সন্ধ্যে সাতটার গাড়ি টা সবে মাত্র স্টেশন কাঁপিয়ে বেরিয়ে গেল। প্যাসেঞ্জারদের গজ গজানি সমানে কানে আসছে। স্টেশনের সিঁড়ি বেয়ে নেমে যে বড় পাকা রাস্তাটা খানিক দূর এগিয়েই তিন ভাগে ভাগ হয়ে বেরিয়ে গেছে , সে রাস্তার ডান দিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে সারি সারি ই-রিষ্কা। সেখানে দাঁড়িয়ে গাড়ির চালকেরা এখন ঊর্ধস্বরে প্যাসেঞ্জার ডাকছে। স্টেশনের ওপরের লোকজনের ভিড় টা এবার সিঁড়ি ধরে , জলের স্রোতের মতো নেমে ডান দিকে ঘুরলো। এরপর প্রায় দশ মিনিটের মধ্যেই খালি হয়ে গেল স্টেশন চত্বর। খানিকটা তফাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা পুলিশের গাড়ি। ইদানীং স্টেশন চত্বরে বেশ্যা বৃত্তির বেশ রমরমা চলছে। অন্ধকার রাস্তায় কায়দা করে দাঁড়িয়ে থাকে ওরা , খদ্দেরের আশায়। বেশির ভাগ টায় রেলের পরিত্যক্ত জায়গায় গড়ে ওঠা হঠাৎ কলোনির মেয়ে মানুষ ওরা। স্থানীয়রা এই বিষয়ে থানায় অভিযোগ জানানোর কারণেই পুলিশের গাড়ি দু একবার টহল দিয়ে যায় কিংবা মিনিট কুড়ির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর আবার সব কিছুই আগের মতো চলে। রাস্তার ঠিক বাম পাশে , বড় সিরিশ গাছ টার গোঁড়ায় বিশুর চা এর দোকান। তবে সেটা শুধু মাত্র চা এর দোকান বলা ভুল হবে। একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে বিশেষ ভঙ্গিমায় ইশারা করলে জলের ড্রাম থেকে উঠে আসবে দেশি মদের বোতল। দুই হাত পাকিয়ে ইঙ্গিত দিলে বিশুর ট্যাঁকে গোঁজা থলে থেকে বেড়িয়ে আসবে গাঁজার পুড়িয়া। অর্থাৎ হাতের বিভিন্ন ইশারায় নানান বস্তুর হদিস মিলতে পারে বিশুর চায়ের দোকানে। সন্ধ্যের দিক টায় ওর দোকানের ভেতরটা একে বারে গম গম করে । অধিকাংশই ছেলে ছোকরা আর খেটে খাওয়া মানুষ জনের ভিড়। চা এর দোকানের অবস্থান টা অনেকটা আলো আঁধারী ভরা সুড়ঙ্গের মতো। প্রবেশ পথ টা সরু। ভেতরের দিকে সরীসৃপের মতো এঁকে বেঁকে চলে গিয়েছে বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে দোকান টা। বাঁশের কাঠামোর ওপরে , টাল ,ত্রিপল চাপানো। আর কঞ্চির ওপরে মাটির প্রলেপ দ্বারা নির্মিত দোকানের দেয়ালে ঝুলছে একটা রঙিন টিভি। ঠিক তার সামনে সার বদ্ধ ভাবে রাখা হয়েছে কয়েকটা বেঞ্চ। টিভির স্ক্রিনে ফুটে ওঠে হরদম হিন্দি চটুল গানের ভিডিও। যা দেখে ছেলে ছোকরা কি বুড়োর দল উল্লাসে ফেটে পড়ে আর ঘন ঘন চা সিগারেটের অর্ডার দেয়। দোকানের ভেতর বাঁক খাওয়া একটা কুঠুরীর ভেতর রাখা হয়েছে দুটি ক্যারাম বোর্ড। যেখানে সিগারেটের ধোয়ায় সৃষ্ট সাদা মেঘের মতো স্তর সর্বদা বিরাজ করে। ওর মধ্যেই ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে উঠতি বয়সের ছেলে গুলো খেলায় মেতে থাকে আর চা সিগারেটের নেশায় যৌবন কালি করে। এরকমই বেশ কিছু মোহ আর মায়া কে অবলম্বন করেই দিনে দিনে ফুলে ফেঁপে উঠছে বিশুর ক্যাশবাক্স।
আচমকাই ‘ জয় মা তারা ‘ ধ্বনি দিয়ে , দোকানে প্রবেশ দ্বার এর সামনে হাজির হলো একটা সাধু। হালকা হলদে টে আলোয় যে টুকু দেখা যায় তা হলো সাধু বাবা দীর্ঘাঙ্গী। পড়নে লাল সালু। মাথা ভর্তি জট। দাঁড়ি গাল বেয়ে নেমে গেছে বুক অব্দি। গলায় রুদ্রাক্ষ , পদ্ম বীজ আর রকমারি বর্ণময় পাথরের মালা। কপালে মেটে সিঁদুরের প্রলেপ। গায়ে , হাত-পায়ে চিতাভস্ম মাখা রয়েছে। চোখের রং রক্তাভ। দোকানের গেটের সামনে হঠাৎ আবির্ভুত বাবাজি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিশু ক্যাশ বাক্স ফেলে ছুটে এসে প্রণাম ঠুকে গদগদ হয়ে বলল , ” আসেন বাবাজি ! আসেন ! বসেন এখানে। “
বিশু হাতের ইশারায় বাবাজীর বসবার স্থান দেখিয়ে দিলে আশ পাশের লোকজন দ্রুত সে জায়গা খালি করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। বিশু এরপর টিভির রিমোট টিপে বন্ধ করলো চটুল হিন্দি গান। উপস্থিত সকলে মুহুর্তের মধ্যে থ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। পরিবেশ থমথমে। সকলের চোখে মুখে অসীম কৌতূহল ফুটে উঠেছে। ছেলে ছোকরার দল শূন্যে ভাসমান সিগারেটের ধোঁয়ার স্তর , হাত দিয়ে সরিয়ে দেবার বৃথা চেষ্টা করল। বাবাজি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে বসলে , বিশু নরম গলায় ফের বললো , ” বলুন বাবাজি , হঠাৎ এই অধমের দোকানে কেন পায়ের ধূলো দিলেন ? কি সেবা করবো আপনার ?”
সাধু বাবা মুখে কোনো কথা না বলে , কেবল ডান হাতের মধ্যমা আর তর্জনী একত্রিত করে ঠোঁটের কাছে নিয়ে এসে একটা ইশারা করল। বিশু ঝট করে বুঝে গেল বাবা ধূম পানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তড়িঘড়ি নতুন এক প্যাকেট সিগারেট বাবাজীর হাতে ধরিয়ে দিল বিশু। তারপর ও ভাবলো এ সমস্ত শ্মশানচারী বাবাজীরা বিভিন্ন ধরণের নেশাও করে থাকেন। তাই ওর ডান হাত টা কোমরের কাছে নিয়ে এসে গাঁজার পুড়িয়া গুলো তে হাত টা বুলিয়ে নিয়ে পুনরায় বাবাজি কে বললো , ” এসব চলবে আপনার বাবা ?”
বাবাজি এবার উত্তরে দুই পাশে মাথা নাড়লো। বিশুর মুখে প্রসন্নতার যেন ঢল নেমেছে। আজ তার আরাধ্য দেবতা সন্তুষ্ট হয়েছে বলেই এরম একটা সিদ্ধ পুরুষের আগমন হয়েছে ওর দোকানে। তাকে রুষ্ট করে লাভ নেই। এরপর দেয়ালে টাঙানো বালাজি বিশ্বনাথের ছবিতে বার কতক নমস্কার ঠুকে ও ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।এরপর বাবাজি দেশলাই এর আগুনের জন্য ইশার দিলে একটা ছোকরা জ্বলন্ত গ্যাস লাইটার টা এগিয়ে ধরলো। বাবাজি সিগারেট টা ধরিয়ে নিয়ে গভীর সুখটান দিলেন বেশ কয়েকবার। বাবাজীর নাক মুখ থেকে নির্গত ধোঁয়ার কুণ্ডুলিটা উর্ধমুখী। বিশু এবার কাঁচুমাচু হয়ে নিজের ডান হাত টা বাবাজীর সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলল , ” বাবা ! আমার হাত টা একটু দেখেদেন বাবা ! আপনাকে যখন এতো কাছে পেয়েছি ! ভাগ্য না জানা অব্দি ছাড়ছি না ! ভক্তের এই টুকু ইচ্ছে পূরণ আপনাকে করতেই হবে বাবা ! “
বাবাজি এবারে ওর হাতের তালুর ওপর দৃষ্টি ফেলে মৌনতা ভাঙলেন , ” ধূর্ত ! ভয়ানক চালাক মানুষ তুই ! আলো অন্ধকার দুই পথেই রোজগার করছিস ! তবে ভয় নেই ! কেউ তোর কিচ্ছু ক্ষতি করতে পারবে না। বৃহস্পতি তোর তুঙ্গে , শনি তোর কব্জায় । তুই রাজা হবি !”
