সত্তা| পলক-ফেলা-নিষেধ | পল্লবী মালো| Bengali Thriller Story
0 (0)

ঘুম ভাঙতে ভাঙতেই আজ দশটা। সচরাচর আমার এতটা দেরি হয় না!

উঠেই কোনোমতে দুটো পাউরুটি আর একটা ডিমসিদ্ধ মুখে ঠুসে লেখাটা নিয়ে বসলাম। মনঃসংযোগ করার চেষ্টা করছি, এমন সময়ে ফোনটা বেজে উঠল।

কিছুটা বিরক্তি আর সংকোচ নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম-

ওপাশ থেকেই প্রথম আওয়াজটা এল, “ম্যাডাম, আপনার থেকে কিন্তু একটা গা-ছমছমে লেখা চাই এবারে। আশাহত করবেন না নিশ্চয়ই! একটু তাড়াতাড়ি …”

–হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই! লেখাটা নিয়েই বসেছি। আশা করি, দিনদুয়েকের মধ্যেই পেয়ে যাবেন।

মাধববাবু, সাম্প্রতিককালের একটা রহস্য-রোমাঞ্চ পত্রিকার সম্পাদক। দু-তিন সপ্তাহ আগে ওঁদের পত্রিকায় লেখার আবেদন জানিয়ে ফোন করেছিলেন। দেরিটা আসলে আমিই করছি। কীই বা করব? লিখতে লিখতে নিজেই তো হিমশিম খাচ্ছি! পুজোর আর বেশি দেরি নেই। পূজাবার্ষিকীগুলোও তাই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। লেখার ভীষণ চাপ; দিনরাত্তির অদ্ভুতুড়ে সব প্লট ঘুরছে মাথায়! আজকেও একটা জব্বর প্লট এসেছে!

লিখতে শুরু করলাম…

“সে রাতটা ছিল ভয়ঙ্কর! যেদিকেই তাকাই, ঘুটঘুটে অন্ধকার! মিনিট দশেক কাঠপুতুলের ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে আমি; বারবার চোখ কচলাবার পরেও কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় এসে পড়লাম, কীভাবে এলাম… কিছুই ঠাহর করা যায় না। সে কী ভীষণ অস্বস্তিকর অবস্থা! এমনসময় সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে শুকনো পাতার খসখস শুনতে পেলাম…”

এতটা লেখার পরই ভাবনাগুলোকে একটু গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম।

কালকের স্বপ্নটাও ঠিক এরকমই ছিল!

ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন হয়তো কম-বেশি সবাই দেখে। আমিও দেখি নিশ্চয়ই। খারাপ স্বপ্ন, ভালো স্বপ্ন…তবে কোনটাই বেশি মনে থাকে না। দুঃস্বপ্ন দেখে কখনও-সখনও হয়তো আঁতকেও উঠেছি! তবে ঘুম থেকে ওঠার পর সেই স্বপ্নের স্মৃতিগুলো নিজে থেকেই আবছা হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু আজ সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর থেকেই অস্থির লাগছে আমার…

কাল ভোররাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নটা অদ্ভুত তো বটেই, তার চেয়েও বড় আশ্চর্যের ব্যাপার হল, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সেই স্বপ্নের সবকিছু আমার মনে আছে! একেবারে নিখুঁত, স্পষ্ট! যেন ঘটনাগুলো স্বপ্নে না, বাস্তবেই ঘটেছে…

এমনসময় সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে শুকনো পাতার খসখস শুনতে পেলাম। অবাক হয়ে দেখলাম, এতক্ষণে আকাশে তারা ফুটেছে, দূরের তালগাছগুলো এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়াচ্ছে। দুই তালগাছের মধ্যিখানে মুখ বের করে হাসছে একফালি চাঁদ। তার হাল্কা জ্যোৎস্নায় চারপাশটা দৃশ্যমান হয়েছে। আমার পায়ের তলায় ভিজে ঘাস। রাতের কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া তীক্ষ্ণ সূচের মত বিঁধছে শরীরে। সেই হাওয়ায় অনেক ফিসফাস শব্দ, কে জানে হয়তো আমার মনের ভুল!

বুকটা হঠাৎ ধড়াস করে উঠল আমার।

যে জায়গাটায় আমি দাঁড়িয়ে, সেটা আমার বেডরুম নয়, কোন জনবহুল লোকালয় বা মার্কেটও নয়; বরং একটা কবরস্থান! সমুদ্রের মধ্যে জেগে থাকা ভাসমান দ্বীপগুলোর মত আমার চতুর্দিকে মাথা উঁচিয়ে জেগে আছে অনেকগুলো সমাধি! সেখানে ধুলোর আস্তরণ পড়েছে, ছোট-বড় অনেক আগাছা আর লতানে পরগাছাও জমেছে; রেখে যাওয়া টাটকা-বাসি অভিমানী ফুলগুলো উড়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে। বুড়ো বট-অশ্বত্থ-ডুমুরের শুকনো পাতা মাটি ঢেকে ফেলেছে।

ওই খস খস শব্দটা আবার হল…

দেখলাম, রাতের নিস্তব্ধতার পাহাড় গুঁড়িয়ে কেউ এইদিকেই এগিয়ে আসছে!

আমি সতর্ক হয়ে তখনই লুকিয়ে পড়লাম পিছনের বড় বটগাছটার আড়ালে। এই আবছা আলো-আঁধারিতে মানুষটাকে স্পষ্ট দেখা যায় না। মনে হয় মানুষ নয়, যেন শুধুই তার কালো ছায়া!

সে সামনে এগিয়ে আসতেই দেখলাম, তার পরনে রয়েছে কালো রঙের সাদামাটা বোরখা! মুখ ঢাকার কাপড়টা যদিও খানিক ট্রান্সপারেন্ট; শুধু চোখের জায়গাটা খোলা। উচ্চতা খুব বেশি নয়, আন্দাজ পাঁচ ফুট, আমারই মতন! বিশেষ প্রয়োজনে, নিজের পরিচয় গোপন করতে আজকাল অনেক পুরুষও বোরখা পরে। তবে এই মানুষটির শরীরের গড়ন বেশ মেয়েলি। কোন মেয়েই হবে বোধহয়…মানতে হবে মেয়েটার সাহস আছে! একলা এই রাতবিরেতে এরকম একটা জনমানবহীন কবরস্থানে আসতে গেলে বুকে দম লাগে!

গাছটার সামনে আসামাত্র তার চোখ ঘুরল এদিকে। আমার দিকেই বোধহয় সে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক…

বুকটা ঢিপঢিপ করতে শুরু করেছে আমার। কিন্তু পরমুহূর্তেই তার দৃষ্টি ঘুরে গেল অন্যদিকে… 

“বাঁচা গেছে, দেখতে পায়নি!” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি।

কিন্তু আমি দেখতে পেয়েছি, তার চোখে বীভৎস রাগ আর ঘৃণা!

এই গাছের গোড়াতেই একটা গর্ত খুঁড়ে রাখা, বেশ গভীর আর ছ-সাতফুট মত লম্বা। এতক্ষণ খেয়াল করিনি!

