হত্যা রহস্য| কঠোর ভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য | অমিত সিংহ| Bengali Stories for Matured
0 (0)

কোলকাতা তথা ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ পতিতালয়। উনিশ শতক থেকেই রমরমিয়ে চলছে এখানের যৌন ব্যাবসা। জায়গাটার নাম শুনেই ভদ্রলোকেরা অস্বস্তি বোধ করে, ঠিক সেই সোনাগাছিতেই পা দিল সিনিয়র রিটায়ার্ড ইন্সপেক্টর শিবেন এবং তরুণ ইন্সপেক্টর রূপম। সোনাগাছি নামটার মধ্যেই একটা নোংরা ব্যাপার। রূপমের বিরক্তি লাগলেও শিবেনবাবুর পিছন পিছন না গেলে তার তো আবার হবে না। তাই মুখে কুলুপ এঁটে চুপচাপ চলতে থাকল সে। দুশ্চিন্তাটা হল যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে আর রক্ষে থাকবে না। রূপমের সদ্য বিয়ে হয়েছে। তার সুন্দরী বউয়ের শরীরটা হয়তো আর উপভোগ করা হবে না, যদি একবার কেউ তাকে এখানে ঢুকতে দেখে। এইসব ভাবতে ভাবতে পথ চলতে থাকল রূপম। বেশ কয়েকটা গলি পেরিয়ে শিবেনবাবু একটা দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। সেই কাঠের দরজায় জ্বলজ্বল করছে নগ্ন মহিলাদের যৌনমিলনের ছবি। রূপম এতেই এতটা বিরক্ত বোধ করল যে তা বলার নয়। ভিতরে প্রবেশ করলে কি জানে কি হবে এইসব সাত পাঁচ ভাবতে থাকল দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে। শিবেনবাবু আশপাশটা দেখে নিয়ে তিন চারবার দরজায় আওয়াজ করবার পর দরজাটা খুলে গেল। শিবেন বাবু বললেন ‘ রূপম চিন্তা না করে ভিতরে প্রবেশ কর।’

শিবেন বাবু রূপমকে জানায় নি তারা কেন এখানে এসেছে। পুলিশের ইউনিফর্মটাও আজ তারা পরে নি। যে মেয়েটার ঘরে তারা প্রবেশ করেছে তার মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে রইল রূপম। সত্যি কে বলবে এই মেয়েটা পতিতা। তার এতদিন বিশ্বাস ছিল পতিতারা দেখতে খুব একটা সুন্দর হয় না কিন্তু এখানে তো সম্পূর্ণ বিপরীত জিনিস। কোন হিন্দি সিনেমার নায়িকা মনে হচ্ছে। মেয়েটার উঁচু হওয়া বুক, লাল গোলাপের মতো ঠোঁট, আর মজবুত চেহারা তার সাথে দেবী প্রতিমার মতো অপূর্ব মুখমন্ডল উপভোগ করছিল রূপম। মনে মনে ভাবছিল বিপত্নীক শিবেনবাবু অবসর জীবনটা বোধ হয় ভালোই চলছে। কিন্তু তার সমস্ত নোংরা ভাবনাকে এক লাথি মেরে দিল শিবেনবাবু আর পতিতা মেয়েটা।

‘ মা, তোমাকে আমি যেই খবরটা নিতে বলেছিলাম তুমি কি সেই ব্যাপারে সামান্য কোন খবর পেয়েছ?’

– ‘ না বাবা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু বিশেষ কোন খবর পাই নি। তবে চেষ্টা করে চলেছি যাতে সামান্য কোন খবর পেলেই আপনাকে দিতে পারি। আর মাসি আমাকে খুব একটা বেশি বাইরে বার হতে দেন না। এখানে অনেক খারাপ লোক আসে তাদের নজর একবার পড়লেই কি পরিণতি হবে তা তো আপনি ভালো করেই জানেন।’

– ‘ হ্যাঁ আমি সব বুঝতে পারছি। তোমার মাসি সঠিক কথাই বলেছে। তবে কেসটা বেশ জটিল বুঝলে, আর তোমার আর তোমার মাসির সাহায্য এক্ষেত্রে খুব প্রয়োজন। আর একটা কথা এই যে এই ছেলেটাকে দেখতে পারছ এর নাম রূপম। খুব বুদ্ধিমান। আমার সঙ্গে এই অভিযানে আছে। তোমার কাছে হয়তো মাঝে মাঝে আমি না আসলেও রূপম আসবে।‌ আর তুমি রূপমকে সাহায্য করার চেষ্টা করবে এই কেসটা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত।’

কথা শেষ করে রূপমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে শিবেনবাবু বললেন ‘ তুমি নিশ্চয়ই ভাবছ এই বুড়োটা তোমাকে এখানে এনে কেন ফেলল আর কি যা তা বলছে তাই তো?’

