রাতবৈঠক | ভয়ের দেশ | সৌম্য শংকর বসু| Bengali Horror Story
0 (0)

Getting your Trinity Audio player ready...

মেপ্পির থেকে আড়াল হব বলেই রাতে বাড়ির বাইরে বেড়িয়েছিলাম। বড় নেশা চেপেছিল যে। বিশাল চক মিলানো বাড়ি, গলিঘুঁজির অভাব তো নেই, যে কোনো একটাতে সেঁধিয়ে অনায়াসে ফুকতেই পারতাম। মেপ্পির প্রান্তটুকু ছাড়া প্রায় আধঘণ্টা অন্ধকার বাড়িময়, মানে আধঘণ্টা ধরে ‘অন্ধকাররররর’ বলে একটানা সুর করে টানলে যতটা আঁধার নামে মেপ্পির শ্বশুরের ভিটের আনাচেকানাচে ততটাই কালো রং জমাট বেঁধে ভয়ে দেখাচ্ছিল। আমার ব্যাপার অবশ্য আলাদা। আমি তো ভয় পেতেই যাই সেখানে। তবে সেদিন কেন জানি না মন চাইছিল বাড়ির বাইরে বেরোতে। চাঁদের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা আছে জানিস বোধহয়। সেই কারণেই হয়তো। যতীন্দ্রমোহন বাগচীর সেই বাঁশ বাগান আর তার মাথায়ে ঝুলছে পেল্লায় এক চাঁদ। হলুদপানা। ভাব একবার। তবে সেদিন কিন্তু সে শিকে ছেড়েনি আমার। গোলাপি জমাট মেঘ মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছিল আকাশ। তবু ভাগ্যিস বেড়িয়েছিলাম।

রোয়াকটায় হ্যারিকেনটা রেখে পায়চারি করছিলাম বাড়ির সামনেটা। গোটা বাড়িটার মতো এখানেও তার ফুরিয়ে যাবার গল্প। খোঁদল-খাঁদাল, আগাছা-পরগাছা, পুরাতনী গন্ধ। ধূমপানের অছিলায় গ্রাম্য রাত দেখছিলাম। মিশকালো চরাচর। চারপাশে দৈত্যর মতো কালোকুলো গাছেরা ঘন হয়ে দাঁড়িয়ে। আমার নিয়ে আসা হ্যারিকেনটা ছাড়া কোথায় আলো নেই এক রত্তি। মেপ্পির মুখে শুনেছি এখানে সাঁঝ নামে না বড় একটা, বিকেল গড়ালেই নিঃশব্দে রাত এসে যায়।

ঝিম ধরিয়ে দিচ্ছিল ঝিঁঝিঁর ডাক। থেকে থেকে শেয়ালও ডাকছিল। আরো কি যেন একটা ডাকছিল। চমকে উঠেছিলাম সে ডাক শুনে। ননীদাকে জিজ্ঞেস করাতে বলল, “এ তো পেঁচা ডাকছে গো দাবাবু।”

হ্যাঁ, ননীদাও ছিল আমার সাথে। ননীবুড়ো আমাকে দেখে তার চালাঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছিল। ননীদারা বংশ পরম্পরায় এ বাড়ির খিদমতগার। ননীদাও বেশ পুরাতন ভৃত্য। ভালোই বয়স হয়েছে তার, তবে দরকচা মারা চেহারায় তার প্রকাশ হয় না বড় একটা। যতবার গেছি একই রকম দেখেছি তাকে। মেপ্পিসা মারা গেল, হ্যাঁ তা বছর দুয়েক তো হতে চলল। তারপর আরো সচল হয়েছে ননীদা। চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছে আমার নিঃসন্তান মেজপিসিকে। বুড়ো হাড়ে এখনও সব্যসাচী সে।

ননীদাকে বলছিলাম, “এত বদনাম এ বাড়ির, লোকে নাকি এখানে দিনেদুপুরে ভূত দেখে, কিন্তু মেপ্পি বলে সে নাকি কিছুই টের পায় না। এটা কি করে হয়?”

ননীদা হাসে। ফোকলা মুখে মেলানকোলি হাসি। বলে, “মা তো উঠতে-বসতে তেনাদের দেখে গো। আমাকে বলেছে মা। তোমরা এক-দুদিনের জন্য আসো, তোমাদের চিন্তা করিয়ে কি লাভ বল? আর বলেই বা কি হবে। বড়বাবু কত পুজোআচ্ছাই তো করালেন, কি লাভ হল? তাছাড়া এসব এখন আমরা সয়ে নিয়েছি দাবাবু।”

