|
Getting your Trinity Audio player ready...
|
ডাক্তারি পাশ করার পর শহরেই প্র্যাকটিস করছিলাম কয়েক বছর। তবে গ্রামের দিকে ডাক্তারি করার অভিজ্ঞতা ছিল না কোনদিনই। যাবার ইচ্ছে যে একেবারেই ছিল না, তা নয়। তবে বদলির আর্জি দাখিলের আগে ভাবলাম, যদি না ভালো লাগে তখন উপায়? ঘন ঘন তো আর বদলির মঞ্জুরি পাবো না। তাই আর খোঁচা না দিয়ে “কলের কোলকাতা” তেই প্র্যাকটিস করছিলাম। সুনামও ছিল। কিন্তু গ্রামের হাসপাতালে যাওয়ার ইচ্ছাটা একেবারে মন থেকে মুছে দিতে পারিনি তখনও। তবে, ভগবান বোধ করি সকাল সকাল প্রাতঃভ্রমণে বেড়িয়েছিলেন। এমনভাবে আমার অন্তরাত্মার গোপন বাসনা যে তাঁর কানে যাবে, সেটা ভাবতে পারিনি। আর তার ফল যে কি হয়েছিল, সেটা এতো বছর পর এখনও ভাবলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। আজ হঠাৎ সেই দিনটার কথা মনে পড়ে গেল।
আমার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিক্যাল ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলগুলিতে।
ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্যদের দল তৈরি করে পাঠানো হচ্ছিল একমাসের জন্য। একসময় আমার পালাও এল। আমি ও আমার সতীর্থ ডাঃ ব্যানার্জী একটি দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করলাম। চিঠি পাওয়া মাত্র বুঝলাম, এক সপ্তাহের মধ্যে যাবতীয় যোগাড় সারতে হবে। বাড়িতে আমার জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করলাম। না, চাকর যে নেই তা নয়। তবে আমি নিজের কাজটুকু নিজেই গুছিয়ে নিই।
গ্রামে যাচ্ছি শুনে আমার এক পুলিশ বন্ধু আমাকে একটা পিস্তলের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। আমিও ভেবেছিলাম, অসময়ে কাজে লাগবে, তাই সেটাকেও সাথে করে নিয়ে নিলাম। হাসপাতালে পৌঁছে ডাঃ ব্যানার্জীর সাথে আলোচনা করার পর ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম লিস্ট করে, দলের এক সদস্যের হাতে দিলাম যোগাড় করার জন্য। দুপুর বেলা লাঞ্চ আওয়ারের সময় আমি আর ব্যানার্জী এক টেবিলেই খেতে বসেছি, ক্যান্টিনে। বেয়ারা এসে খাবার দিয়ে যাবার পর ব্যানার্জী বলল,
– “কি! কেমন লাগছে? এবার সখ পূরণ হল তো?” আমি বললাম, “তা বলতে পারো। না হয়
একমাসের জন্য, তবু তো গ্রামের হাসপাতাল, গ্রামের মানুষজনের চিকিৎসা – এর মধ্যেই কাটবে।
তা, তোমার কেমন লাগছে সেটা শুনি!” ব্যানার্জীর সাফ উত্তর, “মোটামুটি। আমি যদিও তোমার মত অতটা পাগল ছিলাম না গ্রাম পরিদর্শনের। তবে হ্যাঁ, এই ধোঁয়া ধুলোর থেকে বেশ খানিকটা দুরে ভালো হাওয়া বদল হবে ভায়া। হয়তো খাওয়া বদলটাও মিলতে পারে সাথে সাথে। কি বলো হ্যাঁ? হা হা হা হা।” আমিও হাসলাম তার কথার সমর্থনে। খাওয়া শেষে আবার কাজে লেগে পড়লাম দু’জনে।
ব্যানার্জীর সাথে সখ্যতাটা বেশ ভালো রকমেরই। তাই আমার এই ‘গ্রাম গমন’এর ইচ্ছাটা তার জানা ছিল।