কথা গুলো শেষ হওয়া মাত্র বিশুর হাসি গাল ছাপিয়ে কান অব্দি চলে গেল। এবং উপস্থিত সকলের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল নিজ নিজ হস্ত রেখা বিচার করানোর জন্য। প্রায় বিশ খানেক উম্মুক্ত হাত বাবাজীর সামনে এগিয়ে এলো এবার। বাবাজি একে একে সমস্ত হাত গুলোর ওপর দৃষ্টি ফেলে চললেন । তারপর একটা হাতের ওপর দৃষ্টি টা পড়তেই কপালে ভাঁজ পড়ল ওঁর। হাত টা ধরে সেটা উল্টে দেখলেন তিনটা আঙুলে জ্বল জ্বল করছে তিনটে পাথর সম্বলিত আংটি। কনিষ্ঠা তে ক্যাটস আই , অনামিকা তে রক্ত প্রবাল আর মধ্যমায় গোমেদ। খুব ভালো ভাবে হাত টা পরীক্ষা করে নিয়ে সাধু বাবা হাত টা ধরে একটা হ্যাঁচকা টান দিলেন। ওমনি ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এলো একটা রোগা লম্বাটে যুবক। যার পরনে হাল ফ্যাশনের পোশাক। শুকিয়ে আসা মুখে হাড় উঁচু হয়ে আছে। চোখ কোঠরাগত। মাথার চুল কাঁধ ছুঁই ছুঁই । গায়ের রং অনুজ্জ্বল। ছেলেটা কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে টাল সামলে দাঁড়িয়ে পড়ল। বাবাজি এবার তড়াক করে উঠে পড়ে ছেলেটার চুলের মুঠি ধরে ওকে মাটিতে আছড়ে ফেলে ওর হাত দুটো পিছমোড়া করে ধরে দাঁত কিরমিড়িয়ে বলে উঠলেন , ” শালা ! ভেবেছিলি এই ভাবেই চালিয়ে যাবি ? আর কেউ কিছু বুঝবে না , জানবেও না ? আজ তোর খেলা শেষ ! “
রোগাটে ছেলেটা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে চিৎকার করতে শুরু করলো। অকস্মাৎ বাবাজীর আচরণ ও দৃশ্য টা বদলে গেলে , একটা হুলুস্থুল পড়ল চা এর দোকানের ভিতর। এক নিমিষে যে যেদিকে পারলো ছুটে বেরিয়ে হাওয়া হয়ে গেল। হালকা একটা ধস্তাধস্তি তে সাধু বাবার কোমর থেকে নিচে পড়ল একটা রিভালভার। এরপর ছুটে দোকানে এসে প্রবেশ করল দুটো কনস্টেবল। সাধু বাবা এবারে ওদের দিকে চেয়ে বললেন , ” এটাকে হ্যানকাপ পড়িয়ে জিপে তোলো। কুইক !”
একজন কনস্টেবল উপুড় হয়ে পড়ে থাকা ছেলেটার কাছে এসে , নিজের কোমর থেকে হ্যানকাপ টা খুলে ছেলে টার হাতে পরিয়ে দিয়ে ওকে নিচ থেকে টেনে ওপরে তুললো। তারপর দুজন কনস্টেবল মিলে , ছেলেটার মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ,ওর দুই হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে গেল দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়ির দিকে। তারপর ওকে জোর করে তুলে নিল গাড়ির ভেতর। সাধু বাবা এবারে নিজের চুল দাঁড়ি সব খুলে ফেললেন। সামনে বেরিয়ে এলো খুব পরিচিত একটা চেহারা। সাব ইন্সপেক্টর তিমির ভট্টাচার্য। গলায় ঝোলানো লাল সালুর টুকরো দিয়ে নিজের মুখ মুছতে মুছতে বললেন , ” ধন্যবাদ বিশু ! তুই ঠিক টাইমে খবর টা না দিলে ওকে ধরতে পারতাম না। প্রায় মাস খানেক ধরে ওকে নজরে রেখে ছিলাম। হাতে আসছিল না কিছুতেই। “
বিশু মাজা কুঁজো করে বললো , ” কি যে বলেন স্যার ! আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে আর ছোট করবেন না স্যার ! আমি হলাম আপনার চাকর। যখন যা বলবেন করে দেবো। শুধু একটু ..”
কথা টা শেষ না হতেই তিমির বাবু বললেন , ” হ্যাঁ হ্যাঁ জানি ! তোর দিক থেকে একটু চোখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখবো। দেখেও কিছু দেখবো না , তাইতো ? যাতে করে তুই তোর অন্ধকারের ব্যবসা টাও চালিয়ে যেতে পারিস ?”
বিশু নির্লজ্জের মতো হাসলো। তিমির বাবু ফের বললেন ,” কিন্তু একটা কথা না বলে পারছি না ! তুই অভিনয় টা ভালোই চালিয়ে গেছিস। কি ট্যালেন্ট রে মাইরি তোর ! এসব ছেড়ে সিনেমা কর! নাম পয়সা দুই কামাবি!”
বিশুর হাসি এবার জোড়ালো হলো। ও এবার নীচে পড়ে থাকা রিভলবার টা তুলে তিমির বাবুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে , আগের মতো করেই বললো , “কি যে বলেন স্যার আপনি ! এসব-ই স্যার আপনার কাছ থেকে শেখা ! আপনি কি কম অভিনয় করলেন ? এতো গুলো লোক কেউই টের পায়নি যে আপনি নকল সাধু বাবা ! একটু পায়ের ধুলো দেন স্যার ! জীবন সার্থক করি !”
বিশু অতিনাটকীয়তা দেখালে তিমির বাবু বললেন , ” এই বার তোর ওভার এক্টিং হয়ে যাচ্ছে বিশু। তুই মন থেকে আমাকে এতটা শ্রদ্ধা করিস না । সেটা আমি ভালো মতোই জানি। শুধু লোক দেখানো এসব করে লাভ নাই। আমি চললাম বুঝলি। মেক আপ তুলে ওই ছোকরা টাকে নিয়ে আবার বসতে হবে। দেখি , কেলিয়ে ওর পেট থেকে কি বার করতে পারি ।”
যাবার সময় বিশুর দোকান থেকে একটা পাউরুটির প্যাকেট হাতে করে তুলে নিয়ে চলে গেলেন তিমির বাবু। পুলিশের গাড়িটা বেরিয়ে যেতেই, দোকান থেকে বিশু বাইরে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে বলল ,” তোর মতো হারামী মরে না কেন রে ? শালা ! যমের ও অরুচি তুই। খেটে ইনকাম করবো , আর এই মাল যখন ই আসবে কিছু না কিছু মাগনা নিয়ে কেটে পড়বে ! কিসের চাকরি করিস তুই ! লোকের কাছে হাত পাতিস !পেচ্ছাব করি ওরম চাকরির মুখে ! শালা তুই মরলে আমি লোক খাওয়াবো!কীর্তন দিবো ! “
গাড়িটা সামনের বাঁক টা ঘুরে থানার দিকে টার্ন নিলে তিমির বাবু বললেন , ” উঁহু ! পোদ্দার ! ওকে থানায় নয় আমার কোয়ার্টারে নিয়ে চলো !”
