ব্ল্যাক | ভয়ের দেশ |সুরজ মন্ডল| Bengali Horror Story
আনুমানিক সময়:83 মিনিট, 13 সেকেন্ড

ব্ল্যাক | ভয়ের দেশ |সুরজ মন্ডল| Bengali Horror Story
0 (0)

Getting your Trinity Audio player ready...

আমার কাছে কিছু দিন ধরেই অভিযোগটা আসছে। প্রথমে প্রমথ বাবুর নিজস্ব ব্যাপার ভেবে তেমন পাত্তা না দিলেও সেদিন আমার সাথেও যখন একই ঘটনা ঘটল তখন বেশ বিরক্তই হয়েছিলাম। একটা লোক যে এতটা নির্লজ্জ বেহায়া হতে পারে আগে দেখি নি। ভেবেছিলাম এর শেষ দেখেই ছাড়বো। কিন্তু তখনো কি জানতাম এই শেষ দেখা যে…

আরে দেখেছেন এই সব বলতে গিয়ে নিজের পরিচয় টাই দেওয়া হলো না।

আমি নিশিকান্ত সমাদ্দার যদিও ছোট বড়ো সকলের কাছে নিশিদা নামেই পরিচিত। “নিশির আড্ডা” নামের এক ভৌতিক সাহিত্য গ্রুপের এডমিন। পেশায় কলেজের প্রফেসর আর নেশায় গল্প-পড়া। পঞ্চাশ হাজার মেম্বারদের সমন্বয়ে তৈরি এই গ্রুপ। প্রায় তিন বছর আগে অনেকটা খেয়ালের বসেই গ্রুপটা খুলেছিলাম। বর্তমানে বেশ কয়েকটা এই শ্রেণীর গ্রুপ থাকলেও মেম্বার সংখ্যাই আমাদের ধারে কাছে কেও নেই। গ্রুপের মূল উদ্দেশ্য ভৌতিক, হরর জনরার গল্প পাঠক দের কাছে পেস করা, নতুন নতুন লেখক দের লেখার সুযোগ করে দেওয়া। তাছাড়া মাসে মাসে বিভিন্ন ইভেন্ট দেশবিদেশের অনেক অদ্ভুতুড়ে তথ্য তো রয়েছেই। তার সাথে রয়েছে আমারই উদ্যোগে নতুন একটা প্রচেষ্টা। পাঠকদের নিরিখে গ্রুপের সেরা গল্প গুলি নিয়ে বই ও পত্রিকা প্রকাশ। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য লেখকের সাথে নতুন দের নিয়ে বিভিন্ন ভৌতিক গল্প সংকলন ও প্রকাশ করা হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য পাবলিশার্স দের সাথে যৌথভাবে গল্প সংকলন তো রয়েছেই।

সব ঠিকঠাকই চলছিল যতদিন না প্রমথ বাবুর ঘটনাটা ঘটে।

এক মাস আগে যখন চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনীর সাথে সেরা ভূতিয়ে দের আড্ডা নামের একটা নতুন সংকলনের ভাবনাচিন্তা করা হয় তখনই চন্দ্রবিন্দুর ম্যানেজার চন্দ্রনাথ বাবু প্রমথ নামের এক ব্যক্তির লেখা ‘ব্ল্যাক’ গল্পটা সংকলনে রাখার কথা ভাবেন। সেই মত চন্দ্রবাবু আমার কাছে পারমিশন নিয়ে প্রমথ বাবু কে ম্যাসেঞ্জারে কথাটা জানান। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার ভদ্রলোক ম্যাসেজ সিন করা সত্ত্বেও কোনো রিপ্লাই দেন নি। এর পর বেশ কয়েক বার ম্যাসেজ করা হয় তার কন্ট্যাক্ট নম্বর ও চাওয়া হয় কিন্তু সেই একই। ম্যাসেজ সিন কিন্তু কোনো রিপ্লাই নেই। আজব ব্যাপার। চন্দ্রনাথ বাবু ব্যাপার টা আমাকে জানালে আমি বললাম “হয়ত ভদ্রলোকের কোনো প্রবলেম আছে এখন না হয় ওই গল্পটা বাদ দিন।”

“এমন লোক তো দেখি নি, সকলে পাবলিশার্স দের পায়ে পায়ে ঘোরে নিজের লেখাকে প্রকাশ হতে দেখার জন্য আর এই আপনার প্রমথ বাবু… কি ধাতুতে তৈরি মশাই?”

আগামী সপ্তাহের 9th জানুয়ারি ‘নিশির আড্ডা’ গ্রুপের জন্মদিন, আমি ঠিক করেছিলাম বেশ কিছু বিশিষ্ট লেখকদের সাথে কিছু নতুন উঠতি লেখকদের নিয়ে একটা লাইভ অনুষ্ঠান করবো গ্রুপে।

