কোনারপুর হত্যাকান্ড | বাংলা গোয়েন্দা প্রিমিয়ার লীগ | সুপ্রিয় ব্যানার্জী | Bengali Detective Story
0 (0)

গল্পের চরিত্রসমূহ –

১. অর্জুন সান্যাল – গোয়েন্দা.

২. বিপিন রায় – অর্জুনের সহযোগী

৩. সুনীল পাল – গড়িয়া থানার পুলিশ অফিসার .

৪. বন্দনা পাল – কোনারপুর আই সি ডি এস এর সুপারভাইজার

৫. বাসুদা – অর্জুনের বাড়ির ভৃত্য

৬. রমেন বিশ্বাস

৭. অঙ্কিতা বিশ্বাস

৮. অজিত বিশ্বাস

৯. রেখা বিশ্বাস .

১ . অঘোর বিশ্বাস.

১১. পূজা বিশ্বাস

১২. অজয় বিশ্বাস

লোভ জিনিসটা এমন এক বস্তু যা যে কোন ব্যক্তিকে যখন তখন যা খুশি করাতে পারে ও ঘটাতে পারে। টাকা, পয়সা,সম্পত্তি,নাম-যশ এইসবের লোভে মানুষ যে কত রকমের অকাজ কুকাজ করে ফেলতে পারে তার বহু প্রমাণ আমরা বহুকাল ধরে পেয়ে আসছি। লোভ যে কত ধরনের অপরাধের জন্ম দিতে পারে তার হিসাব করা অসম্ভব। লোভের বলি যে কত মানুষ আজ পর্যন্ত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু এত কিছুর পরেও সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন এই লোভের বলি নিষ্পাপ শিশুরা হয় এবং সেটা আমাদের সমাজের পক্ষে এক মর্মান্তিক অভিশাপ হিসেবে নেমে আসে। সামান্য কিছু অর্থ ও সম্পত্তির লোভে নিষ্পাপ শিশুদের বলি হয়ে যেতে হয়। এই ধরনের ঘটনার কিছু কিছু প্রকাশ পায়, অনেক ঘটনা তো আবার লোকচক্ষুর অন্তরালে অস্তমিত হয়ে যায়। বিচারব্যবস্থার আঙিনায় অনেকেই হয়তো সুবিচার পায় তবে নিষ্পাপ শিশুদের প্রাণ কি আর ফিরে আসে এই জগতে? তাই আজ এরকম এক মর্মস্পর্শী ঘটনা নিয়ে লিখতে চলেছি যা আমাদের চোখের সামনে ঘটেছিল।

এটা আজ থেকে বছর আটেক আগের ঘটনা। সময়টা ছিল ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি। শীত প্রায় জাঁকিয়ে বসতে চলেছে কলকাতা শহরে। সকাল সকাল একটু কুয়াশাচ্ছন্ন রয়েছে আবহাওয়াতে। বারটা ছিল রবিবার। শীতকাল বলে আমি মর্নিংওয়াকটা একটু বেলা করে করতাম। প্রায় সকাল সাতটার পর একটু বেরিয়েছিলাম। হাঁটা শেষে একটা পার্কে আমি ব্যায়াম করার সময় আমার পরিচিত কয়েকজন লোক কী যেন একটা ঘটনা বলাবলি করছিল। আমি জিজ্ঞাসা করতেই একজন লোক আমাকে বলল, নিউ গড়িয়া স্টেশনের পাশে কোনারপুর মাঠে নাকি এক বছর আর দশেক মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতদেহটির মাথা ও ডানহাতটা পুরোপুরি কাটা। ভোরের দিকে কয়েকটা কুকুর ওই বস্তা বন্দি মৃতদেহটি মাটি থেকে টেনে তোলে তখনি আসে পাশের লোকজন লক্ষ্য করে ও পুলিশে খবর দেয়। তখন কার মতো ঘটনাটা শুনে আমি বাড়িতে ফিরে এলাম তবে চা খেতে খেতে টিভিতে এই ঘটনা সম্পর্কে খবর দেখতে লাগলাম। আর জানতে পারলাম যে মৃতদেহটি নিউ গড়িয়া স্টেশন লাগোয়া একটি মাঠে মাটির নিচে পুঁতে দিয়েছিল এবং সেটা হয়তো গত রাত্রে। মৃতদেহটির মাথা না পাওয়া যাওয়ায় পুলিশ এখনও পরিচয় জানতে পারেনি। পরনের পোশাক দেখে পুলিশ আন্দাজ করছে যে মৃত মেয়েটি কোনো অভিজাত পরিবারের হতে পারে।

স্নান সেরে জলখাবার খেয়ে একটু বইপাড়া দিকে গিয়েছিলাম সেখানে ওই ঘটনা নিয়ে বেশ আলোচনা করছিল সবাই। আমার এক সাংবাদিক বন্ধু কার্তিকবাবু তো আমাকে বলেই দিলেন, ‘কি বিপিন তোমার এলাকায় এরকম একটা হত্যাকান্ড ঘটে গেল, দেখো তদন্ত করে?’ আমি অবশ্য সেরকম কিছু বললাম না, তবে বাসায় ফেরার সময় একটা জিনিস খারাপ লাগছিল যে, এরকম একটা নিষ্পাপ ছোট্ট মেয়ের এরকম পরিণতি ঘটে গেল সে যে কারণেই হোক।

পরেরদিন খবরের কাগজে ঘটনাটাই বিশদে পড়লাম। কালকে যা দেখেছি বা শুনেছি তার সাথে পুলিশ তান্ত্রিক ও বলিপ্রথার উপরেও সন্দেহ করছে। এছাড়া পুলিশের অনুমান অন্য কোন জায়গাতে মেরে হয়তো ওই ফাঁকা জায়গায় পুঁতে রেখে গেছে। কোন বাইরের গ্যাং এর কাজ বা কোন অপহরণের পরিণতি ও হতে পারে। এই ঘটনাটা ঘটার পর বেশ কয়েকদিন ধরে টিভি খবরের কাগজে বেশ চর্চা চলতে লাগল। আমি কিন্তু প্রতিদিনই এই ঘটনার খুঁটিনাটি খবর রাখতে লাগলাম।

এদিকে অর্জুন নেই প্রায় দিন পনেরো হল। যাবার আগে আমাকে বলে গিয়েছিল দিল্লি যাচ্ছে ওখানে ওর কী যেন একটা কনফারেন্স আছে।

