কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা একটা ছেলের হাতে একটা ছুরি। কম্পিউটারের স্ক্রিনে ফুটে থাকা একটা অদ্ভুত গেম। সেই গেমের মধ্যে ঠিক ক্রিস ক্রস পাজেল এর মত একটা ঘর কাটা আর সেই ঘরের নিচে ছড়িয়ে রয়েছে নটা বিভিন্ন রকমের চোখের ছবি ।তবে একটু ভালো করে দেখলে বোঝা যায় চোখগুলো যেন মাঝে মাঝে সামান্য নড়ে উঠছে আর সেগুলো দেখলে মনে হয় মানুষের আসল চোখ ।তার চোখের পাতা মনি সবকিছুই একদম আসল চোখের মত। একটা মাউস পয়েন্টার ঘরগুলোর ঠিক মাঝখানে মাঝে মাঝে ব্লিংক করে উঠছে। ছেলেটা কিন্তু ভয় মাখা চোখে তাকিয়ে আছে কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে। গেমের এক পাশে মেসেজের বক্সের দিকে সেখানে তখন ফুটে উঠেছে কতগুলো লেখা আর ঠিক গেম এর নিচে লেখা রয়েছে একটা কথা। এই দুটো জিনিস দেখতে দেখতে ছেলেটার মুখটা মাঝে মাঝে রক্ত শূন্য হয়ে আসছে হাতের ছুরিটা কাঁপতে কাঁপতে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে ।গোটা ঘরের মধ্যে একটাও আলো জ্বলছে না। শুধু কম্পিউটারের আলোতে ছেলেটার মুখের ওপর একটা অদ্ভুত আলো ছায়ার মতো তৈরি হয়েছে। ওদিকে দরজার বাইরে গোটা ঘরে কয়েকটা মানুষ নিশ্চিন্তে নিজেদের কাজ করে চলেছে। তারা বুঝতেও পারছে না এই ঘরে বসে ছেলেটা এখন কি করতে চলেছে। মনে মনে নিজেকে একবার প্রাণপণে বোঝানোর চেষ্টা করে ছেলেটা, না এমন কিছু হতে পারে না এমন হতেই পারে না কিন্তু তবুও বার বার যখনই মেসেজ বক্সে লেখা মেসেজ গুলোর দিকে সে তাকাচ্ছে তখন ভয় কেঁপে উঠছে যেন তার চোখে কম্পিউটারের স্কিনের ছবিটা ফুটে উঠেছে। আর তার সাথে ফুটে উঠেছে একটা অবাক বিস্ময়ের ভয়। কাঁপা কাঁপা হাতে ধরানো ছুড়ির ফলাটা একটু একটু করে উপরের দিকে তুলে নিচ্ছে সে। মনের সমস্ত শক্তি একত্র করে দুটো হাত দিয়ে ছুরিটাকে চেপে ধরে হঠাৎ করে নিজের চোখের ভেতর ঢুকিয়ে দিল সে। একটা কান ফাটা চিৎকার আর আর্তনাদ তার সাথে সাথে দরজার ওপর বারবার মুহুর মুহুর ধাক্কা তার সাথে পুরুষ আর নারী কন্ঠ মিলিয়ে ডাক। কিন্তু ঘরের ভেতর ছেলেটার মরণ চিৎকার ছাড়া আর কিছু নেই তার চোখের পাশ থেকে বেয়ে আসার রক্ত ততক্ষণে মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছে। মেঝের ওপর পড়ে থাকা ছেলেটার শরীরটা ছটফট করছে। যেন গরম তেলের মধ্যে পড়ে থাকা কোন একটা পিঁপড়ে। তবে তাকে অবশ্য খুব বেশিক্ষণ ছটফট করতে হলো না কিছুক্ষণের মধ্যেই বাইরের দরজাটা ভেঙে ঘরের ভেতর ঢুকে এলো দু তিনজন। তার মধ্যে একজন মহিলা এমন একটা দৃশ্য দেখতে পেয়ে ভয়ে চিৎকার করে উঠল কারণ ঘরে ঢুকেই কেউ একজন ঘরে লাইটটা জ্বালিয়ে দিয়েছিল ।