মহাজাগতিক| প্রেমে পড়া বারণ | সাকিবুর রহমান রোহান| Bengali Love Story
5 (1)

আমি সৌন্দর্যকে দেখতে পারি এক প্রকার তীব্র অনুভূতি নিয়ে দেখতে পারি কিন্তু এই দেখতে পারাটাই আমার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে

রবীন্দ্রনাথের লেখা এখানে একশতে একশ মিলে গেছে

“বাজিল বুকে সুখের মতো ব্যথা

সুন্দর দেখলেই আমি মোহে আটকে যাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি তবে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারি না মাথা ধরে আসে একদিন হয়েছে কী কোনও এক জ্যোৎস্না রাতে বিলের জলে নৌকা ভাসিয়েছি সাথে কয়েকজন বন্ধু আর মাঝি কি সুন্দর চাঁদের রং! কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ কোত্থেকে মেঘ এসে বৃষ্টি ঝরতে শুরু করল মেঘের আড়ালে জ্যোৎস্না ঢাকা পড়ে গেল কিন্তু আমার মনে হতে থাকল জ্যোৎস্না বৃষ্টি বেয়ে আমাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে যেন প্রতিটি বিন্দুই রূপালী জলকণা তারপরে বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যথা করতে শুরু করল শ্বাস নিতে কষ্ট লাগছিল কোথায় জ্যোৎস্না, কোথায় কি, চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালেই আবিষ্কার করলাম ডাক্তাররা আমাকে নিয়ে পাগল হওয়ার উপক্রম আমার কোনও রোগ খুঁজে পাওয়া যায় না, তবুও মাঝে মধ্যেই এমন অজ্ঞান হয়ে যাই কখনও বৃষ্টি দেখে, কখনও জ্যোৎস্নায় ভিজে আবার কখনও মেঘ ছুঁয়ে কয়েকজন সাইকিয়াট্রিস্টও দেখেছেন আমাকে তারা অবশ্য বলেন সবই নাকি মনের অসুখ

কিন্তু আমি তো জানি আমার সমস্যাটা কি আমি সুন্দরকে দেখতে পারি কিন্তু সহ্য করতে পারি না ব্যাপারটা আমার জন্য খুবই লজ্জাজনক অন্যরা সুন্দরকে দেখতে জানে না আর আমি দেখে সহ্য করতে পারি না

যদিও আমার জীবনের প্রথম কুড়িটি বসন্ত আমি সৌন্দর্যকে না দেখেই কাটিয়ে দিয়েছি আমাকে সুন্দরকে দেখা শিখিয়েছিল নিলু মানে নিলুফার

ওকে যেদিন প্রথম দেখি সেদিনের কথা আমার আজও মনে আছে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে আমি দৌড়ে গিয়ে একটা কড়ই গাছের নিচে দাঁড়িয়েছি ততক্ষণে অবশ্য কাক-ভেজা হয়ে গিয়েছিলাম বিরক্ত চোখে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি তখন প্রথমবার আমি নিলুকে দেখি সে রিক্সার হুড তুলে বৃষ্টিতে ভিজছে আমার দৃষ্টি আটকে ছিল বারবার মনে হচ্ছিলো এই বুঝি রিকশাটা আবার ফিরে আসবে নিলুকে আরও একবার দেখতে পাব সাধারণত শিউলি ফুল কেউ খোঁপায় পরে না নিলু সেদিন পরেছিল আহ্! কী সুন্দরই না লাগছিল নিলুকে

বালিকার সাথে আমার দ্বিতীয় সাক্ষাৎ হয় ছোট খালার বাসায় রুনু খালার বাসার পাশের বাসাটাই নিলুদের বাসা আমি ওকে চিনতে এতটুকুও ভুল করিনি সব সময় যেন ঠোঁটে হাসি লেগে থাকত সেদিন সারাক্ষণ আমি ভ্যাবাকান্তের মতো ওকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছিলাম এত কিছুর খেয়াল ছিল না বুঝতে পারার পরে খুবই লজ্জা পেয়েছিলাম নিজেকে একটা গাধা মনে হচ্ছিল

নিলুর রোদ ভালো লাগে না একটু রোদ করলেই নিজেকে ছায়ায় লুকিয়ে ফেলত মেঘের সাথে আবার খুব সখ্যতা ছিল তাই মেঘ দেখলেই দাঁড়িয়ে যেত আমার খুব ইচ্ছে ছিল কোন এক অপরাহ্ণে শ্যামলা রঙের পেঁজা মেঘের নিচে বসে নিলুর হাতে একগুচ্ছ কাঠগোলাপ তুলে দেব

