কমলাপুর রেলস্টেশন! ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে! স্বাভাবিক না অস্বাভাবিকই বটে। লোকজনের তেমন কোনও ভিড় নেই, থমথমে আবহাওয়া বিরাজ করছে।
নীল শাড়ি পড়ে এক তরুণী হেঁটে চলছে! এমন একটা চাঞ্চল্যকর মনে হচ্ছে আজই বিয়ে করবে! প্রিয় মানুষটির জন্য অপেক্ষা!
অবশেষে সেই প্রেমিক পুরুষের সাথে দেখা!
একটু দম নিয়ে রাজ বলল;-
তন্দ্রা আমি তোমায় বিয়ে করতে পারব না! ভুলে যাও আমায়! আমার বাবা কখনওই আমাদের বিয়ে মানবে না! পালিয়ে বিয়ে করা সম্ভব নয়! আর আমার তো চাকরি নেই!
তন্দ্রা তো রেগে আগুন! একটু বেশিই রেগে!
ঐ তুই আমাকে ভালোবাসিস?
বিয়ে যদি না করবি তাহলে বিয়ে করবি বলে প্রতিশ্রুতি দিলি কেন? আমাকে স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে আসলি কেন?
এত বছর আমার সাথে রিলেশনের মানে কী ছিল!
আমি তোমাকে ভালোবাসি না! তন্দ্রা তুমি বাসায় ফিরে যাও পরিবারের দেখা ছেলেকে বিয়ে করো! হেসে হেসে বলল – তোমার মত মেয়েকে আমি বিয়ে করব ভাবলে কীভাবে?
তন্দ্রা চুপ হয়ে গেল আর কিছু না বলে পিছনে দিকে ফিরে বাসার উদ্দেশ্যে রওঁ হল, সে টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছছে!
তন্দ্রা শোন! চলে যাচ্ছো? আমায় একা করে?
আমি তোমায় অনেক অনেক ভালবাসি তন্দ্রা।
আমি তো মজা করলাম! তুমি বিশ্বাস করে নিলা?
তুমি বলেছিলে না তুমি কখনও মিথ্যে বলো না! আমি তোমার সব কথা সত্যি ভেবে বিশ্বাস করি আজও তার ব্যতিক্রম নয়, আজও করলাম।
সততাই হল মানবতা! তাই বিশ্বাস না করার সাধ্য আমার নেই!
আমি চললাম আর কোনদিন আমাদের দেখা হবে না নিজেকে আমি বদলে ফেলেছি কিছুক্ষনের ভিতরে।
নিজের অস্তিত্ব হারিয়েছি, পুরনো সেই তন্দ্রা আর এই তোমার সামনে থাকা মেয়েটি এক নয়!
আসি, খোদা হাফেজ।
— তন্দ্রা চলে যেও না! প্লিজ, আমার কথা তো শুনবে!
— তোমার কথা শোনার মত আর ইচ্ছে আমার নাই, ভালো থেক। চললাম।
আজ তন্দ্রার বিয়ে! অন্যদিকে রাজ বাসায় পাগলের মতো ছটফট করছে।
রাজের নতুন গার্লফ্রেন্ড মীরা বাসায় এসে হাজির!
রাজ তুমি কি সত্যি তন্দ্রার সাথে সব কিছু চুকিয়ে ফেলছ?
জানি না আমি, কিছু জানি না, প্লিজ তুমি চলে যাও, তোমার সাথে এখন থেকে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আমি তোমাকে বিয়ে করব না, তুমি আর আমার সামনে আসবে না!
আমি আসলে কি চেয়েছিলাম? কেন ওকে আমি বললাম যে তোমাকে আমি বিয়ে করব! বাবা মার পছন্দের ছেলে বিয়ে করতে হবে না, তুমি আমি পালিয়ে যাব? আমি বিয়ে করে ওকে ছেড়ে গিয়ে মীরাকে বিয়ে করতাম! মীরাকেই বা কেন বললাম তন্দ্রার সাথে ব্রেকআপ করে তোমাকে বিয়ে করব! কেনই-বা রিলেশনে গেলাম মীরার সাথে!
