প্রেম প্রতিক্রিয়া| কঠোর ভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য | দীপঙ্কর পড়্যা| Bengali Stories for Matured
0 (0)

Getting your Trinity Audio player ready...

রাত তখন ন’টা, অফিস থেকে বাড়ি ফিরছে রনিত৷ এমন সময় খুব জোরালো ভাবে গাড়ির কাঁচে এসে পড়ল একটা ইট, ঝনঝন করে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল সামনের কাঁচের কিছু অংশ৷ ইটটি কাঁচ ভেদ করে বাম হাতের কনুই তে গিয়ে লাগলো রনিতের, তৎক্ষণাৎ খুব বেশি আঘাত না লাগলেও লেগেছে অল্প৷ দ্রুত ব্রেক কষে রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে দেখে কেউ কোথাও নেই৷ হতচকিত হয়ে রনিত ভয়ে গাড়ি চালিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কিন্তু তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বারবার অনুভব করল কেউ যেন তাকে অনুসরণ করে আসছে তারই সাথে৷ অফিস থেকে ফিরতেই সৌভিক ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে রনিত কে, সঙ্গে সঙ্গে উফফ্ বলে চিৎকার করে ওঠে রনিত৷ চাপা আর্তনাদ শুনে ছুটে আসে সোহানী৷ ব্যস্ত হয়ে বলল,” কী হয়েছে তোমার?”

 মৃদু হেসে রনিত বলল, “তেমন কিছু নয়, আচমকা গাড়িতে এসে পড়ে একটি ইট, কনুইতে লেগেছে অল্প৷ তখন মনে হয়নি কিন্তু এখন দেখছি অনেকটা ফুলে গেছে, তাই ব্যথা৷”

সোহানির তৎপরতায় কনুইতে ঔষধ ও ‘ভলিনি স্প্রে’ লাগাল রনিত৷ ফ্রেশ হয়ে রাত্রিতে খাওয়ার পর সোহানী কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল রনিত৷ সৌভিক রাতে দাদু,ঠাকুমার কাছে ঘুমায়৷

          হঠাৎ মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেল সোহানীর, ‘নাইট বাল্ব’ এর মৃদু আলোয় পাশ ফেরে চমকে উঠল সে, একী? পাশে শুয়ে আছে সৌরভ! দুই হাতে পাশের মানুষটিকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল মনের অজান্তে৷ নিমেষের মধ্যে সুইচ টিপে আলো জ্বালিয়ে দেখে বিছানায় শুয়ে আছে রনিত৷ সোহানীর চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায় রনিতের, সে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে? সোহানী কিছু বলার আগেই প্রধান গেটের গ্রিলে একটা অদ্ভুত গোঙানির আওয়াজ শুনেই দুজন দরজা খুলে বারান্দায় এল৷ দারোয়ানকে ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে এসে থমকে দাঁড়াল তারা৷ বাগানের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেল বাড়ির দরজার পাশে পড়ে আছে দারোয়ান জগুর রক্তাক্ত দেহ, কেউ যেন প্রতিহিংসার দরুন ফালা-ফালা করে কেটে ফেলেছে৷ টুকরো টুকরো মাথা, চোখ, নাক, কান সবকিছু কেটে ফেলেছে কেউ৷ কসাইও এমন নিষ্ঠুর হতে পারে না৷  জগুর দেহ দেখে সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল সোহানী৷ মা,বাবা ও বাকি চাকরদের ডাকাডাকি করে সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল রনিত৷ সোহানী কে ঘরের মধ্যে রেখে রনিত দুজন চাকরকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে বাগানের মালিকে ডাকতে লাগল৷ বারবার ডেকে কোন সাড়া না পেয়ে দরজায় হাত দিতেই খুলে গেল দরজা, ভিতরে মালী নেই৷ সবাই ভয়ে ভয়ে গেটের কাছে গিয়ে আঁতকে উঠল, মালির দেহ টিকে কেউ মাংস কাটার মতো কুচি কুচি করে বিভৎস অবস্থায় ফেলে রেখেছে৷ পোশাক ছাড়া মালিকে চেনার কোন উপায় নেই৷ যেন কোন ক্ষুধার্থ পিশাচ তার দেহটিকে ক্ষতবিক্ষত করে রক্ত চুষে ফেলে রেখে গেছে৷ রক্তাক্ত হয়ে আছে চারিদিক, চাপচাপ রক্ত মেখে মাটিতে পড়ে আছে মালির নিথর দেহ৷ এরকম অবস্থা আর দেখতে পারেনা তারা, ঘরে ফিরতেই ঘড়িতে ঢং ঢং করে তিনটা বাজল। থানায় ফোন করে রনিত সব কথা খুলে বলল, রনিতের বাড়ি সবার জানা৷ শহরের ধনীতম ব্যক্তি দের মধ্যে অন্যতম ধনী রনিত শহরের ধনীতম ব্যক্তি দের মধ্যে অন্যতম সে৷ সম্প্রতি ব্যবসায় একটু মন্দা দেখা দিলেও বাইরে তার প্রভাব পড়েনি৷ আধ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ এসে মৃতদেহ গুলোকে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে গেল৷ সোহানীর জ্ঞান ফিরেছে, সে এখন একটু সুস্থ৷ ”সাব-ইন্সপেক্টর’ রতন মল্লিক বাড়ির আশেপাশে জোরালো তল্লাশি চালিয়ে কিছু না পেয়ে হতাশ হয়ে রনিত ও সোহানীর বয়ান নিয়ে চলে গেলেন৷ তীব্র আতঙ্কে রাতের বাকি অংশ কেটে ভোর হলো কিন্তু ঊষার আলো ছিল সুহানীর মনের রঙের মতো ধূসর। এতকিছুর মধ্যেও তার চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে সৌরভ৷ এতদিন পরে হঠাৎ এমন মনে হওয়ার কারণ খুঁজে পেল না সে, কলেজের দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়তে থাকে তার৷ রনিত সোহানীর পাশে বসে চিন্তিত ভাবে বলল, “বাড়িতে পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে! আমার দুর্দিনে এরকম ঘটনা কে, কেন ঘটাচ্ছে বুঝে উঠতে পারছিনা৷ আচ্ছা তুমি মাঝ রাতে চিৎকার করে উঠেছিলে কেন? তোমার চিৎকার শুনেই ঘুম ভেঙেছিল বলেই তো পরের ঘটনাগুলো দেখতে পেয়েছিলাম৷”