মেঝের উপর পড়ে থাকা ছেলেটার শরীরটা তখনো বারবার কেচোর মতো গুটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কিন্তু সব কিছুই ব্যর্থ। এমন একটা অবাক ব্যাপার দেখে ঘরের ভেতর ঢোকা তিনজন মুহূর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গেলেও তারপরে ছুটে এসে ছেলেটাকে তুলে নেয় ।তারপর কোনরকমে বাইরে নিয়ে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করে ব্যাপারটা কি হয়েছে ততক্ষণ একজন এম্বুলেন্সে ফোন করেছে তবে তবে…. এই সমস্ত কিছুর মধ্যে কম্পিউটার স্ক্রিনের ফুটে ওঠা সেই গেমটা কিন্তু ততক্ষণে উধাও হয়ে গেছে স্ক্রিন থেকে। যন্ত্রণায় ছেলেটা জ্ঞান হারায়। তবে তার সেই জ্ঞান ফিরবে কিনা জানা নেই।
টেবিলের ওপর রাখা পেপারেও এটা তুলে নিয়ে হাতের মধ্যে মুঠো করে বলল জিতেন হালদার।
জিতেন : এমন জটিল একটা কেস কখনোই পাইনি বুঝলেন দাস বাবু। শালা কোথা থেকে যে তদন্ত শুরু করব সেটাই বুঝতে পারছি না।
দাস : স্যার ছেলেটার কম্পিউটার ঘেটে কোন কিছু পাওয়া যায়নি। বাড়ির লোক কিন্তু বলেছিল ছেলেটা নাকি সারাদিন কম্পিউটারে বসেই কি সব করতো। ওর বোনও নাকি একবার দেখেছিল কম্পিউটারের কোন একটা গেম খেলতে।
জিতেন : এই অনলাইন গেমগুলোতে একটা গোটা প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে দাস বাবু অথচ তারা কিছুই বুঝতে পারছে না আর তাদের বাড়ির লোকেদেরও বলিহারী ছেলে সারাদিন বসে কম্পিউটারে গেম খেলবে অথচ তারা কিছুই বলবে না । ধুর তারপর কিছু হলে তখন রাগ করবে আমাদের পুলিশদের নাও এখন ঠেলা সামলাও খুঁজে বেড়াও।
দাস : স্যার অনলাইন গেম গুলোর তেমন তো দোষ নেই এমন একটা গেম যদি থাকে তাহলে তারা কি বুঝতে পারবে আর ছেলেটা তো সব জেনেশুনেই বোধহয় গেমটা খেলেছে।
জিতেন : আরে গেম তো ঠিক আছে তাই বলে এমন একটা অদ্ভুত গেম জেনেশুনে কেউ খেলতে যাবে আমার তো মনে হয় ছেলেটা না জেনেই খেলেছে আর তারপর।
দাস : কিন্তু নিজের হাতে নিজের একটা চোখ ছুরি দিয়ে বার করে নেওয়া ব্যাপারটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না স্যার ।ছেলেটার বয়সও তো খুব বেশি নয়, বড়জোর ১৭ কি ১৮ হবে এমন একটা বীভৎস ব্যাপার স্যার এর আগে আমি দেখিনি।
জিতেন : দেখতে হবে দাস বাবু দেখতে হবে যতদিন যাবে তত এর থেকেও আরো অদ্ভুত অদ্ভুত ব্যাপার দেখতে হবে। একটা কাজ করা যাক নাকি? চলুন তো একবার ছেলেটার বাড়িতে গিয়ে কম্পিউটারটা চেক করে দেখি পুলিশ তো বলেছে কম্পিউটারে তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি তবুও একবার দেখলে হয়। আর মেয়েটা কি বলছে মেয়েটা কি তেমন কিছু জানে?