কথা টা শুনে কনস্টেবল পোদ্দারের মাথায় বেশ কিছু প্রশ্ন জড়ো হলেও ,ও কিছু বলার সাহস পেলো না। কারণ তিমির বাবু ওঁর কাজের মাঝ খানে অন্য কারো অধিক কৌতূহল বেশি পছন্দ করেন না। পোদ্দার সঙ্গে সঙ্গে ‘ ওকে স্যার ‘ বলে গাড়ি ঘুরিয়ে ছুটে চলল কোয়ার্টারের দিকে। প্রায় মিনিট পনেরর মধ্যে গাড়িটা পৌঁছালো একটা জং ধরা লোহার গেটের সামনে। এরপর গাড়ি থেকে দ্বিতীয় কনস্টেবল টি নেমে গেট টা খুলে দিল। গাড়িটা ধীর গতিতে প্রবেশ করলো কোয়ার্টারের সামনে। একটা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা প্রশস্ত এলাকায় সার বদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে কোয়ার্টার গুলি। জায়গায় জায়গায় ইলেক্ট্রিকের মৃদু আলো জ্বলছে। বড় বড় গাছেরা অন্ধকারে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঘর গুলির পিছন দিকে। কয়েকটা ঘরের ছাদ , প্রাচীর ধ্বসে গিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভগ্ন চেহারা নিয়ে। বাকি গুলির পরিস্থিতিও বেশ আশঙ্কা জনক। পোদ্দার গাড়ি থেকে নেমে বলল , ” আপনি এই ঘরে থাকেন কি করে স্যার ? আশে পাশে যারা ছিল সবাই তো চলে গেছে ! আপনি একা এই ভূতুড়ে বাড়ির মধ্যে পড়ে আছেন কিভাবে ?”
” মায়া মায়া ! বুঝলে পোদ্দার ! এতো কাল এখানে আছি কেমন একটা মায়া পড়ে গেছে ঘরটার প্রতি। পুরোনো বলে ছেড়ে দেবো ? কত শত স্মৃতি আছে এই কোয়ার্টারে তুমি জানো ? তাছাড়া এই নিস্তব্দ ভয়ঙ্কর পরিবেশ টা আমার ভীষণ ভালো লাগে। কেউ ডিস্টার্ব করার নেই। নিশ্চিন্তে, দিব্যি আছি!”
তিমির বাবু গাড়ি থেকে নামলেন। পোদ্দার এবং দ্বিতীয় কনস্টেবল মিলে গাড়ি থেকে টেনে নামালো যুবক টিকে। ওর মুখ থেকে একটা অস্ফুট গোঙানি ছাড়া কিছুই বের হচ্ছে না । তিমির বাবু বললেন , “ওকে আমার ঘরে নিয়ে চলো। যা জিজ্ঞাসাবাদ করার ওখানেই সেরে ফেলবো। আর তোমরা থানায় ফিরে যাও। বড় বাবু কে বলবে আমি ক্রিমিনাল এর পিছু ধাওয়া করতে গিয়ে তোমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। এরপর আমাকে তোমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করে পাওনি। ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না আমাকে । “
কথা গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শোনার পর দুজন কনস্টেবল-ই মাথা নাড়িয়ে বলল ,” ঠিক আছে স্যার! “
” ব্যাপারটা কাউকে জানিও না , যে ও এখানে আছে। কথাটা পাবলিকের কানে গেলে ওকে গণ ধোলাই এর হাত থেকে বাঁচানো যাবে না। ওর প্রতি মানুষের যা আক্রোশ সেতো তোমরা ভালো মতোই বুঝতে পারছো ! জন রোশ আটকানো যাবে না। একটু বুদ্ধি করে চলতে হবে। বড় বাবু এসব বুঝবেন না। আমার কথা পাত্তাও দেবেন না। উনি মিডিয়া ডেকে , সব জানিয়ে বড় মানুষ সাজার চেষ্টা করবেন। এতে বিপদ বাড়বে। আর এই কারণেই তো ওকে থানায় নিয়ে গেলাম না। থানা পর্যন্ত ভাঙচুর হয়ে যেতে পারে ! “
তিমির বাবু এক নাগাড়ে কথা গুলো শেষ করে ঘরের দরজা খুললেন। তারপর ঘরে ঢুকে হাত বাড়িয়ে লাইট টা জ্বালালেন। এরপর কনস্টেবল দুই জন যুবক টিকে ঠেলে ঘরে ঢুকিয়ে দিল। তারপর হ্যানকাপ এর চাবিটা তিমির বাবুর হাতে দিয়ে পোদ্দার বলল , ” আসছি স্যার আমরা! “
” হ্যাঁ যাও ! আর যা বললাম বড় বাবু কে সে কথায় বলবে। “
” ঠিক আছে স্যার ” বলল দু জনেই।
যুবক টা ঘরের ভিতর ঢুকে , চোখ বার করে চতুর্দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকলো। একটা পুরোনো স্যাঁতসেঁতে ড্যাম্প ধরা ঘর। অদ্ভুত গন্ধ ছাড়ছে ঘরটা থেকে। দেয়ালের গা থেকে প্লাস্টার অব্দি খসে পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়। জানলা পর্যন্ত বন্ধ। পাশের ঘরে যাওয়ার একটা দরজা রয়েছে ভেতরে। আসবাবপত্র তেমন নেই এঘরে। কনস্টেবল দুজন চলে গেলে তিমির বাবু ঘরের সদর দরজা বন্ধ করলেন। বিশুর কাছ থেকে আনা পাউরুটি টা ঘরের তাকে তুলে রাখলেন।তারপর যুবকটির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন পাশের ঘর ক্রশ করে ভেতরের একটা খুপরী ঘরের ভেতর। ঘরটা ফাঁকা। জানলা বিহীন। মাথার ওপর একটা মিট মিটে আলো জ্বলছে। ঘরের মাঝ খানে পাতা রয়েছে একটা কাঠের চেয়ার । সেখানে জোর করে যুবক টিকে বসিয়ে গলায় ঝোলানো লাল সালু টা দিয়ে ওকে চেয়ারের সঙ্গে শক্ত করে বাঁধলেন তিমির বাবু। তারপর নিজের ফোন টা সুইচ অফ করে রেখে দিলেন মেঝেতে। এরপর ওর মুখের কাপড়ের বাঁধন টা খুলতেই ও প্রথমে খুব জোরে জোরে স্বাস নিলো বেশ কিছু বার। তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে বলল , ” জল ! জল ! একটু জল ! একটু জল দেন স্যার ! প্লিজ ! “
তিমির বাবু পাশের ঘরে চলে গেলেন। কয়েক সেকেন্ড পর জলের বোতল হাতে ঘরে প্রবেশ করে ওর সামনে দাঁড়িয়ে সমস্ত বোতলের জল নিজের গলায় ঢেলে একেবারে তলানির জল টুকু ওর শুকিয়ে আসা মুখে ঢেলে দিয়ে বোতল টা ছুঁড়ে ফেললেন মাটিতে। ছেলেটা মরুভূমির মতো বাকি জল টুকু টেনে নিল নিজের ভেতরে। এবারে তিমির বাবু এলোপাথারি কয়েকটা চড় কোষলেন যুবক টার গালে। যুবকটি চড়ের আঘাতে যেন ভিজে কাপড়ের মতো নেতিয়ে পড়ল। ওর কাঁধ দুটো ধরে ঝাঁকিয়ে তিমির বাবু উঁচু গলায় প্রশ্ন করলেন , ” এই ! এই ছেলে ! চোখ খোল ! তোর নাম কি ? কি নাম তোর বল ?”
ছেলেটা চোখটা খুলে , কয়েক বার ঢোক গিলে জবাব দিল , ” রাজু !”
“তোর বাড়ি কোথায় ?”
” হঠাৎ কলোনী তে “
” বাড়িতে আর কে কে আছে তোর ?”
“কেউ নেই “
“বাপ মা ভাই বোন কেউ নেই ?”
” বাপ- মা আছে স্যার ! কিন্তু ওরা এখানে থাকে না!”
“কোথায় থাকে ?”
” মুর্শিদাবাদ !”
” এখানে থাকে না কেন ?”
এবারে রাজু মিনিট খানেক চুপ করে রইলো। ওর মুখ জুড়ে খেলা করছে ভয় ! স্নায়বিক উত্তেজনায় ওর শরীরে কম্পন ধরেছে।
তিমির বাবু পুনরায় জিজ্ঞাসা করলো , ” তোর বাপ মা এখানে থাকেনা কেন বল ?”
রাজু নিরুত্তর। এবারে তিমির বাবু ওর কানের গোড়ায় হাত টা নিয়ে গিয়ে ধমকের সুরে বললেন , ” দেবো কানের গোড়ায় এক থাবড়া ! যা যা জিজ্ঞাসা করছি জবাব দে ?”
রাজু খানিকটা নড়ে চড়ে বসল। তারপর বলল , ” ওরা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে !”
” কেন তাড়িয়েছে ?”
রাজুর মধ্যে একটা ইতস্ততঃ বোধ কাজ করছে । ও একটা কি বলতে গিয়ে আবার চুপ করে গেল । তিমির বাবু ফের জিজ্ঞাসা করলেন , ” কেন তাড়িয়েছে তোকে তোর বাপ মা ? বল ?”
