দ্বিতীয় খন্ড
মার্চ মাস শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন হল। শীতের প্রকোপ অত্যন্ত ক্ষীণ। একপ্রকার নেই বললেই চলে। বেলা অনেকটাই বেড়েছে। তৃষাণ মারা যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেল। সন্ধেবেলা চায়ের দোকানে আড্ডা আর বসে না।গোটা পাড়ায় হাসিঠাট্টার আওয়াজ খুব একটা কানে আসেনা। তৃষাণের অকাল মৃত্যুটা কেউই মেনে নিতে পারছে না। মিহিরের সিআইডি টিম তার মৃত্যুর তদন্ত শুরু করলেও সেটা নিছকই একটা মৃত্যু, নাকি খুন সেটাই ধরতে পারেনি। তৃষাণের মা প্রথম তদন্তে সায় দিলেও অনেকদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কোনো ফলাফল না আসায় তিনিও বিরক্তিবোধ করছেন। তার একমাত্র ছেলের অকালমৃত্যুতে প্রথমেই তিনি গভীর মর্মাহত। তারপর তদন্তের জন্য তার মৃতদেহ ফরেনসিক ল্যাবে চলে যাওয়ায় তার সৎকার হয়নি। তাই তিনি অত্যন্ত অস্বস্তির মধ্যে আছেন। গত দু- তিন দিনের মধ্যে তিনি প্রায় দশবারের ওপর মিহিরকে বলেছেন যে তার বন্ধুর মৃতদেহ ফিরিয়ে দিতে। মিহির নিজেও কোথাও কোনো ক্লু না পেয়ে সেটা একপ্রকার মৃত্যু বলেই মেনে নিতে চাইছে। ফরেনসিক ল্যাব থেকে বলাও হয়েছে যে তৃষাণের হার্টব্লক হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় তার মৃতদেহ ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। সে ধরেই নিয়েছে তার প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু ঘটেছে হার্টব্লকে। সে কোনো চক্রান্তের ভিকটিম নয়।
একদিন সকালে মিহির রাকেশের সঙ্গে তাদের বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে বসে আছে। রাকেশের হাতে একটা জলন্ত সিগারেট। মিহির কোনোরকম নেশা করে না। তারা চুপচাপ বসে আছে, এমন সময় আচমকা মিহিরের ফোনটা বেজে উঠল। সে ফোনটা রিসিভ করতেই ওদিক থেকে ভেসে এল ডক্টর মেঘরাজ বোসের কন্ঠস্বর। সে অত্যন্ত উৎকন্ঠার সঙ্গে মিহিরকে জিজ্ঞাসা করল,
” কোথায় আছিস বলতো?”
মিহির বলল, ” বাড়িতে। কেন?”
মেঘরাজ বলল,
” এখুনি একবার ল্যাবে চলে আয়, ইটস ভেরি আর্জেন্ট।”
বলেই সে ফোনটা কেটে দিল। রাকেশ জিজ্ঞাসা করল,
” কী হয়েছে?”
মিহির বলল,
” এখুনি একবার ল্যাবে যেতে হবে। মনে হচ্ছে গেমটা এত তাড়াতাড়ি চেকমেট হবে না। বেরোলাম বুঝলি। সন্ধেবেলায় দেখা হচ্ছে।”
এই বলে সে হন্তদন্ত করে বাইক নিয়ে বেড়িয়ে গেল। রাকেশও তার পরই সিগারেটটা শেষ করে বেড়িয়ে গেল।
ল্যাবে পৌঁছোতেই মেঘরাজ তাকে একগাল হাসি নিয়ে বলল,
” আরে আসুন আসুন। আপনারই অপেক্ষায় ছিলাম। “
সে তার বেশভূষার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে বলল,
” কী অবস্থা রে..! তাড়াতাড়ি বলেছি বলে একটু ফিটফাট হয়ে আসবি না? একটা সিআইডি অফিসার বলে কথা।”
তার কথার প্রত্যুত্তরে মিহির বলল,
” না…. আসলে তুই ডাকলি এমন। আমি ভাবলাম হয়তো কিছু ক্লু খুঁজে পেয়েছিস হয়তো। এখানে এসে তো দেখছি বিন্দাস আছিস। শুধু শুধু ডেকে আনলি। এমনিতেই…… “
তাকে তার কথার মাঝেই থামিয়ে দিয়ে মেঘরাজ বলল,
” শোন শোন, তোকে আমি চার বছর ধরে চিনি। একই সঙ্গে জয়েন করেছি চাকরিতে। তুই একজন সিআইডি অফিসার, আমি একজন ফরেনসিক ডক্টর। কোথাও ইয়ার্কি করতে হয় জানি আমি। এন্ড অ্যাপার্ট ফ্রম দিস আই অ্যাম গোয়িং টু টক অ্যাবাউট অ্যান ইমপর্টেন্ট টপিক।”
মিহির বলল,
” ইমপর্টেন্ট টপিক? যেমন? “
মেঘরাজ বলল,
” যেমন ধর যদি আমি বলি যে তোর বন্ধুকে খুন করা হয়েছে। “
মিহির চমকে গিয়ে বলল,
” খুন……? “
মেঘরাজ বলল,
” ইয়েস স্যার…। ইটস এ মার্ডার। সামওয়ান হ্যাজ প্ল্যানফুলি কিলড হিম। এন্ড দ্যাট পার্সন হ্যাজ এ টিপিক্যাল ব্রেন।”
মিহির মেঘরাজের কথায় স্তম্ভিত। তার চোখ জলে ভিজে এল। তার চোখে জল দেখে মেঘরাজ বলল,
” এই সবসময় এইরকম কান্নাকাটি করবি না। তুই তো সিআইডি অফিসার নাকি? নাকি বন্ধুর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তোর ভিতরের অফিসার সত্তাটাও মরে গেছে?
শোন এই কেসটায় যে খুনি, তাকে ধরতে গেলে সেই বেপরোয়া মিহিরকে দরকার। বুঝলি? এবার এদিকে আয়। যেটা দেখাচ্ছি দেখ। “
মিহির কাছে যেতেই সে তাকে বলল,
” দেখ, এই বডিটায় দুটো পয়জন আমি পেয়েছি। নাম্বার ওয়ান আর্সেনিক। অ্যান্ড নাম্বার টু ইজ ডাইমথাইলমার্কুরি।”
মিহির অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল,
” দুটো পয়জন! কিন্তু কেউ একজনকে দুটো পয়জন কেন দিতে যাবে?”
মেঘরাজ বলল,
” হতে পারে খুনি আমাদেরকে ঘোল খাওয়াতে চেয়েছে। কারণ দুটো পয়জন যদি এক শরীরে পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে কোনটার কারণে মৃত্যু হয়েছে সেটা বলা মুশকিল। আর একটা হতে পারে, দুজন তৃষাণকে মারতে চেষ্টা করেছে পয়জন দিয়ে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেকেন্ড পয়জনটার জন্য মৃত্যু টা ঘটেছে। হুইচ মিন ডাইমিথাইলমার্কারি। কারণ এই পয়জনটা যতোটা প্রয়োজন হলে একটা মানুষ মারা যায়, তার থেকে বেশী পরিমাণে পাওয়া গেছে এই বডিতে।”
মিহির সমস্ত ঘটনা শুনে রীতিমতো হতবাক। তৃষাণের মতো ছেলেরও কোনও শত্রু থাকতে পারে এটা তার কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য যায়। সে মেঘরাজকে জিজ্ঞাসা করল,
” আচ্ছা এই দুটো পয়জন কীভাবে দেওয়া হতো ওকে?”
