ও ছোটদাদাবাবু, বড়দাদাবাবুর নামে চিঠি এসেছে।” রামুকাকা বলে উঠল। আমি তৎক্ষণাৎ আরামকেদারা ত্যাগ করলাম। রামুকাকার হাত থেকে চিঠিখানা নিলাম। খামের উপর যা লেখা ছিল তা দেখে বুঝতে পারলাম চিঠিটা অনিলবরণ ঘোষাল নামক এক ভদ্রলোক পাঠিয়েছেন। কৃষ্ণনগর থেকে। চিঠিটা খুললাম না।
আধঘন্টা পর মামা যোগাসন সেরে নেমে এলেন। আমি বললাম – “মামা তোমার নামে চিঠি এসেছে।” মামা আমার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে খাম থেকে বের করে চিঠির আপাদমস্তক পড়লেন। তারপর বললেন, “বুঝলি টুবলু, কৃষ্ণনগরে রহস্য ঘনীভূত। আমাদের আজ দুপুরেই বেরিয়ে পড়তে হবে।”
দুপুরে একটা গাড়িভাড়া করে আমি আর মামা চললাম কৃষ্ণনগরের পথে। মনটা আজ খুব প্রসন্ন। গোটা রাস্তা আমি মামার কাছে কৃষ্ণনগরের গল্প শুনছিলাম। সন্ধ্যায় আমরা অনিল ঘোষালের বাড়িতে পৌঁছালাম।
কলিংবেল বাজাতেই এক বছর তিরিশের যুবক দরজা খুললেন। তিনি আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, “কে আপনারা?” আমি বললাম, “নমস্কার, আমি টুবলু চক্রবর্তী। আর উনি সাম্যময় রায়। ডিটেকটিভ।” লোকটির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। বললেন, “নমস্কার, আমি অনিলবরণ ঘোষাল। ভিতরে আসুন।” আমরা ঘরে প্রবেশ করলাম। ভৃত্য লছমনকে অনিলবাবু চা, চপ আর মিষ্টির ফরমাশ দিলেন।
মামা বললেন, “অনিলবাবু, আগে বলুন আমাকে তলব কেন। কোনো সমস্যা?” অনিলবাবু বললেন, “সাম্যময়বাবু, আমি, আমার কাকু, কাকুর ছেলে-বউমা আর লছমন এই হল আমাদের পরিবার। মা বাবা ছেলেবেলাতেই আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। দুই হপ্তা আগে আমার কাকুর রহস্যময় মৃত্যু হয়েছে।” মামা বললেন, “রহস্যময়?” অনিলবাবু বললেন, “হ্যাঁ সাম্যময়বাবু। আমার কাকু ছিলেন পেশায় একজন বিজ্ঞানী। নিখিলেশ ঘোষাল। কাকুর বয়স হয়েছিল প্রায় ষাটের কাছাকাছি। তাই কাকুকে দেখার জন্য দিনে একবার একজন ডাক্তার আসতেন। মাসিক বেতন তাকে মাসের ঠিক এক তারিখেই দেওয়া হতো। কাকুর হাই সুগার ছিল। এজন্য ডাক্তার সপ্তাহে একদিন করে কাকুকে ইনসুলিন ইনজেকশান পুস করতো। একদিন ইঞ্জেকশান পুস করার সঙ্গে সঙ্গেই কাকু আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেলেন। তারপর…” অনিলবাবুর চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। কিছুক্ষণ নীরব থেকে তিনি আবার বললেন, “কাকুর একটা পেনড্রাইভ ছিল। সেখানে তাঁর গবেষণার সব ফরমুলা সেভ করা থাকতো। কাকু যেদিন মারা গেলেন সেইদিন সকালে একবার চেক করেছিলাম, পেনড্রাইভটা যথাস্থানেই ছিল। পরদিন সকালে উঠে যখন আবার চেক করতে যাই, তখন দেখি পেন ড্রাইভটা উধাও। মোটের উপর এই হল ঘটনা।”
মামা বললেন, “আপনি কি প্রতিদিন একবার করে চেক করতেন?”
অনিলবাবু বললেন, “হ্যাঁ। আসলে বুঝতেই তো পারছেন, গবেষণার পেনড্রাইভ।”
মামা বললেন, “আপনি কি সেইদিন রাত্রে নিখিলেশবাবুর দরজা খুলে রেখেছিলেন?”
অনিলবাবু বললেন, “হ্যাঁ সাম্যময়বাবু। আসলে উনি তো দরজা খুলেই শুতেন। বারান্দার দরজাও খুলে শুতেন। তাই আমি সেইদিনও কাকুর ঘরের দরজা আর বারান্দার দরজা দু’টোই খুলে রেখেছিলাম।”
মামা বললেন, “পেনড্রাইভটার খবর কে কে জানতো?”