কোনও এক বর্ষাকালে আমি প্রথমবার নিলুকে আমার ভালোবাসার কথাগুলো বলেছিলাম কাঁপা কাঁপা হাতে ওর দিকে একগুচ্ছ কদম বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলাম – ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি সে আমার হাতের ফুল ছুঁয়ে দেয়নি কোন কথাও বলেনি শুধু দৌড়ে ছাদ থেকে নিচে চলে গিয়েছিলো আমি বেশ কিছুক্ষণ ঘোরলাগা চোখে তাকিয়ে থাকলাম কদম-গুচ্ছের দিকে

পরেরদিনই আমি বাসায় ফিরে এসেছিলাম ফেরার আগে একবারের জন্যও নিলুর চোখে চোখ মেলাইনি প্রত্যাখ্যানের বিষাদের চেয়ে ওর সামনে দাঁড়ানোর ভয় আমাকে গ্রাস করে নিয়েছিল তারপর বেশ কয়েকটি বর্ষাকাল কেটে গেল বেশ ব্যস্ত সময় পার করলেও আমি নিলুকে পুরোপুরি ভুলে যাইনি হৃদয়ের চিলেকোঠায় অনিয়মিতভাবে অর্ঘ্য নিবেদন চলত

নিলুর সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল আর এক বর্ষায় ছোট খালার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে দেখা হওয়া তখন বেশ তন্বী হয়েছিল মেয়েটি প্রতিটি স্তরে স্তরে যৌবনের কলরব সেঁটে ছিল সব সময় চোখ নাচিয়ে কথা বলত শুধু আমি সামনে এলেই চুপ হয়ে যেত পশ্চিমা আকাশে সূর্য ডুবে গেলে যেমন আবছা লাল লজ্জা ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি ঠিকরে পড়ত মেয়েটির চোখে, মুখে, চিবুকে আহ্! কী সুন্দর চাহনি!

সেদিন পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল বিপত্তি ঘটলো পরদিন কার যেন পিপাসা মিটেছিল অতঃপর নিলুর জীর্ণ তনুকে খড়ের স্তূপের পাশে পড়ে থাকতে দেখা যায় তার সেই স্তরে স্তরে সজ্জিত যৌবন ছিল ক্ষত-বিক্ষত সেদিন আবার আমার দৃষ্টি আটকে যায় আমি নিলুকে নিখুঁতভাবে দেখি তার কমলালেবুর কোয়ার মত কোমল অধর নির্লিপ্ততায় ছেয়ে গেছে আর শুকনো রক্তগুলো যেন অস্তমান লালিমা আমি মনে মনে বলি, ইশ! কপালে লেগে থাকা রক্তগুলো যদি আরেকটু বাম দিকে সরে কতথাকত তাহলে অবিকল লাল টিপের মতো লাগত তখন আমি জীবনে প্রথমবারের মতো সুন্দরকে দেখতে শুরু করি নিলুকে মনে হচ্ছিল লাল আবিরের ছাপানো এক মহাজাগতিক পরী সেই সৌন্দর্যের উৎপত্তি পৃথিবী-লোকে না, অন্য কোথাও রাতে এতকিছু বুঝতে পারিনি মাথায় কোত্থেকে যেন এক হিমশীতল খুন এসে চেপে বসেছিল কোথাও আমি কখনও নিজের মধ্যে নিলুর জন্য ঘৃণা খুঁজে পাইনি? তখনো পাইনি এখনও পাই না তবে কি আমার ভালোবাসাটাই ভুল ছিল? ভুল নিয়মে, ভুল শৃঙ্খলে তাই ভালোবেসেই ভুল করেছি কিন্তু কেন? আমি আর সহ্য করতে পারি না এত সুন্দর আমার সহ্য হয় না মাথা ঘুরতে শুরু করে আর আমিও লুটিয়ে পড়ি অবলীলভাবে মাটিতে মিশে যাই

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 1 Average: 5]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post অপেক্ষা| প্রেমে পড়া বারণ | সিরাজাম বিনতে কামাল| Bengali Love Story
Next post হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে| প্রেমে পড়া বারণ | সূর্য ভট্টাচার্য| Bengali Love Story