বিষাক্ত রক্তাহুতি | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | পার্থিব ঘোষ | Bengali Thriller Story | 9F10
0 (0)

এরমধ্যে কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ না ব’লে ক’য়ে ঝেঁপে বৃষ্টি নামলো। সকাল থেকে আকাশে একটু মেঘ-মেঘ ছিল। কিন্তু এভাবে বৃষ্টি একেবারে অভাবিত। অবশ্য এখন সবাই বোঝে, আসলে দূষণের কারণে প্রকৃতিও তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলছে।

পরিক্ষিৎ বললেন, ‘খেয়েছে! আবার কাজের বারোটা বাজবে। এই সময় বৃষ্টি!’

আবার কফি এলো। এবারে ইন্সপেক্টর মিস করলেন না। তোতন প্রসঙ্গ পাল্টে আবার কথায় এলো,

— শুনুন, হোটেলে ব’লে রাখবেন, কাল যে ঘরে এসপি. খুন হয়েছেন, তার আশেপাশের ঘরগুলোতে আর ঐদিনের রিসেপশনে যে ছিল, তাদের বয়ান নতুন ক’রে নেওয়া হবে। আমি যেন সকলকে পাই।

— হয়ে যাবে।

তোতন ফের প্রশ্ন করে, ‘এসপি. সাহেব যে মহিলার রুমে গিয়েছিলেন, তার নাম কী? তার পরিচয়ই বা কী?

— নাম তো মিস্ রাখী রায়। পরিচয় জানি না। রিসেপশনে যে ডক্যুমেন্ট জমা দিয়েছিলো, তাতে ছবি থেকে তাকে কেউ চেনেনি।

— কী নাম বললেন? রাখী? রাখী রায়, না? বেশ। তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই সিসি ক্যামেরার রেকর্ড নিয়েছেন?

ইন্সপেক্টর জানালেন, ‘নিয়েছি। কিন্তু এখানে একটা জট আছে। ওদের সিসি ক্যামেরার যে ইনভার্টার, তার ব্যাটারি হঠাৎই ঐদিন ডাউন ছিল। ফলে একটা লম্বা সময়, এখানে তো যখন তখন লোডশেডিং হয়, সেই সময়ের রেকর্ড পাওয়া যায়নি। প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা হোটেলের ঐ পার্ট ক্যামেরালেস ছিল।

— স্ট্রেঞ্জ! এত বড় একটা অভিজাত হোটেল! তার সিসি ক্যামেরা লোডশেডিং-এ অফ্! তাজ্জব ব্যাপার!

— আসলে ওদের এ্যারেঞ্জ করতে করতে ২৪ ঘন্টা লেগে যায়। নিশ্চয়ই যা ঘটেছে, তার মধ্যেই ঘটেছে। সন্দেহজনক কাউকে পাওয়া যায়নি।

তোতন যেন একটা আলো দেখতে পেয়েছিলো, এমনভাবে মুচকি মুচকি হাসছিলো। ইন্সপেক্টর দত্ত কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলেন,

— আপনি হাসছেন যে!

— আসলে আমার টেনশন হলেই আমি হাসি। ডাক্তারের ইন্সট্রাকশন। ভালো কথা, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কী বলছে? ড্রাগ ওভারডোজ কি?

আকাশ থেকে ‌‌পড়েন ইন্সপেক্টর, ‘আপনি কী ক’রে জানলেন?’

তোতন বাধা দ্যায়, ‘না না, জানি না। একটা স্পেকুলেশন ছুঁড়লাম। মিলে গ্যালো।‘

— হ্যাঁ, সত্যিই ড্রাগ ওভারডোজ।

— অর্থাৎ হত্যার প্যাটার্ন এক। তাহলে আমি ডাউটলেস যে, ঐ কনস্টেবল সুবোধ পাণ্ডের মৃত্যূও ড্রাগ ওভারডোজেই হয়ে থাকবে।

ইন্সপেক্টর সন্দেহ প্রকাশ করেন, ‘আপনি কি কোনো সিরিয়াল কিলারের কথা বলতে চাইছেন?