অনিলবাবু বললেন, “পেনড্রাইভ যে ছিল সেটা সবাই জানতো। তবে কোথায় থাকতো সেটা আমি ছাড়া আর কেউ জানতো না। এমনকি নিজের ছেলেও না।”
মামা বললেন, “বডিটার পোস্টমর্টেম হয়েছে?”
অনিলবাবু বললেন, “হ্যাঁ, ওনার শরীরে বিষ পাওয়া গেছে।”
এরই মধ্যে লছমন চা, চপ আর মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়ে গেল। লছমন মালাই চা খুব ভালো বানায়। বড়ো কাপের এক কাপ চা খেয়েও শান্তি পেলাম না। পেটপূজো সেরে আমরা বিশ্রাম নিলাম। আর কোনো কথা হয়নি।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
সকালে নিখিলেশবাবুর ছেলে, অভিমন্যুবাবুর সঙ্গে পরিচয় হলো। তাঁর স্ত্রীর সঙ্গেও পরিচয় হলো। অভিমন্যুবাবু এবং ওনার স্ত্রী দু’জনেই শিক্ষক। অভিমন্যুবাবুর স্ত্রীর নাম প্রীতিলতা ঘোষাল। নাস্তা সেরে বাগানের গোলটেবিলে আমরা সবাই আড্ডা মারছিলাম।
অভিমন্যুবাবু আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “কোন ক্লাস?”
আমি বললাম , “এবছর টেনে উঠলাম।”
অভিমন্যুবাবু বললেন , “খুব ভালো।”
তারপর মামার দিকে ফিরে বললেন, “আমি দুঃখিত মিঃ রায়। কাল আমি আর প্রীতি বাড়ি ছিলাম না। আমার বন্ধুর অ্যানিভারসারি ছিল। কাল ওখানেই গিয়েছিলাম। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল, তারপর আর আপনাদের সঙ্গে দেখা করা গেল না।”
মামা বললেন , “কালকে দেখা হয়নি তো কি হয়েছে, আজ তো হলো।”
তারপর বেশ একটু গম্ভীর হয়েই অভিমন্যুবাবু বললেন, “মিঃ রায়, আপনি কিন্তু বাবার কেসটা সলভ করুন। খুনিটা কে আমার জানা দরকার।”
মামা বললেন, “আপনি কাউকে সন্দেহ করেন?”
অভিমন্যুবাবু কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, “দেখুন, ইনজেকশন পুস করার পরেই বাবা মারা গেছেন। সুতরাং আপাতদৃষ্টিতে ডাক্তারের উপরেই সন্দেহটা হচ্ছে।”
মামা হেসে বললেন, “আপাতদৃষ্টিতে তো আমাদের অনেক কিছুই মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে সেটা সবসময় হয় কি?”
অনিলবাবু বললেন, “তুই চিন্তা করিস না অভিমন্যু, সাম্যময়বাবু যখন এসেছেন তখন এর একটা ফয়সালা উনি করবেন-ই।”
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
সন্ধ্যাবেলায় অনিলবাবুদের ক্লাবে গেলাম। সেখানে অনেকজনের সঙ্গেই পরিচয় হলো। নিখিলবাবুর ডাক্তার নীলরতনবাবুও সেখানে ছিলেন। এছাড়াও নিখিলবাবুর বিশিষ্ট প্রিয় বন্ধু অখিলবাবুর সঙ্গেও পরিচয় হলো। অভিমন্যুবাবুও এই ক্লাবের একজন সদস্য। আর অনিলবাবু এই ক্লাবের সেক্রেটারি। অখিলবাবু আমাদের অনেকবার করে তাঁর বাড়িতে যেতে বললেন। অগ্যতা ফেরার পথে একবার ওনার বাড়িতে ঢুকতে হলো। অনিলবাবু আর অভিমন্যুবাবুকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম।
কৃষ্ণনগরের রাস্তা এই কদিনে বেশ চেনা হয়ে গেছে। সুতরাং আমরা নিজেরাই বাড়ি ফিরতে পারবো। ঘরটি আয়তনে বেশি বড়ো না হলেও বেশ ছিমছাম। অখিলবাবু বিয়ে করেননি। তাই বাড়িতে শুধু একটা চাকর ছাড়া আর কেউ নেই। অখিলবাবুর বেডরুমের দেওয়ালে বেশ কয়েকটা সার্টিফিকেট টাঙানো রয়েছে। তারমধ্যে একটা সার্টিফিকেটের দিকে তাকিয়ে মামা অখিলবাবুকে প্রশ্ন করলেন, “আপনি ডাক্তারি পড়েছেন নাকি?”
