তখন সবে পুনেতে একটা দিন কেটেছ।চাকরি করি একটা কোম্পানিতে। রাতের বেলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম
। সামনে জোয়ার বাজরার ক্ষেত। হঠাৎ একটা আলো চোখে পড়ল। যেন মনে হল কেউ টর্চ হাতে নিয়ে যাচ্ছে। কিছুদূর যাবার পর আলোটা একটা জায়গায় স্থির হলো। এবার একটু নিচের দিকে নামতে লাগল এবং আর দেখা গেলো না। ব্যাপারটা একটু অন্যরকম ঠেকল। একটা চেয়ার নিয়ে বসে তাকিয়ে রইলাম। এখন বাজে রাত ১২ টা। খাওয়া দাওয়া সারা হয়ে গেছে। পরের দিন ছুটি। তাই ঘুমানোর তাড়াহুড়ো নেই। অতএব জেগে রইলাম আর কিছু নড়াচড়া হয় কিনা দেখতে। প্রায় ১ ঘন্টা কেটে গেছে।এবার মনে হল আরো দু তিনটে লাইট দেখা গেলো। সেগুলোও ওই প্রায় একই জায়গায় একই ভাবে নিচের দিকে নামতে নামতে মিলিয়ে গেল। প্রায় ২ ঘন্টা পেরিয়ে যাবার পরও কিছু হল না। তবে আমি বসেই রইলাম আরো কিছু ঘটার আশায়। আমার গোয়েন্দা মন রহস্যের গন্ধ সবে পেতে শুরু করেছে। ঘড়িতে দেখলাম তিনটে বাজলো। হঠাৎ আবার আলো দেখা গেল। তবে এবার যেন মনে হল আলোটা নিচের দিক থেকে উপরের দিকে উঠছে। এবার অনেকগুলো আলো একইভাবে উপরের দিকে উঠল। এবার সব আলোগুলো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো। যতক্ষন দেখা যায় চোখ সরালাম না। একসময় সবগুলোই চোখের আড়াল হয়ে গেল। ব্যাপারটার কিছুই মাথা মুন্ডু বুঝতে পারলাম না। গিয়ে বিছানায় পড়তেই ঘুম এসে গেল। এই ব্যাপারটা মন থেকে মুছে গেল। এবার আবার আগের মতন একদিন বারান্দায় বসে আছি শনিবার। পরের দিন রবিবার কোম্পানির ছুটি। রাত ১২ টা নাগাদ আবার সেই আলোর খেলা শুরু হল। পুরনো ঘটনাটা আবার মনে পড়ে গেল। একইভাবে রাত ৩ টের কাছাকাছি আলোগুলো দূরে গিয়ে চোখের আড়াল হয়ে গেল। বেশ ভাবিয়ে তুলল ব্যাপারটা। পরের দিন আরো একটা ঘটনা মনটাকে বেশ নাড়িয়ে দিল। একজন সাধারণ চাষী খুন হয়েছে ওই জোয়ারের জমিতে। এবং ঘটনাটা ঘটেছে ওই আলোর খেলার জায়গাটির কাছাকাছি। আমি এবার স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করে নিজের দেখা ঘটনাটা বললাম এবং এও বললাম যে আমি একজন শখের গোয়েন্দা , আনন্দ সেন। নামটা আগে বলতে ভুলে গেছিলাম। যাই হোক ওনারা আমাকে তদন্ত করতে বারণ করলেন না। কিন্তু খুব একটা মাথা ঘামালেন বলে মনে হল না। একজন কনস্টেবলকে বললেন আমাকে সাহায্য করতে। তাকে নিয়ে জমিটা একটু খুঁজে দেখলাম। সন্দেহজনক কিছুই চোখে পড়ল না। এভাবেই কয়েকটা দিন কেটে গেল। একদিন কোম্পানিতে রাতের ওভারটাইম করতে হল। সকাল ৭:৩০ টা নাগাদ চাকানে নেমে ঠিক করলাম শর্টকাট মেরে জোয়ার ক্ষেত হয়ে তাড়াতাড়ি ফ্ল্যাটে পৌঁছে যাব। যাই হোক জোয়ার ক্ষেতের কাছাকাছি এসে মনে