নামকরা সাহিত্যিকদের তো লিস্ট তৈরিই ছিল কিন্তু নতুন দের মধ্যে কাদের কাদের নির্বাচন করব তা ঠিক করতে আজ কলেজ থেকে ফিরেই লেখক বাছাই ও তাদের ইনভিটিশনের কাজে লেগে পড়লাম। এই পঞ্চাশহাজারী গ্রুপটি তে প্রতি দিন প্রায় পঞ্চাশের ওপর ছোট বড়ো গল্প পোস্ট হয় তাই এত জনের মধ্যে গ্রুপের কয়েক জন ভালো লেখককে নির্বাচন করা সত্যিই দুঃসাধ্য। গ্রুপ ফিডটা স্ক্রল করতে করতেই লেখাটা চোখে পড়ে, আসলে ঠিক লেখাটা না লেখার সাথে অ্যাটাচড ছবিটাই আমার নজর কাড়ে। একটা কালো ছবি সম্পূর্ণটাই কালো আর কিছুই নেই যাকে ওই ডিপ ব্ল্যাক বলে তেমনই। একটু নীচে স্ক্রোল করে নামতেই লেখকের নামটা চোখে পড়ে। প্রমথ, কোনো সারনেম নেই, ডিপি টাও ব্ল্যাক। হঠাৎ চন্দ্রনাথ বাবুর কথাটা মনে পড়ে গেল। তাই একটু কৌতূহলের বসেই লেখাটা পড়তে শুরু করলাম গল্পের নাম ‘ব্ল্যাক’। দেখলাম এটা গল্পের অষ্টম পাঠ, তার মানে বেশ বড়ো একটা ধারাবাহিক গল্প। প্রথম থেকে গল্পটা পড়ার জন্য প্রোফাইলে টাচ করলাম। আর টাচ করতেই গ্রুপের সমস্ত পোস্ট গুলো দেখতে পেলাম। তখনই সমস্তটা পড়ে ফেললাম।

“আরিব্বাস এ যে একেবারে খাঁটি রত্ন। অনেকদিন এই রকম একটা লেখা পড়ি নি।”

নিজের মনেই বিড়বিড় করে বললাম।

সব পার্ট গুলোই এক একটা মাস্টারপিস। এখনো শেষ হয় নি গল্পটি। পরবর্তী কালে পড়ার জন্য সেভ লেটার করে রাখলাম গল্পটা। প্রতি শনি বার রাত 10 এই একই সময়ে প্রত্যেকটি পার্ট পর পর পোস্ট করা হয়েছে। এর যে কি কারণ তার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলাম না। না কোনো সচরাচর ভৌতিক গল্প না ভূততুতের কোনো উল্লেখ্য বা বর্ণনা কিছুই নেই। যায় হোক একটা আশ্চর্যের বিষয় লক্ষ করলাম, প্রতিটা গল্পের লাইক সংখ্যা ঠিক তার ক্রমিক নম্বর বা পার্ট নম্বর অনুযায়ী। মানে প্রথম পার্টে একটা দ্বিতীয় পার্টে দুটো এই ভাবে অষ্টম পার্টে আটটা। তার কমবেশি নেই কোনো গল্পেই। কিন্তু তা যে কি ভাবে সম্ভব কিছুতেই মাথায় ঢুকলো না আমার। আর তাছাড়া গ্রুপে পঞ্চাশ হাজার মেম্বার যেমনই গল্প হোক কম করে 50 টা লাইক তো পরেই আর তার ওপর এত সুন্দর একটা ধারাবাহিক হরর গল্প। এবার কৌতূহলটা অনেকটা বেড়ে গেল।

মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই প্রথম গল্পটা ওপেন করে একটা লাইক দিয়ে দিলাম কিন্তু সেটা তখনই আবার রিমুভ হয়ে গেল। অনেক বার চেষ্টা করেও কোন ফল হলো না। বাকি গল্প গুলো ওই একই।

বেশ অদ্ভুত তো।

এবার আর একবার প্রমথ লেখাটাই টাচ করতেই প্রমথের প্রোফাইলটা খুলে গেল। কিন্তু প্রোফাইলে কোনো পোস্ট বা কোনো পার্সোনাল ডিটেইলস নেই। চোখ গেল কভার পিকচারটাই। প্রোফাইলের মতো সেটাও ব্ল্যাক। কভার ফটোতে একবার টাচ করতেই সেটা বড়ো হয়ে স্ক্রিনে ফুটে উঠলো। এতক্ষণ বোঝা যাচ্ছিল না সেখানে খুবই ক্ষুদ্র একটা সংখ্যা লেখা আট(8)। বেশ কিছুক্ষণ হয়ত ওই ভাবেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ছবিটার মধ্যে যেন একটা তীব্র আকর্ষণ রয়েছে যেন সে এক অসম আকর্ষণে টানছে। তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই দিন থেকে মাস মাস থেকে বছর পার করে দেওয়া যায়। হঠাৎ ফোন থেকে কালো ছবিটা সরে গিয়ে মা লেখাটা স্ক্রিনে ফুটে উঠতেই ঘোরটা ভেঙে যায়। মা ফোন করেছে।

আমি থাকি বর্ধমানে এখানে এক কলেজের প্রফেসর। একাই থাকতে হয় তাই। মা বাবা আর বোন থাকে শিলিগুড়িতে। আমার বয়স বাঙালি ছেলেদের বয়সসীমা ছাড়িয়ে গেলেও এখনো বিয়েটা হয় ওঠে নি। ঠিক হয় নি না, ওই একটা জিনিসেই সব থেকে বেশি আপত্তি আমার। মা আর বোন তো প্রায় হোয়াটসঅ্যাপে নতুন নতুন

পাত্রীর ছবি পাঠিয়েই যায়। অনেক বার বলেও কোনো ফল হয় নি তাই আজকাল সে সব পাঠালেও আর সে ছবি ডাউনলোড করেও দেখি না। আজও ভেবেছিলাম হয়ত আবার কোনো সম্বন্ধের জন্য ফোন করেছে মা, তাই হঠাৎ ফোনটা আসাতে একটু বিরক্ত হলাম। কিন্তু এমন তো হয় না। শিলিগুড়ি থেকে যেই কারণেই ফোন করুক কখনো তো বিরক্ত লাগে নি কিন্তু…।

“হ্যালো…হ্যালো…শুনছিস? হ্যালো দাদা…”

হঠাৎ খেয়াল হলো অনেকক্ষণ থেকে নিশা হ্যালো হ্যালো করছে আর এই প্রান্তে ফোন ধরে যে কোনো কথায় বলি নি আমি এতক্ষণ।

“হ্যাঁ হ্যালো… সরি রে একটা কাজ করছিলাম তাই তোর আওয়াজ টা খেয়াল করি নি রে। বল কি বলছিস?”

