মনতত্ব | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | রিতেশ দাস | Bengali Thriller Story | 9F10
0 (0)

                                                         ২

চায়ের অর্ডারটা দিয়ে ফোনটা নামিয়ে রেখে শুভ্র প্রশ্ন করল, “হঠ্যাৎ আজ সকাল সকাল চেম্বারে চলে এলি!!? কোনো খবর টবর এনেছিস নাকি!!?”

অরুনাংশু টেবিলের উপর রাখা পেপারওয়েটটা হাতে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে বলল “খবর তেমন কিছু নেই কিন্তু একটা গুরুতর ব্যাপারে তোর একটু হেল্প লাগবে।“

অরুনাংশুর মুখের আদল সেইসাথে তার ইতস্তত ভাবটা লক্ষ্য করে শুভ্রর মুখের ভঙ্গিমাও নিমেশে বদলে গেল। সে খানিক চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল “তোর কি কোনো বিশেষ সমস্যা হয়েছে!!?”

অরুনাংশু- “আসলে সমস্যাটা মানে একটা স্বপ্ন…“

কথাটা বলতে গিয়ে অরুনাংশু থমকে গেল কারণ তখন দরজায় বেয়ারা টোকা দিয়েছে। বেয়ারা চায়ের কাপগুলো সেইসাথে বিস্কুটের প্লেটটা নামিয়ে রেখে চলে গেল। শুভ্র বলল, “তুই খোলাখুলি আমাকে ব্যাপারটা বল নাহলে আমি যে তোকে হেল্প করতে পারব না।“

অরুনাংশু চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বলল “তবে বলি শোন…“

তারপর কালকে রাতের ঘটনাটা সেইসাথে আগের দুটো স্বপ্নের কাহিনী বিস্তারে শুভ্র শুনল। সবকিছু শুনে শুভ্র খানিক চুপ করে থেকে বলল, “তা মোটামুটি কবে থেকে এই স্বপ্নটা দেখছিস!!?”

অরুনাংশু- “হপ্তা দুয়েকে এই নিয়ে তিনবার দেখলাম। তাছাড়া মাঝে মাঝে স্বপ্নে শুধু মেয়েটার মুখ ভেসে ওঠে আর তখনই আমি আঁতকে উঠি আর ঘুম ভেঙ্গে যায়।“

শুভ্র- “তুই ঠিক জানিস যে এই নামের কোনো মানুষকে তুই কোনদিন নিজের জীবনে দেখিস নি!!?”

অরুনাংশু- “আমি এই বিষয়ে নিশ্চিত কারণ তুই জানিস আমার মেমারি কেমন স্ট্রং।“

শুভ্র মাথাটা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলল, “দেখ একই স্বপ্ন বারবার দেখা মানে সেটার সাথে তোর লিঙ্ক আছে।“

অরুনাংশু- “সেটা আমিও খানিক আন্দাজ করেছি কিন্তু স্বপ্নের ভিতরে যেন একটা আলাদা পৃথিবী রয়েছে সেই মেয়েটি বাদে সেখানে সবটাই আমার জীবনে নিত্যদিনের মত বাস্তব শুধু…“

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই শুভ্র বলল, “আচ্ছা স্বপ্নে মেয়েটির সাথে তোর রিলেশনটা কি জানিস!!?”

অরুনাংশু – “জানিনা।“

শুভ্র- “সে কেন বাঁচতে চায় না !!?”

অরুনাংশু মাথা নেড়ে জানাল সে এটাও জানে না।

শুভ্র- “কিন্তু সে ডাক্তারের পরামর্শে আই মিন আমার পরামর্শে ওষুধ সেবন করে।তার মানে তার রোগটা মনের তাই সে বেঁচে থাকতে চায় না।“

অরুনাংশু – “হ্যাঁ সেটা আমিও আন্দাজ করেছিলাম বটে কিন্তু এর থেকে বেশি কিছু আমি ভেবে বার করতে পারিনি।“

শুভ্র- “তোর কেসটা কিন্তু বেশ জটিল অনেক রহস্য রয়েছে। তোর কেসে দেখছি ডাক্তারের সাথে সাথে আমাকে গোয়েন্দাও হতে হবে।“

অরুনাংশু- “তুই হাঁসছিস!!?”