মনে মনে ভাবছে রাজ।
মীরা চলে গেল! আর কিছু বলল না!
হঠাৎ তন্দ্রার ফোন এল রাজের কাছে!
রাজ আমার আর কিছুক্ষন পর বিয়ে, তুমি আমায় নিয়ে যাবে? মনকে আমি কিছুই বোঝাতে পারছি না!
তোমার প্রতি আমার সকল অভিমান চলে গেছে রাতে।
ভেবেছিলাম তোমাকে ফোন দিবো, রাতে তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো এই ভেবে আর ফোন দিয়ে তোমার ঘুম ভাঙাইনি!
আমি তোমায় এখন এই মূহুর্তে বিয়ে করব! তোমাদের বাসার সামনে আমি আসছি!
পাঁচ মিনিট!
তন্দ্রা বউয়ের সাজে বাড়ির পিছন থেকে বের হয়ে রাজকে ফোন দিয়ে বলল পিছনের রাস্তায় এসো!
রাজ তন্দ্রার সামনে গিয়ে হাত ধরে বলল নাহ্ আজ কোন লুকোচুরি নয়! আমি কাজীকে ফোন দিয়েছি! আমার সব আত্মীয় স্বজন তোমাদের বাড়ি আসছে।
তন্দ্রার হাত ধরে রাজ তন্দ্রাদের বাসায় চলে গেল!
রাজের বাবা-মামা-ফুফা এসে হাজির, সাথে রাজের একমাত্র ছোট বোন! সাথে কাজীও এসেছে!
তন্দ্রার বাবা বললেন, “বুঝলাম নাহ্ আপনারা কারা কোন পক্ষের, আপনাদের ঠিক চিনতে পারলাম নাহ্!”
বাবা তোমার কাছে আমি তন্দ্রা এ জীবনে কিছুই চাইনি! কালকে আমি বাসা থেকে চলে গেছিলাম রাজকে বিয়ে করার জন্য কিন্তু করিনি! আমার কিছুক্ষনের জন্য মনে হইছিল তোমাদের না জানিয়ে বিয়ে করা উচিত হবে না পালিয়ে যাওয়া উচিত হবে না!
রাজও সেই কথাই বলেছিল! নিজের মেয়ের সুখের কথা ভেবে প্লিজ রাজের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দাও বাবা, প্লিজ জীবনে আর কোনদিন তোমার কাছে কিছু চাইবচাইব না আমি!
না তা হবে না রিলেশন করে বিয়ে কোনভাবেই মেনে নিবোনা।
আমি বেঁচে থাকতে আমার বন্ধুর সাথে দেওয়া কথার বরখেলাফ করতে পারব না! তুই জানিস নাহ্ কথা বরখেলাপ করার মতো মানুষ আমি নই!
মেয়ের ইচ্ছা-স্বপ্নের চেয়ে তোমার বন্ধুকে দেওয়া তোমার কথা বড় হয়ে গেল?
বাহ্ বাবা বাহ্ চমৎকার!
আচ্ছা আমি চললাম। আজ থেকে মনে করবেো তোমার কোনদিন মেয়ে ছিলো না আর থাকলেও সেই মেয়ে হারিয়ে গেছে। আমিও আজ থেকে ভাবব আমার আপন বলতে কেউ নাই।
তুমি রিলেশন করে বিয়ে করেছিলে এবং আমার জন্মের পর মা অন্য একজনের সাথে চলে গিয়েছিল? সেই থেকে তুমি রিলেশন সহ্য করতে পারো না! কেন বাবা কেন? মা চলে যাওয়ার পিছনে তোমারও কি দোষ কম ছিল?