অখিলবাবু মুচকি হেসে বললেন, “ছেলেবেলা থেকে আমার ইচ্ছা ছিল আমি সাহিত্যিক হবো। কিন্তু বাবা চাইতেন আমি ডাক্তার হই। বাবার জন্যই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়েছিলাম। কিন্তু ভালো না লাগার জন্য প্র্যাকটিস করিনি। ওই সার্টিফিকেট টুকুই আছে। অনিল আমাকে অনেকবার বলেছিল নিখিলেশকে দেখার জন্য। কিন্তু সেসব নীলরতনের মতো পেশাদার ডাক্তারের পক্ষেই ভালো।”
মামা কিছুক্ষণ ওনার স্টাডি টেবিলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনি নেপালী বই পড়েন নাকি?”
অখিলবাবু বললেন, “হ্যাঁ। ছেলেবেলাটা নেপালেই বেশিরভাগ কেটেছে। বাবার পোস্টিং বেশ কয়েকবছর কাঠমান্ডুতেই পড়েছিল। তাই ভাষাটা ভালোই জানি।”
মামা বললেন, “ও।”
মামার দৃষ্টি এইবার ডানদিকের একটা শোকেসের উপর পড়লো। সেখানে সারিবদ্ধভাবে ট্রফি রাখা আছে। মামা বললেন, “এত ট্রফি কিসের?”
অখিলবাবু বললেন, “হ্যাঁ। ছেলেবেলায় ফুটবল খেলতাম। স্টেটের হয়েও খেলেছি। এমনকি এখনও আমি রোজ মাঠে যাই।”
মামা বললেন, “বাঃ। আপনার চেহারা ওইজন্যই এইবয়সেও এতো ভালো।”
তারপর অখিলবাবু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “আপনি একটু দেখুন সাম্যময়বাবু, নিখিলেশেকে যে খুন করেছে, তাকে আমি ছাড়বো না।” পরক্ষণেই অখিলবাবুর ফোন বেজে উঠল। হ্যালো হ্যালো করতে করতে উনি বারান্দায় চলে গেলেন। ফিরে এলেন মিনিট পাঁচেক পর।
আরো অনেক গল্প হলো। তারপর আমরা আস্তে আস্তে বাড়ির পথে হাঁটা দিলাম।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
“সুপ্রভাত সাম্যময়বাবু।” অনিলবাবু বললেন। ওনার দুই হাতে দু’কাপ মালাই চা।
একটা আমার ও অন্যটা মামার হাতে দিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, “দেখুন, আজ অনিল শর্মার মালাই চা কেমন লাগে।”
মামা অবাক হয়ে বললেন, “কেন লছমন নেই?”
অনিলবাবু বললেন, “ওর মায়ের একটু শরীর খারাপ। তাই ও এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে দেশে গেছে।”
মামা একটু মুচকি হেসে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে বললেন, “দিব্যি হয়েছে তো অনিলবাবু, আপনিও চা খুব ভালো বানান দেখছি।”
অনিলবাবু হেসে বললেন, “আসলে কলেজ লাইফে হোস্টেলে থাকতাম তো, নিজেই রান্না করতাম। তখন থেকেই অভ্যাস হয়ে গেছে আর কি।”
“অনিলদা খুব ভালো মাংসের কোর্মা বানায় জানেন মিঃ রায়।” কথাটা শুনে আমরা তিনজন সিঁড়ির দিকে তাকালাম। দেখলাম অভিমন্যুবাবু আসছেন।
আমাদের কাছে এসে অনিলবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, “আজ দুপুরে খাওয়াবে। কি বল অনিলদা।”
অনিলবাবু হেসে বললেন, “হ্যাঁ। অবশ্যই।”
তারপর আমার দিকে ঘুরে বললেন, “টুবলুবাবু, আজ তোমাকে আর তোমার মামাকে একবার বাজারে নিয়ে যাবো। দেখবে কত্ত মাটির পুতুল তৈরি হচ্ছে।”
মামা বললেন, “এ বেলায় আর কোথাও যাবো না অনিলবাবু। কেসটা নিয়ে আমাকে একটু বসতে হবে। সন্ধ্যাবেলায় তখন নীলরতনবাবুর ডিসপেনসারিতে আমাকে একটু নিয়ে যাবেন। ওনার সঙ্গে কথা বলাটা প্রয়োজন। রহস্যের যবনিকা পতন হলে তখন মাটির পুতুল দেখতে যাবো।”
অনিলবাবু বললেন, “আচ্ছা।”
জলখাবারে গরম গরম লুচি খেলাম। জলখাবারের পর্ব মিটিয়ে ঘরে ব্যোমকেশ পড়ছিলাম। মামাও পাশে বসে সিগারেট খাচ্ছিলেন। আধঘন্টা পর অখিলবাবু এলেন। ওনার সঙ্গে বাড়ির ছাদে আমাদের কথা হচ্ছিল। মামা বললেন, “অখিলবাবু, নিখিলেশবাবুকে আপনি কতদিন চেনেন?”