  • ‘ না স্যার সেটা না তবে আমি শুধু এইটুকুই ভাবছি কেসটা কি?’
  • ‘ হুম, সেটা তো তোমাকে বলতেই হবে। তাহলে প্রথম থেকেই বলি মন দিয়ে শোন। তুমি দু’বছর আগেই হয়তো খবরে দেখেছ একটা ভয়ঙ্কর মৃত্যুর খবর। একজন সাংবাদিক যেটাকে লুকিয়ে লুকিয়ে কিছুটা তোলার চেষ্টা করেছিল আর সেটাই মিডিয়াতে সাড়া ফেলে দেয়।
  • ‘ আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কোনটা স্যার?’
  • ‘ হুম শুধু তুমি কেন অনেকেই বুঝতে পারবে না। আর পাঁচটা সাধারণ খবরের মধ্যে ওই খবরটাও হারিয়ে গেছে বর্তমানে।’
  • ‘ সরি স্যার আমি কিন্তু অনুমান করতে পারলাম না কোন কেসটার কথা বলতে চাইছেন।’
  • ‘ হুম শোন তাহলে। শহরে এই সোনাগাছির কাছাকাছি একটা ফুটপাতে একটা দেহ উদ্ধার হয়। তার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে তাকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। দেহটা কার ছিল সেই ব্যাপারে একদম কিছু জানা যায় নি। দেহটা পুড়ে ছাই হয়ে গেছিল। পুলিশ তদন্তে নামলেও তারপর খুব তাড়াতাড়ি ধামা চাপাও দিয়ে দেয়‌ কেউ বা কারা। কি কারণে ধামা চাপা পরে যায় তাও বলতে পারব না। তবে সেই কেসটা  একজন সাংবাদিকের ক্যামেরা বন্দি হয়। ফলে ব্যাপারটা নিয়ে মিডিয়ায় হৈচৈ পড়ে যায়। কিন্তু নিমেষে সব আবার বন্ধ কিন্তু কেন? উওর সমাধানে পুলিশ আবার মাঠে নামে কিন্তু পুলিশ যা জানতে পারে তাতে পুলিশ ক্রমশঃ পিছু হটতে শুরু করে। সেই সাংবাদিককেও ওই একই ভাবে সেই ফুটপাতে গায়ে কেরোসিন দিয়ে গভীর রাতে পুড়িয়ে ফেলা হয়। সেই সাংবাদিক মরে যাওয়ার আগে সেটা অন্য একজন সাংবাদিকের হাতে দিয়ে দিয়েছিল। অবশ্য এই ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানা যায় নি। শুনেছি সাংবাদিকের পরিবার এই কেসটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাই নি। পুলিশ তার পরিবারকে অনেক প্রশ্ন করেছে তারা একটাই জবাব বারবার দিয়েছে সেটা হল এই ভয়ঙ্কর হত্যার ব্যাপারে এক বিন্দুও তারা জানে ও জানতেও চায় না আর এব্যাপারে তারা কাউকে সন্দেহ করে না। তার কারণ সেই সাংবাদিকের পতিতা পল্লীতে বেশ যাতায়াত ছিল। যদি এই ব্যাপারে সামান্য তদন্ত হত তাহলে খুনী না ধরা পরলেও পারিবারিক সম্মান মারাত্মক ভাবে বিসর্জন হত। তার পর কেসটা ধূলো চাপা পড়ে যায়। তবে সেই কেসটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করবার সুযোগ এসেছে আমার হাতে। আমার প্রথম সন্দেহ সোনাগাছির কেউ এই কাজটা করেছে। যেহেতু এই  আশে পাশে ঘটছে তাহলে ধরে নিতে হবে কোন পতিতাও এর সাথে জড়িত থাকতে পারে। এই সোনাগাছির উপর পুলিশ নজর রাখলেও বিশেষ কোন কিনারা করে উঠতে পারে নি এত বছর। তাই ঠিক করলাম কেসটা এখান থেকেই ওপেন করি। তো পাশে পেলাম নুপুর ও তার মাসি বিন্নি কে। বিন্নি নুপুরকে একদম অন্যভাবে মানুষ করছে। তাকে পড়াশোনা, গান, নাচ তার পাশাপাশি লাঠি চালানো শিক্ষা সব দিচ্ছেন। নুপুরের স্বপ্ন সে একজন বিখ্যাত পুলিশ অফিসার হবে। আর তারমধ্যে একটা ডিটেক্টিভ ভাব আছে বুঝলে। আর এই যে মাসিকে দেখছ তিনি আমার পূর্ব পরিচিত। তিনি আমাকে  গুপ্তচর হিসেবে সোনাগাছির অনেক কেসে বিশেষ সাহায্য করেছে বহুবার। যাইহোক এবার বল তুমি কি আমার পাশে থাকবে এই কেসে?’
  • ‘ হ্যাঁ স্যার থাকব স্যার। এই কেসটা আমার কানে একবার এসেছিল। এই রকম একটা কেসে আপনার সাথে থাকলে কিছু শিখতে পারব। আর আপনি যে কেসটার পাতা খুলেছেন তাতে এক বিশাল রহস্য রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমি আছি আপনার পাশে এই কেসটা সমাধানে।’
  • ‘ কিন্তু তোমাকে কোথায় আসতে হবে কাদের সাথে মিশতে হবে তার কিছুটা বুঝতে পারছ তো। একবার ভেবে নাও কিন্তু। তোমার পরিবার কিন্তু তোমার বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে যদি তাদের কানে একবার কথাটা যায় তুমি যৌন কর্মীদের পাড়ায় আসা যাওয়া কর। আর তুমি এই কেসটা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কাউকে বলতে পারবে না এই কেসটার ব্যাপারে। উপরি মহল থেকে বিশেষ নির্দেশ আছে। সেক্ষেত্রে তুমি দুশ্চরিত্র প্রমাণিত হয়ে যেতে পার।’
  • ‘ একদম স্যার। আপনি পাশে থাকলে আমি যেকোনো ঝুঁকি নিতে তৈরি। আপনি একদম ভাববেন না এবিষয়ে।’

      একজন বয়স্কা মহিলা অর্থাৎ নুপুরের মাসি দুই গ্লাস শরবত টেবিলের উপর রেখে একটা কাগজ শিবেনবাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন

‘ শিবেনবাবু এই কাগজের মধ্যে ক্রিমিনাল কয়েকটা মেয়ের নাম লেখা আছে। এরা কেউ সুবিধার নয়। আপনার কথামতো আমি এই তালিকাটা তৈরি করে রেখেছি। আমার এদেরকেই বেশি সন্দেহ হয়।‘

শিবেনবাবু হাত বাড়িয়ে কাগজটা নিয়ে পড়তে আরম্ভ করল। কাগজে চার পাঁচটি  নাম লেখা। শিবেনবাবু রূপমের হাতে কাগজটা তুলে দিয়ে বললেন ‘ রূপম তোমাকে এই কাগজে লেখা নাম গুলোর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। যোগাযোগ বলতে তোমাকে কাস্টমার হয়ে যেতে হবে আর যেকোনো মূল্যে তোমাকে ওদের মুখ থেকে কথা উদ্ধার করতে হবে। তুমি পারবে তো?’

  • ‘ হ্যাঁ স্যার, পারব কিনা জানি না। তবে আমার দিক থেকে সমস্ত চেষ্টা আমি করে যাব তাদের মুখ থেকে কথা উদ্ধার করার।’
  • ‘ একদম রূপম তোমার উপরে আমার সম্পূর্ণ ভরসা আছে তাই তোমাকেই আমি সিলেক্ট করেছি আমার যোগ্য সহকারী হিসেবে। চলো এবার ওঠা যাক। কাজ আমরা আজ থেকেই শুরু করব।’

     চেয়ার থেকে উঠে বেরিয়ে পড়ল রূপম আর শিবেনবাবু। গলি পথ চলতে চলতে শিবেনবাবু রূপমকে বললেন

‘ দেখ রূপম এই কাজে যেমন বিপদ ঠিক তেমনি রয়েছে মান সম্মানের ব্যাপার তাই তুমি আবার এই ব্যাপারটার মধ্যে কিন্তু জড়িয়ে পড়বে না। এখানে আসাটা অনেকের নেশা হয়ে যায় তোমার যেন তা কখন না হয়। এখন সোজা আমার বাড়ি চল এই কেসটার ব্যাপারে আরো একটু জানাতে পারব হয়তো তাহলে তোমাকে।’

রূপম আর শিবেনবাবু একটা হলুদ ট্যাক্সি ধরে সল্টলেক এর দিকে চলে গেল। দুজোড়া চোখ নজর রেখে দিল শিবেন ও রূপমের উপর তা তারা নিজেরাই জানতে পারল না।

