ভৌতিক রাত | ভয়ের দেশ |মানব মান্না| Bengali Horror Story
0 (0)

Getting your Trinity Audio player ready...

ঘুমটা ভাঙতেই ঠাণ্ডা স্যাঁতস্যাঁতে অনুভূতি হল। কাদামাটিতে (নরম মাটি) পড়ে আছি। ভাঙাচোরা বদ্ধ একটা ঘর। মনেই পড়ছে না কখন কিভাবে এলাম এখানে। শরীরের প্রত্যেকটা অংশ ব্যথায় টনটন করছে। নড়তে পারছি না। কোনোরকমে মাথা উঁচিয়ে পেছনের দিকে তাকাতেই শিউরে উঠলাম। লোমগুলো খাড়া হতে লাগল। হৃৎস্পন্দন ক্রমাগত বেড়ে গেল।

সাদা হাড়যুক্ত কঙ্কালগুলো ঝুলছে। আর একটু দূরে কিছু কঙ্কাল হাত পা ছড়িয়ে পড়ে আছে মাটিতে। আরও কিছু দূরে কঙ্কালগুলো নাচছে। থেকে থেকে বিদ্রুপের হাসি হাসছে। পুরো ঘরটা একটা হল রুমের মতো চলে গেছে অনেকটা লম্বা হয়ে। গাঢ় অন্ধকার, আবছা আবছা চাঁদের আলো আসছে ঘরটার ভাঙাচোরা অংশ দিয়ে। পরমুহুর্তে হ্যালির কথা মনে পড়ল। হ্যালি আমার পোষা কুকুরের নাম। একটু পাশ ফেরার চেষ্টা করলাম। তখনই বুঝতে পারলাম শরীরে আর জোর নেই একটুও। স্পষ্ট মনে আছে পরনে একটা জ্যাকেট ছিল। সেটার পরিবর্তে এখন একটা হাতকাটা গেঞ্জি। প্রচণ্ড ঠান্ডা মাটি। কোনোরকমে পাশ ফিরে দেখলাম হ্যালিও পড়ে আছে মাটিতে। সেও যেন আধমরা হয়ে গেছে। তবুও সতর্ক। চারিপাশ দেখছে। কিছু একটা ভাবছে। হয়তো পালাবার পথ খুঁজছে নতুবা কিছুর একটা বদলা নিতে চাইছে কিন্তু কিসের! তৎক্ষনাৎ সামনের দিকে চোখ পড়ল আমার। হৃৎস্পন্দনটা যেন আরও বেড়ে গেল। কি চলছে সামনে! ভয়ানক দৃশ্য, কঙ্কালটা কিছু একটা প্রাণিকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। কিন্তু কি! হ্যালি একটু আমার কাছাকাছি সরে এল। আমার শরীরের সাথে স্পর্শ হতেই বুঝলাম হ্যালি থরথর করে কাপছে। প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে হয়তো। এভাবে ও কোনোদিন কাঁপেনি। যতোই বাধা আসুক ঝাঁপিয়ে পড়েছে সম্মুখে। কিন্তু আজ তার কি হয়েছে!