মেঘরাজ বলল,
” যতদূর আমি বুঝেছি …. কোনো পানীয়, যেমন জল, চা, কোলড্রিঙ্ক, দুধ এইসব। “
মিহির সবকিছু শুনে বলল,
” আর কিছু ?”
মেঘরাজ বলল,
” না আর কিছু নেই বডিতে।”
এরপর সে মেঘরাজের অনুমতি নিয়ে ফরেনসিক ল্যাব থেকে তার বডি বের করে সৎকারের ব্যাবস্থা করল। তার পরিবার ও বেশ কিছু আত্মীয় সৎকারে উপস্থিত ছিল। তার দেহ সৎকারের পর রীতি অনুযায়ী তার শ্রাদ্ধের কাজ সম্পন্ন হলো। ইতিমধ্যে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত। মিহির তার টিমের সাহায্য গোপনে তল্লাশি চালিয়ে গেছে এই কদিনের মধ্যেও। সে একটা সন্দেহের তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকা অনেক বড়ো। যেদিন থেকে শুনেছে তার বন্ধু খুন হয়েছে সেদিন থেকে সে প্রতিজ্ঞা করেছে খুনিকে খুঁজে বের করবেই। সেই অনুযায়ী খুনির তল্লাশিও চলছে গোপনে। মিহিরের মতানুযায়ী খুনি খুব কাছেরই কোনো একজন ব্যাক্তি। যে খুব ভালো করে তৃষাণকে চেনে, জানে। তাই সে তল্লাশির কথা কাওকে জানায়নি। এই কদিনে সে মাঝে মাঝেই তার বন্ধুদের বাড়িতে যায় গল্পের অছিলায়, যখনই সুযোগ পান বাড়ির বিভিন্ন জায়গা খুঁজে দেখতে শুরু করে। কিন্তু কোথাও কিছুই পায়নি সে। সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ যায়নি কেউই, এমনকি চায়ের দোকানদার বিকাশও নয়। কারণ তাকে পানীয়র সঙ্গে পয়জনটা দেওয়া হতো। সন্দেহের তালিকায় আছে তার স্ত্রী সৌমিলিও।তাই সে তৃষাণের বাড়িতেও প্রায়ই যায়। কথাটা শুনতে অবাক লাগলেও, সৌমিলিকেও সে সন্দেহের তালিকায় রেখেছে। কারণ তৃষাণের বিয়ের পর থেকেই তাদের দাম্পত্যজীবন খুব একটা স্বাভাবিক মনে হয়নি তার। তাদের মধ্যে কথাবার্তা কম হতো, কেমন একটা ছাড়াছাড়া ভাব।মিহির সমস্ত কিছু অল্পবিস্তর বুঝতে পারলেও এই বিষয়ে কোনোদিন তৃষাণকে কিছু বলেনি। তৃষাণ নিজেও এই বিষয়ে কখনও কোনো আলোচনা করেনি। কিন্তু এখন যখন তৃষাণ আর বেঁচে নেই, তাকে খুন করা হয়েছে, তখন তাদের অস্বাভাবিক সম্পর্কটাই আরও বেশী করে ফুটে উঠছে তার তদন্তে। তাদের টালমাটাল সম্পর্কটাই তৃষাণের খুনে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে এমনটাই মিহিরের ধারণা। কিন্তু সে এই ব্যাপারে কাউকে কিছু জানায়নি, কারণ তার হাতে কোনো পোক্ত প্রমাণ নেই। যত তাড়াতাড়ি প্রমাণ পাওয়া যাবে তত তাড়াতাড়িই এই কেসটা সলভ হবে। সেই কারণে সে দিনরাত এক করে তদন্ত শুরু করেছে। খুনিকে হাতেনাতে ধরার যে প্রাণপণ প্রতিজ্ঞা সে করেছে তার দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করে একটি বিশাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলেছে সে। সেই সমস্ত তথ্য থেকে সে এমন একটি তথ্য পেয়েছে যেটি রীতিমতো ভয়ঙ্কর। এবং যেটি কল্পনার অতীত। সে জানতে পেরেছে আগামী কিছুদিনের মধ্যে কী ঘটতে চলেছে। তাই সে আগেভাগেই খুনিকে ধরার জন্য সমস্ত ঘটনা ছকের আকারে সাজিয়েছে সে। একটা নিখুঁত পরিকল্পনা করে ফেলেছে। শুধু সেটা বাস্তব রুপ পাওয়ার অপেক্ষায়।
