ওরাও স্বাভাবিক | পলক ফেলা নিষেধ | অর্ণব বসাক | Bengali Thriller Story
0 (0)

হিয়া-> ও..ওরা..ওরা..! আমায় মেরে ফেলবে…!বাঁচতে দেবে না আমায়…!..আ..আ..আমি পাগল নই…পাগল নই আমি…!

আবির-> কে বলেছে তুমি পাগল..? আর কারা তোমায় মারবে..?এই তো আমি আছি না শক্ত করে তোমার হাতটা ধরে.. কেউ আসবে না তোমার কাছে…

হিয়া-> তুমি যাবে না তো আমাকে ছেড়ে?…ও..ওরা সবাই আমাকে পাগল বলে কেন?আমি পাগল নই.. পাগল নই আমি…! আমিও স্বাভাবিক….!!

[গল্পকথক-> সকাল থেকে অঝোরে ঝরা বৃষ্টিটা, এই সবেমাত্র একটু শান্ত হয়েছে…সিগারেটটা ধরিয়ে রাস্তার দিকে দোতলার খোলা বারান্দায় এসে দাড়িয়েছে আবির…সিগারেটের কালো নিকষ ধোয়া বুকের ভেতরটা ঝাঁঝরা করে দেয় জেনেও, কিঞ্চিৎ মনের শান্তির জন্য এই কয়েক মাস হল এই ভ‍্যাবদঅভ্যাস হয়েছে তার… এখনও পর্যন্ত সে এবং তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু অর্থাৎ সে নিজেই, ছাড়া অন্য কেউ জানে না তার এই অভ্যাসেভ‍্যার কথা.. মা একবার জানলে পিঠের ছাল আস্ত রাখবে না এও সে জানে…তাই যতটা সম্ভব সবাইকে লোকানো যায় আর কি….

বৃষ্টির দিনে রাস্তার দিকের এই বারান্দায় সময় কাটাতে বরাবরই ভালো লাগে আবিরের… আগে এই বৃষ্টির ফোঁটাগুলোয় কাউকে খুঁজে পেত সে…এখন আর সে সব খোজা হয়ে ওঠে না, ইচ্ছেও করেনা আর…সিগারেটের ধোয়া গুলো যখন বাতাসে ভাসতে ভাসতে বৃষ্টির ফোটার সাথে মিশে যায়.. তখন তার সাথে সাথে নিজের স্মৃতি,স্বপ্নগুলোকেও যেন পুড়তে দেখে আবির….

দেখতেও বেশ আবিরকে..সুঠাম দেহ, লম্বা-চওড়ায় একেবারে perfect, যাকে বলে perfect gentleman type..৫ বছরের পড়া শেষ করে গত ৬ বছর ধরে একজন সাইকোলজিস্ট সে বাংলায় যাকে বলে মনবিশারদ…এত বছরে অনেকের মন সম্বন্ধেই গবেষণা করে থাকলেও…নিজের মনের প্রশ্নের উত্তরই আজও খুঁজে বের করতে পারল না আবির..!

বৃষ্টিটা কমলেও,আকাশ এখনও কালো মেঘে ঢাকা… এত সহজে আজ খান্ত দেবে বলে মনে হচ্ছে না…আকাশের দিকে তাকিয়ে নানা কথা ভাবতে ভাবতে সিগারেটটায় লম্বা একটাটান দিয়ে রাস্তার ওপারের বাসস্ট‍্যান্ডে র দিকে চোখ পড়ল আবিরের…একে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি আর তার সঙ্গে রবিবার,তাই রাস্তা ঘাটে গাড়ি থাকলেও লোক খুব একটা নেই.. আবির দেখল ফাঁকা বাসস্ট্যান্ডে হলুদ চুড়িদার, কোমর অবধি লম্বা চুল আর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পরা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাসস্ট্যান্ডে… আর বারবার হাতের একটা কাগজ খুলে কী যেন দেখছে,আর কী যেন একটা বলে যাচ্ছে অনর্গল.. এইটুকু সময়ের মধ্যেই ৫-১০ বার কাগজটা খুলে,পড়ে আবার বন্ধ করল মেয়েটা…আর তার সাথে কী যে তখন থেকে বলে চলেছে জানা বা বোঝা মুশকিল…দেখে কৌতূহল হল আবিরের মনে.. মেয়েটা কী কোনও বিপদে পড়েছে?ওরম অস্বস্তি বোধ করছে কেন?এসব ভাবতে ভাবতেই বাসস্ট্যান্ডের থেকে একটু দূরে বসে থাকা কিছু ছেলে,মেয়েটার এরকম ব‍্যবহার দেখে হেসে বলে উঠল….]

->দেখ দেখ কী রকম একা একা বকে যাচ্ছে কখন থেকে… আর কাগজটা খুলে পড়েই যাচ্ছে আর বন্ধ করছে… পাগলটাগল নাকি…

[গল্পকথক->এসব শুনেই হঠাৎই মেয়েটাতেড়ে এল ওদের দিকে …হিংস্র চোখে মারমুখী ভাবে এগিয়ে আসতে থাকল..চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট.. বারান্দা থেকে আবির বুঝতে পারল কিছু একটা খারাপ ঘটতে পারে.. তাই তাড়াতাড়ি রাস্তায় এসে মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে তার পথ আটকে বলল..]

আবির-> এই এই কোথায় যাচ্ছেন আপনি এত তাড়াহুড়ো করে… পড়ে যাবেন তো…

হিয়া->সরে যান আপনি, ও..ওরা আমাকে পাগল বলেছে… আমি পাগল নইই…!

[গল্পকথক-> হিংস্রতা আর রাগের মাঝেও, কেমন যেন যন্ত্রণা অনুভব করল আবির মেয়েটার চোখে.. মনে হল যেন ‘পাগল’ শব্দটার প্রতি তার ভীষণ রাগ রয়েছে, সোজা মনে গিয়ে লেগেছে কথাটা… এরপর যাতে ব্যাপার আর না এগোয় তাই মেয়েটিকে সামলে নিয়ে আবির বলল…]

আবির-> আরেহহ্ ছাড়ুন তো ওরা ফালতু লোক.. আগে বলুন তো এই বৃষ্টির মধ্যে এখানে কী করছেন..ছাতাও তো সঙ্গে নেই মনে হচ্ছে, আবার তো বৃষ্টি আসছে… যাবেন কোথায় আপনি?

[গল্পকথক-> আবিরের কথায় খানিকটা আস্বস্ত হয়ে তার দিকে কাগজটা এগিয়ে দিল মেয়েটা.. কাগজে লেখা–

‘bus no- 11/B বা 12 বা 32 বা11/212 বা …….. address- 34/d রাসবিহারী লেন’

কাগজটা পড়ে নিয়ে আবির বলল…]

আবির-> এই রুটের লাস্ট বাস তো আধঘণ্টা আগে বেরিয়ে গেছে, আজ আর আসবে না তো..

হিয়া-> অ্যাঁ…আর বাস নেই?তাহলে আমি বাড়ি যাব কী করে এখন..?!

আবির-> আচ্ছা দাঁড়ান দাঁড়ান…বাস নেই তো কী আছে… ও..ওই তো ট‍্যাক্সি আসছে ওটায় যেতে পারবেন…

[গল্পকথক-> ট‍্যাক্সি দাড় করিয়ে ঠিকানা বুঝিয়ে দিল আবির… ট‍্যাক্সিতে উঠেই যেন আবার নিজের মত বকতে থাকল মেয়েটি.. আবির বিদায় জানালেও সাড়া দিল না.. অগত্যা ট‍্যাক্সি যেতে দিয়ে আবিরও এগিয়ে গেল বাড়ির দিকে…

বাড়িতে গিয়ে মেয়েটার কথাই ভাবতে লাগল..নিজের বাড়ির ঠিকানাটা ওভাবে কেন দেখছিল বারবার?আর ঠিকানাটা ওরকম কাগজে লেখা ছিল কেন…? এসব কথা ভাবতে ভাবতেই আবিরের মনে পড়ল কালকে তার যেখানে যাবার কথা তার address ও 34/d রাসবিহারী লেন…তবে কী আবার দেখা হবে মেয়েটার সাথে তার..?]

আবির-> নমস্কার.. আমি আবির রায়…এটা কী অনিমেষবাবুর বাড়ি?