— সিরিয়াল কিলিং তো বটেই। কিন্তু এটা মনে হচ্ছে, তথাকথিত সিরিয়াল কিলিং নয়। আমি বলতে চাইছি, মেন্টাল সেটআপের গণ্ডগোলে এইসব হত্যা নয়। এর মধ্যে একটা রহস্য আছে, একটা পরিকল্পনা আছে। একটা মিশন-মিশন গন্ধ পাচ্ছি। অন্ততঃ গন্ধটা আমার নাকে আসছে।

ইন্সপেক্টর সমর্থন করেন আর বলেন, ‘ঐ জন্যেই তো…। এমনি ক্রাইম ওয়েস্ট বেঙ্গলে এ্যাতো বেশি যে, বলার নয়। এমনি ক্রাইম, পোলিটিক্যাল ক্রাইম। এর মধ্যে পুলিশের পক্ষে রহস্য ভেদ করা নেক্সট টু ইম্পসিবল। তাই তো আপনার ওপর ছেড়ে দিতে হলো।

তোতন ইন্সপেক্টরকে বললো, ‘আপনি আমাকে একবার ঐ মৃত ডিএসপি.’র কোয়াটার্সটা চিনিয়ে দেবেন তো।‘

— কেন! ওখানে আপনি গিয়ে কী করবেন! তিনি তো আর নেই।

— যদি তা-ই হয়, তবে আপনি তাঁর মৃত্যুর খবর আমায় দিলেন কেন? নিশ্চয়ই রেলিভ্যান্স কিছু আছে। তাছাড়া একটা ভিক্টিম ফ্যামিলি। সেটাও তো ভাববেন।

— তা বটে। তবে ম্যাডাম তো আপনাকে চেনেনও না। তার চেয়ে আমি সাথে ক’রে নিয়ে যাবো।

তোতন আবার বাধা দ্যায়, ‘না না। আপনাকে সব সময় বিরক্ত করবো না। যেটা আমি একা পারবো, তো পারবো। আপনাকে তো লাগবে কোথাও ফোর্স খাটাবার সময়ে। আপনি আমাকে লোকেশনটা একটা চিরকুটে লিখে দেবেন তো। আমার তো মনে হয়, এই হত্যাকাণ্ডে ঐ ফ্যামিলিও একটা ভিক্টিম। ঐ ফ্যামিলি বাদ দিলে চলবে না। এবার অন্য মৃত্যু দুটো বলুন।

ইন্সপেক্টর গুছিয়ে বলতে শুরু করেন। ‘এই সুবোধ পাণ্ডে হলো কনস্টেবল। বিহারী। এর একটা গুণ ছিল, ও ছিল ভালো ইলেকট্রিশিয়ান। বোধহয় এখানে জয়েন করার আগে এটাই ওর জীবিকা ছিল। ডিপার্টমেন্টের যত প্রশাসনিক কাজ ও করতো, তার চেয়ে বেশি ইলেকট্রিকের কাজ ওকে ক’রে বেড়াতে হতো। ওর হাতের কাজ ছিল নিখুঁত। থানা, পুলিশ কোয়াটার্স আর সাহেবদের বাংলো আর কোয়াটার্সে অষ্টপ্রহর ওকে ছুটতে হতো।

— তার মানে এই দাঁড়ায়, সুবোধ পাণ্ডের এ্যাক্সেস ছিলো সব জায়গায়? তাই তো?

