মনতত্ব | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | রিতেশ দাস | Bengali Thriller Story | 9F10
0 (0)

চোখেমুখে জলের ছিটে দিয়ে নিজেকে একটু সামলে সে শুভ্রকে একটা ফোন করল। শুভ্রর বৌ ফোনটা তুলে বলল, “উনি এখন ঘুমাচ্ছেন। হ্যাঁ !!হ্যাঁ!! আমি উঠলেই আপনাকে ফোন করতে বলব।“

ফোনটা কান থেকে নামিয়ে অরুনাংশু একটু হতাশ হয়ে গেল তারপর ভাবল ডাক্তার মানুষ ছুটির দিনে একটু বিশ্রাম নেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কালকের স্বপ্নটা যেন তার মনের অন্দরে আরও অশান্তির সৃষ্টি করেছে। একজন অপরিচিত উন্মাদ রমণীর হাতে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর স্বপ্ন যে কোনো মানুষের মনকে অশান্ত করে তুলবে। কিন্তু এই স্বপ্নগুলো যে পরস্পর জড়িত সেটাই তার মনকে আরও বেশি ভাবিয়ে তুলেছে। কালকের স্বপ্ন থেকে সে এইটুকু বুঝতে পেরেছে তার স্বপ্নের শেষ পরিণতি সে দেখে ফেলেছ কিন্তু এখনো অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর তার খোঁজা বাকি। এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠল ফোনটা তুলতেই একজন অজানা ভদ্রলোকের গলার স্বর শোনা গেল, “হ্যালো দাদা আমাকে শুভ্র স্যার ওই টেস্টের জন্য পাঠিয়েছেন আপনার ফ্ল্যাটের নিচে দাঁড়িয়ে আছি।“

অরুনাংশু তাকে নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে নিল তারপর কিছু রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ছেলেটি চলে গেল। ছেলেটি চলে যাওয়ার পরে রাখালের মা এসে হাজির হল। কালকে রাতের কোনো খাবার অরুনাংশু খায়নি দেখে সে বলল, “একি দাদাবাবু তুমি একটাও খাবার খাওনি। শরীর খারাপ নাকি!!?”

অরুনাংশু – “হ্যাঁ ওই আরকি। তুমি যাওয়ার সময় ওগুলো নিয়ে যেও। দেখ খারাপ হয়ে গেলে আবার নিয়ে যেও না যেন।“

অরুনাংশুর ফ্যাকাশে মুখের ভাবটা লক্ষ্য করে রাখালের মা তাকে বেশি প্রশ্ন করল না, ব্রেকফাস্টের ফিরিস্তি শুনে সে নিজের কাজে লেগে পড়ল। অরুনাংশু বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরাল তারপর লম্বা একটা টান দিয়ে আচমকা সিগারেটটা ফেলে দিল। এমন সময় শুভ্র ফোনটা করল, সে রাতের স্বপ্নটা সংক্ষেপে তাকে বলল। সব শুনে শুভ্র বলল, “তাহলে স্বপ্নের শেষটা পাওয়া গেল। এখন বাকি খালি মহিলার পরিচয়।“

অরুনাংশু- “হ্যাঁ ওটা জানতে হবে। আর আমি তোর লোকের কাছে একটু আগে ব্লাড স্যাম্পেল দিলাম।“

শুভ্র- “ঠিক আছে বিকেলে ও রিপোর্ট তোকে দিয়ে যাবে। কাল সকালে চলে আয় কথা হবে আর হ্যাঁ বেশি টেনশন করিস না। জাস্ট একটু সাবধানে থাক।“

অরুনাংশু – “আচ্ছা রাখছি।“

ফোনটা রেখে সে ব্রেকফাস্ট করল তারপর খানিকক্ষণ একটা ইংরেজি সিনেমা দেখল। ক্রমে তার মন থেকে দুশ্চিন্তার মেঘটা কিছুটা কাটলে সে স্নান সেরে দুপুরে লাঞ্চ শেষ করে যখন টেবিলে এসে বসল এমন সময় তার ফোনটা বাজল।

মিস্টার বিশ্বাস ফোনের ওপাশ থেকে বললেন, “সান্যাল বিকেলে আসছ তো!!?”

