শেষ পরিণতি | ভয়ের দেশ | তানভীর স্বাধীন| Bengali Horror Story
0 (0)

Getting your Trinity Audio player ready...

পলাশ, সজীব ও রানা তিন বন্ধু! এবার এইচএসএসসি দিয়েছে, নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে! তিন-বন্ধুর বাড়িই নোয়াখালীতে সদরে। তিন-বন্ধুর বাসা থেকে তিন-বন্ধুর বাসা খানিকটা দূরে।

তিন বন্ধুর ভিতরে ছোট থেকেই মধুর সম্পর্ক, রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বড় কিছু। কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারেনা! এ যেন তিন মন এক জীবন!

পলাশ ও সজীব রানাদের বাড়ি রওনা হলো, রানাদের বাড়িতে যাওয়ার পর দেখলো রানা ঘুমিয়ে আছে, বেলা তখন দুপুর ১২ টা হবে;

পলাশ বললো “এই রানা তুই এখনো ঘুমাস?” উঠ ভাই দেখ আমরা আসছি!

রানার মা বললো “দেখো বাবারা এত দুপুর পর্যন্ত কোন ছেলে বিছানায় থাকতে পারে বলো”?

সজীব বললো আন্টি ও এখনই উঠবে!

সজীবে রানার বিছানায় আর শরীরে এক গ্লাস পানি ঢেলে দিলো!

রানা বিরক্ত-বোধ হয়ে উঠে বললো “কি শুরু করলি রে তোরা?” একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দিবিনা তোরা?

সজীব বললো বাজে কয়টা দেখছোস তুই?

এই দেখ সাড়ে বারোটা বাজে আর তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস!

উঠ ভাই আমরা একটা পরিকল্পনা করবো, পরীক্ষা দিলাম তো অনেকদিন হলো, একটু চিলের দরকার আছে রে দোস্ত!

রানা বললো হ্যাঁ দোস্ত ঠিক বলছোস বাসায় থাকতে থাকতে অস্তিত্ব লাগছে আমার একদম কিছু ভাল লাগেনা!

পলাশ বললো চল আমরা কোথাও বেড়াতে যাই!

সজীব বললো হু তোর আইডিয়াটা জোশ!

রানা কি বলিস বেড়াতে গেলে কেমন হয়?

রানা বললো আইডিয়া তো ফাটাফাটি তবে কোথাও যাবো সেটা নিয়ে ভাবতে হবে!

চল আমরা ভৌতিক কোন স্থানে বেড়াতে যাই, কি বলিস কেমন হয়?

পলাশের এই কথায় রানা তো রেগেমেগে আগুন, কারণ রানা একটু ভীতু টাইপের ছেলে!

সজীব বললো দোস্ত পলাশের আইডিয়াটা কিন্তু ভালো, কিন্তু তুই যে পরিমাণ ভীতু! আমাদের মনে হয়না তুই যাইতে পারবি! ভীতুর ডিম একটা!

রানা বললো “কি বললি আমারে? আমি ভীতুর ডিম?

আচ্ছা বল কোথাও যাবি? আমি যাবো তোদের সাথে! ভাবছিস কি তোরাই সাহসী আমি সাহসী নাহ্, চল এবার তোদের দেখিয়ে দিবো!

ফেনী মহীপাল যাবে বলে প্রস্তাব দিলো সজীব!

কেউ আর দ্বিমত পোষণ করলো না সবাই রাজি হয়ে গেলো!

রানা বললো দোস্ত ফেনী যাবো ফেনীর মহীপালে শুনেছি একটি শ্মশান আছে খুব ভৌতিক টাইপের! ভয় করছে রে!

সজীব বললে তুই দেখি সত্যিই একটা ভিতু রে!

“মা যেতে দিবে না রে ফেনী এতদূর,” রানা বললো!

পলাশ একটু রাগ রাগ স্বরে বললে এই ভীতুকে নিয়ে যাওয়ার কোন দরকার নেই!