আচ্ছা ধরো যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছ তার সাথে তো আমার রিলেশন নাই! যদি বিয়ের পর আমি কারো হাত ধরে চলে যাই?
তখন কি আরেঞ্জ ম্যারেজের দোষ দেবা?
সম্পর্ক ভাঙার পিছনে সবারই দোষ থাকে! আচ্ছা আমার সাথে যদি তোমার বন্ধুর ছেলের রিলেশন থাকত, তাহলে কি করতে বাবা জবাব দাও? মেনে নিতে আমাদের? মানসিকতা বদলাও বাবা।
রাজের বাবা বলল – “দেখেন ভাই, আপনার মেয়ে আর আমার ছেলে দুইজন দু’জনকে ভালবাসে, ওদের দু’জনকে বিয়ে দেওয়াটাই সবচেয়ে উত্তম কাজ হবে।”
হ্যাঁ! ঠিক আছে, দিন বিয়ে। নিষেধ করিনি তো আমি! কিন্তু আমার মেয়ের সাথে নয় অন্য কারও সাথে, এবার আপনারা সবাই আসতে পারেন।
হ্যাঁ বাবা আমরা চলেই যাব, চলুন বাবা। চলো রাজ, এখানে আর এক মুহূর্তও থাকা আমরা থাকতে চাই না, থাকব না।
না তন্দ্রা দাঁড়াও!
বাবা আপনার মেয়ের ইচ্ছে স্বপ্নের দাম দিন, বাবা আমাদের মেনে নিন!
এই ছেলেকে তোমার বাবা? আমার কোনও সন্তান নেই।
তন্দ্রা বলল – “আচ্ছা মিঃ বরকত সাহেব, চললাম আমি!”
অতঃপর কাজী অফিসে চলে গেল, বাবার শতবাধাও আটকাতে পারল না মেয়েকে।
বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর রাজ তন্দ্রাকে নিজ বাসায় নিয়ে গেল। বিয়ের রাত ভালোই কাটল দু’জনের!
বিবাহিত জীবন ভালোই সুখের কাটতে লাগল রাজের, একটা ভালো জবও হয়ে গেল প্রাইভেট কোম্পানিতে। হঠাৎ একদিন সকালবেলা! তন্দ্রা কাজে খুবই পারদর্শী, বিশেষ করে রান্নাবান্নায়। সকালবেলা বিভিন্ন রকমের নাস্তা তৈরি করল!
বেডরুমে প্রবেশ করল; এই রাজ উঠো, নাস্তা রেডি করে বসে আছি। উঠে ফ্রেশ হও, তারপর নাস্তা করার জন্য ডাইনিং এ আসো, নাস্তা রেডি।
একে একে সবাইকে ডাইনিং এ আসতে বলল তন্দ্রা।
মীরা বসে নাস্তা করছে!
এই তুমি কে? আমার বাড়িতে প্রবেশ করার সাহস কোথায় পেলে?
একদিন হল বিয়ে হয়েছে এরই মধ্যে তোমার বাড়ি হয়ে গেছে? বাহ্ বেশ ভালো তোহ্!
হ্যাঁ, কোন সমস্যা আপনার? আমার স্বামীর বাড়ি মানে আমার বাড়ি! আপনি কে? সরি আপনার সাথে এত কথা বলছি কেন!
আমি এই বাড়িতে রোজ আসি, রাজের বেডরুমে রোজ যাই!
মানে?
মানে আসলে কিছুই নাহ্!
বের হন আপনি! বের হন!
ইতিমধ্যে রাজ ও তার বাবা চলে এসেছে সকালে নাস্তা করার জন্য!
রাজের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল!
মীরা তুমি এখানে? তুমি কি চাও?
আমি এখানে থাকব না, তাহলে কে থাকবে?
আর হ্যাঁ আমি তোমাকে চাই!
আচ্ছা ওয়েট ওয়েট! রাজ, এই মেয়েটা তোমার কে হয়?