রক্তপিপাসু বাদুড়গুলো উড়ছে মাথার ওপর। হ্যাঁ, এবার মনে পড়েছে কি কারণে এই অবস্থা। কয়েকদিন ধরে বাইরে বেরোনোর ইচ্ছে হচ্ছিল, একটা নির্জন জায়গায়। তাই বন্ধুর কথায় তারই একটা বাড়িতে উঠেছিলাম কিছুদিন থাকবার জন্য। বাড়িটা অনেক দিনের পুরোনো। বছর খানেক কেউ ছিল না। শেষ পর্যন্ত এরকম হাল হবে বুঝতে পারিনি। এখন উপায়!! তখনই হ্যালির একটা বিস্ময়কর কাজ দেখলাম। হঠাৎই সে ঝাঁপিয়ে পড়ল সামনের কঙ্কালটার উপর। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। কি হল জানিনা, শুধুই শুনেছি হ্যালির গর্জন। কিছু সময় পর সব নিস্তব্ধ। একটু একটু করে চোখ খুললাম, দেখলাম ভয়ঙ্কর কঙ্কালটার হাড়গুলো পড়ে আছে স্তুপাকারে। কিন্তু এ কিভাবে সম্ভব! এটা হ্যালির দুর্দান্ত একটা কৃতকার্য। যাইহোক অত ভাববার সময় বা অবকাশ নেই। সারা শরীর ঘামে ডুবে যাচ্ছে। ভাবলাম হ্যালির এই কাজে বোধহয় একটু রেহাই পেলাম। কিন্তু না; পেছন থেকে অস্পষ্ট স্বরে শুনলাম ‘আমরা এর মাংস ছিড়ে খাব আজ’। কি অট্টহাস্য তাদের। হাড় হীম করা রব। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলাম একটা কঙ্কাল আমার মুখের কাছাকাছি এসে পড়েছে। ওমা! বলে চেচিয়ে হাত পা ছুড়ে দৌড়তে লাগলাম। কিন্তু কোথা দিয়ে বেরোবো! বেরানোর রাস্তা নেই। হে ভগবান কি বিপদের মুখে ঠেললে আমায়। তখনই অদ্ভুত এক কাণ্ড ঘটল, কঙ্কালগুলো যেন কয়েকটা থেকে কয়েকশো হয়ে গেল। ওই হল্ ঘরেই দৌড়চ্ছি পাগলের মতো। কঙ্কালগুলো আমার দৌড়নোর মজা নিচ্ছে। হ্যালি কোথায়! তাকে আর দেখতে পাচ্ছি না। আমি দৌড়নো থামাতেই কয়েক হাজার কঙ্কালের হাত আমার দিকে এগিয়ে আসছে এবং আমার শরীরের ওপর কয়েক জোড়া (কঙ্কালের) হাড়ের চাপ পড়লো। অসম্ভব ঠাণ্ডা। যেন বরফে কবর দিয়ে দিয়েছে। হাড়গুলোর চাপে ছটফট করছি। হ্যালি কোথায় ছিল জানিনা, এই মুহূর্তেই অসম্ভব একটা কাজ করে বসল। কোত্থেকে দৌড়ে এসে আমার শরীরের ওপর চাপ দেওয়া হাড়গুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং কামড় দিল ওই হাড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই হাড়গুলো আলগা হয়ে গেল। কোনোরকমে বেরিয়ে নিথর শরীর নিয়ে ভাঙাচোরা দেওয়ালে দিলাম ধাক্কা। দেওয়ালটা ভেঙে গেল নিমেষেই। বাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড় দিলাম ফাঁকা রাস্তা দিয়ে।

বোধহয় হ্যালিকে ওরা মেরেই ফেলবে! দু:খ করারও সময় নেই। কত জায়গায় হোঁচট লেগে পড়েছি তার হিসেব নেই। কিছুটা যেতেই সামনে দেখলাম খোলা মাঠ। তার পাশেই একটা বাড়ি। দেখে মনে হল এখানে লোকজনের আনাগোনা আছে। তাই একটু মনকে ভরসা দিয়ে, দরজায় টোকা দিলাম। বাড়িতে কেউ আছেন…? বার কয়েক হাঁক পাড়লাম। কিছুক্ষণ পর একজন ভদ্র মহিলা দরজা খুললেন। বললাম একটা রাত থাকতে দেওয়া যাবে? উত্তর এল – হ্যাঁ আসুন। হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন ভদ্রমহিলা আমার কিছু অসুবিধা (অঘটন) হয়েছে। তাই বিশেষ কিছু জিজ্ঞেস না করেই আমার যা যা লাগবে দিয়ে এবং দরকারি জায়গাগুলো দেখিয়ে বুঝিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে চলে গেলেন। যাগ্গে একটু স্বস্তি পেলাম। কিন্তু হ্যালির জন্য মনটা কেমন কেমন করছে। সে ছিল আমার পরম বন্ধু, বিপদের সাথি। তার জন্য কিছু না করে নিজে পালিয়ে আসার জন্য নিজেকে কেমন দোষী মনে হচ্ছে। ।

