শূন্য স্মৃতি| প্রেমে পড়া বারণ | তাসফিন মাহমুদ অমি| Bengali Love Story
0 (0)

আজ দিনটা ঠিক অন্যান্য দিনের মতো গেল না, সারাটা দিন খুব পরিশ্রম হয়েছে এত লোকজন বসে আছে যে একটা মাছিও শান্তিতে উড়তে পারবে না হঠাৎ দেখলাম, ঐ কোণায় একটা চেয়ার ফাঁকা পড়ে আছে আমি আমার মানিব্যাগ হাতে নিয়েই একটি জোরে হাঁটা ধরলাম এতক্ষণ কি আমি চেয়ারটা খেয়াল করলাম না…হয়তো ফুল গাছের টবের জন্য চোখে পড়েনি চেয়ারটার পাশের চেয়ারে একজন বসে আছেন মেয়েটির বয়স ১৮/১৯ বছর হবে বোধ করি

“আ, এক্সকিউজ মি, ক্যান আই সিট ডাউন হিয়ার?” আমি বললাম মেয়েটি বলল, “ইয়েস ইউ ক্যান, বাট একচুয়েলি মাই ফাদার ইস এট দ্যা ডক্টরস রুম, সো আফটার হিস কামিং ইউ হ্যাব টু লিভ দ্যা চেয়ার” বলল মেয়েটি আমি বললাম, “ওকে” প্রায়, ৫ মিনিট হয়ে গেল বসে আছি হঠাৎ, আমার মাথায় একটা কথা খেলে গেল…আমি মেয়েটিকে প্রশ্ন করলাম…” আপনাকে একটা প্রশ্ন করছি, কিছু মনে করবেন না দয়া করে, আপনার বাবার ডাক্তারের রুম থেকে বের হবার পরও বসার কথাটা কেন বললেন?” মেয়েটি উত্তরে বলল, “আমার বাবা এখানকার দু’জন ডাক্তারের পেশেন্ট” মেয়েটি হঠাৎ, আমায় প্রশ্ন করল, “আপনি কেন এসেছেন এখানে, কাউকে তো আপনার সাথে দেখছি না” আমি হেসে উত্তর দিলাম, “আসলে, আমি এখানে এসেছি আমার এক বন্ধুর বাবাকে দেখার জন্য, ওঁওঁর গতকাল একটা বড় অপারেশন হয়েছে আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে তবে আমি এখানে কেন…আসলে আমার বন্ধু এখানে আমাকে রেখে কোথায় যেন গেছে, আমায় বলে যায়নি বলেছে এখানে কোথাও বসে থাকতে, ওর আসতে আধ ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে তাই বসে আছি” “ওহ”, মেয়েটি বলল হঠাৎ, আমার ফোনটা বেজে উঠল দেখলাম সায়ন্ত ফোন দিয়েছে, ওর বাবাকেই দেখার জন্য এসেছিলাম আমি কলটা রিসিভ করলাম

হ্যাঁ, সায়ন্ত বল “আমি তো হসপিটালের নিচে দাঁড়িয়ে আছি, তুই চলে আয় নিচে” আমি বললাম, “ওকে আসছি” এই বলে ফোনটি রেখে দিলাম

আমি পাশে বসে থাকা মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললাম, “আমার ডাক পড়েছে, ভালো থাকবেন, আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগল” যাচ্ছি, ঠিক এমন অবস্থায় মেয়েটির বাবা এল রুম থেকে দেখি ওর বাবার একা হাটতে কষ্ট হচ্ছে, মনে হয় পায়ে কোনও একটা ইনজুরি আছে মেয়েটির বাবা ওর কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়ালেন আর বললেন, “আজ আর লিভারের ডাক্তার দেখাবো না, চল বাসায় চলে যাই” এই বলে দু’জন হাঁটতে লাগলেন, ওদের দেখে মায়া হল, আমি বললাম, “আমি কি আপনার বাবাকে সাহায্য করতে পারি?” মেয়েটির বাবা বললেন, “না না, আমরা পারব, তোমাকে ধন্যবাদ” আমি বললাম, “আপনাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে, আপনার বাম হাতটা আমার কাঁধে রাখুন” বলে একপ্রকার নিজেই আমি ওঁওঁর হাতটা আমার কাঁধে তুলে নিলাম

ওঁওঁদের গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আমি চলে যাচ্ছি এমন সময় মেয়েটি বলল, “আপনাকে ধন্যবাদ” আমি হাসিমুখ করে চলে আসছি এমন সময় মেয়েটি আবার বলল, “এক্সকিউজ মি, আপনার নামটা তো জানা হল না” আমি বললাম, “আমার নাম ‘ইমতিয়াজ অভি’“ আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনার নাম?” মেয়েটি বলল, আমার নাম ‘সুজাতা’, ‘ইয়াসমিন সুজাতা’ এই বলে মেয়েটি ওদের গাড়ির দিকে চলে গেল আর আমিও চলে গেলাম আমার বন্ধুর কাছে