রাজ চুপ হয়ে গেল কোনও জবাব দিতে পারল না।
বাবা এই মেয়েটা রাজের কে হয়?
শ্বশুরও চুপচাপ, আসলে সে মীরা সম্পর্কে কিছুই জানেন নাহ্, তিনদিন হল দেশে ফিরেছেন আর তার জানারও কথা নাহ্! আর রাজের মা অনেক আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন।
এই হল তন্দ্রা, আমি বলছি আমি ওর কে হই!
তুমি আমার নাম জানলে কীভাবে?
রাজের মুখে তোমার কথা বহুবার শুনেছি। আমার আর রাজের মাঝে কয়েকমাস ধরে রিলেশন চলছিল এবং রাজ এটাও বলেছিল তোমার সাথে ব্রেকআপ করে আমাকে বিয়ে করবে!
হঠাৎ কি হল সেদিন বুঝতে পারলাম না আমি, এই বাসায় আসার পর দেখি রাজ নার্ভাস! তোমার সাথে ব্রেকআপ করেছে নাকি জিজ্ঞেস করাতে আমাকে অপমান করে বের করে দিল।
রাজকে খুব জোরে একটা চড় দিল রাজের বাবা।
তন্দ্রা কাঁদতে কাঁদতে বেডরুমে চলে গেল, দরজা আটকে দিল ভিতর থেকে!
মীরা চলে গেছে কথা বলেই!
রাজ বেডরুমের দরজায় ধাক্কা দিতে লাগল!
তন্দ্রা আমার কথা শোনো, দরজাটা খোলো প্লিজ!
না, আমি তোমার কোনও কথা শুনব না।
অনেকক্ষণ হয়ে গেল ভিতর থেকে কোন সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না!
ও বাবা আপনি একটু ডাক দিন না, দয়া করে আপনার কথাও শুনবে!
তন্দ্রা মা দরজাটা খুলো! আমার ছেলের হয়ে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি!
ভিতর থেকে কোনও শব্দ পাওয়া গেল না!
হঠাৎ করে ভিতর থেকে আওয়াজ আসতে লাগল। কোনও উপায় না পেয়ে রাজ দরজা ভেঙে ফেললো!
দেখল মীরা ফ্যানের সাথে ফাঁস দিচ্ছে! তাড়াতাড়ি তন্দ্রাকে নিচে নামিয়ে আনল রাজ!
তন্দ্রাকে জোরে একটা থাপ্পড় মারল!
এ মেয়ে এরকম করতে গেলি কেন? তুই মরে গেলে কি নিয়ে বাঁচব আমি!
কেন আপনার মীরা আছে না? আমাকে বিয়ে করে নিজের স্বাদ মিটিয়ে আমায় গুম করে যাকে বিয়ে করতেন তাকে!
তুমি আমাকে এরকম ভাবলে?
এরকম ভাবব না তাহলে কি রকম আপনাকে ভাবব শুনি! এই বাড়িতে আর এক মুহূর্তও আমি থাকতে চাই না। আমি বাবার কাছে চলে যাব, এই স্বার্থপর বিশ্বাসঘাতকের কাছে আমি থাকব না কোনদিনও থাকব না।
আমার কথা তো শোনো, প্লিজ আমাকে বোঝার চেষ্টা করো তন্দ্রা! মীরার সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল অনেক আগে থেকেই, কিন্তু তোমাকে অনেকবার বলতে চাইছি কিন্তু তুমি হেসে উড়িয়ে দিয়েছ আর বলেছ তোমার মত ছেলের মেয়ে বেস্টফ্রেন্ড থাকতে পারে, এটাও আমার শুনতে হবে! হাহাহা।
কারণ তুমি নিজেই তো আমার পিছনে ঘুরেছছ, তারপরে আমাকে প্রপোজ করেছ! তাছাড়া আমি কোনও মেয়ের সাথে কথা বলতাম নাহ্, দূরে দূরে থাকতাম। কোনও মেয়ের সাথে মিশতাম না আমি।
তোহ্ ঐ মেয়েটা কেন বলল তোমার সাথে ওর অনেকদিনের রিলেশন! কেন ঐ মেয়েটাকে তুমি বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছ আমার সাথে ব্রেকআপ করে? আর আমাকেও বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিয়েছ? ওকেই করতে আমাকে কেন করলে?
