পাপ | পলক ফেলা নিষেধ |দীপ্তেশ মাঝি | Bengali Thriller Story
0 (0)

                                         (১)

বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাঁ দিক ঘেঁষে একটা রাস্তা চলে গিয়েছে। সোজা রাস্তার একধারে গাড়ির মেলা। সূর্যালোকে লাল, নীল, হলুদ সবুজের আভা ছড়িয়ে পড়ছে। কিছুটা গেলেই একটা প্রকান্ড রাজবাড়ী পড়ে। সাবেকি আমলের। সদ্য রঙ দেওয়া হয়েছে তাতে। অসংখ্য অল্পবয়সী ফ্ল্যাট-বাড়ির মাঝখানে এই সাবেকিয়ানা পরিহাস্যের উপাদান! আর একটা আমগাছ আছে। তারও বয়স ঐ দেড়শোর কাছাকাছি। ঝুলে পড়ে যেন পাঁচিল টপকে এপারে চলে আসবে। এখন গ্রীষ্ম চলে গিয়ে বর্ষার দামামা বেজেছে। তবুও কয়েকটা সবুজ, হলদে গোছের আম নেতিয়ে পড়ে আছে। সেদিকেই তাকিয়ে থাকতে থাকতে সুচেতা বলল, “ঐ আমগাছটা নিয়ে লিখলে কেমন হয় রে বিজন!” পাশেই একটা কাঠের চেয়ারে বিজন পুরকায়স্থ বসেছিল। একগাল দাড়ি নিয়ে হেসে বলল, “তোর এখন সবেতেই ইন্টারেস্ট! ঘোড়ায় লাগাম দাও অগ্নিহোত্রী! আগে এদিকের কাজ সামলাও তারপর অন্যকিছু!”

ফ্ল্যাটের ওপরের তলায় ওরা দুজনে বসে আছে। এই ঘরে দুটো চেয়ার, একটা মাঝারি সাইজের টেবিল, তাতে ফুলদানি আছে, ওপরের দেওয়াল বেয়ে কয়েকটা লতানো গাছ নেমে এসেছে। দেখলেই বোঝা যায় সেগুলো পরিচর্যার দাবি রাখে। সাধারণত আমরা এসমস্ত বাড়ির দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথ বা যামিনী রায়ের নিখুঁত ছবিই কল্পনা করি কিন্তু এখানে সেরকম কোনো গল্প নেই। দেওয়ালের একটা বিশাল অংশ জুড়ে আছে জার্মান চ্যান্সেলর এডল্ফ হিটলারের ছবি! নাসিকার শেষে বিশেষ করে ছাঁটা পুরু গোফের রেখা আর সন্দেহজনক দৃষ্টি সাতসকালে বেশ রোমাঞ্চের সাথে সাথে অস্বস্তির উদ্রেক ঘটায়! অস্বস্তি আরেকটা কারণকে ঘিরে!

দরজার পাশে পর্দাটা খেলে বেড়াচ্ছে। সেটা একবার সরে যেতেই সুচেতা দেখল, দুটো অত্যন্ত হিংস্র পীত বর্ণাধিকারী চোখ! সেটা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। তারপর ত্রিভুজের দুই বাহুর মত উন্মুক্ত গগনে চেয়ে থাকা কান। বিজন সেদিকে তাকিয়েই বলল, “বাবা, চুপি চুপি আমাদের কথা শোনা হচ্ছে!” এই বলে বিজন পিঠের ঝোলাটা চেয়ারে রেখে দিয়ে সেদিকেই এগিয়ে গেল। দরজার ওপাশ দিয়ে দু’হাতে খানিক বলপ্রয়োগ করেই তুলোর মত নরম থকথকে যেন একটা কাদার ঢেলা হাতে তুলে নিল। তারপর বলল, “এই দেখো সুচেতা, ও তোমায় আড়াল থেকে প্রদক্ষিণ করছিল। বোধয় তোমায় একটা চুমু খেতে চায়!”

সুচেতা বেশ বিরক্ত হয়েই বলল, “তুমি বেড়ালটা নামিয়ে রাখো।”।

এই সময় বাইরে সশব্দে গাড়ি থামার শব্দ হল। আর তার সাথেই ঘটে গেল একটা বিপদ! যে বেড়ালটা এতক্ষণ বিজনের অঙ্গুলি সঞ্চালনে বেশ মনোরম বোধ করছিল, সেই বেড়ালটাই একবার গাঢ় হাড় হিম করা ‘মিয়াও-ও-উ-উউ’ করেই বিজনের বাম গালে আড়াআড়ি ভাবে একটা থাবা কষিয়ে ছিটকে পড়ল। পরমুহূর্তেই সে পলায়ন করল। বিজন গাল ধরে বসে পড়েছে। সুচেতা কী করবে বুঝতে পারল না। এমনিতেই এটা কাজের জায়গা তার ওপর যাঁর বাড়ি, তিনিই অনুপস্থিত! এই রকম পরিস্থিতিতে কী করা উচিত, তা ভেবে পেল না সুচেতা!

এই সময় নিচে সিঁড়িতে একটা শান্ত, নিবিড়, বর্ষীয়ান পায়ের শব্দ হল। পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকলেন যিনি তাঁকে এক কথায় ‘সেপটিউএজিনেয়্যারিয়ান’ বা সত্তর বয়সী ভদ্রলোক আখ্যা দেওয়া চলে। মেঝেতে গাল ধরে বসে থাকা বিজন এবং তার পাশেই সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে সুচেতাকে দেখে ভদ্রলোক বুঝতে পারলেন কিছু একটা ঘটেছে! তারপর পাঞ্জাবি পরিহিত, চোখে চশমা ছেলেটির বাম গালে রক্ত! ভদ্রলোক ওদের বসতে বলে আবার নিচে নেমে গেলেন।

মিনিট পাঁচেক পর বেড়ালটিকে কোলে করে নিয়ে এসে ওর দিকেই তাকিয়ে শুধোলেন, “বড্ড দুষ্টু হয়েছো পাপিয়া! তোমায় কতবার বলেছি অতিথিদের সম্মান করতে শেখো! এবার কিন্তু আমি রেগে যাচ্ছি!” বিজন গাল থেকে হাত নামিয়ে বৃদ্ধর দিকেই চেয়ে রইল। সুচেতাও বেশ অবাক! ওদের কৌতুহলের অবসান ঘটাল কালো সাদা ছোপ ধরা বেড়ালটাই। তখুনি, বিজনের পায়ের কাছে গিয়ে মিউ মিউ করে মাথা ঘষতে লাগল। বিজনের গোড়ালির কাছটা শির শির করে উঠল।

ভদ্রলোক এবার ভালো করে দুজনের দিকে চাইলেন। মেয়েটির চুল কাঁধে খেলে বেড়াচ্ছে, নাকে নথ, চোখের দৃষ্টি উজ্জ্বল তবে একটু ফোলা ফোলা। পরনে কুর্তি আর বাম হাতের ডগায় একটা স্মার্ট ওয়াচ। ছেলেটিকেও দেখে বেশ ইন্টেলেকচুয়াল বলেই মনে হল।

বৃদ্ধ, ঘরের এসি বন্ধ করে জোরে পাখা চালিয়ে দিলেন। একটা চেয়ার দখল করে বসলেন। “তা, বলুন আপনাদের কী দরকার! মানে আমি কীভাবে আপনাদের সাহায্য করতে পারি!” বৃদ্ধ-র ভারী গাম্ভীর্যপূর্ণ অথচ নরম ইস্পাতের কথা শুনে ওরাই থতমত খেয়ে গেল। বৃদ্ধ, কেবলই সাদা কুর্তা আর পাঞ্জাবি পরে আছেন। গলার শিরা এখনও ডগডগে হয়ে আছে। খালি চোখেরা যেন একসময় বীভৎস কিছু দেখেছে। এখন পরিস্থিতি আর সেরকম নেই! তাই শীতলতা জ্ঞাপন করছে। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি লেগে আছে। বিজন একটু কেশে বলল, “নমস্কার স্যার, আমি বিজন পুরকায়স্থ। আমি পেশায় সাংবাদিক। আর ও…” কথা শেষ হল না। বৃদ্ধ ওকে থামিয়ে বললেন, “নিজের পরিচয় নিজেকেই দিতে হয়। তা ম্যাডাম, বলুন!”

এই বয়সেও বৃদ্ধ বেশ রসিয়ে কথা বলতে পারেন। বা বলা যায়, উনি এভাবেই কথা বলতে অভ্যস্ত। ইতিপূর্বে এই ভদ্রলোকের ইন্টাভিউ কেউ নেয়নি। কলকাতা শহরে উনি যে কোথায় থাকেন, সেটাই কেউ ঠিকমত জানতেন না। অনেক কষ্টে বিজন আর সুচেতা মিলে এর খোঁজ পেয়েছে। ভদ্রলোকের নাম, কীর্তিবর্মন কবিরাজ। এশিয়ার বৃহত্তম কারাগার, দিল্লির তেওহার জেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিলেন। শেষের এই বিষয়টাই ওঁর ক্রমহ্রাসমান জনপ্রিয়তার মূলে!