কথা বলতে বলতে আমরা হাঁটছিলাম। বাড়ি থেকে একটু এগিয়েই এসেছিলাম। হয়ত পিসিদের এলাকাও অতিক্রম করে ফেলেছিলাম আমরা। এখন তো আর ঘেরা পাঁচিল নেই যে সীমানা বুঝব, শুধু পাথুরে ফটকের একপাশ কোনো রকমে লটকে আছে, তাও যেদিকটায়ে হাঁটছিলাম সেদিকটায়ে নয়। তবে মেপ্পিদের হাড়পাঁজর বের করা দোতলা বাড়িটা কিন্তু আমাদের দৃষ্টির মধ্যেই ছিল। এক অলম্বুষ থপথপে দৈত্যর মতো লাগছিল তখন তাকে।

এরই মধ্যে কোনো কথা নেই বার্তা নেই, দেখলাম হঠাৎই হ্যারিকেনটা রোয়াক থেকে নিচের ঘাস-জমিতে পরে গেল। ভাঙল কিনা জানি না, তবে টিমটিমে আলোটাও গেল নিভে।

সেদিকে চেয়ে ননীদা উশখুশ করছিল। কিছু বলতেও হয়ত যাচ্ছিল কিন্তু আমি আগে কথা বলে উঠি বলে তার কথা চাপা পরে যায়। এই হ্যারিকেনের পরে যাওয়াকে আমার তখন স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছিল। আসলে মাথায় ঘুরছিল নতুন গল্পের ছক। বলতে বাঁধা নেই, মেপ্পির শ্বশুরবাড়িতে বারংবার ঢুঁ মারি তো শুধু তাকে দেখে আসার জন্য নয়, এ জায়গাটাও যে আমায় বড় টানে রে। প্যারানরমাল নিয়ে থাকি আর এমন জায়গাকে এড়িয়ে যাব? হয়? কত কিছু যে পেয়েছি সেখান থেকে। কত কিছু যে ফিল করেছি, দেখেছি। একবার তো চক্রও বসিয়েছিলাম সে বাড়িতে। তখন আমার সদ্য সদ্য বিয়ে হয়েছে বুঝলি। সেবার তোদের বৌদিও গেছিল আমার সাথে। মেপ্পিসাও তখন বেঁচে ছিল। পিসার উৎসাহেই আরো করেছিলাম এ কাজ। সে এক বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার বুঝলি। সিয়ান্স উঠেছিল মাথায়। সারা বাড়ি নেচে উঠেছিল একদম। মেপ্পি অবশ্য এসবে বড় একটা থাকত না। এড়িয়েই চলত এসব।

তবে মেপ্পিও মাঝে মাঝে যা একেকটা বোমবাস্টিক ইনফো ছাড়ে না সে বাড়ি বিষয়ক কি বলব। তবে অধিকাংশটাই তা বাড়ির ইতিহাস সংক্রান্ত। পিসার মুখেও বিস্তর শুনেছি এসব। কিন্তু মেপ্পি তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা কোনোদিনও বলেনি আমায়। আমার শত ঠেলাঠেলিতেও মুখ খোলেনি সে। ননীদাটাও হয়েছে তেমনই ছুপারুস্তম। তবে এবার কিন্তু মেপ্পি তার ফ্লাডগেট খুলে দিয়েছে।

যাকগে যে কথা হচ্ছিল। আমি ননীদাকে বলি, “আজ একটা জমিয়ে গপ্পো ছাড়ো তো দাদা। মানে তুমি যা দ্যাখোট্যাখো আর কি। সারাদিন বনবাদাড়ে টোটো কর, তোমার তো আরো বেশি এক্সপেরিয়েন্স। তোমাদের এত ঢাকঢাক-গুড়গুড় কেন বুঝি না বাবা। একটু ঝেড়ে কাশো তো?”

ঠিক তখনই নীল আলো ছড়িয়ে বিদ্যুৎ চমকালো। বাজ পড়ল কড় কড় কড় কড়াত। আর সেই লহমাতেই দেখলাম আমাদের বাম দিকের গাছপালার মাঝে বেশ খানিকটা তফাতে এক মহিলাকে। এক ঝলক কিন্তু স্পষ্টই দেখলাম। আটপৌরে করে শাড়ি পরেছে সে। সাদা শাড়িই মনে হল। আধহাত ঘোমটার তলায় মুখটা অবশ্য দেখা যায় না। এই আধবুড়ো রাতে একটা বড় গাছকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে সে। গোল-গোল হয়ে ঘুরে চলেছে সেই গাছটার চারপাশে। তার কোনো শব্দ নেই, অবশ্য শব্দ পাওয়ারও কথা ছিল না, বেশ তফাতেই ছিলাম আমরা। কিন্তু ব্যাপার হল নিশাচরেরাও থেমে গেছিল তখন। অন্ততঃ আমি পাচ্ছিলাম না কোনো শব্দ। এক্কেবারে পিন ড্রপ সাইলেন্স যাকে বলে। কেমন যেন একটা মন্ত্রমুগ্ধ ভাব তখন আমার। একটা খুব সুন্দর গন্ধ আসছিল সেদিক থেকে। অবশ্য আগেও পাচ্ছিলাম সে গন্ধ, খালি উৎসটা অজানা ছিল। ধূপ-ধুনোর গন্ধ? না ঠিক ধূপ-ধুনো নয়, অন্য কিছু, তবে সমগোত্রীয়। বেশ মোলায়েম, বড় আরাম ছিল সেই ঘ্রাণে। এদিকে কেন জানি না কেমন যেন শরীরটা ছেড়ে দিল। ঝিমঝিম করে উঠল মাথাটা। চোখও জুড়িয়ে আসছিল। তবুও নট নড়নচড়ন হয়ে নিষ্পলক চেয়ে রইলাম সে দিকে। অবশ্য অন্ধকারে আর কিছুই ঠাওর হচ্ছিল না। কিছুই বুঝতে না পেরে সেদিকে চেয়ে থাকতে থাকতেই ননীদাকে জিজ্ঞেস করলাম, “ও কে ননীদা? ওই যে ওদিকে ও-ও কে?”

