অনন্ত আর আটশো আট| বাংলা গোয়েন্দা প্রিমিয়ার লীগ | সায়ণী ঘোষ| Bengali Detective Story
0 (0)

অনন্তর আজ কাজে মন লাগছে না। ছোটখাটো চেহারা ওর। গায়ের রং চাপা তামাটে। সকাল থেকে ওর মাথার ভেতর কয়েকটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে! গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে মন ওইদিকে ঘুরে যাচ্ছে! বার বার মনে হচ্ছে কি হবে! রাত হলেই তো! মিসেস নিশা! পিঙ্কির সাথে কিছু লিঙ্ক অবশ্যই আছে। মুন স্টার হোটেলের আটশো আট নম্বর রুমে কিছু তো একটা হবে! এই কথা গুলো অনন্তর জানার কথা নয়! একটু আগে ওর অ্যাপ ক্যাবের পেছনের সীটে বসে থাকা লোকগুলোর কথপোথন থেকে কিছু কথা তো স্পষ্ট। অনন্ত বেশী পড়াশোনা করে নি। কিন্তু ওর বুদ্ধি কতটা তুখোড় তা যারা ওকে চেনে সবাই জানে। উল্টো দিকের ফ্ল্যাটের নিনা বৌদি দু’দিন ধরেই বলছে পিঙ্কির ব্যাপারে খোঁজ করতে। মেলা থেকে হারিয়ে গেছে। এদিক ওদিক খুঁজেও কোন লাভ পায়নি ওরা। নেতাদের বাড়িতেও হত্যে দিয়েছে। পুলিশও অবশ্য খোঁজ চালাচ্ছে। কিছু দিন আগে গাড়ি কিনেছে লোন নিয়ে। এর আগে তো ওসি এন সমাদ্দারের গাড়ি চালাতো। সেখান থেকেই অনেক কেস ওর শোনা। স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে কান থাকত পেছনে। লোকটার কথাগুলো আবার মনে করার চেষ্টা করল অনন্ত।

– “মিসেস নিশা, দশটার সময়, মুন স্টারের আটশো আটে। কয়েক মিনিটের কাজ। রেখে দিয়েই চলে আসবি।”

কি কাজ হতে পারে! কিন্তু সুমনাকে ও ঠিক চিনেছে। ক্যাবে ওঠার আগে সুমনা এসেছিল লোকটার সঙ্গে কথা বলতে। লোকটা এক তাড়া টাকা গুঁজে দিল সুমনার হাতে। সুমনার ওপর অনন্ত নজর রেখেছিল। এই সুমনা দিদির সঙ্গেই পাড়ার কয়েকজন মিলে মেলায় গেছল। আর ওখান থেকেই পিঙ্কি উধাও হয়ে যায়। সুমনা আর ওর বিধবা মা কলোনিরই এক কামরা ঘরে ভাড়া থাকে। একবার মুনস্টারে গিয়ে দেখে এলে কিই বা হবে! অনন্তর চোখটা চিক চিক করে উঠল। কিছু হিন্ট পেলে না হয় সমাদ্দার স্যারকে বলা যাবে। অনেকদিন থেকেই ইচ্ছে স্যারের হয়ে কাজ করার। যদি ঠিকঠাক খবর দিতে পারে পুলিশের খবরীর কাজটা জুটে গেলেও যেতে পারে।