শিবেনবাবুর বাড়িটা কলেজ স্ট্রিটে। ট্যাক্সি থেমে নেমে সামনের একটা চায়ের দোকান থেকে সিগারেট কিনে একটা রূপমকে আর একটা নিজে নিয়ে আগুন ধরিয়ে সুখ টান দিল। রিং রিং করে ধোঁয়া উড়ানো শিবেনবাবুর একটা বদ অভ্যাস। তার সাথে তিনি যখনি পথে বের হন সিগারেট তখন থেকেই তার পথের সঙ্গী হয়ে যায়। সিগারেটটা ধরিয়ে দু’জনে কেসটার ব্যাপারে কথা বলতে বলতে পথ চলতে থাকল। একটা লাল রঙের পুরোনো দিনের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল দুজনে। এইটাই শিবেনবাবুর বাড়ি। বাসু দা তার বাড়ির দেখাশোনা করে। দরজার কলিং বেল টিপতেই দরজা খুলল বাসু দা। রূপম বাসু দাকে চেনে। বেশ কয়েকবার স্যারের বাড়ি আসার ফলে তার সাথে বেশ পরিচয় হয়ে গেছে। বাসু দা রূপমকে বলল ‘ বলি রূপম ভাই তোমাদের এই খুনি, চুরি , এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে ভালো লাগে। আমার তো এই শিবেনবাবুকে নিয়ে চিন্তা হয়। মানুষটার বয়স হয়ে গেল চুল দাড়ি পেকে গিয়ে বুড়ো হয়ে গেল তাও এই সব ব্যাপার থেকে এক ফোঁটাও দূরে গেল না। যতসব আজগুবি লোকজন।’

শিবেনবাবু হো হো করে হেঁসে বললেন ‘ এই যে বুড়ো তোমার মতো বুড়ো হয়নি। আর যেদিন আমি মরে যাব সেদিন হয়তো এই রহস্য ব্যাপারটা থেকেও চিরতরে মুক্তি পাব। তার আগে নয়।‌ যাও তুমি আমাদের জন্য গরম কাটলেট বানাও।’

বাসু দা কিচেন রুমে চলে যেতেই আলমারি থেকে একটা ফাইল এনে রূপমের হাতে দিল শিবেনবাবু।

রূপম জিজ্ঞেস করল ‘ কিসের ফাইল স্যার?’

  • ‘ বাড়ি গিয়ে এই ফাইলটা খুলে দেখ। তবে এই ফাইলটা খুব যত্নে রেখ কিন্তু। আর শোন তোমাকে তোমার কাজের ব্যাপারে বুঝিয়ে বলি। কাল তুমি নুপুরের মাসির দেওয়া কাগজে লেখা প্রথম  পতিতার ঘরে যাবে কাস্টমার হয়েই। সেখান থেকে সব কিছু জেনে নেবে। কি জানতে হবে তা তুমি ফাইলটা পড়লেই অনুমান করতে পারবে। আর একটা কথা সেখানে পতিতাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক দালাল দেখতে পাবে তাদেরকে বেশ কিছু পয়সা খাইয়ে জানতে থাকবে কারা কোন পতিতার কাছে রোজ যায়। আর ওখানে কোন নতুন লোক বা বিদেশীর আগমণ ঘটেছে কিনা। তোমাকে আমি দশ হাজার টাকা দিলাম। এইটা কাল খরচা কর। কাল এসে আমাকে সমস্ত ঘটনা জানাবে। আর একটা কথা পতিতার সাথে দেখা করার টাইম যেন একদম গভীর রাত হয়। তখনি পতিতা পাড়ায় আগমণ ঘটে অন্য ধরনের লোকদের।’

      ইতিমধ্যে টেবিলে কাঁচের প্লেটে সাজানো বাসু দার তৈরি কাটলেট। গরম গরম কাটলেট খেয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল রূপম।

    ‌  তখন সকাল সাতটা বাজে।‌ কলিং বেল বাজল শিবেনবাবুর বাড়ি। দরজা খুলল বাসু দা। চেয়ারে বসে পেপার পড়ছিলেন শিবেনবাবু। পেপার থেকে মুখ ফিরিয়ে রূপমকে দেখতে পেয়েই শিবেনবাবু উল্লোসিত হয়ে উঠলেন।

  • ‘ আরে রূপম বল বল কি হল কাল রাতে। তোমার চিন্তায় তো আমার ঘুম আসে নি রাতে।’
  • ‘ স্যার ফাইলটা কাল রাতে পড়ে তো আমি অবাকের পর অবাক হয়ে গেলাম। এই রকম একটা কেস এতদিন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ। যাইহোক স্যার কাল রাতে অনেক দূরে এগিয়ে ফেলেছি কাজটা। কাল দূর্গা বলে একজনের ঘরে গেছিলাম। একদম ছদ্মবেশে। বয়স্ক গুজরাটী সাজলাম। গুজরাটি ভাষাটা আমি একটু শিখেছিলাম তাই কাজটা করতে বিশেষ সুবিধা হল না। জোর করে অনেক কথা আদায় করেছি দূর্গার মুখ থেকে। যা জানতে পারলাম সেটার শিখরটা বেশ গভীর পর্যন্ত চলে গেছে তা বুঝতে পারছি। পচা বলে সোনাগাছির একজন দালালের সাথে আলাপ হল সেখান থেকে জানতে পারলাম সোনাগাছির কোন মহিলা যৌন কর্মীর রেড সবচেয়ে বেশি, তাদের কাছে কারা আসে এবং অবশেষে সাংবাদিককে পুড়িয়ে মারা কেসটা তুলি। কেসটা নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া করতে পারলাম না স্যার তবে মুন্নি বলে একজন পতিতা আছে তার রেড এখন সব চাইতে বেশি এবং তার কাছেই বড় বড় মাফিয়া, খুনি, সুপারি কিলারেরা নাকি আনাগোনা করে। লিস্টেও তার নাম আছে। আর একজনের নাম পেয়েছি যা শুনলে হয়তো আপনিও অবাক হতে বাধ্য।’
  • ‘ কার কথা বলছ?’
  • ‘ অভিনেতা অভিজ্ঞান বন্দ্যোপাধ্যায়।’
  • ‘ বল কি হে!’
  • ‘ হ্যাঁ, স্যার প্রথমে আমি বিশ্বাস করি নি। কিন্তু কাল যখন দূর্গার ঘর থেকে বের হচ্ছি তখন তাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখেছি। এইবার আপনি বলুন কি করা যায়।’
  • ‘শোন কাল তুমি চলে যেও মুন্নির ঘরে। অভিজ্ঞান বাবু কেন মুন্নির কাছে রোজ যায় তা তোমাকে জানতে হবে আর তার সাথে কেসটার ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া তোমাকে লক্ষ্য করতে হবে। আর সেটা আমাকে তুমি জানাবে। দেখ তার পেট থেকে কিছু কথা বের করতে পার কি না।’ 
  • ‘ ওকে স্যার তাহলে এখন চলি। আজ রাতে ছদ্মবেশে মুন্নির বাড়ি যাব কিন্তু জানি না মুন্নির সাথে দেখা করতে পারব কি না। যার রোজকারের কাস্টমার অভিজ্ঞানবাবু তার সাথে দেখা করা একটু চাপের আছে বলে আমার মনে হয়। তারপর আবার সেই মহিলার রোজকারের কাস্টমার খুনী আসামিরা। তার সাথে সাক্ষাৎ একটু চাপের হবে। তবে আশা করছি আজকের রাতের অ্যাডভেঞ্চারটা মারাত্মক হবে আর আমি হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আপনার হাতে এনেও দিতে পারব।’
  • ‘ তা ঠিক কথা। কিন্তু তোমাকে যে করেই হোক আজকের মধ্যে মুন্নির ঘরে ঢুকতে হবে। অভিজ্ঞানবাবু বেরিয়ে যাওয়ার পর চেষ্টা করবে। আর এই নাও কুড়ি হাজার টাকা। এইটা কাজে লাগবে। আর ওর দালালকে কিছু পয়সা খাইয়ে দিও তাহলে কাজটা বেশি সহজ হতে পারে।’