কিন্তু ননীদা সে দিকে চাইলই না। শুধু মাথা নিচু করে কাঁপাকাঁপা গলায় বলল, “ও কিছু না, দাবাবু। তুমি ঘরে যাও তো এবার। ঘরে যাও।”

এদিকে বৃষ্টিও নামল ঝমঝমিয়ে। তবে বৃষ্টি-ফোঁটারা গায়ে বিঁধলেও মালুম হচ্ছিল না কিছুই। সেই গন্ধটা আমাকে মাতাল করে তুলেছিল। বেশ পুজো-পুজো গন্ধটা কিন্তু চেনা গন্ধ নয়। কেমন যেন একটা ঘোর লেগেছিল।

এরই মধ্যে আবার বিদ্যুৎ চমকাল। আর এবার সেই তড়িৎ-রেখায় আমি যা দেখলাম তাতে আমার জ্ঞান হারানোটাই সঙ্গত ছিল। কিন্তু আমি তো আগেই হুঁশ খুইয়েছিলাম, তাই নতুন করে আর হারানোর কিছু ছিল না এই পৈতৃক প্রাণপাখিটুকু ছাড়া। নেশাতুর চোখে দেখলাম সেই নারীমূর্তি আর একা নেই। তারা এখন বেশ কয়েকজন হয়েছে। সকলে মিলে ঘুরে চলেছে সেই মহীরুহকে ঘিরে। দুটো বৃত্যে ঘুরছে তারা। একটা ছোটো বৃত্য, সেটাকে ঘিরে একটা বড় বৃত্য আর কেন্দ্রস্থলে গাছটা। এত রাতে কোথা থেকে আসছে এরা? সবারই মুখ ঘোমটায় ঢাকা আর ইউনিফর্মের মতো সবাই সাদা শাড়িই পরে আছে। বৃষ্টি পড়ছে, বাজও পড়ছে কিন্তু তারা আমার মতোই ভ্রুক্ষেপহীন। এবার কিন্তু স্পষ্ট শব্দও পেলাম সেদিক থেকে। বেশ জোরেই। বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে তা আমার কর্ণগহবরে প্রবেশ করছিল। লক্ষ মাছি ভনভন করলে যেমন আওয়াজ ওঠে, তেমন ধারার কিছু। এরপর আর কিছু মনে নেই আমার। এরকম কতক্ষণ চলেছিল তা ঈশ্বরই জানেন। এটুকু শুধু মনে আছে, ননীদা আমাকে জাপটে ধরে টানতে টানতে বাড়ির অন্দরমহলে নিয়ে ফেলেছিল।”

* * *

ব্রজদা এবার একটু থামল ল্যারিঙ্ক্সকে আরাম দিতে। বোতল থেকে খানিকটা জল গলাধঃকরণ করে একটা সিগারেট ধরাল সে। আমাদের দিকেও মেলে ধরল তার সিগারেটের প্যাকেট। শান্তিপুরী ভদ্রতা। সে ভালো করেই জানে তার বা বৌদির সামনে আমরা ফুঁকি না। তবে তার বলার ধরনে আমরা সত্যিই মোহিত। সবাই হয়তো আমরা এসব মানি না কিন্তু শুনলে একটা শিরশিরানি আসে বৈকি। আমার তো হয়।

বাবি বলল, “কি মারাত্মক ব্যাপার গো। এতো শুনেই আমার কেমন করছে। তু-তুমি কতক্ষণ এমন ছিলে? মানে তোমার সেন্স এল কখন?”