দাস : মেয়েটা বলছে বেশ কয়েকদিন ধরে ওর সাথে কেমন কথাবার্তা হয়নি, ছেলেটা নাকি একটু এড়িয়ে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করত বললেই বলতেও কম্পিউটারে কোন একটা ভালো গেম খেলছে আর তাই সময় পাচ্ছে না কথা বলার।
জিতেন : বোগাস। চলুন একবার ছেলেটার বাড়ি থেকে ঘুরে আসি সেদিন তো ভালোভাবে কথাও বলা গেল না বাড়ির লোকের সাথে ওরকম একটা ব্যাপারের মধ্যে আর কি কথা বলব। আজ একবার ভালো করে জেরা করা দরকার যদি কিছু জানতে পারা যায় না হলে এরকম অদ্ভুতকে সে কোন কিছুই তো আমি দেখতে পাচ্ছি না।
দাস : গাড়ি বার করতে বলি তাহলে?
জিতেন : হ্যাঁ হ্যাঁ বল এমনিতেই শহরে এত ক্রাইম হয়ে যাচ্ছে তার কোন কুল কিনারা হচ্ছে না তার মধ্যে এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কেশ যদি আসে তাহলে তো আর নেওয়া যায় না পুলিশের চাকরিতে পা দিয়ে যদি এমন একটা ঝামেলায় পরে কাঁধে এসে তাহলে কার ভালো লাগে বলুন দাস বাবু এখন আর কি করা যাবে চলুন।
থানার কম্পাউন্ডের এক পাশ থেকে একটা জিপ এসে সামনের দিকে দাঁড়ালো তারপর থানার ভেতর থেকে সদ্য নিযুক্ত ইনস্পেক্টর জিতেন রায় আর হেড কনস্টেবল সমর দাস বেরিয়ে গিয়ে জিপে উঠলেন তারপর জিপটা বেরিয়ে গেল থানার গেটের বাইরে।
একটা অন্ধকার ঘর। ঘরের মধ্যে ফুল স্পিডে পাখা ঘুরছে ঘরের চারপাশে তাকালে দেখা যায় একটা বিছানার উপর ছড়িয়ে থাকা জামাকাপড় বই পত্র। বিছানার একদম কোন একটা ছোট্ট টেবিলের উপর রাখা একটা কম্পিউটার আর তার সামনে চেয়ারে বসে একটি ছেলে। কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রেখে কিবোর্ডে আঙুল ছড়িয়ে যাচ্ছে বারবার একটা টপ টপ শব্দে অন্ধকার ঘরে নিস্তব্ধতা টা খান খান হয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে তবে কি বোর্ডের শব্দটা ফ্যানের শব্দ চাপা পড়ে যাচ্ছে। ছেলেটা বেশ কিছুক্ষণ কিবোর্ডের উপর আঙুল চালিয়ে ক্লান্ত দুটো হাত মাথার পেছনে নিয়ে আর মোরা ভাংলো। তারপর কম্পিউটারটা অফ করতে যাবে এমন সময় হঠাৎ করেই একটা মেসেজ নোটিফিকেশন এসে ঢুকলো। মেসেজ নোটিফিকেশনটা এসে ঢোকার সাথে সাথে ছেলেটা আবার কম্পিউটারের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলে একটা ইমেইল এসেছে। কি একবার ভেবে নিয়ে ইমেইলটা অন করতেই দেখা গেল অজানা একটা ইমেইল আইডি থেকে মেইলটা এসেছে তবে একটা মেসেজ যাতে লেখা রয়েছে।
” হাই”
অজানা একটা ইমেইল আইডি থেকে এভাবে এমন একটা মেসেজ পেয়ে ছেলেটা কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবল মেসেজের উত্তর দেবে নাকি কম্পিউটার বন্ধ করে দেবে এক্ষুনি কম্পিউটার বন্ধ করে সে ঘুমোতে যাচ্ছিল কিন্তু কি যেন মনে হতেই ইমেইল টার রিপ্লাই বাটনে ক্লিক করে উত্তর লিখল।
” হ্যালো”