কী যেন মনে হল একবার বিকালের দিকে কোনারপুর এর দিকে হাঁটতে বেরোলাম। জায়গাটা আমাদের বাড়ি থেকে খুব বেশি হলে দু কিলোমিটারের মধ্যে। নিউ গড়িয়া স্টেশন থেকে যে রাস্তাটা গড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছে ঠিক সেই রাস্তার পাশে কিছুটা দূরে রেললাইন লাগোয়া ফাঁকা জায়গা রয়েছে। দেখলাম সেখানে কিছু ঝোপঝাড় রয়েছে। তবে এই রাস্তাটা বলা যেতে পারে স্টেশন থেকে বাস স্ট্যান্ড যাওয়ার শর্টকাট। একজন লোককে জিজ্ঞাসা করতেই ঠিক যে জায়গায় বস্তাবন্দী মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল সেটা দেখিয়ে দিল। দেখলাম জায়গাটা রাস্তার একেবারে ঠিক পাশে মাটিগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে খোঁড়াখুঁড়ির জন্য। রাস্তাটা সোজা গিয়ে রেললাইনে উপড়ে উঠে গেছে। জায়গাটা বেশ নিরিবিলি রাত্রের দিকে তো আরো শুনশান অবস্থায় থাকে। এরপর আমি ওখান থেকে একটু দূরে একটা চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করতেই দোকানদার বলল,

‘হ্যাঁ দাদা, এরকম ঘটনা আমি আগে কোনদিন দেখিনি। আমি দোকান খুলি প্রায় ভোর পাঁচটার সময়। অন্যদিনের মত আমি চা তৈরিতে ব্যস্ত ছিলাম, হঠাৎ দেখি কিছু লোকজন ওখানে দাঁড়িয়ে কী সব বলাবলি করছে। ভিড় দেখে আমিও যাই, দেখি কতগুলো কুকুর মাটি খুঁড়ে একটা বস্তাকে টেনে বের করছে এবং তাতে রক্তের দাগ রয়েছে। এর মধ্যে কেউ হয়তো পুলিশে ফোন করে দেয় আর একটা কলকাতা পুলিশের পেট্রোলিং ভ্যান আসে। তারা বস্তাটা খুলতেই দেখি একটা ন-দশ বছরের বাচ্চা মেয়ের দেহ তার আবার মাথাটা কাটা আর ডান হাতটাও নেই।’

আমি চা খাওয়া শেষ করে একটা সিগারেট ধরিয়ে প্রশ্ন করলাম, ‘মেয়েটির শরীরে কোন কাপড় ছিল?’

উত্তরে দোকানদার বলল, ‘হ্যাঁ দাদা একটা সুন্দর গোলাপী রঙের জামা পড়েছিল আহা কী নৃশংস ভাবে মেয়েটাকে মেরে দিয়েছে।’

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তারপর কী হল?’

উত্তরে দোকানদার বলল, ‘তারপর আর কী পুলিশ ওই বস্তাবন্দি দেহটা নিয়ে চলে গেল আর জায়গাটা ঘিরে কী সব করতে লাগল। তারপর তো অনেক সাংবাদিক টিভি খবরের লোকজন কয়েকদিন ধরে খুব এল।’

কথাবার্তা বলতে বলতে সন্ধ্যা গড়িয়ে এল। আমিও বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এখনও পর্যন্ত ঘটনাটা আমি যতটা জানতে পেরেছি সবটা একটা ডায়েরিতে লিখে রাখলাম।

শেষ পর্যন্ত যা বুঝতে পারলাম পুলিশের বয়ান অনুযায়ী তারা কেবলমাত্র কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করেছে। থানায় মিসিং ডায়েরিগুলোর সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে চেষ্টা করছে। তবে যেটা আসল ব্যাপার সেটা হল যে মেয়েটির পরিচয় এখনও পর্যন্ত জানতে পারা যায়নি এবং কাটা মাথা ওর ডানহাতটাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

যেমন আজকে সকালে খবরের কাগজে দেখলাম বরানগরের কুটি ঘাটের পাশেই একটি বাচ্চার কাটা হাত উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ এই কোনারপুরের হত্যা হওয়া মেয়েটির মনে করলেও পরে একটু দূরে একটি বাচ্চাছেলের দেহ উদ্ধার হয় এবং কাটা হাত ওই বাচ্চাটির বলে জানা গেছে।

প্রায় দুই সপ্তাহ পরে অর্জুন কলকাতায় ফিরেছে,মনে হচ্ছে খুব ব্যস্ত রয়েছে নিজের কাজে। দুদিন পরে একদিন সন্ধ্যাবেলায় আমি আর অর্জুন বসে চা খাচ্ছিলাম আমি চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বললাম, ‘জানো এর মধ্যে আমাদের এলাকায় একটা বীভৎস ঘটনা ঘটে গেছে!’

অর্জুন চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, ‘কোন ঘটনা?’

আমি কোনারপুর এর ঘটনার বিবরণ দিতেই অর্জুন আমাকে বলল, ‘তাহলে বরানগরের কুটি ঘাটে কাটা হাতটা ঐ মেয়েটির নয়?’

আমি একটু অবাক হয়ে বললাম ‘ও তার মানে সবকিছু আগে থেকে জানো।’

অর্জুন আমার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বলল, ‘শোনো আমি কলকাতায় না থাকলেও অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলেও আমার এলাকার সব খবর রাখি।’

আমি বললাম, ‘ঘটনাটা খুব মর্মান্তিক এরকম একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে দিয়েছে ভাবাই যায় না।’

অর্জুন চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, ‘তোমার তো দেখছি বার দুয়েক ঘুরে আসা হয়ে গেছে?’

আমি বললাম, ‘তুমি জানলে কি করে? আন্দাজ করে বলছ বোধহয়।’

অর্জুন এবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘একবার রাস্তার উপর থেকে আরেকবার খুব কাছে থেকে দেখে এসেছ।’

আমি কথাটা শুনে অবাক হয়ে সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললাম, ‘তুমি এত নিখুঁত ভাবে কী করে বলছ?’

অর্জুন চা টুকু শেষ করে আমাকে বসতে বলল,। আবার একটা সিগারেট ধরাল আর উঠে জানলার ধারে গিয়ে আমার দিকে মুখ করে বলল, ‘আমি তোমার জুতো জোড়াগুলো একটু লক্ষ্য করেছি মাত্র। যে জায়গায় এটা ঘটেছে সেখানে যেতে আমাদের এখান থেকে যে রাস্তাটা গেছে সেটা দিয়ে গেলেই মাঠটা শুরু হওয়ার আগে একটা ছাইয়ের ঢিপি আছে, কারণ পাশে একটা ছোট চীনা মাটির জিনিস তৈরীর কারখানা আছে। প্রথমবার তুমি ওই রাস্তার ওপরে ছাইয়ের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলে তাই ছাইয়ের কিছুটা অংশ তোমার জুতোর উপরে লেগেছে। আর দাগটা বেশ পুরনো। আর দ্বিতীয়বার তুমি ছাইয়ের উপর দিয়ে গিয়ে একেবারে মাঠে গিয়েছিলে তাই অন্য জুতোটা ছাইয়ের মধ্যে চাপা পড়ে গিয়েছিল।’

আমি বললাম, ‘তুমি তো দেখছি একেবারে অন্তর্যামী সব জেনে বসে আছ।’

এরপর আবার অর্জুনের মোবাইলে একটা ফোন এল আর ফোনে কথা বলতে বলতে অর্জুন অন্য ঘরে চলে গেল সেদিন রাত্রে আর কোন কথা হল না আমাদের।

পরেরদিন ভোরবেলা জুতোজোড়া পড়ে মর্নিং ওয়াকে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছি এমন সময় দেখি অর্জুন একটা ট্রাক স্যুট পরে আমার পাশে এসে বলল, ‘কোনদিকে যাচ্ছ ভায়া? ভাবছি একবার ওই কোনারপুরের স্পটে যাব, তুমি যাবে নাকি?’