অখিলবাবু বললেন, “ক্লাস ইলেভেন থেকে।”
মামা বললেন, “বিজ্ঞানে ওনার ইনটারেস্ট কি বরাবর ছিল?”
অখিলবাবু হেসে বললেন, “হ্যাঁ সাম্যময়বাবু। আমরা কয়েকজন যখন সাহিত্য নিয়ে গল্প করতাম, তখন ও বেজায় চটে যেত। বলতো, রাখো তোমাদের ওই বানানো গল্প। বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করো। ওগুলো কোনোটাই বানানো নয়।” তারপর একটু থেমে বললেন, “ভালো মানুষ বেশিদিন পৃথিবীতে থাকে না।”
মামা বললেন, “আপনি কি জানেন যে, যেদিন নিখিলেশবাবু খুন হয়েছেন, সেইদিন থেকে তাঁর ফরমুলার পেনড্রাইভটাও উধাও?”
অখিলবাবু একটু অবাক হয়ে বললেন, “তাই নাকি? তার মানে ওই পেনড্রাইভটা হস্তগত করার জন্যই ওকে খুন করা হয়েছে?”
মামা বললেন, “আমারও তাই মনে হয়। খুনির আসল মোটিফ ছিল ওই পেনড্রাইভ।”
অখিলবাবু মামার হাত দু’টো চেপে ধরে বললেন, “আপনি দেখুন সাম্যময়বাবু, ওই ভালো মানুষটাকে কে খুন করলো। তাকে আপনি উপযুক্ত শাস্তি দিন।”
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
সন্ধ্যাবেলায় অনিলবাবু আমাদেরকে নীলরতনবাবুর ডিসপেনশারীতে নিয়ে এলেন। বেশ ফাঁকা সময়ে এসেছি। একটাও রোগী নেই। তাই আমরা নিরুপদ্রবেই কথা বলতে পারব। নীলরতনবাবুর সম্মুখের তিনটে চেয়ারে আমি, মামা আর অনিলবাবু বসলাম। মামা নীলরতনবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগলেন। বললেন, “আপনি নিখিলেশবাবুকে কতদিন ধরে চিকিৎসা করছেন?”
নীলরতনবাবু বললেন, “তা মাস সাতেক হবে।”
মামা বললেন, “অখিলবাবুর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?”
নীলরতনবাবু বললেন, “ভালো। আসলে আমাদের লাইনের লোকদের সাথে আমার মোটামুটি সদভাবই আছে।”
মামা বললেন, “উনি তো প্র্যাকটিস করেন না বোধহয়।”
নীলরতনবাবু বললেন, “না। তবে এম বি বি এস পরীক্ষায় খুব ভালো রেসাল্ট ছিল শুনেছি।”
মামা চারিদিকে একবার তাকিয়ে বললেন, “আপনার কোনো কম্পাউন্ডার নেই?” নীলরতনবাবু মাথা নীচু করে বললেন, “ছিল। সন্দীপ। ছেলেটি খুব ভালো ছিল। খুব স্নেহ করতাম। তবে হপ্তা তিনেক আগে সে দেশের বাড়ি চলে গিয়েছিল, ওর মায়ের নাকি অসুখ করেছিল। কিন্তু এখনো ফিরে আসেনি। ছেলেটি খুব কর্মঠ ছিল। আমি বাড়ি চলে যাওয়ার আধ ঘন্টা পর সে ডিসপেনশারী বন্ধ করে বাড়ি যেত।”
মামা বললেন, “আপনার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি?”
নীলরতনবাবু বললেন, “না।”
মামা বললেন, “ওর কোনো ফটো আমাকে দেখাতে পারেন?”
নীলরতনবাবু ড্রয়ার থেকে একটা পাসপোর্ট সাইজের ফটো বার করে মামার হাতে দিলেন। আমিও দেখলাম। মাথায় পাগড়ি পরা, ঠোঁটের উপরে লম্বা গোঁফ, ছোটো ছোটো চোখ, পরনে সাদা জামা।
মামা ছবিটা দেখে নীলরতনবাবুকে বললেন, “মনে হচ্ছে বাঙালী নয়।”
নীলরতনবাবু বললেন, “না। নেপালী।”
মামা বললেন, “ঠিক আছে। ছবিটা যদি আমার কাছে কিছুদিন থাকে তাহলে আপনার আপত্তি নেই তো?”