দেখতে দেখতে যাত্রার দিন উপস্থিত হল। সব জিনিসপত্র গাড়িতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে আমি আর ব্যানার্জী গাড়িতে উঠে বসলাম। আমরা একটা গাড়িতে যাচ্ছি, আর একটা গাড়িতে বাকিরা আর সাথে সব জিনিসপত্র। ঠিকানা দেখে যা বুঝলাম, তাতে করে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে যাবার কথা পৌঁছতে পৌঁছতে। গাড়িগুলো স্টেশনে এসে থামল। ট্রেনে সিটের রিজার্ভেশন আগে থাকতে করা ছিল, তাই রক্ষে। না হলে আর দেখতে হত না! চোখ বন্ধ করে কপালে ছিল দাঁড়িয়ে যাওয়া। জিনিসগুলো ট্রেনে চাপিয়ে আমরাও স্ব-স্থানে গিয়ে বসলাম। ট্রেনও কিছুক্ষণ পড়ে ছেড়ে দিল।
পৃথিবীতে সকলের নিজস্ব দায়িত্ব যেমন থাকে, তেমন তাদের কিছু স্বভাবও থাকে। সূর্যের স্বভাব আলো দেওয়া, সমুদ্রের স্বভাব ঢেউ দেওয়া, আর ট্রেনের স্বভাব লেট করা। এই ট্রেনটির বেলাতেও তার অন্যথা হবে কি? যখন গন্তব্যে পৌঁছলাম, রাত্রি আন্দাজ আটটা। স্টেশনে হাসপাতালের চাপরাশির আসার কথা। আমরা নেমে দেখলাম সে স্টেশনের বেঞ্চিতে শুয়ে আছে। আমাদের আসতে দেখে ধড়মড়িয়ে উঠে কাছে এল। এসে বলল, “আসুন বাবুরা। গাড়ি তৈরি আছে।” আমরাও ধীরে ধীরে এগোতে লাগলাম।
জায়গাটা দেখলেই মনে হয় যেন পাণ্ডব-বর্জিত দেশ। স্টেশন মাস্টারের ঘরখানা যেন জীর্ণতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার ভাঙাচোরা শরীরখানা নিয়ে। চত্বরে কোন আলো নেই। স্টেশনের নাম লেখা ফলকটি একদিকে হেলে পড়েছে। আমাদের কাছে টর্চ ছিল। তাই জ্বেলে দেখলাম, বোর্ডের লেখাখানা রোদে জলে অস্পষ্ট হয়ে গেছে, তবে পড়া যায়। ব্যানার্জী একটু পড়তে চেষ্টা করল। ‘কালীনগর!’
আওয়াজটা শুনেই হঠাৎ চমকে উঠলাম রীতিমতো। লন্ঠন হাতে চাপরাশি আমাদের জানালো, বহু বছর আগে জমিদার কালীপ্রসন্ন রায়ের নামেই হয় এই কালীনগর। ব্যানার্জী এদিকে আবার গোরুর গাড়ি দেখে তো প্রথমে রীতিমত “থ” আর পরে “টং” হয়ে গেল। আমি তাকে বোঝালাম, “আরে চিন্তা নেই, ঠিক তুমি তোমার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। গাড়োয়ান পাকা লোক। তোমার কাজ তো শুধু বসে বসে যাওয়া। আর আমিও তো সাথে আছি নাকি! বাকিরাও আছে। অতএব চলো।” ব্যানার্জী আমার কথায় কিছুটা আশ্বস্ত হল। জিনিসগুলো পেছনের গাড়িতে তুলে দিয়ে আমরা আগের গাড়িতে উঠে বসলাম ও গাড়িও দুলকি চালে চলতে শুরু করল। বাকি সকলে বোধ করি পথশ্রমে ক্লান্ত থাকার দরুন কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। আমি গোরুর গাড়ির ‘ছই’ এর ভেতর থেকে বাইরের দৃশ্য দেখতে চেষ্টা করছিলাম। ব্যানার্জী লক্ষ করেছে কিনা জানিনা, তবে আমার কেন জানিনা বাইরের দৃশ্য দেখে মনে হতে লাগল, কেমন যেন খাপছাড়া গোছের। না পুরোপুরি সাজানো, না পুরোপুরি উজাড় হয়ে যাওয়া——কেমন বেখাপ্পা চেহারা যেন এই কালীনগরের। পাশেই নাকি একটা জঙ্গল আছে বলে শুনলাম। তবে জন্তু-জানোয়ার তেমন নেই। গাড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম, “কদ্দুর হে?” সে অতি বিনয়ের সঙ্গে জানাল, “আজ্ঞে আর বেশি দূর নয় গো বাবু। এয়ে পড়িচি।” হঠাৎ আমার নজরে এল একটা ভাঙ্গা তোরণ। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দণ্ডায়মান বলে মনে হতে পারে। ইতিমধ্যেই গাড়ি থামিয়ে গাড়োয়ান বলল, “বাবু, আমরা এয়ে পড়িচি। আসেন। আমি মালপত্তর রাখার ব্যবস্থা করতিচি।”