ব্রজদা সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে বলল, “পরের দিন সকালে আমি প্রকৃতিস্থ হই। বাকি রাতের ঘটনা ব্ল্যাংক আমার কাছে। তবে মেপ্পি বলেছিল, আমি নাকি লক্ষ্মী ছেলের মতোই মেপ্পির পাশে এসে শুয়ে পড়েছিলাম। শুধু মেপ্পির কোনো কথার উত্তর দিইনি এই যা। মেপ্পি অবাক হয়েছিল কিন্তু ভয় পায়নি। অলৌকিকের সঙ্গেই তো তার যাপন চলে।”

এমন সময় নিপাবৌদি ট্রে-তে করে চা এবং সঙ্গে বিস্তর টা নিয়ে ঢুকল। এখন এসব খাবার সময়ই বটে! ঘড়ি বলছে রাত এখন তার তৃতীয় প্রহরে। তবে আমাদের হুল্লোড়ের ব্যাপারই আলাদা।

ব্রজদা হল আমাদের এই প্রেত-মজলিসের সূর্য। তার বাড়িতে তারই উৎসাহেই এই বৈঠক। প্রেতযোনি নিয়ে তার বিস্তর পড়াশুনা, বিস্তর গবেষণা। একটু ভুল বললাম। ঠিক প্রেতযোনি নয়, তার আসল উৎসাহ মৃত্যুর পরের জীবনকে নিয়ে। সে বলে, “আরে ওটাই তো আগে জানতে হবে রে। আমাদের ফাইনাল ডেস্টিনেশন তো ওটাই ভাই।” বইয়ের তার উনতিগুনতি নেই। তাকের পর তাক, আলমারি, এমনকি নিপাবৌদির ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার টানলেও ব্রজদার উপচে পরা বইয়ের গাদা থেকে কয়েক পিস বই ভূমি না নিয়ে ছাড়বে না। ধন্য বৌদি। ধন্য ব্রজদা।

ব্রজদা নিজেও বেশ লেখে। এদিক-ওদিক তার লেখাও বেরোয়। সবই ওই অপার্থিব জগৎ বিষয়ক। সবাই না চিনলেও একটু-আধটু পরিচিতি ব্রজলাল মুখুজ্জের আলবৎ আছে। আলগোছে কিছু পয়সাও আসে এসব থেকে তার। তবে টাকার জন্য সে লেখে না। সে জন্য তো তার চাকরিটি রয়েছেই। আর তার নিজের ঝুলিতেও তো বিস্তর স্টক এসবের। এই যেমন সে শোনাচ্ছিল।

এ কথা ১৯৮৬-এর। ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে মেক্সিকোতে। ভারতে এই প্রথম বিশ্বকাপের সব খেলা সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে দূরদর্শনে। কলকাতা তখন ফুটবল জ্বরে কাবু। রাত হলেই টিভির সামনে আবালবৃদ্ধবনিতা। আমাদের পাড়ায় তখন হাতেগোনা কয়েকজনের বাড়িতে টিভি। চিনি সবাইকেই কিন্তু রাতবিরেতে গুলতানি মারা তো সবার আস্তানায় সম্ভব নয়। তাছাড়া নতুন কালার টিভি কিনেছিল ব্রজদা। নেমন্তন্ন ছিল আমাদের, “তোরা কিন্তু এখানেই দেখবি পুরো ওয়ার্ল্ড-কাপ।” এমনিতেই তো তার বাড়ি নিপাবৌদির প্রশ্রয়ে আমাদের অলিখিত ক্লাব ছিল। অবারিত দ্বার ছিল সর্বক্ষণ। সময়-অসময়ে কতো হুজ্জুতি যে করতাম ব্রজদার ওপর, বৌদির ওপর।

তখন গ্রুপ লিগের খেলা চলছিল। প্রতিদিন মোটামুটি দুটো সময় খেলা হত। ভারতীয় সময়ে প্রথমটা শেয হতো বোধহয় রাত দেড়টা নাগাদ আর দ্বিতীয়টা মনে হয় রাত তিনটের আশেপাশে শুরু হতো। সময়গুলো ঠিক খেয়াল নেই তবে কমবেশি এমন ধারাই ছিল। আর দুটো খেলার মধ্যিখানে যে বেশ কিছুটা সময় পাওয়া যেত সে সময় আমরা ব্রজদার তত্ত্বাবধানে অলৌকিকে কিক মারতাম। ব্রজদাই প্রধান বক্তা। তবে আমরাও টুকটাক ছাড়তাম। বৌদিও আমাদের সাথে ঠায় বসে থাকত। বৌদি যে খুব ফুটবলটা বুঝত তা নয়, ভূতপ্রেত নিয়েও তার আগ্রহ দেখিনি কোনোকালেই। কিন্তু হুল্লোড়টা বুঝত, আমাদের স্নেহও করত, তাই সারারাত এসব দিনে আমাদের সাথে দিব্যি কাটিয়ে দিত সে। তবে কথা কিন্তু বড় একটা সে বলত না। শুধু হাসিহাসি মুখে বসে থাকত। তার একটা খুব সুন্দর স্নিগ্ধ উপস্তিতি ছিল। বড় ভালো লাগত আমাদের। তবে এটা যেদিনের কথা সেদিন বৌদির এই ভাবমূর্তির একটু বদল দেখেছিলাম।