আজও আমি আর আমার বন্ধু হসপিটালে আসছি, ঘর থেকে কিছুক্ষণ আগে বের হলাম রিকশায় উঠে বললাম ‘এ্যাপোলো হসপিটাল’ প্রায় ১৫ মিনিট পর আমরা এসে পৌঁছলাম হসপিটালে আমি আর আমার বন্ধু হসপিটালে প্রবেশ করলাম, তবে আমি চলে গেলাম ক্যান্টিনের দিকে আর সায়ন্ত গেল ওর বাবার কাছে, আমার ফোনে ব্যালেন্স রিচার্জ করতে হবে আমি রিচার্জ করে আবার ফিরে আসার জন্য যেই ঘুরে দাঁড়িয়ে মোড়টা নিলাম তখনই আমার সাথে একজন বোরক পড়া মহিলার সাথে ধাক্কা লাগল আচমকা ওঁওঁর হাত থেকে কিছু ফাইল পড়ে গেল আমি সরি বলে তাকে ফাইলগুলো হাতে তুলে দিলাম সেও আমাকে বলল, ইট্স ওকে আমি চলে যাচ্ছি, এমন সময় মহিলাটা আমায় বললেন, “আপনার বন্ধুর বাবা কেমন আছেন?” আমি উত্তরে উন্নতির পথে আছেন, বলে চলে যাচ্ছি আর ঠিক তখনই আমি থেমে গেলাম আর পিছনে ফিরলাম আরে, এটা তো সেই মেয়েটা! যার বাবাকে আমি গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছিলাম আমি যে তাকে চিনতে পেরেছি এবং এতে যে আমি কিঞ্চিৎ হতবাক তা যেন মেয়েটিও বুঝতে পারল মেয়েটার কি যেন নাম ছিল…ও হ্যাঁ, সুজাতা আমি ওঁওঁর দিকে এগিয়ে গেলাম সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “কেমন আছেন মিস্টার ইমতিয়াজ অভি?” বাহ্, চমৎকার তো, মেয়েটা আমার পুরো নামটাই মনে রেখেছে আমি উত্তর দিলাম, “ভালো আছি মিস ইয়াসমিন সুজাতা, আপনি কেমন আছেন? আর এখানে আজ আসার কারণ কি?” মেয়েটি বলল, “আমি ভালো আছি আর আমি আজ এসেছিলাম বাবার কিছু টেস্ট করা হয়েছিল তার রিপোর্ট নিতে, আপনার ধাক্কায় সেগুলোই হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল” মেয়েটির মুখে মুচকি হাসি দেখলাম আমি তাকে কফির অফার করলাম সে প্রথমে রাজি হয়নি তারপর রাজি হয়ে গেলেন আমরা কফি পান করতে করতে তাকে বললাম, “আপনি নিশ্চয় পড়াশোনা করছেন…” সে বলল, “আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, ঢাকার বাইরে” আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, “কলেজটা কোথায়?” সে বলল, “ময়মনসিংহ জেলায়” আমি অবাক হয়ে গেলাম, কারণ আমি নিজেও ময়মনসিংহে থাকি…সত্যি, কোথাকার মানুষ এসে কোথায় পরিচিত হচ্ছে! হঠাৎ, আমার ফোন বেজে উঠল, আমি সুজাতাকে এক্সকিউজ করতে বলে একটু দূরে গেলাম মা কল করেছিলো, তাঁর সাথে কথা শেষ করে আবার কফির টেবিলে ফিরে এলাম এসে দেখি সে নেই! আমি ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করায় জানতে পারলাম সে নাকি আমাদের দু’জনের কফির বিলটা দিয়ে গেছে আমি হতবাক হয়ে গেলাম চলে যাওয়ার সময় মনে পড়ল টেবিলের উপর আমার ডায়েরিটা ফেলে রেখে চলে যাচ্ছিলাম ওটা নিয়ে আমি চলে গেলাম আমার বন্ধুর বাবার কেবিনে

আজ আমরা চার বন্ধু কলেজে প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা দিয়ে এক রিকশায় করে বাসায় ফিরছি আজ আমাদের ফিজিক্স প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা ছিল আমি, হিমু, তানিন আর পিয়াস এক রিকশায় বসে নানা বিষয়ে গল্প করছি কথা প্রসঙ্গে আজ কলেজের একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খাওয়া নিয়ে কথা বলছিলাম পিয়াস বলল, “দোস্ত, মেয়েটার সাথে তোর ধাক্কা খাওয়ার পর সরি বলাটা না খুব রোমান্টিক ছিলোছিল” সাথে সাথে হিমুও তাল মিলিয়ে বলল, “মেয়েটাও তো মুচকি হাসছিল” তানিন আবার কথার মাঝে একটা বাম হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, “কুছ্ কুছ্ হোতা হে কেয়া?” আমিও হেসে বললাম, বাদ দে এসব কথা, “বড়ে বড়ে শহর মে এ্যায়সে ছোটে ছোটে বাৎ তো হতে হি রেহতি হ্যায়” হিমু হেসে বলল, “এহ্ এসেছে আমার শাহরুখ খান” হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠল, একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে আমি কলটা রিসিভ করলাম, আমি হ্যালো হ্যালো করলাম বেশ কয়েকবার পাশ থেকে আমার ৩ বন্ধু বলছে, কি রে কে ফোন করল? মনে হয় অভির স্পেশাল কেউ…হঠাৎ হিমু বলল, “আমাদের শাহরুখ খান এখন রিকশায়, ভাবি আপনি পরে কল করুন” ওপাশ থেকে কেন যেন বলে উঠল, “ওকে, আই উইল কল ইউ লেটার” আর কলটা কেটে দিল আমি হতবাক হঠাৎ আমার বন্ধুরা বলে উঠল, “কিরে, লাগতা হ্যায় কুছ্ কুছ্ হোতা হ্যায়