সুচেতা ব্যাগ থেকে জলের বোতল বার করে নিজেকে তুষ্ট করল। তারপর নিজ ভঙ্গিতে বলল, “স্যার, আমি সুচেতা অগ্নিহোত্রী। পেশায় আমি একজন লেখিকা। এবার বাকিটা আপনার অনুমতির অপেক্ষায়!”

—আমার অনুমতি! তোমরা তো ফোন করেই এসেছো! যা জিজ্ঞাসা করার করতে পারো। তোমাদের ‘তুমি’ সম্বোধন করলাম কিছু মনে কোরো না।

ভদ্রলোকের কথা শুনলে মনে হয় না উনি এত বড় দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন অফিসার ছিলেন। হলফ করে বলা যায় দশ বছরের বেশি হয়নি, কাজ ছেড়েছেন! এখনও শরীরে একইরকম বলিষ্ঠতা বিরাজ করছে। উচ্চতা প্রায় সাড়ে পাঁচের কাছে, মাথার চুল ছোট । দেখলে মনে হয় বৃত্তাকার বাটি বসিয়ে ছাঁট দিয়েছেন। হাতের মাংস খানিক ঝুলে পড়েছে। হয়তো একসময় পেশীবহুল ছিল। উপরিউক্ত বিষয় এটাই প্রমাণ করে যে, কাজে বিরতি দিলেও শরীর এখনও সেই কর্মঠ নিয়ম কানুনকে ভুলতে পারেনি।

বিজন খানিক হাসার চেষ্টা করে বলল, “না না, আপনি গুরুজন, বলতেই পারেন। তাহলে স্যার, আমরা শুরু করি!” সুচেতা ব্যাগ থেকে একটা প্যাড বার করে বিজনকে দিয়ে বলল, “বেস্ট অফ লাক।” এবার, কীর্তিবর্মনের দিকে তাকিয়ে বলল, “স্যার, আপনার হয়তো মনে আছে আমি আপনাকে চারটে স্টোরির কথা বলেছিলাম! বইটা চারটে গল্পের ওপর ভিত্তি করেই বের হবে।”

কীর্তিবর্মন একটা চুরুট ধরালেন। বেশ ঝাঁঝালো গন্ধ সেটার। কয়েকটা টান দিয়ে অ্যাস্ট্রেতে লম্বালম্বিভাবে রেখে বললেন, “আমার গল্প রেডি! বোথ অফ য়্যু আর রেডি!” ওরা মাথা দোলাল। এতক্ষণ ওদের কথার মধ্যে পাপিয়া অর্থাৎ বেড়ালটা কিছুই করেনি। এবার সে একটা বড়সড় হাঁই তুলে ঘরময় একবার পায়চারি করেই বেরিয়ে গেল। কীর্তিবর্মন তেওহার জেলের অভিজ্ঞতা ওদের সাথে ভাগ করে নিলেন। বিজনের কলমের নিব আর সুচেতার কর্ণদ্বয় প্রখরতা অবলম্বন করে রইল।

                                         (২)

কীভাবে চাকরি পেলাম সে কথা আমি বলব না। অধস্তন কর্মচারী হিসাবেই আমার যাত্রা শুরু হয়। এক এক করে সবকিছু তখন শিখছি। বাড়ি থেকে তখন খুব অসন্তোষ প্রকাশ করেন বাবা নিজে। উনি বললেন, “তুমি বিএসসি আর আইন নিয়ে কি এইজন্যই পড়েছিলে! কোথাকার একটা চোর, ছ্যাঁচড়, কয়েদি ঠ্যাঙানোর চাকরি! তোমার দাদা একজন কেমিস্ট্রির অধ্যাপক, ভাই বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য কসরত করছে আর তুমি কিনা শেষে…!” ফলে, অচিরেই বাবা আমায় ত্যাজ্যপুত্র আখ্যা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করলেন। দিল্লিতেই এক বন্ধুর বাড়ি ভাড়া নিয়ে আমার চাকরি জীবন শুরু। এই সূত্রে আমি আরেকজনের নাম বলব। ইনি হলেন ‘পৌন্ড্র‍্যবর্ধন স্যামুয়েল সোবার’! এর হস্তাক্ষর ছাড়া আমি আজ এ জায়গায় দাঁড়াতে পারতাম না!

প্রথম দিনেই, তেওহারে কয়েদি ঠ্যাঙানোর শব্দে রে রে করে উঠি। ওরে বাপ রে বাপ! সে কী আসামীদের চিৎকার! লাঠির ঘা চাবুককে হার মানায়! চাপাট চাপাট শব্দ আর আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। কয়েক রাত ঘুমোতে পারিনি। তখন মনে হত এখানে মানুষ নয়! জানোয়ার ঠ্যাঙানো হয়!

যত দিন যায়, আমিও অভ্যস্ত হয়ে যাই। সারাদিনের কঠোর পরিশ্রম আবার ভোর ভোর উঠে পড়া— সেসব এক দিন গেছে। তারপর এল সেই দিন। খবরের কাগজ দেখে বুঝতে পারলাম দুজন আসামি এখানে আসছে। এই কেসটা আদতে একটা নাটকের মত! এদের দুজনকে তোমরা বলতে পারো বহুরূপী! হায়দ্রাবাদ, পঞ্জাব, দিল্লি, এমনকি মুম্বাইতেও কিডন্যাপিং, চুরির অভিযোগ আছে এদের বিরুদ্ধে। এরা বদলি হয়ে এল দিল্লির তেওহার জেলে।

নির্ঘন্ট আগে থেকেই তৈরি ছিল। কাকে কীভাবে আদর যত্ন-আত্তি করা হবে তা নির্ধারিত হত তার ওপর আরোপিত অভিযোগের ভিত্তিতে। জেলের মূল ফটকের দখিনে টাঙানো চার্ট দেখে আমি তো হতভম্ব! কাঁনুরাম আর বেঁচুরামের ভার আমার ওপর পড়েছে!

সেদিন রাতে বসে সমগ্র কেস স্টাডি করলাম। এক বুধবারে, অল ইন্ডিয়া রেডিও স্টেশনে একটি নৃত্যগীতি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। হাফসানা ও মুহম্মাদ সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেই যাচ্ছিল কিন্তু পথে কারা যেন তাদের অপহরণ করে। তিনদিন পরে তাদের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায় দিল্লির নিকটবর্তী জঙ্গলে। রিপোর্ট বলছে, কলেজে ফার্স্ট ইয়ারের হাফসানা এবং তার ভাই, দশম শ্রেণীতে পাঠ্যরত মুহম্মদের ওপর যথেষ্ট অত্যাচার করা হয়। এবং মৃতদেহ চেনার উপায় পর্যন্ত ছিল না। সেদিন নাকি অনেকেই কাঁনুরাম আর বেঁচুরামকে গাড়িতে দুজনের সাথে ধ্বস্তাধস্তি করতে দেখেছেন। যাই হোক, কিছুদিনের মধ্যেই তাদের ফাঁসির আদেশ এল।

ফাঁসির পূর্বে তেওহারে এদের যে পরিমাণ আদর দেওয়া হয়, তার চেয়ে ফাঁসি এদের কাছে অনেক শান্তির প্রতীক ছিল! আমি স্বয়ং অধস্তনদের আদেশ দিয়েছিলাম, “ওদের দুজনের হাতদুটো দুদিক দিয়ে দুজন ধরে রাখবে। আরও দুজন দুই পা দুদিকে জোরে টানবে। ফলে সমগ্র মানুষের দেহটা ইংরাজী ‘এক্স’ এর মত হয়ে যায়। ওরকম ভাবেই ওদের মেঝেতে বসানোর চেষ্টা করা হয়। সমগ্র কক্ষ চিৎকারে ভরে ওঠে। কোমরের নিচে উরুর কাছে পেশীর শিরা উপশিরা প্রায় ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু আমার মনে তখন একটাই প্রশ্ন, ঐ ছেলেমেয়ে দুটো কী অপরাধ করেছিল! যাই হোক, নির্দিষ্ট দিনলিপি অনুযায়ী ভোরে ওদের ফাঁসি হল!

একদিন দুপুরের আহার করছি। ছোটেলাল আমার ওয়ার্ডের প্রধান রাঁধুনি ছিল। হঠাৎ ছুটে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “সাব, আজকা কাগাজ দেখা আপনে!” সত্যি বলতে কী, সেই ঘটনার পর থেকে আমার কাগজ পড়তে ভালো লাগত না। তবুও ছোটেলালের কাছ থেকে কাগজ নিয়ে দেখতে গিয়েই আমি পাগলের মত চিৎকার করে উঠলাম। কী সর্বনাশ! কাগজের পাতায় দুটো ফুলের মত প্রস্ফুটিত নেত্রে চেয়ে আছে হাফসানা আর ওর ভাই মুহম্মদ! নিচে লেখা আছে, “ অল ইন্ডিয়া রেডিও প্রতিযোগিতার যুগ্ম বিজয়ী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হাজির!” প্রতিটা কাগজ, খবরের চ্যানেল তুলোধনা শুরু করেছে। এক একটা বাক্যবাণ যেন আমাদের চামড়া থেকে পোশাক সরিয়ে নগ্ন করে দিচ্ছে!