রানা বললো দ্বারা মা কে বলি, যেতেও দিতে পারে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার কথা বলে, নিঝুম দ্বীপ না যেয়ে মহীপাল যাবো!

সজীব বললো আচ্ছা তাই কর!

রানা একটু মিষ্টি সুরে মাকে ডাক দিলো, মা এসে উত্তর দিলো কি রে কি হয়েছে?

রানা বললো এই মা শুনো আমি সজীব পলাশ একটু বেড়াতে যাবো দুদিনের জন্য এই তো নিঝুম দ্বীপ প্লিজ প্লিজ মা তুমি না করোনা –

মা বললো “তোরা অনেক ছোট রে তোদের একা ছাড়া ঠিক হবেনা তোর বাবাকে নিয়ে যাহ্ সাথে বা বড় কাউকে নিয়ে যাহ্ যদি ঐখানে যাও!

সজীব বললো আন্টি কিছু হবেনা আমরা তো আছি, আর হ্যাঁ নিঝুম দ্বীপ তো এই কাছেই আমরা যাবো গিয়ে একদিন থাকবো পরের দিনের মাথায় চলে আসবো!

আর ফোনে তো সবসময় যোগাযোগ করবোই! চিন্তা করবেননা আন্টি প্লিজ!

রানার মা বললো আচ্ছা তোর বাবা দেখি কি বলে, রানার মা রানার বাবাকে অনেক বুঝিয়ে বললো!

রানার বাবা রাজি হলেন এবং যাওয়ার অনুমতি দিলেন আর বললেন তোমরা যাও তাহলে সাবধানে যাবে!

চারদিক খেয়াল রাখবে রাস্তায় অপরিচিত লোকদের দেওয়া কিছু খাবে না! সজীব পলাশ বাবা তোমরা ওর খেয়াল রেখো ছেলে আমার খুব ভীতু!

পরদিন সকাল সাড়ে এগারোটায় ফেনীর উদ্দেশ্য যাত্রা করলো তিন বন্ধু, ৩ ঘণ্টা জার্নি শেষে বেলা ঠিক দেড়টায় ফেনী পৌঁছালো! স্থানীয় একটি হোটেল ভাড়া নিলো বাসায় ফোন করে রানা বললো মা আমরা পৌঁছে গেছি এখানের একটি হোটেলে উঠছি, মা আর তেমন কিছু বললো না সাবধানে থাকিস ছাড়া!

তিন বন্ধুই ফ্রেশ হলো গোসল করলো, সজীব বললো চল লাঞ্চ করে!

পলাশ বললো হ রে ক্ষুধায় আমার পেট চো-চো করছে সেই সকালে চা আর রুটি খাইছিলাম তাতে কি পেট ভরে?

সজীব মজা করে বললো তুই একটা খাদক রে!

রানা তোর কথা থামা, চল খেয়ে আসি!

একটি রেস্টুরেন্টে ওরা ঢুকলো! একজন সেপ এসে বললো ব্রো আপনার কি খাবেন বলেন রাইচ মাচ নাকি?

মাটন বিড়ানি?

রানা বললো বিরানি প্লেট কত করে ভাই?

জ্বি ব্রো মাত্র আশি টাকা!

সজীব বললো এই রুই মাছের পিচ কত করে?

সেপ বললো ১৫০ টাকা আর রাইচ ৩০ টাকা প্লেট!

রানা বললো আচ্ছা বিরানি নিয়ে আসেন তিন প্লেট!

কি বলিস তোরা বিরানিই খাই কেমন!

পলাশ বললো আচ্ছা দোস্ত!

লাঞ্চ শেষে করে তিন বন্ধু মহীপালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো বিকেল তখন প্রায় পাঁচটা!

মহিপালে পৌঁছালে তখন বাজে সন্ধ্যা সাড়ে!

গাড়ি থেকে তিনজন নামলো! সাথে পার্সোনাল ব্যাগ ছিল আর মোবাইল টর্চ লাইট ছিল!