নীলরতনবাবু বললেন, “কোনো আপত্তি নেই। নিয়ে যান।”
মামা ছবিটা বুকপকেটে রাখলেন। তারপর আমরা নীলরতনবাবুকে নমস্কার করে প্রস্থান করলাম। মামা অনিলবাবুকে বললেন, “আপনি আর টুবলু বাড়ি চলে যান। আমি একটু পরে যাচ্ছি।”
এই বলে মামা উলটো দিকের রাস্তা ধরে হাঁটা দিলেন।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
ঘণ্টা দু’য়েক পর মামা বাড়ি ফিরলেন। রাত্রে খাবার পর মামা ঘরের জানালার পাশে ঠেস দিয়ে সিগারেট টানতে টানতে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোর কি মনে হয় টুবলু, কে ক্রিমিনাল?” আমি বললাম, “আমার সন্দেহ হয় লছমনকে।” মামা বললেন, “কেন?” আমি বললাম , “ও যদি চুরি না-ই করে থাকে তাহলে বাড়িতে গোয়েন্দা আগমণের পর সে কেন দেশের বাড়ি চলে গেল?” মামা বললেন, “আর ওই ইনসুলিন ইঞ্জেকশান?” আমি বললাম, “ইঞ্জেকশানের ভায়েলে বিষ হয়তো ও-ই মিশিয়েছে।” মামা বললেন, “আর নীলরতনবাবুর এক্স কম্পাউন্ডার সন্দীপ?” আমি বললাম, “তোমার কি ওকেই সন্দেহ হয় নাকি?” মামা বললেন, “দেখ টুবলু, সন্দীপ ছিল ডাক্তারের কম্পাউন্ডার। তাই তার পক্ষে ইঞ্জেকশানের ভায়েলে বিষ মেশানোটা সহজ নয় কি?” আমি বললাম, “কিন্তু ও তো এখন সুদূর নেপালে। ওকে তুমি এখন কেমন করে কলকাতায় আনবে?” মামা হেসে বললেন, “দূর বোকা, ও কলকাতাতেই আছে।” আমি অবাক হয়ে বললাম, “তাহলে তুমি সিওর ওই সন্দীপই ক্রিমিনাল?” মামা হেসে বলল, “হ্যাঁ রে ভাগ্নে, আসল ক্রিমিনাল ওই সন্দীপ ওরফে…” আমি বললাম, “ওরফে?” মামা বললেন, “ঠিক আছে আমি তোকে একটা ক্লু দিচ্ছি।” এই বলে মামা একটা সাদা কাগজে সাতটা সংখ্যা লিখলেন। 1118912. কাগজটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, “এই নে ক্লু। এই সংখ্যা গুলোর ভিতরেই নিখিলেশবাবুর খুনী কাম পেনড্রাইভ চোরের নাম লুকিয়ে আছে। তুই সারারাত বসে বসে ভাব আর আমি শুয়ে পড়ি।”
এই বলে একগাল হেসে মামা নিজের শয্যা গ্রহণ করলেন।
সপ্তম পরিচ্ছেদ
সকাল থেকেই আজ বৃষ্টি পড়ছে। মামা আজ নিশ্চিন্তমনে সকালের চা পান করছেন। গতকালের কথা গুলো মনে পড়ে গেল। নিশ্চিন্ত থাকাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। মামা তো আসল ক্রিমিনালকে ধরে ফেলেছেন। কিন্তু আমি এখোনো সেই ক্লু টার থেকে আসল ক্রিমিনালের নাম আবিষ্কার করতে পারিনি।
মামা বললেন, “টুবলু, সুটকেস গোছা। আমরা আগামীকাল রাত্রের লোকাল ট্রেনটায় কলকাতা রওনা দেবো।”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “আর রহস্যের যবনিকা পতন?”
মামা বললেন, “ওটা আজ রাত্রেই হবে। একটু ধৈর্য ধর।”
আমি বললাম, “তুমি কি আমাকেও নামটা বলবে না?”
মামা হেসে বললেন, “ওই যে 1118912.”
আমি বললাম, “হেঁয়ালি না করে সরাসরি নামটাই বলো না।”
মামা বললেন, “আমাকে মাপ করুন ভাগ্নেজী, আপনার অনুরোধ আমি রক্ষা করতে পাচ্ছি না।”
আমার চেষ্টা বিফলে গেলো। কিছুতেই মামার মুখ থেকে কথা বার করতে পারলাম না। ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালাম। ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভাবলাম। না। 1118912 এটার থেকে কি করে লোকের নাম বের করবো? অনিলবাবুর ডাকে মোহভঙ্গ হলো।
উনি আমার হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে বললেন, “তোমার মামা কিছু বলছেন নাকি, এই কেসটার ব্যাপারে, ক্রিমিনাল কে?”