“কি এমন রাজকার্য করছিস শুনি যে এক মিনিট ধরে কোনো কথা নেই?”

“সরি বনু বললাম তো একটু কাজের চাপ ছিল তাই…।”

“আরে রাখ তোর কাজ নিজে তো কখনো ফোন করে আমাদের খবর টাও নেওয়া প্রয়োজন মনে করিস না, আর এখন তো কথা বলার টাইম টুকুও নেই।”

“আহ! নিশা, বললাম তো একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই ভুল হয়ে গেছে সেটাতে এত রিয়াক্ট কেন করছিস?”

“দাভাই তুই এখন বিরক্তও হচ্ছিস?”

“সরি সরি নিশা। আমি সেরকম কিছু…”

আমি ছোট থেকেই আমার এই ছোট্ট বোনটাকে খুবই ভালোবাসি, কখনও রাগে উঁচু গলায় কথা বলিনি তার সাথে বরঞ্চ নিশাই কত বার রেগে গিয়ে আমাকে কথা শুনিয়েছে কিন্তু আজ যে কি হলো কে জানে।

ফোনটা কেটে যেতেই সেই ছবিটা আবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো, হঠাৎ যেন মনে হলো চকিতে ছবি থেকে কিছু একটা সরে গেল। যেন এতক্ষণ তার অগোচরে ছবিতে হাজির হয়েছিল।

নাহ কিছুই নেই সেই আগের মতোই ফুল ব্ল্যাক আর ওই 8 সংখ্যাটা। আরতো কিছু নেই। আজ মনে হয় শরীরটা ঠিক ভালো নেই।

কপালে একবার নিজেই হাতটা স্পর্শ করলাম।

নাহ জ্বর আছে বলে তো মনে হচ্ছে না।

ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম দশটা বেজে গেছে।

কিন্তু, তা কি ভাবে সম্ভব আমি তো সাত টাই ফোন নিয়ে বসেছি। তার কিছুক্ষণ পরেই তো নিশার ফোনটা এল। তাহলে কি ঘড়িটা খারাপ হয়ে গেল?

ফোনটা অন করে একবার টাইম টা দেখলাম।

এ কি! দশটাই তো বাজে, তাহলে কি তিন ঘণ্টা ধরে ছবি টার দিকে তাকিয়ে ছিলাম? কই সেরকম তো কিছু মনে হচ্ছে না।

না না তা কি করে সম্ভব এই তো কিছুক্ষণ আগে প্রোফাইল টা খুলে ছবি টা দেখলাম আর তার পরেই ফোনটা এল।

কি যে হচ্ছে।

আজ আর কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না, সব যেন কেমন লাগছে। ফোনটা পাশের টেবিলে চার্জে দিয়েই টয়লেটে গেলাম চোখে মুখে একটু জল নেওয়ার জন্য।

টয়লেটের আয়নার সামনে দাঁড়াতেই আঁতকে উঠে একটু পিছিয়ে এলাম।

এ কি! কেমন যেন একটা পরিবর্তন লাগছে না? কি যেন একটা পরিবর্তন হয়েছে যেন আমার মুখে, কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছি না।

কি যে হচ্ছে।

নাহ আগে একটু ঘুম দরকার।

আর কোনো কিছু না ভেবে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম।

পরের দিন উঠতে অনেকটা বেলা হয়ে গেল। দশটা থেকে কলেজ আছে। তাই কোনো রকমে উঠেই স্নান সেরে মুখে পেটে দুটো ব্রেড গুঁজেই বেরিয়ে পরলাম।

ফিরতে প্রায় আটটা বেজে গেল। কলেজে একটা ওয়েবিনার ছিল সেখানে একটা স্পিচও ছিল তাই দেরি। পেটে ছুঁচোই ডন টানছে। কাল রাত থেকে ভালো করে কিছু খাওয়া হয় নি। কলেজ থেকে আমার ঘর প্রায় এক ঘণ্টার পথ। আমি নিজের গাড়িতেই যাতায়াত করি। আজ খুব ক্লান্ত লাগছে আর নিজের জন্য কিছু রাঁধতে মন হলো না, বাড়ি ফিরেই জুম্যাটো থেকে একটা বিরিয়ানি আর কোক অর্ডার দিয়ে ফ্রেস হওয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকলাম।

সাওয়ারের ঠাণ্ডা জল শরীর কে স্পর্শ করতেই যেন সারাদিনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যেতে লাগলো। চোখ বুঝে সেই ঠাণ্ডা স্পর্শ উপভোগ করতে করতে মন যেন আচ্ছন্ন হয়ে উঠলো। কতক্ষণ এ ভাবেই দাঁড়িয়েছিলাম ঠিক মনে নেই কিন্তু কিছুক্ষণ পর চোখ খুলতেই এক নিরেট অন্ধকার এসে যেন ধাক্কা মারলো চোখে। চারিদিক অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না তলিয়ে যাচ্ছি যেন কোনো অন্ধকার জগতে। এ কি ভাবে সম্ভব? এ কোথায় আমি? লোডশেডিং হলে তো ফ্ল্যাটে ইনভার্টার আছে। তাহলে? আর চারিপাশ এত ফাঁকা লাগছে যেন কিছুই নেই বাথরুমের দরজা দেওয়াল কিছুই স্পর্শ করতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। হঠাৎ যেন একটা চেনা শব্দ শুনতে পাই হ্যাঁ হ্যাঁ কেও যেন ফ্ল্যাটের কলিং বেল টা বাজাচ্ছে হ্যাঁ এই তো আবার সব আবছা আবছা যেন ফুটে উঠছে, দেখা যাচ্ছে এই তো সেই শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে আছি আমি, তাহলে কি ঘুমিয়ে গেছিলাম? না না তা কি করে সম্ভব এই ভাবে জলের নীচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি মানুষ ঘুমাতে পারে নাকি। আবার একবার কলিং বেলটা বেজে উঠতেই ঘোরটা ভেঙে গেল। তাড়াতাড়ি গায়ে একটা টাওয়েল জড়িয়ে বেরিয়ে দরজা খুলতেই দেখি সামনে লাল ড্রেস পরে এক বছর 24 এর ছেলে হাঁসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। পার্সেলটা নিয়েই দরজাটা লাগিয়ে চেঞ্জ করে এসে বসলাম টেবিলে। মনে পরে গেল কলেজে বলা সুনীলের কথা গুলো।