রানা বললো আমার খুব ভয় করছে রে চারদিক কেমন যেন নির্জন নির্জন, একটা লোকও দেখা যাচ্ছেনা!

হঠাৎ পলাশ দেখলো কে যেন ৬-৭ ফুট দুরে চাঁদর মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!

সজীব বললো এই যে চাচা এত গরমের ভিতরে আপনি গায়ে চাদর দিয়ে আছেন কেন?

লোকটি খুব খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, কারা তোমরা? কি চাও এখানে? এতরাতে কেন এসেছো? চলে যাও ভালো হবেনা তোমাদের চলে যাও!

রানা ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো আর বললো দোস্ত চল আমরা ফিরে যাই ফেনীতে চল!

পলাশ বললো দাঁড়া লোকটা কে? আর সে কি বলে শুনি!

পলাশ বললো “কে আপনি?” উত্তর দিন!

সবে মাত্র তো সন্ধ্যা হলো আপনি রাত কোথায় দেখলেন?

লোকটি বললো কথা বাড়িয়েওনা তোমরা চলে যায় এখান থেকে!

পলাশ আর সজীব অত্যন্ত সাহসী ছিলো ও পিছু হাঁটার ছেলেনা ওরা একটু গম্ভীর গলায় বললো আমরা যাবোনা দেখতে চাই আমাদের কি হয়!

লোকটি চুপ হয়ে গেলো হঠাৎ ওরা দেখলো লোকটি ঐখানে নাই! একবারে হাওয়া হয়ে গেছে!

সজীব বললো বাদ দে তো উনি কই যেন চলে গেছেন! রানা বললো চল ফিরে যাই প্লিজ! পলাশ বললো তোর যাওয়ার ইচ্ছে হলে চলে যাহ! বন্ধুদের রেখে যেতে পারলে তুই যা! না গেলে সামনে পা দে!

হঠাৎ ওদের নাকে মৃত্যু দেহ পোড়ানোর গন্ধ ভেসে আসলো!

ওদের আর বুঝতে বাকি রইলো নাহ্! রাত তখন প্রায় নয়টা। সজীব বললো সামনেই মহীপাল শ্মশানে মনে হয় কাউকে পোড়াচ্ছ এই জন্য গন্ধ আসতেছে!

রানা ভয়ে আতঙ্ক একদিকে চোর ডাকাত অন্যদিকে ভৌতিক আর এমনিতেই রানা একটু ভীতু টাইপের!

হঠাৎ ওরা টের পেলো মৃত্যু দেহ পোড়ানোর গন্ধ নাকে আসতেছেনা!

রানা বললো “তোরা খেয়াল করছিস নিমিষেই গন্ধ দূর হয়ে গেছে? আমার মনে হয় ভৌতিক কোন ব্যাপার!

প্লিজ চল ফিরে যাই!

সজীব বললো আবারো সেই এক কথা বলিস, আমাদের ফেলে যেতে পারবি?

একটু রেগে গিয়েই বললো তুই যদি একা যেতে পারিস তাহলে তুই যাহ আমরা তোকে আটকাবেনা! রানা বললো” দেখ তোরা একদম ছেলে মানুষই করিসনা পরে বিপদ হবে”!

কথা বলতে বলতে হঠাৎ সজীবের চোখ পড়লো ডান দিকে এবং যা দেখতে পেলো তার জন্য তিনজনেরই শরীর শীতল হয়ে আসতে লাগলো!

সেই চাদর মুড়ি দেওয়া বৃদ্ধ! ওরা দেখতে পেলো! বৃদ্ধের চোখ দুটো আগুনের ন্যায়! বিকট জোরে অট্ট হাসি দিচ্ছে! এবার সজীব আর পলাশ দুজনেই প্রচণ্ডভাবে ভয় পেলো! তিন বন্ধু পিছনে ফিরে দৌড়াতে শুরু করলো! একটা পর্যায়ে সজীব একটি পুরোনো গর্তে পরে গেলো! সজীবের ছোটবেলায় একবার পা ভেঙে গেছিলো সেই থেকে অতি জোরে দৌড়াতে পারেনা! সজীব চিৎকার দিয়ে বললো তোরা আমায় ফেলে যাস না! চিৎকার শুনে পিছনে ছুটে আসলো রানা আর পলাশ!