সেই গর্তের মধ্যে শুইয়ে রাখা হয়েছে একটা লোককে! জ্যান্ত মানুষ! গাছের আড়াল থেকেই লক্ষ্য করলাম, তার পরনে ধুলোমলিন কুর্তা-পাজামা, মুখভর্তি সাদা গোঁফ-দাঁড়ি। লোকটার হাত-পা-মুখ বাঁধা! কাতরভাবে সে গোঙ্গাচ্ছে আর নড়াচড়া করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে; কিন্তু পারছেনা! অসহায়ের মত ফ্যালফ্যাল করে সে শুধু তাকিয়ে আছে গর্তের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ওই বোরখা পরা মেয়েটার দিকে, যার মনে সহানুভূতির কোন লেশমাত্র নেই; বরং ঠোঁটে লেগে আছে একটা নিষ্ঠুর, হাসি! সেই হাসির অর্থ, যতই অসহায় হও, তোমার আজ পরিত্রাণ নেই!

বয়স্ক মানুষটি তবুও অবুঝের মত প্রাণভিক্ষা করে চলেছে, তাও আবার নিজেরই মৃত্যুদূতের কাছে!

মেয়েটা কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থাকার পরই কাজে লেগে পড়েছে। পাশে ঢিবি করে রাখা মাটি বেলচা দিয়ে তুলে-তুলে ফেলছে লোকটার উপর। কয়েকমুহুর্তের মধ্যেই গর্তটা প্রায় পুরো ভরাট করে দিল সে। বৃদ্ধের পা থেকে বুক অব্ধি এখন মাটির নীচে! শুধু সাহস না, মেয়েটার গায়ে জোরও আছে, বলতে হবে!

হাঁপাতে হাঁপাতে এবার সে বসে পড়ল গর্তটার পাশে। তার দৃষ্টি এখন ওই গর্তে শায়িত লোকটার দিকে।

অসহায় বৃদ্ধ মানুষটি ছটফট করতে করতে ক্লান্ত। চোখ বুজে নিয়েছেন। তবে ধড়ে প্রাণ আছে এখনও, বুকটা সামান্য ওঠা-নামা করছে।

এই নৃশংস দৃশ্য দেখে কি শান্ত থাকা সম্ভব? একটা জলজ্যান্ত মানুষকে মাটি চাপা দিয়ে খুন!

কিন্তু কীই বা করতে পারি আমি?

স্বপ্নের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। শুরু থেকে এখনও অব্ধি যা, যা হচ্ছে সবই ওই মেয়েটির ইচ্ছেয়। কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম! আমি কাঠপুতুলের মতই দাঁড়িয়ে রইলাম গাছের পিছনে; বুকের ধড়ফড়ানি সঙ্গে নিয়ে দেখতে থাকলাম এই চরম মর্মান্তিক দৃশ্য…

আমি ওদের দেখতে পেলেও ওরা আমাকে দেখতে পাচ্ছে না।

মেয়েটার হঠাৎ কী মনে হল, উঠে গিয়ে সে বুড়ো লোকটার মুখের বাঁধন খুলে দিল। অমনি লোকটার ভিজে চোখ দপ করে জ্বলে উঠল একবার, যেন তেষ্টায় কাঠ হয়ে যাওয়া গলায় কেউ একবিন্দু জল ফেলল…

আমি আড়াল থেকে স্পষ্ট শুনতে পেলাম, হাঁফ ধরা রুগির মত, বৃদ্ধ আকুতি করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য, যেন এই শেষ এবং একমাত্র সুযোগ! আর উচ্চারণ করছে একটাই নাম, বারবার…

বারবার শুনেও নিজের কানে বিশ্বাস হচ্ছিল না।

“ওই নামটা তো আমার…”

গাছের আড়াল থেকে ধীরপায়ে বেরিয়ে এলাম আমি।

মেয়েটা শেষ মাটির ঢেলাটা ফেলার আগে আমি ওই বৃদ্ধের মুখ দেখতে পেলাম, একেবারে সামনে থেকে…

ততক্ষণে সম্পূর্ণভাবে মাটির নীচে চলে গিয়েছেন বৃদ্ধটি। কালো কাপড়ে ঢাকা মেয়েটা আমার দিকে একটা নির্মম বিদ্রূপাত্মক হাসি ছুঁড়ে দিয়ে ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে…

ক্রিং, ক্রিং, ক্রিং…

ফোনটা আবার বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রিনে ছোট-কাকিমার নাম্বার!

কাকিমা কাঁদছেন, “বুলিরে, তোর ছোটকাকু আর নেই! মরার আগে বারবার হাঁপাতে-হাঁপাতেও নাকি তোর নাম নিচ্ছিল। তোকে তো ফোনেই পাচ্ছি না! ডাক্তারবাবু বললেন, কাল রাতে আই সি ইউতেই সবশেষ। শ্বাসের গতি, হার্ট রেট, বিপি সব বেড়ে গিয়ে…”

কাকিমার কথাগুলো ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, শব্দগুলো ঠিকঠাক কানে আসছে না।

আমি চোখ বন্ধ করে ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছি কাল রাতের ওই নির্জন কবরস্থানে। ওই ধুলোমলিন কুর্তা-পাজামা, মুখভর্তি সাদা গোঁফ-দাঁড়ি…আমার ছোটকাকু! হ্যাঁ, হ্যাঁ, ছোটকাকুই তো!

এখন মাটির নীচে ঘুমিয়ে আছেন! থাক, ঘুমোক এখন, ঘুমোক…

সত্যি বলি, খুব একটা কষ্ট পাইনি!

জেঠুর পর বাবা, বাবার পর ছোটকাকু… চক্রটার তো এমনই চলার কথা। ওই যে কবি বলেছেন, “জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?”

যদিও কাকুর ব্যাপারটা অন্য। বয়সের তুলনায় শরীরে রোগ বেশি! পঞ্চাশের পর থেকেই চেহারা ভাঙছে। এখন পঁয়ষট্টি। ইতিমধ্যে দুবার মাইল্ডস্ট্রোকও হয়েছে। হাঁটা-চলারও বিশেষ ক্ষমতা নেই। মনে হয় যেন, শরীরের একেকটা অঙ্গ পচতে শুরু করেছে!

দিনপাঁচেক আগে প্রচণ্ড বুকে ব্যথা উঠল। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল।

ডাক্তার বললেন, “আই সি ইউতে রাখতে হবে। রক্তে গ্লুকোজ আর অক্সিজেন লেভেল এক্সট্রিম ফ্লাকচুয়েট করছে, বিপির উপরও নিয়ন্ত্রণ নেই।“

কাকিমা ভয় পেয়ে আমাকেই প্রথম ফোন করেছিল।

ওদের একমাত্র ছেলে, অভিজিৎ অল্প বয়সেই বিদেশবাসী। সেখানেই এতদিনে সংসার পেতে নিয়েছে। ফোন করে টুকটাক খোঁজখবর নেয় ঠিকই, কিন্তু বাড়ির প্রতি তেমন টান নেই। বাবার অসুস্থতার কথা শুনেও ও ছেলে বাড়িমুখো হয়নি!

