Getting your Trinity Audio player ready...
|
পাতালেশ্বর মন্দির। রাত্রি ৯ টা শ্রাবণ মাসের তৃতীয় সোমবার। আরতি চলছে। এমন সময় আওয়াজ এল,
বাঁচাও, বাঁচাও। প্রাণ বাঁচানোর শেষ চেষ্টা ব্যর্থ হল। সমস্ত কিছু চুপ। ২ মিনিট পর আবার চিৎকার।
মানুষের জমায়েত, জলে চলে যাওয়া মানুষ থুড়ি লাশটা ভেসে উঠেছে। কি নারকীয় হত্যা! মনিহীন চোখের কোটর, নাড়িভুঁড়ি খুবলে খাওয়া – যেন কোনো হিংস্র জন্তু ছিঁড়ে খেয়েছে। ভিতর নিঃশেষ করে বাইরের খোলসটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। পেটের কাছে একটা ছোট্ট চিরকুট প্লাস্টিকে মুড়ে পিন দিয়ে আটকানো। বুকের কাছে যেন এক কৌটো সিঁদুর ঢালা, একজোড়া শাঁখা পরে আছে ঠিক তার পাশে।
চিরকুটে লেখা-
“হরির কীর্তন সাঙ্গ হল
চন্দ্রের পরে বসু এল
চিঠি যাবে গোকুল এবার
শুন্য শেষে, বামে হল নেত্রলাভ
সময় বুঝলে অর্থ বুঝবে
ইতিহাস জানলে তবেই খুঁজবে।”
বারাসাত থানা। সকাল ১১.৩৫। মুখে একটা পান পুরে বুড়ো বাবু রিসিভার তুললেন।
―হ্যালো, হ্যাঁ বলছি।
―আপনি কি বারাসাত থানার ও.সি অশোক ব্যানার্জী কথা বলছেন?
―আরে হ্যাঁ, আমি অশোক বাঁ ড়ুজ্জেই বলছি। কী হয়েছে?
― আমি কাশিমবাজার পুলিশ – ফাঁড়ি থেকে বলছি।
― ৩ নং। সেম কেস। লোকটার নাম ছিল হরিমাধব মুখার্জী। বাড়ি বারাসাত আর শ্বশুরবাড়ি কাশিমবাজার।
―আবার!
― হ্যাঁ, আচ্ছা। আপনাকে ডিটেল দিচ্ছি। লোকটির ব্যাপারে একটু খোঁজখবর নিয়ে জানাবেন।
―ওই কেসই হবে বুঝলেন। কোনো অভিশাপ লেগেছে বোধহয়।
―আপনি প্রথমত পুলিশ অশোকবাবু। আপনাদের মত মানুষ আজকের যুগে দাঁড়িয়ে এসব বিশ্বাস করে এদেরকে সুযোগ করে দেয়।
―না না। সেভাবে বিশ্বাস করছি না। কিন্তু এতদিন ধরে তদন্ত করেও তো কিছু করতে পারলাম না। না আপনারা না আমরা।
―হুঁ, আচ্ছা রাখছি। আপনি দেখুন ওদিক থেকে, আমরাও চেষ্টা করছি।
বুধবার, বিকেল ৪টে।
চাঁপাডালি তিতুমীর বাস টার্মিনাসের ভেতরে একটা চায়ের দোকানে বসে আছে দুজন। একজন অশোক ব্যানার্জী আরেকজন পিনাকী, পিনাকী সেনগুপ্ত। মাঝারি গড়ন, ফর্সা মুখশ্রী। পরনে জিন্স আর সবুজ রঙের পাঞ্জাবি, কোঁকড়ানো চুল, বয়স আন্দাজ ২৬-২৭ হবে। দেখে বোঝা মুশকিল উনি কোন ক্ষেত্রের মানুষ, পেশা কী।
― আরে, কী গল্প দিচ্ছ আশু দা। এ তো হালকা করে অদ্ভুতুড়ে, আবার রহস্যও আছে একটুখানি, অলৌকিকতা মিশিয়ে একদম ফুল থ্রিলিং প্যাকেজ।
― ইয়ার্কি মারছি না আমি। বরানগর, বারাসাত, বহরমপুর থানা তোলপাড় অবস্থা। তোর তো সব বিষয়েই পড়াশোনা। যদি অন্তত ওই ধাঁধাগুলোর কিনারা করতে পারিস তাই তোকে ডাকা। না পারলে ছাড়। বাড়ি যা।
― আচ্ছা, আচ্ছা। সরি। একটা ছোটো গোল্ডফ্লেক ধরিয়ে একটু ভেবে বলল, কয়েকটা জিনিস জানার আছে।
৩সপ্তায় ৩টে খুন? কত দিনের গ্যাপ? ভিকটিমদের পরিচয়? এর আগে যে ২টো ধাঁধার চিরকুট লাশের সাথে পাওয়া গেছে সেগুলো বলো।
― হ্যাঁ। গোনা ৭দিন।
১ম জন : নাম কাশীনাথ মাইতি। বাড়ি বরাহনগর। শশুরবাড়ি বহরমপুর। বয়স ৫০। সোনা ব্যবসায়ী। স্ত্রী ২ বছর হল মারা গেছে। ব্যবসার কাজে মুর্শিদাবাদে নিয়মিত যাতায়াত ছিল।
২য় জন: নাম রাধাকান্ত ঘোষাল। বাড়ি কাশিমবাজার। শশুরবাড়ি নৈহাটি। বয়স-৪৬। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সুদখোর হিসেবে দুর্নাম ছিল।
৩য় জন: নাম হরিমাধব মুখার্জী। বয়স-প্রায় ৫৫বছর। বাড়ি বারাসাত। শশুরবাড়ি কাশিমবাজার। গ্রহ রত্নের ব্যবসা বহরমপুরে। ডিভোর্সী।
― আচ্ছা বেশ। আর ধাঁধাগুলো? তোমার মনে আছে?