আমি একটু অবাক হয়ে অর্জুনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অর্জুন আমার চোখের চাহনি দেখে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘সব সময় প্রফেশনাল হলে হয় না। সমাজের প্রতি একটা দায়িত্ব কর্তব্য থাকে, চলো সেটা একটু পালন করে আসি।’

এরপর আমরা কোনারপুর এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। অর্জুন কিন্তু বেশ জোরে জোরে হাঁটতে পারে। হাটতে হাটতে অর্জুনকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তোমার হঠাৎ এরকম মনে হল কেন এই কেসটা নিয়ে?’ অর্জুন বলল, ‘বাচ্চাদের উপর কোন রকম অন্যায় আমি মেনে নিতে পারি না।’

মিনিট কুড়ি হাঁটার পর আমরা ওই কোনারপুরের স্পটে পৌঁছে গেলাম। অর্জুনকে দেখলাম চারপাশ খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। তারপর হনহন করে ছাইয়ে ঢাকা ঢিপির ওপর দিয়ে ঝোপ-জঙ্গলের ভেতর দিয়ে গিয়ে ঠিক যে জায়গায় ঐ বাচ্চা মেয়েটাকে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল সেখানে গিয়ে দাঁড়াল। আমিও পিছু পিছু অর্জনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। এরপর অর্জুন মাঠের পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা রেললাইনের সাথে মিশেছে সেটা দেখে আমাকে বলল, ‘বুঝলে বডিটা কোন গাড়িতে করে আনা হয়েছিল এবং এখানে মোটামুটি আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে।’

আমি বললাম, ‘টাইমিংটা তুমি কী করে আন্দাজ করছ?’

অর্জুন আমাকে বলল, ‘দেখো এখান থেকে নিউ গড়িয়া স্টেশন মাত্র হেঁটে মিনিট দশ বারোর রাস্তা। শিয়ালদহ থেকে শেষ লোকাল ট্রেন ছাড়ে রাত্রে এগারোটা চল্লিশ নাগাদ যেটা এই নিউ গড়িয়াতে পৌঁছায় প্রায় বারোটা কুড়ি নাগাদ। স্টেশন থেকে লোকজনের যাতায়াত চলে এখান দিয়ে প্রায় রাত্রি একটা পর্যন্ত। আবার ভোরবেলায় প্রথম লোকাল ট্রেনের সময় এখানে তিনটে চল্লিশের মত। আর লোকজনের যাতায়াত শুরু হয়ে যায় তিনটের পর থেকে। তার মানে বডিটা ওই সময়ে এখানে আনা হয়েছিল লোকজনের যাতায়াত এর আগেই এখানে পুঁতে দেওয়া হয়েছে।’

আমি বললাম, ‘ঠিক বলেছ।’

অর্জুন আশপাশ আরো ভালো করে দেখে বলল, ‘চলো এবার যাওয়া যাক।’ বলে পকেট থেকে মোবাইল বের করে কয়েকটা পটাপট ছবি তুলে নিল। তারপর আবার আমরা হাঁটা লাগালাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।

সকালে চা খেতে খেতে আমি সরাসরি অর্জুনকে প্রশ্ন করলাম, ‘আচ্ছা এটা কোনো কিডন্যাপের কেস নয় তো? মানে ধরো বাইরে থেকে মেয়েটাকে আনা হয়েছিল। তারপর মুক্তিপণ না পাওয়ার জন্য মেরে ফেলা হয়েছে।’

অর্জুন বলল, ‘উঁহু তা নয়,’ বলে আবার চায়ের কাপে চুমুক দিল।

আমি বললাম, ‘কেন নয়?’

অর্জুন বলল, ‘কিডন্যাপ এর কেস হলে প্রথমত যারা কিডন্যাপ করে তারা সহজে মেরে ফেলে না। যদি বাড়ির লোক মুক্তিপণ না দেয় তাহলে বাচ্চাদের সহজে কোথাও বিক্রি বা পাচার করে দেওয়াই তো স্বাভাবিক। এইভাবে মেরে তো কোন লাভ নেই।’

আমি চায়ের কাপটা রেখে দিয়ে বললাম, ‘পুলিশ তো মনে করছে কোন তান্ত্রিক বলি দিয়েছে।’

অর্জুন এবার চায়ের কাপটা নামিয়ে একটু মুচকি হেসে বলল, ‘বলি! মানে নরবলি! সেটা তো একদমই নয়।’

আমি বললাম, ‘তুমি কিভাবে সিওর হচ্ছ?’

অর্জুন প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরিয়ে বলল, ‘তুমি ওই মেয়েটার ছবিগুলো দেখেছ?’

আমি বললাম, ‘ হ্যাঁ পেপারে তো দিয়েছিল প্রথম প্রথম।’

অর্জুন এবার পাশের টেবিলে থাকা ওর মোবাইলটা হাতে নিয়ে কয়েকটা ছবি বের করে আমাকে দেখিয়ে বলল, ‘দেখো ভালো করে মাথা আর হাতের কাটা অংশটা, দেখে মনে হচ্ছে না কোন ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছে আর সেটা অসমানভাবে।’

আমি বললাম, ‘হ্যাঁ ঠিক বলেছ। বলি দিলে তো সমানভাবে কাটা থাকতো।’

অর্জুন সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, ‘যাইহোক, এসব করা হয়েছে স্রেফ মেয়েটির পরিচয় লুকোবার জন্য।’

আমি বললাম ‘মাথাটা না হয় কেটেছে যাতে কেউ চিনতে না পারে কিন্তু ডান হাতটা কেন কাটল তা তো বুঝতে পারছি না।’

অর্জুন মোবাইলটা ঘাঁটতে ঘাঁটতে বলল, ‘হয়ত হাতে কোন চিহ্ন বা উল্কি জাতীয় কিছু ছিল যেটাতে তার পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যেতে পারত।’

আমি বললাম, ‘হতে পারে।’