অনিমেষবাবু-> হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ আবিরবাবু আসুন আসুন ভেতরে আসুন.. আপনার অপেক্ষাতেই ছিলাম এতক্ষণ…

[গল্পকথক-> অনিমেষবাবুর বাড়িটা খুব একটা বড় নয়…বেশ পুরোনো দিনের…৩টে ছোট ছোট ঘর আর একটা বারান্দা, ঘরের দেয়ালের রং প্রায় উঠে যেতে বসেছে.. বাড়িতে আর কোনও লোকজনকেওতেমন দেখা যাচ্ছে না…ঘরের চারপাশ দেখে নিয়ে বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসল দুজনে… ]

অনিমেষবাবু-> ক্ষমা করবেন,আসলে বাড়িতে কেউ নেই এখন যে আপনার জন্য চা মিষ্টি র আয়োজন করব…

আবির-> না না ব‍্যস্ত হবেন না.. ওসব পরে হবে ক্ষণ ..আগে কাজের কথায় আসা যাক…

অনিমেষবাবু-> হ‍্যাঁ আপনাকে যার জন্য ডাকা ..আমার মেয়ে হিয়া.. ছোট থেকেই আমার আর ওর মায়ের চোখের মণি… ছোট থেকে বেশ ভালোই ছিল.. আমাদের মতই স্বাভাবিক…পড়াশোনাতেও বেশ ভালোই ছিল..আর খুব সুন্দর আকঁতেও পারতো.. আমাদেরই এক চেনা পরিচিত -র ছেলেকে ছোট থেকেই খুব ভালোবাসত ও…মেয়ের কোনও আবদারে আমরা না করিনি কোনওদিন.. তাই সে বলতেই বিয়ের কথা এগোই আমরা….দুই বাড়ি থেকেই সবাই রাজি ও ছিল… কিন্তু আজ থেকে ২ বছর আগে হিয়ার জন্মদিনের দিন ছেলেটা, মানে যার সাথে হিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছিল সে হিয়ার জন্য জন্মদিনের party plan করে একটা hotel-এ…হিয়া একাই যায় সেখানে… কিন্তু তারপর থেকে….

আবির-> কী তারপর??

[গল্পকথক-> হঠাৎ করে ভিতরের ঘর থেকে একজন বয়স্ক বিধবা ভদ্রমহিলা উদভ্রান্তের মত বেরিয়ে এসে অনিমেষবাবুকে বললেন…]

পিসি-> ভাই..ভাই শিগগিরি ভেতরে চল মেয়েটা আবার কীরকম যেন করছে…!

[গল্পকথক-> বিধবা মহিলাটি যে অনিমেষবাবুর দিদি হন সেটা বোঝা গেলেও ভিতরে কী ঘটবার কথা তিনি বললেন তা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না আবির.. অনিমেষবাবুর সঙ্গে ছুটে গেল ভিতরের ঘরে..গিয়ে দেখল আগের দিন বাসস্ট‍্যান্ডে দেখা মেয়েটি.. গোঙানির মত করে কী যেন বলে চলেছে.. ঘরের চারিদিক অগোছালো …ঘরের ভিতরে ঢুকতেই স্পষ্ট শোনা গেল সে বলছে…]

হিয়া->ও..ওরা..ওরা..! আমায় মেরে ফেলবে…! মেরে ফেলবে আমায়…!

অনিমেষবাবু-> কী হয়েছে মামণি? কে তোমায় মারবে ? এরকম করছ কেন তুমি? শান্ত হও কিচ্ছু হবে না…

পিসি-> যত্তসব এসে জুটেছে বাড়িতে, হঠাৎ হঠাৎ এই জিনিস ভাঙছে,ওই জিনিস ভাঙছে, আর কারা ওঁকে যেন মারতে আসবে… পাগলের প্রলাপ যত্তসব…!!

হিয়া-> পাগল নই আমি….!আমি পাগল নইইইই!..ও..ওরা আমাকে মেরে ফেলবে..সবাই মিলে…

[গল্পকথক->পিসির কথায় যেন আরও উদভ্রান্ত আরো কষ্ট ঠিকরে বেরিয়ে এল হিয়ার চোখ থেকে… নিজের ভিতরের সমস্ত কষ্ট যেন বের করতে চাইছিল সে কিন্তু সফল হচ্ছিল না কোনওভাবে.. অনিমেষবাবুও কোনওভাবে সামাল দিয়ে উঠতে পারছিলেন না..শেষমেষ আবিরের কথায় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কিছুটা শান্ত করা গেল হিয়াকে…চশমা খুলে চোখের জল মুছে আবিরকে নিয়ে বাইরে এলেন অনিমেষবাবু]

আবির-> এই মেয়ের কথাই বলছিলেন আপনি?

অনিমেষবাবু-> গত দুবছর ধরে কী যে হয়েছে ওর কিছুই জানি না… সেই জন্মদিনের party- থেকে ফিরে এসে কাউকে কিছু না বলে ঘরে চলে যায়… পরদিন ওর যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল সেই ছেলেটা তার বাবাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে, আর বলে এই বিয়ে তারা আর করতে পারবে না…

আবির-> এই যে আপনি বলছিলেন দুই বাড়ি থেকেই রাজী হয়েছিল বিয়েতে.. তারপর জন্মদিনের party .. আর তার পরদিন হঠাৎ করে বিয়ে ভাঙা কেন?

অনিমেষবাবু-> আমিও অবাক হয়েই কারণ জানতে চেয়েছিলাম… প্রথমে বলতে না চাইলেও শেষে তারা বলে যে হিয়া নাকি মানসিক ভাবে ঠিক নয়… অর্থাৎ তাদের ভাষায় পাগল… হাজার বোঝানোর চেষ্টা করলেও বোঝাতে পারিনি তাদের… বিয়ে ভাঙার খবর পেয়ে ওর মা ভেঙে পড়ে খুব… বিয়ে ভাঙার কারণ জানতে পেরে হিয়াও প্রচণ্ড ভেঙে পড়ে… সেদিনের birthday party-তে কী হয়েছিল তার পরেই কেন এই সিদ্ধান্ত কিছুই আমরা জানি না… তবে সেদিনের পর থেকেই হিয়া কেমন যেন বদলে যায়.. কেমন যেন অন‍্যমনষ্ক, সবসময় একা একা থাকত কারোর সাথেই মিশতো না, খাওয়া দাওয়া প্রায় ছাড়ার পথে.. আস্তে আস্তে কেমন যেন পাল্টে গেল… নিজে মাঝে মাঝেই একা একা কিছু বলতে থাকে… বলে কারা যেন ওকে মেরে ফেলবে.. হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে যাকে তাকে মারতে যায়…আস্তে আস্তে ওর বন্ধুরা ও ওর সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়.. দোষটা ওদেরও ছিল না..ওদের ব‍্যবহার-এর সাথে ওর ব‍্যবহার খাপ খাচ্ছিল না..ওদের ভাষাতে কীরকম অস্বাভাবিক ব‍্যবহার হয়ে উঠছিল হিয়ার.. বারবার বন্ধুদের কাছে এরকম শুনে ও নিজেও আর মিশতে চাইত না ওদের সাথে..আরও গুটিয়ে নিল নিজেকে.. আস্তে আস্তে যেন ওর ব‍্যবহার গুলো আরও অস্বাভাবিক হতে থাকল…মাঝেমধ্যে সুস্থ আগের মত, কিন্তু মাঝে মধ্যেই যেন নিজের মধ্যে থাকেনা আর..সব ভুলে যায়, যা নয় তাই বলে, যেসবের অর্থ বোঝা দায়…আর রেগে গেলে ঘরের জিনিস ভাঙচুর…!

[গল্পকথক-> এতটা বলে দীর্ঘশ্বাস নিলেন অনিমেষবাবু, একটা জলের গ্লাস তার দিকে এগিয়ে দিয়ে আবির বলল…]

আবির-> সেদিনের party-তে কী হয়েছিল আপনারা জানতে চাননি আর?

অনিমেষবাবু-> হুম্ ..প্রথম প্রথম কিছু দিন জিজ্ঞেস করতাম হিয়াকে, কিন্তু ও কিছুতেই বলতে চাইতনা,বেশি জোর করলে ওর কষ্ট আরও বেড়ে উঠত..তাই আর জোর করিনি আমরা.. বাড়িতে তো আমি হিয়া ওর মা, আমার বিধবা দিদি আর দিদির ছেলে, যদিও দিদির ছেলে বেশিরভাগ সময়ই দেশের বাইরে থাকে কাজের জন্য.. এই কজনকেই হিয়ার খেয়াল রাখতে হয়..দিদি মাঝে-মধ্যেই চটে যায় ওর ব‍্যবহারে তাই মাঝেমধ্যেই হিয়া রেগে যায় ওর ওপর…সব ভুলে যায় দেখে বাড়ির address আর কিছু বাসের number কাগজে লিখে রাখা থাকে ওর কাছে সবসময়.. যদিও কোনওসময়ই চোখের আড়াল করি না ওকে তবুও প্রয়োজনের খাতিরে..এই তো কালকে আমার সঙ্গেই বেরিয়েছিল ও..তালতলা রোডের বাসস্ট্যান্ডে একটু দাঁড় করিয়ে আমার এক client-এর সাথে কথা বলতে যাই পাশের মোড়েই ..বলেও যাই কোথাও না যেতে কিন্তু এসে দেখি ও আর নেই.. চারিদিকে অনেকক্ষণ খুঁজি.. কিন্তু পাই না.. এমন সময় বাড়ি থেকে ফোন আসে যে ট‍্যাক্সি করে ও বাড়ি চলে গেছে.. ফোনটা পেয়ে যেন শান্তি পাই মনে.. কীভাবে বা কে ওকে ট‍্যাক্সি করে দিল কিছুই বলতে পারেনি ও,তবে ওই সময়টুকু যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম আমি…!