ধুর, তোরা যে কি বলিস না! আমার পরিচিত কেউ নয়

এখন ঘড়িতে দেখি ঠিক রাত ৯টা ৫৮ বাজে আমি প্রিয় কথা সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের একটা বই পড়ছি এমন সময় একটা কল এল, আমি রিসিভ করলাম ওপাশ থেকে বলল, “কেমন আছেন শাহরুখ খান?” আমি ভুগিচুগি খেয়ে ফেললাম বললাম, “কে আপনি?” সে বলল, “মিস্টার অভি, আমায় চিনতে পারলেন না?” আমি বললাম, ‘নাহ্’ উত্তরে সে বলল, “চেষ্টা করুন পেয়ে যাবেন পেলে আপনার সাথে আবার কথা হবে, ভালো থাকবেন” ফোনটা কেটে দিল আমি ঠিক বিচলিত বুঝলাম না কি করব…

আমি ঠিক অনেকটাই বিচলিত বুঝলাম না কি করব মাথাটা খুব ব্যথা করছে, তাই ফোনটা পাশে রেখে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম

পরদিন শুক্রবার, সকালে আমি আর আমার ৩ বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছি একটা বড় আমগাছের নিচে হঠাৎ সেই অচেনা ফোনের বিষয়টা আলোচনায় তুলল হিমু আমি বলতে না চেয়েও বলে ফেললাম যে গত রাতেও ১০টার দিকে একটা ফোন এসেছিল হয়ে গেল! এদের হাসিতামাশা আর কে থামায় আমি বললাম তোরা শোন আমি মেয়েটাকে চিনি না, আর মেয়েটা বলেছে ওর পরিচয় জানতে পারলে যেন আমি ওর সাথে যোগাযোগ করি তবে আমার এ বিষয়ে মাথা ঘামাতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই পিয়াস বলে উঠল, “মাথা খারাপ, অবশ্যই তোর মাথা ঘামাতে হবে দেখতেই হবে জল কতটা গড়ায়” হিমু আমার ফোনটা ওর হাতে নিয়ে বলল, “তোর ফোনে ‘ট্রু কলার’ অ্যাপটা আছে?” আমি বললাম, ‘না’ ও বলল তাহলে তো হল না ধ্যাৎ বলে আমায় ফোনটা দিয়ে দিল, হঠাৎ আবার নিয়ে নিল, আর বলল, “তোর ফেসবুকটা অন কর” আমি বললাম, ‘কেন’ ও বলল বেশি বুঝিস না যেটা বলেছি সেটা কর আমায় ফোনটা দিয়ে বলল, “তুই মেয়েটার ফোন নাম্বারটা ফেসবুকে সার্চ কর, হতেও তো পারে এই নাম্বারে কোনও একাউন্ট খোলা আছে” আমি বললাম “লাগবে না, বাদ দে বিষয়টা

এখন রাত ১২টা বাজে সবকিছু নিশ্চুপ মেয়েটার কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেল আমি মেয়েটার ফোন নাম্বারটা আমার ফেসবুক একাউন্ট থেকে সার্চ করলাম বেশকিছু একাউন্ট আসলো কোনওটাতেই ঠিকানা ময়মনসিংহ নেই, একটিতে পেলাম কিশোরগঞ্জ আমি একাউন্টটাতে প্রবেশ করলাম একাউন্টের নাম দেয়া ‘ইয়াসমিন নির্ভানা’ ছবিগুলো দেখলাম আর একটা মুচকি হাসি দিলাম, কারণ প্রায় প্রতিটা ছবিতেই দুজন মেয়েকে দেখা যাচ্ছে, যাদের একজনকে আমি চিনি, আর সে হল ইয়াসমিন সুজাতা মেয়ে দু’টোর চেহারায় বেশ মিল পাওয়া যায় ওরা হয়তো পরস্পর বোন আমি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে দিলাম ফেসবুক থেকে বের হয়েছি অনেকক্ষণ এখন একটা বই পড়ছি হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠল ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি আবার সেই অচেনা ফোন নাম্বার আমি রিসিভ করলাম ওপাশ থেকে বলল, “কি মিস্টার অভি আমার খোঁজ পেলেন?” আমি তাকে উল্টো প্রশ্ন করলাম, “আপনার কি ইয়াসমিন নির্ভানা নামক কোনও বোন আছে?” মেয়েটি একটু অবাক হয়ে বলল, “হঠাৎ এমন প্রশ্ন?” আমি বললাম, “আমি সিওর, আছে” মেয়েটি হাসি দিয়ে বলল, “আপনি একাউন্টে রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছেন ওটা আমারই একাউন্ট” আমাকে বাসায় সবাই নির্ভানা বলেই ডাকে আমি বললাম, “ওহ্, তো আমার রিকুয়েস্টটা কি গ্রহণযোগ্য?” মেয়েটি বলল, “না, আপনি দয়া করে আবার ফেসবুকে যান” আমি আমার একাউন্ট অন করলাম, আর অবাক হয়ে গেলাম কারণ, আমার রিকুয়েস্ট বাতিল করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু খেয়াল করলাম, “ঐ অ্যাকাউন্ট থেকে উল্টে আমাকে রিকুয়েস্ট দেওয়া হয়েছে” আমি অ্যাক্সেপ্ট করে নিলাম