― হ্যাঁ। ওই নিয়েই তো ২০-২২ দিন চলছে। মুখস্ত আছে, যদিও বুঝিনি কিছু।
― ১নং লাশের থেকে পাওয়া গেছে সেটা হল
“ধর্ম না গুড়ুম, চোকাতেই হবে পাপের ঋণ /
ঁগয়া গেল কাশী এবার রাধা তুমি গোনো দিন।”
(১)
― মনে মনে বিড়বিড় করল পিনাকী। আর দ্বিতীয়টা।
― “রাধা তুমি রাজা হলে, শুনতে চাইলে সতীর কান্না
তুমি গেলে হরির পালা, গোকুলও ছাড় পাবে না
(৮)
― আচ্ছা। ৮ সংখ্যাটা কী ধাঁধার শেষে লেখা ছিল?
― হুঁ
― আচ্ছা। আর ৩ নংটা হল –
“হরির কীর্তন সাঙ্গ হল
চন্দ্রের পরে বসু এল
চিঠি যাবে গোকুল এবার
শুন্য শেষে, বামে হল নেত্রলাভ
সময় বুঝলে অর্থ বুঝবে
ইতিহাস জানলে তবেই খুঁজবে।”
-তোর মনে আছে? বাব্বাহ
– ৩টে খুন! নৃশংস, নারকীয় হত্যা নাকি অশরীরীর প্রতিশোধ? স্থান, সময় এক- কী করে সম্ভব! মোটিভই বা কী হতে পারে?
– ওখানকার পুলিশ তদন্তে ওই মন্দির, ঘটনাস্থলে গেলে গ্রামবাসীরা জানান অশরীরী টেনেছে। না হলে জলের তলায় কিভাবে কেউ খুন করতে পারে!
― আর খুনই যদি করবে তাহলে লাশ আবার ফিরিয়ে দেবে কেন?
― অশোক দা একটা কথা বলব?
― কী?
― হাজার দশেক টাকা দাও। আর ওখানকার পুলিশকে সংক্ষেপে আমার কথা জানিও।
আমি মুর্শিদাবাদ যাব।
দ্বিতীয় পর্ব
পরদিন ভোরের ট্রেন ধরে সকাল ১০:১৫ তে বহরমপুর পৌঁছালো পিনাকী। নতুন প্লাটফর্মকে পর্যন্ত চোখ মেলে দেখলনা। যেন তার সময় নেই। শুধু সামনে তাকিয়ে দেখল এটা ১নং প্ল্যাটফর্ম। ট্রেন যেদিকে গেছে তার উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করল। চুয়াপুর ব্রিজের কাছে টোটো স্ট্যান্ড। পিনাকী সোজা একজন মানুষের কাছে গিয়ে মাথায় একটা চাঁটি।
― কে বে?
― তোর হিটলার শ্বশুর বে।
― পিনাকী! কিন্তু আমি তো ইচ্ছে করে পিছন ফিরে আছি, অনেকক্ষণ ওদিকে তাকাইনি। তুই চিনলি কি করে? আর ইচ্ছে করে পাঞ্জাবি পড়েছি যাতে আমাকে চিনতেই না পারিস। কিন্তু কীভাবে? এত বছর পর!
― খুব সহজ। তোর মুদ্রাদোষে রে বেনজিন। পেছন ঘুরে থাকলেও তোর ডান হাতের বুড়ো আর তর্জনী অনবরত চুমু খাচ্ছিল, যেটা তুই এরকম কোনো পাকামির কাজ করলেই একমাত্র হত। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে পাঞ্জাবি তুই পরিস না। তাই প্রথমে তোকে ভাবিনি, কিন্তু আরেকটা জিনিস চোখে পড়ল। তোর মাথার পেছনের পোড়া দাগ। বাইক থেকে নেমে পাঞ্জাবিটা ঠিক করিসনি, পেছনের দিক উঠে আছে, তাড়াহুড়োয় ছিলিস আর অভ্যেসও নেই। ইউনিক ছিল তোর রুমাল ঢোকানোর স্টাইল ভাই।
― প্রণাম তোমাকে। এবার চল। নে সিগারেটটা ফুঁকে নে, নাকি গাড়িতে খাবি? আমি তো গোল্ডফ্লেক নিয়েছি। ওটাই চলে তো নাকি পাল্টেছে?