“আরে নিশি কি হয়েছে রে তোর? চেহারা এমন কেন? তোর স্ক্রিনে কি কিছু প্রবলেম হয়েছে?”

বেশ অবাক হয়েই জিজ্ঞাসা করেছিলাম―

“কেন বলতো?”

“না তেমন কিছু নয়। আসলে তোর মুখের রংটা যেন একটু চাপা হয়ে গেছে। মানে কিছুটা কালচে ভাব যেন।”

অন্য কেউ হলে হয়ত ডাইরেক্ট এত গুলো কথা বলতো না কিন্তু সুনীল শুধু কলিগ না প্রায় বন্ধুর মতোই। আমি কিছুই বলি নি, কোনো রকমে এড়িয়ে গেছি আর বলবই বা কি আমিতো নিজেই জানি না কি হচ্ছে এইসব।

আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, ভালো করে দেখলাম মুখটা। সত্যি একটা খুব পাতলা কালো আবরণে যেন মুখটা ভরে উঠেছে। শুধু মুখে না সমস্ত শরীরেই একই। মনে হলো এই পরিবর্তনটাই কাল রাতে ঠিক বুঝতে পারি নি। কোনো স্কিন প্রবলেম হয়ত ডাক্তারের কাছে গেলে ঠিক হয়ে যাবে।

আজ সারা দিন গ্রুপের কোনো কিছু দেখা হয়ে ওঠেনি তাই খাওয়া সেরা তাড়াতাড়ি ল্যাপটপটা অন করে ফেসবুকে সাইন ইন করে গ্রুপটা ওপেন করলাম। গ্রুপে যদিও আরও কিছু এডমিন মডারেটর রয়েছে তবুও দিনে একবার গ্রুপ চেক না করলে মন ভরে না।

প্রথমে বেশ কয়েকজনের গল্প পড়ে তাদের সিলেক্ট করলাম আগামী সপ্তাহের অনুষ্ঠানের জন্য। স্ক্রল করতে করতে কিছু দূর যাওয়ার পরেই চোখে পরে সেই গল্প টা। আবার কৌতূহল আর তার সাথে কাল থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো মনে পড়ে গেল আমার। এই গল্প গুলোতে আরও একটা জিনিস লক্ষ করলাম প্রায় সমস্ত গল্পেই অনেকে অনেক কিছু কমেন্ট করেছে বলা-বাহুল্য কিছু গঠনমূলক কমেন্ট ছাড়া বেশির ভাগই মন খুশি করা ‘দারুণ’, ‘খুব ভালো’, ‘সুপার’ ‘ফাটিয়ে দিয়েছেন’ এই টাইপেরই কমেন্ট কিন্তু কোনোটারই প্রত্যুত্তরে কাওকে সৌজন্যমূলক ধন্যবাদ টুকুও জানাননি ভদ্রলোক। তাছাড়া প্রমথ বাবুর কাছে অনেকেই তার সম্বন্ধে জানতে চেয়েছে কিন্তু সে সবেরও রিপ্লাই নেই।

আজব মানুষ তো।

যায় হোক আবার প্রমথের একাউন্টটা খুলেই প্রথমেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট টা পাঠিয়ে পাশে থাকা ম্যাসেঞ্জারের লোগোটাই হাত দিতেই ম্যাসেঞ্জারটা খুলে গেল।

আর সঙ্গে সঙ্গেই একটা লেখা ফুটে উঠলো।

ইউ এন্ড প্রমথ আর নাও কানেক্টেড অন ম্যাসেঞ্জারর।

তার মানে প্রমথ বাবু রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছেন। তিনি যে অনলাইন আছেন তা আগেই দেখেছিলাম।

এবার কিবোর্ডের ওপর হাত চালিয়ে একটা হাই পাঠিয়ে দিলাম।

―“হাই”

সেন্ড হওয়ার সাথে সাথেই ম্যাসেজটা সিন করলেন প্রমথ বাবু। মানে উনিও তাহলে আমার একাউন্টেই আছেন।

আবার একটা ম্যাসেজ করলাম

―“প্রমথ বাবু আমি নিশিকান্ত ঘোষ, ‘নিশির আড্ডা’ গ্রুপের এডমিন।”

আবার সিন করলেন প্রমথ বাবু

এবারেও কিন্তু কোনো উত্তর নেই।

আবার করলাম।

―“আপনার সমস্ত লেখা গুলো পড়লাম বুঝলেন খাসা লিখেছেন কিন্তু, এত ভালো প্লট মাথায় এলো কি ভাবে আপনার মশাই?”

―“আর আপনার এই ধারাবাহিকটা শেষ কখন হবে? মানে আর কত গুলো পার্ট বাকি আছে?”