আমাদের চ্যাটিং শুরু হল মেয়েটি বলল, “আপনার ডায়েরি থেকে ফোন নাম্বারটা পেয়েছিলাম” আমার তখনই মনে পড়ে গেল সেই হসপিটালে কফির ব্যাপারটা

পরদিন আমি মেয়েটিকে কল করলাম ২য় প্রচেষ্টায় ফোনটি রিসিভ করা হল ওপাশ থেকে মেয়েটি বলল, “কী খবর মিস্টার বোকাসোকা?” আমি তো কথাটা শুনে পুরো পেনাল্টি খেয়ে বসলাম মেয়েটি বিষয়টা বুঝতে পেরে হাসতে থাকল ওপাশ থেকে মেয়েটি বলল, “আপনার বন্ধুরা দেখলাম আপনাকে ফসবুকে বোকাসোকা লিখে হ্যাশট্যাগ দেয়” আমি বললাম, “আমি একটু বোকাসোকাই, ছোটবেলা থেকেই কোনও ঝামেলায় জড়াতে পছন্দ করি না” সেদিন মেয়েটার সাথে অনেকক্ষণ কথা হল তার বাবা অসুস্থ আগে একটি সরকারি চাকরী করতেন ওরা দুই বোন মা একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ওদের একটি ভাই আছে, যে কিনা থাকে সিঙ্গাপুর, পড়ালেখার জন্য আর সবচেয়ে যেটা অবাক করার মত বিষয় জানতে পারলাম তা হল, সেদিন কলেজে আমার যে মেয়েটার সাথে ধাক্কা লেগেছিল সে মেয়েটা নাকি সুজাতাই ছিল আমি দু’মিনিট কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম পরদিন কলেজে আমরা দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম, কলেজের ক্যান্টিনে ছুটির পর দেখা হল মেয়েটি সত্যি সেই মেয়েটি আগের চেয়ে একটু শুকিয়ে গেছে, আর চোখের নিচে হালকা কালো দাগ পড়েছে তবুও বলা বাহুল্য মেয়েটি সৌন্দর্য একটুও কমেনি ২০ মিনিটের মতো আমাদের কথাবার্তা হল তারপর যে যার বাড়ি চলে গেলাম

রাত ১১টা বাজে, আমাদের ফোনে কথা চলছিলো অনেক সময় ধরে মেয়েটির সাথে অনেকক্ষণ কথা বলার পর তার সম্পর্কে বেশ কিছু জানা গেল আমিও আমার সম্পর্কে বললাম মেয়েটির দু’টো ছোটবেলার সমস্যা আছে সে, ভয় পেতে মারাত্মক ভয় পায়, হাইট ফোবিয়া বা উচ্চতায় ওর দুর্বলতা আছে ইদানিং বাবার পায়ের সমস্যাটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করায় নাকি তার নতুন অভিজ্ঞতা, যে সে দুশ্চিন্তা করতে পারে না করলেই তার মাথা ব্যথা করে

দিনটা ছিল ২৯ এপ্রিল আমার জন্মদিন তাই আমি সুজাতাকে আমার প্রিয় একটা কফি-শপে দাওয়াত দিলাম ও প্রথমে বলেছিল আসাটা সম্ভব না, তবে পরে নিজেই ফোন দিয়ে জানায় ও আসতে পারবে আমি অবশ্য তাকে জানাইনি যে আজ আমার জন্মদিন সে কফি হাউসে ঠিক সময়েই চলে এসেছে আমি ৩২ মিনিট দেরি করে গেলাম যাওয়ার সময় আমার সাথে ঘটে গেলা আরেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ফেসবুক মারফত জেনে গেলাম যে আজ সুজাতারও জন্মদিন তার জন্য একটা ডায়েরি আর আমার খুবই প্রিয় একটা কলম যেটা কিনা টাকা জমিয়ে কিনেছিলাম নিয়ে নিলাম আর আমার ছোট বোনের জন্য মামার বিদেশ থেকে পাঠানো চকলেটগুলো থেকে তিন প্রকারের চকলেট নিয়ে নিলাম