সুচেতা এবার বলল, “স্ট্রেঞ্জ! যাদের হত্যার দায়ে ফাঁসি হয়ে গেল, পরে তারাই আবার জীবিত!” বিজন আর ও পরস্পরের দিকে চেয়ে রইল। কীর্তিবর্মন সমস্যার সমাধান করে বললেন, “ আমিও প্রথমে বুঝতে পারিনি! কিন্তু ধীরে ধীরে দেখলাম এই ব্যাপার সবার কাছেই জলভাত! আমার কানে তখন ঐ দুই আসামির করুণ স্বর ভেসে আসছে, “হুজুর, এ চক্রান্ত হুজুর! আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে!” বুঝলাম, যস্মিন দেশে যদাচার! যেখানে যা নিয়ম সেভাবেই তোমায় চলতে হবে। আসল কাঁনুরাম আর বেঁচুরামের জায়গায় অন্যদের ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হল! এবং সেই মৃতদেহ আদৌও ঐ বাচ্চাগুলোর ছিলই না!

প্রায় দেড় মাস কেটে গেছে। খবরের কাগজের মুখ ভোঁতা হয়ে গেছে। আমরা তেমন ভাবেই রয়েছি। আসামি ঠ্যাঙাচ্ছি! মরে গেলে বলা হচ্ছে ড্রাগস সাপ্লাই করত বা পথ দুর্ঘটনায় মারা পড়েছে। অবশেষে, বিধাতার লিখন কে বদলাতে পারে! কাগজে এবার বের হল, “হাফসানা এবং মুহম্মদ পুনরায় অপহৃত এবং তদুপরি মৃত!”

বিজন দুপুরে বাড়ি গিয়েছে। ওর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা আর তিন বছরের মেয়ে এলিজা বসে আছে। একসাথে খাবে। সুচেতা এখনও বিয়ে করেনি। তার ওপর এই কাজ! খাওয়ার সময় ও খুঁজে পায় না। বালিগঞ্জ থেকে সোজা চলে আসল কলেজ স্ট্রীটে। কয়েকটা বই, পুরনো দিনের দলিল, খবরের কাগজ খুঁজে কফি হাউসে ঢুকল। বেশ কোলাহল সেখানে। একটা এগ চাউ আর কাটলেট নিয়ে বাড়ি ফিরল। রাতে কীর্তিবর্মনের বিষয়টা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করল। ভদ্রলোক একটি গল্প বলেছেন। তিনটে এখনও বাকি। তারপর এগুলোকে নিজের মত করে সাজাতে হবে। বিজনের কেমন লাগছে জানি না তবে ওর বেশ রোমাঞ্চই হচ্ছে। প্রথম গল্পটা মাঝখানেই শেষ করে দিলেন। বললেন, “অন্তিম বারে হাফসানা আর মুহম্মদ যে কীভাবে মারা গেল, কে-ই বা তাদের মারল সেটা আজও অজানা!”

বেকার রোডে পুলিশ কমিশনার অভিজিৎ সর্দারের রেসিডেন্টেই থাকে সুচেতা। কলকাতার ডাকাবুকো এই কমিশনারকে নিয়ে লেখা ওর বই বেশ সাড়া ফেলেছিল। বাবা মা গত হওয়ার পর সুচেতা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। তখন অভিজিৎ দাদা হিসাবেই ওর পাশে দাঁড়ায়। এখানে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। সেই থেকেই ওর যাত্রা শুরু। অভিজিৎ অবশ্য এখন ভুবনেশ্বরে ফ্যামিলি নিয়ে আছে। সরকারি রেসিডেন্ট বেশ আম, জাম, কাঁঠালে ভরা। চরম নিস্তব্ধতায় লেখা আর পড়া ভালোই হচ্ছে।

                                         (৩)

পরের দিন সকাল ন’টার মধ্যে ওরা পৌঁছে যায় সার্কুলার রোডে। আজ অবশ্য উনি ব্রেকফার্স্ট করেই বসে ছিলেন। যেতেই পানুগোপাল ওদের জন্য, চা আর কচুরি হালুয়া করে আনল। খাওয়া সেরে যে যার পূর্বের স্থানে ফিরে এল। বিজন প্যাডের পাতায় আজকের তারিখ দিয়ে বসে রইল। দূরে জানলায় একটা দৃশ্য ভেসে উঠেছে। একটি অল্প বয়সী মেয়ে ছাদে কাপড় জামা শুকোতে দিচ্ছে। বয়স সতেরো কি আঠারো। বৃদ্ধ সেদিকেই তাকিয়ে থেকে বললেন, “এক বৃষ্টির রাত। মুষলধারে বৃষ্টির প্রকোপে প্রকৃতি যেন তান্ডব লীলা চালাচ্ছে! জেলের পাশেই তখন একটা কোয়াটার্রে আমি মধ্যরাত্রি প্রজ্জ্বলিত করে পড়াশুনা করছি। হঠাৎ দরজাটা দুবার কেঁপে উঠল। মনে হল বাইরে থেকে কে যেন দুম দুম করে দুবার মারল। কিন্তু দরজা আমায় খুলতে হল না! অচিরেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন এক সুন্দরী রমণী! ঢুকেই সশব্দে দরজা বন্ধ করে ওদিকেই মুখ ঘুরিয়ে রইলেন। রমণীর পিঠ জলসিক্ত। সাপের ফণার মত কেশরাশি বেঁকে নিচে নেমে এসছে। আর একটা জিনিস! উনি থরথর করে কাঁপছেন। আমি বেশ গাম্ভীর্যের সাথেই বললাম, “কে আপনি! কি চান এত রাতে!” মেয়েটি এবার সামনে ফিরল। দুই হাত দরজায় রেখে মাথাটা ওখানেই হেলান দিয়ে কাঁপতে লাগল। এবার একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করলাম। মেয়েটি সম্ভবত বিদেশী!

সেদিন রাতে মেয়েটি আমার খাটের তলায় শুয়ে পড়ে। ভাঙা ভাঙা ইংরাজীতে যা বলল তার বাংলা করলে এই দাঁড়ায়— আমার নাম মার্গারেট। আমি একজন জার্মান। নারী পাচারের সাথে জড়িত কিছু দুষ্টু লোক ইন্দোনেশিয়া থেকে আমায় এখানে নিয়ে আসে। ওরা যাচ্ছিল সৌদি আরবে কিন্তু আমি চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে আসি। এসে এই কোয়াটার্রে উঠি”।

প্রথমে একটু থতমত খেয়ে যাই। ইনি কে এবং এসে আমার এখানেই উঠলেন কেন! কিন্তু পরের দিনের কাগজ দেখে আমার ভুল ভেঙে গেল। দেখলাম, সত্যিই একদল মানুষ এই জঘন্যতম কাজের জন্যে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।

এরই পাশাপাশি তেওহার জেলের কিছু পরিবর্তন আনা হয়। দমন পীড়ন নীতির বদলে তেওহারকে আশ্রমে রূপান্তরিত করার একটা প্রচেষ্টা দেখা যায়। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই এই কারাগার থেকে পাউরুটি, বিস্কিট, কেক ইত্যাদি হস্ত নির্মিত দ্রব্য দেশীয় বাজারে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পলিথিন দিয়ে মোড়া বস্তুর ওপর তেওহার আশ্রমের কালজয়ী নামাঙ্করণ হয়। এছাড়াও আশ্রমের আদলে গড়ে তোলার জন্য যোগক্ষেত্র, বিভিন্ন ধর্মীয় মনস্তাত্ত্বিক আলাপ আলোচনা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। কয়েদিদের মধ্যে যারা যারা নিজেদের বদল ঘটাতে চাইতেন এমন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

অন্যদিকে আমার প্রমোশন হয়। অধস্তনের গন্ডি পেরিয়ে আমি হলাম জেলের অধিকর্তা বা সুপারিন্টেন্ডেন্ট। একদিন ইন্টারপোল থেকে কানাঘুষো শুনতে পেলাম একজন ধুরন্ধর গুপ্তচরকে ধরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে অনেক টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেছে জার্মান, আমেরিকা এবং রাশিয়া ও ফ্রান্স! লিঙ্গের দিক দিয়ে উনি আদতে একজন মহিলা! আমরা তখন বিশেষ পানীয়ের সাথে একটা রিসোর্টে সময় কাটাচ্ছি। আমিই মজা করে আর বাকিদের বললাম, “লেগে পড়ো, বিশাল টাকা পুরষ্কার! এত টাকা বোধয় সরকারি চাকরি করেও পাওয়া সম্ভব নয়!” পরক্ষণেই আমার বুকটা কেমন ছেড়াৎ করে উঠল। মার্গারেটের কথা মনে এল। কিন্তু ও তো নিজে জার্মান! বাকি দেশগুলো কেন উঠে পড়ে লাগবে ওর পেছনে!