―“আমরা ভেবেছি আপনার এটা একটা প্রিন্টেড বই আকারে প্রকাশ করবো যদি আপনি অনুমতি দেন। আর আগামী 9th জানুয়ারি আমরা একটা লাইভ অনুষ্ঠান করছি সেখানে আপনাকেও ইনভাইট করা হবে, এতে আপনার কোনো আপত্তি নেই তো?”

উল্টো দিক থেকে কোনো রেসপন্স নেই। সমস্ত ম্যাসেজ সিন করছে কিন্তু কোনো উত্তর নেই।

আচ্ছা অসভ্য মানুষ তো, কোনো রকম সৌজন্যতা নেই। হতেই পারেন উনি অনেক ভালো লেখক কিন্তু তাই বলে এত আত্মাভিমান। মাথাটা গরম হয়ে গেল।

ম্যাসেঞ্জার থেকে ব্যাক করে দিলাম। ফোনে দেখলাম দশটা বেজে পাঁচ। গ্রুপের ফিডটা খুলতেই পোস্টটা চোখে পড়লো বোল্ড করে লেখা দুই অক্ষরের শব্দটা ব্ল্যাক, পার্ট 9 হ্যাঁ ঠিক সেই 10 টা তেই। কিন্তু ঠিক দশ টাই তো লোকটা ম্যাসেঞ্জারে আমার একাউন্টেই ছিল। তাহলে পোস্ট কি ভাবে করলো। কিছুক্ষণ পরেই ব্যাপারটা বুঝলাম।

এমন তো হতেই পারে প্রমথ বাবু একসাথে দুটো ফোনে অথবা ফোন আর ল্যাপটপ উভয় ইউজ করছেন। একটাই ম্যাসেঞ্জার আর একটাই পোস্ট করেছেন।

কি মনে হতে প্রমথের প্রোফাইলটা খুলে আবার কভার ফটোটাই একটা ক্লিক করলাম।

ছবিটা খুলতেই একটা জিনিস লক্ষ করলাম। আজ যেন মনে হচ্ছে ছবিতে একটা কালো আবঝা অবয়ব রয়েছে কিন্তু কাল কিছুই ছিল না স্পষ্ট দেখেছি নিরেট কালো আর কিছুই ছিল না।

কিন্তু, কাল তো ফোনে দেখেছিলাম তাই হয়ত কাল বোঝা যায় নি আর আজ ল্যাপটপের স্ক্রিনে কয়েক গুণ বড়ো দেখাচ্ছে তাই।

বেশ ভালো করে দেখলাম সেটা যেন কোনো একটা বস্তু, আকার টা অনেকটা মানুষের মতোই কিন্তু হাত পা শীর্ণ মাথাটাও প্রায় গোল। চোখ মুখ বা আর কিছু তো বোঝা যাচ্ছে না আর একটা পার্থক্য লেখা টা আট থেকে পরিবর্তন হয়ে 9 হয়েছে। ব্যাপারটা কি? বেশ অদ্ভুত ছবি তো।

আমি নিজে এত বড়ো ভৌতিক হরর গ্রুপের এডমিন ঠিকই তাই বলে কখনোই অদ্ভুতুড়ে, ভূত প্রেত বিশ্বাস করি নি। আমার মতে মানুষের মনোরঞ্জনের জন্যই এই সব যথেষ্ট তাকে মনের মধ্যে স্থান দিয়ে জীবন্ত করে তোলার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। করবই বা কী করে? যে জিনিস কখনো উপলব্ধি করিনি তা কী ভাবে বিশ্বাস করা যায়? যদিও গ্রুপে প্রায় প্রতিদিনই লোকের সত্যি ভূতে গল্প নিয়ে লেখা বেড়েই চলেছে। কারো দাদুর দাদু, কারো মামার বন্ধু, কারো বন্ধুর মামাতো ভাইয়ের ছেলে, কেও কেও তো আবার পরিবারের দুই-চার পুরুষ আগের কারো ভুত দেখার গল্প নিয়েও হাজির হচ্ছে আজকাল। কিন্তু কাল থেকে যা হচ্ছে প্রায় দুই ঘন্টার বেশি একটা ছবির দিকে তাকিয়ে থাকা আর সেটা কিছুমাত্র মনে না পরা, শরীরের হঠাৎ পরিবর্তন, তারপর আজ বাথরুমে অদ্ভুত অনুভূতি। হয়ত এই সব নিয়ে একটু বেশিই ভাবছি। এই ভেবে ল্যাপটপটা অফ করতে যাব আর তখনই এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ম্যাসেঞ্জারের পপ-আপ টা ভেসে উঠলো। একটা ব্ল্যাক গোলাকার পপ-আপ মানে প্রমথবাবু ম্যাসেজ করেছে আর 1টা না দুটো। সঙ্গে সঙ্গে ক্লিক করে খুললাম লেখা টা।

―10 নং ব্ল্যাক হাউস।

(***, ***)

―কাম অ্যাট দ্য গিভেন এড্রেস।

এটা কিরকম হলো, কোনো কথা নেই একেবারে বাড়ির এড্রেস।

মনে মনেই ভাবলাম মশাই কি ব্ল্যাক এতই পছন্দ করেন নাকি নাম, ফটো, গল্প, বাড়ি সবই কালোয় কালোময়। কোঅরডিনেট টা গুগল ম্যাপে পুট করে দেখলাম জায়গাটা পুরুলিয়ার অযোধ্যা ফরেস্ট রেঞ্জের কালহা নামের একটা জায়গা। কিন্তু আজব ব্যাপার স্যাটেলাইট ম্যাপ অনুযায়ী তো সেখানে কোনো বাড়ি ঘর বা লোকবসতি দেখাচ্ছে না, থাকার কথাও নয় সবটাই তো জঙ্গল।

যায় হোক তাতে আমার কি। কেও অচেনা একজন হঠাৎ তার এড্রেস দেবে আর আমাকে যেতে হবে নাকি?

