মনতত্ব | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | রিতেশ দাস | Bengali Thriller Story | 9F10
0 (0)

অফিসে পৌঁছে নিজের টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে লাগল অরুনাংশু, মনটা আজকে বেশ খানিকটা চঞ্চল তাই কাজে ঠিকমত মন বসছে না, সিম্পিল কাল শেষ করতেও অনেক বেশি সময় লাগছে। বার বার তার  মনটা সেই অজানা রমণীর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ঠিক যেমনি প্রথম প্রেমে পড়লে মানুষের বার বার প্রেমিকার কথা মনে পরে এই স্বপ্নের রমণীটিও ঠিক তেমনি অরুনাংশুর মনের অন্দরে বাসা বেঁধেছে। নিছক অবাস্তব হলেও সেই রমণীটি অরুনাংশুর কাছে যেন রক্তে মাংসে গড়া একজন সুন্দরী নারী। স্বপ্নে সে অরুনাংশুর কাছে থাকলে তার মনটা কেমন যেন ম্লান হয়ে ওঠে মনে হয় বারবার তার পানে চেয়ে থাকি কিন্তু সেই রমণীটির চোখের অন্দরের মৃত্যুর লেলিহান কামনা দেখে তার সংশয় আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বারবার সেই অজানা রমণী এবং তার সেই অজানা মৃত্যুর জন্য তীব্র হাহাকার তার প্রাণের অন্দরকে অস্থির করে তোলে। শীতের সময় হলেও কথাগুলো ভাবতে ভাবতে অরুনাংশুর কপালে ঘামের বিন্দু দেখা গেল। এমন সময় জেসিকা দরজায় কড়া নাড়ল।

জেসিকা- “স্যার মে আই কাম ইন!!?”

অরুনাংশু একটু নিজেকে সামলে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল, “ইয়েস কাম ইন।“

জেসিকা সুন্দরী খ্রিস্টান যুবতী, বয়স আন্দাজে ছাব্বিশ। অরুনাংশুর বসের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ওদের অফিসে বছর তিনেক হল চাকরী করছে। অরুনাংশুকে জেসিকা বেশ পছন্দ করে কিন্তু অরুনাংশু বাঙালি সেইসাথে ব্রাহ্মন বংসের সন্তান তাই সে অন্য ধর্মের কোনো মেয়ের সাথে বিশেষ মেলামেশা পছন্দ করে না। তাই স্বাভাবিকভাবেই সে জেসিকাকে তেমন পাত্তা দেয়না কিন্তু জেসিকাও জেদি মেয়ে তাই সে কোনোমতেই হাল ছাড়ে না। অফিসের সবাই ব্যাপারটা দেখে বেশ মজা পায় এমনকি অরুনাংশুর বস মিস্টার বিশ্বাস নিজেও মাঝে মাঝে এই নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করে থাকেন।  

জেসিকার পরনে সাদা শার্ট সেইসাথে কালো শর্ট স্কাট। ঠোঁটের কোণে হালকা একটা লালচে লিপস্টিক সেইসাথে একটা রিমলেস চশমা। জেসিকার মুগ্ধ করা সৌন্দর্যের দিকে সে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল।

জেসিকা- “অ্যাম আই লুক ব্যাড স্যার!!?”

অরুনাংশু নিজের মধ্যে ফিরে বলল, “ নো নো ইউ লুক বিউটিফুল টুডে, আজকে কোনো পার্টি আছে নাকি!!?”

জেসিকা একটু হেসে বলল “ইস না না।“

অরুনাংশু- “তাহলে আজকে এতো সেজে এসেছ কি ব্যাপার!!?”

জেসিকা- “জাস্ট এমনই স্যার।“

অরুনাংশু- “তা কি দরকার তাড়াতাড়ি বলে ফেলো আমার অনেক কাজ আছে।“

জেসিকা- “বিশ্বাস স্যার আপনার কাছ থেকে পরশুর ফাইলটা আনতে বললেন।“

অরুনাংশু খানিক চুপ করে থেকে নিজের মাথার পিছনে একটু হাত বুলিয়ে নিয়ে বলল, “স্যারকে বল এখনো ফাইলটা রেডি হয়নি হলেই আমি পাঠিয়ে দেব।“

জেসিকা তাকে একটা ধন্যবাদ জানিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। তারপর সে আবার নিজের কাজে লেগে পড়ল। বিকেলে অফিস থেকে বেরানোর সময় সে ফাইলটা নিয়ে মিস্টার বিশ্বাসকে দিতে গেল।

অরুনাংশু– “স্যার আসতে পারি!!?”