 সোহানী ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল, “না কিছুনা, একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে ভয়ে চমকে উঠেছিলাম৷”

 রনিত আর কথা না বাড়িয়ে অন্যান্য কাজে মন দেয়৷ সন্ধ্যায় রনিতের কথামতো থানা থেকে দুজন কনস্টেবল বাড়ির প্রধান গেটের কাছে পাহারা দিচ্ছে, বাড়ির চারিদিকে বড় প্রাচীর দিয়ে ঘেরা৷ সাধারণত সে পথ দিয়ে কেউ বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতে পারবে না, তবে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷

 রনিত আজ অফিস যায়নি, রাতও কোনো অঘটন ছাড়াই কেটে গেল৷ পরের দিন সকালে সোহানী জানালার কাঁচের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠল, চিৎকার করে ডাকল রনিতকে৷ হন্তদন্ত হয়ে বাগান থেকে ছুটে এল রনিত৷ এসে দেখে বিছানায় নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বসে আছে সোহানী৷

 কি ব্যাপার! চিৎকার করছো কেন?

 সোহানী জানালার দিকে হাত বাড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল, রক্ত দিয়ে কিছু লেখা আছে জানালার বাইরে অংশে৷ দুজন দ্রুত জানালার বাইরে যেতেই দেখল রক্ত দিয়ে লেখা সোহানীর নাম, পাশে বিপদ সংকেত চিহ্ন আঁকা৷ তার নিচে  একটি তারিখ 03.08.2016. গতকাল দিনের বেলাতে কিছুই ছিল না, তার মানে রাতেই কেউ লিখেছে৷ আবার পুলিশকে ফোন করে সব জানাল রনিত৷ রতন মল্লিক থানা থেকে দ্রুত এসে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ‘ফরেন্সিক ল্যাবে’  পাঠিয়ে দিলেন৷

                কিছু সময় পর রনিত অফিস যাওয়ার কথা বলতেই শিউরে উঠল সোহানী। কোনোমতেই রনিত কে যেতে দিতে চায় না সে৷ কিন্তু অফিস না গেলে চলবে কতদিন! তাছাড়া আজ শহরের বাইরে অন্য একটি অফিসে তাকে যেতেই হবে, তাই অনেক বুঝিয়ে সন্ধ্যের আগে বাড়ি ফিরে আসার আশ্বাস দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিল রনিত৷ সারাটা দিন আতঙ্কে কাটছে সোহানীর, বারবার ফোন করে খবর নিচ্ছে  স্বামী কেমন আছে৷ এইভাবে কেটে গেল সন্ধ্যা পর্যন্ত কিন্তু অফিসের কাজের চাপে সন্ধ্যার আগে ঘর আসতে পারল না রনিত৷ রাত ন’টার সময় অফিস থেকে বেরিয়ে সোহানী কে ফোন করে, বাড়ি যাওয়ার সংবাদ জানিয়ে ড্রাইভ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল সে৷

শহরের বাইরের অফিস থেকে রনিতের বাড়ি ফিরতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা৷ আজ দেড় ঘন্টা অতিক্রান্ত তবুও রনিত বাড়িতে না আসায় সোহানী খুব ভয় পেয়ে বারবার ফোন করতে থাকে৷ কিন্তু ফোন রিসিভ করল না রনিত৷ সৌভিক কে দাদুর কাছে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়ে রনিতের অপেক্ষায় বসে রইল সোহানী৷ এমন সময় গাড়ির বাঁশির শব্দে বারান্দায় ছুটে যায় সোহানী, গাড়ি পার্ক করে কনস্টেবলদের সঙ্গে কথা বলে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলো রনিত৷ সোহানী ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল, ” তুমি ফোন রিসিভ করনি কেন?”

 রনিত জবাব না দিয়ে ইশারায় বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতে বলল৷ বাড়ির মধ্যে ঢুকে সৌভিকের ছবি দেখে থমকে দাঁড়াল রনিত৷ কোন এক মোহে আচ্ছন্ন হয়ে তাকিয়ে থাকে ছবিটার দিকে৷

 “কি দেখছ এমন করে?”  সোহানী বলল৷

 না না কিছু নয়৷ অফিসে অনেক পরিশ্রম হয়েছে সারাদিন, প্রচুর কথা বলতে হয়েছে তাই আমার গলা ধরে গেছে৷ আমি একটু বিশ্রাম নিতে চাই, অফিসে  খেয়ে এসেছি আর খাব না৷

