বিষ্ণুপুরে হত্যাকাণ্ড | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
0 (0)

তৃতীয় খন্ড

তৃষাণদের বাড়িতে ঘটে যাওয়া সেই ভয়াবহ কান্ডের পর সিআইডি অফিসার মিহির রায়ের নির্দেশে পুলিশ তাদের বাড়িটি সিল করে দিয়েছে। সেদিনের সেই নৃশংস ঘটনায় একমাত্র বেঁচে যাওয়া মহিলা অর্থাৎ তৃষাণের বউ সৌমিলি হসপিটালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে টক্কর দিচ্ছে। যে কোনো সময় মৃত্যু তাকে হারিয়ে দিতে পারে। একমাত্র ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে তবেই সে এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারে। সেক্ষেত্রে তার বাকী জীবনটা কীভাবে কাটবে সেটা তখনও পরিস্কার নয়। গোলাপবাগে মানুষের মনে একপ্রকার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা আর কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বেশী রাত পর্যন্ত কেউ বাইরে ঘোরাঘুরিও করছে না। পুলিশি টহলদারি চলছে সমগ্ৰ এলাকাজুড়ে। রাস্তা দিয়ে যেতে আসতে তৃষাণদের বাড়িটার দিকে চোখ পরলেই ভয়ে মানুষের বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠছে। সেখানকার মানুষজন ভুলতে চাইলেও সেই রক্তমাখা সন্ধের কথা কেউ ভুলতে পারছে না। অনেকে তো ওই জায়গা ছেড়ে অন্যত্র বসবাসের উদ্দেশ্যে চলে গেছে।

সমগ্ৰ এলাকা যখন ভয়ে তটস্থ তখন মিহির কিন্তু রোজই একবার করে হলেও সেই জায়গাটা পরিদর্শন করে যায়। রাকেশও মাঝে মাঝে আসে। তারা যেন কোনোভাবেই তাদের প্রাণের বন্ধুর এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না। ওই বাড়িটার মায়াও কাটিয়ে উঠতে পারছে না। হাজার হোক ছোটোবেলার বন্ধু বলে কথা। তারা রোজ একবার করে আসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে তারপর চলে যায়। এদিনও তার খামতি হল না। মিহির হসপিটালে যাওয়ার আগে তৃষাণদের বাড়ির সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তারপর চলে গেল। হসপিটালে পৌঁছে সে দেখল তার দ্বারা নিযুক্ত করা দুজন অফিসার তাদের মধ্যে একজন পুরুষ অন্যজন মহিলা, আই. সি. ইউ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মিহির সৌমিলির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করায় তারা জানাল যে কোনো খবর নেই। ঠিক তখনই মিহির দেখল আই. সি. ইউ থেকে একজন ডাক্তার বেড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। তিনি এসে মিহিরকে জিজ্ঞাসা করলেন,

” মিস্টার মিহির রায়? “

মিহির তার উত্তরে সম্মতি দিয়ে জানাল যে তিনিই মিহির রায়।     কিছুক্ষণ পর মিহির জিজ্ঞাসা করল,

” ডক্টর.. , ক্যান সি সারভাইভ?”

তার কথা শুনে ডাক্তার মাথা নিচু করে তার চোখ থেকে চশমাটা খুলে জানাল,

” আ…. , আই… আই অ্যাম সরি মিহিরবাবু। সি কান্ট। ওনার শরীরে বেড়ে ওঠা আর একটা শরীর স্পটেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।আর এখন উনিও আর বেশীক্ষণ বাঁচবেন না।”

তার কথায় মিহির স্তম্ভিত হয়ে গেল। সে হতবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল,

” অ্যানাদার বডি !        ইউ মিন সি ওয়াজ প্রেগন্যান্ট? “

ডাক্তার বলল,

” ইয়েস। সি ওয়াজ। যখন ঘটনাটা ঘটে তখন বরো কোনো জিনিস ওনার পেটে এসে সজোরে আঘাত করা হয়। যার কারণে ওনার গর্ভে থাকা বাচ্ছাটা নষ্ট হয়ে যায়, আর ঠিক সেই কারণেই ওনার অন্তরঙ্গ অঞ্চল থেকে প্রচুর ব্লিডিং হয়।”