মোবাইলে নুয়ে শরীর ছেড়ে দেবার সময় তখনও শয়তানের গর্ভে। ভারচুয়াল দুনিয়াতে ল্যাদ খাওয়াও তখন দুঃস্বপ্নের সামিল। কি অনাবিল আনন্দ যে তখন ছিল। বড় কষ্ট হয় আজকের প্রজন্মকে দেখে। কি যে হারালো তারা।

সেদিন অবশ্য শুধু আমি আর বাবিই এসেছিলাম খেলা দেখতে। বাকিরা আসেনি নানান কারণে। সব মনে নেই, তবে জয়ের পরের দিন সকালে চাকরির ইন্টারভিউ ছিল বলে আসতে পারেনি এটা বেশ মনে আছে। কারণ সেই একই অফিসে আমিও কদিন আগে ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছিলাম।

প্রসঙ্গে ফিরি। আমি ব্রজদা বললাম, “গেলো মাসেই তো তুমি তোমার মেজপিসির বাড়ি গেলে। এসব কি তখনই দেখেছ গো?”

ব্রজদা হেসে বলে, “একদম রে। সেইসময়ই এসব দেখেছি। আর কি জানিস মেপ্পির বাড়িতে তো মাঝেমধ্যেই যাই, কত কিছুই তো দেখেছি সেখানে। কিন্তু এ জিনিস এই প্রথম।”

বাবি বলল, “হ্যাটস অফ টু ইওর পিসি ব্রজদা। ওই পেল্লায় বাড়িতে একা কি করে যে থাকেন তিনি। আচ্ছা আর কেউই থাকে না সে বাড়িতে?”

ব্রজদা ছোট হয়ে আসা সিগারেটটাকে একটা সুখটান দিয়ে অ্যাশট্রেতে চালান করে দিয়ে মুচকি হেসে বলল, “থাকবে না কেন? তবে মানুষের কথা যদি বলিস, তাহলে মেপ্পিই একমাত্র। তবে এককালে প্রচুর লোকজনই ছিল। তরফের অভাব ছিল না। পিসির শ্বশুরেরা আবার পাঁচ ভাই। সবাই পরিবার নিয়ে এখানেই থাকত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এক এক করে সবাই ভেগে পড়েছে। আসলে প্রায় পরপরই কখানা মৃত্যু ঘটেছিল ও বাড়িতে এবং প্রায় সবকটাই রোগে ভুগে নয়, দুর্ঘটনায়। এরপরেই ভিড় আস্তে আস্তে পাতলা হয়। মেপ্পিরা টিকে গেল কারণ তাদের ট্যাঁকের জোর ছিল না তেমন। পিসা তো তেমন কিছু করত না। অথচ জানিস কি ভালো যে গান গাইত সে। কটা গানের টিউসানি অবশ্য ছিল। কিন্তু তা দিয়ে আর কতো আসে বল? ভীষণ খেয়ালি মানুষ ছিল পিসা।”

আমি বললাম, “প্রেতচক্রর কথা কি যেন বলছিলে, সেটা এবার বলো না শুনি?”

চায়ে চুমুক দিয়ে ব্রজদা বলল, “আরে দাঁড়া এখনও শেষ হয়নি আমার। শেষ করি আগে। ও কাহিনি পরে শুনিস না হয়। সময় তো পরে রইল।”

পরের দিন সকালে মেপ্পিকে আমি সবই বললাম। শুনে মেপ্পি প্রথমে একটু থম মেরে গেল। তারপর একটা বেশ গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল – যাক ননীই বাঁচাল তোকে। ও তোর সঙ্গে ছিল বলেই তুই – কিন্তু ননী তো আর নেই রে। সে তো আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।

চলে গেছে মানে? কোথায় গেছে মেপ্পি? কই কাল আমাকে তো তুমি কিছুই বললে না – জানতে চাইলাম আমি। যদিও মনে মনে কিন্তু পিসির কথার অশুভ ইঙ্গিতটা আমি বেশ ধরে ফেলেছিলাম। তখন আমার শক খাবার মতো অবস্থা।

মেপ্পি বলল – আরে তুই তো এলিই বিকেলে। বলব কখন? তবে রাতে হয়ত বলতাম। কিন্তু তার সুযোগ আর কোথায় পেলাম বল? গতমাসে মারা গেছে ননী। নারকেল পাড়তে গাছে উঠেছিল। মাঝেমধ্যেই উঠত গাছে-টাছে। তবে ইদানীং ওকে বারণ করতাম। বয়স তো হয়েছে, বুড়ো হাড়ে চোটফোট লেগে গেলে কে দেখবে ওকে? তবে শুনলে তো? ওর বৌটাও তেমন শক্তপোক্ত নয়। তারও তো বয়স কম হল না। এখন অবশ্য সেই সব আমার সামলাচ্ছে।

ননীদা নারকেল গাছটা থেকে নেমেই নাকি বুকে হাত দিয়ে বসেছিল। আর বসল তো বসলই, উঠল না আর। ডাক্তার-বদ্যি করারও সুযোগ দিল না।