      রূপম হাত বাড়িয়ে কুড়ি ‌হাজার টাকা নিয়ে চলে গেল।

‌তাকে আবার প্রস্তুতি নিতে হবে আজকের রাতের লড়াইয়ের জন্য।

       তখন গভীর রাত পতিতা পল্লীতে নিস্তব্ধ রাস্তায় মাতাল সেজে দাঁড়িয়ে আছে রূপম। জব্বর মেকাপ হয়েছে। হাতে একটা বাংলা মদের বোতল। গায়ে বেশ করে মদ ছিটিয়ে নিয়েছে। তা থেকে বুদবুদ করে বেরচ্ছে বাজে একটা গন্ধ। ফোনটা আজকে আনে নি। বুক পকেটে একটা দু’হাজার টাকার নোট সেটা এমন ভাবে রাখা রয়েছে যাতে সেটা স্পষ্ট দেখা যায়। অভিজ্ঞান বাবুর গাড়িটা দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার মানে তিনি ভিতরে আছেন তা রূপম বুঝতে পেরে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। সামনে একটা লোককে দেখতে পেয়ে রূপম এগিয়ে যায়। লোকটা প্রথমে অবহেলা করে বলল ‘ আব্বে শালা মাতাল এখানে কি ? ’ কথা শেষ হতেই তার প্রশ্নের জবাবে রূপম এগিয়ে দেয় তার মুখের সামনে কড়কড়ে দুটো পাঁচশ টাকার নোট। লোকটা মুন্নির দালাল। লোকটার ব্যাপারে আগেই খোঁজ নিয়ে নিয়েছিল রূপম। রূপম বলল ‘ কি রে এবার সুযোগ দিবি তো মুন্নি রাণীর রস খেতে?’

  • ‘ আরে আমি তোকে ব্যাবস্থা করিয়ে দেব। কিন্তু মুন্নির এক ঘন্টার রেট জানিস তো ?’
  • ‘ কত?’
  • ‘ দশ হাজার টাকা।’
  • ‘ আরে। এইটা কি বিলাতি মাগী নাকি?’
  • ‘ এই একদম এই সব ফালতু কথা বলতে আসবি না। তুই শালা ভিখারী আছিস। ভাগ শালা। আমি জানি তোর কাছে মুন্নির দরজা পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষমতা নেই।’
  • ‘ এই দেখ।’

     রূপম শিবেনবাবুর কুড়ি হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকা তুলে ধরল। মুন্নির দালাল ভূত দেখার মত হাঁ করে তাকিয়ে রইল। তার পর বিস্ময় ভরা কন্ঠে বলে উঠল

‘ কি করে কোথায় কোপ মারলি?’

  • ‘ শুধু মুন্নির রস খাব বলে একটাকে এই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছি।’
  • ‘ মানে?’
  • ‘ খুন করে দিয়েছি।’
  • ‘ বলিস কি রে!’
  • ‘ হ্যাঁ, বেটাকে খুন করে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছি একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে। কেউ খুঁজে পাবে না মালটাকে।’
  • ‘আরে গুরু এইটা তো পুরোটা আমাদের ফুটপাতের কেসটার মত করেছিস।’
  • ‘ কোনটা?’
  • ‘ আরে এই যে মুন্নির ঘরের একদম উল্টো দিকে পরপর দুটো মানুষকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল ফুটপাতের ধারে সেই কেসটার কথা বলছি।’
  • ‘ ওহ্ ওই কেসটা। ওই কেসটা কাপুরুষের কাজ। ওইসব ফালতু লোকজনকে আমি তো মারি নি।’
  • ‘ ফালতু লোকজন কাকে দুজনের মধ্যে একজন তো বিখ্যাত ব্যাবসায়ী ছিল মুন্নির মুখে শুনেছি।’
  • ‘ নাম কি ছিল ওই ব্যাবসায়ীর?’
  • ‘ তা জানি না। সব মুন্নি জানে।’
  • ‘ মুন্নি কি করে জানবে?’
  • ‘ ওই লোকটার এই পল্লীতে বেশ যাতায়াত ছিল। প্রচুর টাকা উড়িয়েছে।’

        রূপম যখন মুন্নির দালালের সাথে কথা বলতে বলতে সব ইনফরমেশন গুলো কালেক্ট করছিল ঠিক তখন মুন্নির ঘর থেকে বেরিয়ে সরাসরি গাড়িতে উঠলেন অভিজ্ঞান বন্দ্যোপাধ্যায়। গাড়িটা চলে যেতেই রূপম টলতে টলতে মুন্নির ঘরে ঢুকল। ঘরটা সিগারেটের ধোঁয়ায় আর মদের গন্ধে ভর্তি। তবে সেই মদের গন্ধ আর পাঁচটা গন্ধের থেকে আলাদা। রূপম এগিয়ে যেতেই খাটের উপর বসে থাকা ফুটফুটে সুন্দরী মুন্নি বলে উঠল ‘ ওই যা করার তাড়াতাড়ি কর। আর তাড়াতাড়ি দশ হাজার ছাড়।’ রূপম মুন্নির লাল রঙের ব্লাউজের ভিতর থেকে উঁকি মারা নরম বক্ষযুগলের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল ‘ আজকের আর কিছু করতে ইচ্ছে করছে না শুধু তোর সাথে আজ গল্প করব এক ঘন্টা। এই নে তোর দশ হাজার। ’ মুন্নি বেশ অবাক হয়েছে। একজন ছেঁড়া প্যান্ট, ভিখারী লোকের কাছে এত টাকা এল কি করে। আর নিজেকে চেপে রাখতে পারল না মুন্নি। সরাসরি প্রশ্নটা করেই ফেলল।