মীরাকে আমি বেস্টফ্রেন্ড ছাড়া কিছু ভাবতাম না, কিন্তু আমাকে ও ভালবাসতো! হঠাৎ একদিন ওর মা অসুস্থ হয়ে পড়ে! ও হয়তো ওর মাকে আগেই জানিয়েছিল যে, আমাকে ভালবাসে!
ওর মা মারা যাওয়ার আগে আমার হাত ধরে বলে গেছে আমি যেন মীরাকেই বিয়ে করি! মীরাকে কষ্ট না দেই।
তারপর থেকে মীরাকে আমি বহুবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি মীরাকে বিয়ে করা সম্ভব নাহ্! কিন্তু বন্ধুত্বের দোহাই আর ওর মায়ের কথার জন্য বারে বারে আমার কাছে আসত। একটা সময় আমিও ওর প্রতি দুর্বল হয়ে যাই, মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলি, রিলশনে চলে যাই। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি করব! চেয়েছিলাম তোমায় নিয়ে দূরে পালিয়ে যাব আবার অন্যদিকে তোমার বাবা তোমার জন্য ছেলে দেখে ফেলছে আর অন্যদিকে আমি তো জানি তোমার বাবা আমাদের কখনও মেনে নেবেন না!
অবশেষে আমি ভাবি তোমায় ছেড়ে চলে যাব। মীরার মায়ের কথাটাও বারেবারে মনে পড়তে লাগল
কিন্তু তোমাকে যখন ছেড়ে যেতে বললাম, অন্য কাউকে বিয়ে করতে বললাম খুব কষ্ট হয়েছিল আমার কারণ কথাগুলো আমার মনের কথা ছিল না! তোমার কষ্ট দেখে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারিনি।
নিজেকে তখন বুঝাই আমি তো তাকে কথা দেইনি আমি মীরাকে কেন বিয়ে করব! আমাদের এত বছরের ভালবাসা ত্যাগ করে।
তুমি যখন বললে আমার সাথে তোমার আর দেখা হবে না, মনে হয়েছিল মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। আমি তোমাকে ভালবাসি, ভালবেসেই বিয়ে করছি!
এতকিছু গোপন করার কোন মানেই ছিল না রাজ!
আচ্ছা, আই এম সরি!
আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু তোমার এই অপরাধের সাজা তোমাকে পেতেই হবে। আমার অভিমান আমার ভালবাসার মতোই তীব্র।
আমি এখন আমাদের বাসায় চলে যাব যখন আমার পেটের বাচ্চার ডেলিভারির সময় হবে তার আগে পর্যন্ত আমার সাথে কোনও ধরনের যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না! যদি করো তাহলে খুব খারাপ হবে! আমি কী করতে পারি সেটা কিন্তু তুমি ভালো ভাবেই জানো, নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করছি না আমি।
এই প্রস্তাবে আমি রাজি না, তন্দ্রা।
আচ্ছা, তাহলে আর কোনদিনও দেখা করতে হবে না আমার সাথে, ভালো থেকো, বাই।
আচ্ছা আচ্ছা আমি রাজি, নিজের খেয়াল নিও! সামনে আমাদের বংশধর আসবে বলে কথা।।
তন্দ্রা নিজ বাড়িতে চলে এল।
তোর এই বাড়িতে কোনও স্থান নেই। তুই চলে যা! এখন এই মূহুর্তে তোর মতো মেয়ের মুখও দেখতে চাই না।
তন্দ্রার মা দৌড়ে এল –
মেয়েটা এতদিন যাবৎ বাড়িতে আসছে কি শুরু করলা বলো তো! নিজের স্বার্থ নিয়ে কেন পড়ে আছ?