রানা বললো উঠ দোস্ত এই জায়গা তাড়াতাড়ি ত্যাগ করি!

কি হয়েছে? বসে পড়েছিস কেন? পায়ে ব্যথা করছে তোর?

সজীব বললো আমার পা গর্তে আটকে গেছে কোনভাবেই পা তুলতে পারছিনা! তোরা একটু উপরে

উঠতে সাহায্য কর আমার মনে হচ্ছে আমার পা যেন কে টেনে ধরে রাখছে গর্তের নিচ থেকে!

ওরা অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু কোনভাবে পা উপরে তুলতে পারলো না! ওরা কিছু সময়ের জন্য ভুলেই গেছে যে ভৌতিক কিছু ঘটেছে ওদের সাথে! এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা খুব ভীতু থাকে কিন্তু কঠিন পরিস্থিতি হোক বা প্রিয় মানুষদের জন্য তখন খুব সাহসী হয়ে ওঠে! রানার বেলাতেও ঠিক তেমনটাই হলো! বললো তোরা দাঁড়া আশেপাশে সাহায্য করার মতো কাউকে পাই কিনা! কোদাল খুঁজতে হবে বা কাউকে লাগবে সজীবকে উঠাতে! আমাদের চেষ্টা তো ব্যর্থ হলো! ঐ যে একটা বাড়ি দেখতেছি৷ ঐ বাড়িতেই যাবো তোরা এখানে থাক! পলাশ বললো তুই তো ভীতু তুই পারবি না আমি যাই নাহলে তোর সাথে আমি যাই। রানা বললো কাউকে লাগবেনা আমি একাই যাই তুই সজীবের কাছে থাক ও কে একার রেখে যাওয়া ঠিক হবেনা! রাত তখন প্রায় বারেটার কাছাকাছি, পলাশ বললো তোর লাইটে চার্জ কম তুই আমার টর্চ লাইট নিয়ে যা! ভালো হবে।

রানা একা একা হাঁটতে শুরু করলো অবশেষে বাড়িটির দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো! বললো এই বাড়িতে কেউ আছেন? আমাদের একটু সাহায্য লাগবে! আমার বন্ধু বিপদে পড়েছে! একজন পুরুষ লোক মোটামুটি পঞ্চাশ বছরের হবে সে দরজা খুলে বেড়িয়ে আসলো! বললো নমস্কার কে তুমি?

এত রাতে এখানে কিহ্! কোথা থেকে এসেছো?

দেখে তো মনে হচ্ছে খুব অল্প বয়স! এতরাতে এই এলাকায় কি?

রানা বললো “চাচা আমার এক বন্ধু বিপদে পড়েছে! ও গর্ত পরে গেছে! কোনভাবেই আমরা উঠাতে পারছিনা আমরা তিন বন্ধু ঘুরতে এসেছিলাম!

লোকটি বললো এই এলাকায় এত রাতে কেউ ঘুরতে আসে? বাজে কয়টা দেখছো রাত বারোটা।

রানা বললো আমরা এসেছি সেই সন্ধ্যায় কিন্তু পথ হারিয়ে ফেলেছি! একটা কোদাল লাগতে পারে আপনার কাছে থাকলে নিয়ে চলুন প্লিজ

রানার মিথ্যে বলার অভ্যাস আছে সত্যিটা বললে যদি সাহায্য না করে তাই মিথ্যে বললো!

হঠাৎ রানার মোবাইলে মায়ের ফোন আসলো মা বললো বাবা তুই কোথাও কেমন আছিস?