সকলে নেমে পড়ে আমাদের গন্তব্য, সেই বাসভবনটির দিকে তাকালাম। পুরোনো দিনের এক প্রকাণ্ড তিনতলা বাড়ি। নীচের তলায় হাসপাতাল, উপরের তলায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। বাড়িখানা দেখে ‘ইতিহাস প্রসিদ্ধ রাজপ্রাসাদ’ বললে খুব ভুল হবে না। গাড়োয়ান আসতেই বাড়ি থেকে এক বুড়ো চাকর বেরিয়ে এসে আমাদের প্রণাম জানাল। জানতে পারলাম, সেই এই বাড়ি দেখাশোনা করে আর যাবতীয় সব কাজকর্মও করে। তার নাম রামভজন। সে আমাদের থাকার ঘর দেখিয়ে দিল। ঘরগুলো বেশ পরিপাটি করে সাজানো, আসবাবও আছে। মালপত্র যা কিছু ছিল, সব হাসপাতালের ঘরে রাখিয়ে দিয়ে আমাদের বাক্স-প্যাঁটরা আমাদের ঘরে দিয়ে গেল গাড়োয়ান। তাকে তার ভাড়া মিটিয়ে দিলাম, চাপরাশি ও চাকরটা নীচে চলে গেল। আমরাও সকলে পোশাক বদলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
পরদিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে গেল আমাদের মেডিক্যাল ক্যাম্প। শুধু ওই গ্রামই না, পাশের গ্রাম থেকেও লোক আসতে শুরু করল আমাদের হাসপাতালে। আমাদের দলে আমি আর ব্যানার্জী ছাড়াও ছেলে-মেয়ে মিলে মোট চারজন ছিল। তারা আগে থাকতেই নীচের কাজকর্ম দেখছিল। আমি আর ব্যানার্জী একটু পরে নীচে নেমে এলাম। রামভজন আমাদের দুই ডাক্তারকে তাদের নিজ নিজ চেম্বার দেখিয়ে দিয়ে চলে গেল, দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে। আমি আমার চেম্বারে ঢুকলাম। সব ব্যবস্থা মোটামুটি আছে। আমি ঘরটা ভালো করে দেখতে দেখতে হঠাৎ আমার চোখ পড়ল সামনের দেওয়ালের দিকে। দেখি একটা কঙ্কাল সেখানে টাঙ্গানো আছে। হাওয়ায় সেটা দুলছে। আমি কাছে গিয়ে ভালো করে দেখলাম কঙ্কালটাকে। তারপর মুখ ফিরিয়ে সবেমাত্র উল্টোদিকে যাবার জন্য পা বাড়িয়েছি, হঠাৎ আমার কানের পাশে কেউ যেন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মনে হল, সে শ্বাস যেন চরম আক্ষেপের, চরম হতাশার। আমি দ্রুত পেছন ফিরে তাকালাম। সেখানে কেউ ছিল না।
কঙ্কালটাও ঠিক আগের জায়গাতেই হাওয়ায় দুলছিল। আমি কিছুটা শিউরে উঠেছিলাম ঠিকই, তবে ব্যাপারটা ততটা গুরুত্ব দিলাম না। আর ইতিমধ্যেই রুগীর লাইন পড়েছিল। তাই আমি তখন নিজ করমে ব্রতী হলাম। তারপর প্রায় ১৫-১৬ দিন বেশ ভালোই কেটে গেল। কিন্তু তখনও আমার জানা ছিল না যে সেদিনের সেই ঘটনাটা সবে ঘটনাক্রমের শুরু এবং আরও সাংঘাতিক কিছু অপেক্ষা করছিল আমার জন্য।
সারাদিন রুগী দেখার পর একদিন সন্ধ্যেবেলা বড় ক্লান্ত লাগছিল। হঠাৎ ব্যানার্জী এসে আমায় বলল,
“কি হে? যাবে নাকি বাগানখানা দেখতে?” আমি বললাম, “না হে আজ নয়, বড় ক্লান্ত অনুভব করছি।
তুমি বরং ঘুরে এসো” ব্যানার্জী বেরিয়ে গেল। আমি ভাবলাম, একটু চা পেলে মাথাটা ছাড়ত।
রামভজনকে হাঁক দিয়ে বললাম, “আদা দিয়ে এক কাপ চা দিও আমায়।” কিছুক্ষণের মধ্যেই চা এসে হাজির। চা পেয়েই কাপে চুমুক দিলাম, “আঃ, দারুণ!” একটু বাদেই রামভজন এসে আমায় জিজ্ঞেস করল, “দাদাবাবু, চা খাবেন? করে দিই?” আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, “সে কি!