আমি আমার পিছনে হাতে ওর জন্য উপহারগুলো নিয়ে ওর সামনে দাঁড়াতেই ও রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনার এখন সময় হল আসার?” আমি সরি বলা ভুলে গিয়ে সুজাতার দিকে তাকিয়ে আছি আজ ওকে ঠিক অন্যরকম লাগছে এ যেন এক নতুন সুজাতা আমার স্বপ্নে দেখা সেই নীল শাড়ীতে সজ্জিত শাহাজাদীর মতো দেখতে লাগছে আমি ভাষা হারিয়ে ফেললাম তার হাতের চিমটিতে আমার জ্ঞান এল আমি তার দিকে উপহারগুলো এগিয়ে দিয়ে বললাম, “শুভ জন্মদিন” এটা মনে হয় সুজাতার কাছে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা সে উপহারগুলো নিল আমি বললাম, “চলুন কফি খাওয়া যাক” সুজাতা মুখে কিছু না বলে চেয়ারে বসল ও একটু লজ্জা পাচ্ছে ওকে লজ্জা পেলে তো অনেক সুন্দর লাগে! ওর লজ্জামুখর মুখটায় আরও লজ্জা বাড়িয়ে দিতে আমি বললাম, “আপনাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে” সে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে আমি নিজেও একটু লজ্জা পাচ্ছি মেয়েটাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেবার জন্য তাকে স্বাভাবিক করে তুলবার জন্য আমি তাকে বললাম, “এটা আপনার কততম জন্মদিন?” সে বলল, “তার জন্ম হয়েছে ১৯৯৯ সালে ২৯ এপ্রিল বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পর আমরা উঠলাম” আমি তাকে বললাম, “আপনি এখন বাসায় যাবেন কীভাবে?” সে বলল, “হেঁটেই যাব” মেয়েটিকে আমি বললাম, “যদি আপনি কিছু মনে না করেন আমি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসবো?” সে প্রথমে না করল পরে আমার কথা ফেলতে পারল না আমি তাকে দু’টো মিনিট অপেক্ষা করতে বলে আমার বাইকটা নিয়ে আসলাম সে জানে না যে আজ আমি বাইক নিয়ে এসেছি সুজাতা বাইক দেখে বলল, “আপনি আমাকে মোটর সাইকেলে করে এগিয়ে দিয়ে আসবেন?” আমি বললাম, “মিস সুজাতা, ভয় পাবেন না আমার ১৮ বছর অনেক আগেই হয়েছে আর লাইসেন্সও আছে” সে পিছনে উঠে বসল আমি বললাম, “শক্ত করে ধরে বসুন” সে তার একটা হাত আমার ডান কাঁধে রাখল আমি কাঁধের দিকে চেয়ে দেখলাম তার হাতটা সত্যি, মানুষের হাত এত সুন্দর হতে পারে? মেয়েটার হাতে মেহেন্দী দেওয়া আর তা দেখে যেন মনে হচ্ছে আকাশের সবচেয়ে সুন্দর পরীটা আমার কাঁধে হাত রাখল আমরা যাত্রা শুরু করলাম দশ মিনিটের মতো সময় লাগল ওর বাড়ির থেকে ৫০ গজ দূরে ওকে নামিয়ে দিলাম তাকে নামিয়ে দিয়ে বাইক ঘুরিয়ে আমি চলে আসছি এমন সময় সে আমায় পিছন থেকে ডেকে বলল, ‘শুনুন’ আমি পিছনে ফিরলাম এবার সে বলল, “আপনাকে ধন্যবাদ” আমি হাসি মুখ করে চলে আসছি এমন সময় সে আবার বলল, “এই যে, চকলেট গুলোর জন্য ধন্যবাদ” আমি আবার হাসলাম চলে আসার জন্য বাইকের এক্সিলারেটরে চাপ দেবো দেবো ঠিক তখনই আবার ডাকল সুজাতা আমি ফিরে তাকালাম সুজাতা ওর ব্যাগ থেকে একটা র‍্যাপিং পেপারে মোড়ানো চৌকোণা বাক্স দিল আর বলল, “শুভ জন্মদিন ইমতিয়াজ অভি” আমি অবাক হয়ে গেলাম আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে সুজাতা বলল, “তোমাকে আজ নীল শার্টটায় খুবই সুন্দর লাগছে” আমি বাক-শূন্য হয়ে গেলাম কারণ, নীল শার্ট পরে ওর সাথে দেখা করার বিষয়টা আমি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম আজ সুজাতা নীল শাড়ী আর আমি নীল শার্ট পরে এসেছি বিষয়টা আমার মাথাতেই আসেনি আমি নিজে এবার ওর সামনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম কিছু না বলে আমি বাইক স্টার্ট করে ফেরার জন্য রওঁ হলাম রাস্তায় এসে আমার আরেকটা বিষয় মনে পড়ল সুজাতা কি আমাকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করেছিল? আরে তাই তো! ও আমায় তুমি বলেছে ভাবতে ভাবতে আমি চোখের পলকটা খোলার আগেই একটা ধপাস শব্দ শুনলাম আর সবুজ রঙের মাঝে হারিয়ে গেলাম তারপর আর আমার কিছু মনে নেই