দুপুরের পর তো একটা ফোনও দিলি না!

রানা বললো মা ফোনে চার্জ ছিলোনা! মা কি হয়েছে এতরাতে আমাকে ফোন দিছো?

মা বললো তোকে নিয়ে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছি তুই বিপদে পড়েছিস!

রানা বললে মা তুমি চিন্তা করোনা আমি ভালো আছি একদম ঠিক আছি, ঘুমিয়ে পড়ো আমি কাল বিকালেই চলে আসবো!

মায়ের কাছে রানা সবকিছু গোপন রাখলো মা টেনশন করবে এইজন্য!

লোকটি বললো তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলছিলা তাইনা মা কে মিথ্যে বললে কেন? তুমি তো বিপদে পড়ছো!

রানা বললো মা খুব টেনশন করবে তাই বলিনি!

লোকটি বলল তুমি কাজটি ঠিক করোনি! ভয়ংকর অন্যায় এটা!

আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি কোদাল নিয়ে আসতেছি!

বাড়িটি ছিলো হিন্দুদের!

লোকটি কোদাল নিয়ে বের হলো; বললো চলো।

রানা লোকটির সাথে হাঁটতেছে হাঁটতেছে, এতক্ষণে সে ভুলই গেছে ভয় পাওয়ার কথা! হঠাৎ রাস্তার ডান দিকে চোখ পড়ে যায় রানার! দেখলো সেই বৃদ্ধ লোকটি গাছে পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! আর হাত ইশারা করে তার কাছে ডাকছে! আর ভয়ংকর ভাবে হাসছে! রানা চোখ ফিরিয়ে নিলো সামনের দিকে চেয়ে হাঁটতে লাগলো। রানা বললো “চাচা আপনি কোন হাসির শব্দ শুনতে পেয়েছেন?”

সে বললো কই নাহ্ তো! তবে এই যায়গাটা ভালোনা! আমি ত্রিশ বছর পর বাড়িতে আসছি আমেরিকা থেকে এই যে রাস্তা দেখছো এসবই শ্মশান ছিলো একটা সময়! যুগে যুগে ক্রমে ক্রমে এই সব যায়গায় ঘরবসতি স্থাপন হয়েছে! আমাদের যে ঘরখানা সেটাও একসময় সময় শ্মশান ছিল বাবাদের কাছ থেকে শুনেছি!

অবশেষে সেই স্থানে পৌঁছালো; দেখলো ঐখানে কেউ নেই! লোকটি রানাকে বললো তুই কে আমাকে এতরাতে এখানে নিয়ে আসলি!

রানা ভয়ে কান্না করতে শুরু করলো, ততক্ষণে লাইটের চার্জ প্রায় শেষ পর্যায়ে! রানা ভাবতে লাগলো সজীব পলাশ কি ওদের বিপদে রেখে চলে গেলো! রানা আবার এটাও ভাবলো না এটা হতে পারেনা! আমার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে এমন কেন করবে?

লোকটি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো! সে ভাবলো রানা হয়তো কোন প্রেতাত্মা! এখানে প্রায় সময়ই এরা ঘুরে বেড়ায়! রানাকে বললো তুই আমাকে মারিসনা তোর কাছে মিনতি আমার!

রানা বললো চাচা আমি আপনাকে কেন মারবো?

আমি তো আমার বন্ধুকে সাহায্য করার জন্য আপনাকে নিয়ে এসেছি! হঠাৎ রানা জ্ঞান হারালো! চারদিক থেকে বাতাস বইতে লাগলো লোকটি সেই ভয়ে ঐখান থেকে এক দৌড়ে বাড়িতে চলে গেল! বাড়ির উঠানে জ্ঞান হারালো! সারারাতে রানার কোন জ্ঞান ফিরলোনা