অরুনাংশু – “হ্যাঁ স্যার নিশ্চয়ই। তাড়াতাড়ি চলে আসব।“

মিস্টার বিশ্বাস- “তোমার কাছে আমার একটা রিকোয়েস্ট ছিল।“

বিশ্বাসবাবুর ইতস্তত ভাবটা লক্ষ্য করে সে বলল, “স্যার আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে বলুন আমি আপনার ছোট ভাইয়ের মত।“

মিস্টার বিশ্বাস – “আসলে তুমি যদি আজকে একটু তোমার গাড়ি করে জেসিকাকে পিক আপ করে আনতে তাহলে আমার খুব সুবিধা হত।“

অরুনাংশু – “এ আর কি এমন কথা নিশ্চয়ই নিয়ে আসব।“

মিস্টার বিশ্বাস- “আচ্ছা তাহলে ওই কথাই রইল দেখা হচ্ছে। আর হ্যাঁ ধন্যবাদ সান্যাল।“   

বিকেলে অরুনাংশু জেসিকার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। জেসিকার বাড়ি তার ফ্ল্যাট থেকে মিনিট কুড়ি গাড়িতে তাই বেশি সময় লাগল না। জেসিকা তার জন্য আগেই অপেক্ষা করছিল তাই দ্রুত সে গাড়িতে উঠে বসল।

জেসিকা- “আপনার শরীর এখন কেমন আছে স্যার!!?”

অরুনাংশু – “আগের চেয়ে ভালই।“

জেসিকা- “আমাকে পিকাআপ করার জন্য ধন্যবাদ স্যার।“

অরুনাংশু – “আরে এ আর এমন কি ব্যাপার তাছাড়া স্যারের বাড়ি যেতে হলে তোমার বাড়ির উপর দিয়েই যেতে হবে।“

কথাটা শুনে জেসিকা মুখের ভাবটা একটু বদলে বলল, “তাহলে স্যারের বাড়ি আমার বাড়ির উপর দিয়ে যেতে হয় বলে আমাকে পিকআপ করতে রাজি হয়েছেন!!?”

অরুনাংশু – “আরে আরে তুমি দেখছি রেগে যাচ্ছ আমি তা বলেছি নাকি!!?”

জেসিকা কোনো কথা বলল না কেবল জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল। অরুনাংশু মনে মনে ভাবল, মেয়েটির অভিমান বড্ড বেশি, এতটা বেশি অভিমানী বলেই বোধহয় অরুনাংশুর তাকে বিশেষ পছন্দ হয়নি নাহলে এতদিনে তাদের মাঝের প্রেমিক প্রেমিকার সম্পর্ক তৈরি হতে বেশি সময় লাগত না। আসলে ওই ব্রাহ্মন খ্রিস্টান ব্যাপারটা কিছুই নয় ওটা কেবল একটা ছুঁতো আসল ব্যাপারটা লুকিয়ে জেসিকার অভিমানী স্বভাবের অন্দরে।

আচমকা জেসিকা তার দিকে ফিরে রুক্ষ গলায় বলল, “স্যার আমার এই অভিমানী স্বভাবটার জন্যই হয়তো আপনি আমাকে পছন্দ করেন না কিন্তু কি করব বলুন ছোটবেলার স্বভাব কি সহজে দূর হয়!!?”

অরুনাংশু খানিক থতমত খেয়ে গেল। সে মনে মনে ভাবল, “কি জানি মেয়েটি মনের কথা শুনতে পারে নাকি!!?”

এই কথাটা ভাবতে ভাবতেই সে মুখে একটা হাসি টেনে বলল, “মেয়েদের অভিমান না থাকলেই বরং অবাক লাগে ওটা পুরুষমানুষকে বিশেষ মানায় না।“  

জেসিকা কথাটা শুনে একটু আলতো করে হাসল। মেয়েটিকে হাসলে কিন্তু বেশ লাগে কথাটা মনে মনেই অরুনাংশু বলল। এইসব কথার মাঝেই তারা মিস্টার বিশ্বাসের বাড়ি পৌঁছে গেল। মিস্টার বিশ্বাসের বাড়ি বেশ বড়, পুরনো আমলের দোতলা বাড়ি। সাদা মার্বেল পাথর ছাড়া রয়েছে নানা রঙের টাইলসের কাজ। দেখলে বেশ বোঝা যাচ্ছে নুতন করে রিনোভেট করা হয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতেই অরুনাংশু দেখল জেসিকাকে আজ অসাধারণ সুন্দরী লাগছে। তার পরনে একটা কালো ভেলভেট গ্রাউন সাইসাথে রুপলি প্রলেপের ডাইমন্ড ডিসাইনের নেকলেসে তাকে আরও বেশি মায়াবী লাগছে। সামনে সিঁড়ি দেখে সে আচমকাই নিজের অজান্তে জেসিকার হাতটা আলতো করে চেপে ধরল ক্রমে জেসিকা একটা আলগা হাসি হেঁসে তার হাতটা চেপে ধরল। এইভাবেই দুজনে হাতে হাত রেখে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল।