মেয়ের সুখের কথা ভাব না তুমি?
না তন্দ্রা, আমার মেয়ে না! আমার মেয়ে অনেক আগেই মরে গেছে।
মা তুই আয় তো আমার বুকে, তারপর আমি দেখছি!
হঠাৎ তন্দ্রার বাবার মন পরিবর্তন হয়ে গেল!
আমার এতকিছু সম্পদ আর সম্মান দিয়ে কি হবে আমার একমাত্র মেয়ে যদি সুখে না থাকে!
মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরল!
বাবা আই লাভ ইউ!
মা রে রাজ কোথায়? ওকে দেখছি না!
বাবাকে তন্দ্রা মিথ্যে বলল!
রাজ চট্টগ্রামে একটি ট্রেনিং-এ গেছে। বাবা নিউ জব তো! আর তোমাদের নাতি আমার গর্ভে! তাই এইজন্য এখানে চলে আসছি, অনেকদিন ধরেই আসব করে কিন্তু সময় হচ্ছিল না।
অবশেষে তো এলাম! আর রাজ বিয়ের একমাস পরই ট্রেনিং-এ চলে গেছে।
এভাবে অনেকদিন চলে গেল। কেমন যেন অগোছালো কাটছে তন্দ্রার জীবন! সারাক্ষণ কিসের যেন চিন্তা করে। খাবার তার মা খাইয়ে দেয়!
মা তোর মনটা খুব খারাপ? এরকম ভাবে মনমরা হয়ে হয়ে বসে থাকিস কেন? অনেকদিন হল এভাবে দেখছি তোকে! রাজের সাথে যোগাযোগও করিস না, ঝগড়া হয়েছে বুঝি? তোর গর্ভে বাচ্চা, এরকম সারাক্ষণ টেনশন করলে বাচ্চার ক্ষতি হবে! ঠিকমতো তো কোনও কিছু খাসও না, এভাবে চলতে থাকলে হবে?
তন্দ্রা রাজের অপেক্ষাতেই আছে, রাজ আসেনি তাকে দেখতে! ভুলে গেছে নাকি এটা ভাবতে ভাবতে অস্থিরতা বিরাজ করে মনে।
প্রায় তিনমাস হয়ে গেল রাজ এবং তন্দ্রার কোনও যোগাযোগ নেই!
হঠাৎ একদিন রাজ আসলো শ্বশুর বাড়িতে!
তন্দ্রা তার মা আর বাবাকে কোনও ঘটনাই জানায়নি এবং তন্দ্রা রাজকে বলেছিল যে আমি বাবাকে বলছি তুমি ট্রেনিং এ গেছো!
রাজ বাবাকে দেখামাত্রই সালাম দিল, দু’জনের ভিতরে কুশল বিনিময় হল!
রাজ তোমার কাজের কি অবস্থা? কবে এলে!
জ্বী বাবা ভালোই চলছে, এই তো এসেই আপনাদের বাসায় এলাম!
বেহাই মশাই কোথায়?
বাবা দেশের বাহিরে চলে গেছেন, ফিরবেন কিছুদিনের ভিতরেই!
তোহ্ উপরে যাও। তন্দ্রার সাথে দেখা করো!
পিছন থেকে তন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরল!
এই পাগলটি কেমন আছ, এত অভিমান তোমার!
তন্দ্রা রেগে গিয়ে বলল – “একটা ফোন দেননি আপনি! ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপেও কোনও এসএমএস করেননি?
ঐ আমার রাগ অভিমান আপনি ভাঙাতে আসলেন নাহ্ কেন!” আমি কিন্তু অপেক্ষা করেছি তোমার জন্য, তুমি কবে আসবে! তোমার এসএমএস-ফোনের আশায় বসে থাকতাম! কিন্তু তুমি কিছুই করোনি!