পরদিন সকালবেলা এলাকার লোকজন এসে অজ্ঞান অবস্থায় রানাকে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়! রানার বাড়িতে ফোন দেওয়া হয় ফেনী সদর হাসপাতালে তাদের আসতে বলে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ! অবশেষে রানার জ্ঞান ফিরে, ততক্ষণে রানার মা বাবাও চলে আসছে এবং রানার বাবা-মা যা বলে তা শোনার জন্য রানা মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা! তারা বললো সজীব আর পলাশ গত তিন আগে ফেনীতে বেড়াতে আসছে আর বাড়িতে ফেরত যায়নি তিন ধরে মোবাইল অফ, আমরা এই ঘটনা জানতে পেরেছে আজ ভোর বেলা! সজীব আর পলাশের মা বাবা আমাদের বাড়িতে আসছিলো! আমি ভয়ে শেষ! তাহলে ওরা কারা ছিল যে তোকে নিয়ে গেলো! আর তুইনা নিঝুম দ্বীপ যাস তাহলে ফেনী কেন?

রানা বললো “আমরা প্লান করেই এখানে এসেছি “কিন্তু বা মা আমি তোমাদের কাছে মিথ্যে বলেছি কোন উপায় ছিলোনা এটা ছাড়া। তোমরা তো আর এতদূরে আসতে দিতেনা!

রানা বললো” মা ওরা সজীব পলাশ ছিলোনা তাহলে কারা ছিলো?”

কাঁদতে কাঁদতে বললো ওরা কারা ছিলো মা কারা?

সজীব আর পলাশ কোথাও?

রানার মা বললো তিন ধরে ওদের কে খুঁজতেছে পুলিশ! ফেনী জেলা তন্নতন্ন করে খোঁজ করা হয়েছে কিন্তু ওদের কোথাও পাওয়া যায়নি!

পুলিশ হাসপাতালে রানার কাছে আসলো এবং সম্পূর্ণ ঘটনা শুনলো। কিন্তু ভৌতিক ঘটনা কিছুই বিশ্বাস করলোনা উল্টো রানার পরিবারে দিকে ইঙ্গিত করলো! কিন্তু রানার পরিবার পুলিশের কথাগুলোকে অপবাদ বলে উল্লেখ করলো! পুলিশ ভাবলো ওরা তিনজনই প্রথমে একসাথে যায় পলাশ আর সজীবকে রানা হত্যা করে এবং বলে রানা আর তার মা-বাবা মিথ্যে বলতেছে! কিন্তু পুলিশের সব সন্দেহ ভুল প্রমাণ হলো! কারণ সজীব আর পলাশ যেদিন থেকে নিখোঁজ ঐদিন থেকে পরের দুইদিন ওদের এলাকার কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিল তার ছবি প্রমাণ সহ পুলিশে দেখালও রানা! সন্দেহর তীর রানা ও তার পরিবারের দুদিক দিয়ে সরে আসলো পরবর্তীতে পুলিশ মহীপালে গিয়ে ঐ লোকটির সাথে আলাপ করলো এবং সব শুনলো। পুলিশ কোনভাবেই কিছু বিশ্বাস করে চায়না। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বললো কিন্তু ভৌতিক কিছু বিশ্বাস করলেনা!

অবশেষে পুলিশ, সজীব আর পলাশের লাশ খুঁজে পেল মহীপাল শ্মশানের খুব কাছে বাঁশঝাড়ের কাছে, পুলিশের ধারনা মতে দুজনেই মারা গেছে চার দিন আগে! লাশ ময়নাতদন্ত করা হলো ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও সেই কথা বললো! তবে সজীর আর পলাশ নাকি হার্ট এটাকে মারা গেছে!

পুলিশের মনে রহস্য জাগলো! যারা তিন দিন আগে মারা গেলো তার কিভাবে ঠিক তিনদিন পরে রানাকে এখানে নিয়ে আসলো?

ভৌতিক কোন ব্যাপার এটা আর বুঝতে দেরি হলোনা!