কে ভাই তুমি? আমি কি তোমার চাকর নাকি যে একটা যাতা এড্রেস দিয়ে আসতে বলে দেবে আর আমিও চলে যাবো। এদিকে সামান্যতম সৌজন্য বোধ টুকুও জানো না, নেহাত একটু ভালো লেখ তাই না হলে এই রকম কত লেখক আছে যারা পাবলিশার্স দের বাড়ি বাড়ি ঘুরে জুতো ছিঁড়ে ফেললো আর তুমি মশাই…

এক সপ্তাহ আগে ঠিক এই কথা গুলোই সেই মুহূর্তে ভেবেছিলাম ঠিকই কিন্তু কৌতূহল যে বড়ো বালাই। সে যে সহজে ছাড়ে না যতক্ষণ না নিরসন হয়েছে, মন যে তার পিছনেই পরে থাকে।

শেষ পর্যন্ত সমস্ত কিছু ঠিক করে বেরিয়েই পড়লাম। এই এক সপ্তাহে কলেজে ইন্টারনাল এক্সাম থাকায় ছুটি পায় নি। কিন্তু আজ সব এক্সাম আপাতত শেষ তাই প্রিন্সিপালের কাছে একটা দরখাস্ত দিয়ে ছুটি নিয়েছি। কাল রবিবার তাই পরপর দুই দিন ছুটি পাওয়া যাবে। কোনো কারণে আজ রাতের মধ্যে বর্ধমান না পৌঁছাতে পারলেও কোনো প্রবলেম নেই। এই এক সপ্তাহে আর তেমন কিছু ঘটেনি শুধু প্রমথের কভার ফটোটা আবার চেঞ্জ করেছে। এতে অবয়ব টা আরও অনেকটা স্পষ্ট হয়ে একটা আকার ধারণ করেছে। চোখ আর মুখের কাছে একটা হালকা আভাস থাকলেও স্পষ্ট এখনো বোঝা যাচ্ছে না।

আর আমার প্রতিদিন সেই ছবির দিকে তাকিয়ে থাকাটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ভাবছেন কি আছে ওই ছবিতে? তা বোঝানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আমি নিশ্চিত, যে একবার এই ছবি মন দিয়ে দেখেছে তার পক্ষে কোনো ভাবেই একে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আর তার সাথেই আমার শরীর টাও যেন কেমন হয়ে গেছে ত্বকের রঙ আরও কমে গেছে সাথে শরীরে একটা চটচটে ভাব। জল লাগলে সেটা কিছুক্ষণ সরে গেলেও আবার কিছুক্ষণ পরে সেই একই। শহরের এক স্কিন স্পেশালিস্টকেও দেখিয়ে এলাম একদিন কিন্তু ডাক্তার বললো সবই ঠিক আছে আমার মনের ভুল কোনো পরিবর্তনই নাকি হয় নি ত্বকে। আর যে কালার চেঞ্জ টা হয়েছে সেটা তেমন কিছু না। সে সব নয় থাক এখন।

তো সকালের ব্রেকফাস্ট সেরে বেড়িয়ে পড়লাম মিঃ ব্ল্যাকের উদ্দেশ্যে। এই নামটা যদিও আমারই মন প্রসূত। ম্যাপ অনুযায়ী প্রায় 220 কিমি রাস্তা মানে প্রায় 5 ঘণ্টার পথ। মানে কাজ সেরে রাতের মধ্যেই ফিরতে পারবো হয়ত।

কাজ বলতে লোকটাকে দেখার কৌতূহল আর তাছাড়া ভদ্রলোককে, না না ভদ্রলোক না, ওই অসভ্য লোকটাকে কিছু শিক্ষা দিয়ে আসতে হবে যে কী ভাবে মানুষের সাথে ব্যাবহার করা উচিত।

পুরুলিয়া শহরে যখন পৌঁছলাম তখন একটা বাজে। দুপুরের খাবারটা ওখানেই সেরে বেরিয়ে পড়লাম। কালহা পৌঁছাতে আরও দের ঘণ্টা লাগলো। কালহা জায়গাটা মোটেও শহর নয়। তার থেকে একটা জনবসতি বলা যেতে পারে। একটা ছোট বাজার, কয়েকটা দোকান, গাড়িও আছে কিছু। আর চারিপাশে ঘন অরণ্য। যদিও তা পুরুলিয়া ছাড়ার কিছু পর থেকেই শুরু হয়েছে। এখন থেকে ম্যাপ অনুযায়ী আরও দুই কিমি দূরে আমার গন্তব্যস্থল। কালহার বাজারে গাড়িটা থামিয়ে কয়েক জন ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ব্ল্যাক হাউস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার কেও এই নামই কোনো দিন শোনেনি এখানে। ভাবলাম হয়ত এখানকার অশিক্ষিত মানুষ তাই ব্ল্যাক নামে চেনে না তাই কালা বাড়ি, কালো বাড়ি ইত্যাদি বলেও জিজ্ঞাসা করলাম কিন্তু ফল সেই একই। কেও জানে না। একজন কে ম্যাপটা দেখাতে বললো ওখানে নাকি কিছুই নেই, গাড়ি যাওয়ার একটা রাস্তা আছে বটে তবে তার অবস্থা খুবই খারাপ।