এইমাত্র যে তুমি চা দিয়ে গেলে! আহা, দারুণ হয়েছিল কিন্তু চা টা।” রামভজন যেন আকাশ থেকে পড়ল। সে বলল, “সে কি দাদাবাবু? আমি কখন আপনাকে চা করে দিলুম? আমি তো বাজারে গেছিলুম। এই দেখুন বাজারের থলে।” সত্যি সত্যিই ওর দু’হাতে বাজারের থলি। সে সবেমাত্র বাজার থেকে এসেছে। তাহলে? তাহলে আমায় চা করে দিল কে? বাকি স্টাফরা সকলে নীচে, ব্যানার্জী বাগানে, আমি তো দোতলায় আমার ঘরে একাই ছিলাম। তাহলে কি…………. আর ভাবতে পারলাম না। দৌড়ে গেলাম রান্নাঘরে। সেখানে দেখি বাসন সব পরিষ্কার, পরিপাটি করে রাখা। তাহলে আজ কার হাতের চা খেলাম আমি? কথাটা ভাবতে ভাবতেই একটা দমকা বাতাস বয়ে গেল আর কয়েক মুহূর্তের জন্য আমার সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। বেশ ভয় পেয়ে গেলাম আমি। বেশ কিছুক্ষণ পরে ব্যানার্জী ফিরে এলে তার কাছে আমি এই ঘটনাটি খুলে বললাম। সে তো রীতিমত হেসেই উড়িয়ে দিল পুরো বিষয়টাকে। বলল, “সবে কিছুদিন গ্রামে এসেছ কিনা! আর তারপর সারাদিনের ধকল, তাই তুমি বোধহয় ভুল বুঝেছ। চিন্তা কোরোনা। সব ঠিক আছে।” ব্যানার্জী বলল বটে, কিন্তু আমি পুরো ব্যাপারটাকে নিছক মনের ভুল বা বিকার বলে মানতে পারলাম না। আমি প্রসঙ্গ বদলে অন্য কথায় আসলাম। কথায় কথায় রাতের খাবারের সময় হল। আমরা ডাইনিং হলে খেতে এলাম। টেবিলে খেতে বসার সময় নিজের অজান্তেই কেমন যেন রান্নাঘরের দিকে আমার চোখটা চলে গেল, তখনকার কথা ভেবে। বুঝলাম, ঘুমোনোর দরকার। তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে, ঈশ্বরকে স্মরণ করে শুয়ে পড়লাম।
পরদিন সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। আষাঢ়ের মেঘের ঘনঘটা যেন ছড়িয়ে পড়েছিল চারিদিকে। সুয্যিমামা যে আজ ছুটি নিয়েছেন, সেটা বুঝলাম। তবে এই অসময়ের বৃষ্টি আমার মোটেও ভালো লাগে না। একে পৌষ মাস পড়ে গেছে, আর সেই সময় যদি এমন বৃষ্টি হয়, এই গ্রামের শীত তো ছুঁচের মত গায়ে বিঁধবে! রামভজনকে ডাক দিলুম চায়ের ফরমায়েশের জন্য। হঠাৎ ব্যানার্জী ঘোষণা করল, “বুঝলে বন্ধু, এমন বর্ষায় যদি চমৎকার খিচুড়ি হয়, সাথে ঘি আর আলু-ফুলকপি ভাজা; আহাহাহা, যা জমবে না! একেবারে ফাটাফাটি। অতএব রামভজন, খিচুড়ি বসিয়ে ফেলো।” রামভজন খুশি হয়ে বলল, চায়ের ফরমাশ পূরণ হলেই সে খিচুড়ি রান্নায় মন দেবে। আজ বাদলা দিনে রুগীরও তেমন দেখা নেই। ওই মোটামুটি যা হয় আর কি। বাকিরাও যেন এই অসময়ের বৃষ্টিতে ঝিমিয়ে পড়েছে। বেলার দিকের চা আর দুপুরের গরম গরম খিচুড়ি তো ভালই জমে গিয়েছিল। তবে বৃষ্টির ভাবগতিক যা দেখলাম, তাতে বিকেলের পর বৃষ্টি বাড়বে বই কমার কোনো লক্ষণ নেই। আর তা যদি হয়, তাহলে আমাদেরও ঠাণ্ডায় জমে যেতে বোধ করি খুব একটা অসুবিধে হবে না। আর তাতে ইন্ধন দিতে তো হুহু করে বয়ে যাওয়া ঠাণ্ডা বাতাস তো আছেই। যা ভয় পেয়েছিলাম, ঠিক তাই হল। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল, হাওয়ার গতি উত্তরোত্তর বাড়তে বাড়তে ঝড়ের রূপ নিল। জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখে অত্যন্ত ভয় পেয়ে গেলাম। যতদূর দেখা যায়, শুধু গাঢ় ঘন মেঘ, যেন দিগন্তরেখায় বিলীন হয়েছে। দূরে জঙ্গলের গাছপালাগুলো যেন পাগলের মত নাচছে ঝড়ের তাণ্ডবে। আর থেকে থেকে বিদ্যুতের ঝলকানি। রামভজন বলেছিল, ওই নাকি ‘কালীর জঙ্গল’, লোকে এক ডাকে চেনে। আর তার পাশেই নাকি শ্মশানঘাট। সবে মিলে এক ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। ইতিমধ্যে ব্যানার্জী আবার শ্যামা সঙ্গীত ধরে বসেছে, “নেচে নেচে আয় মা কালী, আমি যে তোর সঙ্গে যাব। তুই খাবি মা পাঁঠার মুড়ো, আমি যে তোর প্রসাদ পাবো।” আমি কিছুটা বিরক্ত হলাম। কি করি? ব্যাগ থেকে হাস্যকৌতুক বার করে চাদর মুড়ি দিয়ে পড়তে লাগলাম হ্যারিকেনের আলোয়, তাতে যদি একটু রোমাঞ্চটা কাটে। চোখটা যে কখন লেগে গেছিল, খেয়াল করিনি। যখন টের পেলাম, ঘড়িতে তখন রাত ন’টা। ব্যানার্জী কোমরে হাত দিয়ে বলল, “লোকে দিবা নিদ্রা দেয় শুনেছি। তুমি তো সান্ধ্য-নিদ্রা দিয়ে ফেললে হে!” কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, রামভজনের ডাক এল যে খাবার তৈরি। আমি খাবার টেবিলে রামভজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আচ্ছা, তুমি তো আমাদের এই বাড়ির তিনতলাটা দেখালে না! কেন?” আমি দেখলাম, ওর মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেল কথাটা শুনে। আমতা আমতা করে বলল, “ও আর কি দেখবেন বাবু? ওখানা তো, ওই যে কি বলে ‘ইস্টোর রুম’, যত বাতিল জিনিসে ভরা।” বলল বটে কথাটা, কিন্তু আমার সন্দেহ তাতে গেল না।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি আর ব্যানার্জী ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু আমার ঘুম আসছিল না। একটা দীর্ঘশ্বাসের অনুভূতি, আমার চা খাওয়া, চাকরটার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া—- সব কিছু কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছিল। কিন্তু বুঝতে পারলাম না, এগুলো আমার সাথেই ঘটছে কেন? এইসব ভাবতে ভাবতে একটু যেন তন্দ্রা ভাব এসেছিল, হঠাৎ আচমকাই আমার ঘরের দরজায় টোকা মারার শব্দ হল। “কে? কে ওখানে?” কোনো উত্তর পেলাম না। আবার টোকা মারল কেউ। “কে? ব্যানার্জী নাকি?” কোনো সাড়াশব্দ নেই। আমি চুপ করে বসেছিলাম। এবার বেশ জোরে দরজা ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজ হল। আমি মোমবাতিটা কোনোমতে জ্বালতে গেলাম, সেটা হঠাৎ বিনা হাওয়াতেই দপ করে কেমন যেন নিভে গেল। হাতড়ে হাতড়ে টর্চটা নিয়ে জ্বাললাম, জ্বলল না। অথচ, কলকাতা থেকে নতুন ব্যাটারি দিয়ে এনেছিলাম। এবার প্রচণ্ড জোরে দরজা ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজ হল, এই বুঝি দরজা ভেঙ্গে ফেলে! আমি ভয়ে কাঠ হয়ে বসে আছি, আর একবার সাহস করে বললাম, “কে ওখানে?” হঠাৎ ঘরের দরজাটা দড়াম করে খুলে গেল, আর খুব জোর বিদ্যুতের ঝলকানি খেলে গেল। সেই আলোয় আমি দেখলাম, একটা পোড়া ছায়ামূর্তি যেন দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দু’টো যেন চার ব্যাটারির টর্চ, কেমন একটা পচা গন্ধ আসছিল সেদিক থেকে। পৌষ মাসের শীতেও আমার কপাল দিয়ে দরদর করে ঘাম ঝরতে লাগল। আমি চিৎকার করে উঠলাম। তখনি ছায়াটা হঠাৎ ধাঁ করে সরে গেল। জুতো পায়ে দিয়ে চলে গেলে যেমন শব্দ হয়, সিঁড়িতে সেই রকম শব্দ শুনতে পেলাম। সাথে সাথে আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে এক বিকট অট্টহাসি কেউ যেন হেসে উঠল, “হিহি! হিহি! হিহি! হিহি!” সে হাসি অমানুষিক। শরীরের রক্ত জল করে দেয়। আমি কঠিন পাথরের মত বিছানায় পড়েছিলাম। আমার চিৎকার শুনেই বোধ করি, ব্যানার্জী দৌড়ে আমার ঘরে এল। আমার চোখে-মুখে জল দিয়ে, জল খাইয়ে, আমাকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করল। আমি শুধু বললাম, “আমার ঘরের দরজাটা ভেঙ্গে গেছে।” ব্যানার্জী উঠে গিয়ে, ভালো করে দেখে বলল, “কই না তো! সব কিছু তো একদম ঠিক আছে।” আমি আর বেশি কথা বলতে পারলাম না। তখনও দম নিচ্ছি। শেষমেশ ব্যানার্জী আমাকে ঘুমের ওষুধ দিল। সেটা খেয়ে শেষ রাতটুকু একটু ঘুমিয়েছিলাম। ব্যানার্জীও তারপর আমার সাথে আমার ঘরেই ছিল। পরদিন ছিল রোববার। আমি চেম্বারে যাইনি। ব্যানার্জী বলল ও সবটা সামলে নেবে। আমি প্রায় সারাদিন ঘরের বাইরে বেরোইনি। দুপুরের খাবারটা রামভজন আমার ঘরেই দিয়ে গেল। দলের কিছু স্টাফ আমার সাথে দেখা করতে এল, তারাও নাকি আমার চিৎকার হাল্কা শুনেছিল। অথচ রামভজন নাকি কিছুই শোনেনি। অবাক! দুপুর তিনটে নাগাদ আমি কিছুটা ফুরফুরে বোধ করছিলাম। আস্তে আস্তে ঘরের বাইরে এসে, এদিক ওদিক দেখলাম, কেউ নেই। আমি সোজা চলে গেলাম তিনতলার সিঁড়ির দিকে, আস্তে আস্তে উঠতে লাগলাম। কিন্তু ওঠার সময় আমার বারবার মনে হতে লাগল, কেউ যেন আড়াল থেকে সমানে আমায় দেখছে। পেছন ফিরে দেখলাম কেউ নেই। এক সময় তিনতলার ঘরের সামনে এলাম। দু’টো পেল্লায় তালা ঝুলছে দরজায়। মাকড়সার জাল আর ঝুলে ঢাকা সারা জায়গাটা। সবথেকে আশ্চর্য হলাম ঘরের দরজায় সাদা কাগজের উপর লাল কালিতে লেখা, “প্রবেশ নিষেধ।” স্টোর রুমে এমন কথা তো লেখা থাকার কথা না। আচমকা একটা হাত আমার কাঁধের উপর এসে পড়ল। আমি রীতিমতো চমকে উঠে ‘কে?’ বলে ঘুরতেই দেখি ব্যানার্জী। সে ঘরে আমায় দেখতে না পেয়ে এখানে খুঁজতে এসেছে। আমি ওর সাথে নীচে চলে গেলাম। কিন্তু তখনও আমার মনে হচ্ছিল, কেউ যেন আশেপাশে আছে। আমাদের দেখছে। সেদিন রাতের খাবার দিতে এসে রামভজন আমায় ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করে। আমি জিজ্ঞেস করতে ও বলল, “আজ অমাবস্যা দাদাবাবু। গ্রাম রাত ১০ টার মধ্যে নিশুতি হয়ে যায়। আপনিও কি যেন সব দেখেছেন কাল। তাই বলছি, বাইরে কোনমতে যাবেন না।” ব্যানার্জী দেখা করে গেল। তার সাথে অল্প কথা বলে আমি শুয়ে পড়লাম।
রাত তখন একটা। ঘড়ির শব্দে আমি পাশ ফিরলাম। সেই সময় কোথা থেকে হঠাৎ জেগে উঠল একটা প্রচণ্ড অমানুষিক আর্তনাদ। আমি ধড়মড় করে উঠে বসলাম। আওয়াজটা খুব জোরে হচ্ছিল। মনে হল কেউ যেন প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করছে! রামভজনের কথাটা আমার মাথায় এল। আমি চাদর মুড়ি দিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। কিন্তু আওয়াজটা কিছুতেই থামে না। সেই আওয়াজটা