পিয়াস বলল, আমায় নাকি ধানক্ষেতে পাওয়া গেছে বাইকটা রাস্তার পাশে ঘাসের উপর পড়েছিল আমি নাকি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম এখন আমি একটা হাসপাতালে আছি পিয়াস বলল ওর সাথে নাকি সুজাতার এক বান্ধবীর দেখা হয়েছে ওকে নাকি আমার ব্যাপারটা বলে দিয়েছে আমার কথাটা শুনে খুব রাগ হল বললাম, “দিলি তো একটা ঝামেলা বাঁধিয়ে” এমন সময় মা এল আমায় দেখতে বলল, এর আগেও নাকি একবার এসেছিলো ১ ঘণ্টার মত থেকে চলে গেল এখন বিকাল ৫ টা বাজে কেউ নেই হঠাৎ, আমার রুমে এল পিয়াস বলল কে নাকি আমার সাথে দ্যাখা করতে এসেছে এই বলে ও বাইরে গেল ভেতরে এল সুজাতা! আমি ওকে দেখে উঠে বসার চেষ্টা করলাম হাতে ব্যান্ডেজ করা তাই পারলাম না আসলে পারার আগেই সুজাতা বলল, “থাক থাক, উঠতে হবে না” আমার বিছানার পাশের চেয়ারে এসে ও বসল আমি ওর দিকে চেয়ে থেকে দেখলাম, কপালে চিন্তার ভাঁজ, গাল বেয়ে গোলাপির রঙের ঘাম পড়ছে, নাকের সামনে ফোঁটা ফোঁটা পানি জমেছে ওকে দেখতে এত্ত সুন্দর লাগছিল যে আমার হাতের ব্যথার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি খবর?” ও আমার দিকে না তাকিয়ে নিজের হাত দু’টো একসাথে করে রেখে তার দিকে চেয়ে বলল, “সব আমার দোষ, আমার জন্যই এখন এই কষ্ট তোমাকে পেতে হচ্ছে” আমি বললাম, “আরে নাহ্, কি যে বল সবই আল্লাহর ইচ্ছা না হলে কি তোমার মুখে ‘তুমি’ ডাকটা শুনতে পেতাম?” ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল মনে হয় মনের অজান্তেই তুমি ডেকেছিলে ও মাথানিচু করে আমায় বলল, “আমি ভুল করে আপনাকে তুমি বলে ফেললাম” আমি ওকে বললাম এর আগেও একবার তুমি বলেছ আমায় ও একটু লজ্জা পেল হঠাৎ, আমি ওকে বললাম, “এই যা, আমিও যে তোমাকে তুমি বলে ফেললাম, এবার কিন্তু আমার সরি বলার পালা” এটা শুনেই ও একটু শব্দ করে হেসে ফেলল আমি বললাম ওকে, “আমরা কি সম্পর্কটাকে তুমিতে নিতে পারি না?” ও কিছু বলল না ব্যাগ থেকে একটা বাক্স বের করল খুলে আমায় দিল দেখলাম বিরিয়ানি রান্না করে এনেছে আমার জন্য আমি ওকে বললাম তোমার হাতের রান্না তো চমৎকার ও বলল, “আমি রাঁধিনি, মা রেঁধেছে” খাওয়া শেষ হলে ও বলল, “আমায় এবার যেতে হবে, মা টেনশন করবে” ও উঠে পড়ল ও বেরিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই আমি ওকে বললাম, “শোনো, রান্নাটা তোমার হাতেই করা তাই না?” ও মুচকি হাসল বুঝলাম ওই রেঁধেছে ও চোখ বড় করে বলল, “তোমার এত বুঝতে হবে না, রেস্ট করো সুস্থ হতে হবে তোমায় তাড়াতাড়ি, আর কয়মাস পরেই এইচএসসি পরীক্ষা” তারপর ও চলে গেল আমি আবার ওকে ডাকলাম ও আবার রুমে আসলো আমি এবার বললাম, “তোমার মুখে ‘তুমি’ ডাকটা শুনলে কিন্তু আমার ভালোই লাগে” ও বলল, “শয়তান একটা!” এই বলে চলে গেল আমি চিৎকার করে বললাম, “সাবধানে যাবে

আজ সকালটা খুবই সুন্দর অনেকদিন পর আমি আর সুজাতা দেখা করব আমার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে কয়েকদিন আগে এখন কয়টা দিন একটু শান্তিতে থাকতে পারব কয়েকটা দিন বলতে সত্যিই কয়টা দিনই কারণ, কয়েকদিন পরেই আমাকে চলে যেতে হবে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের জন্য ঐ তো, সুজাতা এসে গেছে “কি খবর সুজাতা কেমন আছ?” আমি বললাম ও বলল, “ভালো তুমি কেমন আছ?” ভালো আছি জানানোর পর তাকে বললাম, “তোমায় নীল শাড়ীটাতে অনেক সুন্দর লাগছে, এ যেন এক নীলাবতী পরী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে” ও একটু মুচকি হাসল