গাড়িটার শেষ প্যাসেঞ্জার নামাতে নামাতে সাড়ে ন’টা বেজে গেল। এখন কোনও প্যাসেঞ্জার নেই। একবার ট্রাই করা যেতে পারে। রাসবিহারী মোড় যেতে মিনিট দশেকই তো লাগবে! পৌঁছে গাড়ি পার্ক করেই চট করে হোটেলের মধ্যে ঢুকল অনন্ত। লিফটে দশ তলায় যেতে হবে। না এই লিফটে ওঠা যাবে না। দূর থেকেই লক্ষ্য করেছে সেই লোকটাকে লিফটে উঠতে। কোলে একটা বাচ্চা মেয়ে। সাধারণ ফ্রক পরা। ওর মেয়ে কি? নাকি মিস নিশার? কোনভাবে এই বাচ্চাটা কি পিঙ্কি হতে পারে! এখনও কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। শামিমুরকে ফোনে বলেছিল একবার। হাসতে হাসতে সে ইতিমধ্যে এসে উপস্থিত। দু’জন শেয়ারে ভাড়া থাকে। দু’জনেরই বয়স তিরিশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। বন্ধুত্বটা যে কবেকার তা আর মনেও পড়ে না। পরস্পরের একটাও কথা যে গোপন থাকে না সেটা সত্যি। ওর হলুদ ট্যাক্সি। ভাড়া না ধরে এখানে চলে এসেছে। অনন্ত মাথা নাড়তে নাড়তে বলল,

– “তোকে আসতে বলেছিলুম নাকি! তোরও দেখছি ইন্টারেস্ট কিছু কম নয়!”

– “একা পারবি নাকি! কোথাও ধরাটরা পড়লে?

আর কথা না বাড়িয়ে লিফটে ঢুকে দাঁড়ালো ওরা।

সারি সারি ঘর। সেই কালো শার্টের লোকটাকে একটা রুম থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরোতে দেখা গেল। একা! ওরা একটু দাঁড়িয়ে গেল। আর একটু কাছে যেতেই কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতে লাগল। বাচ্চার কান্নার আওয়াজ! তারপর একটা মিষ্টি ঘুম পাড়ানি গান। ওরা তাড়াতাড়ি নীচে নেমে এল। লোকটা এতক্ষণনে বেরিয়ে গেছে। নীচে কোথাও তাকে দেখা গেল না। না! আর দেরী করা যাবে না! কালই সুমনার বাড়ি যেতে হবে। ও কতটা কি জানে জানা দরকার। মনে মনে ভাবতে লাগল অনন্ত। খবরীর কাজ নয় নাই হল, কিন্তু পিঙ্কির মত একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়েকে বাড়ি ফেরানো তো যাবে। আজ অফ ডে। তাই সকাল সকালই ছুটল সুমনার বাড়ি।

– “আমি তো আগেই বলেছি পিঙ্কি কোথায় আমি জানি না।”

সুমনা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে কথা গুলো বলে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছিল। সামনে দু’পা এগিয়ে গিয়ে অনন্ত আবার প্রশ্ন করল,

– “তাহলে কালকের লোকগুলো কে? কার সাথে কথা বলছিলেন কাল?”

– কাল?” 

– হ্যাঁ কাল। সাতকরি মিত্তির লেনে রাজুর চায়ের দোকানের সামনে।”

– না তো!”

– মিথ্যে বলে লাভ নেই। আমি আপনাকে ওর থেকে কিছু টাকা নিতেও দেখেছি। এই যে দেখুন। কথাটা পুলিশকে জানালে আপনার জন্যে ঠিক হবে না।”

মোবাইলটা তুলে দেখাল অনন্ত। ছবিতে টাকা হাতে সুমনার মুখটা স্পষ্ট।

– “আপনি পুলিশকে কিছু বলবেন না। দেখছেন তো আমাদের অভাবের সংসার।”

– “ওই লোকগুলোর পরিচয়?”