আমি বললাম, “আমাকেও পরিষ্কার করে কিছু বলছেন না। উনি বলছেন 1118912 এই সংখ্যা মালাটার মধ্যে নাকি খুনী কাম পেনড্রাইভ চোরের নাম লুকিয়ে আছে।”
অনিলবাবুও ভুরু কুঁচকে সংখ্যাটা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলেন। তবে উনিও ব্যর্থ হলেন। বললেন, “আর কিছু বলেছেন?”
আমি বললাম, “হ্যাঁ। উনি নীলরতনবাবুর প্রাক্তন কম্পাউন্ডার সন্দীপকে সন্দেহ করেন। কিন্তু ওনার কথা মতো সন্দীপ ওর আসল নাম নয়। ওটা ছদ্মনাম।”
অনিলবাবু ব্যস্ত হয়ে বললেন, “ও তো এখন নেপালে, দেশের বাড়িতে।”
আমি বললাম, “উঁহু, মামা বলছেন সন্দীপ নাকি কলকাতাতেই আছে।” অনিলবাবু বললেন, “আশ্চর্য।”
দেখলাম মামা ঘর থেকে বেরিয়ে আমাদের দিকেই আসছেন। আমাদের কাছে আসতেই অনিলবাবু মামাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “টুবলুবাবু বলছেন আপনি ক্রিমিনাল ধরে ফেলেছেন? সন্দীপ?”
মামা হেসে বললেন, “সন্দীপ নয়। 1118912.”
অনিলবাবু বললেন, “কিন্তু আমি বা টুবলুবাবু কেউই তো এর থেকে আসল নাম বের করতে পারছি না।”
মামা বললেন, “আজ রাত্রেই জানতে পারবেন। আজ রাত ঠিক এগারোটায় আপনি গুপ্তা এন্টারপ্রাইজের সামনে অপেক্ষা করবেন। পারলে অভিমন্যুবাবুকেও নিয়ে যাবেন। আমি আর টুবলু পনেরো মিনিট পর পৌঁছে যাবো।”
অনিলবাবু বললেন, “আর সেই পেনড্রাইভ?”
মামা বললেন, “সেখানে আপনি পেনড্রাইভটাও ফিরে পেয়ে যাবেন।”
অষ্টম পরিচ্ছেদ
বুকের ভেতরে হৃৎপিণ্ডটা মেল ট্রেনের মতো দৌড়চ্ছে। রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম। তারপর মামা আর আমি একটু বিশ্রাম নিয়ে নিলাম। রাত ঠিক সাড়ে দশটা বাজতেই মামা আমাকে উঠিয়ে দিলেন।
অনিলবাবু আর অভিমন্যুবাবু আমাদের ঘরে প্রবেশ করে বললেন, “স্বপনকে ফোন করে দেবো সাম্যময়বাবু? ও ট্যাক্সি নিয়ে আসুক।”
মামা বললেন, “হ্যাঁ অনিলবাবু। সাড়ে দশটা তো হয়েই গেলো, রওনা হতে হতে আরও মিনিট দশেক সময় লেগে যাবে। রাস্তাও তো কম নয়। আমরা তার একটু পরে যাবো। পুলিশ স্টেশনে খবর দেওয়া আছে। পুলিশের গাড়ি এখান থেকে আমাদেরকে নিয়েই গুপ্তা এন্টারপ্রাইজে যাবে।”
তারপর মামা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “টুবলু, পিস্তলগুলো নিয়ে নিবি। দু’টো নিবি। তোর কাছে একটা থাকবে আর আমার কাছে একটা।”
আমি ব্যাগ থেকে পিস্তলগুলো বের করে নিয়ে নিলাম। কিছুক্ষণ পরেই বাইরে হর্নের শব্দ শুনতে পেলাম। স্বপন চলে এসেছে। অনিলবাবু আর অভিমন্যুবাবু তাতে চেপে রওনা হয়ে গেলেন।
মিনিট দশেক পর পুলিশের গাড়িও চলে এলো। আমরা তাতে চড়ে রওনা দিলাম।
গন্তব্যে পৌছাতে সময় লাগলো প্রায় কুড়ি মিনিট। দোতালা দোকান। সাইন বোর্ডে লেখাই ছিল, ‘গুপ্তা এন্টারপ্রাইজ’। মামা পুলিশ অফিসারকে বললেন, “আপনারা গেটের বাইরেই থাকুন, আমি যখন ডাকবো তখন আপনারা ভিতরে ঢুকবেন।”
অনিলবাবু আর অভিমন্যুবাবুও এসে গেছেন। মামা ওনাদেরকে ওইখানেই থাকতে বললেন। আমি আর মামা আস্তে আস্তে গেট খুলে ভিতরে প্রবেশ করলাম।
মামা আস্তে আস্তে বললেন, “টুবলু পিস্তল গুলো দে।”
আমি পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করে মামার হাতে দিলাম। অন্যটা আমার হাতেই রাখলাম। এরপর আমরা দোকানের ভিতরে প্রবেশ করলাম। একতলায় ডানদিক ঘেঁষে দোতালার সিঁড়ি চলে গেছে। আমি মামাকে অনুসরণ করে দোতালায় উঠতে লাগলাম। দোতালায় উঠতেই একটা ঘরের থেকে কতকগুলো কথা শুনতে পেলাম। আমরা খিল লাগানো দরজায় কান পেতে কথাগুলো শোনার চেষ্টা করলাম। কথোপকথনটা হচ্ছিল দু’ জনের মধ্যে। তারমধ্যে একজনের গলার আওয়াজটা খুব চেনা। কিন্তু এখন অতটা খেয়াল হচ্ছে না।
প্রথম ব্যক্তি – “কিরে গোপলা, আজ খুশি তো?”