মনের সন্দেহ বাতিকটা অনেকটা ডাল আর ভাতের মত! একটা ছাড়া আরেকটার চলা সম্ভব নয়। আমিও মনকে যতটা সম্ভব শান্ত রেখে তেওহার জেলের উদ্দেশ্যে কয়েকটা ফোন সেরে নিলাম। বিকেলে কোয়ার্টারে গিয়ে মার্গারেট সম্পর্কে আমার ধারণায় আকস্মিক পরিবর্তন নেমে আসল। কে বলবে এই ঘরে একজন কয়েদি ঠ্যাঙানেওয়ালা জেলার সাহেব থাকতেন! আমার অনুপস্থিতিতে সেই রমণী বিছানা গুছিয়েছে, বইয়ের আলমিরা আর লেখার টেবিল যেন জীবন্ত আর ঘরের মেঝেতে এক বিন্দু ময়লা পর্যন্ত নেই!

আমার বৃদ্ধা মা সেদিন বলছিলেন, “বাবা, তোর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এবার বিয়েটা সেরে ফেললে আমরাও নাতি নাতনীর মুখটা দেখে যেতে পারি!”

মার্গারেট আমার হাত ধরে টেবিলে বসাল। কত কি রেঁধেছে ও! মাংস, পরোটা, দই বড়া, ডাব চিংড়ি ইত্যাদি। সেই রাতটার কথা এখনও আমার চোখে ভাসছে। বলতে বলতে উঠে দাঁড়ালেন কীর্তিবর্মন। সামনের দেওয়াল আলমিরার গায়ে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললেন, মার্গারেট সেদিন তার আসল বেশে ধরা দিল। চোখে সুরমা দিয়েছে, স্বর্গীয় অপ্সরাদের মত মাথায় মুকুট, বুকের কাছে হীরের পাত বসানোর মত দুটি শঙ্কু আকৃতির স্তম্ভ এবং পিঠে সুতো বাঁধা। গভীর উপত্যকা বেয়ে জঠরদেশ নেমে গেছে। কটিদেশে সেদিনের মতই কেশ শোভা পাচ্ছে। ও বলল, “এটাই আমার আসল রূপ! আমার এই নগ্নাবেশ পুরুষের খেলার কেন্দ্রবিন্দু! তুমি কি আমায় এভাবে গ্রহণ করবে আজ এই রজনীতে!” দেখলাম, মার্গারেটের চোখের সীমা ছাড়িয়ে ফোঁটা পড়ছে। আমি সেই ঝড় নিজের এই কর্মঠ দৃঢ় কলেবরে শান্ত করলাম কেবলমাত্র সেদিনের জন্যই। কেবলমাত্র সেদিনের জন্যই!

প্রায় চার পাঁচ মাস কেটে গেছে। তেওহার জেলে ভালো খারাপ মিশিয়ে কয়েদিরা আসে। কেউ কেউ বেশি ভালোর পরিচয় দিলে তার সাজা মুকুব হয়। কেউ কেউ আশ্রমেই সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়। একবার কারাগারের বাইরে গেলে তখন মনে হয় বহির্জগতের চেয়ে এই তেওহার একশো গুণ ভালো। সম্মানজনক। কাজ আছে ঢের।

একদিন ভোরে দুজন আসামিকে জেলে আনা হল। একজন কনস্টেবল বলল, “হুজুর, কাল রাত কিসিনে ফোন কিয়া থা! বোলা, দো আদমি কো লে আও! সুবা, কোর্ট মে হাজির কারনা হেয়!” আমি বললাম, “সে নয় বুঝলাম কিন্তু অভিযোগ কী আছে মানসিং!”

মানসিং ঢোক গিলে বলল, “সাব, ও যো বাহার সে স্পাই আয়া থা না, ও লেরকি কা মত হো গেয়া”। মানসিং চলে গেলে আসামি দুটোকে ওপর থেকে নিচে ঝুলিয়ে মারার নির্দেশ দিলাম। চলে আসার সময় শুনতে পেলাম ওরা চিৎকার করছে, “হুজুর আমাদের ছেড়ে দিন। লাগছে খুব। আমরা ফল বিক্রেতা… স্যার, ছেড়ে দিন!”।

                                         (৪)

শ্রাবণের দুরন্ত আবেগে যেমন খাল বিল পুকুরে জল সঞ্চয় হয়, তেমনই সুচেতার মনে এক একটা গল্প এবং তার অন্তর্নিহিত গূঢ় অর্থ বাসা বাঁধছে। বিজন এক্ষেত্রে নীরবতা অবলম্বন করছে। বিজন ফোনে বলল, “দেখো সুচেতা, আমাদের স্টোরি দরকার ছিল আমরা দুটো পেয়ে গেছি। বাকি আর দুটো হয়ে গেলেই তো কাজ শেষ! তো এই নিয়ে আর মাথা ঘামিও না। আমি বরঞ্চ একবার চেক করে নেব”। বিজনের কথায় সুচেতার মনের কুয়াশা কাটে না। পরপর দুটো ঘটনায় হত্যাকারী কে, কীভাবে খুন করল সেটা কিন্তু জেলার সাহেব বললেন না! শেষের গল্পের নায়িকা মার্গারেট কীভাবে মারা গেল, সেটাও চেপে গেলেন।

আজকের রাত অনেকক্ষণ জাগতে হবে। গল্পের প্লট, নতুন ক্যারেক্টর, কল্পনাপ্রসূত পরিবেশ তাছাড়া তেওহার জেলের একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ জানতে গেলে খাতা কলম করতেই হবে। রাত তখন দেড়টা। বাইরে কিসের একটা শব্দ হল। মনে হল, ঝোপের ওপর দিয়ে কেউ হেঁটে চলাফেরা করছে। সুচেতা বারান্দায় আসে। কিছুটা দূরে দেখা যাচ্ছে দারোয়ান চেয়ারে বসে নাক ডাকছে। মাথার কাছে টিমটিমে আলো। কিন্তু বারান্দার সামনেটা বড্ড অন্ধকার। ঝিঝি ডাকছে। সুচেতার গা-টা কেমন কাঁটা দিল।

কিছুই নেই, এই ভেবে ও ঘরে এসেই সবে চেয়ার টেনে বসতে যাবে, বিছানায় চোখ থেমে গেল। সেখানে তিনটে মূর্তি বসে আছে। সুচেতার গা-টা কেমন গুলিয়ে উঠল। বিছানায় যারা বসে আছে তাদের দেহ ক্ষত বিক্ষত। মাথা থেকে পা পর্যন্ত রক্তিম হয়ে গেছে। তারা যেন সুচেতাকে কী বলছে, “ও তোমাকেও ছাড়বে না! ও তোমাকেও মারবে! পাপ কাউকে ছাড়ে না! তুমিও পাপ করছ!” একসাথে তিন তিনটে গলার স্বর! সবাই একই কথা বলছে।

সুচেতার কান যেন ফেটে যাচ্ছে সেই ত্রয়ীর পীড়াদায়ক স্বরে। ও নিজের হাত দুটো দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ল। তারপর জ্ঞান হারাল আপনা হতেই। সকালে কয়েকটা চেনা স্বরে ওর ঘুম ভাঙল। দেখল, অভিজিৎদা আর বৌদি। বিছানায় তাকিয়ে দেখল, সেখানে কেউ নেই!

শ্রীতমা বলল, “তোমার পাতানো বোনটি তোমায় নিয়ে গল্প লিখে এত নাম ডাক করল আর তুমি কিনা ওর জন্য একটা পাত্র দেখতে পারছ না!”

অভিজিৎ সর্দার একটু গম্ভীর হয়েই স্ত্রীর কথা উড়িয়ে বললেন, “সুচেতা, তুমি একটু সাবধানে থাকো। জানি তুমি আর পাঁচটা কুনো ব্যাঙের মত নও! তুমি স্বাধীনচেতা। তাই আরও বেশি করে বলব, বিপদে পড়েছছ যদি খুলে সব বলো। কিন্তু কোরো না”।

সুচেতা, গরম কফিতে চুমুক দিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক বোধ করে। কাল রাতের ঐ বিভীষিকা যেন চোখের পাতা থেকে মুছছে না। তবুও বলল, “না দাদা, আমি ঠিক আছি। তারপর শ্রীতমার দিকে তাকিয়ে বলল, এই বইটা লেখা শেষ হলে তোমরা যেদিন বলবে, আমি সেদিনই বিয়ের জন্য প্রস্তুত”।

পরের দিন সাড়ে আটটায় সার্কুলার রোডে গিয়ে দেখে জেলার মশাই বাড়িতে নেই। পানুগোপাল তখন বাগানে জল দিচ্ছে। কয়েকটা গোলাপ, ডালিয়া ফুটে রয়েছে সেখানে। পানুগোপাল বলল, “ম্যাডাম, এক কাম কিজিয়ে, ইয়ে বাড়ি ঘুমকার দেখিয়ে আপ”। সুচেতা ভাবছিল, কী করা যায় এখন! পানুগোপাল যা বলল, তা করা ছাড়া উপায় নেই। তাছাড়া বিজন আজ আসবে না বলেছে। ওর মেয়ের দাঁত তুলতে নিয়ে গেছে। আসতে আসতে দুপুর হবে। তাই সুচেতাকেই ফোন রেকর্ডিং এবং প্যাড রাইটিং করতে হবে। ও দাঁড়িয়ে আছে দেখে ছেলেটা ছুটে এল। এসে বলল, “ম্যাডাম, এক বাত বলু! কিসি কো মাত বোলনা! ইয়ে আদমি পুরা রাক্ষাস হে! অর, ইয়ে যো ঘার হে না, ইঁহা পার বুরি অর্তে ওর আৎমা রেহতি হ্যায়!”

