তোতন আরও অবাক হয়। প্রশ্ন করে, ‘তারপর?’
— স্যার প্রবেশন পিরিয়ড শেষ ক’রে সবে পোস্টিং পেয়েছিলেন। এরমধ্যেই স্যার বিরাট নেটওয়ার্ক বানিয়ে ফেলেছিলেন। উনি নিউলি ম্যারেড ছিলেন। স্যার বা ম্যাডাম, দু’জনেই বেশ ভালো ছিলেন। অন্ততঃ আমার মনে হয়েছে। ওঁর মিসেস ঐদিন আমাদের হাতেপায়ে ধরেছিলেন। বলেছিলেন, “একটা ভুল হচ্ছে। প্রদ্যুৎ এমন কাজ করতে পারে না।“ কিন্তু তাঁর কথা ডিপার্টমেন্ট শোনেনি। সে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা মিঃ চ্যাটার্জ্জী। মহিলার আর্তনাদ আজও আমার কানে বাজে।
— স্ট্রেঞ্জ! তারপর?
— মহিলা মাস তিনেক ডিপার্টমেন্টে হাঁটাহাঁটি করেন, তদন্ত করার জন্য হাতেপায়ে ধরেন। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা! কেস ক্লোজড হয়ে যায়। বলা হয়, ডিএসপি. সাহেবের সুইসাইড নাকি কেসটার তদন্তের আর কোনো মেরিট রাখেনি। এই হলো প্রথম মৃত্যু। এরপর…
তোতন বাধা দ্যায়, ‘দাঁড়ান দাঁড়ান। ডিপার্টমেন্ট কেন মেরিট পেলো না? আমি তো মেরিট পাচ্ছি। পরের কেসটা পরে হবে। আগে এটা ক্লীয়ার করি। বলুন।‘
এবারে ইন্সপেক্টর দত্ত বলেন, ‘আমি কিন্তু এসব আপনাকে কিছুই বলিনি, শতদলবাবু। এসব তথ্য কিন্তু আন-অফিসিয়াল। আপনি নিজে জেনেছেন। এসব ডিপার্টমেন্ট সিক্রেট তো। আমার চাকরী…।‘
— ওকে ওকে। আমি বুঝেছি। আপনি এর আগেও আমায় ওয়ার্ন করেছেন। আপনাদের চাকরীর ভয়টা আপনাদের প্রফেশনাল ওথটাকেও ভুলিয়ে দিয়েছে। বুঝতে পারছি, আপনি ভয়ে আছেন। কেন ভয়ে আছেন, আমি জিজ্ঞেস করবো না।
ইন্সপেক্টর বলেন, ‘আপনার তো স্বাধীন জীবিকা। কারোর কাছে কৈফিয়ত দিতে হয় না। আমাদেরকে অনেক সময় চোখকান বুঁজে কাজ করতে হয়। একদিকে সরকার, আর একদিকে সুপিরিয়র আর কমন পিপল। সবার সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করতে করতে আমাদের জীবন হয়রান।
তোতন সেন্টিমেন্টাল কথা এড়িয়ে গিয়ে বললো, ‘আপনি আমাকে আন-অফিসিয়ালি বলুন তো, এই প্রদ্যুৎ রায়কে তো কাছ থেকে দেখেছেন। এমন একজন ছোট মাপের অফিসার এসব কাজে তো ডায়রেক্ট জড়ায় না! এইসব মাফিয়ারা এত পাওয়ারফুল হয় যে, ডিএসপি.-ফিএসপি.কে ওরা তো পাত্তা দ্যায় না। আপনি আমাকে বলুন, এই ডিএসপি. সম্বন্ধে আপনার সে-টা কী? আই মীন… এঁর দ্বারা এমন কাজ হতে পারে ব’লে আপনি মনে করেন কি?
এমন প্রশ্নে ইন্সপেক্টর বেশ অস্বস্তিতে পড়েন। ওদিকে তোতনের গোপন রেকর্ডার কিন্তু চলছে। আর ওর দুই ক্যামেরা মার্কা চোখ পরিক্ষিৎ দত্তের এক্সরে ক’রে ফেলছে। এই প্রশ্নে একটু ঠোক্কর খেতে খেতে ইন্সপেক্টর বলেন, ‘দেখুন মিঃ চ্যাটার্জ্জী, এইসব অফিসার একটা বিসিএস. বা আইপিএস. এক্সাম দিয়ে এসে আমাদের মাথার ওপর ডিএসপি. বা এসডিপিও. হয়ে বসেন। এমনকি আমাদের হাতেই এঁদের ট্রেনিং হয়। বাস্তব জ্ঞান এদের কমই থাকে।‘
— আহা, সে তো জানি। আপনি আমার কোয়েশ্চেন এড়িয়ে যাবেন না। আপনি কি চান, আমি রহস্যের জাল ছিঁড়ি?
— অবশ্যই চাই, স্যার। অবশ্যই।
— কেন চান? আপনার তো ডিউটি মাত্র। ঝালেঝোলে রেঁধে দিলেই তো শেষ। ‘অবশ্যই’ কেন?
— আমরাও তো মানুষ। পুলিশ তো একটা পৃথক প্রাণী নয়, চ্যাটার্জ্জী। তাদেরও মন আছে।
— তাহলে স্পষ্ট ক’রে বলুন, মৃত ডিএসপি. প্রদ্যুৎ রায়কে একজন সাব-অরডিনেট হিসেবে আপনি কী চোখে দেখতেন?
অজানা কারণে বেশ ঘাবড়ে যান পরিক্ষিৎ দত্ত। আমতা আমতা ক’রে বলেন, ‘চোর নয়, স্যার। চোর হতে গেলে একটা অভিজ্ঞতা, একটা জ্ঞান থাকতে হয়। উনি তো সবে পোস্টেড। ডিপার্টমেন্ট সম্বন্ধে জানেনই বা কী! চুরি করা কি অত সহজ! আমাদের মতো জনা তিনেক এসআই. ইচ্ছে করলে আর অসৎ হলে ওরকম ডিএসপি. বা এসডিপিও.কে পাড়াছাড়া করতে পারে। শুধু এসপি.র টেবিলে মাস ফুরোলে একটা বাণ্ডিল রেখে দিয়ে ডিএসপি.র নামে একটা ভার্বাল নালিশ ঠুকলেই খেল খতম। এসপি. তাঁকে কড়কে দেবেন। বলবেন, তিনি সাব-অর্ডিনেটদের কাজে ব্যাগড়া দিচ্ছেন। ব্যস্।
ততক্ষণে ওমলেট শেষ। কিন্তু প্রশ্নের জ্বালায় ইন্সপেক্টর কফি শেষ করতে ভুলে গ্যাছেন। তোতনই উব্জে বলে, ‘আর এক কাপ কফি আনাবো?’
সম্মতি পেয়ে তোতন আবার ইন্টারকমে অর্ডার করে। আর চায়ের টেবিলে পেন্সিল ঠুকতে ঠুকতে বলে, ‘বুঝলাম। আচ্ছা, ঐযে ডিএসপি. সাহেব, তাঁর মিসেস এখন কোথায়?’
— তাঁকে কোয়াটার্স ছাড়ার জন্য এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে।
— এক বছর! কেন! এতদিন কেন? এ তো গ্রেস পিরিয়ড!
ইন্সপেক্টর জানান, ‘হয়তো একলা মহিলা, তাই। সঠিক জানি না। হয়তো তিনি নিজে প্রে করেছেন। আমি ঠিকঠাক বলতে পারবো না।