― না, না। পাল্টায়নি।
(সিগারেট জ্বালালো দুজনে)
― আচ্ছা, আমার বাড়ি থাকবি বলছিস, সে ঠিক আছে। বাবা হয়তো খিস্তি ফিস্তি দেবে, একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিস। আর তুই যেটা জানতে বলেছিলি, জেনেছি। কাশীনাথ মাইতি, রাধাকান্ত ঘোষাল এবং হরিমাধব মুখার্জী― এরা তিনজনেই মনীন্দ্রনগরের বাসিন্দা ছিলেন। যথাক্রমে ১, ৮, ৩ নং ওয়ার্ডে। কাশীনাথের জ্ঞাতি গুষ্টি কেউ নেই, এক শালার যাতায়াত ছিল তার বাড়িতে। নাম- রাজা, বয়স-৩২বছর, টিউশনি করে।
রাধাকান্তর ছোট ভাই রামচন্দ্র, বয়স আন্দাজ- ৩০বছর, চাকরির আশা ছেড়ে দাদার সঙ্গেই কাজ করতো। বাবা-মা আছে।
ডিভোর্সের পরে হরিমাধবের একমাত্র সম্বল ছিল তাঁর ছেলে মোহন। পড়াশোনায় মতি ছিলোনা বিশেষ, তাই বাবার ব্যবসার মান রাখার জন্যে গ্রহ-রত্ন সম্পর্কে পড়াশোনা করছিলেন ইদানীং।
এতে চলবে?
― একদম ভাই। তুই সত্যি বেনজিন! I am proud of you. তুই এত খোঁজ পেলি কী করে?
― আরে, তুই যতটা ভাবছিস ততটা কঠিন নয়। একজন পিচকে আছে আমার বিড়ি খাওয়া বন্ধু, পাড়াতুতো। ৫ প্যাকেট বিড়ি খরচ করতে হয়েছে আর কী!
― চল যাওয়া যাক
দুজনে গাড়িতে উঠে পৌঁছালো বেনজিন অর্থাৎ স্পন্দন সিংহের বাড়ি। কাশিমবাজার বড়ো রাজবাড়ির সামনের মাঠ ছেড়ে বাঁদিকে ৪নং বাড়ি, ওই গলি শেষ করে বাঁদিকে একটু গেলে পুলিশ ফাঁড়ি। আর বেনজিনের বাড়ির রাস্তার ঠিক উল্টোদিকে আরেকটা ওরকম গলি। ওই রাস্তা দিয়েই যাওয়া যায় পাতালেশ্বর মন্দির।
বেনজিনের বাবা একটু রগচটা হলেও পিনাকীকে ভালোবাসে। খাওয়াদাওয়া করে পিনাকী ওর ছোট্ট একটা ডায়েরিতে কী যেন একটা লেখালেখি করল, রেস্ট নিয়ে বিকেলে বে র হল দুজনে। প্রথমে গেল পুলিশ-ফাঁড়ি।
― ভাই আমার বাড়ির লোক যেন এসব ব্যাপারে কিছু না জানে। নাহলে মেরে চামড়া গুটিয়ে দেবে।
― না রে, কিছু জানবে না।
(ভেতরে ঢুকে)
সৌম্যদীপ সেন কে আছেন?
― বছর চল্লিশের এক ভদ্রলোক উত্তর দিলেন। কী হয়েছে? আমি এস.ডি. এস।
― স্যার, আমি পিনাকী। বারাসাত থেকে আসছি। অশোক ব্যানার্জী স্যার!
― ও আচ্ছা। শোনো, বাড়াবাড়ি কিছু কোরো না কিন্তু, এখন কী দরকার?
― হ্যাঁ, স্যার। আমি একটু ভিক্টিমদের বাড়ির লোকের সাথে কথা বলতাম। আমাকে তো এ্যালাও …আপনি যদি যেতেন সাথে
― কী আর করবে তুমি? সব খোঁজ নিয়েছি। অশোকবাবুকে তো জানিয়েওছি। চলো। কত হাতি গেল তল, মশা বলে কত জল! দেখো কি করতে পারো
― হাতিরা তো চিরকুট পায় নি স্যার। দেখি যদি মশা পায়!
― মানে?
― স্যার চলুন স্যার, প্লিজ।
― হুঁ
(মনীন্দ্রনগর ১নং ওয়ার্ড)
― “থানা থেকে আসছি” এস.ডি. এস বলল,
একজন যুবক সন্দিগ্ধ চোখে তাকাল। এসে ওপরে নিয়ে গেল।
(সিঁড়িতে উঠতে উঠতে)
― আর কতবার আসবেন বলুন তো। সবই তো বলা হয়েছে, খুঁজেছেন।
― আপনি রাজা তো? আচ্ছা আপনার জামাইবাবু কোনো চিরকুট পেয়েছিল? বলল পিনাকী।
― চিরকুট? কই শুনিনি তো
― মারা যাওয়ার আগে তিনি কি বইপত্র ঘাঁটতেন?