রাজু চোখ দুটো নিচের দিকে নামিয়ে উত্তর দিল , ” অল্প বয়সে একটা কেস খেয়ে গেছিলাম তাই !”
” কি কেস খেয়েছিলি ?”
” ওটা বলা যাবে না স্যার ! পার্সোনাল!”
তিমির বাবু এবারে দাঁতে দাঁত চিপে বললেন , ” শালা হারামীর বাচ্চা ! ক্রিমিনাল ! ওর আবার পার্সোনাল ব্যাপার! মেরে তোর গাঁড় ফাটিয়ে দেবো বাঞ্চদ! বল কিসের কেস খেয়ে ছিলি !”
রাজু ভয়ে থতমত খেয়ে জবাব দিল, ” আগে যেখানে থাকতাম , সেখানে আমাদের পাশের বাড়িতে একটা মেয়ে ছিল । ওর নাম সুমি। ওর ব্রা এর স্ট্র্যাপটা ধরে টেনে ছিলাম । আর ও সেটা ওর বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছিল । এ কারণে আমাকে জেলেও থাকতে হয়েছিল কিছু দিন। এরপর বাবা আমাকে বাড়ি থেকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে স্যার !”
” ওরে শালা ! তুই তো দেখছি সাত হারামির এক হারামী ! পুরো ঘাগু মাল ! কেন টেনে ছিলি মেয়েটার ব্রা ধরে? হ্যাঁ ? কেন টেনে ছিলি ? মাই দেখবি বলে ?”
” স্যার ওরম কিছু না ! বিশ্বাস করুন ! আমার খারাপ মতলব ছিল না। ওকে আমি ভালো বাসতাম। কিন্তু ! কোনো মেয়ের ঘাড়ের পাশ দিয়ে ব্রা এর স্ট্র্যাপ টা বেরিয়ে থাকতে দেখলে , আমার শরীর টা কেমন খারাপ খারাপ করে ! ওর, ও সেদিন ঘাড়ের কাছে ওটা বেরিয়ে থাকতে দেখে আমি হাত দিয়ে টেনে জামার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে গেছিলাম স্যার। বিশ্বাস করুন আমার খারাপ মতলব কিছু ছিলনা স্যার। আমি ওকে ভালো বাসতাম স্যার ! “
” চুপ কর ! বিশ্বাস করবো তোকে ? হুম ! ভুলে যা ওসব ! কত বয়েস ছিল তখন তোর ?”
” নাইনে পড়তাম !”
তিমির বাবু এবারে জোর গলায় হাসলেন । তারপর বললেন , ” তুই শালা বহুত হারামী মাল। ক্লাস নাইনে থাকতে মেয়েদের ব্রা ধরে টানা টানি করেছিস। তাহলে তো ঠিকই আছে ! উন্নতির গ্র্যাপ ঠিক জায়গায় যাচ্ছে তোর। আর একটু বড় হয়ে তো এই সব কাজ ই করবি ! এক দম ঠিক রাস্তায় হেঁটেছিস! এবার বল মেয়ে টাকে খুন করলি কেন ? “
রাজু মাথা নিচু করে বসে রইল। তিমির বাবু দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করলেন , ” মেয়ে টাকে খুন করলি কেন তুই ? ও তোর কি ক্ষতি করে ছিল ?”
রাজুর মাথা নিচের দিকে নোয়ানো। তিমির বাবু ডান হাত দিয়ে পুনরায় দিলেন একটা সপাটে চড় ওর গালে।ওর ঠোঁটের কোনা বেয়ে নামতে থাকলো তাজা রক্তের স্রোত। ও ধীরে ধীরে মাথাটা তুললো। ওর চোখের দৃষ্টি টা এবার অন্য রকম। একটা জ্বলন্ত কয়লার মতো রাগে জ্বল জ্বল করছে ওর চোখ দুটো এবার। ও এক দৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে তিমির বাবুর দিকে। তিমির বাবু ওর জামার কলার্ট ধরে ওকে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বললেন , ” ওই ! কি তাকাচ্ছিস আমার দিকে ! শালা মেরে তোর পাছা ফাটিয়ে দেবো। শালা শুয়োরের বাচ্চা ! কেন মরলি ওকে তুই ? বল ?”
রাজু উত্তর দিল ,” ওর ও ব্রা এর স্ট্র্যাপ টা কাঁধের ওপর দিয়ে বেরিয়ে ছিল। বিশ্বাস করুন স্যার ! আমি অনেক বার বললাম স্ট্র্যাপ টা সরাতে। কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে ! অনেক বার বললাম , ম্যাডাম প্লিজ ব্রা টা ঢাকুন। আমার শরীর খারাপ করছে। শুনলো না। উল্টে আমার গালে একটা চড় বসিয়ে বললো, ‘ জানোয়ার ! বাড়িতে মা বোন নাই! মেয়ে দের ব্রা এর ফিতের দিকে নজর ! থাম তোকে পুলিশে দেবো। ‘ আর ওমনি আমার মাথাটা ঘুরে গেল। আমি ভালো কথা বললাম , আর ও পুলিশ দেখাচ্ছে। তাই স্যার …!”
তিমির বাবু বিস্ফারিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললেন , ” একটা মেয়ের ব্রা এর ফিতে দেখা যাচ্ছে বলে তুই ওকে খুন করলি ? পাগল নাকি রে তুই ? শুধু শুধু মেরে দিলি ওকে ?মেয়ে টার ঘরের মধ্যে ঢুকেছিলি কেন ? “
” আমি স্যার ডেলিভারি বয় এর কাজ করি ! তাই ম্যাডাম এর একটা পার্সেল ডেলিভারি দিতে গেছিলাম। “
” সেতো অনেক আগেই খোঁজ পেয়েছি তুই কি করিস। তোর তো জিনিস ডেলিভারি দিয়েই ফেরত আসার কথা। অতক্ষন কি কথা বলছিলি মেয়ে টার সঙ্গে ?”
রাজু ভয়ে ভয়ে এবার বললো , ” একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো স্যার ?”
” তুই আমাকে কি জিজ্ঞাসা করবি শালা খুনি হারামী ? আমি যা জিজ্ঞাসা করছি তার জবাব আগে দে !”
” সব বলবো স্যার ! কিন্তু আপনি কি করে ধরলেন যে আমি খুন টা করেছি ?”
তিমির বাবু মুখ হাঁ করে বড় রকমের একটা খিস্তি দিতে গিয়ে থেমে গেলেন। তারপর বিরক্তি ভরা দৃষ্টি নিয়ে বললেন , ” মেয়েটার ফোন আমি চেক করেছি! ওর ফোনে মেসেজ বক্সে আজকে একটা পার্সেল ডেলিভারি করার মেসেজ ছিল ঠিক বেলা এগারো টাই। তারপর ওর ফোনে লাস্ট কল টা চেক করে খোঁজ নিয়ে জানলাম সিম টা তোর নামের। তুই পার্সেল ডেলিভারি করবার জন্য লোকেশনটা জানতে চেয়ে মেয়ে টাকে কল করেছিলি ! লাশ দেখে ডাক্তার বাবু বললেন যে খুন টা হয়েছে বেলা এগারো টা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে ! অর্থাৎ সব মিলে যাচ্ছে । তাই সন্দেহ টা ডেলিভারি বয় এর দিকেই পড়ছে। এবার বল ওর ঘরে অতোক্ষন কি করছিলি তুই ? তোর তো ডেলিভারি দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসার কথা !”
” আপনি কি করে জানলেন স্যার আমি দশ মিনিট ছিলাম ওখানে ?”
তিমির বাবু এবারে প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললেন , ” এই বাল ! পুলিশ অফিসার টা কে , তুই না আমি ? সিসি টিভি ফুটেজে সব দেখা গেছে। তোর মুখ দেখা না গেলেও তোর হাতের আংটি গুলো স্পষ্ট দেখা গেছে। ঘরটার সব জায়গায় ক্যামেরা বসানো ছিল !”
রাজু এবারে চিৎকার করে বললো , ” তাই তো বলি ! শালা ধরা পড়লাম কিভাবে ? আগে তো এভাবে ফাসিনি। আগে অবশ্য কাজ মিটে গেলে পার্সেল গুলো ডেলিভারি না দিয়েই নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলাম। আর কেউ আপনার মতো খুনের তদন্ত করতে এসে খুটিয়েও দেখেনি পার্সেল ডেলিভারির ব্যাপারটা।”
” এই তুই আজে বাজে না বকে যেটা জিজ্ঞাসা করেছি তার জবাব দে !”