রানা এই মৃত্যুর রহস্য জানতে ব্যকুল হয়ে গেলো! যেভাবেই হোক সে এই মৃত্যুর ঘটনা খুঁজে বের করবেই! রানা মা বললো “বাবা যা যাওয়ার গেছে তোকে ফিরে পেয়েছি এটাই অনেক কিছু!” তোকে কোন রহস্য খুঁজতে হবেনা!

রানা বললো আমি ঐখানে আবার যাবো! আমাকে তোমরা কেউ আটকাতে পারবেনা!

যেই বলা সেই কাজ বাবা মা বাঁধা দেওয়া সত্যেও রানা মহীপালের উদ্দেশ্যে রওনা হলো! বিকেল তখন চারটা বাজে!

দীর্ঘ দু’ঘণ্টা পথ পাড়িয়ে সন্ধ্যা ছয়টায় মহীপাল শ্মশানে পৌঁছালো! ঐদিকে মা-বাবা ফোন দিয়েই যাচ্ছে কোন রেসপন্স করলোনা অবশেষে মোবাইলের বন্ধ করে রাখলো! রানা হঠাৎ বিকট একটি আওয়াজ শুনতে পেল! শব্দটা ঠিক যে চারপাশ দিয়ে আসছে! চারপাশ দিয়ে একই আওয়াজ আসতেছে রানা তুই চলে যা বন্ধু তুই চলে যা ওরা তোকে বাঁচতে দিবে না!

রানা স্পষ্ট বুঝতে পারলো এই আওয়াজ পলাশ আর সজীবের! রানা খুব ভয় পেয়ে গেলো কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলো না! হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখলো সেই বৃদ্ধ ভয়ংকর ভাবে তাকিয়ে আছে আর বলতেছে তোদের আগেই বলেছিলাম তোরা এখান থেকে চলে যা নাহলে সবাই মরবি! রানার হঠাৎ করে ভয় দূর হয়ে গেলো, বললে কে আপনি? আর কেনই বা নিরীহ মানুষদের মেরে ফেলছেন? আমরা আপনাদের কি ক্ষতি করেছিলাম, যার জন্য আমার দুই বন্ধুকে এভাবে জীবন দিতে হলো?

বৃদ্ধ লোকটি বললো আমরা কি ক্ষতি করেছিলাম যার জন্য ঐদিন আমি আর আমার ছেলেকে কেউ বাঁচায়নি সাহায্য করার সক্ষমতা থেকেও! কি ক্ষতি করেছিলাম আমরা! কেন আমাদের বিপদে রেখে ঐদিন এই এলাকার কিছু লোক চলে গেছিলে সাহায্য না করেই! আমি আর আমার ছেলে রাতে এখানে ঘুরে বেড়াই। মৃত্যুর পরও আমাদের আত্মা শান্তি পাচ্ছে না।

রানা ধীরে ধীরে বললো কি এমন হয়েছিলো ঐদিন!

জবাবে সে বললো বহুবছর আগের কথা আমি আমার ছেলে রাত দশটার পরে এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম! হঠাৎ আমার ছেলে একটি গর্তে পড়ে যায় কোনভাবেই উঠাতে পারছিলামনা, দশ ফুট দুরে কিছু লোক সংখ্যক লোক ছিলো! তাদের সবাইকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতে বলি কিন্তু তারা এতটা জঘন্য ছিলো আমাদের সাহায্য নাহ্ করে উল্টে আমাকে আহত করে আমাদের সাথে সব মালামাল ছিনতাই করে নিয়ে যায়! ঐদিকে আমার সন্তান ব্যথায় কষ্টে মারা গেলো! ঐ লোকগুলো আমার উপর এতোই আঘাত করেছিল যার জন্য আমি ঠিক কিছুক্ষণ পরেই মারা যাই! তারা সাহায্য করলে আমাদের সাহায্য করতে পারতো কিন্তু তা তারা করেনি! আর ঐ থেকে আমরা রাতে এখানে যাকে পাই তাকেই মেরে ফেলি আর যে সাহায্য করতে আসে তাকেও মেরে ফেলি এই এলাকার সব লোকে এই কাহিনী সম্পর্কে জানে। কেউ রাতে বের হয়না, তোমাদের প্রথমেই সাবধান করা করেছিলাম কিন্তু সেটা তোমরা শুনোনি, এই পথ দিয়ে যারা রাতে যায় তাদের কোনো না কোন সমস্যা করি ঐ ঘটনার পর থেকে!