একী! কে কথা বলছে? এটাতো রনিতের কন্ঠস্বর নয়৷ তাছাড়া মুখমণ্ডল রনিতের হলেও চোখদুটি অন্য কথা বলছে৷ ওই কণ্ঠস্বর ও চোখ দুটি দেখে তার মনে হল খুব চেনা, কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছে না৷  এমন সময় রনিত বলল, ” তুমি খেয়ে এসো৷” সোহানী বলল, ” আমি খাব না, খিদে নেই৷”

 রনিত বলল , “ঠিক আছে, এসো শুয়ে পড়ি৷” আবার অবাক হয়ে যায় সোহানী। না খাওয়ার কথা বললে জোর করে খাওয়ানো রনিত আজ এই কথা বলছে! হয়তো খুব পরিশ্রান্ত তাই এমন বলছে , এই ভেবে আলোটা নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল সে৷

 ঘরের মধ্যে অন্ধকার নামার সঙ্গে সঙ্গে রনিত হিংস্র শিকারির মতো ঝাপিয়ে পড়ল সোহানীর উপর৷ তার দেহের পোশাক আলগা করে সমস্ত শরীরে চুম্বনের ফুলঝুরি ফোটাতে থাকে৷ সোহানী বুঝে উঠতে পারেনা রনিতের আজ কি হয়েছে৷ তার সমস্ত শরীর টাকে আইসক্রিমের মতো চুষে চুষে যৌবনের সুধা পান করছে রনিত৷ বক্ষ যুগল হস্তগত করে রনিত বলল, ” বহুদিনের অপেক্ষার অবসান হল আজ।” অবাক হয়ে সোহানী বলল, ” এটা আবার কি ধরনের কথা?”

“না না কিছু নয়৷”

 মিলন কালীন সোহানী বলল, তোমার কনুই কেমন আছে?”

 রনিত বলল, “কেন কী হয়েছে কনুইতে?”

” ইট লেগে ফুলে গিয়েছিল যে?”

 “ও হ্যাঁ অনেকটা ভালো হয়ে গেছে৷ ব্যথা আর তেমন নেই৷”

 কথা না বাড়িয়ে রনিত আবছা আলোতে রাত পরী সোহানীর রসে টইটম্বুর দেহটি তে বেশ আরাম করে যৌন উত্তেজনায় মগ্ন হয়ে গেল৷ দৈনন্দিন রনিতের সঙ্গে মেলামেশার সাথে আজকের শারীরিক মিলনের পদ্ধতিগত ক্ষেত্রে সোহানী অনেক পার্থক্য অনুভব করল৷ তার বারবার মনে হচ্ছে এই মিলনের স্বাদ,আদর ও ভালোবাসা কোথাও পেয়েছে আগে৷

শারীরিক উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার পর বিছানা থেকে উঠে  রনিত বলল, ” ছাদে কি একটা শব্দ হল শুনেছ?

 সোহানী বলল, ” কই না তো৷”

 রনিত বলল, ” তুমি থাকো আমি দেখে আসছি৷” সোহানী জোর করে তার সাথে যেতে চাইলো কিন্তু তাকে না নিয়ে একা একাই ছাদে উঠে গেল রনিত৷ কয়েকটি মিনিট কেটে যাওয়ায় দরজার ঠেলতে গিয়ে বুঝতে পারে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ৷ রনিত কে বারবার ডাকার পরও কোনো উত্তর এলো না৷ সোহানী তার শ্বশুরকে ফোন করে দরজা খুলতে বলল৷ একটু পরে রনিতের বাবা দরজা খুলতেই রনিতের ঘরে ঢুকে আবার ছাদে শব্দের অনুসন্ধান করতে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সব কথা বলল, শুধু গোপন করে গেল শারীরিক মিলনের কথা৷ সবাই মিলে যখন বাড়ির ভিতরে ছাদে রনিত কে খুঁজছে তখন বাড়ির প্রধান গেটের সামনে একটি গাড়ির শব্দ পেয়ে সবাই বাইরে বেরিয়ে এল৷ দেখে পাহারারত কনস্টেবল দের সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ অফিসার কথা বলছেন৷ তারা রতন মল্লিক এর সাথে রনিতবাবুকে দেখে বিস্তৃত হয় বলল, ” কী আশ্চর্য! কিছু সময় আগে উনি বাড়িতে ঢুকেছেন, তাহলে সে কে ছিল?”

এই কথা শুনে রনিত যেন আকাশ থেকে পড়ল, কিন্তু কথা বলার মত অবস্থা তখন তার ছিল না৷ রতন বাবু রনিত কে কনস্টেবলদের সাহায্যে বাড়ির মধ্যে নিয়ে গেলেন৷ রক্তাক্ত অবস্থায় রনিত কে দেখে সোহানী সহ গোটা পরিবার অবাক হয়ে দেখতে থাকে৷ সোহানীর বুকের ভেতর ধকধকানি দ্বিগুণ বেড়ে যায়, এ যদি তার স্বামী হয় তবে তার সঙ্গে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া ব্যক্তিটি কে ছিল? কিছু পরিবর্তন আবশ্য লক্ষ করেছিল সোহানী কিন্তু তখন এত গুরুত্ব দেয়নি৷  বাড়িতে ডাক্তার এসে চিকিৎসা করার আধঘন্টা পরে সেবা শুশ্রুষা করার পর রনিত একটু সুস্থ বোধ করলে রতন মল্লিক বললেন, “আপনার সঙ্গে কি ঘটেছে বলুন৷”

রনিত বলতে থাকে, ” অফিস থেকে বের হতে একটু দেরি হয়ে যায়৷ দ্রুত গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছি হঠাৎ আয়নায় চোখ পড়তেই চমকে উঠি, গাড়ীর পিছনের সিটে ঠিক আমারই মত একজন লোক বসে আছে৷