(এস.ডি. এস সহ বেনজিন এমনকি রাজাও অবাক)
― হুঁ। অনেক ধরণের বইপত্র পড়ত। বাড়ি থেকে বের হত না বিশেষ। নিজের ঘরে গদির ওপরে বসে থাকত আর কি যেন ভাবত।
― ইয়েস! কোথায় সেই গদি?
― দোতলায় উঠেই বাম দিকের ঘরে
(তোলপাড় করে খুঁজে অবশেষে গদির উপরে রাখা একটা ছোট সিন্দুকের ছোট পকেট থেকে বেরোলো একটা চিরকুট, কম্পিউটারে টাইপ করা)
― “সংখ্যায় গ্রহ পাও, বাংলা মাসের বেদ খুঁজে, সপ্তাহের প্রথম দিন,পাতালে যিনি অধিষ্ঠান, সেখান থেকে গোনো হাত বিশ আর পঞ্চবান মিলবে ধাতু আট, পূর্ণ হবে মনস্কাম।”
― “আবার ধাঁধা?” বলল এস.ডি. এস
― হুঁ। তাই তো দেখছি।
(সবাই একবার করে পড়ল)
― এটা মার্ডার। কোনো ভুতুড়ে ব্যাপার নয়।
আচ্ছা, ওনার সম্পত্তির কোনো উইল আছে?
― না। কিন্তু আমি ছাড়া তো জামাইবাবুর কেউ নেই। আমিই পাব।
― জোর দিয়ে কী করে বলছেন যে আপনিই পাবেন?
― তা কে পাবে? আমারই তো পাওয়ার কথা।
― আচ্ছা। বেশ। আগামী ৭দিন আপনি শহর ছেড়ে কোথাও যাবেন না।
নমস্কার, অনেক ধন্যবাদ রাজাবাবু। আবার দেখা হবে।
― (নীরবতা ভেঙে এস.ডি.এস বেনজিন নীচে নেমে গাড়িতে উঠলো)
― আচ্ছা, ভূতুড়ে ব্যাপার নয়, অলৌকিক নয়, এটা কি করে বলছ তুমি ? এস.ডি.এস বললেন।
―স্যার পাতালেশ্বর মন্দির যাবেন? না গেলে আমাদের কাছাকাছি নামিয়ে দিন। বেনজিনকে নিয়ে আমি একটু যাবো। কিছু মনে করবেন না স্যার, আমি ওখান থেকে ফিরে ওভার ফোন আপনাকে সমস্ত কিছু জানাবো। এখন সময় নেই।
এস.ডি.এস গেলেন না, ধনপতি লেনের সামনে পিনাকী আর বেনজিনকে নামিয়ে দিলেন। বেনজিনের সাথে পিনাকী পৌঁছলো পাতালেশ্বর মন্দির। মন্দিরে পথের সামনে মহাদেবের বড়ো একটা মূর্তি স্থাপিত, ভেতরে ঢুকে বামদিকে গোশালা, ডানদিকে নানারঙের ফুল ও পাতাবাহারের বাগান পেরিয়ে সোজা গেলে একটা বটগাছ তারপরেই সেই বিগ্রহ, মন্দির চাতাল। ভেতরে পাতালেশ্বর অধিষ্ঠিত।
― “শোনা যায়, ঠাকুর পাতাল ফুঁড়ে উঠেছে?” বেনজিন বলল।
― হুঁ, শিবলিঙ্গ দেখেই আন্দাজ করতে পারা যায়।
― দুজনেই প্রণাম করল। প্রনামি বাক্সে পিনাকী খুচরো পয়সা ফেলল।
― আচ্ছা চল।
(মন্দিরের পেছন থেকে কয়েকপা গুনে গুনে ফেলে থামল পিনাকী)
― কী রে, ওভাবে হাঁটছিলিস কেন?
― (মুচকি হেসে)
এমনি রে, চল বন্ধু চা খাই।
― কিছু তো বল ভাই।
―বলব তো, চল।
(বাইরে এসে)
― চায়ের দোকান তো অনেকগুলো। কোনটা ভালো?
― আমি তো এদিকে আড্ডা দিই না। তবে শুনেছি কালুদার চায়ের দোকান বিখ্যাত।
(জনৈক ব্যক্তির কাছের কালুদার চায়ের দোকানের ঠিকানা পেল)
― জলটা নেব? জিজ্ঞাসা করল পিনাকী।
―খাওয়ার জন্যে হলে নিন, হাত মুখ ধোওয়ার জন্যে নয়। জল কিনতে হয় দাদা।
― হু, পাতালেশ্বরের জল বলে কথা।
― মানে?
― না, একই মাসে পরপর তিন সপ্তাহে তিনজন মানুষকে তো জলেই খেল!