রানা বললো “এসব করে কি লাভ?” ঐ খারাপ মানুষগুলোর জন্য কত নিরপরাধ মানুষের জীবন নিচ্ছেন এই মানুষগুলো কিন্তু আপনাদের কখনও ক্ষমা করবেনা! এরকম আর করবেননা সবাইকে ক্ষমা করে দিন ক্ষমা করে অতি উত্তম কাজ!

আমার দুই-বন্ধুকে অকালে প্রাণ দিতে হলো নিরপরাধ হয়েও!

জবাবে বললো” তোমাকে মুক্তি করে দিলাম তুমি চলে যাও এখান থেকে তোমার কোন ক্ষতি হবেনা তোমার কোন ভয় নেই! আমরা কখনও আর মানুষের উপর প্রতিশোধ নিবোনা তোমার কথা শুনে ভুল বুঝতে পেরেছি এই বলে উদাও হয়ে গেলো!

রানা বেশি কিছু আর ভাবলো না সাথে সাথে স্থান ত্যাগ করলো! এবং ফেনীতে চলে আসলো। হোটেলে উঠলো রাতে আর রাতে হোটেলেই থাকলো।

সকাল হয়ে গেল। সারারাত রানা ঠিকভাবে ঘুমাতে পারেনি এখনও ভয়ে কাতর! বন্ধুদের মৃত্যুতে গভীর শোকাহত! নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হলো, হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে আসলো রাস্তায়! বাস স্ট্যান্ড যাওয়ার জন্য হাঁটতে লাগলো। হঠাৎ মনে হলো কে যেন পিছন দিয়ে রানা বলে ডেকে উঠলে আর বললো এই রানা তুই যাসনে আমাদের ছেড়ে, রানা ভয়ে কাতর হয়ে গেলো, বাস ছাড়তে এক মিনিটের মতো বাকি, টিকিট করতে যখন গেলো। ততক্ষণে বাস ছেড়ে দিছে। পরের বাসের জন্য আরও এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। রানার মোবাইল বন্ধ ছিল কাল সন্ধ্যা থেকে, ফোন অন করলো সাথে সাথেই রানার বাবার ফোন! তিনি বললেন, “রানা তোর মা গতকাল এক্সিডেন্ট করেছে আর আজ সকালে মারা গেছে তোকে কাল রাত থেকে ফোন দিচ্ছি ফোন অফ পাচ্ছি!”

রানা কান্না করা শুরু করলো বুঝতেছেনা ও এখন ঠিক কি করবে! মাথা ঘুরিয়ে পরে গেলো সাথে সাথে অজ্ঞান আশেপাশের লোকজন ছুটে আসলো হসপিটালে নিয়ে গেলো, ঐ হাসপাতালেই রানার মায়ের লাশ ছিল লাশ নামানের জন্য সবাই সবাই তৈরি হচ্ছিল, রানার বাবা দেখলো রানাকে হাসপাতালে নিয়ে আসছে, কাছে গেলো বললো আমার ছেলের কি হয়েছে? ডাক্তার এসে রানাকে দেখলেন এবং বললেন “এই ছেলে মারা গেছে”! রানার বাবা নিস্তব্ধ হয়ে গেল মাটিতে বসে পড়লো!

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post শেষ নাকি শুরু? | ভয়ের দেশ | দেবলিনা ব্যানার্জী| Bengali Horror Story
Next post সর্বনাশের গ্রাসে | ভয়ের দেশ | শঙ্খসাথি| Bengali Horror Story