 ভাবলাম চোখের ভুল, তীব্র গতিতে ছুটে চলা গাড়িটিকে দ্রুত বন্ধ করার জন্য ব্রেক কষার পরে পিছনে ফিরে দেখি সাবলীল ভাবে বসে আছে আমারই মতো একজন৷ কিছু বলার আগেই আমার মাথায় পড়ল ভারী আঘাত, প্রায় অচেতন অবস্থায় ফাঁকা রাস্তায় আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে, এক ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমার হাতে, পায়ে একটু একটু করে আঘাত দিতে থাকে৷ সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে আচমকা আঘাত পেয়ে মাথাটা ঝিমঝিম করতে থাকে৷ ‘সেন্সলেস’ তখনও হয়নি একটু একটু জ্ঞান আছে, সেই ব্যক্তিটি বলল, ” এবার তুই এখানেই পড়ে থাক আমি তোর বাড়ি থেকে ঘুরে আসি৷ যাওযার সময় আমার বুকে খুব জোরালো পদাঘাত করে, তারপরে আমার আর কিছু মনে নেই৷”

 রতন মল্লিক বললেন,” আমাদের কোনো একজন পথচারী ফোন করার পরই আমরা গিয়ে আপনাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি৷ এরপর রতনবাবু থানায় চলে গেলেন৷

              রাত ক্রমশ বাড়ছে, সোহানী তার হারিয়ে যাওয়া দিন গুলোর সাথে বর্তমানে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কোথাও সূত্র আছে বলে মনে করছে৷ আগন্তুক ব্যাক্তিটির চোখ, সৌভিকের দিকে আনমনা হয়ে চেয়ে থাকা, শারীরিক মিলনে পুরানো স্মৃতি রোমন্থন সবকিছুই তাকে পাঁচ বছর আগে ফিরিয়ে নিয়ে গেল৷ সোহানীর স্মৃতিতে ফিরে এল সেই কলেজ যের দিনগুলোর ঘটনা৷ মনে পড়ল তার এক হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনকে৷

              সেদিন কলেজের প্রথম দিন, সঠিক সময়ে কলেজে পৌঁছাতে পারল না ছেলেটি৷ দশ মিনিট দেরিতে প্রফেসর কে অনুরোধ করে বলল, “May l Coming sir?”

 প্রফেসর বললেন, “প্রথম দিনেই দেরি,?”

ছেলেটা বলল, ” গ্রামের রাস্তায় গাড়ি ঠিক সময়ে পাইনি স্যার, তাই দেরি হল৷”

  প্রফেশ্বর বললেন, ” ঠিক আছে, গিয়ে বসো৷”

 স্কুলে সর্বদা প্রথম ব্রেঞ্চে বসে সে৷ তাকিয়ে দেখে ছেলে মেয়েদের জন্য আলাদা ভাবে কোনো ব্রেঞ্চ নেই, সবাই মিলেমিশে বসেছে৷ প্রথম বেঞ্চের কোনে ফাঁকা দেখে বসে পড়ল ছেলেটি৷

 মন দিয়ে প্রথম ক্লাস করার পর পাশের জনকে তাকাতেই চোখ ফেরাতে পারল না সৌরভ৷ যেন অপরূপ সৌন্দর্য বিকশিত এক ফুল ফুটেছে, কি সুন্দর তার দুটি চোখ৷ কাজল প্রলেপ আঁখি দুটির সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিকে আপ্লুত ঠোঁট৷ কেশগুচ্ছ বাম কান আড়াল করে বাহু ও গলার নরম অংশ স্পর্শ করে কোমর পর্যন্ত নেমে গেছে৷ গাত্র খানি দুধে আলতা প্রতিমার মতো, ঠোঁটের বাম পাশে তিল তনয়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে মগ্ন৷ এক পলকের একটু দেখায় রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে সৌরভের সমগ্র দেহ৷ কচি কলাপাতা কালারের শাড়ির সাথে মাননসই ব্লাউজের নিচে কমল ঢেউ খেলানো কোমরের নরম অংশ চোখে পড়তেই শিহরিত হয়ে ওঠে সৌরভের হৃদয়৷ পুনরায় আবার মেয়েটির দিকে তাকাতেই সৌরভের চোখে পরলো মেয়েটির চোখ, দ্রুত মুখ ফিরিয়ে অন্যত্র তাকানোর ভান করতেই মৃদু হেসে মেয়েটি বলল, “তোমার নাম কি?”

 হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল সৌরভের, তার সাথে প্রথমে কথা বলেছে মেয়েটি! তার নাম জানতে চাইছে! নিজেকে মোহের বেড়াজাল থেকে বের করে স্বাভাবিক হয়ে বলল, ” আমার নাম সৌরভ পাল৷ তোমার?”

“সোহানী রায়৷”