মিস্টার বিশ্বাস- “আরে আরে সান্যাল যে। মাই বয় কাম ইন।“

মিস্টার বিশ্বাসের বয়স বছর পঞ্চাশ, এই কম্পানিতে চাকরী করছেন তা প্রায় পনেরো বছরের বেশি হবে। সাধারণ ক্লার্ক থেকে চাকরী শুরু করে আজ কোম্পানির ডিজিএম। অরুনাংশুকে তিনি খুব স্নেহ করেন একইসাথে খুব ভরসাও করেন।

অরুনাংশু – “স্যার ফাইলটা রেডি করতে একটু দেরি হয়ে গেল।“

মিস্টার বিশ্বাস একটু হেসে বললেন, “তোমার দেরি হতে এই প্রথম দেখলাম ব্যাপার কি বল তো শরীর টরীর ভালো নেই নাকি!!?”

অরুনাংশু – “না না তেমন ব্যাপার নয় আসলে একটু…“

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই সে থেমে গেল কারণ বাইরে দরজায় জেসিকা টোকা মেরেছে। মিস্টার বিশ্বাস একটু বিরক্ত হয়ে বললেন, “আবার কি হয়েছে জেসিকা!!?”

জেসিকা একটু নরম গলায় বলল, “স্যার কাল ছুটি তাই অনির্বাণ স্যার বললেন মিরাটের ফাইলটা আজকেই ওনাদের মেল করতে হবে।“

মিস্টার বিশ্বাস একটু ভেবে বললেন, “এই নাও নিয়ে যাও আমি সাইন করে দিচ্ছি।“

সাইন করা ফাইলটা নিয়ে জেসিকা চলে যেতেই অরুনাংশু বলল, “স্যার আপনি আমার ফাইলটা চেক না করেই সাইন করে ক্লাইন্টকে পাঠিয়ে দিলেন!!?”

মিস্টার বিশ্বাস একটু হেসে বললেন, “তোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে। আই নো হাউ মাচ উই সেরিয়াস আবাউট ইওর ওয়ার্ক।“

অরুনাংশু একটু হেসে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছিল এমন সময় মিস্টার বিশ্বাস বললেন, “সান্যাল কালকে আমার বাড়িতে অ্যানিভারসারি পার্টি আছে ইউ মাস্ট কাম।“

অরুনাংশু – “নিশ্চয়ই আসব স্যার। থ্যাঙ্ক উই ফর দা ইনভিটেশন।“

কথাটা বলে সে বাইরে বেড়িয়ে সোজা ছুটে গেল লিফটের দিকে। লিফটের ভিতরে দেখা হল জেসিকার সাথে। জেসিকা তাকে বলল, “স্যার আপনি কি এখন বাড়ি ফিরবেন!!?”

অরুনাংশু – “হ্যাঁ কেন!!?”

জেসিকা- “না মানে…“ খানিক ইতস্তত করে সে বলল, “আমাকে একটু ড্রপ করে দেবেন!!?”

অরুনাংশুর মেজাজ ভালো ছিল না তবু একটা মেয়ের রিকোয়েস্ট না শোনার মত কঠিন মনের মানুষ সে নয় তাই অগত্যা সে রাজি হয়ে গেল। তারপর দুজনে গাড়িতে উঠে বেড়িয়ে পড়ল। গাড়ি শহরের রাজপথ ধরে এগিয়ে চলেছে চারিদিকে জনকোলাহল, গাড়িতে হালকা গান বাজছে।

জেসিকা বাইরের রাস্তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, “স্যার আপনার কি শরীর খারাপ!!?”

অরুনাংশু প্রশ্নটা শুনে একটু যেন থমকে গেল তারপর বলল, “কেন আমাকে দেখে কি অসুস্থ বলে মনে হচ্ছে!!?”