  • ‘ ওই তুই এত টাকা কোথায় পেলি?’
  • ‘ খুন করেছি।’
  • ‘খুন!’
  • ‘ হুম।’
  • ‘ তা আমার এখানে কেন?’
  • ‘ তোর ঘরে অভিজ্ঞানবাবুর আনাগোনা তাই ভাবলাম এখানেই আশ্রয় নি। পুলিশের বাপ তো নাকি আসতে পারে না তোর ঘরে। এখানেই খুনি গুলো খুন করে এসে রাত কাটায় শুনেছি।‌ তাই আমি না হয় রাতটা কাটালাম।’
  • ‘ শোন অভিজ্ঞান এখানে আসত অনেক বছর আগে থেকেই। ও নুপুরের মাসির ধরা মরদ ছিল। এখন আমার বাঁধাধরা বাবু হয়েছে। যাই হোক তুই কাকে খুন করলি বল?’
  • ‘ তার আগে তুই বল নুপুরের মাসির ধরা বাবু তুই টানলি কি করে?’
  • ‘ নুপুর মরে যাবার পর।’

          কথাটা কানে যেতেই নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারল না রূপম। নুপুর বেঁচে নেই। তাহলে দু’দিন আগে ওইটা কে ছিল। ব্যাপারটা আর একটু জানার জন্য রূপম বলল ‘ তাহলে আমি দুদিন আগে বিন্দি মাসির ঘরে নুপুরকে দেখলাম কি করে?’

অট্টহাসিতে ফেটে পরল মুন্নি। – ‘তুই ওর ভূতকে হয়ত দেখেছিস তাহলে।’

  • ‘ শোন না আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি?’
  • ‘ কি?’
  • ‘ নুপুরকে কি স্বাভাবিক ভাবে মরেছিল?’
  • ‘ তা একরকম স্বাভাবিক আবার একরকম অস্বাভাবিক বলতে পারিস।’
  • ‘ মানে?’
  • ‘ মানেটা তোকে আমি বলতে যাব কেন?’ বললে কি পাব?’
  • ‘ পাঁচ হাজার এক্সট্রা।’

        পকেট থেকে পাঁচ হাজার বার করে দেয় রূপম। সে মুন্নির কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছে রহস্যের ধোঁয়াশায় আটকে পরছে সে। কিন্তু সে কি রহস্য সেটা বলতে পারবে কেবল এই মুন্নি। নুপুর যদি সত্যিই মরে থাকে তাহলে সেদিন কাকে দেখল রূপম। মুন্নি বলতে শুরু করল।

  • ‘ তোকে যে খবরটা আমি দিচ্ছি তা নিয়ে কোনদিন কারোর কাছে মুখ খুলবি না।’
  • ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ তুই বল। কাউকে বলব না আমি।’
  • ‘ শোন তাহলে। বেশ কয়েকটা বছর আগের কথা বলছি। নুপুরের মা এইখানেই থাকত।‌ একদিন তার পেটে বাচ্চা দিয়ে দেয় একজন কাস্টমার। নুপুরের জন্ম দিয়েই ওর মা মারা যায়। বিন্নি মাসি ঠিক করে নুপুরকে বেশ্যা হতে দেবে না।‌ কিন্তু এই পল্লীতে থাকবে অথচ বেশ্যা হবে না তা হয়। একদিন মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দেয় একটা শয়তান। ওর সাথে ছিল আর দু’টো শয়তান। তারপর আত্মহত্যা করে মেয়েটা। শয়তানগুলো প্রভাব প্রতিপত্তি টাকার জোরে কেসটা ধামা চাপা দিয়ে দেয়।’
  • ‘ কারা তারা?’
  • ‘ তিনজন ছিল। দুজন মায়ের ভোগে গেছে একজন বাকি আছে। সেটা তোর জেনে লাভ নেই। তবে তুই একটু ভাবলেই বুঝতে পারবি ওদের পরিণতি কি হয়েছিল।’
  • ‘ মানে ওই ফুটপাতের কেসটার সাথে এই ঘটনার মিল আছে?’
  • ‘ সেটা তোকে বলব না।’

    সব ব্যাপারটা তখন রূপম বুঝতে পেরেছে। তার সন্দেহ তাহলে ঠিক ছিল। বিন্নি মাসি আর নুপুরদের সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তারা মস্ত ভুল করেছে। আর এতদিন হয়তো এই কারণে কেসটার সঠিক সমাধান হচ্ছে না। রূপম আর শিবেনবাবু এইভাবে ঠকে গেল শেষপর্যন্ত কাউকে বিশ্বাস করে। কি ভীষণ লজ্জা। সে না হয় বোকা কিন্তু শিবেনবাবুর মতো ধূর্ত লোক এত বড় ভুল করে ফেলল। আর ভাবতে পারল না রূপম। হঠাৎ যেন আবার বিপদের মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলল চারদিকটা। মুন্নির জানালার ওপারে ফুটপাতের ধারে বিকট চিৎকারের শব্দ ভেসে এল রূপমের কানে। মুন্নির ঘর থেকে বেরিয়ে দৌড়ে যায় রূপম ওইদিকেই।‌ তখন একটা অনুমান সে মনে মনে করে ফেলেছে। ফুটপাতের অন্ধকারে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে তাতে ছুটে উঠে যায় দুটো ছায়ামূর্তি। স্পষ্ট না দেখা গেলেও কিছুটা অনুমান করল রূপম তারা কারা। আর ফুটপাতে অগ্নি দগ্ধ অবস্থায় চিৎকার করে চলেছে একটা দেহ। আকাশে ভরে উঠেছে কালো ধোঁয়া আর পোড়া গন্ধে। দমকল ডেকে লাভ নেই। লোকটা আর বাঁচবে না। পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই লোকটার গাড়ি। অভিজ্ঞান বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি। তাকে যেকোনো ছলে গাড়ি থেকে নামিয়ে আগুন ধরিয়ে হত্যাকারীরা তার চোখের সামনে পালিয়ে গেল। কি বিভৎস দৃশ্য। দ্রুত পায়ে সরে পড়ল রূপম। আর একটু পরে এখানে পুলিশ আর মিডিয়ায় ভরে উঠবে। শিহরিত, আতঙ্কিত অবস্থায় শিবেনবাবুর বাড়ির দিকে চলে গেল রূপম। পথে একটাই ভাবনা কাজ করতে থাকল শিবেনবাবুর কোন ক্ষতি ওরা করবে না তো। সঙ্গে আজ স্মার্ট ফোনটাও আনে নি যে শিবেনবাবুকে ফোন করে সতর্ক করে দেবে।

কলিং বেলটা বাজাতেই দরজা খুলে দিল স্বয়ং শিবেনবাবু। শিবেনবাবুর মৃদু হাস্যময় মুখ দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রূপম। তবে নিমেষে তার মাথা গরম হয়ে উঠল ঘরের ভিতরে প্রবেশ করেই। ঘরে যারা বসে আছে তাদের দেখে সমস্ত শরীর শিহরিত হয়ে উঠল রূপমের। পকেট থেকে রিভালভারটা বার করতে যাচ্ছিল কিন্তু অবশেষে আবার তা পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে উঠল

‘ আপনারা এখানে?’, কথা শেষ হল না। শিবেনবাবু বলে উঠল ‘ কেন কি হয়েছে রূপম? আর তোমাকে এমন হতভম্ব, আতঙ্কিত দেখাচ্ছে কেন?’

