(৩)
রাতেই আমিই ফোন করলাম। ব্যঙ্গ ক’রে বললাম,
— কী হে গোয়েন্দা, কোথায় কী বাধিয়ে ব’সে আছো?
তোতন অনুমান করে মধুদা কি কারণে ফোন করেছে। কিন্তু না-জানার ভান ক’রে বললো, ‘আমি তো মা আর মালিনীকে নিয়ে বিষ্ণুপুরে এসেছি। বেড়াতে। এই তো কাল জয়রামবাটিতে ভোগ খেয়ে এলাম।‘
— তুই… আবার সারদা মায়ের ভোগ! আহা রে! মায়ের খপ্পরে প’ড়ে বেচারার কী দুর্ভোগ! এদিকে আইজি. সাহেব তোর খবর নিচ্ছেন কেন?
— তোমার ডিপার্টমেন্ট। তারাই জানে। তবে তোমার ভাইয়ের খবর লোকে তাদের দরকারে নেয়, মধুদা। আমি কাণ্ড ঘটালে খবর নেয় না। কাগজে বেরোয়। এবার বলো, আইজি. সাহেব বললেনটা কী।
— এই… তোর ওপর ভরসা করা যায় কিনা, তার খবর নিচ্ছিলেন।
তোতন বিদ্রূপ ক’রে বললো, ‘ন্যাকা! এদিকে তোমাদের বাঁকুড়ার এসপি. তো খুন হয়েছে। তাঁর ওপরও তো ডিপার্টমেন্ট ভরসা করেছিলো! কী হলো? নিজেই খুন হয়ে গ্যালো। আর এইজন্যই আমার খোঁজ পড়েছে।‘
এবার ও আচমকা গম্ভীর হয়ে আবার বললো, ‘দ্যাখো মধুদা, একজন এসপি. খুন হলো…। চাড্ডিখানি বিষয় নয়। এমন কখনও শুনেছো? এর মধ্যে গূঢ় রহস্য তো আছেই আছে। এই এসপি. লোকটার একটু ইন্স এ্যাণ্ড আউটস আমাকে বলতে পারো? আমার তো মনে হয়, ভদ্রলোকটি কোনো বড়সড়ো গ্যাঙ্গ ধ’রে ফেলছিলেন। তাই প্রাণ দিতে হলো। কী বলো তুমি?’
— ডিটেইলসে তো জানি না। তবে লোকটার বদনাম আছে মার্কেটে। আর তুই যা ভাবছিস, তা নয় রে। অনেক ভাইস ছিল এই লোকটার। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি না রেখেই সম্পত্তি করেছে। হাওয়ালাতেও জড়িত ব’লে শোনা যায়। ডিপার্টমেন্ট তল পাচ্ছে না। অত্যন্ত কনফিডেন্ট আর স্কিল্ড অফিসার। এইটুকুই জানি। তবু একজন এসপি. খুন মানে তো বিরাট ব্যাপার রে! তুই কি কেসটা নিবি? কী ভাবছিস?
— তুমি তো জানো, লক্ষ্মী না পেলে তোমার ভাইটি নড়ে না। তবে এখানে একটু চেনাজানা বেরিয়েছে। একটু খোঁচাখুঁচি ক’রে দেখি।
আজ আইজি. সাহেবকে মীট ক’রে এসেছে তোতন। ডিপার্টমেন্ট পুরো দায়িত্ব ছেড়েছে তোতনের ওপর। ব্যয়ভার ডিপার্টমেন্ট বহন করবে। কথা দিয়েছে। তোতন কিন্তু বুঝেছে, ওসি. পরিক্ষিৎ দত্ত ডিপার্টমেন্টের পেটের খবর জানে অনেককিছু। তোতন ডিআইজি. সাহেবকে ব’লে দত্তকেই তদন্তের সহায়ক হিসেবে রেখেছে। পুলিশ চাই। পুলিশ ছাড়া তো হুটহাট মুভ করা মুশকিল।
অবশেষে মা আর মালিনীকে সমস্যাটা বুঝিয়ে-সুজিয়ে আর গাড়ির ড্রাইভারকে ফ্যামিলি ট্রিপটা নিজের পরিবারের মতো দায়িত্ব নিয়ে ঘুরিয়ে দিতে বলেছে। ওর পক্ষে আর হলো না। তোতন নিজেই জানে না, ওকে কখন কোথায় বেরিয়ে যেতে হবে। মা একটু গাইগুই করছিল। তবে উপযুক্ত সহধর্মিনীর মতো মালিনী মা’কে ম্যানেজ করেছে।
পেছনে প’ড়ে রইলো বিষ্ণুপুরের ইতিহাস। প’ড়ে রইলো ১৬০০ খৃস্টাব্দের প্রাচীনতম ইটের তৈরি দর্শণীয় “রাস মন্দির”, সপ্তদশ শতাব্দীর টেরাকোটার প্রাচীন মন্দির “লালজি মন্দির”, প্রায় ১৫০০ ফুট উঁচু দুর্লভ উদ্ভিদে ঢাকা শুশুনিয়া পর্বত, আর আরো নানা ঐতিহাসিক স্থান যা মন্দির হিসেবে নয়, নিদর্শন হিসেবে তোতনকে আকর্ষণ করে।
কিন্তু বিষ্ণুপুরে রক্তপাত ঘ’টে গ্যাছে আর তা মুছতে ওকেই ডাকছে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্তারা। বেড়ানো তো মাথায় উঠবেই।