রাত্রিটা ভালোই কাটলো কোনো অসুবিধা নেই। ভাবলাম এখানেই কিছু দিন থেকে যাই আর লেখালেখির কাজগুলো সেরে নিই। কিন্তু এই সিদ্ধান্তই আমার কাল হয়ে দাঁড়াবে বুঝতে পারিনি।

মূল ঘটনাতে আসা যাক। —

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই, বাড়ির সেই ভদ্রমহিলা এক কাপ চা ও রুটি দিয়ে গেলেন। সকালে টিফিন সেরে একটু পাইচারি করে ভাবলাম ওই ভদ্রমহিলার সাথে একটু পরিচয় করে নিই। কাল রাতে ঠিক করে কথা বলা হয়নি। এলাম ভদ্রমহিলার কাছে। স্বাভাবিক ভাবেই কথাবার্তা হল। তিনি একাই এই বাড়িতে আছেন বহু বছর। বললেন আপনার যতদিন ইচ্ছে ততদিন থাকুন কোনো অসুবিধা নেই। ।

তাঁর সাথে কথা বলে, আমি যে রুমটাতে এসে উঠেছিলাম সেই রুমের উদ্দেশ্যে চললাম। আমার একটু লেখালেখির অভ্যেস। অবশ্য সেই কারণেই নির্জন জায়গায় আসা। বাইরে প্রবল মেঘ উঠেছে, এক্ষুণি বৃষ্টি আসবে। প্রথমত বলে রাখি আমার রুমটাতে দক্ষিণ মুখি জানালা আছে। ওই জানালার পাশে বসেই লেখালেখি করবো বলে ঠিক করে নিই। জানালা দিয়ে বাইরের সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করবো আর কলম দিয়ে আঁচড় কাটবো খাতার পাতায়। আর হ্যাঁ, রুমটাতে একটা আয়না আছে এবং বইয়ের তাক আছে। খাতা-কলম নিয়ে বসলাম। কিছুই লেখা হয়ে ওঠেনি। শুধুই হ্যালির কথা মনে পড়েছে। এই মুহূর্তেই পাশ থেকে সেই ভদ্রমহিলা বলে উঠলেন অত চিন্তা করবেন না আপনার কাজ করুন। শিউরে উঠলাম, শরীরটা ছ্যাঁত করে উঠল।

কে?

আরে ভয় পাবেন না, আমি।

ওহ! আপনি। কখন এলেন?

এক্ষুনি।

কিন্তু আপনি কি করে বুঝলেন আমি কিসের চিন্তা করছি বা না করছি?

আপনার আব্ ভাব্ দেখেই বললাম। সামনে খাতা কলম, কিছু লেখবেন তাই ভাবছেন হয়তো!

ওহ! হ্যাঁ লেখার জন্যই বসেছি কিন্তু কিছুই মাথায় আসছে না।

আসবে আসবে ধৈর্য্য ধরুন।

বলে চলে গেলেন ভদ্রমহিলা।

তাঁর কথাগুলো কেমন যেন একটা অস্বস্তিকর, বিদ্রুপের, ভয়ার্ত।

কি জানি আরও কি ঘটতে চলেছে! হয়তো এই ভদ্রমহিলা কোনো…….. না আর ভাবতে পারছি না। কোনো কিছুই মাথায় আসছে না। দু’দিন এভাবেই কাটল। বাইরে বর্ষা, ভেতরে বসে আছি খাতা-কলম নিয়ে। কিন্তু কিছু লেখা হয়ে ওঠেনি। দু’দিন পর সূর্যদেবকে দেখা গেল। ঝলমলে রোদ। সামনে খেলার মাঠ শুকনো হয়েছে। একে একে ছেলেমেয়েরা সেই মাঠে খেলতে আসছে। কিছুদিন ছেলেমেয়েদের কলরবে মনটা বেশ ভালো হয়ে গেল। এবং দু’এক পাতা লেখাও হল। তবে মাঝে মাঝে এই ভদ্রমহিলার কিছু অলৌকিক কথা এবং কর্মকাণ্ড আমাকে অবাক ও ভয় পাইয়ে দেয়। যেমন – “জানালার পাশে বসে লেখালেখি করছি কখন যে সেই মহিলা চা নিয়ে এসে দাড়িয়ে আছেন টের পাইনি। হঠাৎ করেই কিছুক্ষণ পর বললেন অনেক সময় দাঁড়িয়ে আছি চা নেবেন না? আর তখনই ভয়ে লোমগুলো খাড়া হয়ে যায় আর সেদিনের রাতের কথা মনে পড়ে যায়।”