‘ স্যার আপনি এখন খুনীদের মাঝেই বসে আছেন’

  • ‘ কি যা তা বলছ?’
  • ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার এরা দুজনে খুনী আর এরা এক্ষুনি অভিজ্ঞান বাবুকে রাস্তায় পুড়িয়ে মেরেছে। পুড়িয়ে মারার পর গাড়িতে উঠে এখানে এসেছে। আর ওই মেয়েটা নুপুর নয়। আসল নুপুর মারা গেছে। একে সাজানো হয়েছে। এতদিন নাটক চলছে আমাদের সামনে।’
  • ‘ কি যা তা বলছ তুমি ?’
  • ‘ হ্যাঁ অভিজ্ঞানবাবু আর বেঁচে নেই। আগের দুটো লোকের মতো এরা ওনাকেও মেরেছে। এক্ষুনি দেহটা ভস্ম হয়ে  স্যার আজ মনে হচ্ছে আপনিও পরাজিত স্যার।’
  • ‘ কিন্তু এনারা তো অনেকক্ষণ আগে আমার বাড়িতে রয়েছে। তোমার কথা মতো এক্ষুনি এই দুর্ঘটনাটা ঘটেছে কিন্তু এরা দুজন রাত সাড়ে নটা আমার বাড়িতে এসেছে তোমার কথা মতো যদি হয় এখন বাজে রাত বারোটা এক ঘন্টা আগে এইটা ঘটেছে অর্থাৎ রাত এগারোটা। তুমি এদের এগারোটার সময় ওখান থেকে পালাতে দেখেছ নিশ্চয়ই। তাহলে এরা সাড়ে নটার সময় আমার বাড়ি এল কি করে? আমার মনে হয় তুমি কোথাও ভুল করছ তদন্তে। তোমার একটা মারাত্মক ভুল হচ্ছে। তুমি আবার ভাব। আর তোমার কাছে কোন প্রমাণ আছে যে এরাই খুনী। তাহলে আমি অবশ্য বাধা দেব না। সাথে সাথেই এদের অ্যারেস্ট করতে বলব।’

     রূপম ভাবতে শুরু করল। কি করে হতে পারে। এরা সাড়ে নটার সময় এখানে এসেছে শিবেনবাবু জানালেন। তাহলে গাড়িতে করে যে দুটো মহিলা ছায়ামূর্তি পালালো তাহলে তারা কারা। হতেই পারে নুপুর আর বিন্নি মাসি খুনি নয়। তবে মুন্নি কি নুপুরের ব্যাপারটা মিথ্যা বলল। আর ভাবতে পারল না। শিবেনবাবুকে বলল ‘ স্যার এক্ষুনি আমাদের অভিজ্ঞান বাবুর বাড়িতে যেতে হবে।’

  • ‘ কেন রূপম?’
  • ‘ সে প্রশ্নের উত্তর আমি নিজেও জানি না। তবে ওখানে গেলে হয়তো আপনাকে উত্তরটা দিতে পারব।’

          নুপুর আর বিন্নি মাসিকে ঘরে চলে যেতে বলল শিবেনবাবু। তারা দু’জনে ট্যাক্সি ধরে চলে গেল। রূপম বুঝে উঠতে পারল না কেসটা কোনদিকে গড়াচ্ছে। শিবেনবাবুর নিজস্ব গাড়ি আছে সেই গাড়িতে করে ওরা রওনা দিল বাঘাযতীনের একটা ফ্ল্যাটে। বেল বাজাতেই দরজা খুললেন মধ্যবয়স্ক সুন্দরী মহিলা। অভিজ্ঞানবাবুর বউ রমা। ঘুমন্ত চোখেই প্রশ্ন করলেন ‘ কে আপনারা?’ রূপম বুঝতে পারল এখন কোন খবর পান নি রমা দেবী। রূপম বলল ‘ আজ্ঞে আমরা কিছু জানতে চাই আপনার কাছ থেকে। আমরা পুলিশের লোক।’

  • ‘ কি জানতে চান এত রাতের বেলা?’
  • ‘ প্রশ্নটা ছোট কিন্তু খুব অশ্লীল। তো দয়া করে যদি কিছু মনে না করেন।’
  • ‘ বলুন মশাই।’
  • ‘ বলছি অভিজ্ঞানবাবুর রোজ রাতে সোনাগাছিতে যাতায়াত আছে তা কি আপনি জানেন?’
  • ‘ হ্যাঁ , জানি। এই সব প্রশ্ন করার জন্য আপনি এসেছেন। ছিঃ ছিঃ।’
  • ‘ না আসলে অভিজ্ঞানবাবু আর বেঁচে নেই।’

     ‌কথাটা শেষ হতেই রমা দেবীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন। রূপম স্বান্তনা দিয়ে বললেন ‘ ম্যাডাম প্লিজ কাঁদবেন না। আমরা খুনীকে ধরতে চাই। আপনি যদি সামান্য সহযোগিতা করেন তাহলে খুব ভালো হয়।’

  • ‘ বলুন।’
  • ‘ অভিজ্ঞানবাবু কয়েক বছর  আগে নিয়মিত কোন পতিতার  ঘরে যেতেন তা কি আপনি জানেন?’
  • ‘ বিন্নি মাসি বলে একজনের ঘরে শুনেছি।’
  • ‘ বিন্নি মাসির বোনঝি নুপুরকে চেনেন?’
  • ‘ হ্যাঁ চিনি।

-‘ নুপুরকে তিনজন ব্যাক্তি ধর্ষণ করেছিল। এব্যাপারে কিছু জানেন।’

– ‘ হ্যাঁ, ওরা দুজন অভিজ্ঞানের বন্ধু। একজন ব্যাবসায়ী বাবু আর একজন সাংবাদিক জয়ন্ত আর একজন অভিজ্ঞান নিজে। পরে মেয়েটা আত্মহত্যা করেছিল শুনেছি।’

– ‘ আপনি সব জানেন অথচ এতদিন চুপ করে ছিলেন।’

-‘ তাছাড়া আমি কি বা করতে পারি বলুন।’

       চলুন শিবেনবাবু ব্যাপারটা একবার খুঁটিয়ে দেখতে আমাদের সোনাগাছিতে যেতে হবে। রূপম গাড়িতে বসে সমস্ত ঘটনা সবিস্তারে শিবেনবাবুকে বললেন। শিবেনবাবু কাঁচুমাচু মুখে বললেন ‘ তাহলে বলছ আমরা যাকে বিশ্বাস করলাম তারাও জড়িত এই কাজে।’

  • ‘ হ্যাঁ স্যার আমার তো তাই মনে হচ্ছে। তাই একবার সেই সন্দেহের অবসান ঘটাতে চলেছি।’

      গাড়ি থেকে নেমেই দ্রুত পায়ে বিন্নি মাসির ঘরের দিকে ছুটে গেল রূপম ও শিবেনবাবু। কিন্তু তারা ঘরের সামনে পৌঁছেই চমকে উঠল। দরজায় তালা মারা। তার মানে শিবেনবাবুর বাড়ি থেকে তারা বাড়ি ফেরে নি। রূপম বলল ‘ স্যার দেখলেন তো, ব্যাপারটা। এবার কিছু বুঝতে পারছেন?’

