বিষাক্ত রক্তাহুতি | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | পার্থিব ঘোষ | Bengali Thriller Story | 9F10
0 (0)

(৫)

বিকেল ৪টে বাজে। ইন্সপেক্টর পরিক্ষিৎ হোটেলে এসে হাজির। তোতন প্রস্তুতই ছিল। ঘর থেকে সোজা রিসেপশন আর রিসেপশন থেকে ফোন ক’রে সোজা ডেকে আনা হলো ম্যানেজারকে। তাকে সঙ্গে নিয়েই হোটেলের “ময়ুরী” নামক ব্লকে পৌঁছলো ওরা।

  ময়ুরী, কাজরী আর বল্লরী— এই তিনটে ব্লকের তিনটে ক’রে চারতলা বিল্ডিং নিয়ে বিরাট কম্পাউণ্ডের সম্পূর্ণ হোটেল “হোটেল সারদা”। এই ‘ময়ূরী’ ব্লকের একদম তিনতলায় ৩৩/বি নম্বর রুমেই এসপি. সাহেবের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তিনি এখানে কেন এসেছিলেন, জানা যায়নি। মিস রাখী রায়ের বোর্ডিং করা বিলাসবহুল রুমেই তিনি রাতে এসেছিলেন। সকালে চা দিতে এসে রুম-সার্ভিস বয় মৃতদেহ আবিষ্কার করে। মিস রাখী রায়ের দেখা মেলেনি। তার সুটকেসটি তিনি রেখেই গ্যাছেন। আর রেখে গ্যাছেন একটা প্রমাণ সাইজের সেক্সডল।

— সেক্সডল! আচ্ছা।

— হ্যাঁ, সেক্সডল। সুটকেসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর কিছুই পাওয়া যায়নি। সন্দেহ, তার হাতেই মৃত্যু ঘটেছে এসপি. রাকেশ যাদবের।

রাকেশ যাদব ১৯৮০ সালের ব্যাচের আইপিএস.। ফোর্সে জয়েন করবার যে সাধারণ শারিরীক গঠন, তা আজ আর তাঁর ছিল না। মদ্যপান, অসংলগ্ন জীবনযাপন তাঁকে বেমক্কা মেদবহুল ক’রে তুলেছিলো। তাঁর নিজের বাংলো বাঁকুড়া স্টেশনের কাছেই যেখানে আরো নানা তাবড় আধিকারিকদের বাংলো রয়েছে, সেখানে।

তিনি কেন এই এতটা দূরে এসে একজন অজানা অচেনা মহিলার নিজের রুমে একেবারে রাতের অন্ধকারে এসে উঠেছিলেন, এই প্রশ্ন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ছোট থেকে বড় অর্থাৎ কনস্টেবল থেকে আইজি. পর্যন্ত সকলের মনেই উঁকি দিয়েছে। উত্তর একটাই মিলেছে— চরিত্রদোষ। পড়ন্ত বয়সের স্খলন ছাড়া আর কী! জানা গ্যাছে, এসপি.র স্ত্রী দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী পেশেন্ট।

তাহলে কি হানিট্র্যাপ? এ কি মাফিয়াদের ষড়যন্ত্র! হয়তো আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে কোনো অসন্তোষ ছিল। তোতন বিলক্ষণ জানে, এই এসপি. থেকে শুরু ক’রে ওপর তলা পর্যন্ত অফিসারেরা বড় বড় এ্যান্টিসোশালদের থেকে খেয়ে খেয়ে একেবারে কালভোষ মাছ হয়ে ব’সে থাকে। এরা চাকরী জীবনেই যা গুছোবার গুছিয়ে নেয়। মন্ত্রী, আমলা থেকে শুরু ক’রে নেতা, কর্মী, ক্যাডার, চেয়ারম্যান, প্রধান আর এই প্রশাসন খেয়ে খেয়ে দেশটাকে দেউলিয়া ক’রে ছাড়ছে। এই যে তথাকথিত গণতন্ত্র, ফেডারেল স্ট্রাকচার, দেশের সংবিধান… এইসব এর জন্যে দায়ী। এ দেশের এখনও চাবুক খাওয়ার প্রয়োজন ছিল। রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা পায়নি এদেশ‌। তাই রক্তের মূল্য দিলো না। শুধু লুটেপুটে খেলো। তোতন এও মনে করে, অজ্ঞান অন্ধ দেশবাসীও এজন্য দায়ী। তারা এদেরকেই নির্বাচনে জিতিয়ে দ্যায়। তবু কিছু মানুষ আজও এদেশের কাজ উব্জে বিনা স্বার্থে করে, আর সাধারণ মানুষ নীরবে কাজ করে ব’লেই দেশটা বোধহয় আজও বেঁচে আছে।

এবার “ময়ূরী”র ৩৩/সি’তে কলিংবেল টেপা হলো। দরজা একটু ফাঁক ক’রে যে ব্যক্তি দেখা দিলেন, তিনি ক্ষেপে আগুন হয়েছিলেন।

ম্যানেজার বললেন, ‘একটু খুলুন‌। সঙ্গে পুলিশ আছে।‘

দরজা খুললো। তোতনরা তিনজন ভেতরে ঢুকলো। পরিক্ষিৎ দত্ত বললেন, ‘আমি থানার আইসি.। আপনাকে একটু বিরক্ত করবো‌।‘

— আর কী বিরক্ত করবেন! হোটেলে আজ দু’দিন আটকে রেখেছেন। আমি একজন ডাক্তার। এখানে আমার তিনটে নার্সিংহোম রয়েছে। আমি আটকে আছি, মানে বুঝতে পারছেন?

— আপনি শান্ত হোন। এবার তোতনকে দেখিয়ে বললেন, ‘ইনি গোয়েন্দা শতদল চ্যাটার্জ্জী। আপনার সাথে দুটো কথা বলবেন।

— আবার কী কথা! এই তো পুলিশ প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার করলো। আবারো কথা! আমায় ছাড়ুন। মানুষের জীবন মৃত্যু আমার হাতে রয়েছে। গুরুত্ব বোঝেন?

এবার তোতন হস্তক্ষেপ করে, ‘এখানেও যে একটি মৃত্যু ঘটেছে, ডক্টর। এটাও তো গুরুত্বপূর্ণ। আপনিও একটু বুঝুন। আমি কলকাতা থেকে এসেছি। আপনার সাথে দুটো কথা ব’লেই ছেড়ে দেবো।‘

Pages ( 11 of 18 ): « এর আগে1 ... 910 11 1213 ... 18তারপর »

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post বিষ্ণুপুরে হত্যাকাণ্ড | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
Next post বেকারত্ব জীবন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | করিমুল ইসলাম | Bengali Social Story | 9F10