দুজনের আলাপচারিতা শুরু হয়েছে এমন সময়ে পরের ক্লাসের স্যার চলে এলেন, পরিচয়পর্ব মাঝপথেই থমকে গেল তাদের৷ পরের দিনও একই জায়গায় বসল দুজন। পরপর কয়েক সপ্তাহ অবস্থান পরিবর্তন না হতেই দুজনের মধ্যে খুব ভালো সখ্যতা গড়ে উঠল৷ ক্লাসের অন্যান্যদের থেকে যথেষ্ট হ্যান্ডসাম সৌরভ৷ ফর্সা, লম্বা, চাপ দাড়ি, পড়াশোনাতেও খুব ভালো৷ দু চারটে মেয়ের মনের কোণে উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করেছে সে৷ কিন্তু সৌরভ সোহানীর প্রেমে অন্ধ, তবে বলতে পারেনি৷ দুজনের সম্পর্ক ধীরে ধীরে গভীরতম পর্যায়ে পৌঁছাতে থাকে, চোখে চোখ পড়লে এখনও সৌরভ বিস্মিত হয়ে যায়, রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে সমগ্র শরীরটা৷ দুজন টিফিন ভাগ করে খায়, বায়োলজি অর্নাসের নোটস ভাগ করে নেয়, কখনো ফোনে অথবা মেসেজে মনের কথাগুলো ভাগ করে নেয় তারা৷ তবুও সৌরভ, সোহানী কে না দেখে এক মুহূর্তও থাকতে পারেনা৷ দুদিন পর “ভ্যালেন্টাইনস ডে” সৌরভ মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে সেদিনই জানাবে সোহানীকে তার মনের কথা৷ সে জানে না সোহানীর মনে তার জন্য কোন ‘ফিলিংস’ আছে কিনা তবুও সে মনস্থির করে ফেলেছে মনের অভ্যন্তরের লুকিয়ে থাকা হৃদয়ের গোপন কথা থাকে শোনাবে৷ কলেজের পিছনে বাগানে নির্জনে দুজন বসে গল্প করছে, সৌরভ ব্যাগ থেকে একটি গোলাপের স্তবক বের করে সোহানীর হাতে ধরিয়ে বলল, “Sohani I Love you,I want to marry you.”

কথাটি বলার পর সাহস করে সোহানীর চোখের দিকে তাকাতে পারলনা সৌরভ৷ সে জানে না প্রতিক্রিয়া কি আসতে পরে,তাই মাথা নিচু করে বসে রইল৷ সোহানী দুই হাত দিয়ে সৌরভের মাথাটি উপরের দিকে তুলে বলল, ” Same to You, I love you Sourav.”

এতদিন সময় লাগলো তোমার এই কথাটা বলতে, আমি প্রত্যেকটি মুহূর্ত অপেক্ষা করেছি কখন তুমি এই কথাটা বলবে৷ দুই হাত প্রসারিত করে দুই বাহুর মধ্যে জড়িয়ে ধরল সোহানী, সৌরভও জড়িয়ে ধরল তাকে৷ মিনিট খানিক জড়িয়ে ধরার পর সুহানীর সুন্দর মুখের নরম ঠোটের স্পর্শ পেল সৌরভ৷ প্রায় পাঁচ মিনিট একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চুম্বনের বন্যা বইয়ে দেওয়ার সময় সৌরভের ঠোঁটও লাল হয়ে গেল৷ কিছু পরে তাদের হুশ ফিরল, পরের ক্লাস আছে৷ দুজনই স্বাভাবিক হয়ে ক্লাসে চলে গেল৷ এরপর থেকে শুরু হল সৌরভ প্রেমের কাহিনী৷ কলেজের খুব কাছেই সোহানীর বাড়ি তাই সৌরভ গ্রাম থেকে কলেজের পাশে একটি মেস ভাড়া করে থাকল৷ ছোট শহরের অলিগলি, পার্ক, রেলস্টেশন, নদীর পাড়, স্টেডিয়াম কোন কিছুই তাদের অজানার মধ্যে রইলো না৷ সমস্ত জায়গায় একসাথে দুজন ঘুরে ঘুরে ফুচকা খায়, আইসক্রিম খায়, সিনেমা দেখে এভাবেই কেটে যায় একমাস।

         সেদিন রবিবার খুব ভোরে সৌরভের ফোনটা বেজে উঠল, আধো ঘুমন্ত অবস্থায় সৌরভ হ্যালো বলতেই উল্লাসিতা কন্ঠে সোহানী বলল, ” মা-বাবা কলকাতা গেল একটি বিশেষ কাজে, তুমি এক্ষুনি আমার বাড়ি চলে এসো৷ একটা সারপ্রাইজ আছে।”

সৌরভ অবাক হয়ে বলল, “এত সকালে?”

  সোহানী জোর করাতে সৌরভ ফ্রেশ হয়ে সাইকেল নিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হল৷ বাড়ির সামনে গিয়ে দেখে দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে সেহানী৷ এই ভোরে প্রতিবেশীদের কারোরই ঘুম ভাঙ্গেনি, সৌরভ দেখল শুধু লাল সালোয়ার গায় এলোমেলো চুলে তার দিকে তাকিয়ে দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে সোহানী। শরীর আশি শতাংশ ফাঁকা অংশ চুম্বকের ন্যায় আকর্ষণ করে করতে থাকে সৌরভকে৷ তার সমগ্র দেহে বিদ্যুৎ খেলে গেল নিমিষে। সোহানীর মুখে তাকাতেই দেখে তার গোলাপী ঠোঁটগুলো হাতছানি দিয়ে ডাকছে, আর নিজেকে সামলাতে পারল না সৌরভ ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সোহানীকে৷  ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চুম্বনের আঁকিবুঁকি কাটতে লাগল তারা৷ বহুদিনের অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা হাতের নাগালে পেয়ে সোহানীর দেহটিকে টেনে নিয়ে গেল নরম বিছানায়৷ সমস্ত শরীরে পোশাক আলগা করে দীর্ঘক্ষণ ধরে নিজের সেরাটা দেওয়ায় নিমগ্ন হয়ে থাকল দুজন৷ সৌরভের দাঁড়়ির ভালোবাসার ছোঁয়ায় সোহানীর যৌন উদ্দীপনা বাড়িয়ে দিতে থাকে৷ জীবনে প্রথমবার এত কাছে এসেছে তারা, শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গে স্পর্শ করে সাধ পূরন করে সৌরভ৷    রঙ্গিন ফুল যেমন পতঙ্গদের আকৃষ্ট করে তেমনই নারীর বক্ষ জোড়া পুরুষকে আর্কষণ করে৷ সোহানীর মতো পরীর সুন্দর, নরম বক্ষ জোড়া তার ব্যাতিক্রম নয়৷ সোহানীর নরম শরীর টা কে আত্মসাৎ করে অতৃপ্ত চাহিদা পূরণ করে দুজন খুব খুশি৷