এরপর সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে থাকে সুচেতা। নিচের ছেলেটা বোধয় পাগল! কী সব আজেবাজে কথা বলছে! এত বড় একজন অফিসার, যিনি তেওহারের সুপারিন্টেন্ডেন্ট হয়েও, অত কুখ্যাত মানুষগুলোর মাঝে থেকেও সেখানে ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছেন। তিনি রহস্যের কেন্দ্রে থেকেও যেন সুচেতার কাছে মহান হয়ে উঠেছেন। সুচেতাও ঠিক ততটাই উৎসাহী এই সার্ভেটাকে একটি যোগ্য মর্যাদা দিতে। সবার পাঠযোগ্য একটি পুস্তক আকারে এগুলো উপস্থাপিত করতে।

সকালবেলাতেও কেমন যেন গা ছমছমে ভাব। ছাদে বোধয় একটা কাক কর্কশ গলায় চিৎকার করছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে একেবারে চিলেকোঠার ঘরের সামনে দাঁড়াল সুচেতা। আকাশ মেঘলা। মাথার ওপরেই কয়েকটা পুঞ্জীভূত কালো মেঘ আশ্রয় নিয়েছে। হঠাৎ পানুগোপালের শেষ উক্তিটা ওর মনে পড়ে গেল, “ম্যাডাম, হামার কোথা বিসওয়াস না হলে নিজেই গিয়ে ছাদের ঘরের দরজায় ফুঁটোটায় নাক লাগিয়ে শুঁকে লিবেন!”

সুচেতা দেখল, দরজার ঠিক মাঝ বরাবর একটা ছিদ্র। একবার নিজের মুখে হাত চালিয়ে নিল। তারপরই দরজার কড়ায় একটা শব্দ করল। কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। পরপর দুবার কড়া দিয়েও যখন সাড়া এল না তখন সবে ও মুখটা বাড়িয়েছে… “সুচেতা, কি করছ তুমি!” ও প্রায় চমকে ওঠে। মনে হল একেবারে পিঠের কাছে কেউ উষ্ণ স্রোত ছড়িয়ে দিল।

সুচেতা দেখল, ব্লু টিশার্ট আর ট্রাউজারে দাঁড়িয়ে আছেন কীর্তিবর্মন। চোখটা যেন দিনের বেলাতেই জ্বলছে। কীর্তিবর্মন এবার কাতর গলায় বললেন, “তুমি আমার বাড়িতে অনুমতি ছাড়াই কেন এটা করলে! না না, এটা তোমার উচিত হয়নি! কথাখানি বলে জেলার সাহেব মাথা দোলাতে দোলাতে পেছন ফিরলেন। তুমি পানুগোপালের কথায় কেন এটা করতে গেলে! জানো, যেদিন আমি ফোনে তোমার গলা শুনি, তারপর তোমায় সামনে থেকে দেখলাম, আমার মার্গারেটের কথা মনে পড়ছিল”। এতক্ষণ সুচেতা মাথা নিঁচু করেছিল। এবার মাথা তুলতে গেল কিন্তু পারল না। হঠাৎ ঝড়ের গতিতে একটা লাঠির আঘাতে ওর মাথা ঝাঁঝিয়ে উঠল। সুচেতা একবার, “আ-আ” বলেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল। ফাইবারের রুল হাতে দাঁড়িয়ে রইলেন কীর্তিবর্মন!

সুচেতার জ্ঞান ফিরল যখন তখনই দপ করে মাথার আঘাতটা জেগে ওঠে। কি প্রচন্ড যন্ত্রণা! অথচ হাত দিয়ে যে দেখবে তার উপায় নেই। হাত বাঁধা। ঘরময় অন্ধকার খেলে বেড়াচ্ছে। দমবন্ধ হয়ে আসছে কার্বন ডাই-অক্সাইডে। এই সময় দরজাটা খুলে গেল। একটা বাতি জ্বলে উঠল। আলোর ঝলকানিতে যাকে সুচেতা দেখল তিনি এ কদিনের ভদ্রলোক নন বরং তেওহার জেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট কীর্তিবর্মন কবিরাজ। মসৃণ পোশাকের তারুণ্যে তাকে চেনা দায়। বাদামি রঙের বুট জুতো চকচক করছে। একটা চেয়ার দখল করে সাহেবিয়ানায় বাম পায়ের ওপর ডান পা তুলে হাতের রুল ঘোরাতে লাগলেন।

সুচেতাকে বোধয় উনিই এই ঘরে এনেছেন। সুচেতা এখন বিধ্বস্ত! ওর গায়ের ওড়না সরে গেছে। সেদিকেই তাকিয়ে জেলার সাহেব বললেন, “তোমার ঐ উল্কি আবার আমায় মার্গারেটের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে সুচেতা।” সুচেতা, নিজের পোশাক ঠিক করার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। সারা শরীর ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। তবুও ও নিজেকে সামলে বলল, “পাপ কখনো চাপা থাকে না মিঃকবিরাজ! আপনিও তাই সাজা পাবেন। আপনার সাজা হবেই। যে সবার দোষ গুণের বিচার করে, সেই আপনার বিনাশ করবে।”

কীর্তিবর্মন অবশ্য হেসে সে কথা উড়িয়ে দিলেন। মনে হল রাতের হিংস্র জন্তু হায়নাদের হাসি। তাতে অভিশাপ ঝড়ে পড়ছে একটু একটু করে! সুচেতাও নিজের ভুল বুঝতে পারল। কী করতে যে এই ভয়ংকর মানুষটার কাছে ও এসছিল, সেটা এখন বুঝতে পারছে না। যারা খুন করে, দাঙ্গা বাঁধায়, শিশু পাচারের মত জঘন্য কাজ করে তাদের জেলার সাহেব আর কী রকমই বা হতে পারে! ভাবতে ভাবতে সুচেতার মন অবশ হয়ে আসছে। হাতের কাছে ফোনটাও নেই যে কিছু রেকর্ড করবে। হয়তো এরপরই নিয়তি ওর কপালে মৃত্যু নামক শব্দটি বসিয়ে দিয়েছে!

কীর্তিবর্মন কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র নন। এখনও হাড়ে মাংসে বজ্জাতি, শত পাপ করার অভিপ্রায় জীবিত আছে। সুচেতাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন, “তৃতীয় গল্পটা শুনবে না সুচেতা?”

সুচেতার এবার যেন লোকটাকে পাগল বলেই মনে হল। বদ্ধ উন্মাদ একটা!

জেলার সাহেব নিজ মুখেই শুরু করলেন। ঘরের মাঝে বাতির আলো পড়েছে খালি। চারপাশের কালচে দুনিয়া দেখে সুচেতার মনে হল এটা সত্যি সত্যিই দিল্লির তেওহার জেল কারাগার! যেখানে শুধু পাপীরা ঘুরে বেড়ায়।

“আমি তোমাদের গল্পের শুরুতে একজনের নাম বলেছিলাম— মনে নেই বোধয়! পৌর্ন্ড্যবর্ধন স্যামুয়েল সোবার! এ-ও বলেছিলাম যে, তিনি না থাকলে হয়তো আমার জেলার হওয়া হতই না! অনেক বছর কেটে গেছে। এদিকে আমি মনে মনে এক অস্বাভাবিক অস্বস্তিতে ভুগছি। ওঁর দেখা না পেলেই নয়। উনি কোনো মন্ত্রীর পুত্রই হোন বা রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চের নায়ক, বা কোনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিক— ওঁর সাথে আমার দেখা করাটা আর পাঁচটা কাজের মত নয়! এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।

তেওহার জেলের প্রতিটা কিনারা, সিঁড়ির ধাপ পর্যন্ত জানতে পেরেছে যে, বিরোধী দলের মুখ্যসচিবের দশ বছরের কন্যাটিকে স্যামুয়েল সোবার কিডন্যাপ করেছে!