জেসিকা তার প্রশ্নটা শুনে বলল, “না মানে স্যার আপনাকে কিছুদিন থেকে কেমন যেন অন্যমনস্ক বলে মনে হচ্ছে তাই বললাম।“

অরুনাংশু কথাটা শুনে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “মনটা একটা জটিল প্রশ্ন নিয়ে কাটাকুটি খেলছে।“

জেসিকা তার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি ঠিক বুঝলাম না স্যার!!?”

অরুনাংশু – “সব কথা বলে বোঝানো যায় না।“

জেসিকা- “একটা কথা বলব আপনি কিছু মনে করবেন না তো!!?”

অরুনাংশু মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাল। জেসিকা একটু শান্ত গলায় বলল, “আপনি কিছুদিনের ছুটি নিন স্যার দেখবেন আপনার জটিল প্রশ্নের সমাধান পেয়ে গেছেন।“

অরুনাংশু চুপ করে জেসিকার দিকে তাকিয়ে রইল আচমকা তার চোখের সামনে ভেসে উঠল নীলিমার মুখটা। সে কয়েকবার চোখদুটো পিটপিট করে দেখল জেসিকা সেখানে নেই তার চিহ্নমাত্র নেই তার বদলে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে নীলিমা। সেই অজানা স্বপ্নের রমণী যেন তার পানে চেয়ে আছে বারবার সে শুনতে পাচ্ছে সেই অজানা রমণীর কণ্ঠধ্বনি। অরুনাংশুর হৃদস্পন্ধনের তীব্রতা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে , হাত পা কেমন যেন অবশ ক্রমে ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। সে যেন ক্রমে বাস্তবের পৃথিবী থেকে যেন কোনো এক অজানা অবাস্তব অন্ধকারের অন্দরে প্রবেশ করছে। আচমকা নীলিমা তার হাত চেপে ধরল সে শুনতে পেল, “স্যার স্যার আপনি ঠিক আছেন!!? স্যার!!?”

আচমকা সামনে গাড়ি দেখতে পেয়ে সে জোরে একটা ব্রেক চেপে ধরল। তারপর সে পাসের সিটের দিকে তাকিয়ে দেখল জেসিকা বসে আছে তার মাথায় সে হাত দিয়ে বলছে, “আর ইউ ওকে স্যার!!?”

অরুনাংশু নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে বলল “হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।“

কথাগুলো বলার পরে সে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল তার চোখে মুখে তীব্র ভয়ের ছাপ। আচমকা সে দেখল জেসিকা তার হাতটা ধরেছে। সেইদিকে তাকিয়ে সে কেমন যেন ম্লান হয়ে গেল তারপর নিজের অজান্তে জেসিকাকেই আলিঙ্গন করে বাচ্চাদের মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। কিছুক্ষণ পরে ব্যপারটা বুঝতে পেরে সে খানিক লজ্জায় পরে গেল তারপর জেসিকা বলল, “স্যার আমি ড্রাইভ করি!!? আপনার শরীর ভালো নেই।“

অরুনাংশু এক কথাতেই রাজি হয়ে গেল তারপর জেসিকা তাকে বাড়ি ছেড়ে দিল। গাড়ি থেকে নেমে অরুনাংশু বলল, “আমি তোমাকে একটা ক্যাব বুক করে দি।“

জেসিকা- “না স্যার আমি চলে যাব আপনি বাড়ি ফিরে রেস্ট নিন।“

জেসিকা পিছনে ফিরে সামনের রাস্তার দিকে এগিয়ে গেল। অরুনাংশু পিছনে ফিরতেই সে শুনতে পেল, “স্যার!!?”

অরুনাংশু পিছনে ফিরতেই জেসিকা বলল, “স্যার ছুটির ব্যাপারটা একটু ভেবে দেখবেন আর হ্যাঁ কালকে বিশ্বাস স্যারের পার্টিতে দেখা হচ্ছে।“ একটা আলগা হাসি হেসে সে বিদায় নিল। অরুনাংশু ক্রমে নিজের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করল।   
    

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post বেকারত্ব জীবন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | করিমুল ইসলাম | Bengali Social Story | 9F10
Next post লাল কম্বলের জ্বীন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | মৌলী কুন্ডু | Bengali Thriller Story | 9F10