সবই তো বললাম আপনাকে.. এবার আপনিই কিছু একটা করুন..নাহলে এভাবে আমার মেয়েটা হয়তো আর বাঁচবে না…! চারিদিকে সবার কাছে পাগল পাগল শুনতে শুনতে আমরাই আজ বিদ্ধস্ত তো ওর ভিতরে যে কীহচ্ছে সত্যিই জানি না.. এভাবে একা করে গুমড়ে কতদিন থাকা যায় বলুন তো….!

আবির-> হুম্ ..হিয়ার মনে ঠিক কী কী বলার আছে তা জানতে হিয়ার সাথে কথা বলতে হবে আমায়,কিন্তু আজ তো ওষুধের জন্য ঘুমোচ্ছে.. আমি বরং কাল আসব…ও আর ওর প্রিয় খাবার কী??

অনিমেষবাবু-> প্রিয় খাবার.. ইয়ে মানে শিমুই-এর পায়েস.. কিন্তু কেন?

আবির-> সে না হয় পরে জানবেন.. আজ আসি|

আবির-> আসতে পারি?

হিয়া-> কে? কে? কে ওখানে??

আবির-> আর যেই হই না কেন ভূত কিংবা রাক্ষস নই, আদ‍্যপ্রান্ত মানুষ… আপনার মতই..

হিয়া-> আপনি …আপনি আমার ঘরে কী করছেন??আপনিও নিশ্চই ওদের সাথে যুক্ত তাই না? মারতে এসেছেন আমায় তাই তো??

[গল্পকথক-> হাতে রাখা আঁকার খাতাটা ফেলে রেখে আবিরের দিকেতেড়ে আসল হিয়া.. আর ঠিক তখনই আবির তার হাতে রাখা শিমুই-এর পায়েসের টিফিন বক্সটা খুলে ধরল হিয়ার সামনে… পায়েস-এর গন্ধ পেয়েই হিয়ার পা থমকে গেল, সে বলল..]

হিয়া-> শিমুই-এর পায়েস..! আমার জন্যে?

আবির-> হুম্ আপনার favorite তো নিন..

হিয়া-> কিন্তু.. কিন্তু.. আপনাকে তো আমি চিনি না.. আর আপনি যদি এর মধ্যে কিছু মিশিয়ে আমাকে মেরে ফেলেন তখন..!না ..নাহ্ আ..আমি খাব না ওটা…!

আবির-> আচ্ছা ..এই নিন আমি খাচ্ছি আগে…

নিন এবার বিশ্বাস হল তো?নিন এবার..

[গল্পকথক-> শেষপর্যন্ত বিশ্বাস করে আবিরের কাছ থেকে পায়েস নিয়ে বাচ্চাদের মত আনন্দের সাথে খেতে লাগল হিয়া…

হিয়ার ঘরটা বেশ বড় নয়..তবে বেশ অগোছালো সেটা হয়তো ওর স্বভাবের জন্যেই..ঘরের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কিছু অসমাপ্ত আঁকা.. হয়তো মনের ভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে বার বার ব‍্যর্থ হয়েছে হিয়া.. ঘরের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে হিয়ার আকাঁর খাতাটা হাতে নিল আবির.. সেখানেও একটা অসমাপ্ত আকাঁ…তবে যেটুকু বোঝা যাচ্ছে তাতে এই দাড়ায় যে একটা মেয়ে অন্ধকারে গুমরে বসে আছে… হয়তো নিজেকেই ব‍্যক্ত করতে চাইছে হিয়া এর মাধ্যমে…]

হিয়া-> আপনি কে বললেন না তো?

আবির-> আমি? বন্ধু…আপনার বন্ধু..

হিয়া-> আমার বন্ধু? আ..আমার তো কোনও বন্ধু নেই… ও..ওরা সবাই খুব বাজে.. আ..আমাকে পাগল বলে… আমি পাগল নইইইই! আর আমার বন্ধুও নেই কোনও…

আবির-> কে বলেছে আপনি পাগল?এই পৃথিবীতে কেউই পাগল হয় না.. হ‍্যাঁ কিছু মানুষ হয় যারা আমাদের মত করে ভাবে না একটু বেশি ভাবে.. একটু অন‍্যরকম করে ভাবে.. আর আমরা সেই ভাবনাগুলোকেই বুঝতে পারিনা… পাগল নয় কেউই..শুধু সবাই তো একরকম হয় না… কিছু মানুষ আলাদা আমাদের থেকে.. একটু অন‍্যরকম.. এই যা.. আর রইল বন্ধু..কে বলেছে আপনার বন্ধু নেই?..এই তো আপনার বাবা, মা, আর আপনি নিজে…বন্ধু নয় আপনার?আর আশেপাশের যাদের বন্ধু বলছেন তারা বেশিরভাগই আপনার classmates বা partymates ‘বন্ধু’ বেশি কেউই নয়..আর আপনার মত করে ভাবতে গেলে ওইরকম বন্ধুর তালিকাটা আমারও খুব কম..তাই আমরাই না হয় বন্ধু হই একে অপরের?

হিয়া-> আপনি খুব ভালো জানেন.. ও..ওদের মত বাজে নন…ওরা জানেন কীরকম ভাবে তাকায় আমার দিকে…আমার পাশে কেউ বসে না… আগে এরকম ছিল না… হঠাৎ যে কী হল কে জানে.. ও..ওরা জানেন তো সবাই আমাকে পাগল বলে.. হাসে আমাকে দেখে… আমি পাগল নইইই…আমিও সবার মত…

[গল্পকথক-> কথা গুলো বলতে বলতে মাথার দু’পাশ ধরে বসে পড়ল হিয়া.. বোঝা গেল মাথা যন্ত্রণায়  ছিড়ে যাচ্ছে তার…! তাই topic change করে আবির বলল…]

আবির-> পায়েসেটা কেমন হয়েছে বললেন না তো?

হিয়া-> ও হ‍্যাঁ দারুণ হয়েছে…

আবির-> তাহলে কি আমরা বন্ধু হতে পারি? তাহলে মাঝেমধ্যে শিমুই-এর পায়েসের treat পেতে পারেন..

[গল্পকথক-> আবিরের কথায় হেসে সম্মতি জানালো হিয়া, ঠিক যেন নিজের মত কাউকে খুঁজে পেয়েছিল হিয়া এতদিনে..]

অনিমেষবাবু-> কিছু বুঝলেন আবিরবাবু?

আবির-> পুরোটা বুঝতে না পারলেও এটুকু বুঝলাম যে ও একটা মানসিক রোগে আক্রান্ত…! আপনার কথা মত তো ছোট থেকে ও বাকিদের মতই ছিল.. তার মানে কিছু সাময়িক মানসিক অবসাদ বা বিষণ্ণতা দীর্ঘদিন ওর মধ্যে চাপা থেকে আজ এই পরিণাম… এতে ও সুস্থ ব‍্যক্তি র মতই থাকলেও মাঝে-মধ্যেই সব ভুলে যায়,সবসময় একটা হ্যালুসিনেশন -এর মধ্যে থাকে যেন কেউ ওর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে.. ওই মেরে ফেলবার কথাগুলো হয়তো এরই জন্য.. এছাড়া একা থাকা নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, অগোছালো থাকা… সবই এর জন্য… তবে কীসের জন্য এই বিষণ্ণতা ওর সেটা ওর মনের ভিতরে আজও রয়েছে.. সেটা প্রকাশ করতে পারলে হয়তো অনেকটাই ভালো হত…!কিন্তু এই ক্ষেত্রে মনের কথা হয়তো অত সহজে বলবেনা ও…!

[গল্পকথক-> আবিরের কাছ থেকে কথাগুলো শুনে খানিকটা ভেঙে পড়লেন অনিমেষবাবু… খানিকটা নিরুপায় হয়ে বললেন..]

অনিমেষবাবু-> তার কোনও উপায় নেই আর?!

আবির-> হুম্..আগে ওর খুব কাছের বন্ধু হতে হবে… যে ওর দুর্বল জায়গাগুলোয়  আঘাত দেবে না, ওর মত কাউকে খুঁজে পেলে হয়তো মনের সব কথা ও বলবে একদিন…!এখন শুধু অপেক্ষা করতে হবে… !

[গল্পকথক-> আবিরের কথায় কিছুটা আশ্বস্ত হলেন অনিমেষবাবু….

তারপর থেকে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন,আস্তে আস্তে হিয়ার পছন্দ অপছন্দ জেনে ওকে হাসিয়ে আনন্দে রেখে আরও ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে আবির ও হিয়া…প্রথমের দিকে আবিকেও দু-একদিন ভুলে যেত হিয়া, তবে আস্তে আস্তে সেটা কমেছে… আপনি থেকে আজ তুমিতে এসে দাড়িয়েছে ওদের বন্ধুত্ব…এভাবেই হঠাৎ একদিন আবার হিয়ার অবস্থা খারাপ হয়ে ওঠায় তৎক্ষণাৎ অনিমেষবাবু খবর দেন আবিরকে…আবির এসে হিয়ার ঘরে যেতেই হিয়া আবিরের হাত শক্ত করে আকঁড়ে ধরে বলে…]

হিয়া-> ও..ওরা..ওরা..! আমায় মেরে ফেলবে…! বাঁচতে দেবে না আমায়…!..আ..আ..আমি পাগল নই…পাগল নই আমি…!