অর্জুন এবার সিগারেটটা আ্যসট্রেতে ফেলে দিয়ে উঠে বলল, ‘আমি একটু বেরোচ্ছি পরে তোমার সাথে কথা হবে।’ এই বলে অর্জুন উঠে কোথায় চলে গেল

এরপর মাস দুই ধরে কেসটার আর কোনো অগ্রগতি হল না।

কিন্তু একটা কথা আছে অপরাধের বিচার দেরি হলেও সেটা কিন্তু হয়। কেসটার ক্ষেত্রে হঠাৎ একটা ঘটনা মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। প্রায় বহুদিন পর অর্জুন আর আমি দারুন আলোচনায় বসেছি। কিন্তু সেটা হয়েছে আমাদের গড়িয়া শ্রীনগর থানার পুলিশ অফিসার সুনীলবাবু আসাতে। তিনজনে বসে বেশ জমাটি আড্ডা চলছে। চায়ের সাথে বাসুদার তেলেভাজা এক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যাকে যেন আরও মনোহর করে তুলেছে। কথায় কথায় নানান ঘটনার প্রসঙ্গ উঠতেই কোনারপুরের কেসটার কথা উঠল।

সুনীলবাবু বললেন ‘বুঝলেন অর্জুন স্যার এই কেসটার ক্ষেত্রে আমরা কোন সূত্র বের করতে পারলাম না। আর মজার ব্যাপার হল আশেপাশের কোন থানায় মিসিং কমপ্লেন এর সাথে ওই বাচ্চা মেয়েটার কোন মিল পাইনি।’

অর্জুন যথারীতি একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বলল, ‘শোনো সুনীল ভুলে যেও না আমিও আগে তোমাদের ডিপার্টমেন্টেই ছিলাম। পিছন থেকে কারো লাথি বা চাপ না থাকলে কেসের যে কী হয় তা আমাকে বোঝাতে এসো না।’

সুনীলবাবু একটু লজ্জা পেয়ে বললেন ‘না-না অর্জুন স্যার, তা নয়। তবে এই কেসটার ক্ষেত্রে জানেন এত হইচই হওয়ার পরেও সামনে থেকে কেউ এগিয়ে এসে কোন ইনফরমেশন দেয়নি বা জানার চেষ্টা করেনি।’

অর্জুন এবার সিগারেটের ছাই ফেলতে ফেলতে বলল, ‘আমি তোমাদের কোনো দোষারোপ করছি না তবে জানি তোমাদের কত রকমের চাপ সহ্য করে কাজ করতে হয়। আচ্ছা ছাড়ো নতুন কোন আপডেট আছে কি?’

সুনীলবাবু মাথা চুলকে বললেন, ‘না স্যার তেমন কিছু নেই।’

এর কিছুক্ষণ পর আমাদের আড্ডা শেষ হয়ে গেল। সুনীলবাবু চলে গেলেন। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর অর্জুনকে দেখলাম খুব মনোযোগ দিয়ে মোবাইলে কী যেন দেখছে। কাছে গিয়ে বুঝতে পারলাম ওই কোনারপুরের ছবিগুলো দেখছে। আমি শুতে চলে গেলাম।

হঠাৎ রাত্রি দুটো নাগাদ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে বাথরুমের দিকে এগোতে গিয়ে দেখলাম ডাইনিং হলে আলো জ্বলছে। টেবিলের উপর ল্যাপটপটা খোলা আর অর্জুন অস্থিরভাবে পায়চারী করছে। আমি বললাম, ‘তুমি এখনও ঘুমাওনি?’

অর্জুন আমার কথা শুনে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকাল আর তারপর আমার কাছে এসে বলল, ‘একটা সূ ত্র পেয়েছি বুঝলে। মানে ধরো খড়ের গাদায় সত্যি সত্যি একটা সুচ আছে সেটা কনফার্ম। শুধু গাদাটা সরাতে হবে।’

আমি লক্ষ্য করলাম অর্জুনের চোখেমুখে কেমন যেন একটা উৎসুক ভাব। আমি বললাম, ‘ঠিক আছে তুমি ওই সব করো। আমি কিন্তু শুতে যাচ্ছি বলে বাথরুম থেকে এসে আবার শুয়ে পড়লাম।

জানি না সেদিন রাত্রে অর্জুন কী এমন পেয়েছিল এরপর যেন সে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বেশ কয়েকদিন পরে আমি একটু বাইরে থেকে ফিরছিলাম ঘরে ঢুকে দেখি একজন মাঝবয়সী মহিলা পরনে আকাশী রঙের শাড়ি। অর্জুনের সাথে কী যেন সব কথা বলছে। তারপর ওই মহিলা চলে গেলেন।

আমি সোফার উপর বসে বললাম ‘ওই মহিলাকে তো ঠিক চিনলাম না?’

অর্জুন বলল, ‘ও! উনি হচ্ছেন কোনারপুর আইসিডিএস এর সুপারভাইজার বন্দনা পাল।

আমি বললাম, ‘তা উনি হঠাৎ আমাদের বাড়িতে এসেছেন কোন বিপদে পড়েছেন নাকি?’

অর্জুন একটু হেসে বলল, ‘উনি তো হচ্ছেন এই কেসের একজন চাবিকাঠি।’

আমি বললাম, ‘চাবিকাঠি?’

অর্জুন বলল, ‘তুমি এখন বুঝতে পারবে না। ক্রমশঃ প্রকাশ্য।’

আমি আবার বললাম, ‘আচ্ছা কেসটার কি হল? নতুন কিছু পেলে?’

অর্জুন বলল, ‘আর একটু তারপর জাল গোটাব।’

আমি উৎসাহের সাথে বললাম, ‘তার মানে কেস সলভ করে ফেলেছ?’

অর্জুন বলল, ‘দাঁড়াও ভাই অত তাড়াহুড়ো কোরো না। আগে আমার হাতে আরো কিছু রসদ আসতে দাও তারপর দেখছি।’

এরপর অর্জুন জুতো পড়ে কোথায় চলে গেল।

সন্ধ্যাবেলায় কোথা থেকে ফিরে এসে অর্জুন আমাকে বলল, ‘ভায়া কাল তোমাকে আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে।’

আমি বললাম, ‘কোথায়?’

অর্জুন বলল, ‘দাঁড়াও আগে একটু চা খাই। ‘তারপর চা খেতে খেতে অর্জুন বলল, ‘নেতাজি নগরে কাল একটা অ্যাক্সিডেন্ট হতে চলেছে।’

আমি প্রশ্ন করলাম, ‘অ্যাক্সিডেন্ট? কিসের অ্যাক্সিডেন্ট?’