নিকট আত্মীয় বলতে কেবল আমি!

কাকিমাকে আশ্বাস দিয়ে বললাম, “ভর্তি করে দাও। টাকা-পয়সা আমিই দেবো। লিখে দুপয়সা যাই রোজগার করি, সে তো সময়ে-অসময়ে খরচ করার জন্যই। টাকা আজ আছে, কাল নেই।“

কাকিমা খানিক ভরসা পেয়েছিল। বয়স তো তারও হচ্ছে! তার উপর আবার ক্রনিক অ্যাস্থমার পেসেন্ট। অত দৌড়ঝাঁপ শরীরে সয়না।

মায়ের অ্যাক্সিডেন্টের পর একমাত্র এই ছোটকাকিমাই ছিল আমার মাতৃস্থানীয়া। জেঠুরা তো শুরু থেকেই দিল্লীবাসী! ছোট থেকে আমি ছিলাম মা-ন্যাওটা। মা যতদিন ছিল, আমার কাউকে দরকারই পড়েনি। মায়ের সঙ্গে আমার খুব ক্লোজ বন্ডিং; তেমনটা আর কোনদিনও কারুর সঙ্গে হয়নি, হয়তো হবেও না! মা চলে যাওয়ার পর তখন আমি একদম একা! পৃথিবীটা খালি খালি লাগত। কিচ্ছু ভালো লাগত না।

ততদিনে কাকুর বিয়ে হয়েছে, নতুন কাকিমা এসেছে ঘরে। কাকিমার সঙ্গে কথা বলতে আমার বেশ লাগত। কিন্তু কাকুকে খুব একটা পছন্দ করতাম না। সেইজন্যই হয়তো ওদের সঙ্গে আমার দূরত্বটা কোনদিনই পুরোপুরি ঘুচল না।

ছোটকাকু ভর্তি হওয়ার পর থেকে খান দুয়েকের বেশি হাসপাতালে যাইনি। গতকাল গিয়ে দেখে এসেছিলাম, কাকুর অবস্থা খারাপ বৈ ভালো হচ্ছিল না!

হাসপাতালে বেশি যাওয়া-আসা করা আমার পছন্দ না। ওখানকার গন্ধটাই কেমন যেন রোগজীবাণু মেশানো! বেশিক্ষণ সেখানে থাকলে সুস্থ শরীর অসুস্থ হয়ে যায়।

বেলা গড়িয়ে বিকেল হল।

দুপুরে কিচ্ছুটি খাইনি। বাণীমাসি সকালেই রান্না করে ফ্রিজে রেখে গিয়েছিল। সে খাবার এখনো ফ্রিজেই আছে। গায়ে দুমগ জল ঢেলেছি শুধু।

কাকুর মৃতদেহ দেখতে মন চাইল না। কাল সকালে একবার কাকিমার সঙ্গে গিয়ে দেখা করে আসব খন। টেবিলে আবার বসলাম লেখা নিয়ে। সকালের সেই দু-তিন লাইনের পর আর লেখাই হয়নি!

–কীরে বুলি, ঘুরতে যাবি? আইসক্রিম খাওয়াবো!

–মা জানলে কিন্তু ভীষণ বকবে! মা বলে, আইসক্রিম খেলে গলা ব্যথা হয়…

–কিচ্ছু হবে না, তুই চল তো…

–আচ্ছা, চলো, চলো! আমার কিন্তু আইসক্রিম আর লজেন্স চাই।

লাল ফ্রক পরা একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে তার ছোটকাকুর হাত ধরে লাফাতে-লাফাতে যাচ্ছে আইসক্রিম খেতে। বিশুর দোকান থেকে সে কিনল ভ্যানিলা আইসক্রিম আর ম্যাঙ্গো লজেন্স। আর ফুটপাতের বেলুনওয়ালার থেকে একটা লাল বেলুনও।

সন্ধে হয়ে আসছে…

বাড়ি ফিরতে হবে। ফেরার রাস্তায় একটা পুরনো কবরস্থান পড়ে। পরিত্যক্ত, নির্জন… এদিকটায় কেউ আসে না। কে জানে ভয় পায় হয়তো!

কিন্তু ওই বাচ্চা মেয়েটা ভয় পায় না। কাকু আছে তো সঙ্গে! ছোটকাকুই ওকে নিয়ে যায় সেখানে।

চোখ বড়-বড় করে ও দেখে, চারপাশে শুধুই সমাধি। ওই সমাধির নীচে নাকি মানুষ ঘুমিয়ে থাকে, বছরের পর বছর! সমাধিগুলোর উপর ধুলোর আস্তরণ, টাটকা-বাসি ফুল, ছোট-বড় অনেক আগাছা আর লতানে পরগাছা, মাটিতে বুড়ো বট-অশ্বত্থ-ডুমুরের শুকনো পাতা…

একটা সমাধির উপর গিয়ে বসে ওরা।

তারপর মেয়েটাকে কোলে বসিয়ে কাকু আদর করে; আদর বলতে মেয়েটা যা বোঝে, এই আদর তেমন না!

মেয়েটার খুব ভয় হয়, ব্যথা লাগে, অস্বস্তি হয়। আইসক্রিম গলে পড়ে মাটিতে টুপটুপ করে।

ফিরে এসে যদিও ও মাকে কিছুই বলেনা, যদি আইসক্রিম খাওয়াটা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়!

কিন্তু একদিন খুব খুব ব্যথা হল। রক্ত পড়ল। লাল ফ্রকটা লাল রক্তেই ভিজে গেল। একছুটে পালিয়ে গেল মেয়েটা।

বাড়ি এসে কাঁদতে কাঁদতে সেদিন ও মাকে সব বলে দিল… সব

বাবা একদম মানতে চাইল না। কাকুও এমন ভাবভঙ্গি করল যেন বুলি, দশ বছরের ওই বাচ্চা মেয়েটা বানিয়ে বানিয়ে এসব গল্প ফেঁদেছে।

মা বাবাকে বলল, “ছোটর তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা করো।“

বাবা বলল, “যা হয়েছে, হয়েছে… পারিবারিক কথা পাঁচকান করতে নেই! তুমি বুলিকে সাবধানে রাখো, মালতী।“

মেয়েটাকে নিয়ে মা ভিতরের ঘরে চলে গেল।

সেদিন থেকে মেয়েটা আর ওর কাকুর কাছে যায় না, কোনদিনও না…

“কীরে? ওঠ…ওঠ…এই ভর সন্ধ্যেবেলায় কে ঘুমোয় রে?”

জোরে-জোরে আমাকে কেউ ধাক্কা দিচ্ছে।

“কে? কে? কী… কী হয়েছে?” ধড়ফড় করে উঠলাম আমি…

“ওহ ওহ! স্বপ্ন ছিল, স্বপ্ন!” টেবিলে বসে ঢুলতে ঢুলতে নির্ঘাত চোখটা লেগে গিয়েছিল। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মুখ তুলে দেখলাম, সামনে সুমন দাঁড়িয়ে। আকাশ থেকে পড়লাম আমি।

–সু…সুমন? তুই…তুই এখানে…এতদিন বাদে…কী ব্যাপার? কী খবর? হঠাৎ?