– “পরিচয় জানি না। ওরা আমাকে পিঙ্কিকে জিলিপির দোকানের সামনে একা রেখে চলে যেতে বলেছিল। বিশ্বাস করুন আমি করতে চাইনি কিন্তু টাকাটার খুব দরকার ছিল।”

– “এই কথা গুলো পুলিশকে জানাতেই হবে।”

– “প্লিজ আপনি পুলিশকে কিছু বলবেন না। লোকটা মুরারি পুকুরে থাকে। ওর অফিস ঘরটা আমি চিনি। আপনাকে দূর থেকে দেখিয়ে দেব।”

– “আচ্ছা আজ দুপুরে মাঠের ধারে অপেক্ষা করব। ঠিক দু’টোর সময়।”

– “কিন্তু আপনি নিনা বউদিকেও কিচ্ছু বলবেন না প্লিজ।”

– “এখনও পর্যন্ত বলব না। পিঙ্কিকে যদি উদ্ধার না করা যায় তখন তো বলতেই হবে। আর এমনিতে শাস্তি তো হবেই।”

আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ি ফিরে এল অনন্ত। শামিমুর এখনও গাড়ি বের করেনি। ভাত বেড়ে সবে খাচ্ছে। দুপুরে যথারীতি সুমনা দূর থেকে বাড়ীটা দেখিয়ে দিল। অনন্ত সেখানে যাওয়ার রিস্ক নিল না। শুধু গাড়ি নিয়ে ঠায় সামনেটায় দাঁড়িয়ে রইল। এক জিন্স টিশার্ট পরা ভদ্রমহিলা বেরিয়ে এলেন বাড়ীটা থেকে। তারপর দাঁড় করিয়ে রাখা একটা গাড়িতে উঠে বসলেন। গাড়ির কাঁচের মধ্যে থেকে দু’টো ছোট্ট ছোট্ট চুড়ি পরা হাত দেখা যাচ্ছে। হাতে একটা খেলনার গাড়ি। গাড়িটা স্টার্ট দিতেই সেটা ওর হাত থেকে পড়ে গেল। চট করে গিয়ে সেটা কুড়িয়ে নিল অনন্ত। লাল কালো রঙের রেসের গাড়ি। পকেটে পুরে বাড়ীর দিকে রওনা দিল। একবার নিনা বউদির সঙ্গেও দেখা করতে হবে। শামিমুর ফিরলে একসাথেই যাবে। বিকেলের দিকে। গাড়ির নাম্বার প্লেটের ছবিটাও তুলে রেখে দিল ফোনে। এই কি মিস নিশা?

বিকেলে নিনা বউদির ফ্ল্যাটের সামনে এসে পৌঁছালো ওরা। ডোর বেল বাজাতেই নিনা বৌদি দরজা খুললেন। সিমা’দিও সেই সময় ঘরেই ছিল। হাত বাড়িয়ে গাড়িটা দেখাতেই চোখটা চিকচিক করে উঠল নিনার। সুমনাকে ওদের আগে থেকেই সন্দেহ ছিল। সবটা বলতে দৌড়ে এসে গাড়িটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগল। বাকিটা বুঝতে দেরী হল না ওদের। অনন্ত এবার শান্ত ভাবে কয়েকটা প্রশ্ন করল,

– “পিঙ্কি কোথায় যেন পড়ত?”

– “ড্রিম ল্যান্ড স্কুলে।”

নিনা বৌদি এবার ভেতরে ওদের জন্য চা আনতে গেলেন। সিমা’দিকেও ওরা ভালোই চেনে। এই পাড়ার অনেক দিনের বাসিন্দা। নিনা বৌদির কথার রেশ টেনে সিমা’দি বলতে লাগলেন,

– “এখানে আসার পর থেকে ওই স্কুলেই তো পড়ে।আমার ছেলে রাতুও তো ওর সাথেই পড়ত। এবারে সল্টলেকের দিকে একটা স্কুলে ভর্তি করেছি। কি থেকে যে কি হয়ে গেল। আচ্ছা পুলিশ কি করছে!”  

– “এখানে আসার পর মানে? আগে কোথায় থাকত ওরা?”

– “আগে তো!”