সোহানীর কোমল দেহের উপর সৌরভ শুয়ে থেকেই বলল, ” তুমি এই কারণে আমায় এত সকালে ডেকে এনেছ ৷”

 সোহানী মুচকি হেসে যেন তার কথাতেই সম্মতি জানাল। বিছানা থেকে উঠে দুজন পোশাক পরে স্বাভাবিক হয়ে চেয়ারে বসে কফি খেয়ে নিল৷ তারপর সৌরভ চলে গেল তার মেসে৷ মাসখানেক সব স্বাভাবিক ভাবেই চলল হঠাৎ একদিন সোহানী কলেজে অনুপস্থিত, ফোন করতে সোহানীর ফোন বন্ধ৷ সেদিন ক্লাস থেকে বেরিয়ে অনেকবার চেষ্টা করেও ফোনে পেল না তাকে৷ বান্ধবীদের দিয়ে খবর নিয়ে জানল সে তার মামার বাড়ি গেছে৷ সৌরভ আর থাকতে পারে না, মামার বাড়ি যেতেই পারে তাহলে ফোন কেন বন্ধ ? তাকে একবারও কিছু জানাল না কেন? এইসব প্রশ্ন তাঁর মাথায় ঘুরতে থাকে সর্বদা। দিন পনেরো সৌরভ উন্মাদের মতো ঘুরে বেড়ালো এদিক সেদিক, অনেক চেষ্টা করেও সোহানীর ঠিকানার কোন হদিস পেল না। কিছুদিনের মধ্যেই সবার জীবন থেকে মিলিয়ে গেল সৌরভ, কেউ আর তাকে কোথাও দেখতে পায়নি। আজ প্রায় পাঁচ বছর পরে সৌরভের স্মৃতিগুলো সোহানী স্মৃতিতে উঁকি দিতে থাকে বারবার।

এমন সময় সৌভিক এসে মা, মা বলে জড়িয়ে ধরে সোহানীকে৷ সৌভিক একদম সৌরভের মতো দেখতে।

এবার জানালার কাছে লেখা 03.08.2016 তারিখ টির কথা মনে পড়ল সোহানীর৷ যেদিন সৌরভ ও সোহানী মা,বাবার অনুপস্থিতিতে শারীরিক মিলনের অনুভূতি পেয়েছিল সেই তারিখ৷ সেই মিলনের ফলেই গর্ভে আসে সৌভিক, মা-বাবা জানতে পেরে মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল৷ তার কয়েক দিন পরে ধনীর পুত্র রনিতের সঙ্গে সোহানীর জোর করে বিবাহ সম্পন্ন করেছিল৷ তাই সৌরভের সঙ্গে আর দেখা হয়নি সোহানীর৷ এবার একশো শতাংশ নিশ্চিত রনিতের ছদ্মবেশে আশা আগন্তুক,রনিতের উপর হামলা করা, বাড়িতে নৃশংস হত্যা এসবের মূলে রয়েছে সৌরভ৷ সৌরভ ফিরে এসেছে তাই সোহানীর  উপর বদলে নিতে চায়৷

 এক সপ্তাহ নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে কেটে গেল, পরিবারের উপর নেমে আসা কালো অন্ধকার কেটে গেছে মনে করলো সবাই৷ সৌরভের কথা বলব বলব করেও রনিত কে বলতে পারেনি সোহানী৷ কিভাবে বলবে! পাঁচ বছরের বিশ্বাস মুহূর্তেই ভেঙ্গে দিতে পারবে না সে৷ তাই চুপ করে রইল পরিস্থিতি জন্য, অপেক্ষাই শ্রেয় বলে মনে করল সে৷ আবার স্বাভাবিক জীবনে ছন্দে ফিরল রনিত, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে আবার কাজে মন দিয়ছে, বাড়িতে নতুন তিন জন কাজের লোক নিয়োগ করা হয়েছে, তারা বাড়ির সমস্ত কাজকর্ম করে ও বাড়ি পাহারা দেয়৷

 আগের থেকে বেশি সচেতন থাকতে হবে তাদের কে৷ সোহানী তিনজনের কাউকেই দেখে নি এখনও, বাগানের মালি কাজ করছিল সোহানী ফুল তুলতে গিয়ে মালিকে দেখে ঘাবড়ে গেল ৷ কোথাও যেন দেখেছে এই লোকটিকে৷ বয়স খুব বেশি নয় তবে পোশাক, ,দাঁড়ি, গোঁফ, চুল সব মিলিয়ে মধ্য বয়স্ক লোকের মত লাগছে৷ কিন্তু চোখ দেখে সে ভয় পেয়ে ঘরে ফিরে এল৷ এতদিন তা খেয়ালই করেনি সোহানী৷ সবার অলক্ষ্যে সুহানী অনুসরণ করে মাল কে, সে দেখে মালি সবসময় তার ঘরের জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে৷ সোহানীর অবুঝ মন কল্পনা করে এই মালি সৌরভ নয়তো! আরও এক সপ্তাহ কেটে গেল রনিত অফিসে চলে গেছে, সৌভিক বাগানে খেলছে মালির সঙ্গে৷ তা দেখতে পেয়ে সোহানী ছেলেকে দেখে নিল৷ বলল, ” তুই এর পর মালির সঙ্গে সঙ্গে মিশবি না৷”