–হঠাৎ…? হঠাৎ কোথায় রে? ভুলে গেলি নাকি? এই দুদিন আগেই তো কথা হল আমাদের। কাজের খুব চাপ নাকি তোর? স্ট্রেস?

আমি একটু মনে করার চেষ্টা করলাম।

হ্যাঁ, সুমনের সঙ্গে কদিন ধরেই কথা হচ্ছিল ফেসবুকে। এই সুমনকেই একসময় ভালবেসেছিলাম খুব। তখন কলেজের ফার্স্ট ইয়ার। আলাপ হওয়ার পর থেকেই এই ছেলেটাকে আমার বেশ সেন্সিটিভ আর সমঝদার গোছের মনে হয়েছিল।

স্কুলে কখনো প্রেম করিনি আমি। খুব একটা কাছের বন্ধুও কেউ হতনা। একা-একাই থাকতাম। কিন্তু কলেজে এসে সুমনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হল। এমনকি প্রেমও! জীবনের প্রথম প্রেম আমার; তাই সঙ্গে ছিল অনেকখানি সারল্য আর বিশ্বাস। সবারই থাকে হয়তো!

কিন্তু দুবছর হতে না হতেই ঝড় উঠল আর আমাদের সম্পর্কের সেতু টলমল করতে শুরু করল। একদিন লোকমুখে শুনলাম, সুমনের নাকি এখন অন্য কারোর সঙ্গে সম্পর্ক!

সরাসরি সুমনকে জিজ্ঞেস করলে ও বলত, “লোকের কথায় কান দিসনা তো!”

ও ভুল বোঝাত আর আমি ভুল বুঝতাম। চোখ-কান বুজে বিশ্বাস করতাম যে! কিন্তু একদিন আমার ভুল ভাঙল, বিশ্বাসের মৃত্যু হল! যা ছিল, সব টুকরো-টুকরো হয়ে গেল…

নাহ, ক্ষমা ও এতদিনে একবারও চায়নি! ও চলে গিয়েছিল আলোর খোঁজে আর আমি পড়েছিলাম একা অন্ধকারে!

আমার খুউউব রাগ হয়েছিল। একসময় রাগ জমে-জমে ঘৃণা তৈরি হল, সেই ঘৃণার বরফ গলে একদিন যন্ত্রণা হয়ে বেরিয়ে আসল, কান্না হয়ে ঝরল। তবুও কষ্ট শেষ হল না। মা চলে যাওয়ার পর যে একাকীত্বটা আমায় কুঁড়ে-কুঁড়ে খেত, সুমনের যাওয়ার পর সেটা আবার ফিরে এল। আমার গলা অবধি কষ্ট কিন্তু একটা মানুষ নেই জড়িয়ে ধরার মত!

তখন থেকেই খাতা-পেন নিয়ে বসি। মনের অন্ধকারগুলোকে নিয়ে একেকটা ভূত বানাই। আর সেইসব ভূতের গল্প পড়তে খুব ভালোবাসে লোকে!

সুমনের সঙ্গে আমিই দূরত্ব বাড়িয়ে নিয়েছিলাম।

কী হবে কাছে এসে? আমি যে দুর্বল, একা! কেউ কাছে এসে হেসে দুটো কথা বললেই তাকে আঁকড়ে ধরতে চাই। অমনি ভিতর থেকে কেউ চিৎকার করে বলে ওঠে, “নাহ, বুলি! আর না…আবার ঠকবি!”

সেই থেকে আমি আরও একা! এই ফ্ল্যাটের মধ্যে বইপত্রের মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে ভূতের মত বেঁচে থাকি!

এতবছর পর টুং-টাং করে ফেবুতে মেসেজ ঢুকল সুমনের।

লেখা ছিল, “আই অ্যাম সরি। পারলে ক্ষমা করিস। এতদিনে বুঝেছি, ভুল করেছিলাম!”

আমিও ভাবলাম, “সত্যিই তো! মনের মধ্যে পুরনো রাগ পুষে রেখে কী লাভ? বন্ধু তো হওয়াই যায় আবার। যায় না? জীবনে বন্ধুর খুব দরকার, এটুকু আমি বেশ বুঝি।“ 

ওকে বললাম, “একদিন আসিস, দেখা করে যাস।“

আজ সুমন এল। চেহারায় কোন জড়তা নেই, মুখে গ্লানি বা সংকোচও নেই! যেন সেই ফার্স্ট ইয়ারের সুমন!

কিন্তু গতরাতের বীভৎস স্বপ্ন, সকালের মৃত্যুসংবাদ…সবমিলিয়ে আমার মনটা বিগড়ে ছিল। তার উপর সুমন…!

আমি সহজ হওয়ার চেষ্টা করে বললাম, “চল, ঘুরে আসি। ভালো কোথাও থেকে খেয়ে আসি। আমার মন-মেজাজ ভালো নেই।“

ঘরে বসে মাথা খুঁড়ে-খুঁড়ে কথা বের করার চাইতে বাইরে খেতে যাওয়াই ভালো। কথা বলার বেশি ঝঞ্ঝাট থাকেনা। 

ফিরতে ফিরতে রাত্রি সাড়ে নয়টা।

চাইনিজ খেয়ে এসেছি। সকালের ডাল-তরকারি এখন আর মুখে রুচবে না।

ল্যাপটপটা খুলে কিছুক্ষণ খুটুরখুটুর করার পর, মুখ-হাত ধুয়ে শুয়ে পড়লাম আমি।   

সারি-সারি বেঞ্চি পাতা। চারপাশে ছোপ-ছোপ অন্ধকার। স্থানে-স্থানে আবছা হলদে আলো অন্ধকারের সঙ্গে মিলে একটা ভয়ানক ধোঁয়াটে পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

সামনে কাউন্টার। দুটো মাটির ভাঁড়ে গরম চা রাখা আছে সেখানে। ছেলেটা দু-হাতে কাপদুটো নিয়ে এসে বসল একটা বেঞ্চে। সামনে রাখা চিকেন চাউমিনের প্লেট থেকে ধোঁয়া উঠছে। উলটোদিকের বেঞ্চে বসে আছে একটা মেয়ে, কালো কাপড়ে তার মুখ ঢাকা!

জায়গাটা দেখে আমাদের পুরনো কলেজ ক্যান্টিন মনে হয়। ওই দুটো ছেলে-মেয়ে ছাড়া আশেপাশে আর কেউ নেই! আমি কিছুটা দূরে একটা বড় থামের পেছনে দাঁড়িয়ে পড়লাম।

এখান থেকে ওদের দেখা যায়, কিন্তু কথোপকথন শোনা যায় না। খুব চেনা দৃশ্য, এমনকি ছেলেটাকেও চেনা-চেনা মনে হয়, শুধু মেয়েটা অচেনা, অপরিচিত! 