আবির-> কে বলেছে তুমি পাগল..? আর কারা তোমায় মারবে..? এই তো আমি আছি না শক্ত করে তোমার হাতটা ধরে.. কেউ আসবে না তোমার কাছে…

হিয়া-> তুমি যাবে না তো আমাকে ছেড়ে?…ও..ওরা সবাই আমাকে পাগল বলে কেন?আমি পাগল নই.. পাগল নই আমি…! আমিও স্বাভাবিক….!!

অনিমেষবাবু-> আসলে আজকে আবার দিদিকে কী বলেছিল হিয়া, তাই জন্য দিদি রাগের বশে আবার…!

আবির-> কে বলে তোমায় পাগল, আমি বলেছি না কেউ পাগল নয়..আর আমি তোমার বন্ধু আছি তো… কেউ আসবে না তোমাকে মারতে..

[গল্পকথক-> আবিরের কথায় যেন কিছুটা আস্বস্ত হল হিয়া… এদিকে আবির যেন কিছুটা অন‍্যমনষ্ক হয়ে গেল বেশ কয়েক বছর পর আবার তার হাতটা এভাবে শক্ত করে কেউ ধরল, ভরসা চাইল তার কাছে, সমস্ত স্মৃতিগুলো যেন আবার আঘাত করতে থাকল আবিরের মনের ভেতর…জানলার সামনে গিয়ে পকেট থেকে একটা সিগারেট বার করল..সিগারেটটা ধরাতে যাবে এমন সময় হিয়া বলে উঠল…]

হিয়া-> তুমি ওই বাজে জিনিসটা কেন খাও বলোতো বন্ধু? জানো..ওটা খেলে না বুকের ভেতরটা ঝাঁঝরা হয়ে যায়…

আবির-> জানি..!

হিয়া-> তবুও কেন খাও ওই বাজে জিনিসটা..?

আবির-> কিছু জিনিস, কিছু স্মৃতি ভুলে যেতে..!

হিয়া-> ভালোবাসার স্মৃতি? পারবে ভুলে যেতে?উল্টে এই নেশার জন্য যতবার ওই বাজে জিনিসটা খাবে ততবার বার বার করে মনে পড়বে পুরোনো স্মৃতিগুলো…!

[গল্পকথক-> হিয়ার কাছ থেকে এরকম প্রশ্ন বা উত্তর কোনওটাই আশা করেনি আবির, তবে এটা শুনে আবির বুঝেছিল এবার হয়তো হিয়ার মনে এতদিনের জমে থাকা কথা জানা যেতে পারে কোনওভাবে, তাই সিগারেটটা ফেলে দিয়ে আবির বলল..]

আবির-> তুমি কী করে বুঝলে যে আমি ভালোবাসার স্মৃতি র কথাই বলছি?তুমিও কী কোনওদিন ভালোবেসেছো কাউকে?

হিয়া-> ভালোবাসা?!..হ‍্যাঁ বেসেছিলাম একসময় একজনকে….!

আবির-> কে সে?আর..আর বেসেছিলে কেন?এখন আর ভালোবাসো না?

[গল্পকথক-> আবির যেন বুঝতে পারছিল এই হিয়ার মনে জমে থাকা কথা নিংড়ে বার করার এটাই হয়তো সঠিক সময়..হয়তো এতে অনেকটা শান্তি পাবে হিয়া..]

আবির-> কী হল বলো হিয়া…!কাকে ভালোবেসেছিলে আর এখন ভালোবাসোনাই বা কেন?

হিয়া-> রাজ…!

খুব..খুব ভালোবাসতাম জানো ওকে.. খুব.. সেই ছোট্টবেলা থেকে… ও..ও ভালোবাসতো আমাকে জানো..ও ভালোবাসতো.. হ‍্যাঁ বাসতো তো..যখন ও বাইরে পড়তে গেল..ত..তখন..আমাকে বলে গিয়েছিল.. অপেক্ষা করবি তো আমার জন্য.. আর..আর..আমিও বলেছিলাম হ‍্যাঁ..হ‍্যাঁ করব..কি..কিন্তু….!

আবির-> কিন্তু কী ? বলো হিয়া…

হিয়া-> কিন্তু.. ও যখন ফিরে এল..আর আমাদের বিয়ে ঠিক হল…তারপর…

আবির-> তারপর?

হিয়া-> তারপর ওই বন্ধ ঘরের ভিতর….

হিয়া-> কি হল রাজ..? বাইরে সবাই তো enjoy করছে,dance করছে.. তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এই ঘরে নিয়ে এলে কেন?..চলো না বাইরে যাই..সবাই খুঁজবে তো আমাদের..

রাজ-> এখানে নিয়ে এলাম তার কিছু কারণ আছে.. কিছু কথা বলার আছে তোমাকে..

হিয়া-> বাবাঃ..!এমন কি কথা, যার জন্য এখানে নিয়ে এলে, সবার সামনে বলা যেত না?দুদিন পর আমাদের বিয়ে, তো এখন যদি কেউ জানতে পারে আমরা সবাইকে লুকিয়ে এভাবে কথা বলছি তো প্রচণ্ড tease করবে, তো please চলো বাইরে যা বলার ওখানে বলবে…

রাজ-> আমি এই বিয়েটা করতে পারবপারব না হিয়া..

হিয়া-> r u kidding me? দেখো এসব ফালতু  jokes এখন একদম ভালো লাগছে না আমার আর আমি party moodটাকে নষ্ট করতে চাই না তো please চলো এবার বাইরে…

রাজ-> তুমি কী একবার বললে বোঝো না?বললাম তো এই বিয়ে আমি করতে পারবপারব না..And I’m not joking at all..

হিয়া-> এরকম করে কথা বলছ কেন তুমি রাজ? দেখো আমরা দুজনে দুজনকে ভালোবাসি আর বাড়ি থেকেও রাজী,তবে বিয়েতে সমস্যা কোথায়?!

রাজ-> কে ভালোবাসে? আমি?!হাসালে  Seriously..কবে কিনা ছোটোবেলায় কী না কী বলেছিলাম মনেও নেই আমার.. আর সেটা নিয়ে এখনও বসে আছ তুমি? আবার বিয়ে অবধি ও টেনে নিয়ে এসেছো সেটাকে…

হিয়া-> মা..মানে.. কী বলছ তুমি এগুলো?..তুমি তো আমায় ভালোবাসো আ..আর..তুমিই তো আমাকে বলেছিলে অপেক্ষা করবে আমার জন্য.. তো..তো..এখন এসব কি রাজ..?!আমি just কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা.. Please রাজ..!

রাজ-> oh! Just shut up yarr!..কবে কোন যুগে কী বলেছি সেসব নিয়ে এখনও বসে থাকতে হবে?Be modern yarr..ওসব শুধু ছোটোবেলার খামখেয়ালি ছিল just আর কিচ্ছু না…!

হিয়া-> মানে…!?

রাজ-> মানে এই যে ওসব বিয়ে ফিয়ে এখন আমি করতে পারব না..আর তোমাকে তো নয়ই..হ‍্যাঁ কিন্তু তোমাকেও ছাড়তে পারবপারব না.. তাই আজকের রাতটা শুধু তোমার আর আমার হোক.. তুমিও তো আমাকে ..কী যেন বলে..ওই ভালোটালো বাসো..তো এই রাতটায় আমাকেও বাসতে দাও…তারপর বাড়িতে কিছু একটা বলে বিয়ে ভেঙে দেব..আরে ওসব বিয়ে,সংসার সব backdated yarr..Be updated …Let’s enjoy yarr…

[গল্পকথক-> কথাগুলো বলতে বলতে যেন হিয়ার দম বন্ধ হয়ে আসছিল.. মনে হচ্ছিল যেন গলার কাছে কিছু একটা আটকে রয়েছে….ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে সব জমে থাকা কথাগুলো…]

হিয়া-> জানো তো বন্ধু সেদিন না..রাজকে কেমন অন‍্যরকম দেখাচ্ছিল…পশুর মত যেন এগিয়ে আসছিল আমার দিকে…!ছোট থেকে যে রাজ কে দেখে অভ্যস্ত আমি.. যাকে আমি এতটা.. ভালোবেসেছিলাম..এত স্বপ্ন দেখেছিলাম যাকে নিয়ে… তাকে যেন অনেকটা অচেনা লাগছিল সেদিন…!একটানে জামা খুলে হিংস্র পশুর মত ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ওপর..আ..আমাকে শিকার করার লালসা দেখেছিলাম সেদিন ওর চোখে..শত চেষ্টা করেও ওর ওই পাশবিক শক্তিকে হারাতে পারিনি আমি..!যাতে চিৎকার করতে না পারি তাই নিজের ঠোঁট দিয়ে ঠেসে দিয়েছিল আমার মুখটা…. সারাটা শরীর খুবলে খেয়েছিল জানো সেইদিন..!কী অসহ্য যন্ত্রণাটাই না হচ্ছিল আমার.. কিন্তু ওর ওই লোভ লালসর কাছে আমার যন্ত্রণা বার বার হেরে গেল…!