 সৌভিক বলল, ” জানো, মা মালি কাকু টি আমায় খুব ভালোবাসে৷ আমার সঙ্গে খেলে, গান শোনায়, গল্প বলে-“

 ধমক দিয়ে সোহানী বলে,” আর যেন কখনও তার কাছে তোকে যেতে না দেখি৷”

চার বছরের বাচ্চা ছেলে কেঁদে উঠে ধমকে ফলে৷ দুপুরে হঠাৎ জানালা দিয়ে একটা কাগজ দুমড়ানো-মুচড়ানো অবস্থায় সোহানীর বিছানার ওপর পড়ল৷ জানালা দিয়ে দেখার চেষ্টা করল কেউ নেই,কাগজটা খুলে সোহানী পড়তে শুরু করল-

         আমার সাথে প্রতারনা করে যদি তুমি ভাবো সুখে থাকবে সেটা তোমার ভুল ধারনা৷ আমি তোমায় ছেড়ে এতদিন খুব কষ্ট ভোগ করেছি, এবার তোমায় কাছে পেতে চাই৷ আশা করি তুমি আমায় চিনতে পেরেছ৷ আজ রাত 2 টার সময় বাড়ির ছাদে আমার সাথে দেখা করবে ৷ যদি তুমি তোমার শ্বশুর, শাশুড়ি ও স্বামীকে বাঁচাতে চাও তবে আমার কথা শুনে চলবে৷ না এলে তোমার জন্য ভয়ানক খবর সব প্রস্তুত হয়ে আছে৷

                                                 ইতি

                                   তোমার হারিয়ে যাওয়া

                                             সৌরভ

রাত তখন একটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট, বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল সোহানী৷ এতক্ষন শোয়ার ভান করে ছিল৷ রণিত ঘুমাতেই দরজা খুলে বেরিয়ে ছাদে চলে যায় সে ৷ পৌছে দেখে ছাদের এক প্রান্তে একটি কালো মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে৷ মৃদু স্বরে ডাকল সৌরভ…

পেছন ফেরে তাকায় মূর্তিটি৷ চাঁদের জ্যোৎস্নায় আলোতে সোহানী চিনতে পারল এক সময়ের তার খুব প্রিয় মানুষ সৌরভ কে৷ আজকে সে কোন ছদ্মবেশে আসেনি, সৌরভ ছুটে এসে সোহানীকে জড়িয়ে ধরতে যাবে এমন সময় দু পাপিছিয়ে গেল

 সোহানী৷

 বলল, ” কি বলার জন্য তুমি ডেকেছো?”

 সৌরভ কাতর কন্ঠে বলে, “তুমি আমাকে ভুলে গেছ! সুখের সংসার করছো৷ আমি কিন্তু তোমায় ভুলতে পারিনি, তুমি আমার সাথে প্রতারণা করেছ, তার কারন জানিনা৷ তাই মাঝে মাঝে আমার কাছে তোমাকে আসতে হবে৷ আমার কথা না শুনলে আমি সমস্ত কথা রনিত কে জানিয়ে দেব৷”

 তারপর সোহানীর কাছে  জানতে চায় তার প্রতি এমন ব্যবহার করার কারণ কি৷ সোহানী পাঁচ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার সারসংক্ষেপ জানাল৷ কিন্তু মাঝে মাঝে রাত্রিতে সৌরভের কাছে আসার কারণ জানতে চাইলে সৌরভ বলল, ” তুমি আমার ছিলে, , ও থাকবে৷ তাই মাঝে মাঝে রাত্রিবেলা আমার আমার হৃদয়ের ও শরীরের চাহিদা পূরণ করতে হবে তোমাকে৷ তোমার শরীরের স্পর্শ পাওয়ার জন্য আমার শরীর ব্যাকুল হয়ে আছে৷”

 মানেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না সোহানীর৷ তাই অস্বীকার করে চলে যাচ্ছিল,

সৌরভ বলল আরও একটা অঘটনের জন্য প্রস্তুত থেকো। সৌভিক আমার সন্তান, এ কথাটিও স্মরনে রেখো। সোহানী দুচোখে অশ্রু মেখে চলে গেল৷

          প্রভাতের সূর্য উঁকি মারছে আকাশে, এমন সময় চিৎকার-চেঁচামেচিতে রনিত ও সোহানীর ঘুম ভেঙ্গে গেল৷ তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখে বারান্দায় উপরে পড়ে আছে রনিতের বাবার রক্তাক্ত মৃত দেহ৷ যেন কোনো বন্য জন্তু ক্ষুধার্ত অবস্থায় আত্মসাৎ করেছে দেহটিকে৷ শরীরের বহু জায়গায় গর্ত করে মাংসপিণ্ড তুলে নিয়েছি কোনো এক শয়তান, ঘাড় মটকে ঘুরিয়ে দিয়েছে অন্যদিকে৷ কেউ যেন বহু খন্ডিত করেছে তার দেহটিকে৷ এইরকম হত্যা বন্য জন্তু বা মস্তিস্ক বিকৃত মানুষ ছাড়া এ কাজ করতে পারেনা৷ রনিত  এই দৃশ্য সহ্য করতে পারেনা, ধপ করে বসে পড়ে মাটিতে৷ পুলিশ এসে দেহটি নিয়ে যায় ময়না তদন্তের জন্য৷ পরিবারের সমস্ত লোকজন এই ঘটনায় স্তব্ধ কিন্তু সোহানী দেখতে পেল মালির মুখে যেন মুচকি হাসি। সে যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার ফলাফল পেলে তো ? পুলিশ এসে সমস্ত ঘরের তল্লাশি করল, সবাইকে জেরা করল কিন্তু কিছু লাভ হল না৷ কারোর কাছে খুনের কোন মোটিভ নেই, খুনের কোন প্রমাণ নেই, প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান নেই, ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই,