শুভ্র- “তুই ব্যাপারটা নিয়ে একটু বেশি ভাবছিস টেক ইট লাইটলি। দেখ তিনবার একই স্বপ্ন দেখেছিস মানে স্বপ্নে কোনো লিঙ্ক আছে সেটা খুঁজে বার করতে হবে আপাতত আমি এইটুকু বলতে পারি। বাকি আমি কিছু ওষুধ দিচ্ছি ওগুলো খা আর এই কটা টেস্ট করে আমার সাথে কাল বা পরশু একবার দেখা কর।“ 

ঘড়ির কাটায় প্রায় এক ঘণ্টা অতিক্রম করে গেছে তাছাড়া বাইরে অনেক রুগি অপেক্ষা করছে তাই অরুনাংশু বলল, “আচ্ছা আজ তাহলে আসি অফিস আছে এমনিতেই লেট হয়ে গেছে।“    

বাইরে বেড়িয়ে গাড়িটা নিয়ে অরুনাংশু অফিসের দিকে সোজা এগিয়ে গেল, রাস্তায় বিশাল জ্যাম তাই একটা সিগন্যালের সামনে দাঁড়িয়ে সে সিগারেট ধরাল। সিগারেটের লম্বা একটা রিং ছেড়ে সে ভাবতে লাগল তার সেই প্রথম স্বপ্নটার কথা।

ভোরের আলো তখন সবে ফুটেছে দূরের তুলো গাছের ডালে বসা কর্কশ কাকের ডাক শোনা যাচ্ছে। আচমকা একটা মেয়ের কণ্ঠধ্বনির শব্দ শোনা গেল, অরুনাংশুর চোখদুটো তখনও ঢুলুঢুলু। আচমকা একটা মেয়েলি হাতের স্পর্শে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল, চোখ খুলে সে দেখল একটি মেয়ে তার হাত ধরে টেনে তাকে বারান্দার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে বলল, “আহা এটা কেমন ছেলেমানুষি করছ তুমি নীলিমা!!?”

মেয়েটি উচ্চকণ্ঠে একটা হাসি টেনে বলল, “তোমাকে ভোরের সূর্য দেখাতে নিয়ে এলাম আর তুমি আমাকে ছেলেমানুষ বলছ!! যাও যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড় তোমার সাথে আড়ি।“

অরুনাংশু- “আরে সেটা না। দেখলে কালকে রাতে তুমি কত দেরি করে ঘুমাতে গেলে আচ্ছা তুমি যদি ঠিকমত না ঘুমাও তবে শরীরটা কীভাবে ভালো হবে শুনি!!?”

নীলিমা- “আমার শরীর ভালো করতে তোমাকে কে বলেছে!!?” কথাটা বলে সে মুখে ব্যাকা একটা ভঙ্গিমা টানল।

অরুনাংশু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল আচমকা দূরের উদীয়মান সূর্যের দিকে তাকিয়ে সে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল, সেইসসাথে খোলা চুলে নীলিমার অভিমানী মুখটা দুয়ের মেল্বন্ধনে যেন তার মনের অন্দরে কীসের একটা দমকা বাতাস দোলা দিয়ে গেল। তার মনে হল জীবনে এই মুহূর্তের জন্যই তার বেঁচে থাকা উদীয়মান সূর্য সেইসাথে অভিমানী রমণীর ভালোবাসা, জীবনটা তার এমনই বেশ সুন্দর।

আচমকা সে শুনতে পেল “আরে ও দাদা কানা নাকি!!? গাড়িটা এগোন…“

সিগন্যাল কখন যে গ্রিন হয়ে গেছে সেটা অরুনাংশু খেয়াল করেনি এখন তন্দ্রা ফিরতে সে জানলার বাইরে হাত বার করে ইশারা করল তারপর দ্রুত গাড়ি নিয়ে এগিয়ে গেল।  

Pages ( 2 of 6 ): « এর আগে1 2 34 ... 6তারপর »

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post বেকারত্ব জীবন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | করিমুল ইসলাম | Bengali Social Story | 9F10
Next post লাল কম্বলের জ্বীন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | মৌলী কুন্ডু | Bengali Thriller Story | 9F10