আমি আমার পকেট থেকে ওর জন্য চকলেট বের করলাম ও একটা বাচ্চা মেয়ের মত আমার হাত থেকে চকলেটটা কেড়ে নিতে চাইলো আর তখনই আমি হাতটা ওর সামনে থেকে সরিয়ে নিলাম ও অবাক হয়ে গেল আমি বললাম আগে আমায় বল, “ভালোবাসি” ও বলল, “না, আমি পারব না” তাহলে তো চকলেট দিব না ও বলল, “আমার লজ্জা লাগে” একথা বলে আমি ওর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলাম পেছনে ইটে ওর পা আটকে যায় পড়ে যেত আর ঠিক তখনই আমি ওকে ধরে ফেলি ও একদম চুপ করে রইল আমি ওর কানের কাছে মুখটা নিয়ে বললাম, “আমি তোমাকে ভালোবাসি সুজাতা” ও তাও কিছু বলল না আমার হাত থেকে হঠাৎ চকলেটটা নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াল আমি বললাম, “কি, কিছু বলবে না?” ও কিছু বলল না আমি আর ও মিলে কিছু ছবি তুললাম সবগুলোই একক ব্যক্তিকে ফ্রেমে নিয়ে ছবি একটা ছবি শুধু পিয়াস তুলে দিল আমাদের হাত হাত রেখে, চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছি এমন এক মুহূর্তের সন্ধ্যা হয়ে আসছে ওকে বাসায় পৌঁছে দেয়া দরকার ওকে বললাম, “এই মেয়ে, বাইকের করে যাবে নাকি?” ও আমার বুকে একটা প্রেমময় ঘুষি দিয়ে বলল, “তোমার বাইকে আমি আর উঠছি না, দেবদাস হয়ে যাও একেবারে বাইক চালানোর সময়” ওকে হাঁটতে হাঁটতে ওর বাসা থেকে একটু দূরে পৌঁছে দিলাম

আজ আমি চলে যাচ্ছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করার জন্য সকালে ৩০ মিনিটের জন্য সুজাতার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম ওর চোখের কোণায় আমি পানি দেখেছি তখন আমারও মনের ভেতর এক কষ্টের ঝড় বয়ে গেছে

আজ আমি বাড়ি ফিরছি আমার স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার আমি সেই সুযোগটা পেয়েছি আজই সে খবর পেলাম সবার আগে মাকে জানিয়েছি তারপর আমার বন্ধুদের জানালাম এবার ফোন দিলাম সুজাতাকে “হ্যালো, সুজাতা” সুজাতা বলল, “হ্যাঁ, বলো” আমি বললাম, “কেমন আছ” সুজাতা বলল, “ভালো আছি” আমি বললাম, “আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়ে গেছে” সুজাতা বলল, “শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, কবে আসবে?” আমি বললাম, “পেছনে ফেরো” ভাবতেও পারিনি যে ওকে কলেজ রোডেই পেয়ে যাব আমার সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে হাঁটছিল ও পেছন ফিরে আমায় দেখে তো অবাক আমি ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছি আশেপাশে কেউ নেই ওর হাতটা ধরলাম বললাম চল তোমায় বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি সেদিন সারাটা পথ আমি ওর হাত ধরেছিলাম

আজ আমাকে চলে যেতে হবে ঢাকায় আমার ১ম বর্ষের ক্লাস চলছে, দুদিনের ছুটিতে এসেছিলাম গতকাল রাতে আমার জীবনে অনেক কিছু হয়ে গেছে আমি সুজাতার সাথে ওর বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলাম ওর মা ওকে দিয়ে আমায় ডাকিয়েছে, আমি জানতাম না ওঁওঁর কাছে কেউ আমাদের ব্যাপারটা বলে দিয়েছে আমি তাকে সাবলীল ভাষাতেই সব কিছু আমার পক্ষ থেকে জানালাম উনি আমার সব কথা শুনলেন আর আমাকে ওর সামনেই জানালেন যে ওর অন্য আরেক জায়গায় বিয়ে ঠিক করা আছে ছোটবেলা থেকেই ছেলের মা সুজাতার মার ছোটবেলার বন্ধু আমি অনেক কষ্টে নিজেকে সেখানে সামলেছিলাম ওর মা আমাদের দুজনকে শুনিয়েই বলেন, “আমার মেয়ের বিয়ে আমার ইচ্ছে মতোই হবে, আর আমার মেয়ে তার মায়ের কথা কখনও অমান্য করবে না এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস তোমাদের মধ্যে যা কিছু হয়েছে সব ভুলে যাও” এ কথা বলে উনি চলে গেলেন আমি আর সুজাতা তখন মুখোমুখি দাঁড়ানো আমি সুজাতার দিকে চেয়ে বললাম, “তোমার কি কিছু বলার আছে?” ও কিছু বলল না আমি ওকে বললাম, “তুমি আমায় এভাবে ঠকালে সুজাতা?” ও কোনও কথা না বলে ওর ঘরে চলে গেল আমিও চলে যাচ্ছিলাম আর তখনই ওর ছোট বোন আমার কাছে এসে বলল, “ভাইয়া, আমার বোনের একটু সাইকোলজিক্যাল সমস্যা আছে আমি যদ্দূর জানি এটা আপনি জানেন কষ্ট সহ্য করতে পারে না, টেনশন নিতে পারে না আপনি ওকে আর কষ্ট দিবেন না, আপনি চলে যান” আমি হতবাক হয়ে গেলাম মনে হচ্ছিল সারা পৃথিবীটা আমাকে নিয়ে হাসছে আমি আর নিতে পারছিলাম না এসব চলে আসার সময় ওর বোনের হাতে একটা নীল বেনারসি শাড়ী দিয়ে এসেছিলাম আর বলেছিলাম, “তোমার বোনকে বলবে ওর আগাম বিয়েতে আমার ছোট্ট উপহার, এটা ঢাকা থেকে আসার সময় কিনে এনেছি আর ওকে বলে দিও আমি ওকে খুব ভালবাসতাম, এভাবে যেন মনের ভেতর শর্ত লুকিয়ে কাউকে আর ভালো না বাসে, ভালোবাসায় শর্ত থাকে না, থাকে শুধু আরও বেশি করে ভালোবাসতে পারার ইচ্ছা, আমি ওকে ভালোবাসতেই চেয়েছিলাম