লালসা পূরণের পর সেদিন অনেক রাতে বাড়িতে ছাড়তে এসেছিল আমায়..আর মনে করিয়ে দিয়ে গিয়েছিলগিয়েছিল বিয়ে ভাঙবার কথা..!

পরে শুনেছিলাম নাকি আ..আমার মানসিক রোগ আছে বলে বিয়ে ভেঙে দিয়েছিল ওরা..!

এতদিন লজ্জা, ঘৃনা, ভয়ে কাউকে বলতে পারিনি জানো এগুলো..!মেনেও নিতে পারিনি সবটা.. খুব..খুব কষ্ট হত জানো..আর সবাই না আমাকে পাগল বলতো…আমি পাগল নইই…!

[গল্পকথক-> কথাগুলো বলে আবিরকে জড়িয়ে ধরে সেদিন প্রচণ্ড কেদেছিল হিয়া… হয়তো সেদিনের পর আবার আজ প্রাণ খুলে কেঁদেছিল সে..নিংড়ে বের করে এনেছিল নিজের ভেতরে জমে থাকা সমস্ত কষ্টটা…এতদিনের জমে থাকা কথা এতদিনে বলতে পারল সে কাউকে..!

হয়তো প্রত‍্যেকের মনেই চাপা থাকে কিছু কথা, কিছু পুরনো, ভুলতে না পারা কষ্ট..সেইসমস্ত কথা আর স্মৃতি নিয়ে robinson crusoe-র মত নিস্প্রাণ island-এ ঘোরে তার মনের কথা শোনার লোক ‘friday’ -র খোঁজে… হয়তো কেউ খুঁজে পেয়ে যায় সেই মানুষটাকে যাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারবে সমস্ত কষ্টটা..আবার হয়তো কেউ খুঁজে পায় না… যেমন আবির পায়নি…!

সেদিনের হিয়ার কথা শুনে নিজের কিছু পুরোনো কথার সাথে হয়তো কিছু মিল পেয়েছিল আবির…বাড়িতে এসে পুরোনো album খুলে আবার পুরনো দিনগুলোয় ফিরে গিয়েছিল সেদিন…

সময়টা তখন বর্ষাকাল..আবির তখন সবেমাত্র H.s pass করেছে..নতুন college-ঢোকার প্রস্তুতি চলছে তখন..এমনি এক বর্ষার বিকেলে বাজ পড়া শুরু হতেই মায়ের আদেশে দোতলার বারান্দায় মেলতে দেওয়া জামাকাপড় তুলতে গিয়ে আবির দেখল তাদের বাড়ির ঠিক opposite-এ বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া তিনতলা বাড়িটার দোতলার বারান্দায় একটা মেয়ে একটা বই হাতে নিয়ে পায়চারি করছে.. দেখে মনে হল আবিরেরই বয়সের, কাঁধ অবধি কাটা কোঁকড়ানো চুল, নাকের ওপর আটা rimless চশমা আটা..দেখে যেন কেমন স্কুলের রাগী english madam miss.rebeka-র কথা মনে পড়ে গেল আবিরের…২ বছর হল ওই ফ্ল্যাটে কেউ থাকে না… তবে কী এরা নতুন থাকতে এসেছে?আবিরের এই ভালোবাসার বারান্দায় এসে ওই রাগী miss rebeka-র মুখ দেখতে হবে এখন থেকে…?!এইসব ভাবতে ভাবতে যখন হাতে জামাকাপড়ের স্তূপ আর রাগ প্লাস ক‍্যাবলা এমন একটা মেশানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে তখনই ওদিক থেকে মুখের ওপর থেকে বই নামিয়ে ভেসে এল সোজা সাপটা প্রশ্ন…]

শ্রী-> ওরকম ক‍্যাবলার মত তাকিয়ে আছ কেন?মেয়ে দেখোনি আগে?

আবির-> ইয়ে না মানে…!

[গল্পকথক-> Miss. rebeka-র কাছ থেকে হঠাৎ এইরকম সোজা সাপটা প্রশ্ন পেয়ে হাত থেকে জামাকাপড় পড়ে সে এক যাচ্ছে তাই অবস্থা আবিরের…

হ‍্যাঁ..এটাই ছিল বৃষ্টির বিকেলে আবির আর শ্রী-র প্রথম দেখা..প্রথম দেখায় miss.rebeka ভেবে থাকলেও পরে কিন্তু এই miss.rebeka-ই হয়ে উঠেছিল তার best friend, প্রথমে দুর্ভাগ্যবশত আর পরে সৌভাগ্যবশত একই কলেজের দুটো আলাদা stream ছিল দুজনের..আবিরের psychology আর শ্রী-র botany, কলেজ যাওয়া আসা থেকে শুরু করে দুই বাড়ির সব অনুষ্ঠানে দুজনে সবসময় একসাথে.. আবির হয়তো ভাবতেও পারেনি কোনওদিন যে প্রথম দিন বৃষ্টির বিকেলে যাকে দেখে রাগ হয়েছিল ওর ..তারপর বৃষ্টির বিকেলগুলোতে বারান্দায় তাকেই খুঁজতো আবির.. বৃষ্টি হলেই ওদের দুজনের বারান্দায় আসা confirm..একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকা মুখ ভাঙানো, অনর্গল কথা বলা এভাবে সময় যে কখন কেটে যেত কেউই বুঝত না…এভাবে কেটে গেল 2 বছর..2nd year pass করে 3rd year শুরু হবে just আর কদিন পর…এরকম একদিন বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ আবিরের ফোনটা বেজে উঠল…]

আবির-> হ‍্যাঁলো..বল শ্রী..কোথায় তুই ? বারান্দায় এলি না কেন আজ?কীরে বল..চুপ করে আছিস কেন?

শ্রী-> হয়েছে প্রশ্ন শেষ?শেষ হলে একবার নিচে রাস্তায় তাকা, আমি বাসস্ট্যান্ডে দাড়িয়ে আছি তাড়াতাড়ি আয় তুই… কথা আছে..

আবির-> ওখানে কী করছিস?..হ‍্যালো হ‍্যালো শ্রী….

[গল্পকথক-> ওপাশ থেকে ততক্ষণে শ্রী ফোন রেখে দিয়েছে, কী হচ্ছে কিচ্ছু বুঝতে না পেরে তাড়াতাড়ি রাস্তায় নেমে বাসস্ট্যান্ডে দৌড়ল আবির…]

আবির-> উফফ্ কী যে করিস না তুই.. এই বৃষ্টির মধ্যে এখানে ডেকে পাঠালি কেন?এখন তো বাসও আসছে না কোনও ..কোথায় যাবি এর মধ্যে?..আর তাড়াহুড়োতে ছাতাটাও আনতে ভুলে গেছি… ভিজেই গেলাম পুরো.. কী বলবি বল এবার…

শ্রী-> ভালোবাসিস আমাকে??

আবির-> অ্যাঁ.. মানে হ‍্যাঁ..মানে না…ইয়ে না মানে..!

শ্রী-> কী অ্যাঁ অ্যাঁ করছিস…ভালোবাসিস কিনা বল এক্ষুনি..

আবির-> এক্ষুনি.. মানে কী..কী..বলছিস তুই..

শ্রী-> উফফফ্..ভালোবাসিস যখন এতদিন বলিসনি কেন শুনি…??

আবির-> তুই যদি রেগে যাস তাই জন্যেই তো বলিনি…আর তুই ভালোবাসিস কিনা তাও তো বুঝিনি…

শ্রী-> শোন..তোর এই miss. rebeka না এতটাও রাগী না হ‍্যাঁ..আর এতদিন ধরে সাইকোলজি নিয়ে কী পড়ছিস হ‍্যাঁ..এতদিন ধরে বৃষ্টির মধ্যে,রাস্তা ঘাটে, college cantine-এ, তোর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকি..তোর কী পছন্দ কী অপছন্দ সবার থেকে বেশি জেনে বসে আছি… কোনওদিন কলেজ না গেলে বা জ্বর হলে বারবার ফোন করে জ্বালাই, খবর নিই…এরপরও বুঝিসনি গাধা..! যাই হোক এই বৃষ্টিতে বারান্দায় কথা আর ভালো লাগছে না..আমার হাত ধরে সারাজীবন বৃষ্টিতে ভিজতে রাজী আছিস ?

আবির-> mrs. rebeka-র সাথে সারাজীবন?ভেবে দেখতে হবে.. দাঁড়া..