লাভ ইউ তন্দ্রা, এই যে এখন এসে গেছি তোমার কাছে। আর কখনওই দূরে যাব না।
মীরার সাথে কথা হয় নাকি সত্যি বলবা!
মীরা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে!
তন্দ্রা স্তম্ভিত হয়ে গেল! মুখ থেকে কোনও আওয়াজ এল না, খাটে বসে পড়ল। কি বলছ তুমি?
হ্যাঁ, ঠিকই বলছি। তন্দ্রার চাচাতো ভাই আমাকে ফোন করে জানিয়েছে বেশ কিছুদিন আগে!
মানুষের জীবন বড় অদ্ভুত! ওর মা আর ও দু’জনই স্বল্প আয়ু নিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছিল।
সত্যি রাজ খবরটা শুনে আমি মর্মাহত! কিছু ভালো লাগছে না গো। তোমাকে হারাতে চাই না কখনও আমি, আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো প্লিজ!
রাজ তন্দ্রাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
রাজ বলল আমিও তোমাকে হারাতে চাই না।
রাজ শ্বশুরকে বলল যে বাবা আমার ট্রেনিং স্থগিত করা হয়েছে তাই আপাতত আপনাদের এখানে থেকে আমার অফিস করব।
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে, তুমি এখানেই থাকো! প্রথম বেবির সময় তো মেয়েরা বাবার বাড়িতেই থাকে।
আরও তিনমাস এভাবে পার হল! তন্দ্রাও বেশ খানিকটা অসুস্থ।
তন্দ্রার বাচ্চা ডেলিভারির সময় বাকি একমাস। কিন্তু, তন্দ্রার অসুস্থতার জন্য তন্দ্রাকে নিয়ে রাজ তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে রওঁ হল। বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হল তন্দ্রাকে!
বাচ্চার অবস্থা বেশি ভালো না বলে ডাক্তার রাজকে জানালো খুবই তাড়াতাড়ি ডেলিভারি করতে হবে!
রাজের অনেক কষ্ট হচ্ছে, কষ্টে পাগলের মত ছটফট করছে রাজ! কি করবে বুঝতে পারল না!
ডাক্তার রাজকে বলে দিয়েছে তন্দ্রাকে না জানাতে, কারণ জানালে তন্দ্রা বেশ টেনশনে চলে যাবে।
তার থেকে নাহ্ জানানোই ভালো।
হঠাৎ তন্দ্রা অসম্ভব অসুস্থ হয়ে পড়ল, কি করবে বুঝতে পারছে না! তন্দ্রার বাবাও খুব কান্না করছে!
সিজারের জন্য তন্দ্রাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকাতে যাবে যাবে, এমন সময় তন্দ্রা কেঁদে দিল এবং রাজকে বলল দোয়া করো আমার যত্ন নিয়ে আমার যদি কিছু হয়ে যায় প্লিজ কখনও আমার সন্তানকে কোনও কিছুর অভাব বুঝতে দিও না!
তোমার কি হবে! কিছু হবে না! সাহস রাখো মনে, তোমার কিছু হবে না ইনশাআল্লাহ্!
তন্দ্রাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হল। একজন ডাক্তার এসে বলল রোগীর যে অবস্থা তাতে যেকোনও একজনকে বাঁচানো আমাদের পক্ষে সম্ভব।
ডাক্তার প্লিজ এভাবে বলবেন নাহ্, দুই জনকেই বাঁচিয়ে দিন!
আল্লাহকে ডাকুন, আমরা সর্বদা চেষ্টা করব।
কিছুক্ষন পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে আসল! দুঃখিত, মাকে বাঁচানো গেল না।।
মেয়ে সন্তান হয়েছে।
রাজ ফ্লোরে পড়ে গেল! আর বলল – আজ সব হারিয়েছি সব।