আমাকে মেপ্পি আরো বলেছিল – কাল তুই যা দেখেছিস তা আমিও অবশ্য কয়েকবার দেখেছি ঘরের জানলা দিয়ে। দেখতে দেখতে কেমন শরীর ভারী হয়ে যেত, মাথা টলত। একটা গন্ধ আসত, শরীর ঝিম করে দিত। তাই এখন ওই জানলা বিকেল গড়ালেই বন্ধ করে দি। এরা তো আর মানুষ না। অবশ্য ভূত কিনা তাও জানি না। কাল তুই বেরবি জানলে মানাই করতাম।”

ব্রজদা থামল। চোখও বুজল। হয়ত সে জায়গায় তার মন এখন টহল দিচ্ছে।

আমি বললাম, “কিন্তু ওসব কি ছিল তার কোনো হদিস পেলে? ওই ঘোমটা মাথায় যারা -”

ব্রজদা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, তারানাথ তান্ত্রিক নিশ্চয়ই পড়েছিস? এই অলৌকিকতার হদিস সেখানে হয়ত কিছুটা আছে। তন্ত্রের এক বিভাগ হল ডামর-তন্ত্র আর এই মহাডামরের এক বিভাগ হল ভূত-ডামর। সেখানে একরকম জীবের উল্লেখ আছে যারা মানুষও নয় আবার মৃত মানুষের প্রেতও নয়, দেবতা-উপদেবতাও নয়। এরা এলোক আর পরলোকের মাঝামাঝি কোনো জগতের বাসিন্দা। যাদের দেখেছিলাম তারাও হয়ত সেরকম কিছু।”

আমি বললাম, “তাদের দেখা তো অনেক সাধ্যসাধনার পর মেলে ব্রজদা, এমন বসতির পাশে তাদের দেখা পাওয়াটা তো, মানে ওই বাড়ির পাশেই তাদের দেখেছ বললে না তুমি?”

ব্রজদা ঠোঁট উলটিয়ে বলল, “কি জানি বাবা। তবে বসতি ওটা তো ঠিক নয় রে। মেপ্পির শ্বশুরবাড়ির চৌহদ্দিতে তেমন বাড়ি-ঘরদোর কোথায়? মানুষজন থাকে না বলব না, তবে বেশ ছাড়াছাড়া। চারিদিকে ঝোপঝাড় আর জঙ্গল। একসময় এর অনেকটাই হয়ত কেয়ারি করা বাগান ছিল, কিন্তু একা ননীদা এখন আর পেরে উঠত না। তবে বাড়ির পেছনদিকের গোলাপ-বাগানটার কিছুটা এখনও আছে। সেটা অবশ্য ননীদারই ক্রেডিট। মেপ্পিরও। তাকেও তদারক করতে দেখেছি। তবে এখন সেই রাজাও নেই আর নেই তার রাজ্যপাট। এদিক ওদিক খেয়াল করলে তার নিদর্শন হয়ত দেখা যায়। তবে ওইটুকুই। দিনের বেলাও ওই বাড়িটার দিকে তাকালে বুকটা কেমন ধড়াস করে ওঠে। আমিও কতবার যে চমকে উঠেছি! কেমন যেন জীবন্ত। কিন্তু একটা বাড়ি বই তো নয়। শুনেছি মেপ্পির দাদাশ্বশুর প্রায় জোর করেই ওখানে বাড়িটা তুলেছিলেন।

অনেকেই নাকি ওজর-আপত্তি তুলেছিল। এ বড় দোষান্ত জায়গা হুজুর। হাওয়া-বাতাস লেগে ক্ষেতি হতে পারে। মাগ-বাচ্চা নিয়ে থাকবেন। দরকার কি? – এমন ধারারই কিছু হয়ত বলেছিল।

কিন্তু কানে নেননি তিনি। ডাকসাইটে দারোগা ছিলেন তো। তার নামে বাঘে-গরুতে নাকি একঘাঠে জল খেত। তখনকার দিনে খুব ডাকাতি হতো বুঝলি। তবে ছেঁচরা ছিল না তখনকার ডাকাতরা। রীতিমতো চিঠিপত্র দিয়ে তারা ডাকাতি করতে আসত। এ বাড়িতেও তেমন উড়োচিঠি উড়েছিল যে অমুক দিন অমুক সময় আমরা ডাকাতি করতে আসছি। তবে ওই চিঠিটুকুই শুধু, ওই দারোগার দাপটে তাদের আর এসে ওঠা হয়েনি রে। কিন্তু অপার্থিব জগতের তো এ ভয়ের বালাই নেই। তাই তারা থেকে গেল এই বাড়ি করার পরও। বরং বলা ভালো এটা তাদেরই জায়গা ছিল, এরাই উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল এই বাড়ি নির্মাণ করে। তারপর কতো যে কাহিনী এ জায়গাকে ঘিরে। বাড়িটা বানাতে গিয়েই যে কত দুর্ঘটনা ঘটেছে তার আর লেখাজোখা নেই।”