তারপর কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে যখন দেখল আর নতুন কোন ইমেইল এলো না তখন কম্পিউটারটা বন্ধ করে বিছানার উপর শুয়ে বিছানায় ছড়িয়ে থাকা জামাকাপড় গুলোকে একপাশে সরিয়ে দিয়ে বালিশ টেনে নিল। তারপর বিছানার একপাশ থেকে মোবাইলটা তুলে নিয়ে দেখল দুটো মিসড কল আর একটা মেসেজ মোবাইলের স্ক্রিনে তখন রাত তিনটে। আর ফোন করতে ইচ্ছে হলো না। তাই ছোট্ট একটা মেসেজ লিখে সেটা টাইপ করে সেন্ড বাট ন টিপে দিয়ে মোবাইলটা পাশে রেখে চোখ বন্ধ করলো তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোনের আলোটা আবার জ্বলে উঠে যে একটা নতুন মেসেজ এসেছে সেটা আর দেখতে পেল না ছেলেটা কারণ মোবাইলটা সাইলেন্ট করা ছিল। ঘুরন্ত ফ্যানটার দিকে অন্ধকারে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটু পরে ঘুম নেমে এলো তার চোখে। গোটা ঘরের মধ্যে হওয়ার শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা গেল না। তবে পরপর দুবার মোবাইলে মেসেজ ঢুকলো কিন্তু সেটা দেখার জন্য ছেলেটা তখন আর জেগে ছিল না।
মিতালী : কাল রাতে তোকে অতগুলো মেসেজ করলাম রিপ্লাই দিলে না কেন?
জয় : কাল কাল একটা আর্টিকেল লিখছিলাম আর তারপর যখন শুয়েছি তখন বড্ড ঘুম পেয়ে গিয়েছিল তাই আর রিপ্লাই দিতে পারিনি। তবে সকালে উঠে তোর মেসেজগুলো দেখেছিলাম।
মিতালী : মেসেজ দেখে আমাকে উদ্ধার করেছিস কাল তোকে ফোনও করলাম তুই ফোনটা ধরলি না আমি ভাবলাম হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিস তারপর তোর মেসেজ দেখে আরো একবার মেসেজ করলাম ব্যাপারটা কি বলতো তুই কি আমাকে ইগনোর করছিস?
জয় : এখানে ইগনোর করার কথাটা কোথা থেকে আসলো আমি একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছি কয়েকদিন তাই তোর সাথে সেভাবে কথা হচ্ছে না তার মানে এই নয় যে তোকে আমি ইগনোর করছি। তুই একটু বেশিই ভাবছিস।
মিতালী : যদি সেটা হয় তাহলে ভালো তবে সামনে কিন্তু এক্সাম কম্পিউটারটা একটু কম ঘেঁটে পড়াশোনাটা ভালো করে কর না হলে কিন্তু এবারে ভালো নাম্বার পাবি না আর। জানিস তো ভালো নাম্বার না পেলে কাকু আবার বকবে।
জয় : সে ভালো নাম্বার পেলেও বকবে না পেলেও বকবে যতই নাম্বার পাই না কেন ওদের তো আর ভালো লাগেনা মনে হয় আরেকটু পাওয়া যেত।
মিতালী : দেখ কাকু কাকিমা তো তোর ভালো চাই তার জন্যই বলে সেটাকে খারাপ ভাবে নিস কেন আমার তো মনে হয় ভালোর জন্যই বলে।
জয় : তুই ওসব বুঝবি না যদি আমার মত ভাল নাম্বার পেয়েছি তখন বুঝতে পারতি নাম্বার পেতে কত কষ্ট করতে হয়।
জয়ের কথাটাই মিতালী সামান্য আঘাত পায় সত্যিই তো প্রতিবার ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে একটা ছেলেকে সেই কথাটা বলছে আর সে তো এক থেকে দশের মধ্যেও কোন বার থাকতে পারে না। তাই আর কথা না বলে চুপ করে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয় একটু পরেই অবশ্য জয় বুঝতে পারে কথাটা না বললেই ভাল হত তাই একটু ইতোস্তত করে বলে
জয় : আরে আবার রাগ করছিস কেন আমি তো তোকে কথাটা ওভাবে বলতে চাইনি।
মিতালী : সে তুই তো ঠিকই বলেছিস আমি তো আর তোর মতো ভালো নম্বর পেতে পারবো না তাই তোকে ওভাবে বলাটাও আমার সাজে না।