“শস্‌স্‌স্‌স্‌…শস্‌স্‌স্‌স্‌…”

কাছেপিঠে কোথাও থেকে হয়তো ভেসে আসছে শব্দটা।

একটু এপাশ-ওপাশ তাকাতেই আমি ছেলেটার পায়ের সামনে পড়ে থাকা ওই হিলহিলে জিনিসটাকে দেখতে পেলাম। জিনিস বললে ভুল হবে, একটা জলজ্যান্ত, ভয়াল জীব!

এই সময়েই উঠে গেল মেয়েটা।

হনহন করে এখন সে হেঁটে চলে যাচ্ছে, যেন পিছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই। ছেলেটা চিৎকার করে ডাকল তার নাম ধরে।

আমি চমকে উঠলাম, “এ তো আমার নাম!”

মেয়েটা থামল না। ছেলেটা উঠতে গিয়েও পারল না। কারণ এখন অতি সন্তর্পণে তার পা বেয়ে-বেয়ে উঠছে একটা স্যাঁতসেঁতে সরীসৃপ। আঁকাবাঁকাভাবে ছেলেটার কোমরের উপর দিয়ে হেঁটে চলেছে সে।

আমার শ্বাস আটকে এল, “সাপ!”

শুধু একটা না, ওর পায়ের কাছে এখন গিজগিজ করছে প্রায় দশ-বারোটা সাপ। তাদের লকলকে চেরা জিভ আর বিষদাঁতের পেছনে লুকিয়ে থাকা বিষপূর্ণ থলিটা বাইরে থেকেও দেখা যাচ্ছে। মুহুর্মুহু হিংস্র ফণা উঠছে তাদের…

পালিয়ে বাঁচতে চাইছে ছেলেটা। প্রাণের ভয়ে ও যত ছটফট করছে, ওই বিষধর প্রাণীগুলো ততই নির্মমভাবে পেঁচিয়ে ধরছে ওকে। এরকমসময়ে বাঁচার জন্য যে স্থির থাকতে হয়, ছেলেটা হয়তো সেটা জানেনা।

ছেলেটার হাতে-পায়ে-কোমরে মন্থর অথচ নিষ্ঠুর ভঙ্গিতে খেলে বেড়াচ্ছে ওরা। 

এতক্ষণে ওর গলা অব্ধি উঠে এসেছে একটা সাপ। এবার সে চামড়ায় দাঁত বসিয়ে ঢেলে দিল বিষ। মুহূর্তে নীল হয়ে গেল ছেলেটার শরীর। সব হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি থেমে গেল। একদম স্থির এবং শান্ত…

মেয়েটা একবারমাত্র পিছন ফিরে দেখল। মৃদু হেসে আবার মুখ ফিরিয়ে নিল সে। আমি দেখলাম, তার চোখে রাগ… সেই রাগের অর্থ, “নাহ, ক্ষমা নেই! এ ভুলের কোন ক্ষমা নেই!”

স্থবিরের মত এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর, এবার আমি দৌড়ে গেলাম ছেলেটার কাছে…

”সু…সুমন!” ওর মুখ থেকে ফেনা বেরোচ্ছে এখনও, রক্তশূন্য, ফ্যাকাশে, নীল মুখ!

মেয়েটার পিছনে ছুটলাম আমি…

চেঁচালাম, “কে? কে তুমি? কেন এরকম করছ? তোমাকে আমি আগেও কোথাও দেখেছি!”

মেয়েটা হয়তো শুনেও শুনল না। হাঁটতে হাঁটতে ধোঁয়া হয়ে মিলিয়ে গেল অন্ধকারে।

অ্যালার্ম বেজে চলেছে…

ঘামে ভিজে গেছে আমার সর্বাঙ্গ। আজও সোয়া দশটা! সাতটার অ্যালার্ম ইতিমধ্যে পাঁচবার বেজে বন্ধ হয়ে গেছে। কী যে হচ্ছে!

চা খেতে-খেতে অন্যমনস্কভাবে ফেসবুক স্ক্রোল করছিলাম।

হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটা খবরে…

“সুমন!”

আমার হৃৎপিণ্ড যেন কিছুক্ষণের জন্য আওয়াজ করতে ভুলে গেল।

কলেজের হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপেও দেখলাম কেউ একটা লিখেছে যে, “মৃত্যুটা নাকি স্বাভাবিক নয়। পুলিশ তদন্ত করবে, আপাতত মনে করা হচ্ছে এটা খুন।“

খবরটা শুনে চমকে গিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু দুঃখ অতটা পেলাম না। বরং…

বুঝলাম, এত চেষ্টা করে, এতদিনেও আমি সুমনের উপর হয়তো রাগ কমাতে পারিনি। কিন্তু তাই বলে, একটা হাসিখুশি, জোয়ান ছেলের খুন তো আর মেনে নেওয়া যায় না! যার সঙ্গে কাল রাতেই রেস্টুরেন্টে বসে চাউমিন সাঁটালাম, আজ সকাল হতে না হতেই…

একটা জিনিস পরিষ্কার বুঝতে পারছি, যাকে নিয়েই আমি ওরকম বীভৎস স্বপ্ন দেখছি, তারই এরকম চরম পরিণতি হচ্ছে; ‘মৃত্যু’! ছোটকাকুর না হয় শারীরিক অসুস্থতা ছিল, কিন্তু সুমনের? সুমনের মৃত্যু হল কীভাবে? আমার স্বপ্নের জন্যই কি তাহলে মরে যেতে হল ওকে? সব দোষ কি আমার? সত্যিই কি খুন? কিন্তু কেন? কীভাবে? খুনির উদ্দেশ্যই বা কী? ছোটকাকুরও কি তাহলে হাসপাতালের মধ্যেই… কিন্তু আই সি ইউতে অচেনা লোক কীভাবে ঢুকবে?

আমার হৃৎস্পন্দনের গতি ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে…    

দুদিন ধরেই ঘুমের মধ্যে এরকম দুঃস্বপ্ন আসছে; বীভৎস, নির্মম আর অস্বাভাবিক!

রোজ-রোজ স্বপ্নে একটা মেয়ে আসে, কালো কাপড়ে তার মুখ ঢেকে। সে কে আমি জানিনা, তার মুখ কখনো দেখতে পাইনি। আমার চেনা মানুষগুলোকে সে নির্মমভাবে খুন করে! অনায়াসে, হাসতে-হাসতে সে ইতিমধ্যেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে ছোটকাকু আর সুমনকে… একজনের মাটি চাপা দিয়ে মৃত্যু, অপরজনের সাপের কামড়ে…

আমি করতে কিছুই পারিনি। শুধু স্বপ্ন দেখেছি! স্বপ্নে যা দেখেছি, পরেরদিন সেটাই খবর হয়ে ফিরে এসেছে আমার কাছে! পুরোটাই কোইনশিডেন্স নাকি যোগসূত্র আছে কিছু? অলৌকিক কিছু নয় তো? কে জানে! হয়তো আমি বেশি ভাবছি!