অর্জুন বলল, ‘কাল সকাল সাড়ে দশটার সময় আমরা নেতাজি নগরে চৌরাস্তায় দাঁড়াব। আমি একটা গাড়ির সামনে ইচ্ছা করে গিয়ে পড়ব আর মাটিতে গড়াগড়ি দিতে থাকব। তুমি জোরে জোরে অ্যাকসিডেন্ট অ্যাকসিডেন্ট বলে চিৎকার করে আমাকে নিয়ে পাশে থাকা সরকারি হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাবে। তারপর আমি দেখে নিচ্ছি।’

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কিন্তু এসব কেন আমরা করতে যাব?’

অর্জুন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দেখো না এই ঘটনার ফলে কী উঠে আসে।’

পরেরদিন অর্জুনের কথা মত আমরা গিয়ে নেতাজি নগরে চৌরাস্তার মোড়ে সকাল দশটার মধ্যে হাজির হলাম। অর্জুনকে দেখলাম ফোনে কার সাথে একটু কথা বলে নিল। একটু চোখ ঘোরাতে দেখি রাস্তার অন্য ধারে একটা পুলিশের ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। আর ভিতরে দেখে মনে হল সুনীলবাবু বসে আছেন। অর্জুন একবার হাত তুলে ইশারা করে দিল। আমি দাঁড়িয়ে আছি বটে তবে মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না কী যে ঘটছে।

প্রায় দশটা পনেরো মিনিট নাগাদ চৌরাস্তার পাশে থাকা সেন্ট লরেটো স্কুলের ছুটির ঘন্টা বাজল, আর সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর বাচ্চা ছেলে মেয়েরা স্কুল থেকে বেরিয়ে আসতে লাগল এবং গাড়িতে চেপে সব ছেলেমেয়েরা রওনা দিতে লাগল। হঠাৎ অর্জুন আমাকে আস্তে করে বলল, ‘বিপিন এবার তৈরি থেকো। ওই দেখো দূরে লাল গাড়িটা আসছে। আমি সামনে যেতেই তোমাকে কাল যেমন বলেছিলাম তেমন ভাবে শুরু করে দেবে।’

দেখলাম একটা লাল গাড়ি আস্তে আস্তে আমাদের দিকে রাস্তা দিয়ে এগিয়ে আসছে। গাড়ির ভিতরে বছর নয়-দশ এর একটি মেয়ে স্কুল ইউনিফর্ম পড়ে বসে আছে। আর একজন ভদ্রলোক গাড়িটা চালাচ্ছে। আমাদের কাছে গাড়িটা আস্তে অর্জুন গাড়ির সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে রাস্তার পাশে পড়ে গিয়ে ছটফট করতে লাগল। গাড়িটার গতিবেগ বেশি না থাকায় জোরে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে যেতেই আমি জোরে, ‘অ্যাকসিডেন্ট অ্যাকসিডেন্ট ‘বলে চিৎকার শুরু করে দিতেই আশপাশ থেকে বেশ কিছু লোক জড়ো হয়ে গেল। এরমধ্যে ওই গাড়ি থেকে একজন বছর পঞ্চাশের ভদ্রলোক নেমে এসে বলতে লাগল, ‘আমি কিছু করিনি,এই ভদ্রলোকই তো আমার গাড়ির সামনে চলে এল ইচ্ছা করে।’ এদিকে অর্জুন একটা পা হাতে করে চেপে ধরে যন্ত্রণায় চিৎকার করতে লাগল। এর মধ্যে সুনীলবাবু ভ্যান থেকে নেমে এসে একজন কনস্টেবলকে নিয়ে এসে বলল, ‘কি হয়েছে অ্যাক্সিডেন্ট?’ গাড়ির ওই ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনিই কি গাড়ি চালাচ্ছিলেন?’ লোকটি সুনীলবাবুকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছিল। আমি এবার জোরে বললাম, ‘আগে চলুন এঁকে পাশে থাকা ঐ হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাই।’ আমরা আশেপাশের কিছু লোকজন মিলে ধরাধরি করে অর্জুনকে হেলথ সেন্টারের ভিতরে নিয়ে গেলাম। সেন্টারের ভিতরে নিয়ে একটা বেডের উপর অর্জুনকে শুইয়ে দিলাম। লক্ষ্য করলাম সেন্টারে ভিতরে আকাশী রঙের শাড়ি পরিহিতা সেই বন্দনা পাল মহিলা চেয়ার টেবিলে বসে ছিলেন। উনি উঠে এসে বললেন, ‘আরে আরে কি হয়েছে এঁর?’ সুনীলবাবু মোবাইলটা নিজের কানে ধরে বললেন, ‘রোড অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে ম্যাডাম তাড়াতাড়ি একটু দেখুন এঁকে।’ এরপর দরজার বাইরে মুখ বের করে বললেন, ‘ওই ভদ্রলোক কোথায় যার গাড়িতে অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে?’ সেই গাড়িওয়ালা লাল গেঞ্জি পরা ভদ্রলোক ও সঙ্গে ছোট স্কুল ড্রেস পরা ছোট মেয়েটি ভিতরে প্রবেশ করল। অর্জুনকে দেখলাম চোখ বুজে অজ্ঞানের মতো ভান করে শুয়ে আছে। ওই গাড়িওয়ালা ভদ্রলোক পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছতে মুছতে বেশ অবাক হয়ে অর্জুনকে দেখতে লাগল। ওঁর সাথে আসা সেই ছোট্ট মেয়েটিকে সুনীলবাবু পাশে একটা টুলে বসতে বলে হেলথ সেন্টারে সুপারভাইজার বন্দনা পালকে বললেন, ‘ম্যাডাম আপনি একটু চেক করুন তো এঁর কী হয়েছে?’ এবার সুনীলবাবু ওই গাড়িওয়ালা ভদ্রলোককে বললেন, ‘আপনার নামটা বলুন তো কি?’ লোকটি এতক্ষণ অর্জুনের দিকে তাকিয়ে ছিল তারপর থতমত খেয়ে বলল, ‘আমার নাম অজিত বিশ্বাস।’

সুনীলবাবু এবার একটু গম্ভীর ভাবে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনার বাড়ি কোথায়?’

অজিতবাবু বললেন, ‘আমার বাড়ি কোনারপুরের দর্জি পাড়ায়।’

এবার সুনীলবাবু মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এটা কি আপনার মেয়ে?’