সময় ক্রমেই অতিবাহিত। মিহির খুনিকে ধরার জন্য একটি চক্রব্যূহের রচনা করেছে। তার পরিকল্পনা কোথায়, কীভাবে সে বাস্তবায়ন করবে সেটা তার টিমের সঙ্গে আলোচনা করে সেড়ে ফেলেছে। এমন অবস্থায় একদিন বিকেলের দিকে সে তার স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে একটু সময় কাটাচ্ছে হঠাৎ এক কনস্টেবল মারফত খবর আসে তৃষাণের মা কে নাকি কেউ বা কারা খুন করেছে। এবং বাড়ির ভিতরের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে সেখানকার স্থানীয় পুলিশ কাওকেই ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। কথাটা শোনামাত্রই মিহির তার দলবলকে নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখে পুলিশ চারপাশ থেকে সমস্ত বাড়িটা ঘিরে রেখেছে। সন্ধে নেমে আসায় বাড়িটাতেও একটা অদ্ভুত অন্ধকার বিরাজ করছে। পুলিশের কাছে সে জানতে পারে বাড়ির ভিতরে একটা নয় বরং তিনটে লাশ পড়ে আছে। তার সঙ্গে ভিতরে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে। মিহির হন্তদন্ত হয়ে ভিতরে ঢুকে দরজা খুলতেই আবছা অন্ধকারে দেখতে পায় ঘরের ভেতর সমস্ত জিনিস একেবারে এলোপাথাড়ি ভাবে এদিক থেকে ওদিকে ছড়িয়ে আছে। সে আর একটু এগিয়ে লাইনটি অন করতেই দেখে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য। ঘরের মেঝেজুড়ে শুধুই লাল রক্ত, তার মাঝে একটা শাড়ি ছিঁড়ে পড়ে আছে রক্তে মাখামাখি হয়ে। সে বুঝতে পারে ধস্তাধস্তির কোনো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তখনও কোনো মৃতদেহ তার চোখে পড়েনি। রক্তের নিশানা দেখে একটু সামনে এগোতেই সে দেখে রান্নাঘরের দিক থেকে একটা রক্তাক্ত হাত পড়ে আছে দরজার সামনে। সে এবং তার টিমের দুজন এগিয়ে রান্নাঘরের দিকে গিয়ে রীতিমতো পাথর হয়ে গেছে। যে দৃশ্যের সামনে তারা দাঁড়িয়ে আছে তা কোনো দুর্বল চিত্তের মানুষের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়।
রান্নাঘরের মেঝেতে রক্তে মাখামাখি হয়ে পড়ে আছে তিন তিনটে লাশ। কোনোটার হাত নেই কোনোটার পা নেই আবার কোনোটার বুকের অংশটা চেরা। কালচে রক্ত লাভার মতো গড়িয়ে পড়ছে কাটা অংশগুলো থেকে। রক্তে মাখামাখি সেই লাশগুলোর মধ্যে তার চিনতে অসুবিধা হল না যে একটা তৃষাণের মায়ের এবং একটা তার বউ সৌমিলির। কিন্তু তৃতীয় লাশটা শনাক্ত করা অতটা সহজ হলো না। কারণ তৃতীয় লাশটার মাথাটাই নেই, বুকের মাঝখানে লম্বালম্বিভাবে একটু ছুঁড়ির পুরো অংশটা ঢুকিয়ে দেওয়া রয়েছে। হাত এবং পায়ের অংশগুলো কেউ ছুঁড়ি করে চিরে দিয়েছে। সমগ্ৰ ঘটনা নিজের চোখে দেখার পর মিহির এক মূহুর্তের জন্য তার চোখ বন্ধ করল। সে যেন আন্দাজই করেছিল এইরকম কোনো ঘটনা। কিন্তু সেটা যে এতটা নৃশংস হবে সেটা সে ধারণা করতে পারেনি। তার পাশ থেকে তারই একজন সতীর্থ সিআইডি অফিসার প্রশ্ন করল,