দ্বিতীয় ব্যক্তি – “খুশি মানে, পুরো খুশির বন্যা।”
প্রথম ব্যক্তি – “কেমন খেলটা দেখালাম বল।”
দ্বিতীয় ব্যক্তি – “খেল মানে খেল, মহাখেল ওস্তাদ মহাখেল।”
প্রথম ব্যক্তি – “ভাগ্যিস আমার বাবা আমাকে ডাক্তারি পড়িয়েছিল, না হলে এই কাজ আমি করতেই পারতাম না। ব্যাস। মালটা হাতে চলে এসেছে, এইবার শুধু বেচবার পালা। তারপর তুই আর আমি ফিফটি ফিফটি।”
দ্বিতীয় ব্যক্তি – “কবে বেচবেন ওস্তাদ?”
প্রথম ব্যক্তি – “ভালো কিছু পেতে গেলে একটু ধৈর্য ধরতে হয় বাবা। আগে অনিলদের বাড়ি থেকে ওই টিকটিকি দু’টো বিদেয় হোক, তারপর বেচব।”
মামা আমাকে বললেন, “মুভ টুবলু।”
তারপর মামা লাথি মেরে দরজাটা ভেঙ্গে ফেললেন। একি, অখিলবাবু? মানে অখিলবাবু আসল ক্রিমিনাল?
মামা অখিলবাবুর দিকে পিস্তলটা উঁচিয়ে ধরে বললেন, “অনেক খেলা দেখিয়েছেন অখিলবাবু, অনিলবাবুদের সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি ব্যবহার, নীলরতনবাবুর ডিসপেনশারীতে সন্দীপের ছদ্মবেশ। এবার আপনাকে আর কেউ বাচাতে পারবে না।”
গোপলা পালানোর চেষ্টা করছিল। আমি ওর কলার ধরে ওর কপালে আমার পিস্তলটা চেপে ধরলাম।
অখিলবাবু বললেন, “গোয়েন্দা, তুমি অনেক বুদ্ধিমান। অনেক অনেক অনেক। কিন্তু তুমি আমাকে জ্যান্ত ধরতে পারলে না।”
তক্ষুনি অখিলবাবু পকেট থেকে নিজের পিস্তলটা বের করে নিজের কপালেই গুলি চালিয়ে দিল। গোপলাও তা-ই করলো।
তারপর তারা আস্তে আস্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
মামা বললেন, “টুবলু, ওই দেখ। টেবিলের ওপর পেনড্রাইভটা রাখা আছে। যা নীচে গিয়ে ওটা অনিলবাবুকে দিয়ে দে। আমি যাচ্ছি।”
পেনড্রাইভটা নিয়ে নীচে নেমে গেলাম।
নবম পরিচ্ছেদ
সকালে মামা সবাইকে ডাকলেন। অনিলবাবু, অভিমন্যুবাবু, প্রীতিলতাদেবী, নীলরতনবাবু ও আমি সেইখানে উপস্থিত ছিলাম।
মামা বলতে শুরু করলেন। “প্রথমত লছমন একজন সাধারণ চাকর। সে যে এই সায়েন্টিফিক খুনটা করতে পারে না সেটা আমি আগের থেকেই জানতাম। সবাই সন্দেহ করছিলেন নীলরতনবাবুকে। কারণ উনিই ইনসুলিন পুস করেছিলেন এবং তাতেই নিখিলেশবাবুর মৃত্যু হয়। কিন্তু আমি শুনলাম যে আগে নীলরতনবাবুর এক নেপালী কম্পাউন্ডার ছিল। সন্দীপ। সে নাকি তিন সপ্তাহ আগে দেশের বাড়ি চলে গেছে। আসলে ওই সন্দীপই ছিল অখিলবাবু। আমি অখিলবাবুর বাড়িতে একটা ডাক্তারি সার্টিফিকেট দেখেছিলাম। তিনি এম বি বি এস পাশ করেছিলেন। এমনকি তার বাড়িতে আমি নেপালী ভাষার কতকগুলো বইও দেখতে পাই। এর থেকে বোঝা যায় উনি নেপালী ভাষাও বেশ বুঝতে ও বলতে পারতেন। তাই উনি নীলরতনবাবুর ডিসপেনশারীতে বিশ্বস্ত নেপালী কম্পাউন্ডার সন্দীপ সেজে আসলেই দেখতে চেয়েছিলেন যে নীলরতনবাবু ওনার ডিসপেনশারীর ঠিক কোন জায়গায় নিখিলেশবাবুর ওই ইনসুলিন ইঞ্জেকশানটি রাখেন। নীলরতনবাবু আমাকে বলেছিলেন উনি