” আরে স্যার বলবেন না , বড্ড খিট খিটে ছিল মেয়ে টা । প্যাকেট টা হাতে ধরিয়ে আমি বেরিয়েই চলে এসেছিলাম। আমাকে ও বলল , ‘ দাঁড়াও ! ভেতরের জিনিস টা দেখে নেবো ঠিক ঠাক আছে কিনা। ‘ আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম । তারপর প্যাকেট টা টানা হিঁচড়ে করে ছিড়তে গিয়েই তো ওর বুকের থেকে কাপড় সরে গিয়ে ব্রা এর ফিতা টা বেরিয়ে গেল। ওটার দিকে আমার চোখটা পড়ে মাথা টা সঙ্গে সঙ্গে গরম হয়ে গেল স্যার। ওদিকে প্যাকেট খুলে মেয়েটা গলা ফাটিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল। ভেতরের জিনিসটা নাকি ভাঙা। আমি গলা বাড়িয়ে দেখলাম, একটা কাঁচের শো পিস। আনতে গিয়ে সামান্য চিড় ধরেছে। ফেভিকুইক দিলেই সেরে যায় স্যার। সে কথাও বললাম ওকে। কিন্তু শুনলো না। বলে কিনা ওর বয় ফ্রেন্ড এটা পাঠিয়েছে। আদরের জিনিস। আমি আনতে গিয়ে ভেঙে ফেলেছি। খেসারত দিতে হবে। ভাবুন স্যার। আমি কি ইচ্ছে করে ভেঙেছি ? এমন ও তো হতে পারে জিনিস টা আগে থেকেই ভাঙায় ছিল। মেয়েটার বকাঝকা শুনে আমার মাথায় খুন চেপে গেলো। একে এই চিৎকার লাফালাফি, তারপর মেয়েটার ব্রা এর ফিতে টা উকি দিচ্ছে ঘাড়ের ওপর দিয়ে। এরপর নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না স্যার ! তারপর ..! “
তিমির বাবু এবারে রাজুর কথা বার্তা শুনে বেশ বুঝতে পারলেন যে ছেলে টা সাইকো কিলার। ওর ভালো রকমের গন্ডগোল আছে মাথায়। নইলে শুধু মাত্র মেয়েদের ব্রা দেখে খুনের চিন্তা কারো মাথায় আসে ?তিনি এবারে নিজেকে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত করে , ঠান্ডা মাথায় প্রশ্ন করলেন , “তোর তো এই হাড় লিকলিকে পাট কাঠির মতো চেহারা। ওই ওতো বড় ধুমসি মেয়ে টাকে একা মারলি কি করে তুই ? তোর সঙ্গে আর কে ছিল বল ?”
রাজু একটা মিহি হাসি ছেড়ে উত্তর দিল , ” একাই ছিলাম স্যার ! ছিটা গাছের নাম শুনেছেন স্যার ?”
তিমির বাবু বললেন , ” না !”
” বাংলাদেশে খুব হয় স্যার। একটা ফুল গাছ। নয়নতারা গাছের মতো রং বেরঙের ফুল হয় ওতে। ওই গাছের রস ইনজেকশন এর সিরিঞ্জে করে টেনে কারো শরীরে পুশ করে দেন স্যার ! দেখবেন মিনিট খানেকের মধ্যেই জ্ঞান হারাবে আর তারপর ওই ভাবেই পড়ে থেকে মরে যাবে। “
তিমির বাবু এবারে কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞাসা করলেন , ” এসব তুই জানলি কিভাবে ?”
” স্যার আপনাকে তো আগেই বলেছি। ক্লাস নাইনে আমি একবার জেলে ঢুকে ছিলাম। ওখানেই একজন কয়েদির মুখে শুনেছিলাম ছিটা গাছের বিষের ব্যাপারটা। তারপর সেটা পরীক্ষা করে দেখলাম , লোকটা একদম ঠিক বলেছে।এরপর থেকে ক্যাপ লাগানো লোডেড সিরিঞ্জ একটা করে সব সময় আমার সঙ্গেই থাকে। কখন কোন জায়গায় হুট করে দরকার পড়ে যায়। তাই রেডি করেই রাখি।
“এটা তোর কত নম্বর খুন ?”
“জানি না স্যার !”
” কত জনকে এভাবে মেরে ছিস তোর মনে নেই ?”
” না স্যার ! গুনে কি হবে ? কাজ খতম মাথা থেকে সব আউট ! আসলে কি জানেন স্যার! আমি এমনি তে ঠিকই থাকি। এই আপনার মতোই। কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু ওই সব নজরে পড়লে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারিনা। এই এখন যেমন মেয়েটাকে মেরে ফেলে আমার কষ্ট হচ্ছে! আফসোস হচ্ছে! কিন্তু এখন আর এসবের কি দাম বলুন! আমি জানি আমি অপরাধ করেছি !”
” ঠিক কবে থেকে তোর এরম টা হয় ? মানে ওই ব্রা দেখলে খুন করতে ইচ্ছে করে ?”
এবারে রাজু স্মৃতির গভীরে হারিয়ে গেল। তারপর খানিক বাদে ফিরে এসে বললো , ” আমি জানি স্যার আমি খারাপ কাজ করেছি। মানুষ মারা অপরাধ স্যার। আমি এখন বুঝি। কিন্তু বিশ্বাস করুন স্যার চোখের সামনে ব্রা প্যান্টি এসব দেখলে না আমার শরীর খারাপ করে । এই আমি যেন অন্য একজন মানুষ হয়ে যায়। আর তারপরই মনের মধ্যে জমা হয় রাগের। যেন মনে হয় এরম ব্রা প্যান্টি প্রকাশ্যে দেখানো মেয়ে গুলোকে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলি। ভাবি বোধহয় ওরা চোখের সামনে থেকে সরে গেলেই আমার শরীর খারাপ টা আর করবে না। আমি সুস্থ হয়ে উঠবো। আর এতো সব ভাবতে গিয়েই ওদের আমি বলি ওসব ঢেকে রাখতে। সেটা শুনে ওরা ক্ষেপে গিয়ে আমাকে রাগ দেখায় , কখনো মারতে আসে , আর সেই সময় আমার মাথা টাও গরম হয়ে ওঠে স্যার। “
” তুই যেটাকে শরীর খারাপ বলছিস ওটা আসলে সেক্স। তোর মেয়েদের অন্তর্বাস দেখলে সেক্স উঠে যায়। ওটা স্বাভাবিক ব্যপার। কিন্তু তুই যে এরপর হিংস্র হয়ে যাচ্চিস সেটা তোর রোগ। মনের অসুখ ! বুঝলি ! এবার বল ঠিক কবে থেকে এটা শুরু হয়েছে তোর সঙ্গে ? “
” অনেক ছোট থেকে স্যার। আমি তখন ক্লাস সেভেনে কি এইটে পড়ি। আমি যেখানে থাকতাম সেখানে কয়েকটা বাড়ি পর একজন মহিলা থাকতো । এক , বিধবা মহিলা। এখন বুঝি। খুব খারাপ মহিলা। শালী ঢেমনী মাগী ! আমাদের বাড়ির সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল ওর। প্রথম প্রথম ছোট্ট অবস্থায় আমাকে ডেকে নিয়ে যেত ওর ঘরে।ঘরের মধ্যে চারিদিকে ওর ব্রা প্যান্টি সব ঝুলিয়ে রাখতো। এসবের মানে আমি বুঝতাম না তখন। তারপর একদিন দুপুর বেলা ফাঁকা ঘরে আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে নিজের কাপড় খুলে শুধু ব্রা প্যান্টি পরে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো , ‘ তোকে খুব আদর করতে ইচ্ছে করে জানিস ! সেই কবে থেকেই ভাবি তোকে জড়িয়ে ধরে শুধু চুমু খাবো! কিন্তু সুযোগ হয়না। আজ তোকে পেয়েছি ! সব সুদে আসলে তুলে নেবো ! ‘ মেয়েটার কথা গুলো শুনে ওর ভাব ভঙ্গি দেখে , আমি ভয় পেয়েছিলাম স্যার। কোনোদিন কারো ওরম রূপ দেখেনি। ভয়ে নিজেকে কোনো রকমে ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে আসি সেদিন। এরপর আরো একদিন , আমার বাবা মা সেদিন বাড়ি ছিল না। হয়তো কাজে কোথাও গিয়েছিল। সেই মহিলা হঠাৎ ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে সম্পূর্ন উলঙ্গ হয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে ওর মাই দুটো এগিয়ে ধরে বলল , নে খা ! খা ! দেখ মজা পাবি ! ‘ আমি স্যার