অজিতবাবু একটা ঢোক গিলে বলল, ‘হ্যাঁ মানে না ওটা আমার ভাইজি অঙ্কিতা। ওকে স্কুল থেকে নিতেই তো আমি এসেছিলাম।’ অর্জুনের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, ‘এই লোকটি হঠাৎ আমার গাড়ির সামনে এসে পড়ল।’

সুনীলবাবু এবার বাইরের উৎসুক পাবলিকদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘যান আপনারা নিজের নিজের কাজে যান আমরা সব দেখছি এদিকে।’

বন্দনা পাল সুনীলবাবুকে বললেন, ‘আমি পেশেন্টের পালস বিপি সব চেক করেছি। উনি পায়ে একটু চোট পেয়েছেন। সেরকম কিছু না, তবে অ্যাক্সিডেন্টের শক পেয়েছেন। কয়েকদিন রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবেন।’

এবার সুনীলবাবু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনি সঙ্গে ছিলেন তো পেশেন্টের জ্ঞান ফিরলে বাড়িতে পৌঁছে দেবেন আমাদের গাড়িতে করে। আর অজিতবাবু আপনি আমার সাথে একবার থানায় চলুন।’

অজিতবাবু একটু কিন্তু কিন্তু করলেও সুনীলবাবু তার ভ্যানে করে অজিতবাবু ও তার ভাইজি অঙ্কিতাকে নিয়ে চলে গেলেন। সুনীলবাবুর চলে যেতেই অর্জুন তড়াক করে সেন্টারের বেডের উপর উঠে বসে বন্দনা পালকে বললেন, ‘ম্যাডাম বোঝা গেল কিছু একই সেই অঙ্কিতা না অন্য কে?’

বন্দনা পাল বলল, ‘না স্যার এ সেই অঙ্কিতা নয়।’

অর্জুন কী একটা চিন্তা করে আবার বলল, ‘আপনি সিওর তো?’

বন্দনা পাল নিশ্চিত ভাবে উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ স্যার আই এম ড্যাম সিওর, কারণ অঙ্কিতা ডান হাতের কনুই এর উপর এ অংশে একটা জরুল ছিল আর হাতের কব্জির উপর ছোট কাটা দাগ ও ছিল।’

অর্জুন জুতোটা পড়তে পড়তে বলল, ‘থ্যাঙ্কস ম্যাডাম, আমরা তাহলে আসি।’

আমি আর অর্জুন বেরিয়ে চলে এলাম এবং একটা ট্যাক্সি ধরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ট্যাক্সিতে যেতে যেতে দেখলাম অর্জুন ফোনে কার সাথে কথা বলতে শুরু করে দিল। কিছুক্ষণ পর ফোন রাখতেই বললাম, ‘ব্যাপারটা কী ঘটল আমার মাথায় ঢুকছে না।’

অর্জুন বলল, ‘চলো বাড়িতে চলো সব বলব। আমার খুব খিদে পেয়ে গেছে। তবে আজ সন্ধ্যাবেলায় তোমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

সন্ধ্যাবেলায় অর্জুন কিন্তু বাড়িতে ছিল না। বিকাল বেলায় কোথায় যেন বেরিয়ে গেছে। অর্জুন যখন ফিরল তখন রাত্রি সাড়ে দশটা। আমি কিন্তু না খেয়ে অর্জুনের অপেক্ষায় ছিলাম বাড়িতে ফিরতে আমি বললাম, ‘চলো আগে খাওয়া-দাওয়া সেরে নাও।’

অর্জুন আমার কাছে এসে বলল, ‘ভাই দেরি হয়ে গেল আসলে আমি যত সহজে ভেবেছিলাম ভেঙে যাবে অত সহজে ভাঙেনি তাই দেরি হল।’

খেতে খেতে অর্জুন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কেস সল্ভ, তুমি কী ব্যাপারটা আজকে শুনবে না কাল সকালে বলব, অবশ্য তুমি টিভি নিউজ খবরের কাগজে কাল ডিটেল পেয়ে যাবে।’

আমি বললাম, ‘না না আগে তোমার মুখ থেকে শুনব, তারপর না হয় অন্য কিছু।’

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে যথারীতি দুজনের সিগারেট ধরালাম। আমি বললাম, ‘ভায়া গোড়া থেকে বলো মানে সেদিন রাত্রে তুমি কী খুঁজে পেলে ঠিক সেখান থেকে বলো।’

অর্জুন সিগারেটে পরপর কয়েকটা টান মেরে বলল, ‘ডেডবডিটা যে জায়গায়টাতে পোঁতা হয়েছিল সেটা দেখে আমি প্রথম থেকে সিওর ছিলাম যে, এই লাশের মেয়েটির স্থানীয় কেউ এবং তার পরিচয় লুকাবার জন্য মাথা আ র ডান হাত কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল যে, আশেপাশের থানায় কোন মিসিং কমপ্লেন এর সাথে কেসটার মিল ছিল না। যাইহোক এবার আসি ওই রাত্রের কথায়। সুনীলবাবুর পাঠানো ছবিগুলো মোবাইলে দেখতে দেখতে মেয়েটির পরনের জামাটা ও তার মধ্যে একটা লোগো দেখতে পেলাম এটা স্প্যানিশ ভাষায় লেখা। ওই লোগোটা খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছিল আমার। অনেক চিন্তা করার পর আমার মনে পড়ল প্রায় আজ থেকে মাস চারেক আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্লথ এন্ড স্টিচেস মানে জামা কাপড়ের মেলা হয়েছিল। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জামা কাপড়ের স্টল এসেছিল। তা ওই মেলার বিজ্ঞাপন কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় দেওয়া হয়েছিল। তবে আমার চোখে কলকাতা এয়ারপোর্টে সেটা পড়েছিল। ওখানেই আমি এই লোগোটা প্রথম দেখি।

আমি বললাম, ‘তা এর সাথে মাডারের সম্পর্কটা কি?’

অর্জুন সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বোতল থেকে একটু জল খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দেখো যে কোনও মার্ডার কেস সলভ করতে হলে আগে ডেড বডির আইডেন্টিফিকেশন করাটা সবার আগে জরুরী। তাই লোগোটা দেখে একটা ব্যাপার আন্দাজ করলাম যে, ওই মেয়েটি হয়তো ঐ মেলায় গেছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে লালবাজারে আমার এক পুরনো সহকর্মী অনির্বাণ বসাকের কাছে থেকে মেলার সিসিটিভি ফুটেজ চাইলাম। কারণ ওই মেলাটাতে সাধারণত ভিআইপি ব্যক্তিরাই যায়, মানে জামা কাপড়ের দাম ডলার ইউরো হিসাবে থাকে। যাইহোক মেলা কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ কলকাতা পৌরসভার থেকে মেলার যাবতীয় তথ্য ফাইল ঘেঁটে যা বুঝলাম ঐ মেলায় মোট তিনটি স্প্যানিশ স্টল ছিল। প্রত্যেকটা স্টলের সিসিটিভি ও গেটের সিসিটিভি খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলাম। তবে এই কাজে সুনীল প্রচুর হেল্প করেছে। মেলাটা ছিল পাঁচ দিনের। মারা যাওয়া মেয়েটির মানে অঙ্কিতার বয়সী মেয়েগুলি মানে যারা স্প্যানিশ স্টলে এসেছিল প্রত্যেকের ছবি নিয়ে ডিটেলস চেক করতে শুরু করলাম। যারা কেনাকাটা করেছিল তাদের নাম-ঠিকানা মেলার রেজিস্টার থেকে পেয়ে গেলাম।’

আমি বললাম, ‘তারপর কি করলে?’