পড়ল আগের ঘটনাটা। আবার গোয়েন্দাগিরি মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। শুরু করলাম খোঁজ। কিছুদূরে কয়েকজন চাষী চাষের কাজ করছিল। তাদেরকে সঙ্গে নিলাম। একটা জায়গায় একটু রক্তের দাগ দেখতে পেলাম। তার মানে এখানেই সেই লোকটা খুন হয়েছিল। হঠাৎ তার খানিকটা দূরে দেখলাম কাঁটাগাছ ভেঙে বেশ খানিকটা জায়গা যেন ঢেকে রাখা হয়েছে। ওই চাষীদেরকে সেসব সরাতে বললাম। বেশ খানিকটা সরানোর পর দেখলাম অনেক পাতা ফেলে ঢাকা রয়েছে জায়গাটা। সেগুলোও সরানো হয়ে গেল। যেই একজন মাঝে পা রাখতে গেল তার পা টা খানিকটা ঢুকে গেল। তরপর সে হঠাৎ নিচের দিকে ঢুকে হড়কে ভ্যানিশ। একটা আহঃ চিৎকার শোনা গেল। বাকিদের একধার থেকে পাতাগুলো সরাতে বললাম। পুরোটা সরানোর পর যা দেখলাম তা সত্যিই তাজ্জব ঘটনা।অনেকটা খুঁড়ে মাটির ভিতর সুড়ঙ্গ মতন করা রয়েছে। লোকটাকে দেখলাম প্রায় ১২ ফুট নিচে পড়ে রয়েছে আর যন্ত্রনায় চিৎকার করছে। সবাই মিলে নিচে নামলাম সাবধানে। ঢুকে দেখলাম একদিকে সুড়ঙ্গ করা রয়েছে প্রায় অনেকটা দূর পর্যন্ত। তবে বসে বসে যেতে হবে তার ভিতর থেকে। হঠাৎ চোখে পড়ল নিচে একটা প্যাকেট পড়ে রয়েছে। একজন সেটা তুলে হাতে নিয়ে খুলতেই গন্ধে বোঝা গেল সেটা গাঞ্জা। আর বুঝতে বাকি রইল না এখানে কিসের ব্যবসা চলছে। পুলিশকে ব্যাপারটা জানালাম। আমরা ওখানেই রইলাম। আধঘন্টার মধ্যে পুলিশ এসে গেল। সব উদ্ধার করা হল।প্রচুর গাঞ্জা , হেরোইন এবং বেআইনি অস্ত্রও পাওয়া গেল। এবার এর ব্যবসায়ীদের ধরবার পালা। গোটা ব্যাপারটা চুপিসাড়ে করে পুলিশের সাথে আমিও লুকিয়ে রইলাম পাশের ঝোঁপে রাতের অপেক্ষায় এবং জায়গাটাও আগের মতই ঢেকে রেখে দিলাম। যথাসময়ে অপরাধীরা সব হাজির হল এবং টর্চ হাতে নিচে নামতে থাকল। এবার পাশের ঝোঁপ থেকে আমরা লাইট হাতে সব বেরিয়ে এলাম। এবং বিভিন্ন জায়গায় আগে থেকেই লাইট লাগানো হয়েছিল। গাছগুলোতেও সোলার লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সব আলো জ্বলতেই একেবারেই আলোয় আলোময় হয়ে উঠল চারিদিক। অপরাধীদের ধরা হল এবং বড় মাথাগুলোও একে একে গ্রেফতার হল। জানা গেল এরা প্রায় ২ বছর ধরে এই কারবার চালাচ্ছে। আমাকে কিছু পুরস্কার দেওয়া হল এবং চাকরির ব্যবস্থাও করা হল এর জন্য। তবে চাকরিটা আর নেওয়া হল না। আমি কলকাতায় অন্য একটা কাজ পেয়ে ফেরত চোলে গেলাম। তবে দুঃখ রয়ে গেল ওই একটা নিরীহ প্রাণ বাঁচাতে না পারার জন্য। সব ভালো যার শেষ ভালো। যাই হোক ধরা তো পড়ল অপরাধীরা।
বিষয় মৌলিকত্ব | |
ভাষা সাবলীলতা | |
কৌতূহল উদ্দীপক ঘটনা প্রবাহ | |
শক্তিশালী চরিত্র চিত্রণ | |
অডিও/ভিডিও রূপান্তর যোগ্য | |
Average
|
|
![]() |