“সেদিন একটু তাড়াতাড়িই দুপুরের খাওয়া শেষ করে লেখতে বসেছি। প্রসঙ্গত বলে রাখি রান্নাবান্না উনিই করেন। বাড়ি ভাড়ার কথা এখনো বলা হয়নি। বাড়ি ফেরার দিন দেবো ভেবেছি। লেখার জন্য একটা ভৌতিক ঘটনা ভাবছি। এরকম নির্জন জায়গায় ভৌতিক ঘটনা ভালোই লেখা যাবে। খানিকটা লেখাও হয়েছে। গল্পের গভীরে প্রবেশ করেছি, তখনই আমার ঘাড়ের কাছে একটা ঠাণ্ডা শ্বাস পড়ল। ভাবলাম হাওয়া (বাতাস) হবে হয়তো…। কিন্তু না, কয়েকবার শ্বাস পড়ল। আর তখনই ঘাড় ফেরালাম। অপর ব্যক্তি বলল পান এনেছি আপনার জন্য। ওই ভদ্রমহিলা। আর তখনই রাগ হল। বললাম পান এনেছেন তো বলতেই পারেন। পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

আপনি ভয় পেয়েছেন বুঝি? -বলল মহিলা।

হঠাৎ করেই মহিলার কণ্ঠস্বর কেমন পাল্টে গেল। একটু অদ্ভুতুড়ে। আমি ধরা ধরা গলায় বললাম হ্যাঁ একটু পেয়েছি বৈকি। দিন পানটা দিন, বলে নিয়ে নিলাম।

ঠিক আছে আপনি লেখালেখি করুন আমি আসি। প্রয়োজনে ডাকবেন। বলে বিদায় নিলেন মহিলা।

উফ্! ঘাম দিয়ে যেন জ্বর সারল। তখনই লেখা লাটে উঠল।

ভাবছি বাড়ি ফিরব। গোছগাছ শুরু করে দিলাম। আর তখনই কচিকাচা ছেলেমেয়েদের কলরব শুরু হলো বাইরে। খেলতে এসেছে, তাদের কলরবে আমার মনটা আনন্দে ভরে গেল। বাইরে বেরোলাম। আর মনে হল কোথায় কোনো অলৌকিক কিছুই নেই, সব স্বাভাবিক। এক্ষুণি ঘটে যাওয়া ঘটনাটা যেন স্বপ্নের মত উড়ে গেল। এই কয়েকদিনে বাচ্চাদের সাথে বেশ ভাব হয়েছে। বিট্টু নামের একজন ছেলে আমার কাছে এলো। তার মুখে কিছু অলৌকিক ঘটনার কথা শুনলাম। পরিচিত আগেই হয়েছে। তাই বিট্টু এসেই বললো কাকু কিছু খাওয়াও। বাচ্চাদের মন তো। বিস্কুট ছিল, দুটো দিলাম। এই দেখে আরও দু’তিনজন দৌড়ে এসে বিস্কুট নিল। বিট্টু বললো কাকু তুমি এখানে আছো ভয় করে না?

কিসের ভয়?

ভুতের!

কি আবোল তাবোল বলছিস! এখানে ভুত কোথায় ছিল? একজন ভদ্রমহিলা আর আমিই তো আছি। তাঁর সাথে অবশ্য সবসময় কথাবার্তা হয় না। একটু আধটু। বাচ্চারা সবাই মিলে বলল কি বল কাকু একজন ভদ্রমহিলা?