একটা অভিমান মিতালীর দুটো গালে এসে দাঁড়াবার ছিল তার নিঃশ্বাসের দ্রুততা বুঝিয়ে দিয়েছিল বড্ড রেগে গেছে মেয়েটা। এবার জয় জানে কিভাবে তাকে শান্ত করতে হয়। তাই একবার এদিক ওদিক দেখে নিয়ে মিতালের দুটো হাত চেপে ধরে বলল
জয় : আচ্ছা স্যরি রে ওভাবে আর বলবো না আর তোর কল ধরবো ব্যস্ত থাকলেও ধরবো প্লিজ রাগ করিস না।
এই একটা কথাতেই মিতালির রাগ কেমন যেন কমে আসে সে একবার জয়ের জড়িয়ে থাকা দুটো হাতের দিকে তাকায় তারপর জয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে তার মুখে সামান্য হাসি মিতালির মুখেও হাসি হাসিটা যেন ছোঁয়াচে হয়ে মিলে যায়। কিছুক্ষণ জয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে
মিতালী : ঠিক আছে, এখন চল। না হলে টিফিনের ঘন্টা পড়ে যাবে। টিফিনের পরের ক্লাসটা কিন্তু আজ ইম্পর্টেন্ট স্যার কতগুলো সাজেশন দেবে বলেছে সামনে পরীক্ষার জন্য।
কথাটা বলতে বলতেই মিতালী উঠে পড়ে, জয় ও তার পেছনে উঠে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে ক্লাস রুমের দিকে চলে যায়।
জিতেন : আপনি একদমই জানতেন না আপনার ছেলে সারাদিন কম্পিউটারে বসে কি করে?
পিনাকী : আমি তো দিনের বেশিরভাগ সময় অফিসেই থাকি বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় সে সময় বাবু বই পত্র নিয়ে পড়াশুনাই করে তারপর রাতে কখন কি করে সেটা আমি ঠিক জানতাম না আমায় সকালে উঠতে হয় তাই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি আর সারাদিন ওর মা-ই থাকে উনি হয়তো বলতে পারবেন কিছু।
জয়িতা : সারাদিন কম্পিউটার নিয়েই বসে থাকতো তবে আমি ভাবতাম হয়তো পড়াশোনা করে আজকাল তো ইন্টারনেটে কত ভাবে পড়াশোনা করা যায় আমায় ও সেটাই বলত যে।
জিতেন : কিন্তু আমি শুনেছি ছেলেটা নাকি কম্পিউটারে কোন একটা গেম খেলতো সেই গেমটার ব্যাপারে আপনারা কিছু জানেন না।
জয়িতা : না। তাছাড়া এখন তো সবাই কম্পিউটারে গেম খেলে স্যার তাই আমরাও ব্যাপারটা তেমন গুরুত্ব দিইনি তবে পড়াশোনায় কিন্তু কোনদিন ওর কমতি হত না ঠিক সময়ের নিজের মতো করেই পড়াশোনা করে নিত আর প্রতিবছর ক্লাসে ফার্স্ট হয়েই আসে তাই আমরা কখনোই কোন কিছুতে জোর করতাম না।
জিতেন : ওর মধ্যে কোন অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেছিলেন মানে এমন কিছু যেটা সে আগে করত না অথচ এই মাঝখানের ধরে করছে তেমন কিছু?
জয়িতা : তেমন কিছু তো আলাদা করে মনে পরেনা তবে আগে ঘুম থেকে একটু তাড়াতাড়ি উঠত এখন ঘুম থেকে উঠতে বদ্ধ দেরি করছিল কয়েকদিন ধরে। আমি কিছু জিজ্ঞাসা করলেই বলতো রাত যেখানে কি পড়াশোনা করে।
জিতেন : কোন ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকতে পারে কি কারো সাথে মানে এই বয়সেই ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কিন্তু এরকম একটা রাইফেলারি ব্যাপার মাঝে মাঝে দেখা যায় যেহেতু আমাদের অনেক কেস নিয়ে ঘাটতে হয় তাই ব্যাপারটা আমরা দেখেছি তেমন কিছু আছে বলে কি কোনদিন জানতে হবে?