তখন আমি কিন্তু ঐ দলনেতার কন্যার কথা ভাবিনি! আমি ভাবছিলাম সোবারের কথা। যিনি একদিন আমায় সাহায্য করেছিলেন। আর আজ তার বিপদ! এটা আমি মনে মনে ধরে নিই যে, সোবার আদতে নির্দোষ! ও এটা কিছুতেই করতে পারে না।

শেষে একদিন এই তেওহার জেলেই স্যামুয়েল সোবারকে আনা হল। আমার তিন হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছেন সোবার। মাঝারি উচ্চতার মানুষটা যেন আগের মতন আর নেই। আমার চেয়ে বছর চারেক ছোটো হবে। চোখে আর সেই দীপ্তি নেই, পরনে ময়লা ধরা পোশাক, তার ওপর একটা নিম্নতর অফিসার ওর কলার ধরে আছে। আমার খুব খারাপ লাগল। এক দিন গেল। দু’দিন গেল। তিনদিনের মাথায় আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। ওর কক্ষেই ছুটে গেলাম। এক্ষেত্রে বলে রাখি, আমি তখন সুপারিন্টেন্ডেন্ট হয়ে গিয়েছি। তাই বাক্য যতটা পারি ভারি গলায় আর গাম্ভীর্যের সাথে কথা বললাম। সোবার সেদিন কিছুই বলল না। খালি আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদল।

পরের দিন কোর্টে নিয়ে যাওয়া হল সোবারকে। বিচারক ওর দোষের ফেরিস্তা শোনাচ্ছেন। আমিও দাঁড়িয়ে শুনছি। বিশ্বাস হচ্ছিল না কিছুই। নারী পাচার, শিশু পাচার, মাদক দ্রব্যের সাথে সাথে হাত সাফাইয়ের নিখুঁত অভিযোগ আছে। এবার বিচারক বললেন, ‘মি.সোবার, আপনার এ বিষয়ে আর কিছু কি বলার আছে!’ সোবার এরপর যা বলল, তাতে কোর্টে উপস্থিত সমস্ত মানুষ চাতকপাখির মত আমার দিকে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে রইল। বিরোধী মুখ্যসচিবও সশব্দে আমার উদ্দেশ্যে একটি গালি প্রয়োগ করলেন!

সোবার সেদিন বলেছিল, ‘এই চক্রান্তের সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র একজনেরই। আমি তো নিমিত্ত মাত্র। স্যার আমায় যা নির্দেশ দিয়েছেন আমি তাই মাথা পেতে করে গেছি। এমনকি এই তেওহার জেলে আসা এবং ইতিপূর্বে নিজেকে পুলিশের কাছে ধরা দেওয়া— এসবই স্যারের নির্দেশ! আর উনি আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন, সুপারিন্টেন্ডেন্ট মি. কবিরাজ!’

দোষারোপ হয়তো এড়িয়ে যাওয়া যায় কিন্তু প্রমাণ! প্রমাণ তো সর্বসম্মুখে মোছা যায় না। সোবার বলল, ‘আপনারা ওঁর জামার বুক পকেটে দেখুন একটা নথি পাবেন। ওটাই সব সমস্যার সমাধান।’ আমি সত্যি বলছি সুচেতা, সেদিন কী করে আমার বুক পকেটে মুখ্যসচিবের কন্যার নাম লেখা চিরকুট এসে পৌঁছায়, আমি ঘুনাক্ষরেও জানতে পারিনি। তবে পরে ভেবে দেখেছিলাম, স্যামুয়েল সোবার আদতে একজন বহুরূপী, অন্যের ছদ্মবেশ নেওয়া বা এক্ষেত্রে হাত সাফাই করাটা তার কাছে কিছুই নয়!

যাই হোক, আমার চাকরিটা গেল। যার জন্য একদিন এই তেওহারের চৌকাঠে পা রাখার সাহস পেয়েছিলাম, আজ সেই নিজেকে বাঁচাতে আমাকে স্কেপগোট করল এবং তেওহারের অদম্য জেলার সাহেবের মৃত্যু ঘটল।”

উনি থামলে ঘরের পরিবেশ কিছুটা হালকা হয়। কীর্তিবর্মন নিজেও কিছুটা ক্লান্ত। কতদিন ধরে এই জমানো কথা চেপে আছেন। আজ সেগুলো মুক্ত করে নিজেও কিছুটা স্বস্তি পেলেন। অদম্য এই তেওহার জেলার সাহেব নিজেই নিজের কাছে হেরে গেছেন। সেই ঘটনার পর চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপমান, কাগজে চুলচেরা বিশ্লেষণ ইত্যাদি যেন বিভীষিকাময়! তেওহার এমন একটা জায়গা যার গুরুত্ব সেখানকার মানুষেরাই বোঝে। একবার সেখান থেকে বের হলে বা বিতাড়িত হলে কোনো সমাজই তাকে আর ঠাঁই দেয় না। সে কয়েদি হোক আর জেলার হোক! সবার একই দুর্দশা!

কীর্তিবর্মন দেখলেন, সুচেতার চোখ লাল হয়ে এসছে। দুই কাঁধ ন্যুব্জ। মাথা হেলে গেছে। চোখ দুটো সিলিং এর ওপর। মণির সাদা অংশটা রক্তজবা। এই সময় দরজা ভেদ করে একটা দমকা হাওয়া এল। সাথে এক নৃশংস হাসির শব্দ! যেন কেউ অনেক কষ্টে থেকেও অন্ধকারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি ছড়িয়ে দিচ্ছে!

জেলার সাহেব দেখলেন সুচেতাকে। এ কি অবস্থা! কয়েক মুহূর্তে মেয়েটার মধ্যে আমূল পরিবর্তন এসেছে। অত বড় চুল তো সুচেতার ছিল না! প্রায় কোমর অব্দি নেমে এসছে। শুধু নাক আর ঠোঁট দেখা যাচ্ছে। কারণ মুখের চারিপাশ অজস্র কুচকুচে সাপের মত চুলে ভরা।

“চিনতে পেরেছ আমায়!”

কীর্তিবর্মন প্রায় চেয়ার ফেলে উঠে দাঁড়ালেন। হাতের রুল অতর্কিতে গড়িয়ে সুচেতার পায়ের কাছে চলে গেল। সুচেতা তখনও অমন ভাবেই বসে আছে। মাঝে মাঝে হাসছে। ওটা সুচেতার গলা নয়! এই কথাটা ভালো ভাবেই বুঝেছেন জেলার। তাহলে কার! খুব চেনা একটা গলা।

“কুকীর্তিবর্মন! নামটা এখনও কাউকেই বলো না দেখছি! তুমি এখনও চিনতে পারলে না!”

জেলার সাহেবের মুখ দিয়ে বিড়বিড়ানি আরম্ভ হল, “মা- মা- মার্গারেট! তুমি…!”

সুচেতার চুল অগোছালো। মাথা যেন কিসের ভারে খানিক ঝুঁকে পড়েছে। চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে না। এদিকে জেলার সাহেব হতবম্বের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছেন। রীতিমত উনি ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছেন। কারণ উনি জানেন, পাপ কাউকে ছাড়ে না! কিন্তু ওঁর যাওয়া হল না। সামনের নারীমূর্তি আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ে রুলের মাথায় সজোরে একটা লাথি কষাল। আর তখুনি রুলটা হাওয়ায় পাক খেতে খেতে এসে সোজা লাগল জেলার সাহেবের কপালে। উনি প্রায় কপাল ধরে বসে পড়লেন। রক্ত বের হচ্ছে সেখান দিয়ে। সুচেতার বেশে মার্গারেট বলে চলল চতুর্থ গল্প। এই রজনীর অন্তিম পর্ব!

“এখানে কেবল আমি নই বরং আরও দুজন আছে। তারাও আমার মতন তোমার পাপের সাজা ভোগ করছে। আমরা হয়তো সুচেতাকে কিছুই বলিনি কিন্তু দেখা একবার দিয়েছি। আমাদের রক্তাক্ত দেহাবশেষ দেখে ও জ্ঞান হারায় কিন্তু পরের দিন আবার তোমার কাছে আসে। কারণ ও তোমার কুকীর্তি এখনও শোনেনি তবে আন্দাজ করেছে। ওপরের চিলেকোঠা ঘর তুমি খুলে দাও। তারপরই তোমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে।

সেদিন রাতে তুমি বুঝে গেছিলে আমিই সেই গুপ্তচর। আমার বুকের কাছেই একটা জার্মান ভাষায় উল্কি করা ছিল। তুমি হাত দিয়ে বললে এটা কি! আমি তখন তোমায় মিথ্যে বলি কিন্তু তুমি হলে  যে ধূর্ত শৃগাল! যতই ভালোবাসা, স্নেহ দিয়ে বেঁধে রাখি না কেন তুমি বিশ্বাসঘাতকতা করবেই। তুমি তারপর জানতে পারলে সব। প্রথমে কিছুই বলোনি। সারাটা জীবন এই দেশ ঐ দেশের চরবৃত্তি করে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। শেষে এতটুকু শান্তি চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি! তুমিই সেই পেছন দিয়ে ছুরিকাঘাত করলে! সেই রাতে খাবারে বিষ মিশিয়েও তোমার রাগ মিটল না, কুপিয়ে খুন করলে। কুপিয়ে নাভি ও তার সংলগ্ন অঞ্চল ক্ষতবিক্ষত করলে। ছুঁড়ে ফেললে ডাস্টবিনে!