বলেই নিজেদের মধ্যে কিসব বলাবলি করল। তারপর বলল – এখানে কেউই থাকে না, কেউই আসে না। শুধুই দিনের বেলায় ছাড়া। আর তুমি যে ভদ্রমহিলার কথা বলছো সে অনেক দিন আগেই মারা গেছে।

কি বলিস তোরা! ভদ্রমহিলা মারা গেছেন? আমি তার হাতেই প্রতিদিন Breakfast থেকে Dinner করি।

তুমি পাগল হয়ে গেলে নাকি কাকু। এখানে কেউই থাকেনা আর তুমি বলছো ভদ্রমহিলার হাতে ব্রেকফাস্ট করো।

বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল কাকু বোধহয় ওই মহিলার প্রেতাত্মার কথা বলছে।

আচ্ছা কাকু ওই মহিলা ফর্সা, রোগা পাতলা?

হ্যাঁ রোগা বটেই তবে ফর্সা। এটা শুনে তারা বলল এই সেই মহিলা। এখানে আর থাকা যাবে না চল্ পালিয়ে যাই।

বলে তারা দৌড়োতে লাগলো। আমি অবশ্য একটু ভয় পেলাম। কালকের চা দেওয়ার ঘটনার কথা ভাবলাম।

বললাম তোরা যাস না। চলে যায়, কথা বলি।

তারা ফিরে এলো। তাদের কাছ থেকে জানতে চাইলাম আসল ঘটনাটা কি।

বিট্টু বলল, এই বাড়িতে কয়েক বছর আগে একটা পরিবার ছিল সেই পরিবারে ওই মহিলা বিয়ে হয়ে আসেন এবং কয়েক বছর পরেই, কি কারনে জানি না (হয়তো কিসের রাগ বা ক্রোধ) এক রাত্রিতে এক এক করে পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলে শ্বাস আটকে।

(বললাম) বাপরে, সাংঘাতিক মহিলা তো!

আর তার কিছুদিন পরেই ওই মহিলার বিপক্ষে কোর্টকাছারি হয়। কোর্টের রায় মৃত্যুদণ্ড। শুনে নিজে নিজেই আত্মহত্যা করে মারা যায়।

এই বলে তারা চলে গেল। আমারতো ভয়ের আর সীমা রইল না। হ্যালি পাশে থাকলে হয়তো অনেকটা স্বস্তি পেতাম। সন্ধ্যে হয়ে এলো। কি জানি কিভাবে কাটবে আজকের রাত। পালিয়ে যাবোই যখন ভাবছিলাম পালালেই হয়তো ভালো হতো।

সন্ধ্যে সাতটা পেরিয়ে গেল। এখনও ভদ্রমহিলার দেখা পাইনি। অবশ্য এখন আর ভদ্রমহিলা বলে লাভ নেই পেত্নিই বলা চলে। প্রতিদিন সাতটার আগেই সন্ধ্যের টিফিন হয়ে যেত। মনে মনে ভাবলাম ওর সাথে আর না দেখা হওয়াই ভালো। ভয়ে ক্ষিধের কথা ভুলে গেছি। সন্ধ্যে গড়িয়ে নিঝুম রাত্রি নামল। বাইরে ঝিঝিপোকার ডাক। শেয়ালগুলো ডেকে ডেকে তাদের গর্তে ঢুকে পড়েছে। আজ, একটু সামান্য শব্দও যেন বিকট হয়ে শোনাচ্ছে। হঠাৎ সেই রাতের কথা মনে পড়ল। কঙ্কালগুলোর অট্টহাস্য। উফ্ কি ভয়ানক দৃশ্য। হ্যালি বোধহয় আর নেই। এখন সে পাশে থাকলে একটু সাহস পেতাম।