” স্যার কিন্তু এই ছেলের ডেডবডি টা চিনতে কী করে? মাথাটাইতো নেই। “
মিহির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
” সার্চ করো রুমটা। “
তাদের টিমের কয়েকজন যখন রুমটা সার্চ করছে মিহির তখন আস্তে আস্তে এসে ডাইনিং টেবিলের পাশে থাকা একটা সোফায় বসল। সে মাথা নীচু করে বসে আছে এমন সময় একজন অফিসার এসে তাকে ডাকল,
” স্যার? “
মিহির তাকিয়ে দেখল সেই অফিসারের হাতে একটা কাটা মাথা, মুখটা রক্তমাখা অবস্থায় খুব একটা বোঝা না গেলেও তার সেই মুখটা চিনতে খুব একটা অসুবিধা হল না। সেই মাথাটা গগন ভট্টাচার্যের। মিহির নিজের রাগ সামলাতে না পেরে গগনের কাটা মাথাটা অফিসারের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে সজোরে একবার দেওয়ালের গায়ে ছুঁড়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলল,
” ইউ ব্লাডি বাস্টার্ড………. “
সে এক লাফে কাটা মাথাটার কাছে গিয়ে তার ওপর সজোরে লাথি মারার সঙ্গে পাগলের মতো চিৎকার করতে লাগলো। তার উন্মাদ অবস্থা থেকে দুজন কনস্টেবল ও তার টিমের একজন তাকে ধরে তড়িঘড়ি করে বাইরে নিয়ে গিয়ে বসালো।
তার উন্মাদনা কাটতে বেশ কিছুটা সময় লাগলো।শান্তাবস্তায় ফিরে এসে সে একবার হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে সাতটা বাজে। ঘড়ের ভিতর তার টিমের মেম্বাররা তখনও সমস্ত খুঁটিনাটি শেষবারের মতো পরীক্ষানিরীক্ষা করতে ব্যাস্ত। চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে সে চোখেমুখে জল দিচ্ছে এমন সময় একজন তার এক সতীর্থ লেডি অফিসার ভিতর থেকে এসে বলল, ” স্যার একজন বেঁচে আছেন।”
মিহির চোখে জল দেওয়া বন্ধ করে জিজ্ঞাসা করল,
” বেঁচে আছে! কে… কে বেঁচে আছে? “
অফিসার বলল,
” স্যার আপনি আসুন। আমি তো চিনি না। দুজন মহিলার মধ্যে একজন বেঁচে আছেন। তার শরীরে শুধু ছুঁড়ে দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। আর ধস্তাধস্তিতে একটু ছড়েকেটে গেছে। “
মিহির যেন আশার আলো দেখল। সে বলল,
” ঠিক আছে , আমি আর এখন ভিতরে যাচ্ছিনা । তুমি ইমিডিয়েট তাকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলো। এখুনি বাইরে নিয়ে এসো। “
তার কথা মতো তারা সবকটি বডি বের করে একটি বডি অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে যাবে এমন সময় মিহির পাশ থেকে দেখলো সেটা সৌমিলি। তারা সৌমিলির বডিটা অ্যাম্বুলেন্সে তুলে বাকী দুটো বডি সৎকারের ব্যাবস্থা করলো, এবং তার সঙ্গেই তৃষাণের পৈতৃক ভিটের সেই বাড়িটিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সিল করে দিল।