আজ তুমি বৃদ্ধ! কিন্তু আমার তো বয়স বাড়ে না, কমে না। খুব যন্ত্রণা হয় সেটা কি বোঝো তুমি! সেদিন তুমি আমার সাথে সাথে আমার গর্ভে থাকা সত্তাকেও খুন করেছো কুকীর্তিবর্মন ! শুনতে পারছ তুমি!”

জেলার সাহেব প্রায় পাগলের মত চিৎকার করে উঠলেন। মনে হল এবার সবকটা জঙ্গলের শেয়াল একসাথে গোঙানি গেয়ে উঠল। কি অসহ্য সেই করুণ মর্মান্তিক দৃশ্য! জেলার সাহেবের সম্মুখে তখনও সুচেতা বলে চলেছে। যেন এই মায়াবী রাতের কোনো পরিসীমাই নেই!

“আমাকে মেরেও তুমি ক্ষান্ত হওনি। এরপর খোঁজ আরম্ভ হয়। মানসিং নিজে বলেছিল, তাকে কে যেন ফোনে বলে দুজন সাদাসিধে মানুষকে ধরে আনতে সেই কেসের মিটমাট করার জন্য। কিন্তু আমার মৃতদেহই পরে পাওয়া গেল না! কিন্তু এখনও খুঁজলে হয়তো মার্গারেটের স্বর্ণের মত জাঁকালো শরীর পাওয়া যাবে না কিন্তু কঙ্কাল পাওয়া যাবে! আর সেদিনের মানসিংকে ঐ ফোনটা তো তুমিই করেছিলে, তাই না জেলার সাহেব!”

কুকীর্তিবর্মন মেঝেতে ধপ করে বসে পড়লেন। অসংখ্য শিরা জেগে ওঠা হাত নিয়ে মুখ ঢাকলেন। ভুল জীবনে অনেক করেছেন। কোনোটা ইচ্ছাকৃত তো কোনোটা আবার অনিচ্ছকৃত। কিন্তু মার্গারেট যে অন্তঃসত্ত্বা, এটা তিনি কস্মিনকালেও জানতে পারেননি। আজ মনে হচ্ছে মার্গারেটের বাক্যবাণ যেন বিধাতার লিখন! যাঁর নাম কুকীর্তিবর্মন, তার কোনো কিছু ভালো কীভাবে হতে পারে! জেলার সাহেব হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। নিজেকে কোনো রকমে ধীর স্থির করে বললেন, “মার্গারেট তুমি আমায় ক্ষমা করো। পরিবার ছেড়ে বিপরীতে গমন করে আমি সবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। কিন্তু তুমি এই অপদার্থটাকে একদিন ভালোবাসতে শেখালে। আর আমিই কি না তোমায়! আমায় ক্ষমা করো মার্গারেট। হ্যাঁ, আমিই তোমার দেহ পুনরায় ডাস্টবিন থেকে তুলে আনি।”

                                         (৫)

পরের দিন সকালে পুলিশ কমিশনার অভিজিৎ সর্দার এসে হাজির। দুজন অফিসারকে বললেন বাড়িটা সার্চ করতে। নিজে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলেন। কিছুক্ষণ পর একটা ট্যাক্সি করে বিজন সেখানে উপস্থিত হয়। একাধিক বার ফোন করা সত্ত্বেও সুচেতা সাড়া দেয়নি। তাই ওরা বিপদের আন্দাজ করেই এখানে এসে হাজির হয়েছে।

অভিজিৎ দেখল সিঁড়ি দিয়ে ঢোকার মুখেই একটা ঘরের দরজা আধ খোলা অবস্থায় আছে। ঘরে এখনও বাতি জ্বলছে। কেমন যেন গুমোট গন্ধ ভেতরে। দরজা সরিয়ে ভেতরে ঢুকেই ও দেখল, সামনে মেঝেতে সুচেতা শুয়ে পড়ে আছে। হাত বাঁধা। মুখ শুকিয়ে গেছে। বোধয় কাল থেকে কিছুই খায়নি। “আমি বলেছিলাম সুচেতা, আই টোল্ড য়্যু ইডিয়ট!” মুখে বিড়বিড় করতে থাকল অভিজিৎ। কাল রাতে যে মেয়েটার সাথে কী কী হয়েছে সেটা ভেবেই ওর গা শিউরে উঠল। কিন্তু গায়ের পোশাক, স্বচ্ছ গাল আর হাত, পা দেখে অভিজিৎ কিছুটা নিশ্চিন্ত হল। কিন্তু পুরো বাড়িটায় আর একটিও প্রাণীকে পাওয়া গেল না।

অফিসাররা এসে জানালেন, স্যার, ওপরে নিচে কাউকে পাওয়া গেল না। এদিকে বিজন এসে সুচেতার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছে। সেটা দেখেই অভিজিৎ এগিয়ে গেল। বিজনের উদ্দেশ্যে বলল, “আচ্ছা, আপনারা দুজনে কি রাতারাতি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চেয়েছিলেন? তাই এই মূর্খামি! একলা মেয়েটাকে আপনি এমন একজনের কাছে পাঠালেন যাকে নরখাদক বললেও ভুল হবে না!” বিজন তখনও সুচেতার নাম ধরে ডেকে যাচ্ছে। সুচেতার কিছু হয়ে গেলে বিপদ ওর নিজেরও হবে। নিজেকে যতটা সম্ভব সংযত করে ও বলল, “স্যার, আমি কাল মেয়েকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাই। সুচেতাকে আমি বলেও ছিলাম আজ যেতে হবে না কিন্তু ও শোনেনি। তাই ও একাই চলে আসে। কিন্তু এখানে যে কাল সকাল থেকে সারা রাত কী হয়েছে, কেন ওর এই অবস্থা আমিই কিছুই বুঝতে পারছি না।”

অভিজিৎ বলল, “আই সি, তবে ওকে এখুনি নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে হবে। তারপর বাকিটা দেখছি। ওর জ্ঞান ফিরে আসাটা আমাদের কাছে জরুরি।”

এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে সুচেতা ঘরে আসে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শ্রীতমা ওকে দুধ, ফল, ডিম, বাদাম ইত্যাদি প্রোটিনে ভরপুর খাবার খাইয়ে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। সুচেতাও ধীরে ধীরে নিজের শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে।

সেদিন বিকেলে বিজন, অভিজিৎ, সুচেতা আর শ্রীতমা ওরা চারজনে মিলে আড্ডা দিচ্ছে। সূর্য প্রায় পশ্চিমে হেলে পড়েছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সুচেতা সেদিনের গল্প বলছিল। ‘গল্প’ বলতে গিয়ে ও একবার হেসে বৌদির দিকে তাকিয়ে বলল, “গল্প সংগ্রহ করতে গিয়ে নিজেই গল্প হয়ে যাচ্ছিলাম। বৃদ্ধের বয়স সত্তর হলেও হাড়ে জোর আছে।”

অভিজিৎ চায়ে একটা সুখটান দিয়ে বলল, “আচ্ছা, এই পানুগোপালকে দেখতে কেমন! মোটা, বেঁটে গোছের নাকি লম্বা চওড়া!” সুচেতা বলল, “না, প্রায় সাড়ে পাঁচের মত হাইট। মুখটা থেবড়া। মাঝে মাঝে চকচক করে গাল দুটো। ঐ তো সেদিন বলল, চিলেকোঠার ঘরে উঁকি মারতে।”

ওদের মাঝে বাঁধা দিয়ে শ্রীতমা বলল, “আচ্ছা ঐ কুকীর্তিবর্মন তোমার গায়ে হাত টাত তোলেনি তো!” সুচেতা বলল, “না হাত তোলেননি। মাথায় রুলের ঘা দিয়ে গল্প শোনাচ্ছিলেন। কিন্তু আমার ডান পায়ের এই বুড়ো আঙুলটায় ব্যাথা কেন বুঝতে পারছি না!”

অভিজিৎ বলল, “সেদিন কি হোঁচট খেয়েছিলি কোথাও!”

ও বলল, “না। তবে একটা কথা!”

 অভিজিৎ বলল, “কি আবার কথা! কুকীর্তিবর্মনের দেহ অনুসন্ধান! হাড়গিলে জেলার সাহেব গা ঢাকা দিয়েছেন। ওকে পেলে পুলিশ ছিঁড়ে খাবে।”

সুচেতা বলল, “না রে দাদা। আমার মনে হয় লোকটা এখনও বাড়িতেই আছেন!”

“সুচেতা তোমার মাথার ঠিক নেই। তুমি আর এসব নিয়ে ভেব না। আমাকে যদি দাদার মত এতটুকু স্নেহ করো তাহলে বলব, তুমি আর এসব নিয়ে ভেব না। পারলে পাহাড়, সমুদ্রে ঘুরে এস। আমি শ্রীতমাকে বলে দিচ্ছি।”

সুচেতার তবুও যেন ধাঁধা পরিষ্কার হল না। ও সেদিনের বাকি কথাগুলো বলল। এটাও বলল, “দরজা দিয়ে একটা দমকা হাওয়া আসতেই কেমন সব গুলিয়ে গেল। মাঝে একবার মনে হল আমি নিজ মনেই বকে যাচ্ছি। কেউ হয়তো আমার ঠোঁট দুটো বশ করেছিল!”