ভয়ে চিৎকার করতে যাবো এমন সময় ওর ব্রা এর ফিতে টা আমার গলায় জড়িয়ে টেনে ধরলো মেয়ে টা। আমার গলা দিয়ে একটুও আওয়াজ বেড়ালো না। নিঃস্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল । নিজেকে ছাড়ানোর শক্তি তখন আমার ছিল না স্যার। একটু খানি স্বাস নেবার জন্য আমি ছট পট করলে , ও আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললো , ‘ আমি যা বলবো সেটা যদি না শুনিস ! এই ব্রা এর ফিতা তোর গলায় পেঁচিয়ে তোকে মেরে ফেলবো। ‘ এরপর থেকে স্যার দূর থেকে আমাকে দেখলে ও জানলা দিয়ে একটা ব্রা দুলিয়ে দুলিয়ে আমাকে ইশারা করে ডাকতো। কিংবা লোকজনের মাঝে ওর ব্রা এর ফিতা টা কাঁধের কাছে বার করে আমাকে ভয় দেখাতো মেরে ফেলার। আড়ালে গিয়ে ওর শরীরের খিদে মেটানোর ইশারায় ছিল ওই ব্রা দেখানো টা। আমি অসহায় হয়ে পড়ে ছিলাম স্যার। কাউকে ভয়ে বলতেও পারিনি এসব।এরপর ওই হারামী মাগী আমাকে চুষে খেয়েছে অনেকবার। আমার রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল। অল্প ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখতাম ওই মেয়েটা ব্রা হাতে করে আমার গলায় পেঁচাচ্ছে। আমি ঘেমে নেয়ে ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসতাম। দিন দিন শুকিয়ে যেতে থাকলাম। এরপর থেকে মেয়েদের দেখলেই আমার কেমন ঘেন্না হয় স্যার। আর ব্রা প্যান্টি দেখলে তো নিজেকে আটকে রাখতে পারি না। পুরোনো ঘটনা ফিরে আসে আর আমি অন্য রকম মানুষ হয়ে গিয়ে খুন টা করে ফেলি স্যার ! “
তিমির বাবু সবটা শুনে বললেন , ” আমি ঠিক ই আন্দাজ করে ছিলাম । তোর কোনো পুরোনো হিস্ট্রি নিশ্চয় আছে। নইলে মেয়েদের ব্রা প্যান্টি দেখলে তুই এই ধরণের খুন তুই করবি বা কেন! বড় জোড় ধর্ষণ করতে পারিস তারপর প্রমান মেটানোর জন্য খুন ! তবে …!”
” তবে কি স্যার ?”
তিমির বাবু এবারে একটু নরম হয়ে বললেন , ” তোর সমস্যা আর কষ্ট টা আমার থেকে ভালো কেউ বুঝবে না রে ! তোর মতোই একজনকে আমি খুঁজছিলাম অনেক দিন ধরে। তোর কোনো ভয়নেই ! খুব ভাগ্য ভালো তোর যে আমার হাতে এসে পড়েছিস ! কিচ্ছু হবে না তোর !”
রাজুর মাথাটা এবার বোঁ করে ঘুরে গেল। ও ভাবতে থাকলো যে পুলিশ অফিসার ওকে খুনের অপরাধে ছল চাতুরী করে ধরে এনে জেরা করছে। সে বলে কিনা তার কিছু হবে না ? কোনো ভয় নেই ! ও অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দেখল সাব ইন্সপেক্টর তিমির বাবু আর সে জাঁদরেল পুলিশ অফিসার নেই। ওঁর চোখে মুখে ফুটে উঠেছে অন্য রকমের ভাব। সম্পুর্ন আলাদা জগতের একজন মানুষ। পরনের লাল সালু টা এবার যেন ওঁকে বেশ মানিয়েছে। বিরাট মাপের আশ্চর্য হয়ে রাজু বলল , ” আমার ভয় নেই মানে ? আমি কিছু বুঝলাম না স্যার !”
তিমির বাবু বললেন ,” দুঃখ কেবল একটাই ! তুই খুব ভুল জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছিস রাজু ! আর ওখানটাতেই আমার রাগ। তুই ভাবছিস শুধু মাত্র খুন করার অপরাধে তোকে তুলে এনেছি এখানে ? না ! সে কারণে নয়! শুধু মাত্র ওই মেয়ে টাকে খুন করার জন্য তোর প্রতি আমার রাগ। তবে যাক গে। তোকে যখন আমি পেয়েই গেছি আর চিন্তা নেই। বাকি কাজ গুলো এবার থেকে তুই-ই করবি। “
রাজুর মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়ল। ও কিছুই বুঝতে পারছে না তিমির বাবু কি বলতে চাইছেন ? হঠাৎ এরুপ পরিবর্তন কেন তার ? আর ওকে দিয়ে কি কাজ করাতে চাইছেন তিমির বাবু ? ও বিস্ময় ভরা দৃষ্টি নিয়ে এবারে বলল , ” আপনি কি বলছেন আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না স্যার ? “
” পারবি পারবি সব পারবি ! ” বলে তিমির বাবু রাজুর হাতের হাতকড়া টা খুলে দিলেন। তারপর বললেন , ” আয় আমার সঙ্গে। “
এরপর দুজনে সেই বদ্ধ কুঠুরী থেকে বেরিয়ে এসে একটা অন্ধকার ঘরের চৌকাঠের সামনে এসে দাঁড়ালো। রাজুর চোখে মুখে আশ্চর্য রকমের বিস্ময়। তিমির বাবুর চোখ মুখ পাল্টে গেছে। এতক্ষণ রাজু যাকে দেখে এলো সেই সাব ইন্সপেক্টর তিমির বাবু এখন যেন বিনয় এর অবতার। তিমির বাবু এবারে অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করে প্রথমে একটা মোমবাতি জ্বালালেন। তারপর একে একে বেশ কিছু মোমবাতি জ্বালিয়ে চললেন। এ ঘরে ইলেক্ট্রিকের আলো নেই।ক্রমশ মোমবাতির আলো তে ঘরটা প্রকট হয়ে উঠলে। রাজু কৌতূহল পূর্ন চোখ নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। ওর বুকটা অজানা এক আতঙ্কে ঢিপ ঢিপ করছে। বিরাট ঘর, যার একদিকে রয়েছে একটা ল্যাবরেটরি জিনিস পত্র। আর অন্য দিকে একটা পূজার বেদী। যেটা লাল সালু দিয়ে ঢাকা রয়েছে। রাজুর মাথায় যেন কিছুই প্রবেশ করছে না। পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পুর্ন ভিন্ন। ও জিজ্ঞাসা করলো , ” স্যার ! এসব কি ? আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না ! এ আমাকে কোথায় নিয়ে এলেন আপনি ?”
” তুই কি ভেবেছিস ! এই কাপালিকের বেশ আমার ছদ্মবেশ ? তোকে ধরার জন্য আমি ধারণ করেছিলাম ? উঁহু ! না ! বরং ওটাই আমার আসল পরিচয় । পুলিশের পোশাক টাই ছদ্মবেশ বলতে পারিস। আমি সাধক। আমি ষড়ঙ্গ সাধনা করি। অবশ্য তোকে বলে না দিলে এসবের কিছুই তুই বুঝবি না। তবে শোন , তন্যতে বিস্তার্যতে জ্ঞানম , অনেন ইতি তন্ত্রম। এসব আগম শাস্ত্রের বিষয়। অর্থাৎ সেই শাস্ত্র যার দ্বারা জ্ঞানের বিস্তার লাভ হয়। তোর মাথায় এসব ঢুকবে না। তবে আমি অল্প করে তোকে সব বুঝিয়ে দেবো। কারণ আজ থেকে তুই আমার সাধন সঙ্গী। তোকে আমি শিষ্য বলে স্বীকার করে নিলাম। তুই এই অল্প জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছিস। ওর থেকে মুক্তি আমি তোকে করে দেবো। আয়! এদিকে আয় আমার সঙ্গে। “
কথা গুলো বলে তিমির বাবু রাজু কে ঘরের অন্য পাশে রাখা ল্যাবরেটরি দিকে এবারে নিয়ে গেলেন। রাজু বিনা বাক্য ব্যয়ে কাঠের পুতুলের মতো সেদিকে এগিয়ে গেল। প্রথমেই যেটা ওর চোখে পড়ল সেটা হলো ছোট ছোট কাঁচের শিশি তে সার বদ্ধ ভাবে রাখা বেশ কিছু রক্ত মাখা কাপড়ের টুকরো। ও সেই দিকে ইশারা করে জিজ্ঞাসা করলো , ” স্যার এগুলো কি ?”
