গত তিন মাস হইয়া গেল বাড়িওয়ালা প্রতিনিয়ত বকাঝকা করে। ছেলেটি ঘর ভাড়া দিতে পারে না বলে। ছেলেটি উৎকণ্ঠ স্বরে বললে –
‘মামা এতদিন তো সহ্য করলেন আর না হয় একটা সপ্তাহ সময় দেন ঠিক টাকা বুঝিয়া দিমু।’
গ্রাম থেকে শহরে লেখাপড়া করার জন্য আসছে। পড়াশোনার পাশাপাশি একটা টিউশনি পড়াত। হঠাৎ একদিন ছাত্রের বাবা বললে –
বাবা তুমি আমার ছেলেটাকে যে কয়েক মাস পড়িয়েছ তার সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে দিলাম। এবার আমি ভাবিয়াছি যে সায়নের স্কুল টিচারের কাছে টিউশন পড়াতে দিব । আর তাছাড়া তুমি তো কোন স্কুলের টিচার হতে পারোনি? তাৎক্ষণিক ছেলেটি বিবর্ণ মুখে বলল –
‘আমিও পারতাম স্কুলের টিচার হতে যদি আমার কাছে ১০ – ১৫ লাখ টাকা থাকত।’ এই বলে সেখান থেকে স্থান ত্যাগ করে চলে গেলেন।
একটু পরে বাড়ি থেকে কল করছে। বাবার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ভেসে আসছে কথাগুলো। কথা শুনিয়া স্তব্ধ হয়ে বসিয়া আছে। ছেলেটির মুখ বন্ধ জবান আর অশ্রু নয়নে কান্না যেন শব্দের জো নেই।
সে একটা টিউশনি পড়ার খোঁজে বের হল দিনশেষে পেল না। এদিকে অনেক চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে কিন্তু আবেদন করার কোন ইচ্ছে নেই। কারণ আবেদন করলেই দেড়শ থেকে দুশো টাকা ফি দিতে হয়। এমনিতেও অনেক আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি।
সপ্তাহখানেক পর সে ঘর ভাড়া না দিতে পারায় বাড়িওয়ালা ঘর থেকে বের করে দেয়। ঠিকমতো ভার্সিটিতেও আর যাওয়া হয় না। এদিকে না পায় কোন চাকরি, না পায় কোন কাজ। উপায় না পেয়ে হাল ধরে টোটো। টোটো চালায় বলে ভার্সিটিতে তাকে নিয়ে কত পরিহাস। রোজগার তো হত বটেই তার সঙ্গে ঘরের খরচের পরিমাণটা কমলো না। তার মায়ের শরীরটা ভালো কাটতো না। দিন দিন আরও কাহিল অবস্থা।
সে বাংলায় অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ভার্সিটিতে তৃতীয় বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। ভর্তির ফি ২০৬০ টাকা। ভর্তির আর মাত্র ৭ দিন বাকি রয়েছে। জানিনা সে এই বর্ষে ভর্তি হতে পারবে কিনা?
অবীনের কাছ থেকে টাকা ধার চাইলে।
সে বললে-
– গত মাসে যে টাকা নিয়েছ সেটা কি শোধ করিয়াছ, তবে আবার টাকা চাওয়া! ক’দিন চলবে এভাবে?
“দু‘মুঠো ভাত জোটে না কপালে,
তার আবার পড়াশোনা আকালে।“
রাজেশ ব্যঙ্গ করে বলল-
“ সোনার ফসল ফেলিয়া
চাষ করো মাঠে গিয়া।“
সে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে কারও কাছে দুঃখের কথা বলে না। অন্তরে বড় ঝড় উঠছে তবুও কিছুতেই হার মানিতে চায় না।
তার মায়ের অসুখটা আরো বেড়ে গেল। ডাক্তার জানিয়েছে অপারেশন করতে হবে। প্রায় ১ লক্ষ টাকা লাগবে। তার মা মনে করেন এত টাকা তার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। গরিবদের অসুখ হলে চিকিৎসার অভাবে মারা যেতে হয়। ছেলেটি অক্লান্ত পরিশ্রম করেই চলে। পড়াশুনায় আর মন শায় দেয় না।