অবশেষে ঠাণ্ডা হয় ডাক্তার। ‘বলুন। আপনার নাম আমি নিউজপেপারে পড়েছি। বলুন, কী জিজ্ঞাসা করবেন।‘
— ডিপার্টমেন্ট তদন্তের ভার আমাকে দিয়েছে। আমাকে তো আমার কাজটা করতে হবে। এখানে একটা হোমিসাইড ঘটেছে। আর ভিক্টিম আপনাদেরই রক্ষক এসপি. সাহেব। একটু কো-অপারেট করুন।
— বলুন। তাড়াতাড়ি বলুন।
— আপনার নাম প্লীজ।
— আদিত্য সমাজপতি।
— আপনার বাড়ি?
— বাঁকুড়ার হাউজিং এস্টেট।
— আপনি কি এসপি. সাহেবকে বাই ফেস চেনেন?
— না না। আমরা কি চোর, গুণ্ডা না মাফিয়া যে, ওঁদের চিনবো! আমরা চিকিৎসা করি। পোলিসের সাথে আমাদের কী সম্পর্ক যে, বাই ফেস চিনবো!
প্রশ্ন : আপনাদের হাতেও প্রাণ যায়। হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে তো পুলিশকে যেতে হয়। জনরোষ থেকে আপনাদেরকে তো রক্ষা করতে হয়। তাই প্রশ্ন।
উত্তর : সে তো বড়জোর এসআই. বা আইসি.। এসপি. কি ফোরফ্রন্টে আসেন!
প্রশ্ন : এই যে আপনার পাশের রুমে মিস রাখী রায় ছিলেন, তাকে কি আপনি দেখেছেন?
উত্তর : আরে মশাই, রুমে ঢুকে পেশেন্টদের নানা রিপোর্ট পড়া, কেস স্টাডি করা… কাজ থাকে, স্যার। হোটেলের রুম নেওয়া তো শুধু রাতটা কাটানোর জন্য। এখানে অনর্গল কে আসছে, কে যাচ্ছে, এসব খবর কি জানা সম্ভব! আমি তো ছুটি কাটাতে ফ্যামিলি ট্যুরে আসিনি।
প্রশ্ন : তবু… যদি চোখে প’ড়ে থাকে…
উত্তর : নো স্যার। ইনফ্যাক্ট যখন প্রথম এই নিয়ে হৈ হৈ চলছে, তখন আমি নার্সিংহোমে বেরিয়ে যাই। কী হয়েছে, সেটাই জানতে পারিনি। হাজার বোর্ডার, তাদের হাজার প্রবলেম।
তোতন ডাক্তারকে অব্যাহতি দ্যায়। ‘মিঃ দত্ত, এঁকে ছেড়ে দিতে পারেন। ফ্রী।‘ তারপর ডক্টর সমাজপতি’কে বলে, ‘ডক্টর, আপনি মুক্ত। আর সমস্যা হবে না আপনার। এবার চলুন, ও পাশের রুমে।‘
ম্যানেজার বললেন, ‘এবার তাহলে ৩৫/এ।‘
৩৩/বি’এর উল্টোদিকেই ৩৫/এ। সেখানে কলিংবেল বাজানো হলো। দরজা খুললেন একজন ষাটোর্ধ্ব মানুষ। গলা ভর্তি নানা রংয়ের পুঁতি বা পাথরের মালা। স্পষ্টতঃ এ একজন জ্যোতিষবিদ। গণৎকারও হতে পারে।
আবার ম্যানেজার বললেন, ‘সুপ্রভাত। পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে এসেছেন। কিছু কথা আছে।‘
— আপনাদের হোটেলে উঠে কি পাপ করেছি, মশাই! কাজে বেরোতে পারছি না! এসব কী? ম্যানেজারকে দেখেই তাঁকে এই প্রশ্ন ছুঁড়লেন তিনি।
ইন্সপেক্টর : (ধমকে) আপনাকে তো বলাই আছে, পুলিশ আসবে। তাই নয় কি?
— কেন পুলিশ আসবে? আমরা কি খুনী আসামী?
তোতন ধমকে ওঠে, ‘যত কথা বাড়াচ্ছেন, ততই আপনার বিপদ বাড়ছে। আপনার আজকের ভাগ্য ভালো যাবে না।‘
এবার গণৎকার ঘাবড়ায়। দরজা পুরো খুলে বলেন, ‘আসুন। ভেতরে আসুন।‘
ওরা ঢোটে ভেতরে।
তোতন : তাহলে কেন অযথা সময় নষ্ট করছিলেন! আমি এই এসপি. সাহেব মৃত্যুর তদন্ত করছি। আমার নাম শতদল চ্যাটার্জ্জী। এবার কিছু প্রশ্ন করি?
গণৎকার : করুন, আবার কী জানতে চান।
তোতন : আপনার নাম?
গণৎকার : আচার্য্য ধ্যানেশরঞ্জন ভট্টাচার্য। আমি জ্যোতিষচর্চা করি। দেশে-বিদেশের মানুষ আমাকে চেনেন।
তোতন : আমরা চিনি না আপনাকে। আপনি কবে উঠেছেন এই হোটেলে?
গণৎকার : আজ নিয়ে সাতদিন।
তোতন : আপনার বাড়ি?
গণৎকার : কলকাতা। বালিগঞ্জ।
তোতন : এখানে কেন আসেন?
গণৎকার : আমার তিনটে চেম্বার আছে এখানে। প্রচুর যজমান।
তোতন : আপনি কি এসপি. সাহেব খুন হয়েছেন, তা জানেন?
গণৎকার : জানবো না! সকলেই জানে। উনি যে হোটেলে উঠেছেন, তাও জানি। ওনার ছেলেমেয়ের কোষ্ঠিবিচার আমিই তো করেছি। উনি হোটেলে ঢুকলেন আর আমার সঙ্গে দেখাও তো হলো।
তোতন : ভাগ্যিস স্বীকার করলেন। তা নয়তো বিপদে পড়তেন। (এবার তোতন একটু রসিকতা করলো) সিসি ক্যামেরায় আপনাকে এসপি. সাহেবের সাথে কথা বলতে দ্যাখা গ্যাছে।
এই কথা বলার সাথে সাথে ম্যানেজার আর মিঃ দত্ত আচমকা ওর দিকে তাকায়। তারা বোঝে না, এটা তোতনের নিছক রসিকতা।
গণৎকার : গোপন করবো কেন! কথা বললাম তো কী হয়েছে! কথা বললে কি খুনী হতে হবে!
তোতন : না, তা হবে না বটে। তবে খুনীকে চিনিয়ে দিতেও তো হেল্প হয়।
গণৎকার : ও, তাই বুঝি!
তোতন : তাহলে বুঝতেই পারছেন, এই ঘটনায় আপনার নাম জড়িয়ে যাচ্ছে? আপনাকে পুলিশ যতদিন এখানে আটকে রাখবে, ততদিন চুপচাপ থাকবেন। রা-টি কাটবেন না। আপনার বিপদ হবে।