সিমা’দির কথা মাঝ থেকে থামিয়ে দিলেন নিনা বৌদি।

– “আগে আমরা আসানসোলে থাকতাম। চার বছর হল এখানে এসেছি।”

– “সুমনার ব্যাপারে আপনারা পুলিশকে জানাতেই পারেন। আমি ছবিগুলো দিয়ে যাচ্ছি।”

– “সে তো জানাবই।”

– “আচ্ছা কিছুদিনের মধ্যে অন্যরকম কোন ঘটনা যদি ঘটে থাকে তো আমাকে বলতে পারেন?”

– “না না সেরকম কিছু তো!”

ভেতরের ঘর থেকে রঞ্জিত’দার গলা। বেশ জোরে জোরে ডাকছেন নিনা বউদিকে। স্পষ্ট বোঝা গেল ওদের আসাটা ঠিক পছন্দ হয় নি রঞ্জিত’দার। আবছা আবছা শোনাও গেল।

– “তোমার কি শিক্ষা হবে না। আবার বাইরের লোক ঢোকাচ্ছ। দেখলে তো, কি হল!”

শামিমুর ইশারা করতেই ওরা বেরিয়ে এল। অনেকটাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে ওরা। “আর এব্যাপারে না এগানোই মঙ্গল”, কথাটা শামিমুর বলেই ফেলল। একটা কম বয়সী ছেলে চায়ের দোকানের সামনের বেঞ্চিতে গরম ধোঁয়া ওঠা দু’টো মাটির ভাঁড় রেখে গেল। সেটাতেই চুমুক দিতে দিতে কথাটা বলল ও। অনন্ত অবশ্য কিছুই উত্তর দিল না। শুধু মাথাটা সামনের দিকে একটু ঝাঁকালো। ইতিমধ্যেই পেছনে দেখে সিমা’দি ডাকছে।

– “অনন্ত তুমি জান না। না!”

– “কি!”

– “এই পাড়ার অনেকেই জানে না।”

– “কি বলো’ত?”

– “আরে পিঙ্কি তো নিনার নিজের মেয়ে নয়।”

– “তুমি ঠিক জানো?”

– “অনাথ আশ্রমের লোক কয়েকবার এসেও’ছে এ বাড়িতে। তখনই দেখেছিলাম।”

-*-

অনন্ত সকালে কাজের মধ্যে সবটা ভুলেই গেছিল প্রায়। অনেক বার ফোন আসছিলো সুমনার। ধরেই’নি। এ ব্যাপারে আর নাক গলাতে চায় না ও। বোধহয় পুলিশ এসে তুলে-টুলে নিয়ে যাচ্ছে তাই ফোন করছে। অনন্ত তো জানে যে ও দোষী। সামান্য হলেও শাস্তি তো ওরও প্রাপ্য। তার এক ঘন্টা পর নাড়ুটা চিৎকার করে ডাকতে এল, “সুমনা খুন হয়ে গেছে! পাড়ায় হৈচৈ পড়ে গেছে। গাড়ি বের করে তুলতে তুলতেই সব শেষ।”

– “কাউকে ওদের ঘরে ঢুকতে দেখেছিলি?”

অনন্তর প্রশ্নে নাড়ু মাথা নাড়ল। আর অন্যরাও কেউ কিছু বলতে পারল না। কেউ ছুরি মেরে বেরিয়ে গেছে। রক্তাক্ত সুমনার মৃতদেহের চারপাশে পাড়ার সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সুমনার মা পাশটাতে ঘাড় ঝুঁকিয়ে উবু হয়ে বসে আছে।

শ্মশানের কাজ শেষ করে ফিরতে ফিরতে অনেক বেলা হয়ে গেল। অনন্তর মুখ গুমোট হয়ে রয়েছে। হঠাৎই হন্তদন্ত হয়ে উঠে পড়ল। শামিমুর কিছুটা অবাকই হল। গাড়ি তো এইমাত্র গ্যারেজ করে এল!

– কোথায় যাচ্ছিস?