এরমধ্যে হঠাৎই নিপাবৌদি কেমন অ-সহিষ্ণু হয়ে বলে ওঠে, “আচ্ছা তোমাদের কি অন্য গালগল্প কিছু নেই? প্রতিদিন এই এক জিনিস। রাতবিরেতে এসব নাই বা বললে।”

আমি আর বাবি মুখ চাওয়াচাওয়ি করি। বৌদিকে এমন চঞ্চল হতে বড় একটা দেখিনি আমরা।

ব্রজদা হেসে বলে, “কেন কি হল নিপা? তোমার ভালো লাগছে না? আচ্ছা ঠিক আছে, আর একটু বলেই এ কাহিনীর ইতি টানছি এবার।

জানিস মেপ্পির জন্য বড় দুশ্চিন্তা হয় আমাদের। একা একা থাকে তারমধ্যে আবার অমন স্থান মাহাত্ম্য জায়গাটার। যদিও মেপ্পি বলে ওর নাকি কিচ্ছুটি হবে না। ক্ষতি হলে এতদিনে তা হয়ে যেত। যারা তার চারপাশে আছে তারা তাকে মেনেই নিয়েছে আর মেপ্পিও।

যাইহোক, গত পরশু মেপ্পির কাছে গিয়েছিলাম আবার। নিপার তাড়নাতেই ছুটেছিলাম। সকালে গিয়ে রাতেই ফিরে এসেছি। একটা আর্জি ছিল তার কাছে। এ আর্জি অবশ্য নতুন কিছু নয়। আগেও করেছি কিন্তু নামঞ্জুর হয়েছে বারবার। তোর বৌদির আর আমার দুজনেরই ইচ্ছে মেপ্পিকে কদিন এখানে এনে রাখা আমাদের কাছে। মেপ্পিরও ভালো লাগত, আমাদেরও। ননীদার বৌটাকেও সাথে আনব ঠিক করেছি। তারই বা কে আছে বল। ওদের দু-দুটো ছেলেই বৌ-বাচ্চা নিয়ে কাজের সূত্রে বাইরে থাকে। একজন বোধহয় বিহার, আরেকজন দিল্লি। আসা তো দুর অস্ত, বাপ-মায়ের খোঁজ পর্যন্ত রাখে না।

তবে এবার কিন্তু পিসি রাজি হয়েছে রে। এক বাক্যেই। আসলে এবার সত্যি-সত্যিই মন ভেঙে গেছে তার। ননীদাটাও তো চলে গেল। মেপ্পি কথা দিয়েছে এসে থাকবে কিছুদিন। নিপা আর আমি দুজনেই যাব পিসিদের আনতে। তবে কদিন পর। এরমধ্যে পিসিও একটু প্রিপেয়ার হয়ে নেবে। কতদিন যে সে বেড়োইনি বাড়ি ছেড়ে। অবশ্য ওখানকার পোস্ট অফিসে পিসি যেত মাঝেমধ্যে। কাজেই যেত। আমাদের ফোনও করত ওখান থেকে।

তবে আসল কথাটা হল আমরা আর মেপ্পিকে ওখানে রাখতে চাই না। একেবারের জন্যই নিয়ে আসতে চাই। তবে মেপ্পিকে এতোটা বলিনি জানিস, এসব বললে হয়ত আসতে চাইবে না। আপাতত তার শ্বশুরের ভিটে লক এন্ড কি থাকবে আর তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। অবশ্য ও বাড়ির যা সুনাম তাতে ও বাড়ি হাট করে খুলে রাখলেও কেউ ঢুকবে বলে মনে হয় না।

আর ওই যে বললাম না মেপ্পি এবার তার ফ্লাডগেট খুলে দিয়েছে, সে সত্যিই এবার তার অনেক কথাই বলেছে আমাকে। আর একটা তথ্যও সে দিয়েছে আমায় যেটা আমার সেদিনের সেই দেখা সম্বন্ধীয়। ওই যে দিকে সেদিন রাতে আমি এসব দেখেছিলাম, সেখানে নাকি একটা ডিপ টিউবওয়েল বসবে বলে ভারা বাঁধা হচ্ছিল। একদম টাটকা ঘটনা। জায়গাটা মেপ্পিদের সীমানার বাইরে তবু মেপ্পি সাবধান করেছিল, কাজ না করতে বারবার অনুরোধ করেছিল। আর শুধু মেপ্পি কেন, এসব ঘটনা বহুল প্রচলিত, তাই সতর্ক করেছিল এলাকার অনেকেই। কিন্তু তারা কথা কানে তোলেনি। অবশ্য সেই গাছটা তারা কাটেনি। কেটেছে তার পাশের দুটো গাছ আর কিছু ঝোপ। ব্যস! তাতেই যা হবার হয়ে গেছে। কাজের প্রথম দিনই ভারা বাঁধতে গিয়ে পরে মরেছে এক মিস্ত্রী আর আর একজন গাছ কাটতে গিয়ে নিজের কাঁধে নিজেই কুড়ুল মেরে হাসপাতালে। এখন অবশ্য কাজ বন্ধ হয়ে আছে। আধখেঁচড়া হয়ে ভয়ে দেখাচ্ছে সেই বাঁশের ভারা। আমিও গিয়ে দেখলাম তা। আর যে দুটো গাছ কাটা হয়েছিল তার একটার ভেতর থেকে নাকি কাটার পর একরকম হালকা গোলাপি রঙের থকথকে তরল পদার্থ বেরিয়েছিল।”