আচ্ছা জ্বালা তো লোকটা কি মশকরা করলে নাকি, কিন্তু তাই বা কেন করবে আমার তো কোনো শত্রুতা নেই তার সাথে আর থাকবেই বা কি করে তাকে তো জন্মে দেখিও নি পরিচয়ও নেই। একবার ভাবলাম থাক অনেক হয়েছে অন্ধকারের পিছনে ছুটে লাভ নেই ফিরে যাই কিন্তু আবার মনে হলো এত দূর এসে শেষটুকু না দেখেই ফিরে যাব, এই তো আর দুই কিমি রাস্তা যেমনই হোক একটা রাস্তা তো আছে। বাড়ি না থাকে তখন নয় ফিরে যাবো। আর সবার আগে লোকটাকে গ্রুপ থেকে ব্যান করবো শয়তানের অসভ্যতামি বের করতে হবে আগে।

গাড়িটা আবার স্টার্ট দিয়ে কিছু দূর এগোতেই বাজার শেষ হয়ে আবার নিবিড় অরণ্য শুরু হলো সামনে কিছু দূর গিয়ে রাস্তার একটা বাঁক ঘুরে দশ মিনিট সোজা গেলেই ব্ল্যাক হাউস পেয়ে যাওয়ার কথা।

কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেলাম প্রমথের দেওয়া কোঅরডিনেটে। হ্যাঁ ঠিকই তো কাছে এসে বোঝা গেল একটা বাড়ি আছে কিন্তু কেও বললো না কেন? সবাই তো বললো কিছুই নেই এমন কিছু গভীর জঙ্গলে বা লোকালয় থেকে দূরে তো নয় যে কারো চোখে পড়বে না, তার ওপর এই রকম বাড়ি আগের জন্মে দেখলেও মনে হয় সবার মনে থাকবে। আগেই ভেবেছিলাম বাড়ির রং টাও নিশ্চয়ই কালো হবে কিন্তু তা যে এতটা কালো হবে বুঝি নি। একটা এক তলা বাড়ি সেখানে কালো ছাড়া অন্য কোনো রঙের ছিটে ফোটাও নেই। এই সবুজ অরণ্যের মাঝে এ যেন এক কালো দানবের মতো আছে বাড়িটা। আসে পাশে আর কোনো বাড়িও নেই আসার সময়ই বুঝেছি এই রাস্তায় কেও আসে না তেমন একটা।

এবার এই ভর দুপুরেও এই সব ব্যাপার স্যাপার দেখে গা টা একটু ছমছম করে উঠলো।

গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেলাম বাইরের গেটের দিকে। গেটে কোনো তালা ছিল না তাই সেটা খোলার জন্য হাত দিতেই বুঝলাম গেট টাও যেন ঠিক আমার শরীরের মতই একটা চটচটে ভাব আছে। যেন আমার হাত টা আটকে যাচ্ছে তার মধ্যে যেন একটা আকর্ষণ হচ্ছে, এবার বেশ ভয় হতে লাগলো। কিন্তু এত দূর এসে আর শেষ না দেখে ফিরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। গেট খুলে ভীতরে ঢুকলাম, গেটের ভীতরে ঢুকতেই মনে হলো যেন আমি অন্য জগতে এসে পৌঁছেছি। যেখানে অন্য রঙের প্রবেশ নিষেধ আর আমি যেন তা অমান্য করে ঢুকে পড়েছি তাদের জগতে। ধীর পায়ে গেলাম দরজার কাছে বেল বা তেমন কিছু চোখে পড়লো না। দুবার ডাকলাম প্রমথবাবুর নাম ধরে-

“প্রমথ বাবু আছেন? আমি নিশিকান্ত ‘নিশির আড্ডা’ গ্রুপের এডমিন।”

নিজের আওয়াজই প্রতিফলিত হতে লাগলো। কোনো উত্তর নেই।

“প্রমথ বাবু আছেন বাড়িতে? আপনি আমাকে আসতে বলেছিলেন।”

এবারেও কোনো উত্তর নেই। একটা ব্যাপার খেয়াল হলো বাড়ির ভীতর ঢোকার আগে বাইরে বেশ অনেকরকম পাখির তাছাড়া আরও অন্য কিছু আওয়াজ কানে আসছিল কিন্তু ভিতরে ঢুকতেই যেন সব চুপ সব যেন বোবা হয়ে গেছে চারিপাশ একেবারে পিন-ড্রপ সাইলেন্স। কোথাও কোনো আওয়াজ নেই বাড়ি চারিধারে দেওয়াল তোলা ভিতরে কোনো ঘাস বা গাছ কিছুই নেই সবটাই কালো ব্লক দিয়ে বাঁধানো। বাড়ির বাইরে চারিধারে উঁচু উঁচু গাছ। বাড়ি টা একবার ঘুরে দেখলাম খুব বড়ো হবে না চারিদিক প্রায় ওই একই কালো রঙে মোড়া। পুরোটা ঘুরে আবার বাড়ির সামনে আসতেই আমি তো অবাক কেও যেন দরজা খুলে দিয়েছে। এই দুপুরেও ভিতরটা একেবারে অন্ধকার। সামনের যেটুকু সূর্যের আলো পড়ছে তাতেই বুঝতে পারলাম ভিতরেও একই অবস্থা।

কিন্তু কৌতূহল এমন একটা জিনিস যার কারণে মানুষ অজানার পিছনে পৌঁছে গেছে পাতাল থেকে মহাকাশে, মহাকাশ থেকে চন্দ্রলোক হয়ে মঙ্গল গ্রহে, পৌঁছে দিয়েছে আজকের বিজ্ঞানের শীর্ষে কিন্তু মাঝে মাঝে এই কৌতূহল জিনিস টা বড্ড ভোগায় মানুষকে। অযথা কৌতূহলই অনেক সময় আমাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় টেনে নিয়ে আসে জীবনের শেষ প্রান্তে।