  • ‘ হ্যাঁ, এরাও এই খুন গুলোর সাথে যুক্ত দেখছি।’
  • ‘ চলুন স্যার এবার মুন্নির ঘরে যাওয়া যাক। আমার তো ওই মেয়েটাকেও সন্দেহ হচ্ছে।’

          ওরা দুজনে ছুটতে ছুটতে মুন্নির ঘরের দিকে গিয়ে দেখল মুন্নির ঘরেও তালা মারা। কেউ নেই। রূপম কিছুতেই বুঝতে পারল না কেসটা কি হতে চলেছে। কে খুনের সাথে জড়িত এবং তারা কেন পালাতে গেল তা বুঝে উঠতে পারল না শিবেন ও রূপম। রূপম বলে উঠল ‘ স্যার তাড়াতাড়ি বাঘাযতীনের ফ্ল্যাটে চলুন। সেখানেও কিছু একটা গোলমাল ঘটে গেছে বলে মনে হয়।’

দু’জনে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে পৌঁছাল বাঘাযতীনে অভিজ্ঞান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে। না সেখানে কেউ নেই। সেখানেও তালা মারা। শিবেন বাবু বলে উঠলেন ‘ বুঝলে রূপম এই কেসটা বেশ জটিল মনে হলেও কিছুটা অনুমান আমি করে ফেলেছি এখানে আসার সাথে সাথেই।’

  • ‘ কি স্যার।’
  • ‘ আমার তো মনে হচ্ছে এরা সবাই তিনটে খুনের সাথে জড়িত। আর আমাদের সামনে এরা একটা ছোট নাটক পরিবেশন করল।’

      শিবেনবাবু বললেন ‘ চল আমরা ন্যাশানাল হাইওয়ের দিকে একটা সর্টকাট পথ ধরে ওদের ধরতে পারি কিনা দেখি। আমার মনে হয় এরা একসাথেই পালাচ্ছে। আর ওরা গাড়ি চালিয়ে খুব একটা দূরে যেতে পারে নি বোধহয়।’

           শিবেনবাবুর হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং। গাড়িটা একের পর এক গলি পেরিয়ে ন্যাশনাল হাইওয়ের কাছাকাছি দাঁড় করিয়ে নজরদারি করতে থাকল ওরা।‌ হঠাৎ ওদের চোখ পড়ল একটা কালো গাড়ির দিকে। কাঁচের ওপারে পরিষ্কার দেখাচ্ছে মুন্নির মাসির মুখ। সাইলেন্সার লাগান বন্দুক গাড়িটার চাকাটিকে ফুঁটো করে দিল নিমেষে। রূপমের অসাধারণ লক্ষ্যভেদ। পুলিশ ওদের ধরে ফেলেছে বুঝতে পেরে ওরাও গাড়ি থেকে নামল। মুন্নির হাতেও একটা বন্দুক। সেটা তাক করে ওরা এগিয়ে যেতে থাকল রূপমের দিকে। গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে বিন্নি মাসি, নুপুর, রমা দেবী। তাদের মুখে জয়ের হাসি। মুন্নি চিৎকার করে উঠল ‘ বন্দুকটা মাটিতে ফেলে দিন রূপমবাবু।’ বাধ্য হয়েই বন্দুকটা মাটিতে ফেলে দিল রূপম। শিবেনবাবু বলে উঠল ‘ দেখুন আপনাদের ক্ষতি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে আপনাদের কাছে আমাদের একটাই প্রশ্ন আপনারা বলুন আপনারা তিনজনকে খুন করলেন কেন? ’। ওরা সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। বিন্নি মাসি বলল ‘ তার আগে আপনাদের অচেনা দু’জনের সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দিই।’  গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল আর একজন মহিলা তার সাথে দূর্গা। শিবেনবাবু বললেন ‘ কে আপনি?’

  • ‘ আমি অভিজ্ঞান বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী।’
  • ‘ তাহলে আমরা যাকে বাঘাযতীনের ফ্ল্যাটে দেখলাম সে কে?’
  • ‘ উনি নুপুর।’
  • ‘ তাহলে বিন্নি মাসির পাশে দাঁড়িয়ে ওইটা কে?’
  • ‘ ওর নাম মুন্নি।’
  • ‘ তাহলে নকল মুন্নির পরিচয় কি?’
  • ‘ ও লক্ষী। দুইজন পুরুষ আছে আমাদের দলে লক্ষীর  বয়ফ্রেন্ড যাকে রূপম বাবু চেনেন মুন্নির দালাল বলে। আরেকজন পচা বলে রূপমবাবু যাকে চেনেন।’

      সবাই চুপ। এইটা কি নাটক চলছে নাকি কঠিন বাস্তব তা কিছুতেই বুঝতে পারল না রূপম এবং শিবেন স্যার। রূপম বলল ‘ আপনারা সবিস্তারে ঘটনাটা বলুন। আপনাদের কথাবার্তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।’