― জল না জলের পিশাচ। ওইখানে গেলেই মরে।
দেহ তোমার চর্মচর গলে পচে যাবে।
শিরা উপশিরা সবই ছিন্ন ভিন্ন হবে।
তোমার মুন্ডু, মেরুদন্ড সবই হবে খণ্ড খণ্ড।
শুয়ে রবে মাটির ওপর
(ততক্ষনে চুপ করে পিনাকী ও বেনজিন গান শুনছিলো)
― এই ক্ষ্যাপা! হাত দিবি না, দাঁড়া চা দিচ্ছি, বিস্কুট দিচ্ছি।
(ওকে চা বিস্কুট দিয়ে)
― কে ইনি? এত সুন্দর গলা।
― ওকে সবাই রায় ক্ষ্যাপা বলে। ভালো ঘরের ছেলে। ৩-৪ বছর আগেও শখের গান – বাজনা নিয়ে থাকতো আর মর্গে লাশ কাটার কাজ করত। হঠাৎ মাথা খারাপ হয়ে যায় তবে ভিক্ষা করেনা, কারও দানও নেয় না। নিজের পয়সাতেই খায়। আর ওই এক গানটাই করে বেশিরভাগ। একটা ছুরি সবসময় কাছে রাখে। ওই যে ঝুলছে।
― “জলে পড়বে, জ্বলে মরবে। আর ৪ দিন!” আওড়াচ্ছে রায় ক্ষ্যাপা।
― আর এই এক বুলি। ইদানীং বেশি ভুলভাল বকে।
― যাই হোক চা দিন। ছোট গোল্ডফ্লেক দুটো।
(সিগারেট জ্বালিয়ে পিনাকী রায় খ্যাপার দিকে এগোল, সিগারেট অফার করল ইশারায়)
(ক্ষ্যাপা সিগারেট নিল, জ্বালল)
― পিনাকী জিজ্ঞেস করল ৪ দিন পর কী হবে?
― জানিনা (হা: হা: হা:)
আবার ওই গানটা করতে করতে চলে গেল, দোকানের পাশের রাস্তা ধরে)
― “লোকটা অদ্ভুত”, তাই না? বলল বেনজিন।
― হ্যাঁ রে। আচ্ছা এইদিকে কী আছে?
― “ওই দিকে একটা মন্দির আছে। আনন্দময়ী কালি মন্দির। তার পিছনে আমবাগান ওখানে ও থাকে”, চা দিয়ে বলল কালুদা।
―আচ্ছা কালুদা, মন্দিরের ভেতরে যে ঘাট ওইটা কি গঙ্গার সাথে যুক্ত?
― ছিল দাদা কিন্তু এখন নেই। তাই ওর নাম এখন কাটিগঙ্গা।
― ওওও
তখন রাত ৮.৪০। বেনজিন পিনাকী বাড়ির পথে রওনা দিলো।
― হেস্টিংসের কন্যার সমাধি আছে জানিস? বলল বেনজিন।
― তাই? এখন যাওয়া যায়?
(হঠাৎ বেনজিন পিনাকীকে টেনে নিয়ে আছড়ে পড়ল মাটিতে, পিনাকী আগে উঠে বেনজিনকে টেনে তুলল)
― কি হয়েছিল?
― আরে বাইকটা তোকে তো ঠুকে দিছিলো।
― চালক কে কি চেনা লাগল ?
― না। গাড়ির নম্বরও দেখার সুযোগ হয়নি।
― ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বেনজিন মাটিতে একটা চিরকুটের মত কি পেল। তুলে নিয়ে পড়ল “সাবধান”।
― তাহলে বুঝলি ? এটা মার্ডার কেস। ভুত বা ঠাকুর দেবতা নিশ্চই কম্পিউটারে টাইপ করে সাবধান করবে না।
―ভয় করছে রে ভাই।
― কিছু হবে না। আচ্ছা কাল থেকে তোকে নিয়ে বের হব না।
― না ওসব হবে না, আমি থাকব। শুধু আমার বাবা না জানলেই হল।
(বাড়ি পৌছালো, রাত্রে খাওয়া দাওয়ার পর এস.ডি. এস কে ফোন করল। ইয়ারফোনের left side পিনাকীর কানে আর right side বেনজিনের)
― স্যার, পিনাকী বলছিলাম।
― হ্যাঁ বলো, কিছু পেলে?
― স্যার, ভুত -ঠাকুর ক্যান্সেল।
― কেন?
― আমার ওপর হামলার চেষ্টা হয়েছে এবং সাথে সাবধান হওয়ার হুমকি।
― আচ্ছা।
― আর কাশীনাথ বাবুর বাড়ি বা মন্দিরে গিয়ে কিছু পেলে?
― হ্যাঁ স্যার। তবে একটা কথা। আপনাকে আরেকটু হেল্প করতে হবে, করবেন?
― আচ্ছা, আগে তো বলো।
― দেখুন স্যার কাশীনাথ মাইতি কোনো অমূল্য জিনিসের খোঁজে বা লোভে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন এবং খুন হন।
― কি করে বলছচ?