বাড়ি চলে যাওয়ার প্রায় আধ ঘণ্টা পর সন্দীপ বাড়ি যেত। সন্দীপ ওরফে অখিলবাবু এ-ও জানতো যে পরের দিন সকালেই নীলরতনবাবু যাবেন নিখিলেশবাবুর বাড়িতে ইনসুলিন পুস করতে। তাই ওই আধঘন্টার মধ্যেই সে ইঞ্জেকশানের ভায়েলে বিষ মিশিয়ে চলে যায়। তারপর ওই ফোন। আমরা যখন অখিলবাবুর বাড়িতে ওনার সঙ্গে গল্প করছিলাম, তখন ওনার একটা ফোন আসে। আমি ফোনে নাম দেখতে পেয়ে যাই। ‘Gopla (Gupta Enterprise)’। রীতিমতো উনি বাইরে বারান্দায় কথা বলতে চলে যান। সেদিনে নীলরতনবাবুর ডিসপেনশারী থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমি বাজারে ওই গোপলা নামে লোকটিকে নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চালাই। আমি জানতে পারি গোপলা ওই গুপ্তা এন্টারপ্রাইজের মালিক। গুপ্তা এন্টারপ্রাইজের আশেপাশে যাদের বাড়ি, আমি তাদের সঙ্গেও কথা বলি। জানতে পারি প্রতিদিন রাত এগারোটায় এক ভদ্রলোক গুপ্তা এন্টারপ্রাইজে আসে। উনি-ই যে অখিলবাবু, তাতে আমার কোনো সন্দেহ থাকে না। আসলে অখিলবাবু আর গোপলা চেয়েছিল নিখিলেশবাবুকে খুন করে ওনার ফরমুলার পেনড্রাইভ চুরি করে সেটা বেচে অনেক টাকা রোজগার করতে। অখিলবাবু নিখিলেশবাবুর বন্ধু ছিলেন। হয়তো অজান্তেই কোনোদিন নিখিলেশবাবু অখিলবাবুকে ওই পেনড্রাইভটি কোথায় থাকতো, সেটি বলে দিয়েছিলেন। এবার আরেকটা সূত্রের কথা বলি। অনিলবাবু আমাকে বলেছিলেন যে যেদিন নিখিলেশবাবু মারা গিয়েছিলেন, সেইদিন রাত্রে অনিলবাবু নিখিলেশবাবুর ঘরের দরজা ও বারান্দার দরজা খোলা রেখেছিলেন। আর ঘর পুরো ফাঁকা ছিল। নীচতলা থেকে ছাদ পর্যন্ত যে জলের পাইপটা চলে গেছে, সেই পাইপ ধরে অখিলবাবু রাত্রে নিখিলেশবাবুর ঘরের সামনের বারান্দায় চলে আসেন। বারান্দার দরজা খোলা পেয়ে অখিলবাবু ঘরে ঢুকে নিঃশব্দে পেনড্রাইভটা হাতিয়ে নেন। তখন বাড়ির সবাই বেশ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। একজন স্টেট লেবেলের ফুটবল প্লেয়ারের পক্ষে এটা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। আমি একদিন নীচে পায়চারি করছিলাম। তখন আমি পাইপের উপর জুতোর ছাপ দেখতে পাই। ব্যাস। সব অঙ্ক মিলে গেল। এবার আসি ওই সংখ্যামালার কথায়। 1118912. ইংরেজী বর্ণমালায় ভেবে দেখুন।
A = 1
K = 11
H = 8
I = 9
L = 12’
অনিলবাবু মামার কাছে গিয়ে হাত দু’টো ধরে বললেন, “আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো সাম্যময়বাবু।”
অভিমন্যুবাবু নগদ বিশ হাজার টাকা মামার হাতে দিয়ে বললেন, “এই নিন আপনার পারিশ্রমিক।”
মামা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, “চ টুবলু, এই টাকা দিয়ে অন্তত আমাদের কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুলটা কেনা হয়ে যাবে।”
সবাই হো হো করে হেসে উঠলেন।
(সমাপ্ত)