বিন্নি মাসি মুখ খুলল ‘ হ্যাঁ শিবেনবাবু আমরা সবাই খুনি। তবে এক্ষেত্রে আমাদের কথাবার্তা আপনাদের মাথায় ঢুকবে না তা জানি কিন্তু পরিষ্কার করে সব বললে নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন। আমার এক বোনঝি ছিল তা তো আপনারা জানেন তার নাম ছিল নুপুর। কিন্তু সেই নুপুরকে সবাই জানে মৃত হিসেবে। তবে নুপুর এখন আমাদের সাথেই আছে। যাকে আপনারা অভিজ্ঞান বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী ভেবেছিলেন সেটাই নুপুর। কিন্তু নুপুরের সাথে কি হয়েছিল কেউ তা জানে না। নুপুর যাতে বারবনিতা না হয় তার জন্য আমি চেয়েছিলাম নুপুরকে ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে কিন্তু নুপুরের উপর নজর গিয়ে পড়ে এক শয়তানের। বিখ্যাত ব্যাবসায়ী বাবু। বলেছিল অভিজ্ঞানবাবুর সাহায্যে সিনেমায় সুযোগ করিয়ে দেবে। আমিও রাজি ছিলাম কিন্তু ভাবতে পারি নি আমদের সাথে একটা অন্যায় হতে চলেছে। একদিন আমি ছিলাম না। ওরা সেই সুযোগে এসে জোড় করে উলঙ্গ করে ধর্ষণ করে নুপুরকে। আর সেই ব্যাবসায়ীর সাথে ছিল অভিজ্ঞান বাবু আর এক সাংবাদিক। সেই সাংবাদিক আমার নুপুরের নোংরা ফটোগুলো তুলে রাখে। নুপুর আত্মহত্যা করতে যায় একদিন। কিন্তু পারে নি। আমরা বাঁচিয়ে রাখি। পতিতা পল্লীতে রটিয়ে দিই নুপুর আর বেঁচে নেই। পাশে পাই মুন্নি বলে আরেক পতিতাকে যে আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। মুন্নি সাজে নুপুর। আর নুপুরকে আমরা আড়ালে রেখে দিই। পতিতা পল্লীর আর একজন পতিতা ওর নাম লক্ষী। সাথে ওর বয়ফ্রেন্ড তমাল। আমরা যখন পরিকল্পনা করে শয়তান ব্যাবসায়ীকে পুড়িয়ে মারছিলাম ঠিক তখনই ওই সাংবাদিক অন্য পতিতার ঘর থেকে বের হচ্ছিল। তখন তাদের রাজত্ব চলছিল পতিতা পল্লীতে। প্রিয় বন্ধু পুড়ে যাচ্ছে দেখে ছুটে যায়। অনেক চেষ্টা করে বাঁচানোর অবশেষে উপায় না দেখে পুড়ো ঘটনার ভিডিও বানিয়ে ছড়িয়ে দেয় মিডিয়ায়। তখন কেসটা চাপা দিতে ওকে আমরা পুড়িয়ে মারি। কিন্তু অভিজ্ঞান বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেরে ফেলাটা একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। অনেক চেষ্টা করেও আমরা তাকে কব্জা করতে পারছিলাম না। ঠিক এমন সময় আমরা পাশে পাই তার স্ত্রী রমা দেবীকে। যে তার এই ধরনের পরকীয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি আমাদের যৌন পল্লীর এক কাস্টমারকে সুপারি দিয়েছিল। আমরা সেই ব্যাপারটা দূর্গার কাছ থেকে জানতে পারি। এই সুযোগ তাকে মেরে ফেলার। তার স্ত্রীর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি। ইতিমধ্যে আপনারা এসেছেন এই কেসটাকে আবার ওপেন করার জন্য। আমাদের সজাগ হতে হল। আপনাদের বোকা বানানোর জন্য সব নতুন করে সাজাতে হল। রূপমবাবু এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আপনি যখন মুন্নি সেজে থাকা লক্ষীর বয়ফ্রেন্ডের সাথে বসে খোস গল্প করছিলেন তখন অনেকটাই খেলা হয়ে গেছে আমাদের। অভিজ্ঞান বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন সুন্দরী পতিতার কাছে নিয়ে যাব এই সব বুঝিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফুটপাতে তাকে পুড়িয়ে ফেলে দূর্গা আর রমা দেবী। আপনার মনে আমার আর নুপুরের নামে একটা ছোট গল্পঃ ঘুরিয়ে বলে মুন্নি সেজে থাকা লক্ষী। আপনি পালাতে দেখেন আসল অভিজ্ঞানের স্ত্রীকে আর ওনার সাথে ছিল আসল নুপুর এবং দূর্গা। আসল নুপুরকে রমা দেবী তার ফ্ল্যাটে রেখে আসেন আপনাদের সাথে ছোট নাটক করার জন্য। এই দিকে আমরা শিবেনবাবুর সাথে আড্ডা মারছিলাম সাড়ে নটা থেকে। রূপমবাবু আপনি ভাবলেন আমরা খুনী। কিন্তু কি করে তাহলে আমরা শিবেনবাবুর বাড়ি। কেসটা ওখানেই আমরা গুলিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু শেষ রক্ষা হল না আপনারা যখন দ্রুত গতিতে পতিতা পল্লী আর বাঘাযতীনের ফ্ল্যাটে গেলেন তখন আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল যে আমরা সকলে জড়িত এই তিনটে কেসের সঙ্গে তাই তো?‌ সত্যি বলতে আমরা এই ধরনের হত্যা করতে চাই নি। কিন্তু কতটা বেদনা ও যন্ত্রনা মিশিয়ে আমরা এই কাজটা করেছি তা কেবল হয়তো আমরা জানি। এর বিচার এবার আপনারাই করুন।’

        শিবেন আর রূপমের মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না। প্রথম মুখ খুলল রূপম ‘ স্যার তাহলে কি করব?’ শিবেনবাবু মৃদু হেসে বললেন ‘ কি আর করব

 একটা দারুন নাটক দেখলাম। যেখানে নারীরাই শাস্তি দিল শয়তান গুলোকে। চল বাড়ি ফিরতে হবে রূপম।’

রূপম হাঁ করে শিবেনবাবুর মুখের দিকে চেয়ে রইল তারপর অস্ফুটে বলল ‘ স্যার তার মানে ওনাদের অ্যারেস্ট করব না?’

  • ‘ আমি তো কিছু দেখি নি কিছু শুনি নি। আমি শুধু শুনেছি দেখেছি সমাজের কটা কলঙ্কিত কালো মুখ দূর হয়ে গেছে। যৌনকর্মীরাও লড়ছে। বাঁচার লড়াই। সম্মানের লড়াই। তারা যখন মূল স্রোতে ফিরতে চাইছে কিছু শয়তান পা টেনে ধরছে। সেখানে তো অসুর নিধন করতেই হবে। যেখানে আমরা ব্যার্থ সেখান থেকে অন্য কাউকে তো শুরু করতেই হবে কি বল?’
  • ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার বুঝেছি। আর এই কেসটা আমরা ছারা কারোর মাথাতে ঢুকবে না। আবার ধূলো জমবে ফাইলে। চলুন আপনার বাড়ি গিয়ে এবার গরম কাটলেট খেতে হবে। আর অনেকদিন পর আপনার সুন্দরী বউমার সুখ লাভ হবে। চলুন স্যার চলুন।’

শিবেন আর রূপম গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিল। বিন্নি মাসি হাঁক দিল “ স্যার”। পিছন ফিরে ওরা তাকাল। বিন্নি মাসির হাতে সেই টাকাগুলো যেগুলো রূপম খরচ করেছিল এই কেসটার সমাধানে। শিবেনবাবু বললেন ‘ ওইটা তোমরা রেখে দাও আমাদের লাগবে না।’ শিবেনবাবুর পায়ে এসে পড়ে বিন্নি। কাঁদতে কাঁদতে বলে ‘ স্যার, এইটাকে মুক্তি দাতা হিসাবেই না হয় নিন।’ সবার চোখে তখন জল চিকচিক করছে। শিবেনবাবু বললেন ‌’ সত্যি রূপম কি বিচিত্র এই দেশ।’

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post সাইকো এবং সাইকো| কঠোর ভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য | আশিস চক্রবর্তী| Bengali Story for Matured
Next post জাল| কঠোর ভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য | কৃষ্ণ রায়| Bengali Stories for Matured