 আবার এক সপ্তাহ কেটে গেল দুপুরবেলা জানালা দিয়ে আবার একটি কাগজ টুকরো সোহানীর বিছানায়৷ লেখা আছে আজ রাত্রি দুটোর সময় ছাদে আসবে৷ আজও আগের দিনের মতো কাউকে কিছু না জানিয়ে সোহানী ছাদে গেল৷ গিয়ে দেখে তার এক সমযের ভালোবাসা সৌরভ সেখানে অপেক্ষারত৷ আধো ত্রাসে আধো উল্লাসে সোহানী সৌরভের কাছে গেল, কারন এই সৌরভ তার প্রেমিক নয়৷ এর এখন

 মস্তিষ্ক বিকৃত বিভৎস হত্যাকারী৷ কাছে যেতেই সৌরভ জড়িয়ে ধরল তাকে, একাধীক চুম্বন দিয়ে একের পর এক শারীরিক বস্ত্রাদি উন্মোচন করে নিজের কাঙ্খিত চাহিদা পূরণের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল৷ সোহানী আজ কাঠের পুতুল নেই তার শারীরিক চাহিদার উদ্যোম৷ নেই ভালোবাসা অনুভূতি৷ কেবল মাত্র দায় সারানোর প্রক্রিয়া যন্ত্র মাত্র৷ সৌরভ যেন কোন যৌনপল্লীতে ভাড়াটে যৌনকর্মীর কাছে এসছে , যত দ্রুত সম্ভব নিজের কাজ শেষ করে চলে যাওয়ায় তার আসল লক্ষ্য৷ আজও ধীরে ধীরে নরম শরীরে বস্ত্র সরিয়ে সুহানের তুলতুলে নরম শরীরটার জোর করে আত্মসাৎ করছে সৌরভ৷ যৌন উদ্দীপনা পূরন করার পর হিংস্র সৌরভ চলে গেল৷ যাওয়ার সময় বলে গেল আবার অপেক্ষায় রইলাম৷

        এভাবেই কাটতে থাকে বেশ কিছুটা সময়, রনিত আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছে৷ মন থেকে মুছে গেল বাড়িতে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক, বীভৎস কান্ড গুলোর কথা৷ প্রায় তিন মাস পর আগের ঘটনা গুলোর মত স্বামী কে না জানিয়ে সোহানী ছাদে উঠে গেল৷ সৌভিক ঠাকুরমার ঘর থেকে দেখে ফেলেছে মা কে ছাদে যেতে, কিছু সময় পরে চুপি চুপি ছাদে গিয়ে দেখে সোহানী অপর একজনের সঙ্গে কথা বলছে৷ সে আবার ফিরে এসে ঘুম ভাঙ্গালো বাবার৷ সব শুনে রনিত চুপিসারে ছাদে উঠে দেখে উদ্যোম যৌন উন্মাদনা চলছে, কেউ যেন ধর্ষণ করছে সোহানীকে৷ হুংকার দিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ায় রনিত৷

আঘাত প্রাপ্ত সাপের মতো হঠাৎ করে রনিতের উপস্থিতিতে সৌরভ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, রাগে ফোঁসফোঁস করতে থাকে সে৷ যৌনলীলা মাঝপথে বন্ধ করে, সোহানীর নরম বক্ষ যুগল থেকে হাত সরিয়ে, ঢেউ খেলানো বস্ত্রহীন দেহটির উপর থেকে নিজেকে সরিয়ে উঠে দাঁড়াল৷ নিরুপায় সৌরভ ছাদ থেকে লাফিয়ে পালাতে যাবে কিন্তু  সঙ্গে সঙ্গে

রনিত বাধা দিল ৷ কিছু সময় নিজেদের ধস্তাধস্তি চলল। সৌরভ কোনো রকম নিজেকে যুক্ত করে ছাদ থেকে ঠেলে দেয় রনিত কে৷ তারপর সে ছুটে পালায়৷ সোহানী সৌভিক কে নিয়ে নিচে গিয়ে অনেক খুঁজল রনিত কে ৷ না পেয়ে মনের মর্মাহত হয়ে ঘরে ফিরে গেল ৷ সারারাত অপেক্ষা করল কিন্তু রনিত ফিরলো না৷

        ঊষার আগমনে চারিদিক আলোকময় হয়ে উঠল৷ একজন চাকর বাগানের উল্টো দিকে গিয়ে চিৎকার করে ডাকলো সবাই কেl সবাই গিয়ে দেখে একটি মরা গাছের অবশিষ্ট কান্ডে ঝুলে আছে রনিতের রক্তাক্ত মৃত দেহ৷ ঘটনাস্থলে সবাই উপস্থিত কেবল মাত্র বাগানের মালি নেই ৷

                            সমাপ্ত

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post অপেক্ষায় মোড়ানো ভালোবাসা| কঠোর ভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য | সুলতান মোহাম্মদ শাহরিয়ার নিলয়| Bengali Stories for Matured
Next post মোহর গড়ের বিভীষিকা| কঠোর ভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য | -| Bengali Stories for Matured