কলিং বেল বাজল।

চিন্তাস্রোতে ব্যাঘাত ঘটল আমার। বাণীমাসি গিয়ে দরজা খুলল। এসে বলল, “তোমাকে খুঁজছে।“

আমি গায়ে একটা ওড়না চাপিয়ে দরজায় এলাম। দেখলাম খাকি উর্দি পরা লোকাল থানার কজন পুলিশ।

খুব একটা অবাক হলাম না। পাড়ায় খুন হলে তদন্ত করতে পুলিশ বাড়ি আসবেই। সুমনের বাড়ি বেশি দূরেও না। কলেজে পড়াকালীন বেশ কয়েকবার গিয়েছি। একাই থাকত ও। আশপাশের কয়েকটা বাড়িতে কয়েকদিন পুলিশি উৎপাত চলবে। এটাই তো স্বাভাবিক! উপরন্তু আমি কাল সন্ধ্যেটা সুমনের সঙ্গে ছিলাম। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৈরিই ছিলাম। আমিও জানতে চাই, যে খুনি কে?

থানা থেকে যারা এসেছিলেন, তাদের মধ্যে একজন প্রশ্নটা করলেন প্রথম।

–কাল রাতে আপনি কোথায় ছিলেন?

–কাল সন্ধ্যেবেলা সুমন আমার বাড়ি এসেছিল। তারপর…আমরা গলির মুখের ওই ‘মা তারা রেস্টুরেন্ট’-এ গিয়েছিলাম। রাত দশটার আগে আমি বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। সুমনই পৌঁছে দিয়ে গিয়েছিল।

তোতাপাখির মত কথাগুলো বললাম আমি।

–আচ্ছা, রাতে বা একটু ভোরের দিকে আপনি কোথায় ছিলেন?

–মানে?

–পোস্টমর্টেম এখনও হয়নি। তবে আমাদের অনুমান, সুমনের মৃত্যুটা ওই সময়েই হয়েছে। বিষপ্রয়োগে…মানে হাই ডোজের কোন…

–বিষ…!

চমকে উঠলাম আমি।

–হ্যাঁ, বিষ! আপনি কিছু জানেন এই বিষয়ে?

স্বপ্নে দেখা ওই সাপের ছোবলের কথা মনে পড়ল আমার। কিন্তু পুলিশকে ওসব স্বপ্নের কথা বলে লাভ নেই। বিশ্বাস করবেন না…

তবুও আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করলাম। ওঁরা শুনলেনও পুরোটা। কিন্তু মানলেন বলে মনে হলনা।

–হে হে! দেখুন আপনি ভালো লেখেন, আমরা জানি। আপনার কয়েকটা গল্পও পড়েছি। তবে আপনার কল্পনা ওই গল্পেই সীমিত রাখুন বরং! দয়া করে আজগুবি গল্প বলে পুলিশকে ভোলানোর চেষ্টা করবেননা।

আমি জানতাম এই উত্তরটাই আসবে।

–ম্যাডাম, উত্তরটা এখনও পেলাম না। আপনি কাল ভোররাত মানে এই ধরুন রাত তিনটে-চারটের দিকে কোথায় ছিলেন?

তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলাম আমি।

–হোয়াট রাবিশ! আপনারা কী বলতে চাইছেন, সোজাসুজি বলুন তো! আমি রাতবিরেতে সুমনের বাড়ি গিয়ে ওকে বিষ দিয়ে খুন করেছি? আমি খুন করব? আপনাদের মনে হয়?

–কিন্তু ম্যাডাম…

আমার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল।

–উফ্‌ফ্‌ফ্‌! বললাম তো, রাত তিনটের সময়ে আমি ঘুমোচ্ছিলাম…ওই সময় কোথায় যাব, কেনই বা যাব? অদ্ভুত তো!

–কিন্তু আপনার প্রতিবেশি, মিসেস সামন্ত… ইনসোমনিয়ার রুগি। কাল ওই সময়ে আপনাকে সামনের রাস্তা দিয়ে যেতে দেখেছেন…

এবার আমি হেসে ফেললাম।

–ইম্পসিবল! আপনারা কি ওঁর হাইপাওয়ারের চশমা দেখেননি? কাকে দেখতে কাকে দেখে ফেলেছেন, তার নেই ঠিক!

ওঁদের মধ্যে সিনিয়র অফিসার যিনি ছিলেন, এতক্ষণে তিনি মুখ খুললেন। সামনে এগিয়ে এসে শান্ত গলায় বললেন, “ম্যাডাম, এটা দেখুন…”

এই বলে একটা কালো রঙের পার্কার পেন আমার চোখের সামনে এনে ধরলেন।

ঝাঁপিয়ে পড়লাম আমি, “এটা…! এটা আপনারা কোথায় পেলেন? এটা তো আমার…আমারই! সকাল থেকে খুঁজছি! কোথায় পেলেন?”

–ক্রাইম স্পটে!

আমি বোবার মত দাঁড়িয়ে রইলাম।

এই পেনটা আমার কাছে খুব স্পেশাল! কখনো কাছছাড়া করি না। কলেজের রিতা ম্যাডাম দিয়েছিলেন পেনটা। সকালে উঠে দিনের প্রথম পাণ্ডুলিপিটা আমি এই পেন দিয়েই শুরু করি। বাকিটা পেনসিল বা কী-বোর্ডে হোক ক্ষতি নেই; পুরোটাই আসলে মনের ব্যাপার!

পেনটা সুমনের ঘরে গেল কীভাবে? আমি তো ওর ঘরে যাইনি। ইম্পসিবল!

তাহলে কি কাল সন্ধ্যেবেলা কোনভাবে…কিন্তু পেন তো আমার সঙ্গেই ছিল, সবসময়! মনে আছে, একবারও বের করিনি…

এই চিন্তাগুলোই মাথায় ঘুরছিল…

–আপনি আমাদের অন্যতম সাস্পেক্ট, ম্যাডাম! আর এই পেনটা ওয়ান অফ দ্য মোস্ট ইম্পরট্যান্ট এভিডেন্স। কেস সল্ভ না হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাবেন না। প্লিজ কোঅপারেট উইথ আস!

-বলেই গটগট করে বেরিয়ে গেল পুলিশবাহিনী। আমি থম মেরে বসে রইলাম।

সারাদিন কিছুই খাইনি। মাথায় হাজার রকমের চিন্তা ঘুরছে…

ওই স্বপ্ন, রাত-বিরেতে দু-দুটো মৃত্যু, পুলিশের সন্দেহ, আমার পেনটা… কিছুতেই হিসাব মিলছে না।

ঠিক করলাম আজ ঘুমোবই না।

কারণ আর কেউ মানুক বা না মানুক, আমি জানি, আজ স্বপ্ন দেখলে কাল আবার একটা মৃত্যু! এবার কে মরবে? আমার চেনা কেউ? জানা সত্ত্বেও আটকাতে পারব না আমি? ওই মুখ ঢাকা মেয়েটা এসে আবার একটা প্রাণ নিয়ে চলে যাবে চুপিচুপি?