জয়িতা : তেমন কিছু তো আমি জানতাম না আসলে ও সবসময় একটু মুখচোরা ধরনের চট করে কাউকে কিছু বলতে চায় না নিজের কোন সমস্যা হলে সেটাও বলতে চায় না তবে ওর বন্ধুবান্ধবরা যদি এই ব্যাপারে কিছু বলে থাকতে পারে তা আমি জানিনা ঠিক। কিন্তু স্যার যাই হোক না কেন একটা ছেলে নিজের হাতে নিজের চোখ ছুরি দিয়ে কিভাবে…
জয়িতা দেবী কথাটা শেষ করতে পারলেন না তার আগেই তার দুচোখে নেমে এলো কান্নার জল তিনি দুটো হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললেন পিনাকী বাবু তার কাঁধে একটা হাত রাখলেন কিন্তু তার মুখেও কেমন যেন ভরসা হারানোর ভাব আর সেটাই স্বাভাবিক।
জিতেন বেশ কিছুক্ষণ কিছু বলতে পারল না পাশে বসে থাকা দাস বাবুর দিকে একবার তাকালো দাস বাবু নিঃশব্দে মাথা নাড়লেন এই সময় ঘরের ভেতর থেকে একটা ১২-১৩ বছরের মেয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। তাকে দেখে যেতেন হাত তুলে ডাকল
মেয়েটা প্রথমেই দোষটা তো করলেও তারপর একটু যেন ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে এসে সামনের সোফাতে বসলো জিতের আস্তে আস্তে বলল
জিতেন : তোমার নাম কি?
মল্লিকা : আমার নাম মল্লিকা।
গো তার গলার স্বরে কিন্তু তার বয়স হিসেবে কোনো সারল্য নেই গলার স্বর কেমন যেন একটু গম্ভীর আর কাটা কাটা। কথাগুলো সোজাসুজি জিতেনের দিকে তাকিয়ে বলেই মেয়েটি তার মায়ের দিকে তাকালো তারপর মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে তার গা ঘেঁষে বসে একটা হাত রাখল মায়ের গলার কাছে। জয়িতা দেবী কাঁদতে কাঁদতেই মেয়ের দুটো হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন জিতের আস্তে আস্তে বলল
জিতেন : তোমার দাদা কম্পিউটারে কি গেম খেলত তুমি কি সেটা জানে?
মল্লিকা : ঠিক জানি না তবে একদিন দাদার ঘরে হঠাৎ করে ঢুকে পড়েছিলাম আর তখন দেখেছিলাম দাদার কম্পিউটারে একটা চোখের গেম।
কথাটা শুনেই জিতেনের সাথে সাথে দাস বাবু কেমন যেন চমকে উঠলেন জিতেন আরেকটু এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার পাশের সোফাতে বসে সমৃদ্ধ গলায় বলল
জিতেন : তুমি ঠিক দেখেছো? চোখের গেম আর কি দেখেছিলে বলতো তুমি?
মল্লিকা : দাদার কম্পিউটারে আমি একটা ছবি দেখেছিলাম সেই ছবিতে অনেকগুলো চোখ রয়েছে আর দাদা মাউস দিয়ে কি যেন একটা করে চোখগুলোকে সরিয়ে দিচ্ছিল। আমি হঠাৎ করে ঢুকে পড়তেই দাদা আমার ওপর একটু রেগে যায় আমি তারপর বাইরে বেরিয়ে এসেছিলাম কিন্তু তার আগে আমি ওটা দেখেছিলাম।
জিতেন : ব্যাপারটা কতদিন আগে হয়েছিল মনে আছে তোমার?