মন দিয়ে শুনছিলাম ব্রজদার কথা। হয়ত সে জায়গায় পৌঁছেও গেছিলাম মানসচক্ষে। কিন্তু বেরসিক বাবিটা দিল তাল কেটে। লাগাল তার বাম কনুই দিয়ে আমাকে এক মোক্ষম গুঁতো। বিরক্ত হলাম। রেগে-মেগে ওকে কিছু বলতে যাব, ও দেখি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে আমাকে চুপ করতে বলছে আর ইশারা করে নিপাবৌদির দিকে দেখাচ্ছে। অগত্যা এক রাশ বিরক্তি নিয়েই সে দিকে তাকালাম আমি। কিন্তু তারপর যা দেখলাম!

আমি আর বাবি সোফায় বসেছিলাম। মেজেতে মাদুর পেতে একটা বালিশ দেওয়ালে ঠেকিয়ে আধশোওয়া হয়েছিল ব্রজদা। আর বৌদি ছিল ঠিক ব্রজদার উল্টোদিকে একটা মোড়ায় বসে। ব্রজদার ঠিক মাথার ওপর একটা বড় জানলা। খোলা ছিল সেটা। বৌদি চোখ বড় বড় করে দেখছিল সে দিকেই। দেখে মনে হচ্ছিল সে ভয় পেয়েছে। কি একটা বিড়বিড় করে বলছিলও যেন। তার মতো আমরাই তাকালাম জানলার দিকে। কিন্তু একরাশ অন্ধকার ছাড়া কিছুই নজরে এল না। নিপাবৌদি তারপর “এসব বন্ধ কর, বন্ধ কর” বলতে বলতে ধরমড়িয়ে উঠে গেল জানলার কাছে। জানলার শিক ধরে ভালো করে বাইরেটা দেখতে লাগল। সে আমাদের দিকে পেছন ফিরে ছিল, কিন্তু আমার মনে হল সে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

ব্রজদাও ঘাবড়ে গিয়ে উঠে বসেছে। বৌদির দিকে চেয়ে বলতে লাগল, “কি হল নিপা? কি দেখছ ওখানে? নিপা?”

উত্তর এল না বৌদির কাছ থেকে। তবে সে ধীরে ধীরে মুখ ফেরাল। তার সেই ভয়ভয় ভাবটা আর নেই। একটু যেন স্বস্তি ফিরেছে সেই জায়গায়। তবে বৌদি তক্ষুনি কিছু বলল না। সোজা গিয়ে বসল মোড়ায়। তারপর আমাদের দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হাসল তার চেনা হাসিটা আর বলল, “কি ভাই আরেক রাউন্ড চা হবে নাকি? কি গো তুমি খাবে তো?”

ব্রজদা আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে তাদের টিভির পেছনের দেয়ালে ঝোলানো জাবদা ঘড়িটার দিকে চেয়ে বলল, “সেই ভালো নিপা। হয়ে যাক আরেক রাউন্ড। খেলা শুরু হলো বলে।”

বৌদি চলে গেল চা বানাতে। আমি আর বাবি মুখে প্রশ্নচিহ্ন সাজিয়ে চেয়ে রইলাম ব্রজদার দিকে। বড্ড ঘাবড়ে গেছি আমরাও। ব্রজদা আমাদেরকে ম্লান হেসে বলল, “তোদেরকে বলিনি কোনোদিন, নিপাও বারণ করেছিল, কিন্তু আজ যখন তোদের সামনেই এ জিনিস ঘটল তখন জেনেই রাখ, তোদের বৌদির একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। ও এমন অনেক কিছু টের পায় যা আমাদের হয়ত গোচরেই আসবে না। ও প্রেতযোনির উপস্থিতি বুঝতে পারে। তবে জানিস শুধু প্রেতযোনি নয়, আরো হয়ত কিছু শক্তি আছে ওর। ঠিকঠিক বলতে পারব

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post রহস্যময় ভূতুড়ে বাগান | ভয়ের দেশ | সন্দীপ মণ্ডল| Bengali Horror Story
Next post রাতের লাল শাড়ী | ভয়ের দেশ | রাজেশ জানা| Bengali Horror Story