না, না হতে পারে না…

ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে ঘুরে চলেছে অনবরত।

রাত্রি নামছে।

কিন্তু আজ আমার চোখের পাতায় ঘুম আসবে না। আসতে দেবোই না।

ভোর চারটে…

এখন আমার পায়ের তলায় শিশিরভেজা সবুজ ঘাস। চারপাশে কুয়াশা ঢাকা নীল পাহাড়। সেই পাহাড়গুলোর চুড়ো দেখা যায় না, যেন ওরা মিশে গেছে আকাশে! ধোঁয়ার মত মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে আমার সামনে।

কেউ নেই চারপাশে… কেউ না! শনশন করে শুধু হাওয়া বইছে।

ওই মেঘগুলো যেদিকে ভেসে যাচ্ছে, আমিও গেলাম সেখানে। একটু গিয়েই বুঝলাম, এর আগে আর এগোনোর পথ নেই। মুখ বের করে দেখলাম, নীচে সবুজ জঙ্গলময় গভীর খাদ হাঁ করে তাকিয়ে আছে। মুখ ফিরিয়ে নিলাম তাড়াতাড়ি। আমার স্নায়ু বড্ড দুর্বল!

ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দূরে কোথাও চঞ্চল জলপ্রপাত আছাড় খেয়ে পড়ছে পাথরের উপর, কুলুকুলু ধ্বনিতে বয়ে চলেছে নদী…

“জায়গাটা কী সুন্দর! সব সুন্দর! আর যাহা সুন্দর, তাহাই সত্য…”

হঠাৎ সামনে দেখলাম, কেউ এদিকেই এগিয়ে আসছে…

কুয়াশার চাদরে মোড়া চতুর্দিক, তাই পরিষ্কার দেখা যায় না। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে দৃশ্যমান হল।

সেই মেয়েটা…! কালো কাপড়ে ঢাকা সেই মেয়ে…

হৃৎপিণ্ডের লাব-ডাব শব্দজোড়া নিজের কানেই এসে পৌঁছাচ্ছিল। ভয়ে আমার হাত-পা শিথিল…

এতদিনে মেয়েটা সামনে এল। এখন চারপাশে কেউ নেই।

শুধু আমি আর ও…

বুকে সাহস এনে বললাম, “কে? কে তুমি?”

সে বলল, “দেখবে? দেখবে? দাঁড়াও, মুখের কাপড়টা সরাই…এখন থেকে আমাদের মধ্যে আর কোন রাখঢাক থাকবে না…কেমন?”

আমার বিস্ময়ের কোন সীমা রইল না। নিজের ইন্দ্রিয়গুলোকে নিজেরই বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছেনা। ঠিক দেখছি তো? এ যে অবিকল আমি! চোখ থেকে শুরু করে নাক, কপাল, ঠোঁট এমনকি ঠোঁটের পাশের তিলটাও…

ছোটকাকু, সুমন…ওরা একেই আমি ভেবে ভুল করেছিল? তাহলে কি আমার কোন যমজ…

বললাম, “তুমি তো পুরো আমার মত দেখতে! কিন্তু তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলামনা!”

মেয়েটা হো-হো করে হেসে উঠল।

বলল, “বাহ্‌ রে বাহ! যখন তোমার কেউ ছিল না তখন ছিলাম আমি, এখন তোমার সব হয়েছে, পর হয়েছি আমি!”

আমাকে হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে আবার বলল, “বুঝেছি, বুঝেছি! তুমি আমাকে চেনো না, কিন্তু আমি তোমাকে চিনি! তোমার সঙ্গে আমার সামনাসামনি এই প্রথমবার দেখা…তাও আবার স্বপ্নে! এই প্রথম আমাদের সরাসরি কথা হচ্ছে। তাই না? কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে ছিলাম, আছি আর থাকবও।

যখন তোমার মা মরে গেল, তখন তুমি কত্ত একা! চোখ বন্ধ করলে কাউকে দেখতে পাও না। একা কেউ থাকতে পারে না এই বিশ্বে, বুলি! তুমিও পারতে না। আমি না থাকলে দুনিয়া কবেই তোমাকে পিষে দিয়ে চলে যেত! কে আছে বলো তো তোমার? নিজের বলতে আছে কেউ? আমিই আছি শুধু! সেই তখন থেকে আছি।

আমার দুচোখে তখন জল। কান্নাভেজা গলায় আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কিন্তু তোমায় দেখতে কেন পাই না আমি? তুমি থাকো কোথায়?”

হেসে ফেলল মেয়েটা।

“বড্ড অবুঝ তুমি, বুলি! আমি থাকি ওই তোমার মাথার ভিতর! তুমি যখন ঘুমোও, আমি তখন জাগি। তখন তোমার শরীরে আর তুমি থাকো না, আমিই থাকি। যেটা আমি বলি, তোমার শরীর সেটাই করে। এই যেমন…”

“মানে? তার মানে…এই খুনগুলোও তুমিই করেছ?”

“ঠিক তাই, বুলি। যখনই তোমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, তখনই আমি প্রতিজ্ঞা করেছি; যখন সুযোগ আসবে, ঠিক এর প্রতিকার করব।

“মা চলে যাওয়ার পরও ওই শয়তানটা মানে তোমার ছোটকাকু এসেছিল তোমার কাছে, সব্বাইকে লুকিয়ে…আর সেই মানুষটার সঙ্গেই কিনা তুমি মুখে হাসি ফুটিয়ে কথা বলতে, কুশল সংবাদ নিতে, বিজয়ার প্রণামও করতে? এত অবধি তাও চলছিল, কিন্তু শেষমেশ তুমি কিনা সেই পিশাচের চিকিৎসার ভারও নিলে? কেন? কেন? কেন? মন নেই তোমার? কষ্ট নেই? জ্বালা নেই, বুলি?”

“আছে, আছে…সবই আছে। সব কষ্টই আমি বুকের মধ্যে পিষে রেখেছি।“

“উঁহু! ভুল! একদম ভুল! তোমার সব কষ্ট বিষের মত পান করেছি আমি। যন্ত্রণায় নিজে ছটফট করেছি, কিন্তু তোমাকে থামতে দিইনি, সামনে এগিয়ে দিয়েছি বারবার। তোমার কষ্ট মানে সেটা আমারও!

“তাই সেদিন তুমি শুয়ে পড়ার পর আমি উঠলাম। তোমার মনটা ঘুমিয়ে, কিন্তু শরীরটা জেগে…সে তখন আমার দাস। কালো বোরখা পরে, গ্লাভস পরে, মুখ ঢেকে আই সি ইউতে ঢুকলাম। সিকিউরিটি তখন ঘুমে ঢলছে। 

“অক্সিজেন টিউবটা টেনে বের করে দিলাম নাক থেকে। ধড়ফড় করে উঠল ওর বুক। তারপর মুখে বালিশ-চাপা দিয়ে…

“শয়তানটা ঠিক বুঝেছিল, আমি কে! একই নাম আওড়ে যাচ্ছিল। ডাক্তার-নার্স সব ছুটে এল। ততক্ষণে প্রাণপাখি ফুড়ুৎ! আর আমিও হাওয়া। তুমি উঠে গিয়েছিলে…ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলে…আমাদের দেখাও হল; কিন্তু আলাপ হল না!  