তিমির বাবু স্মিত হাসি ছেড়ে এক একটি কাঁচের শিশির ঢাকনি খুলে ভেতরের থেকে কাপড়ের টুকরো গুলো বের করে নাকের কাছে ধরে শুকতে থাকলো , ওর থেকে নির্গত উদ্ভট কটু গন্ধটা। তারপর তিমির বাবু সেগুলো পুনরায় কৌটার মধ্যে প্রবেশ করে বললেন , ” এগুলি সব আমার পূজার উপকরণ । এই দেখ এই টি হলো খপুষ্প । অর্থাৎ রজস্বলা স্ত্রী লোকের রজ সমৃদ্ধ কাপড়ের টুকরো। এটা স্বয়ম্ভু পুষ্প , মানে প্রথম স্ত্রী লোকের রজ। কুন্ড পুষ্প , মানে সধবা স্ত্রী লোকের রজ। গোলক পুষ্প, মানে বিধবা স্ত্রী লোকের রজ। আর এই শেষের টা হলো চন্ডালির রজ , মানে বজ্র পুষ্প। এসমস্ত কিছু সঞ্চয় করতে কম বেগ পেতে হয়নি রে। ভীষণ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। অসীম ধৈর্যর ফসল এসব। অনেক বছর ধরে একটু একটু করে জোগাড় করে রেখেছি এ সমস্ত কিছু । “
রাজুর গা টা গুলিয়ে ওঠে , এ সমস্ত কিছু শোনার পর। ও দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ বিবর ঢেকে আড়াল করার চেষ্টা করে বমন ইচ্ছাটাকে। তিমির বাবু সেটা লক্ষ্য করে বললেন , ” উঁহু ! ঘৃণা ত্যাগ প্রয়োজন। অবশ্য তোর এতে কোনো দোষ নেই ! এসব কি আর এক দিনে হয় ! সময় লাগবে। তবে তোর মধ্যে লক্ষণ আছে ভালো সাধক হওয়ার। তুই পারবি। এগিয়ে আয় এই দিকে। “
বলে তিমির বাবু খানিকটা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চললেন রাজু কে। ল্যাবরেটরির আরো একটু ভেতর দিকে ঢুকে , রাজুর মুখটা আতঙ্কে হা হয়ে গেল। ল্যাবরেটরি লম্বা সেল্ফ এর ওপর কাঁচের বড় বড় জার এ কেমিক্যাল এ ডোবানো রয়েছে নারী দেহের প্রতীক অঙ্গ অর্থাৎ একটা করে ব্যবচ্ছেদকৃত স্তন। সেই দিকে চেয়ে তিমির বাবু বললেন , ” একটু আগে আমি বললাম না , আমি ষড়ঙ্গ সাধন করি। এগুলি তার ই চিহ্ন। ষড়ঙ্গ সাধনে প্রয়োজন হয় একজন নারী শরীরের। কারণ সাধনের পর্যায় হলো ছটি । তা হল শারীরিক মৈথুনের বিভিন্ন অঙ্গ। যেমন আলিঙ্গন , চুম্বন , শীৎকার , অনুলেপন , রমণ ও রেতোৎসর্গ। এই কাঁচের জার এ যে স্তন গুলো দেখছিস এগুলো সেই সব সাধন সঙ্গিনীর বাম দিকের স্তন, যাদের সঙ্গে কোনো এক সময় মৈথুন সাধনে আমি লিপ্ত হয়ে ছিলাম। এই সাধনা হল বড় জটিল প্রক্রিয়া। এর জন্য যে সে নারী দেহ হলে চলে না রে। তার ও কিছু লক্ষণ আছে । যেমন ধর পদ্মিনী নারী। যে হবে কিনা গৌরাঙ্গি , দীর্ঘ কেশী , অমৃত ভাষিনি , রক্ত নেত্রা। শঙ্খীনি নারী হবে জন রঞ্জন কারিণী। নাগিনী নারীর লক্ষণ হবে নাতিদীর্ঘা , দীর্ঘ কেশী , মধ্য পুষ্ট। এরূপ আরো নারীর লক্ষণ রয়েছে। কৃষ্ণঙ্গি , কৃশাঙ্গি , দোন্তুরা , মদতাপিতা , হৃস্যকেশী , নির্লজ্জা , সদা ক্রুদ্ধা , হাস্য হীনা , নিদ্রালু প্রভৃতি। এরূপ সকল নারীর সঙ্গেই আমি মৈথুন সাধন সম্পন্ন করেছি। কিন্তু আর একটি মাত্র নারীর সঙ্গে দেহ সাধন সম্পন্ন হলেই , আমি হয়ে উঠতাম সিদ্ধ পুরুষ। যে নারী হল বহুভক্ষিণী । যাকে তন্ত্র মতে ডাকিনী বলা হয়। সেই লক্ষণ যুক্ত নারীর সন্ধান করে চলে ছিলাম কবে থেকেই। মিলেও ছিল একটা। কিন্তু তুই তাতে ব্যগড়া দিলি। যাকে তুই খুন করলি সেই ছিল আমার নজরে বহু ভক্ষিণী নারী। যার সাথে মৈথুন ক্রিয়া সম্পাদন করে আমি সিদ্ধ পুরুষ হয়ে উঠতাম। কিন্তু হলো না। এখন যেহেতু তোর কারণে আমার সাধনা বাঁধা প্রাপ্ত হয়েছে। তাই তোর এখন দায়িত্ব সেই লক্ষণ যুক্ত নারী জোগাড় করে আমাকে এনে দেয়ার। অবশ্য আমি তোকে সমস্ত লক্ষণ শিখিয়ে দেবো। পারবি তো ? মনে রাখ এটাই তোর জেল হেফাজত থেকে একমাত্র বাঁচার রাস্তা। নইলে বাকি জীবন টা পচে মরবি লোহার গারোদের পিছনে। “
রাজুর চোখের সামনে থেকে অন্ধকার এবার কিছুটা কেটেছে। ও খুব ভালো মতোই বুঝে গেছে তিমির বাবু আসলে একজন তান্ত্রিক। যে কিনা গুপ্ত সাধনা করে থাকেন। কিংবা সাধনার নাম করে নারী দেহ উপভোগ করে। কিন্তু তাতে তার কি ? এটা তিমির বাবুর ব্যক্তিগত কর্ম। ওতে তার কিছু এসে যায় না । তবে ও নিজেকে বাঁচানোর জন্য এই একটি পথ ই খোলা দেখতে পাচ্ছে এখন। সাধন সঙ্গী হয়ে জেল যাত্রা থেকে বিরত থাকাতেই বুদ্ধি মানের কাজ হবে। ও সাত পাঁচ ভেবে নিয়ে , মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয় , ” আমি পারবো স্যার। এটা এমন কোনো ব্যাপার না। আমি তো বহু বাড়িতে ডেলিভারি দিতে যায়। সেরম কোনো মেয়ের খোঁজ পেলেই আপনাকে জানাবো। কিন্তু ওই স্যার ! আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলে গ্যারেন্টি দিতে পারছি না। “
তিমির বাবু হেসে বললেন , ” শুধু সাধন সঙ্গিনী জোগাড় করলেই তো কাজ শেষ নয়। তোকে সাধনাও করতে হবে আমার সঙ্গে। সমস্ত ইন্দ্রিয় চেতনা কে জয় করতে হবে। নিজের মস্তিস্ক কে ঠান্ডা রাখতে হবে। আমার যে সাধন প্রক্রিয়া তাতে একজন ভৈরব এর থাকাটা আবশ্যিক। “
রাজু বলল , ” সে না হয় হওয়া যাবে। তবে আপনিও কিছু কম জাননা স্যার ! এই যে দিনে রাতে রাস্তা ঘাট থেকে মেয়ে গুলো গায়েব হয়ে যাচ্ছে। লোকে তো আপনার কাছেই কমপ্লেন লেখাতে আসছে। ওরা কি কেউ ভাবতে পারবে যে আপনিই এসবের আসল খেলোয়াড় ! “
তিমির বাবু এবার জিভ বার করে কয়েক বার চুক চুক করে বললেন , ” উঁহু ! ওসব কথা এখানে বলে না। এটা পবিত্র ঘর। সাধনার ঘর ! ওসব কাজ আমি সামলায় এই ঘরের বাইরে বেরালে। এ ঘরে পুলিশ বলে কেউ নেই। চৌকাঠ পেড়িয়ে এ ঘরে প্রবেশ মাত্র , আমি অন্য মানুষ। “
” আপনি স্যার শুধু মেয়ে গুলোর একটা স্তনই রেখে দিলেন ? কিন্তু লাশ গুলো গায়েব করলেন কোথায় ? কেউ টের ও পেলো না ! এতো গুলো মানুষের দেহে গুম হয়ে গেল কিভাবে স্যার ? “
তিমির বাবু প্রশ্ন টা শুনে বললেন , ” ও এমন কিছু ব্যাপার না। ও তুইও শিখে যাবি। আসলে মেয়ে গুলোর বাকি দেহাংশ আমি ভক্ষণ করে ফেলেছি !”