ক্রমেই যেন কাছে আসছিল। আমি আর থাকতে পারলাম না। গলার পৈতেটা জুত করে বাগিয়ে ধরে, আর পিস্তলটা বার করে পকেটে নিয়ে, রামনাম জপ করতে করতে আমি সামনের জানালাটার কাছে গেলাম। আলতো করে একটু খুলে দেখার জন্য যেই বাইরে তাকিয়েছি, সে দৃশ্য দেখে আমার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল। দেখি, একটা বাচ্চা, বছর আটেক বয়স হবে হয়তো, চিৎকার করে করে সারা বাগান ছুটে বেড়াচ্ছে। তার গায়ে মাংস প্রায় নেই, মুখটা দেখে মনে হয় যেন আধপোড়া মত, এক জীর্ণ কঙ্কালসার মূর্তি! এক সময় দেখলাম, বাগানের বাঁদিকের মরা তেঁতুল তলায় গিয়ে ছেলেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আর কি আশ্চর্য! তক্ষুনি সেটা ধোঁয়ার মত বাতাসে কোথায় মিলিয়ে গেল। আমি দ্রুত দরজা খুলে বাইরে এসে সোজা চলে গেলাম একতলায়। বারান্দা থেকে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম, কিচ্ছু দেখতে পেলাম না। ভাবলাম, চুপচাপ ঘরে চলে যাই। বাইরে থাকা ঠিক নয়। সিঁড়িতে সবে পা দিয়েছি, হঠাৎ মনে হল আমার চেম্বারের থেকে আলোর আভা আসছে। দরজাটাও মনে হচ্ছে যেন খোলা। সেকি! রামভজন কি খেয়াল করেনি নাকি? নাকি চোর ঢুকল? আমি ধীরে ধীরে ঘরের সামনে এগিয়ে গেলাম। মনে হল কোনো এক অজানা শক্তি আমাকে সেখানে টেনে নিয়ে আসছে। দরজার কাছে পৌঁছতেই দেখি সেটা ভেজানো আছে, তার ফাঁক থেকেই আলো আসছে। আমি পিস্তলটা হাতের মুঠোয় ধরে দড়াম করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আচমকা ঘরের আলোটা বন্ধ হয়ে গেল। আমি অনুভব করলাম, চারপাশের আবহাওয়াটা যেন একটু বেশিই ঠাণ্ডা হয়ে পড়েছে। আমি সুইচ টিপে আলো জ্বাললাম। তারপর ফিরেই দেখি আমার চেয়ারে কে একজন শাড়ী পরে, মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে আর আমার ডাক্তারি প্যাডে কিছু লিখছে। আমি বললাম, “কে আপনি?” কোনো উত্তর নেই। আমি পিস্তল দেখিয়ে বললাম, “চুপচাপ বলুন, আপনি কে? এতো রাতে এখানে কি করছেন?” সেই অবয়বটি আমার দিকে ফিরে তাকাল। আমি দেখি, তার হাতে মাংস কই? এ যে শুধু হাড়! মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, মুখ কই? কঙ্কালের করোটি! আমি সঙ্গে সঙ্গে চোখ বুজে গুলি ছুড়লাম। কি আশ্চর্য! ঘরের আলোটা আবার নিভে গেল। আমি আবার আলো জ্বেলে দেখি, ঘরের অবস্থা আবার ঠিক ঠাক। শুধু একটা দমকা ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে গেল ঘর দিয়ে। টেবিলের কাছে গিয়ে দেখি একটা ভাঁজ করা কাগজ। সেটা খুলে দেখি, আমার নামের চিঠি। তাতে লেখা:
– “নমস্কার ডাক্তার মুখার্জী! আমার নাম পদ্মাবতী রায়। আমি জমিদার কালীপ্রসন্ন রায়ের মেয়ে। আপনাকে আমি কয়েকটা কথা বলতে চাই। বহু বছর আগে আমার বাবা শহরের এক ডাক্তারকে আনিয়েছিলেন তার চিকিৎসার জন্য। ডাক্তারের চিকিৎসাতে বাবা দ্রুত সুস্থ হয়। উপহার হিসেবে বাবা এই বাড়িটি তাকে দিয়ে দেয়। কিন্তু তার আসল উদ্দেশ্য ছিল আমাকে আর বাবার সম্পত্তিকে গ্রাস করা। সে এই বাড়িটাকে হাসপাতাল করল। আর বাড়ির তিনতলার ঘরে কি সব পরীক্ষা করত। মাঝে মাঝে লাশ নিয়ে আসত। সেগুলো কেটে কি সব যেন করত। গ্রামের লোক বলত ‘লাশঘর’! ডাক্তারের ছলাকলায় যখন কাজ হল না, তখন সে চরম সিদ্ধান্ত নিল। একদিন আমরা সবাই এখানে আসি ডাক্তারের নিমন্ত্রণে। গ্রামের কিছু লোককে সে ঘুষ দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে নিয়ে যায়। আমরা আসা মাত্র তারা আমাদের হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলে। তারপর ডাক্তার আমাদের তিনতলার ঘরে নিয়ে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের শ্বাসরোধ করে। তারপর আমাদের চারপাশে আগুন লাগিয়ে দেয়। আমার ছোট ভাইটা থাকতে না পেরে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে, দৌড়ে বাইরে চলে যায়। আর ওই তেঁতুলতলায় পড়ে মারা যায়। আমার বাবা-মা কে দু’টো বাক্সে ভরে রেখে দেয় তিনতলায়। আর তখন থেকেই ওই লাশঘর জীবন্ত হয়ে উঠলো। আর আমাকে বাক্সবন্দী করে নিয়ে আসে এই ঘরে। সকালে গ্রামের লোক সেকথা জানতে পেরে ডাক্তারকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। কিন্তু আমাদের মুক্তি হয়নি। পরে এক ডাক্তার আমার কঙ্কালটা বাক্স থেকে বের করে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য, কিন্তু পারেনি। দেওয়ালের কঙ্কালটি আসলে আমারই। রামভজন ভয়ে সে কথা কাউকে বলতে পারিনি। কিন্তু আমি আপনাকে বলছি কারণ, সকালে আপনি সাহস করে তিনতলায় যান। তাই আপনাকে অনুরোধ করছি, আমাদের মুক্তি দিন দয়া করে। আপনাকে ভয় দেখিয়েছি, তার জন্য দুঃখিত। পারলে ক্ষমা করবেন। আর মরা তেঁতুল গাছটা কাটিয়ে দেবেন দয়া করে, এতে আমার ভাইটা মুক্তি পাবে। ইতি, পদ্মাবতী।”
চিঠিটা পড়ে আমি কঙ্কালটার দিকে তাকালাম। তারপর দরজা বন্ধ করে ঘরে চলে গেলাম। পরদিন সকালে হাসপাতালের কাজ শেষ করে সব কথা সকলকে জানালাম। ব্যানার্জী তো শুনে রীতিমত তাজ্জব বনে গেল। বাকি স্টাফরাও তথৈবচ। রামভজন সব শুনে ডুকরে কেঁদে বলেছিল, “আমায় মাফ করে দিন দাদাবাবু। আমি আপনাদের ভয়ে কিচ্ছু
বলতে পারিনি। আগের ডাক্তারবাবুকে বলায় তিনি ভয়ের চোটে শহরে চলে যান। কত্তা-বাবুর পরিবারের কারো মুক্তি হয়নি।” আমি তাকে শান্ত করে বললাম, “তার ব্যবস্থাই কাল করব। কাল হাসপাতাল বন্ধ থাকবে।” পরদিন লোক পাঠিয়ে ঠাকুর মশাই, কামার, ছুতোরকে ডেকে আনলাম আর কিছু গ্রামের লোককেও আনালাম। তিনতলার ঘরের দরজা ভেঙ্গে বাক্স কেটে কঙ্কালগুলোকে উদ্ধার করে, পদ্মাবতীর কঙ্কাল সহ তাদের উপযুক্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করালাম। মরা তেঁতুল গাছটা কাটিয়ে দিয়ে গোটা বাড়িতে আর বাড়ির চারদিকে শান্তিজল ছিটিয়ে দিলাম। আর সেটা হানাবাড়ি বা লাশঘর রইল না। আমি মনে মনে বললাম, “আমি আমার কথা রেখেছি পদ্মাবতী। তোমাদের আত্মার চির শান্তি কামনা করি।” দেখতে দেখতে একমাস কেটে গেল। আমরা সকলেই ফিরে এলাম কলকাতায়। কিন্তু সেদিনের সেই সব স্মৃতি আজও আমার মনে গেঁথে আছে। আর থাকবেও।