বিছানায় শুয়ে আছি। এই সব কথা ভাবতে ভাবতে কখন চোখের পাতা একত্রিত হয়েছে বুঝতে পারিনি। ঘুমটা ভাঙল একটা চেনা গোঙানির শব্দে। হ্যালির কান্না। কিন্তু সে এখানে এল কিভাবে! ওসব ভাববার সময় নেই মোটেও। এখনো সে বেঁচে আছে এটা বুঝতে পেরেই মনে একটু সাহস পেলাম। কিন্তু সে গোঙাচ্ছে কেন! আবার কোনো বিপদ হল নাকি। অশুভ ইঙ্গিত। টর্চ লাইটটা জ্বেলে বাইরে বেরোলাম। এদিক ওদিক টর্চের আলো ফেললাম। কোথায় কোনো কিছুই নেই। বার কয়েক ডাক দিলাম – হ্যালি….. হ্যালি…… কোথাও কোনো আওয়াজ নেই। শুধুই প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে আমার কথার। আমি কি ভুল শুনেছি …! আর একটু বাইরে বের হলাম। অদ্ভুত দৃশ্য। সেই রক্তপিপাসু বাদুড়গুলো উড়ছে মাথার ওপর। ওইতো দু’টো চোখ জ্বলজ্বল করছে। আমার হ্যালি। টর্চের আলো ফেললাম তার গায়ে। কিন্তু তার কোনো শরীরের অংশ দেখা গেল না। এ কিভাবে সম্ভব..! এগিয়ে গেলাম। কোথাও কোনো কিছুই নেই। অদ্ভুত তো। পেছন ফিরে চাইলাম। ওই তো বাড়ির দরজার পাশে দু’টো চোখ জ্বলছে। আবার ওই চোখের দিকেই এগোলাম। বাদুড়গুলো ডানা ঝাপটে ঝাপটে আমার মাথার ওপর বসে পড়ছে এবং খোঁচা দিচ্ছে। কি অদ্ভুত কাণ্ড। ছুট্টে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলাম। কোথায় দরজার পাশে তো কোনো কিছুই নেই। কিন্তু আবারও জ্বলছে ওই দুটো চোখ, বাড়ির ভেতরে। আবার এগোলাম। আরও ভেতরে প্রবেশ করছে। ওই চোখের পিছু পিছুই চললাম। কোনো হুশ নেই। যেন আলেয়ার পিছু পিছু ছুটছি। মস্তিষ্ক যেন আর কাজ করছে না। সবকিছুই এখন ওই জ্বলজ্বলে দুটো চোখের ওপর নির্ভর করছে। কোন্ মায়াজালে আটকে পড়েছি জানিনা। ঘরটা যেন শেষ পেতেই চায় না। লম্বা হয়ে চলেছে কতক দূর। শেষ পর্যন্ত পৌঁছলাম একটা সিঁড়ি বেয়ে নিচু জায়গায়। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শুধুই হাড় আর মাথার খুলি। এবং সেই মহিলা বসে আছে এক কোণে। এবার বুঝতে পারলাম এই মহিলা ওর পরিবারের সবাইকে এখানেই এনে মেরে ফেলেছে। তাই এত হাড় আর মাথার খুলি পড়ে আছে। আমাকে দেখে মহিলার কি অট্টহাস্য।

বলছে- তুই এসেছিস? আয়, অনেকদিন তাজা রক্ত খাওয়া হয়নি। আজ তোর রক্ত চুষে খাব।

ভয় পেয়ে যেই পথে এসেছিলাম সেই পথে দৌড়তে লাগলাম প্রাণপণে। পথ (ঘর) যেন শেষই পায় না। কোথায় যে চলে এসেছি…. বাদুড়গুলো খোবলাচ্ছে মাথায়। মাথা টনটন করছে। আর ছুটতে পারছি না। হোঁচট লেগে পড়েছি কতকবার। তবুও দৌড়াচ্ছি প্রাণপণে। বোধহয় বাইরে ভোরের আলো ফুটবে এবার। কোনোরকমে দৌড়ে বাইরে বেরোলাম। দৌড়তে দৌড়তে কোথায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছি জানি না। জ্ঞান ফিরল ডাক্তারখানায়। দুইদিন ধরে চিকিৎসা করে বাড়ি ফিরলাম ট্রেন ধরে। আর পেছন ফিরেও তাকাইনি সেই বাড়ির দিকে। দু:খের বিষয় সেই বাচ্চা ছেলেমেয়েদের সাথে দেখা করা হয়ে ওঠেনি আর।

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post ভোলা ভূতুনী | ভয়ের দেশ |মাওলানা মহবুবুর রহমান| Bengali Horror Story
Next post বিভ্রান্তি | ভয়ের দেশ |শেখ রাসেল পারভেজ| Bengali Horror Story