অর্জুন এবার উঠে দাঁড়াল, তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘অঙ্কিতার মতো প্রায় কুড়ি জন মেয়ের সন্ধান পেলাম। তারপর সুনীলের সাহায্য নিয়ে সবার ঠিকানাগুলো ভেরিফাই করতে শুরু করলাম।’

আমি এবার বললাম, ‘কিন্তু তুমি যে বলছ মেয়েটির নাম অঙ্কিতা, সেদিন তো ওই মেয়েটি সেন্টারে এসেছিল। তাহলে ওটা কে?’

অর্জুন মুচকি হেসে বলল, ‘ওটাই তো ভাই রহস্য। তাহলে এবার শোনো, মেলায় পাওয়া ঠিকানাগুলো ভেরিফিকেশনের সময় আমরা দেখলাম যে পঁচিশ জনের মত রয়েছে এবং তারা সবাই বাড়িতেই আছি আর পাঁচটা মেয়ের মতই। কিন্তু তার মধ্যে একটা নামের মধ্যে দুটো ঠিকানা পেলাম একটা কানাডার অন্যটা কো নারপুরের, ভদ্রলোকের নাম রমেন বিশ্বাস। পেশায় একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, ভদ্রলোক কানাডায় থাকে। ওঁর স্ত্রী মারা গেছে। একমাত্র মেয়ে অঙ্কিতা বিশ্বাস ওর এক খুড়তুতো সম্পর্কের ভাই অজিত বিশ্বাস যাকে তুমি কালকে দেখেছ, ওঁর কাছে থাকে কোনারপুরে।’ অর্জুন আবার একটা সিগারেট ধরাল আর আমাকে দিল।

আমি বললাম, ‘আচ্ছা আমাকে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে বলো তো অঙ্কিতা কে? ওকে তো সেদিন দেখলাম। তাহলে মারা গেছে সেই মেয়েটি কে? মানে আমার মাথায় ঢুকছে না ঠিক।’

অর্জুন সিগারেট একটা লম্বা টান দিয়ে বলল, ‘ওই মেয়েটি হল অজিত বিশ্বাসের মেয়ে পূজা বিশ্বাস।’

আমি তো শুনে অবাক হলাম তারপর বললাম, ‘তাহলে নিজেকে অঙ্কিতা বিশ্বাস বলছে কেন? আর অজিত বিশ্বাস নিজের ভাইজি বলে পরিচয় দিচ্ছেই বা কেন?’

অর্জুন এবার আমার পাশে এসে বলল, ‘পুরোটা শোনো আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে যাবে। রমেন বিশ্বাসের আসল বাড়ি হল বারুইপুর বেশ কয়েক বছর আগে কোনারপুরে বাড়ি করে, এবং সেখানে তার স্ত্রী ছায়া বিশ্বাস ও মেয়ে অঙ্কিতা বিশ্বাসকে নিয়ে থাকত। বছর ছয়েক আগে লিভার ক্যান্সারের ছায়া বিশ্বাস মারা যান। ছোট মেয়েকে একা কোনারপুরে কী করে রাখবেন বলে বারুইপুর থেকে ওর সম্পর্কের ভাই অজিত বিশ্বাস ও তার স্ত্রী রেখা বিশ্বাসের কোনারপুরের বাসায় নিয়ে আসেন যাতে অঙ্কিতার দেখাশোনার কোন অসুবিধা না হয়। এরপর রমেন বিশ্বাস আর বিয়ে করেননি, তবে একটা উইল তৈরি করে যান, যাতে তার অবর্তমানে সকল সম্পত্তি তার একমাত্র মেয়ে অঙ্কিতা বিশ্বাসের নামে থাকবে এবং অঙ্কিতা সাবালক হয়ে উঠল সে সব সম্পত্তি নিজে দেখাশোনা করতে পারবে। আর অঙ্কিতার দেখাশোনার জন্য অজিত বিশ্বাস একটা মোটা টাকা পাবে।’

আমি বললাম, ‘তারপর কী হল?’

অর্জুন বলল, ‘এরপর মাস চারেক আগে রমেনবাবু কানাডা থেকে আসেন নিজের মেয়ের কাছে। তখন ওই মেলাতেও যান। এর মাসখানেক পর কানাডায় তিনি ফিরে যান। কিন্তু ওখানে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। এদিকে রমেনবাবু মারা যাওয়ার ফলে তার সব সম্পত্তির মালিক অঙ্কিতা হয়ে যায়। এই সময় অজিত বিশ্বাস একটা ফন্দি আঁটে যাতে রমেনবাবু সব সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে পারে।’

আমি আবার অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, ‘অজিতবাবু কী করলেন?’

অর্জুন বলল, ‘বারুইপুরে অজিত বিশ্বাসের এক ছেলে অজয় ও এক মেয়ে পূজা থাকে। তাই অজিত বিশ্বাস প্ল্যান করে অঙ্কিতাকে কোনও ভাবে সরিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় নিজের মেয়ে পূজাকে অঙ্কিতা সাজিয়ে করে রেখে দেবে। আর একবার পূজার আঠারো বছর পার হয়ে গেলে সেসব সম্পত্তির মালিক নিজে নিজেই হয়ে যাবে।’

আমি বললাম, ‘বাবা! কি সাংঘাতিক পরিকল্পনা!’

অর্জুন বলল, ‘এবার খুনের প্রসঙ্গে আসি।’ অঙ্কিতা আগেই তার মাকে হারিয়েছিল। বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে সেও মনমরা হয়ে পড়েছিল বেচারী। তাই অজিত বিশ্বাস প্ল্যান করে বারুইপুর থেকে তার একজন সহযোগী অঘোর বিশ্বাসকে নিয়ে আসে। তারা ঠিক করে মাঝরাতে অঙ্কিতাকে খুন করবে তার পর ডেডবডি গায়েব করে দেবে। সেই মতো তারা সেদিন রাত্রে অঙ্কিতাকে খাবার সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেয়। এই কাজে অজিত বিশ্বাসের স্ত্রী রেখা বিশ্বাসও সাহায্য করে। অঙ্কিতা ঘুমিয়ে গেলে প্রথমে তার গলা টিপে মেরে দেয়। তারপর অজিত ও অঘোর দুজন মিলে মাথা ও ডান হাতটা কেটে দেয় যাতে অঙ্কিতার কোন পরিচয় কেউ না জানতে পারে। তারপর একটা বস্তায় ভরে গাড়ি করে অঙ্কিতার দেহটা কোনারপুরের মাঠের কাছে আনে ও মাটি খুঁড়ে দেহটা ঢুকিয়ে দেয়। যেহেতু এলাকাটা স্টেশনের কাছে তাই ভোরের দিকে প্রথম লোকাল ট্রেন ধরার জন্য লোকের আনাগোনা শুরু হয়। এই সময় তাড়াহুড়ো করে ডেডবডিটা ভালো ভাবে মাটির ভেতর পুঁতে দিতে পারেনি।