আর আমার ছোট থেকেই মনে হয় বাকিদের থেকে এটা একটু বেশিই ছিল। না হলে কি সেদিন কিছু যে এখানে একটা গণ্ডগোল আছে এবং যেটা আমার পক্ষে ভালো নয় বুঝেও ভিতরে ঢুকি? আসলে শেষ পর্যায়ে এসে ফিরে যেতে মনে একটু বাঁধল। হয়ত সে দিন না ঢুকলেই ভালো হতো, না ঢুকলেই হয়ত আমার চেনা পৃথিবীর আলোর শেষ বিন্দুটুকুর আর শেষ দেখতে হতো না, হয়ত দরজাটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেত না, হয়তবা বেরিয়ে যাওয়ার শেষ চাবিকাঠি টুকুও হারিয়ে যেত না। কে জানত এই ভাবে এই কালো জগতে আমি হারিয়ে যেতে চলেছি যেখানে ধরা ছোঁয়া কোনো বস্তুর অস্তিত্ব নেই, নেই কোনো দেখার ক্ষমতা না আছে শোনার ক্ষমতা যা আছে সবটাই মনের। সে দিন ভিতরে ঢুকতেই যখন সূর্যের মৃদু আলো টুকুও নিঃশব্দে হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে গেল তখন প্রথমে বুঝতে পারিনি জানেন তো কি হলো, এমনকি হাতে থাকা ফোনের ফ্ল্যাশ টাও জ্বালানোর কথা ভুলে গেছিলাম। জানি না তাতে কোনো কাজ হতো কি না। আমার সাথে যে সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটে গেছে সেটা বুঝে ওঠার আগেই আমার অস্তিত্বকে ততক্ষণে গ্রাস করে নিয়েছে ওই কালো, সে যে আসলে কি তা আমি বলতে পারবো না কিন্তু আমি আর নিজেকে বা আমার চারি পাশে কোনো কিছুকেই তারপর থেকে অনুভব করতে পারিনি। শুধু এই চিন্তা শক্তিটা ছাড়া। এটাই যে আমার মুক্তির একমাত্র পথ।

কেও খেয়ালই করেনি প্রমথের একাউন্টের নামটা এখন চেঞ্জ হয়ে গেছে নিশিকান্ত নামে আর ওই যে কভারের ছবিটা এখন বেশ সুস্পষ্ট হাত পা গুলো আর আগের মতো শীর্ণ নয় বোঝা যাচ্ছে তার মুখ চোখ এর ভাঁজটা, সেখানেও যেন একটা তৃপ্তির আভাস আর নম্বরটাও যে 9 থেকে পরিবর্তন হয়ে 10 হয়ে গেছে।

কারো চোখেই পড়লো না এই সব, দেখবেই বা কে?

‘নিশির আড্ডা’ গ্রুপের এডমিন নিশিকান্ত ঘোষই যখন প্রায় এক সপ্তাহ হলো নিখোঁজ তখন কি আর কে কখন কভার ফটো পরিবর্তন করছে সে সব দেখার সময় থাকে?

পুলিশ তদন্ত করে জেনেছে তাকে শেষ দেখা যায় পুরুলিয়ার কালহা নামের এক স্থানে আর তার গাড়িটাও কিছু দূরে পাওয়া যায় কিছুটা জঙ্গলের ভীতরে।

নাহ আপনি যা ভাবছেন তাকে পাওয়া যায়নি তার শুধু গাড়ি টাই পাওয়া গেছে। যাবেই বা কি করে বলুন, যে জিনিস বাস্তবে নেই যে ধরা ছোঁয়ার বাইরে যাকে অনুভব করা যায় না তাকে কি কখনো পাওয়া যায় বলুন?

বেশ কিছুদিন হলো ফেসবুকে লেখালেখি শুরু করেছে দীপ, তখনই ওপরের গল্পটা চোখে পরে তার। গল্পদাতা খাসা লিখেছে তো শুধু লেখেইনি নিজের প্রোফাইল টা কেও সেই মতোই কাস্টোমাইজ করেছে কভার আর প্রোফাইল ফটো দিয়ে। আরে নামটাও তো নিশিকান্ত।

প্রোফাইলে হাত দিতেই একাউন্ট টা খুলে যায় আর প্রথমেই ভুলটা চোখে পরে দীপের।

আহা এত সুন্দর লিখে শেষ এটা ভুল করে ফেললো কভারে যে 9 লেখা ওখানে তো 10 হওয়ার কথা ছিল গল্প অনুযায়ী। ভুলটা শুধরে দেওয়ার জন্যই ম্যাসেঞ্জারের আইকন টা টাচ করে একটা ম্যাসেজ করে শুভদীপ-

―হাই, আমি শুভদীপ আপনার কালো গল্পের সমস্ত পার্ট গুলো পড়লাম খুবই ইন্টারেস্টিং কিন্তু আপনার হয়ত একটা অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে গেছে সেটা শুধরে দেওয়ার জন্যই ম্যাসেজটা করলাম, আপনার ওই কভার ফটোর যে সংখ্যাটা আছে ওটা নয় না দশ হতো। ওটা কাইন্ডলি একটু ঠিক করে নেবেন।

আশ্চর্য সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাসেজ সিন করলো নিশিকান্ত বাবু যেন তার ম্যাসেজের জন্যই ওয়েট করছিল, কিন্তু কোনো রিপ্লাই এলো না।

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post প্ল্যানচেট | ভয়ের দেশ |সুমন ঘোষ| Bengali Horror Story
Next post ভুতুড়ে মন ভালো নেই | ভয়ের দেশ |সুমন্ত দে| Bengali Horror Story