মিহিরের পাশে দাঁড় থাকা অফিসার জিজ্ঞাসা করল,

” বাট ডক্টর ওনাকে তো ছুঁড়ি মারা হয়েছিল।”

ডাক্তার বলল,

” হ্যাঁ ছুঁড়িটা মারা হয়েছিল তার পর। যাতে এটা প্রমাণিত হয় যে ছুঁড়ি মারার ফলে ওনার শরীর থেকে রক্তপাত হয়েছে। ওনার গর্ভে থাকা বাচ্ছাটার জন্য নয়। “

মিহির সমস্ত কিছু শুনে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। যদিও তার তার বন্ধু তৃষাণের মৃত্যুর পর কোনও এক অজানা তথ্যের কারণে সৌমিলির প্রতি কোনও ভক্তি শ্রদ্ধা কিছুই নেই। তবুও তার বংশের প্রদীপকেউ সে রক্ষা করতে পারল না এটা ভেবেই তার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে। সে জিজ্ঞাসা করল,

” ডক্টর…., হাউ মাচ টাইম?”

ডাক্তার বিনম্র স্বরে জানাল,

” ওয়ান আওয়ার,অর মে বি টু। “

এই বলে সে মিহিরের পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে এমন সময় মিহির তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করল,

” ডক্টর মে আই….. , মে আই টক টু হার? “

প্রত্যুত্তরে ডাক্তার তার কথায় সম্মতি প্রদান করে চলে গেল। মিহির আস্তে আস্তে বলতে লাগলো,

” তার মানে গগন সৌমিলিকে ছুঁড়ি মেরে মারতে চেয়েছিল। যাতে বোঝা ঝায় তার শরীরে কোনো বাচ্ছা ছিল না। ছুঁড়ির আঘাতেই সৌমিলির মৃত্যু হয়েছে। “

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অফিসার তাকে জিজ্ঞাসা করল,

” কিন্তু স্যার কেউ বাচ্ছা নষ্ট করার ঘটনাটা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করবে কেন? যখন সে নিজেই খুন হয়ে গেছে। “

মিহির বলল,

” এই সবকিছুর উত্তর এখন সৌমিলিই একমাত্র দিতে পারবে।”

এই বলে সে ভিতরে ঢুকে দেখল সৌমিলি শুয়ে আছে। একটা সাদা চাদর তার গলা পর্যন্ত ঢাকা দেওয়া। সে ধীরে ধীরে তার কাছে গিয়ে বলল,

” কেমন আছো সৌমিলি?”

সৌমিলি তার দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বলল,

” মৃত্যু পথযাত্রীকে শেষবারের মতো জেরা করতে এসেছেন?”

তার কথার উপরে কোনো কথা বসাতে না পেরে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর মিহির বলল,

” কেনো মারলে তৃষাণকে? কী ক্ষতি করেছিল তোমার?”

মিহির দেখলো সৌমিলির চোখের কোণে জল। ধীরে ধীরে তার সমগ্ৰ চোখ জলে ভরে গেল। সে বলল,

” আমি প্রেমে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম মিহির দা।”

মিহির জিজ্ঞাসা করল,

” প্রেমে? “

সৌমিলি বলল,

” হ্যাঁ..। আমার আর গগনের সম্পর্ক ছিল চার বছর। বিয়ের পরেও আমি ওকে ভুলতে পারিনি। খুব ভালোবেসেছিলাম ওকে।

বিয়ের আগে আমরা অনেকবার একসঙ্গে রাত কাটিয়েছিলাম।                         কিন্তু আমার বাড়ি থেকে ওকে মেনে নেয়নি। ওর পরিবার খুব একটা সুবিধার ছিল না। তাই আমার সঙ্গে তৃষাণের.., তৃষাণের বিয়ে হয়।           বিয়ের পরেও আমরা প্রতিনিয়ত একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম। এই একটাই কারণ ছিল আমার আর তৃষাণের মনোমালিন্যর। “

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post দক্ষিণ বাড়ির গুপ্তধন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | মৌসুমী দাশ | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
Next post বিষাক্ত রক্তাহুতি | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | পার্থিব ঘোষ | Bengali Thriller Story | 9F10