– আটশো আট।

‘আমিও যাচ্ছি, কিম্বা এখন কেন যাচ্ছিস পরে যাবি না হয়’, এসব বলার সময়টুকুও পেল না শামিমুর। বিদ্যুৎ গতিতে অনন্ত হাওয়া হয়ে গেল। দড়াম করে দরজাটায় শুধু একটা শব্দ হল।

অনন্ত হোটেলের বাইরেটায় অনেক্ষণ হলো পড়ে রয়েছে। চায়ের দোকানে চার কাপ চা খাওয়া হয়ে গেল। মিস নিশাকে এতক্ষণে বেরোতে দেখা গেল। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি স্টার্ট করল অনন্ত। মিস নিশার গাড়ি ফলো করতে থাকল ও। গাড়িটা গিয়ে থামল আলিপুর কোর্ট চত্বরে! এখানে কি করতে এসেছেন উনি! পিঙ্কিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলেন মিস নিশা! এর মধ্যেই একটা বুকিং এসেছে। একজন ক্লার্ককে কেসটার ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলে বেরিয়ে এল ও।

সন্ধ্যে সাতটা বাজছে। এতক্ষণে অনন্ত ফিরল। এসে চা-টা খাওয়া হল। আসার পথে চারটে সিঙ্গারাও এনেছিল। গরম গরম। সেসব খেতে খেতেই অনন্ত আজ কোথায় কোথায় গেল কি কি হল সবই বার দু’য়েক জিজ্ঞাসা করা হয়ে গেছে। উত্তরটা এতক্ষণে পাওয়া গেল।

– “প্রথমে আটশো আট, সেখান থেকে আলিপুর কোর্ট। তারপর কয়েকটা ট্রিপ করে সোজা নিমাইয়ের সিঙ্গারার দোকান।”

বাকি দু’টো জানা থাকলেও আলিপুর কোর্টের ব্যাপারে কিছুই বুঝতে পারল না শামিমুর। অনন্ত বলল,

– “আমিও জানতাম না। মিসেস নিশার গাড়ি ফলো করেই আলিপুর কোর্টে পৌঁছালাম। কাল নিনা বউদির বাড়িতে একবার যেতে হবে।”

– “আবার। কিন্তু! সমাদ্দার স্যারকে কিছু বলবি না?”

– “ফোন করেছিলাম। উনি কাল আসতে বলেছেন। বিকেলে। তার আগেই একবার।”

– “নিনা বৌদিরাই ওকে সরিয়ে দেয় নি তো! কারণ, নাহলে উনি খোঁজাখুঁজিটা এভাবে থামিয়ে দিলেন কেন? সুমনার ব্যাপারেও পুলিশকে কিচ্ছু বলল না কেন! ওনারাই পিঙ্কিকে বিক্রি করে দেননি তো! বড়োলোক মিস নিশার কাছে!”

– “সেগুলোই তো প্রশ্ন। আলোর পথ অনাথ আশ্রম থেকে পিঙ্কিকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল। জোড়াসাঁকোর দিকে। কাল একবার ওখান থেকেও ঘুরে আসব ভাবছি।”

সেই সকালে শামিমুর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছে। বিকেলের দিকে ফিরে দেখল অনন্ত আগেই ফিরে এসেছে। ডিউটি অফ করল নাকি! তাহলে কি এক্ষুনি সমাদ্দার স্যার ডেকেছেন!

মুখটা বেশ ভার ভার দেখাচ্ছে। শামিমুরকে দেখেই বলল –

– “আলোর পথে পিঙ্কির ব্যাপারে খোঁজ করতে একজন ভদ্রমহিলা এসেছিলেন। মাস খানেক আগে।”

– “উনি নিশ্চই মিস নিশা।”

– “কিন্তু কেন!”

– “সমাদ্দার স্যারের কাছে যাবি না?”

