কুমার। একটু সামনে হেঁটে গেল রাজ। তখনই দরজাটি বন্ধ করে দিল রাজ। সে আন্দাজ করেছিল কুমার পেছনে আলো ফেলবে না, কারণ সে ভয়ানক ভীতু। ভাগ্যিস, ওর ধারনা ভুল ছিল না। এরপর কুমার দেখল সামনে টেবিলের ওপর রাখা একটি বই। “বিশ্বাসঘাতক।” এই বইটি রাখার পেছনে রাজের বেশ কিছু কারণ ছিল। ওই একটি বইয়ের শিরোনামে তার পুরো মার্ডারের প্ল্যান এবং মোটিভ লুকানো ছিল। বিশ্বাসঘাতক। এটি একটি কারণ ছিল চারজনকে হত্যা করার জন্যে। দ্বিতীয়ত, সে জানতো কুমার সন্দেহবাতিক মানুষ। রাজের ধারণা ছিল সে এমন করেই তার প্ল্যান সাজিয়েছিল, যাতে কুমার সুমিতের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হয়। সেই ধারণাটা বদ্ধমূল করার চেষ্টায়ও রাজ বিশ্বাসঘাতক বইটা রেখেছিল। রাজ যদিও নিশ্চিত ছিল না কুমার সুমিতকে সন্দেহ করবেই, কিন্তু কুমার বইটার দিকে একমনে চেয়ে আছে দেখে তার মনে হলো প্ল্যান কাজে দিয়েছে। এর পরেই সে আরেকটি কিউরারি ভরা সিরিজ ইঞ্জেক্ট করল কুমারের ঘাড়ে। কুমার মরলো, কিন্তু তার বন্ধুর ওপর বিশ্বাস ভাঙ্গার পরেই। আর সেটাই রাজ চেয়েছিল। বইটি রাখার পিছনে একটি তৃতীয় কারণও ছিল। তা ছিল, বিশ্বাসঘাতকতার প্রত্যুত্তরে বিশ্বাসঘাতক করে চারজনকে শেষ করে বদলা নেওয়া।
এবার আসা যাক সুমিতের কেসে। রাইমার ব্যাপারটা রাজ ইচ্ছা করেই সাজিয়েছিল। ভৌতিক অট্টহাসিটি যে রাইমার-ই, সেই ধারণা সুমিতের মাথায় বদ্ধমূল করার ব্যবস্থা করেছিল রাজ। ভড়কে গিয়ে সুমিত আবার ফার্স্ট ফ্লোরে নেমে গেল। এবার রাজ তার প্ল্যানের শেষ দেখতে চলেছিল। সে কুমারকে খুন করার পরে রান্নাঘরে লুকিয়ে ছিল। সুমিতের হোঁচট খেয়ে মেঝেতে পড়ার শব্দ শুনে রাজ ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে গেল। সুমিত তার শেষ শিকার। কিন্তু সুমিতের ক্ষেত্রে রাজের অন্য পরিকল্পনা ছিল। রাজ আগে থেকেই ঠিক করেছিল তার পারফেক্ট মার্ডারের পরদিন সকালবেলায় সে বসুভবন থেকেই পুলিশকে এই ব্যাপারে ফোনে জানাবে। তারপর ফোনটি বাড়ির পিছনে ফেলে দেবে, যাতে তার হদিশ কেউ না পায় এবং পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে সুমিতকেই খুনি হিসেবে দেখানোর মতলব ছিল রাজের। সেটার জন্য দু’টি জিনিস লাগবে। এক– রাজের স্বীকারোক্তি। সেটি রাজের বাঁ হাতের কাজ। সে অসাধারণ মিমিক্রি করতে পারত। সুমিতের মিমিক করা এমন কোন বড় কাজ না। দোতলায় তার মোবাইলটি পেয়ে তার কাজটি আরও সোজা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় কাজটি হবার চান্স খুব কম বলে মনে করেছিল রাজ। আর সেটি ছিল সুমিতের আত্মহত্যা। রাজ সুমিতের গলায় যে মিথ্যে স্বীকারোক্তি রেকর্ড করেছিল, সেটা অনুযায়ী সুমিতের আত্মহত্যা না হলে পুলিশকে বিশ্বাস করানো মুশকিল হত, যে সুমিতই খুনি।
আবার সুমিতকে খুন করে সেটিকে আত্মহত্যার চেহারা দেওয়াটাও বেশ কঠিন কাজ ছিল। তাই রাজ চেয়েছিল সুমিত যেন কোনোভাবে সত্যিই আত্মহত্যা করে।
রাজ সেই উদ্দেশ্যেই বন্দুকটা দোতলার ঘরটায় রেখেছিল। সে জানতো নিজেকে অসহায় মনে করে সুমিত বন্দুকটা ওঠাবেই এবং প্রথমে কঙ্কালটার দিকে চালাবে। কিন্তু রাজ চেয়েছিল দ্বিতীয়বার সুমিত নিজের কপালেই যেন বন্দুকটি চালায়। তাই জন্যই রাজ ডাইনিং রুমে সুমিতের সামনে হাজির হল, এই ভেবে, যে সুমিত রাজকে ভূত বলে মনে করবে এবং নিজেকে সম্পূর্ণরূপে অসহায় বোধ করে আত্মহত্যা করে ফেলবে। যদিও রাজের পকেটে একটা ছুটি ছিল সেটার আর দরকার পরল না। রাজের প্ল্যান সম্পূর্ণরূপে সফলতা লাভ করেছে। যে চারজন তার জীবন দুর্বিষহ বানিয়েছিল, তারা সবাই মৃত।
আমার কাহিনীও এখানেই শেষ। আশা করি গল্পটা আপনাদের ভালো লাগবে, যদি আদৌ এই লেখাটা কেউ পায়! এটি আমি খুবই গোপন জায়গায় লুকিয়ে রাখবো। কেউ পাবে বলে আমি আশা করছি না। যদিও বা কেউ পায়, সে যেন এই কাগজটি পুড়িয়ে দেয়। এটা না লিখলে আমি শান্তি পেতাম না। তাই লিখলাম। আমি খুনি নই, আমি কেবল বিশ্বাসঘাতকতার বিরোধী। আমার নাম রাজ বোস। হ্যাঁ, আমি আমারই কাহিনী লিখেছি। এবার বিদায় জানাবার পালা। আসি!”
লেখাটি রাইমা পোড়ালো না। ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন করে দিল।