শ্রী-> ধুৎ..ভাল্লাগে না…

[গল্পকথক-> অঝোর ধারায় বৃষ্টির মধ্যে miss. rebeka আর ক‍্যাবলাকান্ত মানে শ্রী আর আবির দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছিল সেদিন.. হাত ধরে বৃষ্টিতেও ভিজেছিল অনেকক্ষণ…

এভাবে শুরু ওদের প্রেম..২ বছর কেটে গেল এইভাবে বৃষ্টিতে ভিজে, coffe dates, ঘুরতে যাওয়া, অষ্টমীর অঞ্জলি, অফুরন্ত কথা আর uncountable memories-এর মধ্যে দিয়ে.. শ্রী-র পড়া শেষ হল… আবিরের তখনও এক বছর বাকি…]

আবির-> কী রে শ্রী আজ এত urgently ডেকে পাঠালি যে?কিছু হয়েছে?

শ্রী-> মনটা ভালো নেই রে…!

আবির-> কে্ন শুনি.. Miss. rebeka-র কী হল আবার?

শ্রী-> আরে তোকে বলেছিলাম না বাবা আগে একদিন out of kolkata একটা job- এ আমার জন্য apply করেছিল.. তো সেটার কাল confirmation letter এসেছে..Next month থেকে joining..

আবির-> woww! That’s great!এত ভালো একটা খবর আর তুই কিনা আমাকে Treat না দিয়ে, এখানে mood off করে বসে আছিস?

শ্রী-> ধুরর্..Out of kolkata job yarr..আর রোজ রোজ দেখা হবে না তোর সাথে.. বৃষ্টিতে ভেজা হবে না, ঘুরতে যাওয়া হবে না একসাথে..!

আবির-> হ‍্যাঁ তো কিছু বছর না হয় long distance relationship-এই থাকলাম.. Problem কী …অনেকেই তো থাকে..Then settle হয়ে আবার আগের মত..

শ্রী-> ধুৎ..ও যারা থাকে থাকা..আমার ওসব মোটেই পোষায় না…

আবির-> হাতটা ধর আমার..

শ্রী-> কেন?

আবির-> আরে বাবা…ধরই না..শক্ত করে ধরবি হ‍্যাঁ..

শ্রী-> আচ্ছা নে ধরলাম.. এবার?

আবির-> ভরসা করিস তো আমায়?

শ্রী-> অনেকককটা…

আবির-> সবসময় আমার ঠিক কিংবা ভুলে এভাবে শক্ত করে হাতটা ধরে রাখতে পারবি যে কোনও পরিস্থিতিতে?

শ্রী-> খুব পারব..আর আমি ধরব না তো আর কে ধরবে শুনি..আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে কান ধরে টেনেও আনতে পারব..

আবির-> তাহলে এত মন খারাপের কি আছে madam? কটা বছর থাক না দূরে, contact -এ তো থাকবই আমরা, তাছাড়া video call তো আছেই, আর মাঝে মধ্যে তো আসবিও এখানে..আর কে বলতে পারে কদিন পর আমিও চাকরি পেয়ে ওখানেই চলে গেলাম হয়তো…

শ্রী-> রোজ ফোন করবি? Promise কর..

আবির-> পাক্কা promise..

[গল্পকথক-> দেখতে দেখতে চলে আসল শ্রী-র joining date, যাবার দিন শ্রী-র মা বাবার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ট‍্যাক্সি থেকে শুরু করে স্টেশন অবধি একসাথে ছিল ওরা দুজন.. ট্রেন স্টেশন ছাড়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একে অন্যের দিকে তাকিয়ে ছিল আবির ও শ্রী…

তারপর শুরু হল ওদের long distance relationship, promise অনুযায়ী রোজ ফোন, রাত জেগে অফুরন্ত কথা.. সবই চলছিল… কিন্তু ৭-৮ মাস পর থেকেই যেন সব কেমন পাল্টে যেতে থাকল..ফোনটা রোজ করা হলেও, কথা বলার time-টা কমতে থাকে আস্তে আস্তে..ফোন করলেই নয়তো busy আছি পরে কথা বলছি, বা tired লাগছে কাল কথা বলি?..এসব বলে ফোন রেখে দিত শ্রী..আবির ও তাই ফোন ও করতোনা খুব একটা… ওদিক থেকেওতেমন আসত না ফোন…

এভাবে কেটে গেল 2 বছরেরও বেশি.. এর মধ্যে শ্রী আর আসেনি কলকাতায়, আবিরও সবে একটা hospital-এ junior psychologist হিসেবে join করেছে… সেবার পূজোতে এতদিন পর family-র সাথে কলকাতায় এসেছিল শ্রী..খবর পেয়েই সপ্তমী-র দিনই শ্রী-র বাড়িতে চলে গিয়েছিল আবির..]

আবির-> কীরে তুই হ‍্যাঁ… এতদিন পর এলি..ফোন করে তো বললিও না আর নিজে থেকে জানালি না…? রমেন কাকুর কাছ থেকে খবর পেতে হল আমাকে… আর ফোন করিসনি কেন এতদিন ঠিকঠাক করে..?Miss. rebeka..এত্ত busy হয়ে গেছে নাকি?কী রে..বল কিছু.. সেই কখন থেকে আমিই বকে যাচ্ছি…Hlww….

[গল্পকথক-> আবিরের এই সমস্ত প্রশ্ন শেষ হতেই শ্রী একটা বিয়ের কার্ড এগিয়ে দিল আবিরের দিকে.. ! তাতে penography করে লেখা Sree weds Sounak…!]

আবির-> কী..কী…এসব…!??

শ্রী-> মা,বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে..! next month-এর ২৫ তারিখ…!

আবির-> মা..মানে..তুই কিছু বললি না কাকু কাকিমাকে?… yarr i love you..!এসব কী..!

শ্রী-> বলেছিলাম.. ! কিন্তু জানিস ই তো তুই বাবা মা তোকে অতটা পছন্দ করত না..তো বার বার বলা সত্ত্বেও কিচ্ছু শুনল না..আর যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সৌনক.. সৌনক রায়চৌধুরী..আমার office collegue..Office -এ join হবার কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধু হয়ে উঠি আমরা.. তোর কথা ভেবে যখন খুব মন খারাপ করতাম তখন দারুন ভাবে cheer up করত আমাকে.. বাবা মা-রও বেশ ভালো লেগিয়েছিল ওকে..But আমি কখনওই বন্ধুর বেশি ভাবিনি.. কিন্তু..কিন্তু সৌনকই একদিন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে আমাদের বাড়িতে…

আবির-> আসে মানে…? এল আর তুই হ‍্যাঁ করে দিলি…?! মানে আমাদের promise-এর কোনও দামই নেই তোর কাছে…?

শ্রী-> তোর সত্যিই মনে হয় আমি হ‍্যাঁ করে দিয়েছিলাম এত সহজে..!?

বাবা মা রাজী হলেও আমি কোনওমতে রাজী ছিলাম না… তোর কথা বারবার বলেছি but…!

বাবার যে heart-এ problem ছিল সেটা তো তুই জানিসই.. তো এরই মধ্যে বাবার heart attack হয়…আর doctor রা বলে যে বাবাকে বেশি  pressurized না করতে তাহলে আরও বড় বিপদ হতে পারে ভবিষ্যতে…!

আবির-> এত কিছু হয়ে গেল আর..আর..তুই আমাকে কিচ্ছু জানালিও না…?বললিও না কিছু একবার ও??!!

শ্রী-> কী বলতাম আমি?যাকে আমি ভালোবাসি তাকেই নিজে থেকে ফোন করে বলতাম যে অন্য কারোর সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?..

আর যদিও বা বলতাম তবুও কী হত? খুব বেশি হলে বাবাকে আরো একবার জোর করতাম দুজন আর তারপর বাবার অবস্থা আরো খারাপ হত তাই তো…?

যাই হোক.. এমনিতেই মন ভালো নেই.. নেহাত সৌনক-রা কোনওদিন কলকাতার পূজো দেখেনি তাই বাবা জোর করে নিয়ে এল এখানে… তার সাথে বিয়ের নিমন্ত্রণ ও করবে কিছু…দশমীর দিনই বিকেলে চলে যাব..তারপর ওখানেই settle..আর হয়তো আসব না এখানে…!

আবির-> আ..আর.. কোনওদিনও আসবি না..?!

[গল্পকথক-> আবিরের এই প্রশ্নের পর কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতা, দুজনের চোখই যেন অনেক কিছু বলতে চাইছিল, শুনতে চাইছিল অনেক কিছু.. কিন্তু কিছুই আর বলা হয়ে উঠল না…! আবিরের চলে যাবার সময়..হয়তো শ্রী পিছু ডাকে একবার দাঁড় করাতে চেয়েছিল আবিরকে…কিন্তু..! সব কিছু হয়তো মন থেকে চাইলেও হয় না…]

[গল্পকথক-> সেদিনের পর, পর পর দুদিন আর কোনও কথা বা দেখা হয়নি ওদের মধ্যে.. হয়তো কী বলবে..বা কী বলা ঠিক হবে সেটাই বুঝে উঠতে পারেনি দুজন..!হ‍্যাঁ তবে এইকদিনে এটা realise করে আবির যে..সবকিছু জেনে এত সহজে সে সব হারিয়ে যেতে দেবে না.. একবার.. অন্তত একবার হলেও ওরা দুজন মিলে কাকু, কাকিমাকে বুঝিয়ে দেখবে, একবার… দেখাই যাক না ভালোবাসা সত্যিই এত ঠুনকো কি না..?