কথা টা শেষ হতেই তিমির বাবু ভয়ংকর পৈশাচিক হাসি ছাড়লেন। সে হাসি ঘরের দেয়ালে ঠোক্কর খেতে খেতে যেন কাহিল করে দিতে থাকলো রাজু কে। রাজুর , এবার কানের দুই পাশ দিয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে । এ কি ফ্যাসাদে পড়েছে সে। ও নিজে মানুষ খুন করলেও সেটা একটা ঘোরের মধ্যে । বাকি সময় টুকু ও আর পাঁচটা মানুষের মতোই সাধারণ মানুষ। মানুষ খেয়ে ফেলার কথা টা ওর কানের মধ্যে প্রবেশ করতেই ওর শিরদাঁড়া টা একবার কেঁপে উঠলো। হাত পা যেন জড়ো হয়ে এলো ওর। ও যখন পাথরের মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে তিমির বাবু হাসি থামিয়ে এবার বললেন , ” নর মাংস ভীষণ সুস্বাদু। তুই আমার শিষ্য , তোকেও খাওয়াবো !”
মানুষ খেয়ে ফেলতে হবে ! এই কথা টা শুনে রাজুর বুকের ভেতর টা হঠাৎ মোচড় দিয়ে উঠলো। হাত পা যেন অবশ। কোন ভয়ঙ্কর মানুষের খপ্পরে পড়েছে , এবার সে , তা টের পাচ্ছে। অর্থাৎ ওর সঙ্গত দিতে গিয়ে এবার থেকে ওকেও মানুষ ডেকে এনে খুন করে খেয়ে ফেলে লাশ গায়েব করতে হবে ! এই ব্যাপারটা ভাবা মাত্রই ওর পাকস্থলী থেকে একটা অরুচি ভাব উঠে এলো। মাথা যেন ঘুরছে। শরীর অস্থির করছে। খারাপ করছে শরীর টা ওর। ও এবারে তিমির বাবুর দিকে চেয়ে বলল , ” আপনি মানুষের মাংস খান ? আপনি তো রাক্ষস ! আপনি মানুষ না ! আপনি আমার থেকেও বড় মাপের অপরাধী আর পাগল ! “
তিমির বাবু প্রসন্ন মুখে উত্তর দিলেন , ” ওসব অঘোরী দের কারবার। সব শিখে যাবি তুইও !”
রাজু পাগলের মতো লাফিয়ে উঠে বলে , “না ! আমি এসব কিছুতেই পারবো না! মানুষ হয়ে মানুষের মাংস খেতে আমি পারবো না ! ওসব আমার দ্বারা হবে না। দরকার নাই ওরম সাধন ভজনের। আপনি আমাকে জেলে দেন , ফাঁসি দেন , সেই ভালো। এসব কাজ আমার দ্বারা হবে না। “
রাজুর মুখের কথা গুলো শুনে এক মুহূর্তে তিমির বাবুর মুখ টা আবার অন্য রকম হয়ে গেল। এবারে তিমির বাবু রাজুর চুলের মুঠি ধরে বললেন , ” পারবি না ? পারবি না মানে ? পারতে তোকে হবেই ! তুই আমার বহু দিনের তপস্যা তে বাঁধা দিয়েছিস মেয়ে টাকে মেরে ফেলে। তোকে এতো সহজে ছেড়ে দেবো , ভাবলি কি করে তুই? আমার মুখের খাবার কেড়ে নিয়েছিস তুই ! তুই জানিস না কত বড় অপরাধ করেছিস আমার সাধনায় বাঁধা দিয়ে ! দয়া করে একটা বাঁচার সুযোগ দিয়েছিলাম তোকে ! আর তুই সেটা লাথি মেরে সরিয়ে দিতে চাইছিস ! দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা !”
বলে তিমির বাবু অন্য হাতে কাঁচের জার ভেঙে বার করে আনলেন একটা কবেকার ব্যবচ্ছেদ কৃত স্তন। তারপর সেটা জোর করে ঠেসে ধরলেন রাজুর মুখে । রাজু দীর্ঘাঙ্গী , সবল , আসুরিক শক্তি সম্পন্ন তিমির বাবুর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। সে চিৎকার করে বলতে থাকলো , ” আমাকে ছেড়েদিন স্যার ! আমি এসব পারবো না। সত্য বলছি পারবো না। অন্য কাউকে দেখুন। মানুষ খেতে আমি পারবো না। “
” পারতে তোকে হবেই । তুই হবি আমার সাধন সহযোগী ভৈরব। ” বলে তিমির বাবু রাজুকে নীচে ফেলে ওর চোয়াল ফাঁক করে পুরে দিতে থাকলো কর্তিত স্তন টা। রাজু অনিচ্ছা আর যন্ত্রনায় ছটপট করতে করতে বলল , ” আমাকে ছেড়েদেন স্যার। ছেড়েদেন !”
তিমির বাবুর চোখে তখন আগুন। তিনি দাঁতে দাঁত চিপে এবার বললেন , ” তোকে ছাড়ি কি করে বল ? তুই আমার সমস্ত গোপন ব্যাপার জেনে গেছিস। কেন শহর থেকে মেয়ে গুলো গুম হচ্ছে তুই জেনে গেছিস। এখন তুই বাইরে বেরিয়ে কিংবা তোকে খুনের অপরাধে আদালতে তুললে , নিজের দোষ স্বীকার করে নিজে তো মরবিই , তার সঙ্গে আমার কর্ম সমন্ধে চিৎকার করে বলে , আমাকে নিয়েই মরবি। অর্থাৎ কোনো দিক দিয়েই আর তোর বাঁচার কোনো রাস্তা নেই। মরতে তোকে হবেই!”
এবারে রাজু বাঁচার চরম তম চেষ্টায় দুই পা দিয়ে ঠেলে তিমির বাবু কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। , তিমির বাবু তৎক্ষণাৎ নিজের কোমর থেকে রিভলভারটা বার করে পর পর দুটো গুলি ছুঁড়লো ওর দিকে । দুটো গুলিই লক্ষ্য ভেদ করলো। রাজু এক পলকে নিস্তেজ হয়ে মেঝেতে পড়ে রইলো। ওর বুক থেকে তাজা রক্ত গড়িয়ে মেঝে ভিজিয়ে দিচ্ছে।
তিমির বাবু এবার উঠে দাঁড়ালেন। তারপর দীর্ঘ কয়েকটা নিঃস্বাস ত্যাগ করে বললেন , ” মূর্খ ! বাঁচার রাস্তা দিলাম তবু তোর পছন্দ হলো না। নে এবার শান্তি তে ঘুমা। “
হঠাৎ ওঁর চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসল। সেই সঙ্গে ঘাড়ের কাছে একটা সূক্ষ যন্ত্রনা ফুটে ওঠল তিমির বাবুর। সেই যন্ত্রনা লক্ষ করে হাত টা বাড়াতেই ওঁর হাতে ঠেকলো একটা সিরিঞ্জে। আতঙ্কে চোয়াল ঝুলে গিয়ে চোখটা ফেটে বেরিয়ে আসল এবার তিমির বাবুর। অর্থাৎ ধস্তাধস্তির সময় রাজু , তিমির বাবুর অজান্তেই ওঁর ঘাড়ে বিষাক্ত ছিটা গাছের রস পূর্ন সিরিঞ্জ টা গেঁথে দিয়েছে।
এরপর ধপ করে চোখ উল্টে মেঝেতে পড়ে গেলেন তিমির বাবু ।