— তা তো বটেই। ইলেকট্রিশিয়ান আর প্লাম্বার্স… এদের তো বাড়ির অন্দরমহল অবধি ফ্রী-এ্যাক্সেস।

একদিন সুবোধ বেপাত্তা। ‘নেই নেই’ ক’রে ওকে খুঁজেই পাওয়া গ্যলো না। অবশেষে দু’দিন পরে সকালে পুকুরে স্নান করতে গিয়ে ওর বডি দেখতে পায় আর এক কনস্টেবল।‘

ওদিকে সেইদিনই সিটি কনফেকশনার্সের মালিক… কী যেন নাম! ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। মণিময় দাশকে তারই দোকানে মৃত অবস্থায় পাওয়া গ্যালো। তবে একটা কথা বলা হয়নি মিঃ চ্যাটার্জ্জী, এই ড্রাগ ওভারডোজ যে ঘটেছে, তাতে এসপি. বা মণিময়ের পিএম. রিপোর্ট বলেছে, বোঝা গ্যাছে যে, এরা কেউই স্বেচ্ছায় ড্রাগ নেয়নি। বাই ফোর্স ড্রাগ পুশ করা হয়েছে। মানে… ম্যাসিভ ওভারডোজ করা হয়েছে।

তোতন যোগ করলো, ‘তার অর্থ এই যে, এইসবই  হোমিসাইড। অর্থাৎ সুবোধও নেহাৎ স্নাধ করতে গিয়ে মরেনি।’

তোতন ইন্সপেক্টরকে এবার মনে করালো, ‘হোটেলে তাহলে জানিয়ে দিন, বোর্ডারদের স্টেটমেন্ট নিতে যাবো আর হোটেলের সিসি ক্যামেরা আর হোটেলের বাইরে দেখলাম, দুটো সরকারী সিসি ক্যামেরা আছে, তার ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ তারিখের অর্থাৎ হোটেলের ক্যামেরা অফ্ থাকার আগে-পরের সময়কার রেকর্ড চাই।

— আমি বলি কি, হোটেলের স্টেটমেন্ট আজকেই করুন না। ও বেলায়। আমি এর মধ্যে সিসি ক্যামেরার রেকর্ড নিয়ে নিচ্ছি।

ইন্সপেক্টরের কথায় খুশি হয়ে তোতন জানায়, ‘গুড। সে তো খুব ভালো। তাহলে ঐ কথাই রইলো। আজ বিকেল ৪টে। হঠাৎই তোতন ইন্সপেক্টরকে প্রশ্ন করে, ‘আচ্ছা, এই মৃত প্রদ্যুৎ রায় যে ড্রাগ পাচারে যুক্ত ছিলেন, এর কোনো আঁচ কি আপনারা পেয়েছিলেন?’

হামলে প’ড়ে পরিক্ষিৎ বলেন, ‘না না। আমরা বা আমাদের নেটওয়ার্ক এমন কোনো ইনফর্মেশন দ্যায়নি। একজন পুলিশের বড় অফিসার ড্রাগ পেডলিং করবেন, এ কি বিশ্বাসযোগ্য! তাঁরা আর্থিক আঁতাত রাখতে পারে। কিন্তু তাদের ঘরে মাদক… এমন হয় না। তাছাড়া আপনি বললেন না, এইসব জাতীয় মাফিয়ারা এমন ছোটমোট অফিসারের তোয়াক্কা করে না। এদের নৌকো বড় ঘাটে বাঁধা থাকে। তবে ড্রাগ নিয়ে তিনি যে নানা তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন, এমন একটা আঁচ আমি অন্ততঃ পেয়েছিলাম। সিটি কনফেকশনার্সে দু’দুবার রেইড করতে আমরা ডিএসপি. সাহেবের নেতৃত্বেই গিয়েছিলাম। ওঁর নেটওয়ার্কের বিষয়ে আর একজন এসআই.ও টের পেয়েছে। আমার কাছে এমন ইঙ্গিত দিচ্ছিলো।

তোতন গভীর চিন্তায় ডুবে যায়। তারপর ইন্সপেক্টর ওর তেমন সাড়া না পেয়ে চুপচাপ নিজেই উঠে চ’লে যান।

————

Pages ( 10 of 18 ): « এর আগে1 ... 89 10 1112 ... 18তারপর »

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post বিষ্ণুপুরে হত্যাকাণ্ড | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
Next post বেকারত্ব জীবন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | করিমুল ইসলাম | Bengali Social Story | 9F10