তাই দুদিন অভিমানের পর নবমীর দিন রাতে আবির ফোন করল শ্রী-কে..রাত তখন ১১টা…তবে ফোনের ওপারে শোনা গেল..

(The number you’re going to reach is currently switched off. Please try later…)

এরপরও চললো ফোন…তবে প্রতিবারই একই উত্তর…সাধারণত শ্রী ফোন switched off রাখে না,আর charge low থাকে না ফোনে.. এটা আবিরের ভালো করেই জানা… তাই এত রাতে ফোন switched off পেয়ে খানিকটা চিন্তিত হয়ে উঠল আবির… এইসময় বাইরে নামল আকাশভাঙা বৃষ্টি…পুরোনো সেই অভ‍্যাসের মত আজও আবির দৌড়ে গেল বারান্দায়…কিন্তু ওদিকে আজ কেউ এল না..এত রাতে শ্রী-এর বাড়ি যাওয়া ঠিক হবে না ভেবে বারান্দাতে বসেই অপেক্ষা করতে থাকল আবির…

ঘড়িতে তখন রাত ৩টে..তখনও বৃষ্টি হচ্ছে পুরোদমে.. বারান্দায় বসে তখনও ফোনের এপারে অপেক্ষায় আবির আর ওপার থেকে ভেসে আসা একই উত্তর…! এই সময় হঠাৎ আবির দেখল বাসস্ট্যান্ডের সামনে এসে দাড়িয়েছে একটি সাদা রঙের বড় গাড়ি.. অঝোর ধারায় বৃষ্টির মধ্যেও স্পষ্ট দেখল আবির, গাড়ি থেকে নামল শ্রী আর ওর মত বয়সেরই একটা ছেলে… হয়তো এই সৌনক.. তাহলে কি এতক্ষণ সৌনকের সাথেই ছিল শ্রী?তবে ফোন কেন switched off ছিল ওর?এতক্ষণে কি সেটাও খেয়াল করেনি শ্রী..?এইসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ আবির দেখল গাড়ি থেকে নেমে খুব কাছাকাছি এসেছে ওরা… জড়িয়ে ধরা থেকে দুটো ঠোঁটের বাঁধন..কোনওটাই আবিরের চোখ এড়াল না…!

সেদিন রাতে বৃষ্টি আর থামেনি… আবিরের সাথে তারাও যেন অঝোর ধারায় ঝরছিল… পাগলের মত মেঘের গর্জনগুলো যেন আবিরের মতই চিৎকার করে বলতে চাইছিল যে সে পারবেনা শ্রীকে ছাড়া থাকতে… প্রচণ্ড ভালোবাসে সে তাকে…. হয়তো আবিরও সেই রাতে খুঁজেছিল একজন friday-কে যে কিনা তার মন থেকেও নিংড়ে সব কষ্ট বার করে আনতে পারবে… কিন্তু পায়নি সে…সেই বৃষ্টিভেজা রাতে ছোট্টবেলার মত প্রচণ্ড কেঁদেছিল আবির.. অনেক কিছু বলতে চেয়েছিল শ্রীকে কিন্তু…!

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙে শ্রীর ফোন পেয়ে..]

শ্রী-> হ‍্যাঁলো আবির বল…আসলে কাল রাতে switched off হয়ে গিয়েছিল ফোনটা তাই খেয়াল করিনি..কি বলবি বল..আমাদের আবার একটু পরই বেরোতে হবে…

আবির-> ফোন যে switched off হয়ে গিয়েছিল খেয়াল করিসনি তুই?আগে তো তোর ফোন কখনও switched off থাকত না..

শ্রী-> আরে ..কাল ওই সৌনকদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে গিয়ে photos, videos তোলা, তারপর সৌনকরা যে হোটেলে আছে রাতে সেখানে dinner party ও ছিল তাই আর দেখা হয়নি, আর বাড়ি ফিরতেও লেট হয়ে যায় তাই…

আবির-> কাল রাতে তোকে সৌনক বাড়ি ছাড়তে এসেছিল?

শ্রী-> হ‍্যাঁ..party করে অনেক রাত হয়ে যায় মা, বাবা আগেই চলে এসেছিল… but তুই জানলি কী করে..?

আবির-> নাহ্..আসলে অনেকক্ষণ ফোনে পাচ্ছিলাম না, আর কিছু বলার ছিল তাই বারান্দায় বসে অপেক্ষা করছিলাম.. হয়তো আগের স্বভাবের মতই বৃষ্টি হলে বারান্দায় আসবি…কিন্তু দেখলাম অনেক রাতে গাড়ি থেকে নামলি সৌনকও ছিল.. আর…

শ্রী-> আর…? ওহহ্..আরে আসলে কালকে রাতে একটু drunk ছিলাম তো তাই আর কি…!

আবির-> মানে… শ্রী..তুই drink করেছিস?

শ্রী-> হ‍্যাঁ..আরে সৌনক জোর করল খুব আসলে..

আবির-> ওহহ্..যে মেয়ে নাকি সিগারেটের ধোঁয়ার থেকে ১০ হাত দূরে থাকত সে আজকাল drink ও করছে…!

শ্রী-> আরে বললাম তো..সৌনক জোর করেছিল বলে …আর খেতাম না বলে যে কোনওদিন খাব ও না সেই পণ তো নিইনি না আমি..তোর সত্যিই কিছু বলার থাকলে বল না হলে শুধু শুধু জ্ঞান দিতে শুরু করিস না.. আর সোন তোর সৌনককে যদি খারাপ লেগে থাকে তাহলে আমার কিচ্ছু করার নেই আর আমি কেন বিয়ে করছি এই নিয়ে please আর কিছু জানতে চাস না কারণ আমার বাবা, মার খুশিটা,তাদের ভালো থাকাটা আমার কাছে অনেক বেশি important..তোর কি বলার ছিল বললি..তাড়াতাড়ি বল..কিছুক্ষণের মধ্যেই বেরোতে হবে আমাদের..

আবির-> নাহ্…এই শ্রীকে আর কিচ্ছু বলার নেই আমার… তুই তোর ব‍্যগ গুছিয়ে নে তাড়াতাড়ি…

[গল্পকথক-> সেদিন বিকেলে বিজয়ার পর রওনা

দিয়েছিল শ্রী ও সৌনকরা…নাহ্ এবার আর আবির সাথে যায়নি… অভিমানের জন্য ভেবেছিল আর দেখবেও না শ্রীকে..কিন্তু ওই যে..বড্ড বেশি অভিমানটা তার ওপরেই আসে যাকে বড্ড বেশি ভালোবাসা যায়.. তাই ওদের যাবার সময় দোতলার বারান্দা দাড়িয়েছিল আবির শ্রীর চোখের আড়ালে..জিনিসপত্র গোছাতে ও সৌনকের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে ব‍্যস্ত শ্রী একবারও হয়তো খোঁজার চেষ্টাও করেনি সেদিন আবিরকে..!

[গল্পকথক-সেদিনের চলে যাবার পর আজ এতগুলো বছরে সত্যিই আর কলকাতায় ফেরেনি শ্রী…ফোন নাম্বারটা আজও আবিরের ফোনের speed dial-এ saved থাকলেও conversation দুদিক থেকেই বন্ধ..এর মাঝে একবার এক ট্রেনে দেখা হয়েছিল শ্রী-র সাথে..শ্রী না দেখে থাকলেও কোঁকড়ানো চুলের মধ্যে চশমা পড়া মুখটা আবিরের চোখ এড়ায়নি… দেখা হলেও এগিয়ে গিয়ে কথা বলার সাহস হয়নি সেদিন.. কিছু স্টেশন পর যখন শ্রী নেমে যায়.. তখন আবির মনে মনে ভাবছিল.. জীবনটাও হয়তো এই ট্রেনের মত…প্রতি স্টেশনে কেউ উঠবে..আবার পরের স্টেশনে নেমে যাবে.. শেষ পর্যন্ত হয়তো একাই থাকতে হবে এভাবে… হ‍্যাঁ এভাবেই একা থাকাকে মানিয়ে নিয়েছে সে..প্রথম প্রথম হিয়ার মত একা করে রেখেছিল কিছুদিন, কিন্তু আস্তে আস্তে মানিয়ে নিয়েছে.. না হলে হয়তো আজও হিয়ার মতই অবস্থা হত তারও..আর লোকে হয়তো সবটা না জেনেই পাগল কিংবা মানসিক রোগী বলে বসত তাকেও…তবে মানিয়ে নিতে পারলেও, মনে পরে আজও,আজও চোখের কোণ ভিজে আসে একটু হলেও… তাই সেদিন হিয়ার কথা শুনে তার বাড়ি থেকে ফিরে এসে সারারাত পুরনো অ্যালবাম খুলে বসেছিল আবির.. খুজছিল কিছু পুরনো স্মৃতি, কিছু স্বপ্ন.. যা আর কখনও পূরণ হবার নয়..কারণ শেষমেশ তারকাছেও “প্রথম প্রেম=প্রাক্তন” এই সম্পর্কটা প্রমাণিত…!