– “না রে, উনি আজ ব্যাস্ত।”

-*-

পরের দিন ওরা দু’জনে মিলে আলিপুর কোর্ট চত্বরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অনেকক্ষণ আগে ওদের দাঁড়াতে বলে এখনো আসেননি সেই ক্লার্ক। নিনা বৌদি উত্তেজিত হয়ে সামনে এসে দাঁড়ালেন। অনন্ত কেন ওনাকেও আসতে বলেছে শামিমুর সেটা জানে না। নিনা বৌদি বেশ জোরেই জিজ্ঞেস করলেন –

– “পিঙ্কি কোথায় জানো?”

– “কিছুদিন আগে পিঙ্কির ব্যাপারে কোন মহিলা কি এসেছিলেন আপনাদের কাছে?”

নিনা বউদির মুখটা কেমন যেন শুকিয়ে গেল। কিছুই বললেন না উনি।

– “মিস নিশা পিঙ্কিকে খুঁজতে খুঁজতে আপনার বাড়িতে চলে এসেছিল। আর আপনি পিঙ্কিকে ছাড়তে চাননি। যতদূর সম্ভব আমার মনে হয় মিস নিশাই পিঙ্কির আসল মা। উনি নিজের মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কি তাই তো?”

– “না! ও আমার মেয়েকে ব্যাবহার করছে। টাকার জন্য।”

কোন প্রশ্ন করার আগেই সেই ক্লার্ক ওদের ডাকল। ওরা সিঁড়ি দিয়ে উঠে তার কাছে গেল।

– “কেস নম্বর ৬৫৫। মিস নিশা ভার্সেস মিস্টার সাহেব সেন।”

– “আর কিছু জানতে পারলেন না?”

– “মিস নিশা, ওনার মেয়ের ভরন পোষণের জন্য মানি স্যুটের মামলা করেছেন। মানে মোটা টাকা দাবি করেছেন। মিস্টার সাহেব সেন মানতেই চাইছেন না যে মেয়েটি ওনার।”

– “তারমানে পিঙ্কি মিস নিশারই মেয়ে!”

নিনা বৌদি এতক্ষন দাঁড়িয়েই ছিলেন। আবার ওই একটা প্রশ্নই করলেন –

– “পিঙ্কি কোথায়?”

– “নিশা কি আপনাদেরও টাকা দিতে চেয়েছিলেন?”

– “হ্যাঁ। একমাসের জন্য পিঙ্কিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। সারাজীবনের জন্য নয়।”

– “আপনারা রাজি হননি। তাই তো?”

– “না ,আমরা কিছুতেই রাজি হইনি। এইটুকু অবস্থায় আমরা ওকে নিয়ে এসেছিলাম। ওকে টাকার জন্য! না, না।”

– “আমার মনে হয় তাই মিস নিশা লোক দিয়ে ওকে তুলে এনেছিলেন। সুমনাকে কাজে লাগিয়েছিলেন। সুমনা ব্যাপারটা ফাঁস করে দিতে চাওয়ায় ওকে মরতে হল। যাক পিঙ্কি ভেতরে আছে। এজলাসের দু’নম্বর রো তে বসে আছে। যান দেখা করে আসুন।”

দশদিন পার হয়ে গেছে পিঙ্কি বাড়ি ফিরেছে। সমাদ্দার স্যারের কাছে ওদের আর যাওয়া হয়নি। নিনা বৌদি সামনের থানায় ওসিকে জানিয়ে ছিল। সেখান থেকে ওদের আজ বিকেলে ডেকে পাঠিয়েছে। ভেবেছে প্যাসেঞ্জার না থাকলে যাবে একবার।

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post ননীবালার হত্যাকান্ড| বাংলা গোয়েন্দা প্রিমিয়ার লীগ | দীপঙ্কর পয়ড়্যা| Bengali Detective Story
Next post সাম্যময় রায়ের গোয়েন্দাগিরি| বাংলা গোয়েন্দা প্রিমিয়ার লীগ | সৌম্যরূপ গোস্বামী| Bengali Detective Story