(৪)
সকালবেলায়ই তোতন কল করেছে পরিক্ষিৎ দত্তকে।
— হ্যালো! আপনার ডিউটি অফ্ হলেই একবার আসবেন তো হোটেলে। কথা আছে। আর হোটেলের কিছু এজাহার নিতে হবে। হয়তো আপনারা এনকোয়ারি করেছেন, স্টেটমেন্ট রেকর্ডও করেছেন। তবু আমাকে একবার কথা বলতে হবে ওদের সাথে। প্রয়োজন হলে আপনাদেরগুলো চাইবো। এবার বলুন, ক’টায় ঢুকছেন?
পরিক্ষিৎ দত্ত সহাস্যে জানালেন, ‘এই কেসের বিষয়ে আমাকে এটাকেই প্রায়োরিটি দিতে বলা আছে। আসছি। পনেরো মিনিট।‘
তোতনের অভিজ্ঞতা বলে, এই আইসি. বা এসআই’রা অনেককিছু একেবারে কাছ থেকে জানে। প্রমোশনের জন্য আগ বাড়িয়ে বেশি ক্রেডিট দ্যাখায় না। এঁদেরকে একটু ঘাঁটলে অনেক গোপনীয়তা বেরিয়ে আসে। তাই এই ভদ্রলোকটিকে একটু ঘাঁটতে হবে।
ঠিক মিনিট পনেরোর মধ্যে কলিংবেল বাজলো আর তোতন রিসেপশনে দুটো কফি আর একটা পুরু ক’রে ওমলেট অর্ডার দিয়ে দরজা খুললো।
সহাস্যে ভেতরে ঢুকলেন ইন্সপেক্টর পরিক্ষিৎ। ঢুকেই জানালেন, ‘আপনার ফ্যামিলিকে বিষ্ণুপুর ঘুরিয়ে দেখাবার জন্য দু’জন কনস্টেবল ঠিক ক’রে দিলাম। এই যে ওদের ফোন নম্বর। যখনই বেরোবেন, একটা ফোন করলেই হবে। একজন “নবীন”, আর অন্যজন “শংকর”।
তোতন চিরকুটটা নিয়ে আর একবার চোখ বুলিয়ে পার্সে রাখলো। এবার ইন্সপেক্টরকে বললো, ‘ঠিক আছে। মেনি থ্যাঙ্কস। আপনি শান্ত হয়ে বসুন আগে। এক কাপ কফি তো খান।
— না না। আমায় কি শান্ত হলে চলবে! মেলা ডিউটি। দাঁড়ান। আর একটা ডিউটি সারি। ব’লে হাতের ব্যাগ খুলে একটা মোটা এনভেলাপ বের ক’রে তোতনের হাতে দিয়ে বললেন, ‘এই আপনার এ্যাডভান্স। আপনার দাদাকে আইজি. সাহেব কনট্র্যাক্ট করেছিলেন আর তিনি আইজি. সাহেবকে আপনার বিষয়ে ব্রিফ ক’রে দিয়েছেন। এটা গ্রহণ ক’রে আমায় উদ্ধার করুন।‘
এর মধ্যে কফি আর ওমলেট হাজির। তোতন খামটা নিয়ে বুঝলো, বেশ ভারী। ও জানে, এইসব আইজি.-ফাইজি. কোটিতে খ্যালে। ও ইন্সপেক্টরকে অনুরোধ করলো,
— আগে পেটে কিছু ফেলুন তো। পরে সব কথা।‘
মনে হলো, পরিক্ষিৎ দত্ত যথেষ্ট ক্ষুধার্ত। কোনো সৌজন্য না দেখিয়েই ওমলেট পেটে চালান করতে শুরু করলেন। এবার তোতন ধীরে প্রশ্ন করলো,
— আমায় একটা কথা বলুন তো… আপনি গতদিন হাজার ব্যস্ততার মধ্যে আমায় তিনটে মৃত্যুর ইনফর্মেশন জানিয়ে গ্যাছেন। কেন? আপনি কি কিছু গেজ করছেন?
— যা ব্বাবা! আপনি তো আমাকেই জেরা শুরু করলেন! আসলে খুব গা-এ গা-এ ঘটা তিনটে ঘটনা তো। আবার বেশিরভাগটাই ডিপার্টমেন্ট জড়িত। যদি আপনার ভাবনা-চিন্তায় কাজে লাগে, তাই জানিয়েছিলাম।
— আর ইউ শিয়োর?
— হ্যাঁ। শিয়োর। তবে আমার মনে একটা খটকা ধরিয়েছে এই মৃত্যুগুলো। এমনটা কি সচরাচর ঘটে, বলুন।
তোতন সায় দ্যায়, ‘বুঝলাম। আচ্ছা, ধরুন, এই মৃত্যুগুলো লিঙ্কড। এগুলো ঘটবার সিকোয়েন্সটা কী? আই মীন, সিরিয়ালটা কী?
— সিরিয়াল? প্রায় মাস সাতেক আগে… গত ফেব্রুয়ারি ১২তারিখে একটা গোপন ইনফর্মেশন পেয়ে আমরা রেইড করি স্বয়ং আমাদের ডিএসপি. সাহেবের বাড়িতে। এই সকাল ৮টা নাগাদ। ইনফর্মেশন ‘গাঁজা পাচার’। ডিএসপি. প্রদ্যুৎ রায় নাকি যুক্ত। রেইডে আমিও ছিলাম। আমি তো স্যারের চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। লীড করছিলেন এ্যাডিশনাল এসপি. রঘুরাজ মাধবন। স্যারের কোয়াটার্সে দু’প্যাকেট গাঁজা পাওয়া যায়। এবার তাঁকে এ্যারেস্ট করা হবে। আমাদের অনুমতি নিয়ে তিনি পোশাক বদলাতে বেডরুমে যান। আর ফেরেন না।
— ফেরেন না… মানে! পলায়ন?
— নো স্যার। হ্যাঙ্গড টিল ডেথ।
— সুইসাইড!
— ইয়েস স্যার। আমার নিজের প্রেজেন্সে।
তোতন বিস্মিত, ‘বলেন কী! বাট হোয়াই!
— সঠিক জানি না, মিঃ চ্যাটার্জ্জী। হয়তো লজ্জা, আত্মসম্মান।
— এমন একজন অফিসারের বিষয়ে এভাবে ওপেনলি এ্যারেস্টের কী দরকার ছিল! আর্মি, পোলিস এরা তো তাবড় অফিসারদের অপরাধ ভেতরে ভেতরে ম্যানেজও ক’রে নেয় ব’লে জানি।
— নেয়। সত্যিই নেয়। ডিপার্টমেন্টের পাপ পাবলিক ডোযেইনে আসতে দ্যায় না। ডিপার্টমেন্টের ওপর পাবলিক ফেইথ নষ্ট হয়। বিশেষ ক’রে আজকের সোশাল মিডিয়ার যুগে…। কিন্তু কেন এমনটা হলো না, জানি না। ব্যাপারটা রাষ্ট্র হয়ে গ্যালো। ইজিলি ডিপার্টমেন্টাল গোপন এনকোয়ারি ক’রে তাঁকে ট্রান্সফার বা সাসপেণ্ড করা যেতেই পারতো। তারপর কেস চলতো।