পরদিন অর্থাৎ আবিরের জন্মদিনের দিন সকালে হিয়ার বাড়িতে গিয়ে অনিমেষবাবুকে হিয়ার সব কথা খুলে বলে আবির..সব শুনে খানিকটা বিনয়ের সুরে অনিমেষবাবু বলেন..]

অনিমেষবাবু-> তবে কি আর কিছুই করা যাবে না?

আবির-> হুম্..চিকিৎসা আছে.. আর তাছাড়া কাল ও অতটা মনের কথা বলে হয়তো অনেকটা হালকা হয়েছে.. এখন যদি চিকিৎসার সাথে সাথে মানসিক ভাবেও ওকে ভালো রাখা যায়, আনন্দে রাখা যায় সেট খুব ভালো হবে… আর এই কারণেই আমি ভাবছিলাম ওকে আজ একটু ঘুরতে নিয়ে যাবো..তাতে যদি ওর মন ভালো থাকে একটু.. যদি আপনার অনুমতি থাকে তবে..

[গল্পকথক-> আবিরের প্রস্তাবে সম্মতি জানান অনিমেষবাবু.. হিয়ার এতে ভালোই হবে জেনে অনুমতি দেন যাবার জন্য… হিয়াও বেশ এতদিন পর আনন্দের সাথে ঘুরতে বেরোয় আবিরের সাথে..ঘোরা শেষ হবার পর launch-এর জন্য আবির ও হিয়া একটা হোটেলে ঢোকে… আগে প্রতিবছর আবিরের জন্মদিনে শ্রী আবিরের জন্য এই হোটেলেই টেবিল বুক করত..কারণ এই হোটেলের চাইনিজ দুজনেরই খুব প্রিয় ছিল.. শ্রী চলে যাবার পর জন্মদিনের দিনটা বেশ একটা বাড়ি থেকে বের হত না আবির… আজ এত বছর পর নিজের জন্মদিনে হিয়ার সাথে এই হোটেলে এল সে…]

হিয়া-> জানো তো বন্ধু কত্তদিন পর আবার হোটেলে খেতে এলাম..বাবা তো নিয়েই আসত না..আজ খুব আনন্দ হচ্ছে আমার..!

আবির-> সে তো নয় আনন্দ হচ্ছে বুঝলাম কিন্তু কী খাবে বল মেনুকার্ড দেখে..

হিয়া-> মেনুকার্ডের এসব লেখা আমি বুঝতে পারছি না গো..তুমিই বল কিছু..

আবির-> আচ্ছা দাড়াও.. waiter..!

Waiter-> yes sir..

আবির-> দু প্লেট chicken biriyani with chilli chicken..

Waiter-> okk ..sir…

[গল্পকথক-> খাবারের অর্ডার নিয়ে waiter চলে যাবার পর আবির লক্ষ করল যে হিয়া কিরকম যেন একটা করছে.. চোখ মুখ হিংস্র হয়ে উঠেছে তার.. হোটেলের দরজার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ এমন কেন করছে হিয়া… হাত থেকে মেনুকার্ডটা ফেলে দিয়ে ছুটে গেল হিয়া আবিরদের পিছনের একটা টেবিলের দিকে…প্রায় আক্রমণের সুরেতেড়ে গিয়ে সে বলল..]

হিয়া-> আবার চলে এসেছ হ‍্যাঁ…?! একজনের জীবন নষ্ট করে শান্তি হয়নি বল??আবার চলে এসেছ নিজের লোভ মেটাতে …হ‍্যাঁ…!মানুষরূপী পশু একটা..!লজ্জা করেনা তোমার…!

[গল্পকথক-> টেবিলে বসে থাকা একজন ছেলে ও মেয়ের দিকে তাকিয়ে ক্রমশ কুমন্তব‍্য করতে থাকল হিয়া… চোখে মুখে তার রাগ, দুঃখ স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে… হিয়ার কথাবার্তা শুনে আবির বুঝতে পারল এই ছেলেটাই হয়তো রাজ..আজ এত বছর পর আবার রাজকে অন্য কারোর সাথে দেখে হয়তো এতটা বেসামাল হয়ে পড়েছে হিয়া… পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য আবির গেলেও কিছুতেই সামলাতে পারছিল না সে হিয়াকে…রাজও যে হিয়াকে চিনতে পারেনি তাও নয়..তবে নিজের image বাঁচাতে ভয়ে উচুঁ গলায় বলে উঠল]

রাজ-> কে..কে ..আপনি..?আ..আর এসব কী বলছেন…? security… Security..কী হচ্ছে এসব…?

হিয়া-> আমি কে?…তাই না ….আমি কে? এখন তো ভুলে যাবেই..তোমার লালসা তো পূর্ণ হয়ে গেছে তাই না… ভুলে তো যাবেই এখন..

রাজ-> sec..Security..এ..এসব পাগলদের কেন ঢুকতে দাও এই হোটেলে.. তাড়াতাড়ি সরাও একে এখান থেকে.. তখন থেকে পাগলের প্রলাপ বকে যাচ্ছে…!

হিয়া-> নাহহ্…..!!আমি পাগল নইইইইই..! পাগল নই আমি…..!!

[গল্পকথক-> রাজের কাছ থেকে আবার পাগল কথাটা শুনে আর্তনাদ করে উঠল হিয়া… রাগে, কষ্টে অভিমানে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল সে…আবির সামলাতে চেয়েও সামলে উঠতে পারল না কিছুতেই…সবার বাধা উপেক্ষা করে হোটেলের একটা ঘরে নিজেকে বন্ধ করে নিল সে…

বাইরে থেকে প্রচণ্ড ডাকাডাকির পর ও যখন কোনও লাভ হল না তখন শেষমেশ হোটেলের দরজা ভাঙা হল…

কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল…! ততক্ষণে হিয়ার আর্তনাদ, কান্না সব থেমে গেছে.. সারাজীবনের মত…!

রূমের আয়নার কাচ ভেঙে তা দিয়ে নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলেছে হিয়া…! আর হয়তো নিজেকে সামলাতে পারেনি সে…!হয়তো সবাই পারেও না..আবিরের মত হয়তো অতটা শক্ত হয়ে উঠতে পারেনি হিয়া… আর তাই এতদিন পর আবার নিজের ভালোবাসার মানুষ..যে তাকে এই জীবনটা উপহার দিয়েছিল তাকে অন্য কারোর সাথে দেখে আর তারই কাছ থেকে ওই কথা গুলো শুনে হয়তো আর নিজেকে শেষবারের মত সামলাতে পারেনি সে…!! হ‍্যাঁ..তবে না সামলে হয়তো ভালোই করেছে…এবার সে চলে গেছে এমন জায়গায় যেখানে হয়তো সবাই ওর ভালোবাসাটা বুঝবে… ওকে বুঝবে… সেখানে কেউ আর ওকে পাগল বা মানসিক রোগী অন্তত বলবে না….!

আমাদের চারপাশেও এরকম অনেকেই থাকে যারা হয়তো আমাদের মত নয়… হয়তো আমাদের মত ব‍্যবহার নয়,চাল -চলন নয়..একটু অন‍্যরকম ব‍্যবহার.. এককথায় বলতে গেলে তথাকথিত বাকি স্বাভাবিক মানুষদের সাথে তাদের ব‍্যবহার খাপ খায় না.. এদের মধ্যে কেউ জন্মগত কারণে বা হিয়ার মত সাময়িক উত্তেজনা কিংবা মানসিক বিষণ্ণতা থেকেই একাকিত্বকে নিজের জীবনের অঙ্গ করে নেয়..আর আমরা কিছু মানুষ তাদের সম্বন্ধে পুরোটা না জেনেই তাদের দূরে সরিয়ে রাখি আর নিজেদের ব‍্যবহারের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিই তারা আমাদের মত নয়…তবে একটু খুটিয়ে দেখলেই হয়তো দেখা যাবে এইসব অন‍্যরকম মানুষদের মনেও হিয়ার মত কিছু না বলা কথা লুকিয়ে আছে যেটা বলার জন্য তারা আজও friday- র খোঁজে.. আমরা যদি তাদের দূরে না সরিয়ে একটু ভালো ব‍্যবহার করি..তবে তার বদলে তারা ফিরিয়ে দেবে অনেকটা ভালোবাসা আর ভরসা.. আমাদের চারপাশের সংখ‍্যাগরিষ্ঠ স্বাভাবিক মানুষদের থেকে ওদের ব‍্যবহার একটু অন‍্যরকম হলেও ওরাও কিন্তু পাগল বা অস্বাভাবিক নয়.. হয়তো সবার মতন নয়.. ওরা ওদের মতই… কিন্তু ‘ওরাও স্বাভাবিক…!’

সমাপ্ত

About Post Author

9F10 AB

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post অজানা দ্বীপের করোটি গুহা | পলক ফেলা নিষেধ | প্রদীপ কুমার বিশ্বাস | Bengali Thriller Story
Next post হিয়ার মাঝে | পলক ফেলা নিষেধ | তন্ময় নন্দী | Bengali Thriller Story