আমি বললাম, ‘ও তার জন্যই সকালে কুকুরে টেনে বস্তাটা বের করে ফেলে।’

অর্জুন বলল, ‘ঠিক তাই। এরপর তারা গাড়ি নিয়ে সোজা ব্যারাকপুর ঘাটের দিকে যায় ও একটা ব্যাগে কাটা মাথা ও হাতটা ভরে গঙ্গায় ফেলে দেয় এবং বাড়ি ফিরে আসে। পরেরদিন সকালবেলায় পূজাকে বারুইপুর থেকে নিয়ে আসে ও অঙ্কিতা সাজিয়ে রাখে।’

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় একটা বাজতে চলল। অর্জুন বলল, ‘যাও ভায়া শুয়ে পড়ো বাকিটা কাল সকালে শুনবে।’

আমি বললাম, ‘না- না দাঁড়াও আমি দু কাপ চা বানিয়ে আনছি। পুরো ঘটনাটা না শুনলে আমার ঘুম আসবে না।’

ঝটপট দুকাপ চা বানিয়ে আনলাম। তারপর চা খেতে খেতে আমি প্রশ্ন করলাম, ‘রহস্যের জটটা তুমি খুললে কী করে?’

অর্জুন চায়ের কাপে জোরে একটা চুমু দিয়ে বলল, ‘আমি ও সুনীল কোনারপুরের অঙ্কিতার বাড়িতে স্কুলের স্টাফ সেজে একটা বাহানায় যাই। অঙ্কিতার বাড়ির লোকদের ব্যবহার মনে সন্দেহ বাড়িয়ে দিল আমাদের। অঙ্কিতার সাথে দেখা করতে দেওয়া হল না। তবে আমরা দূর থেকে দেখেছিলাম। অজিত বিশ্বাস আমাদের বলল,’অঙ্কিতার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সে খুব মনমরা হয়ে আছে কারো সাথে বিশেষ কথা বলছে না।’

আমরা আশেপাশে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম অঙ্কিতা আগে মাঝে মাঝে বের হলেও এখন আর বের হয় না ঘর থেকে। কেবলমাত্র সকালে অজিত নিজে ওকে নেতাজি নগরে স্কুলে গাড়ি করে নিয়ে যায় আবার নিয়ে আসে। কিন্তু আগে অঙ্কিতা কাছের একটা স্কুলে পড়ত। সেখান থেকে তাকে এত দূরে স্কুলে কেন ভর্তি করা হল সেটাতে আমরা অবাক হই। ওদের ঘরে কল্পনা বলে একজন কাজ করত, তাকে হঠাৎ অজিতবাবু কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেয়। এরপর আমি ঠিকানা জোগাড় করে কল্পনার সাথে কথা বললাম। আচমকাই তাকে নাকি কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে একটা খবর দিল ওদের পাড়ায় হেলথ সেন্টারের সুপারভাইজার বন্দনা পাল নাকি একটা ভ্যাকসিন দিতে অঙ্কিতার বাড়ি গিয়েছিল। অজিতবাবু নাকি তাকে ঢুকতে দেয়নি আর বলে দিয়েছিল অঙ্কিতার কোন ভ্যাকসিন লাগবে না। অথচ বন্দনা পাল এর আগে অঙ্কিতাকে ভ্যাকসিন তার বাড়ি গিয়েই দিয়ে এসেছে।’

অর্জুন এবার চায়ের কাপটা রেখে একটা সিগারেট ধরাল আর আমাকেও দিল। আমি উত্তেজনার বশে সিগারেট ধরিয়ে বললাম, ‘তারপর কি হল?’

অর্জুন বলল, ‘বন্দনা পালের সাথে দেখা করলাম আর জানতে পারলাম অঙ্কিতার ডান হাতের কনুইয়ের ওপর জড়ুল ও কব্জির উপর কাটা দাগ আছে। এটা শোনার পর আমার মনে সন্দেহ দানা তৈরি হতে লাগল যে, বর্তমানে অজিতবাবুর বাড়িতে যে মেয়েটি আছে সে অঙ্কিতা নয়। তাহলে সে কে? সুনীলের সাহায্যে অজিতবাবুর বারুইপুরে আসল বাড়ি তদন্ত করতে জানতে পারলাম অজিতবাবুর ছেলে অজয় বারুইপুরে থাকলেও তার মেয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে আর নেই সেখানে। জিজ্ঞাসাবাদ করাতে একজন লোক বলল, অজিতবাবু নাকি তার মেয়েকে হাওড়াতে কোন এক হোস্টেলে রেখে দিয়ে এসেছেন পড়াশোনার জন্য। সব তারিখ সময় দেখে ব্যাপারটা আমার আর বুঝতে বাকি রইল না। তাই কনফার্ম হওয়ার জন্য যে, রমেনবাবুর বাড়িতে যে মেয়েটি আছে সে অঙ্কিতা নয়, সেদিন নেতাজি নগরে অ্যাক্সিডেন্টের নাটকটা করলাম। আর তার আগে সেদিন তো দেখলে বন্দনা পাল তো আমাদের বাড়িতে এসেছিল ওঁকে সব বুঝিয়ে দিয়েছিলাম।’

আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম, ‘এরপর অজিত বিশ্বাসকে কি করে ধরলে?’

অর্জুন বলল, বন্দনা পাল কনফার্ম করার পর অ্যাক্সিডেন্টের বাহানায় সুনীলবাবু অজিতবাবুকে থানার লকআপে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে অজিতবাবু স্বীকার না করলেও পরে আমি ও সুনীল যখন সব ঘটনা বলতে থাকি তখন উনি জেরায় ভেঙে পড়েন এবং সব বলে দেয়।’

আমি অর্জুনের হাতটা ধরে বললাম, ‘ভাই অনেক কেসে তোমার সাথে থেকেছি কিন্তু আজ তোমার জন্য আমার গর্ব হচ্ছে। সম্পত্তির লোভে ওই ফুলের মত মেয়েটাকে ওইভাবে মেরে দিল। ‘অর্জুন বলল, চলো ভাই এবার শোয়া যাক অনেক রাত্রি হতে চলল।’

সমাপ্ত

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post অন্ধকারের আড়ালে | বাংলা গোয়েন্দা প্রিমিয়ার লীগ | অর্ণব রায় | Bengali Detective Story
Next post মুখোশের আড়ালে | বাংলা গোয়েন্দা প্রিমিয়ার লীগ | সায়নী ভট্টাচার্য | Bengali Detective Story