― ধাঁধা স্যার। সংখ্যায় গ্রহ পাও।
নবগ্রহ – নয়। বাংলা মাসের বেদ- শ্রাবণ মাস। সপ্তাহের প্রথম দিন – সোমবার। অষ্টধাতু পাওয়ার কথা লেখা ছিল।
― আচ্ছা কিন্তু শুধু শুধু খুন করবে কেন ?
― সেটাই তো ভাবাচ্ছে স্যার।
― স্যার, সকালে আমাদের নিয়ে রাধাকান্ত আর হরিমাধব বাবুরবাড়ি যাবেন ? আমি যা ভাবছি যদি সেরকম কিছু হয় তবে চিরকুট ওই দুই বাড়িতেও পাবো।
শুক্রবার সকাল ১১ টা।
৮নং ওয়ার্ডের রাধাকান্ত ঘোষালের বাড়ি।
― চিরকুট? বলল রাধাকান্ত ঘোষালের ভাই রাম।
― “হ্যাঁ।” বললেন এস ডি এস।
― উনি কোন ঘরে বেশিরভাগ সময় থাকতেন?
― এই তো যে ঘরে আছি আমরা।
(অনেক খোঁজার পর চিরকুট পাওয়া গেল পুরোনো হিসেবের এক জাবদা খাতায়)
“পাতালের অধীশ্বর হল কল্পতরু/
তাঁর ব্রতের মাস, অনেক নামের একনাম বারে/ দিবা গতে বসু ঘন্টায়, কার্য শুরু/
মিলবে ধাতু আট, হাতছানি টাকার পাহাড়ে।”
বেলা ১ টা। ৩ নং ওয়ার্ডের হরিমাধব বাবুর গ্রহ রত্নের শোকেসে রাখা এক স্পঞ্জ থেকে মিলল চিরকুট।
“আশার বাসা ফিরে পাবি/
সতীর ঘাটে চলে যাবি/
সোমবার তিন সন্ধ্যার ঠিক পরে/
চলে আসিস ঘাটের পাড়ে/
মিলবে ধাতু আট, হয়ে যাবি সাহেব লাট।”
― আপনার বাবা পড়াশোনায় কেমন ছিল মোহনবাবু? জিজ্ঞেস করল পিনাকী
― ক্লাস সিক্সের পর আর পড়েননি যতদূর জানি
― আচ্ছা। ধন্যবাদ।
মিঃ সেন ফিরলেন। বেনজিন ও পিনাকী ঘরে ফিরল তখন বিকেল ৪টে। সন্ধ্যার পর পিনাকী কালুদার দোকান গেল। বেনজিন মাংস ভাত খেয়ে উল্টে ঘুম দিচ্ছে, তাই আর ডাকেনি। পিনাকী পড়ছিল, ঘুমায়নি।
― কালুদা, সতীর ঘাট বলে কোনো ঘাট চেনো?
― হ্যাঁ, আরে আমাদের এই মন্দিরের ঘাটই তো সতীদাহের ঘাট।
― ওওও
চা খেয়ে আনন্দময়ী মন্দির দেখতে গেল। ফিরে আসার পথে হঠাৎ তার চোখ পড়ল রায় ক্ষ্যাপার দিকে। আজ সে একা নেই।
ফোন বের করে একটা এস.এম.এস করে আবার পকেটে ঢুকিয়ে, জোরে হাঁটা শুরু করল পিনাকী। গ্যাসের গোডাউনটা পার হতে যাচ্ছে এমন সময় মাথায় আঘাত, মাটিতে লুটিয়ে পড়ল পিনাকী। জ্ঞান ফিরল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের বেডে। তখন রাত্রি প্রায় ১০টা। পাশে বেনজিন, ওর বাবা আর এস.ডি. এস।
― “কি করে হল ?” এস.ডি. এস জিজ্ঞেস করল।
― আন্দাজ করেছিলাম স্যার। তাই বেনজিনকে এসএমএস করেছিলাম। মাথায় আঘাত করে ভালোই করেছে। জটগুলো খুলছে, সবটা জলের মত পরিষ্কার। শুধু রক্ত বেরিয়েছে বেশ খানিকটা।
― “হেঁয়ালি না করে বলো,” বেনজিনের বাবা বললেন।
― বলছি। আমি চায়ের দোকানের পাশ দিয়ে দেখলাম, দেখলাম…
ঘুমে আচ্ছন্ন হল পিনাকী। নার্স জানালো ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। রেস্ট নিতে দিন।
শনিবার বিকেলে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেল পিনাকী।
বাড়ি ফিরে বেনজিনের বাবার কাছে বকা খেলো দুজনে।
সেদিন আর কোথাও বেরোতে পারল না। পিনাকী ফোন করল এস.ডি. এসকে।
মৃতদের ফরেনসিক রিপোর্ট চাইল।
হোয়াটসআপে রিপোর্ট দেখে আবার ফোন করল পিনাকী।
― স্যার, গোকুল নামে যত ব্যক্তি আছে খোঁজ করুন। আর কয়েকটা খবর জোগাড় করতে হবে আপনাকে।
(আরও কিছু কথা হল তাদের দুজনের)
রবিবার, সকাল ১১টা