ভিতরে জনসমাগম একাধিক লোকের মাঝে মিসেস বিশ্বাস এবং মিস্টার বিশ্বাস দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের দুজনকে একসাথে এইভাবে দেখে একটু হেসে মিস্টার বিশ্বাস বললেন, “তাহলে জুটি বেঁধেই ফেললে দেখছি।“

অরুনাংশুর খেয়াল ছিল না যে সে জেসিকার হাতটা এখনো ধরে রয়েছে তাই এখন সে একটু লজ্জা বোধ করে হাতটা ছেড়ে বলল, “হ্যাপি অ্যানিভারসারি স্যার।“ কথাটা বলেই একটা ফুলের বুকে তার দিকে এগিয়ে দিল। মিসেস বিশ্বাস সেটা হাতে নিয়ে অরুনাংশুর দিকে তাকিয়ে বললেন, “মাই বয় ইফ ইউ লাভ দিস বেউটিফুল গার্ল দেন সে দ্যাট। সময় থাকতে বলে দাও নাহলে পরে দেখবে সময় পাবে না।“

কথাটা বলে মিসেস বিশ্বাস সেখান থেকে অন্য গেস্টের দিকে চলে গেলেন। মিস্টার বিশ্বাস বললেন, “ঠাট্টা করলাম বলে আবার কিন্তু রাগ করে বোস না সান্যাল।“

অরুনাংশু – “আরে কি যে বলেন না আপনি স্যার।“ জেসিকাও আলগা একটা হাসি হেসে অরুনাংশুর কথাতেই সম্মতি জানাল। তারপর ক্রমে দুজনে দুটো ড্রিঙ্কস নিয়ে দাঁড়িয়ে অফিসের অন্য সকলের সাথে আড্ডা দিতে থাকল। খানিক পরে মিস্টার অনির্বাণ তার ফ্যামিলি নিয়ে গেটের ভিতর ঢুকলেন। অনির্বাণের সাথে একটি বছর পাঁচেকের ছেলে তাদের দেখেই জেসিকা এগিয়ে গেল।

-“স্যার আপনার ছেলে!!?” জেসিকা প্রশ্ন করল।

মিস্টার অনির্বাণ একটু হেসে বললেন, “কেন আমাকে দেখে বুঝি এখনো কম বয়েস্ক মনে হয় নাকি!!?” কথাটা বলেই তিনি তার স্ত্রীর দিকে তাকালেন।

অরুনাংশু এতক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল আচমকা জেসিকাদের দিকে দৃষ্টি ফিরতেই তার মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরতে লাগল, মনের অন্দরে যেন কীসের তীব্র একটা বেদনা অনুভুত হল। সে তার চোখদুটোকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না তার বারবার মনে হচ্ছে এ যেন তার স্বপ্নের অন্দরমহল। মিস্টার অনির্বাণের পাশে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে তার পরনে কালো রেশমের কাপড় সেইসাথে একটা স্লিভ্লেস ব্লাউজ, মাথার চুলগুলো খোলা সেটা তার নগ্ন উন্মুক্ত পিঠে দোলা খাচ্ছে। তার মুখের আদলটা ঠিক অবিকল তার স্বপ্নের অন্দরের নীলিমার মত। তার সেই রূপের দিকে তাকিয়ে অরুনাংশুর বারবার মনে হচ্ছে যেন সে তার স্বপ্নের গভীরে আবার নিমজ্জিত হয়েছে। তার হাত পা ক্রমে অবশ হয়ে আসছে মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে আচমকা তার হাত থেকে কাঁচের গ্লাসটা পরে ভেঙ্গে গেল সেইসাথে অরুনাংশু লুটিয়ে পড়ল মাটিতে।

Pages ( 5 of 6 ): « এর আগে1 ... 34 5 6তারপর »

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post বেকারত্ব জীবন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | করিমুল ইসলাম | Bengali Social Story | 9F10
Next post লাল কম্বলের জ্বীন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | মৌলী কুন্ডু | Bengali Thriller Story | 9F10