বিষাক্ত রক্তাহুতি | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | পার্থিব ঘোষ | Bengali Thriller Story | 9F10
0 (0)

(২)

পরের দিন তোতনদের প্রোগ্রাম জয়রামবাটি। সেখানে প্রার্থনায় থাকা, প্রসাদ খাওয়া, মানে পংক্তিভোজনে দুপুরের খাবার খাওয়া… ঐ খিচুড়ি, ভাজা, লাবড়া আর চাটনি খাওয়ার প্রোগ্রাম। মায়ের আদেশ। প্রতিদিন জয়রামবাটিতে এই পংক্তিভোজন চলে। শেষে  খুশি হয়ে যদি কেউ ইচ্ছেমত কোনো অনুদান দ্যায়, দিতে পারে। কোনো জোরাজুরি নেই। একশো টাকাতেও কোনো অসুবিধা নেই।

এইসব বিষয়ে তোতনের কোনো আগ্রহ নেই। শুধু মায়ের সাধপূরণ। ও ভাবেইনি, এখানে ওর মধুদা’র ফোন আসবে, ডিপার্টমেন্ট ইনভেস্টিগেশনে ওকে চাইবে, আর এই গৌরবময় ইতিহাস দর্শন ওর স্বপ্নই রয়ে যাবে। ও তো বেড়াবার মুডেই ছিল। সব সময় কাজ আর কাজ ওর পছন্দ নয়। ওর মতে, পরিবারের জন্য কাজ। কাজের জন্য পরিবার নয়।

বিষ্ণুপুর ওর কাছে বিশেষ আকর্ষণ। এখানে হাজার মন্দির আর তাতে  পোড়ামাটির কাজ যে পৃথিবী বিখ্যাত, তা ও জানে।

ইনোভা গাড়িটি নিয়ে পরদিন সকালেই ওদের গন্তব্য জয়রামবাটি। মা আর মালিনী স্নান-ট্নান সেরে ওকে তাড়া দিয়ে স্নান করিয়েছে।  সাদা পায়জামা আর পাঞ্জাবি চাপিয়েছে গায়ে। একেবারে গুড বয় সেজেছে। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্রটি ঠিকই কোমরে গুঁজেছে।

মা বলেছেন, ‘ওসব নিয়ে পুণ্যস্থানে যেতে নেই রে।‘

ও-ও অকাতরে বলেছে, ‘লোকে চশমা, সানগ্লাস এইসব প’ড়ে যাবে না? এটা আমার কাছে তেমনই। যে জীবিকা আমার, তাতে সাবধান থাকতে হয়, মা। বিপদ কি ব’লে আসে!’

জয়রামবাটি, একটা ছোট গ্রাম। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর থেকে সাতাশ মাইল দূরে অবস্থিত। এই স্থান সিহড়-এর পূবদিকে দুই মাইল এবং শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের পবিত্র জন্মস্থান কামারপুকুরের তিন মাইল পশ্চিমে।

এই পবিত্র স্থান ধর্ম, কর্ম এবং মোক্ষের বার্তা দ্যায় ব’লে প্রচলিত। ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের আধ্যাত্মিক সঙ্গী শ্রী শ্রী সারদা দেবী ১৮৫৩ সালে জয়রামবাটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাহ্যিকভাবে তিনি প্রাকৃতিক ও ঐশ্বরিক অস্তিত্ব লুকিয়ে রাখার জন্য নাকি নিজেকে বিশ্বের কাছে একজন সাধারণ মহিলা হিসাবে উপস্থাপন করেছিলেন। ঐশ্বরিক মাতৃত্বে আবৃত এই ব্যক্তিত্ব সত্যই জ্ঞান, কল্যাণ এবং ক্ষমার অবতার ছিলেন ব’লে ভক্তরা মানে। তিনি আধুনিক যুগের একজন সত্যব্যক্তিত্ব।

তোতন জানে, এইসব প্রচার মাত্র। এসব ও একদম বরদাস্ত করতে পারে না। ওর মনে হয়, ঈশ্বরের সব চেলা-চামুণ্ডা এই দেশেই বা কেন জন্মায়! যত “শ্রী শ্রী” সবই কি বাংলা তথা ভারতবর্ষে! ঈশ্বরের দূত হয়ে এই পৃথিবীতে আর কি কোনো দেশ-টেশে যেতে নেই! ঐসব দেশগুলো এইসব বাবা, ঠাকুর, গুরুদেব, জগজ্জননী ইত্যাদি ছাড়া কতদূর এগিয়ে গ্যালো, আর এই দেশ এইসব বুজরুকির মধ্যে মাথা খুঁড়ে মরছে!

কিন্তু কাকে বলবে এইসব! আমাকে পেলে রেগেমেগে আমাকেই আক্রমণ করে। এসব নিয়ে পড়াশুনো ও করেনি, এমন নয়। “রামকৃষ্ণ কথামৃত”ও ওর পড়া। ও পড়েছে, শ্রীশ্রীঠাকুর ৩৪ বছর বেঁচে ছিলেন পবিত্র মায়ের সংস্পর্শে। শ্রীশ্রীঠাকুরের সমস্ত শিষ্যের মা ও গুরুর জন্মস্থান এবং চিরন্তন শান্তি ও আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য মানুষের কাছে পবিত্র তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে এই জয়রামবাটি।

শ্রী শ্রী মায়ের পিতা শ্রী রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের আসল বাড়ি ছিল এই স্থানে। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব এবং শ্রী শ্রী মায়ের মধ্যে ঐশ্বরিক বিবাহের ব্যবস্থা নাকি এখানেই করা হয়েছিল। এখানেই পবিত্র ‘মা’-কে যথাযথ ‘ভোগ’ ও আচার-অনুষ্ঠান দিয়ে প্রতিদিন উপাসনা করা হয়। সেই ভোগ হলো তোতনদের আজকে দুপুরের খাবার। তোতন এও জানে, এই হাতির খরচ যোগায় কালো টাকা।

তোতন ভাবে, “কিল খেতে পারো ক’টা? উত্তর : একটাও না। যদি ধ’রে কিলোই? উত্তর :  তবে যে ক’টা পারো।“ মায়ের কিল থেকে বাঁচার জন্য আজ ওকে তাই ভক্তও সাজতে হয়েছে, পংক্তিভোজনে খেতেও বসতে হয়েছে।

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post বিষ্ণুপুরে হত্যাকাণ্ড | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
Next post বেকারত্ব জীবন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | করিমুল ইসলাম | Bengali Social Story | 9F10