এই সময় অভিজিতের একটা ফোন এল। ও শুধু বলল, “আচ্ছা, এই অজুহাতে বাড়িটা আরেকবার তল্লাশি করা যাবে।”

রাস্তায় যেতে যেতে গাড়িতে বলল, “এই সুচেতা, পানুগোপালকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি অবশ্য অন্যকিছু সন্দেহ করছি। চোরে চোরে মাসতুতো ভাই…!”

বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়িটা আজ শান্ত। সিঁড়ির কাছে বেড়ালটা একবার শুধু সুচেতাকে দেখে ডেকে উঠল। বেড়ালটার ক্ষীণ স্বর আর দৃষ্টি বলছে ওর প্রভুর কিছু একটা অনিষ্ট হয়েছে। দেওয়ালে হিটলারের ছবিটা এখনও একইরকম আছে। সুচেতা এবার বুঝল, মানুষটা কেন সব ছেড়ে এডল্ফ হিটলারের ছবি রেখেছেন! আদতে পক্ষে তিনি এরকম হতেই তো চেয়েছিলেন।

ওরা একেবারে চিলেকোঠার ঘরে এল। দরজা খুলে অবশ্য কিছুই বেঠিক বলে বোধগম্য হল না। একটা ট্রাঙ্ক আছে। তাতে পুরনো পোশাক আছে। একটা চেয়ার আছে ভাঙা। মাঝে ঝাঁ চকচকে পরিষ্কার। দেওয়ালও তাই। অভিজিৎ বলল, “দেখলি আমি তোকে বলেছিলাম। কিছুই পাওয়া যাবে না!” সুচেতার হঠাৎ কী মনে হল ও দেওয়ালগুলোয় টোকা মেরে দেখতে লাগল। একটা জায়গায় এসে দেখল সেখানে আওয়াজ বেশ জোরে হচ্ছে। অর্থাৎ ভেতরটা ফাঁপা! সুচেতা বলল, “দাদা, এখানটায়।” অভিজিৎ এরপর অনিচ্ছা সত্ত্বেও লোক দিয়ে দেওয়াল ভাঙল। এবং তারপর যা দেখল তাতে ওর মুখ দিয়ে সুচেতার প্রতি প্রশংসা বেরিয়ে এল। “ব্রাভো সুচেতা, ব্রাভো।”

তিনটে কঙ্কাল আবিষ্কার হল। তার মধ্যে দুটি মেয়ের এবং একটি অল্পবয়সী ছেলের। সুচেতা ওদিকের দুটো দেখে বলল, “এই দুটো হাফসানা আর ওর ভাই মুহম্মদের। দিল্লির তেওহার জেলের কেস এটা। কাঁনুরাম আর বেঁচুরামের নাম আছে। এবং আরেকটা কঙ্কালের হাত পা ক্ষয়ে গেলেও সুচেতা নিশ্চিত হয়ে বলল, এটাই মার্গারেট! জার্মান স্পাই, মার্গারেট ওরফে মাটা হ্যারি স্ট্র‍্যাবো। ওর আসল নাম।”

সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় নিচে একটা ধ্বস্তাধস্তির শব্দ পাওয়া গেল। অভিজিৎ নিজে ছুটে গেলেন। পেছনে সুচেতা। গিয়ে দেখল, দুজন হাবিলদার মিলে একটা বেঁটে, মাথায় সাদাপাকা চুলওলা লোককে ঘেরাও করেছে। রীতিমত সে হিংস্র দাঁত বের করে কামড়াতে উদ্ধত! সুচেতা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু অভিজিৎ থামিয়ে বলল, “তোমার খেল শেষ পৌর্ন্ড্যবর্ধন স্যামুয়েল সোবার! অনেক অতিথি সেবা হয়েছে। এবার চলো মামার বাড়ি।”

সুচেতা প্রায় অবাক হয়ে গেল ওর কথা শুনে। সাথে সাথেই বাড়ির উল্টোদিক দিয়ে একজন অফিসার দৌড়ে আসলেন। কানে কানে বললেন, “স্যার, এদিকে একবারটি আসুন!”

অভিজিৎ আর সুচেতা গিয়ে দেখল সবুজ রঙের একটা গার্বেজ বক্স। সেখান থেকে দুটো কুচকুচে কালো মাছি ভর্তি পায়ের গোড়ালি বেরিয়ে আছে। একটু মাথা হেলিয়ে দুজনেই দেখল মৃতদেহের মুখে আরশোলা ভর্তি, মাছি ভোঁ ভোঁ করছে। কুকীর্তিবর্মন কবিরাজ ওরফে তেওহার জেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট- এর জীবনে এইভাবেই ইতি পড়ল।

                                         (৬)

অভিজিৎ একটা সিগারেট ধরালেন। কয়েকটা স্বস্তির টান দিয়ে বললেন, “ইংরাজিতে একটা কথা আছে। হেট দ্য সিন; লাভ দ্য সিনারস্। কিন্তু এখানে এ কথা খাটে না রে সুচেতা! এখানে তেওহার জেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট মরলেন না! মরল একজন মিথ্যেবাদী, পাপী আর অধর্মী ব্যক্তি! যে কিনা বিধাতার লিখন বদলাতে চেয়েছিল! শেষ বয়েসে এসে স্যামুয়েল সোবারকেও একই ছাদের তলায় থাকতে দেন। তবে আমার যা মনে হয়, আর কিছুদিন গেলে পর আমরা পানুগোপাল ওরফে স্যামুয়েল সোবারের মৃতদেহ পেতাম না। সুচেতা, তুমি যেদিন এই পানুগোপালের কথা বললে, এটাও বললে যে চাকর হয়ে মালিক বা প্রভুর কুকীর্তি ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় রত, আমার তখনই সন্দেহ হয়।

তাই এটা ভাবাই স্বাভাবিক যে মালিক আর তার চাকর আর পাঁচটা সাধারণ ঘরের মত আচরণ করে না! ওখানেই গলদ। নথি, কাগজ ঘেঁটে দেখলাম আজ থেকে তিন বছর আগে স্যামুয়েলের ছাড়া পাওয়ার কথা। অন্যত্র যায়নি তাহলে হয়তো কোথাও গা ঢাকা দিয়ে আছে। প্লাস্টিক সার্জারি, ছদ্মবেশ এসব ওর বাঁ হাতের খেল। তাছাড়া প্রভুর কুকীর্তি ধামাচাপা দেওয়ার অপরাধে ওর একটা শাস্তি পাওঁ আছেই”।

সুচেতা এবার একটু হেসে বলল, “এ তো দেখছি আমি নিজেই স্পাই হয়ে তোমাদের কাজ করে দিয়েছি! আমি না গেলে কুকীর্তিবর্মনের রহস্য ফাঁস হত না!”

অভিজিৎ বলল, “হুম কিন্তু এতে তোমার বেয়াক্কেলের পরিণতি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারত সুচেতা! সেদিন রাতে তোমায়…অভিজিৎ থেমে গেলেন। আবার বললেন, তোমার ফোনটা কোথায়! ওটায় কি কিছু এভিডেন্স আছে! তাহলে সোবারের শাস্তিটা কিছুটা গুরুতর হত”।

সুচেতা গাড়িতে বসেই ওর ফোনটা দেখল। দিব্যি ফোন চলছে। মেসেজ, ইমেজ সব ঠিক আছে। বাগানে ফোনটা পড়েছিল। একটু কাদা লেগে আছে। ফোনের ভিডিও অন করতেই ও প্রায় বিস্মিত হয়ে গেল। অভিজিৎ ও প্রায় অবাক! সেদিনের সমস্তটাই রেকর্ড হয়ে গেছে। সুচেতার গলায় কে যেন অবিরাম ভৎসনা করে যাচ্ছে কুকীর্তিবর্মনকে। একটা সময় উনি কেঁদে উঠলেন। সুচেতা এ-ও দেখল, ও নিজে দাঁড়িয়ে রুলে একটা লাথি মারল এবং সেটা ঘুরতে ঘুরতে জেলার সাহেবের মাথায় আঘাত করল।

আরও কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে থামল হেড কোয়ার্রটার ভবানী ভবনের সামনে। অভিজিৎ নামার আগে বললেন, “ পারলে নাম পরিবর্তন করে বই লেখো। কিন্তু অবশ্যই লেখো। এটাও পারলে লিখো যে মার্গারেট তোমাকে দিয়ে বলিয়েছে এসব কথা। যে নাকি বহু বছর আগে মারা গেছেন”।

সুচেতা বলল, “আচ্ছা, ভেবে দেখব। আপাতত কয়েকটা দিন বিরতি!”

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post মৃত্যুহাস্য | পলক ফেলা নিষেধ |-| Bengali Thriller Story
Next post প্রতিশোধ | পলক ফেলা নিষেধ |দীপঙ্কর পইড়া | Bengali Thriller Story