শব | ভয়ের দেশ | আহমেদ সাদাত সাকীব| Bengali Horror Story
0 (0)

Getting your Trinity Audio player ready...

আম্মা এলেন সবার পরে। শুধু আম্মাই এলেন। এরা কাপড় দিয়ে এমন শক্ত করে পেঁচিয়ে রেখেছে যে আমি চোখটা পর্যন্ত খুলতে পারছি না, হাত পা নাড়ানো তো দূরের কথা। আমার ধারণা আমি আর হাত পা নাড়াতেও পারবো না। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছু দেখতে পাওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। আম্মা এসেছেন বুঝতে পারলাম আম্মার পায়ের শব্দে। আমি সবসময় আম্মার পায়ের শব্দ আলাদা করে বুঝতে পারি। মাঝরাতে আম্মা কখনো পানি নিতে টিউবওয়েল চাপলেও বুঝতে পারি আমি।

দড়াম করে আমার বুকের উপর কিছু একটা এসে পড়লো। একটা করে সোনার চুড়ি পড়া দুটি হাত, মাঝে একটা মাথা-বিশেষ গন্ধ আছে এই নারিকেলের তেলটার… আম্মা! এই সাত সকালে আম্মা কিভাবে এলেন বুঝতে পারছি না। আম্মা কতদিন পর বুকে জড়িয়ে ধরলেন! সেই ছেলেবেলার মত একেবারে কাছে টেনে নিয়ে শক্ত করে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কীসব বিড়বিড় করছেন! আম্মা নিশ্চয় গল্প বলছেন। এবার আমি টুপ করে ঘুমিয়ে পড়লেই একেবারে ষোলোআনা ছেলেবেলা। প্রতিদিন গল্প শুনতে শুনতে চুলে বিলি কেটে নিয়ে ঘুমানো আমার ছেলেবেলার অভ্যাস। মাঝে মাঝে খালারাও গল্প শোনাতেন। প্রশ্ন করলাম বড় খালা আসেন নাই? কী আশ্চর্য মুখ তো খোলা, তবুও কোন শব্দ বেরুলো না কেন?

আম্মা এখনও ওভাবেই নিয়ে আছেন। ইশ, আমার শরীর এখনো যে বেশ ভেজা। আম্মা ভিজে যাবেন একদম। অবশ্য ভিজে যাবেন এমনিতেও। কী বৃষ্টিটাই না হচ্ছে! এটা ঝড়ো বৃষ্টি না। বাতাস আছে খানিকটা। কিন্তু ঝড়ো বৃষ্টি নয়। হালকা বাতাসে দুলে দুলে বৃষ্টি পড়ছে অবিশ্রান্ত। এই বৃষ্টিরও একটা আলাদা শব্দ আছে। শো শো কিংবা ঝুম ঝুম আওয়াজ নাই। আছে শুধু টুপটাপ, টিপটাপ সংগীত। আম্মা উঠে দাঁড়ালেন-কে কে যেন টেনে তুলে নিয়ে গেলেন। কারা ওনারা? আম্মাকে কই নিয়ে গেলেন? আমি দেখতেও পারলাম না।

এরা এভাবে আর কতক্ষণ রাখবে আমাকে, আল্লাহ ভালো জানেন। এভাবে থাকা যায় নাকি! এরা কি আমার কথা ভুলে গেল নাকি! নাহ, একেবারে ভুলে যায়নি। ঐতো দুটো পা হেঁটে হেঁটে এগিয়ে আসছে, পেছনে আরও আসছে জোড়ায় জোড়ায়। এরা কারা? এদের কথার শব্দ আমি চিনি না। আমাকে কেউ কিছু বলছে না কেন? ওরা ওরাই কত কথা বলছে, এত কথাও বলতে পারে এরা! কে ওটা? কাছে এসে মাথা থেকে মোড়ানো কাপড় একটু ঢিলা করে দিল, মুখটা একটু বের করে দিল। উঃ অবশেষে। কি শান্তি! সারা চোখে মুখে বৃষ্টির পানি পড়ছে। খানিক পরে আবার ওরা মুখটা মুড়িয়ে দিল। একটু মুছেও দিলনা মুখটা!

আম্মা আবার এলেন। আম্মা কাঁদছেন? সেকি! এই কেও আম্মাকে একটু দেখো তো! কিছু বুঝছিনা। একী! এভাবে ঝাঁকি দিয়ে কই চড়ালো? দোলনায় চড়ালো নাকি আমাকে! দুলে দুলে কই নিয়ে যায় এরা? আগে বললে বা এসব কাপড় দিয়ে এভাবে মুড়িয়ে না রাখলে আমি উঠে বসে যেতে পারতাম, দেখতেও পারতাম কোথায় যাচ্ছে। আমার দেখা-চলায় এতো বাঁধা আছে নাকি! এরাও না-যাচ্ছেতাই একেবারে। হুহ। ঐ দেখ, আবার এক দোল দিয়ে নামিয়ে দিল। এভাবে মুড়িয়ে রেখেই কাত করে দিল কেন? আবার তো চিৎ হয়ে যাবো ছেড়ে দিলেই। এসব কি পড়ছে? শক্ত শক্ত, কী এসব! উপর থেকে ঝরে পড়ে চারপাশে কী জমা হচ্ছে এসব? দেখতে দেখতে পিঠ বুক ঢেকে এগিয়ে এলো চোখের কাছে, মাথাটাই যা কিছু বাকি। ধীরে ধীরে মাথাতেও পড়তে লাগলো।

“ও আল্লাহ!” ঘেমে ভিজে বিকট এক চিৎকার দিয়ে ধরমর করে ঘুম থেকে উঠে বসলো ফজর। চারদিকে শূন্য পৃথিবী জুঁড়ে ঝিঁঝি পোকার আওয়াজ ছাপিয়ে বৃষ্টির মৃদু মৃদঙ্গ বেজে যাচ্ছে শূন্য পৃথিবীতে। আম্মা গেছেন অনেকদিন।

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post রাতের লাল শাড়ী | ভয়ের দেশ | রাজেশ জানা| Bengali Horror Story
Next post ফেসবুক লাইভ | ভয়ের দেশ | অঙ্কিত ভট্টাচার্য| Bengali Horror Story