― তাহলে স্যার ওই কথায় থাকল। আগামীকাল শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার। আমার মাথায় তিনটে সেলাই এর প্রতিশোধ নেবই। দেখা হচ্ছে পাতালেশ্বরে কাল সন্ধ্যায়।
সোমবার। রাত্রি ৮:৩০
একজন ব্যক্তি পৌঁছালো সতীদাহের ঘাটে। হঠাৎ জলে ঝাঁপ দিলো ৬জন সশস্ত্র পুলিশ। কিছুক্ষণ সবাই চুপ। ঘাটে লোকজন জমেছে। পিনাকী, বেনজিন ও এস.ডি. এস ঘাটের পাড়ে দাঁড়ানো। মিনিট দশেক পর উঠে এল পুলিশ সহ চেনা ৪জন ব্যক্তি।
রাজা রাম মোহন রায়।
তৃতীয় পর্ব
হ্যাঁ, ঠিক। কাশীনাথ মাইতির শালা রাজা, রাধাকান্তর ভাই রাম, হরি মাধবের ছেলে মোহন আর রায় ক্ষ্যাপা।
সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। যেন তারা এই ঘটনার জন্যে অপ্রস্তুত ছিল। তাদের চোখ যে কবার উঠেছে, পিনাকীর প্রতি ক্রোধের চোখ।
ইচ্ছে করছিলো পিনাকীকে গলা টিপে খুন করবে।
চলুন চলুন। মন্দির চাতালে একটা গল্প বলি।
সবাই অর্থাৎ বেনজিন, এস.ডি. এস, অশোক ব্যানার্জী,আর চারজন অপরাধীকে সামনে বসিয়ে শুরু করল পিনাকী।
―ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন ইতিহাসের এম.এ রাজা বাবু।
আবার দেখল একজোড়া বিস্ফারিত চোখ।
― দারুণ বুদ্ধিমান আপনি। বুদ্ধিটা ভালো দিকে কাজে লাগাতে পারতেন। বলেই চলল পিনাকী।
আমরা সবাই জানি রাজা রামমোহন রায় এর নেতৃত্বে সতীদাহ প্রথা রদ হয় ১৮২৯ সালে। তিনি বরানগর ঘাটে সতীদাহের বিরোধিতা করেন, চাকরি সূত্রে এসে এই সতীদাহের ঘাটেও নির্মম সতীদাহ দেখেছিলেন। কিন্তু তারপরেও কিছু ঘটনা ঘটে, যা সবার জানার কথা নয়। আমিও যদি ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরীতে স্বপন বসুর “সতী” বইটা না পড়তাম, আমিও এই কেসের কিছু করতে পারতাম না। ১৮২৯ সালে সতীদাহ বন্ধ হওয়ার পর খেপে ওঠে তখনকার কিছু শ্রেণীর মানুষ তথা মাথারা। তারা আন্দোলনে নামেন ১৮৩০ সালে। “চন্দ্রের পরে বসু এল/শূন্য শেষে নেত্রলাভ।
― মিলছে? ১এ চন্দ্র, ৮এ অষ্ট বসু, ৩এ নেত্র। সিগারেট ধরিয়ে আবার শুরু করল
― একটা সভা প্রতিষ্ঠা করেন, নাম দেন ধর্মসভা। কিন্তু শিক্ষিত মহল ওই সভাকে “গুড়ুম সভা” বলতেন। ওই দলের প্রাণপুরুষ ছিলেন কাশীনাথ তর্কবাগীশ, রাজা রাধাকান্ত দেব, হরিমোহন ঠাকুর আর গোকুলনাথ মল্লিক। তারা সতীদাহের ঘোর সমর্থক ছিলেন। ছয় মাসে উনিশটি সভা করে প্রায় ১১০০ জনের সই জোগাড় করেছিলেন, বেথীকে ৫০০০০টাকা পর্যন্ত দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে ওই আপিল পৌঁছে দেওয়ার জন্যে। কালাপানি পেরিয়ে ওই আইন লঙ্ঘন করার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও রাজা রামমোহন কড়া পদক্ষেপে ইংল্যান্ড পর্যন্ত গিয়ে তাদের মুখে ছাই ফেলেছিলেন। এ গেল ইতিহাস। কিন্তু কথা হল এর সাথে কেসের কী সম্পর্ক? ধাঁধার সমাধান করতে পারলেও সেই প্রশ্ন আমাকেও ভাবিয়েছিল। রাজা, রাম, মোহন ৩জন বেকার,শিক্ষিত। কিন্তু সবার কাছে লাঞ্চিত। না হল চাকরি, না পাচ্ছিল সম্পত্তি। ছক কষা শুরু হল। খুঁজে বের করা হল সমাপতন। নামগুলো মিলে গেল, মৃতদের কারও স্ত্রী তাদের সঙ্গে থাকত না, স্বামী হিসেবেও তাদের দুর্নাম ছিল। বাকিটা বানিয়ে নেওয়া গেল। এবার বুঝলেন লাশের সাথে শাঁখা আর সিঁদুরের থিওরি?