ট্রেন বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে গেছে এবার আমায় চলতে হবে জীবন গড়ার পথ চলায়, কিন্তু আমি কি পারব? আমি ওকে সত্যিকারের অর্থেই ভালবাসতাম, তাও ও কেন ওর মায়ের সামনে মুখ ফুটে বলল না আমাদের ভালোবাসার কথা?

ডাক্তার ও পিয়াসের মধ্যকার আলাপন:

ডাক্তার সুজানা এটাই ছিল আমার বন্ধু অভির লেখা ডায়েরির কথা আসলে যেদিন ও ঢাকায় আসে সেদিনই সকালে সুজাতা ওরই দেয়া নীল শাড়ীতে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করে আমিই অভিকে ফোন করে বিষয়টা জানাই তারপর আমরা ঘটনাস্থলের মানুষের কাছ থেকে জানতে পারি রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ী ওকে ধাক্কা মারে, তারপর ও কোমায় চলে গিয়েছিল এখন তো দেখতেই পারছেন তার অবস্থা জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু ওর স্মৃতি চলে গেছে আর পাগল হয়ে গেছে এক প্রকার এতদিন মেন্টাল হসপিটালে ছিল পরিবারের সবাইকে খুব ভালো করে চিনতে না পারলেও তাদের ডাকে সাড়া দেয়, তবে অন্য কাউকে ও চিনতে পারে না জানেন ডাক্তার সুজানা, ও না এখনও সুজাতার নামটা মুখে আনে তবে এর বেশি কিছু নয় সত্যি, ছেলেটার ভালোবাসায় কোনও খুঁত ছিল না

ডাক্তার সুজানা বললেন, “ওকে মিস্টার পিয়াস ভালো থাকবেন, ওঁওঁর যত্ন নিবেন, আর মন ভালো রাখার চেষ্টা করবেন, বাড়িতে ওঁওঁর কি কি ঔষধ খেতে হবে তা আমি লিখে দিলাম একটু সিরিয়াসলি কিনে নেবেন

ডায়েরির শেষপাতার কথা:

আজ সুজাতার মৃত্যুদিন পিয়াসের মুখেই আমি শুনেছিলাম সুজাতা সুইসাইড নোটে লিখে গেছে যে ওর মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী, আমি আজও জানি না আমার দোষটা কোথায় ছিল আমার মা আমার দিকে তাকিয়ে প্রায়ই কাঁদে সবাই বলে আমি নাকি পাগল হয়ে গেছি, আমি নাকি স্মৃতিহারা, আমিও তাই জানতাম, কিন্তু আজ হঠাৎ কেন যেন সব মনে পড়ে গেছে আমার জানতে হবে সুজাতা কেন আমায় ওর মৃত্যুর জন্য দায়ী করল আমি আসছি সুজাতা, আমি আসছি তোমায় আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে

আমার মৃত্যুর জন্য আমার জীবনের ফেলে আসা ‘শূন্য-স্মৃতি’’কেই দায়ী করে গেলাম

বিদায় পৃথিবী

ইতি,

ইমতিয়াজ অভি

২০২০, জানুয়ারি ২৭

পিয়াসের কথা:

পরদিন সকালে একটা নীল রঙের ওড়নায় অভির মৃতদেহটা নাকি ঝুলছিল ওড়নাটা সুজাতার এটা সুজাতাই অভিকে উপহার দিয়েছিল হায়রে অভি, ‘শূন্য-স্মৃতি’র খোঁজে তুইও পৃথিবীকে ছেড়ে চলে গেলি

হে আল্লাহ্ এরা কেউই সজ্ঞানে আত্মহত্যার পথকে বেছে নেয়নি তুমি ওদের ক্ষমা করে দিও আল্লাহুম্মা আমিন

পিয়াস ওর স্ত্রীকে বলল, এই ছিল আমার বন্ধুর ভালোবাসার গল্প, লুভানা চল আজ কোথাও বেড়াতে যাই, কোথায় যাওয়া যায় বলো তো…

* * *

বি.দ্রঃ উক্ত গল্পের ব্যবহৃত ও উল্লেখিত সকল চরিত্র এবং ঘটনা সম্পূর্ণ কাল্পনিক এর সাথে বাস্তবের কোনও মিল থাকলে তা সম্পূর্ণ কাকতালীয়

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post রুধির দেনা| ভয়ের দেশ | মোহাম্মদ হাসিন ইশরাক| Bengali Horror Story
Next post হিয়ার মাঝে| প্রেমে পড়া বারণ | কৌশিকী বল| Bengali Love Story