বিষাক্ত রক্তাহুতি | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | পার্থিব ঘোষ | Bengali Thriller Story | 9F10
0 (0)

(৭)

পরদিন তোতন কাউকে না ব’লে সোজা হাঁটা দিলো মৃত ডিএসপি.  প্রদ্যুৎ রায়ের কোয়াটার্সে। ইন্সপেক্টর পরিক্ষিৎ আগেই কোয়াটার্সের লোকেশন দিয়েছিলেন। একটু এপাশে ওপাশে জিজ্ঞাসাবাদ ক’রে পৌঁছলো। দেখলো, এ তো তথাকথিত পুলিশ কোয়াটার্স নয়। একটা দোতলা বাড়ির দোতলাটা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানেই থাকেন ডিএসপি. প্রদ্যুৎ রায়ের স্ত্রী। আসলে ডিএসপি.কে কোনো আলাদা অফিস ডিপার্টমেন্ট দ্যায় না। এসপি.র অফিসেই একপাশে তাদের অফিস থাকে। ডিএসপি’র স্বাধীনতা বেঁধে দেওয়া থাকে। আর যেমন তেমন একটা কোয়াটার্স গছিয়ে দ্যায়। এ তো জঙ্গী অধ্যুষিত জায়গা নয় যে, আয়েশ আর নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো দেবে।

কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হলো তোতনকে। ওকে দোতলায় উঠতে দেখে একতলায় ব’সে থাকা একজন হোমগার্ড জিজ্ঞেস করলো,

— আপনি কোথায় যাবেন?

তোতন উত্তর দিলো, ‘ম্যাডামের সাথে দেখা করবো।‘

হোমগার্ড জানালো, ‘ম্যাডাম তো নেই। উনি আজ দিন সাতেক আগে ওনার বাবা’র কাছে গ্যাছেন।‘

— তুমি জানো, বাবা’র বাড়ি কোথায়?

— না স্যার। জানি না। একবার যেন শুনেছিলাম মেদিনীপুর। মনে পড়ছে।

— আর ওদের মালপত্র?

— ম্যাডাম ব’লে গ্যাছেন, ক’টা দিন পরে বাবাকে নিয়ে ফিরে সব নিয়ে যাবেন।

তোতন ওখান থেকেই ফোনে ধরলো পরিক্ষিৎ দত্তকে।

— হ্যালো মিঃ দত্ত।

— হ্যাঁ, বলুন, মিঃ চ্যাটার্জ্জী।

— প্রদ্যুৎ রায়ের স্ত্রী আজ দিন সাতেক আগে নাকি ওঁর বাবা’র কাছে গ্যাছেন।

— ও। তাই নাকি? আর মালপত্র?

— ফিরে এসে নিয়ে যাবেন। আপনি কি ওঁর বাপের বাড়ি কোথায়, জানেন?

পরিক্ষিৎ বললেন, ‘না। তবে স্যারের বাড়ির এ্যাড্রেস জানি।‘

— আমায় টেক্সট করুন তো।

— করছি। আপনি কি যাবেন?

তোতন জানায়, ‘প্রয়োজন পড়লে সমুদ্রের তলায়ও যেতে হতে পারে, মিঃ দত্ত। ঐ পরিবারের কাছে অনেক কিছু জানার আছে।‘

— আমি কি সাথে যাবো?

— না না। আপনি থানা সামলান।

— বুঝলাম। আপনি আমাকে নেবেন না।

পরিক্ষিৎবাবু’র কথাগুলো বেশ হতাশাজনক শোনালো। তোতন আশ্বস্ত ক’রে বললো, ‘আপনাকে ছাড়া কি আমি এগোতে পারবো নাকি! তাই তো আপনাকেই বেছে নিয়েছি। দুঃখ পাবেন না। সব বোলবোখন সময় হলে।

এসে গ্যালো ইন্সপেক্টরের মেসেজ। মেদিনীপুর, গড়বেতা। হোটেলে ফিরে তোতন দেখলো, মা আর মালিনী লক্ ক’রে বেরিয়েছে। রিসেপশন থেকে জানালো যে, ওরা মন্দির দেখতে গ্যাছে। তোতন বুঝলো, মায়ের কনস্টেবল সঙ্গে নেওয়ার ইচ্ছে নেই। তাহলে ছেলেকে বলতো। রিসেপশনে ব’লে রাখলো, ওরা ফিরলে যেন জানিয়ে দ্যায় তোতন মেদিনীপুরে গিয়েছে। ফিরতে রাত হবে।

এরপর হোটেলে খাবার অর্ডার দিয়ে স্নান সেরে নিলো তোতন। তারপর খেয়েদেয়ে সোজা ট্রেন টু মেদিনীপুর।

স্টেশনে নেমে একটা প্রাইভেট কার ভাড়া ক’রে সোজা গরবেতা। একটু খুঁজতে হলো প্রদ্যুৎ রায়ের বাড়ি। কিন্তু মিলেও গ্যালো। পরিক্ষিৎ খুব সুন্দর লোকেশন দিয়েছেন।

দরজায় নক্ করতেই এক প্রৌঢ় ব্যক্তি দরজা খুললেন। তোতন বললো, ‘এটা কি প্রদ্যুৎ স্যারের বাড়ি?’

প্রৌঢ় বললেন, ‘হ্যাঁ, এটাই তার বাড়ি। কিন্তু…’

— আমি জানি সব। আমি সেই বিষয়েই এসেছি। আমি ম্যাডাম রাখী রায়ের সাথে কথা বলতে চাই।

— আপনাকে কে বললো, সে এখানে এসেছে? আপনি কেনই বা তাকে চাইছেন?

— আমি প্রদ্যুৎ রায়ের বিষয়ে তদন্ত করছি। তাই কথা বলা প্রয়োজন। আপনারা নিশ্চয়ই চান, যে বা যারা তাঁর মৃত্যুর কারণ, তাদের শাস্তি হোক?

প্রৌঢ় তোতনকে ডেকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। দু’চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘সে তো ডিপার্টমেন্টের কাছে অপরাধী আর কেসও তো ক্লোজড। আর তদন্ত কী ক’রে হবে? সব তো শেষ।‘

তোতন প্রৌঢ়কে আশ্বস্ত করে, ‘সব শেষ হয়নি, স্যার। আপনার পুত্রবধূ কেস রি-ওপেন করিয়েছেন।

—বৌমা! কী বলছেন!

— হ্যাঁ, আর আমাকেই তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। অপরাধী শাস্তি পাবেই। আমি কথা দিচ্ছি। আপনারা অনেক কেঁদেছেন। এবার ওদের কান্নার পালা।

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post বিষ্ণুপুরে হত্যাকাণ্ড | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
Next post বেকারত্ব জীবন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | করিমুল ইসলাম | Bengali Social Story | 9F10