প্রথমে তাদেরকে হুমকি দেওয়া হল সম্পত্তি লিখে দিতে। কাজ হল না। তাই টোপ দেওয়া হল অষ্টধাতুর। আমি আর মিঃ সেন জেনেছি গোকুলবিহারী ও চিরকুট পেয়েছিল। যদিও প্রত্যাশিত। যা সবার বাড়ি থেকে আমরা পেয়েছি। সেখানে সিম্পলি স্থান, সময় আর মূল্যবান বস্তুর কথা লেখা ছিল। যেহেতু ৩জনেই কেউ সোনা,কেউ গ্রহ-রত্নের ব্যবসায়ী এবং একজন সুদখোর। সহজেই টোপ গিলল এবং খুন হল। সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না। সতীদাহের ইতিহাস দিয়ে, প্রতিশোধের গল্প বানিয়ে এ সুন্দর প্ল্যান। বেশ একটা অলৌকিক, ছমছমে গল্পের পরিবেশ। দারুণ, হাততালি।
আমাকেও ঘোল খাইয়ে দিয়েছিল।
তবুও একটা খটকা ছিলই। খুন তো অন্য ভাবেও করতে পারত? জলের তলায় নৃশংস ভাবে নাড়ি ভুঁড়ি ছেঁড়ার কী দরকার? স্রেফ ভয় দেখানো নাকি অন্য উদ্দেশ্যে?
এর কুলকিনারা করতে পারতাম না যদি রায় ক্ষ্যাপাকে না দেখতাম, কালুদার কাছে খোঁজ না নিতাম এবং মিঃ সেন খোঁজ খবর না নিতেন। সর্বোপরি রায় ক্ষ্যাপার গান না শুনতাম।
রায় ক্ষ্যাপা হলেন আজকের পরিকল্পিত শিকার গোকুলবিহারীর ভাই। মাথায় সমস্যা আছে, কিন্তু একেবারে বদ্ধ পাগল নন, তার মর্গে লাশ কাটার কৌশল ব্যবহার করেছে ওরা, সেটা টাকার বিনিময়ে। নাকি?
এটাও বুঝতাম না যদি শুক্রবার চার জনকে একসাথে না দেখতাম বা দেখার পরে তারা যদি আঘাত না করতো। আরেকটা সুবিধা হয়েছে। মাথায় স্টিচ করার সময় ডাক্তার বাবুর সাথে ওই কিডনি পাচার,কীভাবে কিডনি তুলতে পারে কেউ― এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাই তো ফরেন্সিক রিপোর্ট চাইলাম স্যার।
মিঃ সেন আপনি শুনে থাকবেন ইদানিং কিডনি চুরির পরিমাণ বেড়েছে। এই চার মক্কেল চোরা ব্যবসার সাথে যুক্ত। টোপ খেয়ে শিকার জলে নামলেই তার নলি কেটে তৎক্ষণাৎ মেরে ফেলা হতো, আর রায় ক্ষ্যাপা তার দক্ষ হাতে কিডনি তুলত, তারপর লাশ ভাসিয়ে দি ত, চিরকুট, শাঁখা সিঁদুর সমেত। লোকজনের জমায়েত এবং লাশের বীভৎসতা দেখার মুহূর্তে ওদের জল থেকে ওঠা কেউ লক্ষ্য করত না।
এই হচ্ছে গত এক মাসের গল্প।
― “সরি, ভাই পিনাকী। আমি তোমাকে বুঝে উঠতে পারিনি। কিন্তু গোকুলবিহারী যে খুন হবে এটা কী করে বুঝলে? বললেন এস.ডি. এস।
―হরিমাধবের ডেড বডির সাথে পাওয়া ধাঁধায় তো সেই কথায় বলছে স্যার।
― আচ্ছা, স্ত্রী নেই, বাড়ির ঠিকানা, সোনার সাথে সম্পর্ক, চারজন আসামী পরিচিত ―এতটা সমাপতন হতে পারে?
― ওই যে বললাম কিছুটা হয় আর কিছুটা বানানো যায় বুদ্ধি খরচ করলেই। যেমন ধরুন আপনার নাম কী?
― সৌম্যদীপ সেন
― এস.ডি. এস বলতে পারি?
― হুঁ।
― আপনাকে ডিটারজেন্ট ডাকতে পারি?
― এই এসব আবার কি?
― কিন্তু পারি তো। সোডিয়াম ডোডোসিল সালফেট(S DS) হল একধরণের ডিটারজেন্ট।
― “ব্রিলিয়ান্ট মাই ব্রাদার! ব্রিলিয়ান্ট!” এই প্রথম মুখ খুললেন অশোক ব্যানার্জী।
আচ্ছা সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই
― “থাক না। ছেড়ে দাও “বলল পিনাকী।
― না রে। বলা দরকার। পিনাকী সেনগুপ্ত হল একাধারে রসায়নের রিসার্চ স্কলার, ইতিহাসবিদ এবং শখের গোয়েন্দা। যদিও কোনো ভিজিটিং কার্ড নেই।