“তারপর এল সুমন…

“যে ছেলেটা তোমার মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলল, তোমার বিশ্বাস নষ্ট করল…যার জন্য তুমি জীবনে আর কোন সম্পর্কে থিতু হতে পারলে না, কাউকে আজ অব্ধি ভালবাসতে বা বিশ্বাস করতে পারলে না, তাকে তুমি ক্ষমা করে দিলে? কেন কর বুলি এরকম? কেন? বুকে জ্বালা নিয়ে বাঁচা যায় বলো?

“সেদিন রাতেও আমি বেরুলাম। মিসেস সামন্ত ভুল কিছু দেখেননি। সুমনের বাড়ি ঢুকলাম পিছনের দরজা দিয়ে। কলেজের দিনগুলোতে কতবার গিয়েছি…

“মালটার আবার রাতে শোয়ার আগে ড্রিঙ্ক করার শখ। ব্যাস, ওর ড্রিঙ্কে মিশিয়ে দিলাম তোমার হাই ডোজের একটা সিডেটিভ…একটু বেশি করে!

“সকালের মধ্যে ওরও খেল খতম।  

“কেউ তোমার ফুলের মত শৈশব নষ্ট করবে, কেউ তোমার মন ভাঙবে…আর তুমি চুপচাপ দেখবে, কাঁদবে, ব্যথায় কাতরাবে; কিন্তু প্রতিকার করবে না? প্রতিশোধ নেবে না? উঁহু! নেভার! আমি তোমার মত নরম, দুর্বল আর নেকুপুষু গোছের নই, বুলি! আমার মধ্যে শক্তি আছে, বুকে আগুন আছে, তেজ আছে…”

“তাই বলে খুন? একদম প্রাণে মেরে দেবে জলজ্যান্ত মানুষগুলোকে?”

“হ্যাঁ, খুন। একেবারে খুন! কেন? তুমি খুশি হওনি, বুলি?”

মুখের উপর এরকম প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে আছে? চুপ করে রইলাম আমি।

“দেখলে, দেখলে! পেটের ভিতর থেকে কেমন উত্তরটা টেনে বের করে আনলাম।”

আবারও হেসে উঠল সে।

অভিমানী স্বরে আমি বললাম, “এতদিন তাহলে দেখা দাওনি কেন আমায়?” 

“ওই যে বজ্জাত মণিশঙ্কর…তোমার সেই বুড়ো সাইকিয়াট্রিস্ট! বাণী মাসির বলিহারি কোন কাজকম্ম নেই নাকি? কার না কার কথা শুনে তোমাকে নিয়ে গেল তাঁর কাছে…সব ওষুধের খেল, বুলি। এই কদিন তুমি ওষুধ খাচ্ছিলে কোথায়? না এসে পারা গেল না যে! আর একটা কারণও আছে। আমাকে আসতেই হত সামনে।“

“কী? কী কারণ?”

“ওই পেনটা। তাড়াহুড়োতে পেনটা কখন যে পড়ে গিয়েছিল সুমনের বাড়িতে, খেয়ালই করিনি! পুলিশ খোঁজ করতে করতে এতদূর এসে গিয়েছে মানে খুনি অবধি পৌঁছাতেও বেশি সময় লাগবে না।”

“হ্যাঁ, সেই তো! কী হবে তাহলে? আমার যে খুব…”

“এই ভীতু! কী আবার হবে? আমি আছি কী করতে শুনি? কিছুদিন বাদে, সবাই জানবে যে তুমিই খুনি! দু-দুটো খুন করেছ! তোমার সাজা হবে। লোকে ফিসফাস করবে, ছিঃ, ছিঃ করবে। কিন্তু তোমার সঙ্গে কী হয়েছিল, সেটা কেউ জানবে না; জানতে চাইবেও না! এরকম অশান্তির জীবন চাও তুমি, বুলি?”

“তাই বলে কি…”

“তোমার আপন বলতে কে আছে বুলি? আমিই তো আছি। কদ্দিন আর বইয়ের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে মানুষ খুঁজবে? আমরা একসঙ্গে থাকব, বুলি। সবসময় থাকব! চলো, এই সুন্দর পাহাড়-নদী-মেঘ আর কুয়াশায় আমরা মিলিয়ে যাই, মিশে যাই। আমার হাত ধরো, বুলি! চোখ বন্ধ করো…”

নমস্কার, আজকের বিশেষ বিশেষ খবর…

সল্টলেক সেক্টর ফাইভের এই সাততলা ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন সাম্প্রতিককালের জনপ্রিয় লেখিকা বুলবুলি মজুমদার। আজ সকালে তাঁর পরিচারিকা কাজে আসার সময় লেখিকার মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে জানান। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। খবর পাওয়া গেছে, মনোরোগ চিকিৎসক শ্রীযুক্ত মণিশঙ্কর গাঙ্গুলির চিকিৎসাধীন ছিলেন লেখিকা। সম্ভবত তিনি ‘মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার’ নামক মানসিক ব্যাধির শিকার ছিলেন। তা সত্ত্বেও একথা অনস্বীকার্য যে তাঁর লেখার হাতটি ছিল চমৎকার! চিকিৎসক জানিয়েছেন, ইদানিংকালে, সম্ভবত তিনি ওষুধপত্র খাওয়ার ব্যাপারে গাফিলতি করছিলেন। হয়তো সেই জন্যই এই পরিণতি…

সকলের কাছে তাই আমাদের আবেদন, মানসিক কোন সমস্যা হয়ে থাকলে প্লিজ সিক হেল্প অ্যাজ সুন অ্যাজ পসিবল!

(সমাপ্ত)

লেখক পরিচিতিঃ

পল্লবী মালো। জন্ম চুঁচুড়া, হুগলী, ৭ই মে, ১৯৯৮। ছোটবেলা কেটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায়। ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইন্সটিউট অফ সায়েন্সে থেকে বায়োলজিতে মাস্টার্স করেছেন। ছোটবেলা থেকেই ফিকশন, নন-ফিকশন, উভয় ধরনের সাহিত্যেই বিশেষ অনুরাগ ছিল। লেখালিখি করার চেষ্টা শুরু হয় ২০২০ থেকে। এই সময় থেকেই বিভিন্ন ফেসবুক সাহিত্যগোষ্ঠীতে যুক্ত হয়েছেন এবং কিছু গল্প সঙ্কলন আর পূজাবার্ষিকীতেও স্থানলাভ হয়েছে। 

ফোন নং- 9614596712

ঠিকানা –  Qtrs no- B-38/2, K.T.P.P. Township, Mecheda, Purba Medinipur, West Bengal, 721171

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post হেস্টিংসের ডায়েরি| পলক-ফেলা-নিষেধ | শ্রয়ণ ভট্টাচার্য্য| Bengali Thriller Story
Next post আভিমুখ‍্য| পলক ফেলা নিষেধ | অনির্বাণ পাল| Bengali Thriller Story