কথাটা বলেই জিতেন বুঝলো এ কথাটা মেয়েটার মনে থাকার নয় কিন্তু তবুও মেয়েটা তার কথার উত্তর দিতে পারল
মল্লিকা : হ্যাঁ মনে আছে সেদিন রবিবার ছিল সেদিন আমাদের পাশের বাড়িতে একটা জন্মদিন ছিল আমাদের সবার ওখানে নিমন্ত্রণ ছিল আমি দাদাকে ডাকার জন্য দাদার ঘরে ঢুকেছিলাম কিন্তু দাদা আমায় বকে বাইরে বার করে দেয় তার কিছুক্ষণ পরে দাদা নিজেই অবশ্য বাইরে এসেছিল।
কথাটা শুনে জিতেন কিনা কি বাবুর দিকে তাকিয়ে বলে
জিতেন : ঠিক কোন রবিবারের কথা আপনার মেয়ে বলছে বলুন তো?
পিনাকী বাবু যেন একটু ভেবে নেয় তারপর বলে
পিনাকী : হ্যাঁ স্যার আমাদের পাশের বাড়িতে একটা জন্মদিন ছিল সেটা সপ্তাহ দুয়েক আগের কথা।
জিতেন : তাহলে আমার সন্দেহটাই ঠিক আমি এটাই ভেবেছিলাম যে কম্পিউটারের সাথে এই ব্যাপারটার কোন একটা সম্পর্ক আছে কারণ ঘরের মধ্যে যখন মৃতদেহটা পাওয়া যায় তখন সামনের কম্পিউটারটা অন করা ছিল। একবার চলুন তো কম্পিউটারটা দেখবো।
কথাটা বলে জিতেন উঠে দাঁড়াতেই দাস বাবু উঠে দাঁড়ায় তার সাথে পিনাকী বাবু ওদের দুজনকে নিয়ে আস্তে আস্তে গিয়ে ঢুকে নিজের ছেলের ঘরে। ঘরের দরজাটা খুলতেই কিন্তু পিনাকী বাবুর বুকের ভেতরটা কেমন হু হু করে ওঠে মাত্র দিন ৪ এক আগে পর্যন্ত এই ঘরের দরজা খুললে ছেলেকে বিছানায় কিংবা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে দেখেছেন তিনি কিন্তু এখন আর তাকে দেখতে পাওয়া যাবে না। একটা মানুষ যেন হঠাৎ করেই সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। ছেলেটার মুখটাও কেমন যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে পিনাকে বাবু তার চোখের কোন বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে নামতে চেষ্টা করে কিন্তু পিনাকী বাবু প্রাণপণে সেটা আটকে রাখেন। তারপর দরজাটা এক ধাক্কায় খুলে দিয়ে ভেতরে ঢুকে বলেন
পিনাকি : আসুন।
বড় রাস্তাটা পেরিয়ে ছোট রাস্তাটা ঢোকার আগে সামনে মাঠের দিকে একবার তাকায় জয়। একটা কুকুর ছোট মার টার উপর বসে আছে জয় কে দেখতে পেয়ে কুকুরটা লেজ নাড়াতে নাড়াতে তার দিকে এগিয়ে এসে পায়ের চারপাশে ঘুরঘুর করতে থাকে। অন্য কোন সময় হলে কুকুরটার মাথায় একটা হাত রেখে আদর করে দিত কিন্তু এখন কেন জানি ব্যাপারটা ভালো লাগছে না। এখন কোন কিছুই তেমনভাবে ভালো লাগে না জয়ের কেমন যেন হঠাৎ করে কয়েকটা দিনের মধ্যে মনের পরিবর্তন হয়ে গেছে অনেকটা আগে এই মাঠের কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগতো মনে হতো বাড়ি ফিরলেই তো আবার বই নিয়ে বসতে হবে তার থেকে এখানে এখানে তো সময় কাটিয়ে যাই কিন্তু এখন আর সেটা ইচ্ছে হলো না। কুকুরটাকে পেছনে রেখে ছোট রাস্তায় ঢুকে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দিকে এগোতে লাগলো। কুকুরটা পেছনে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়াতে নাড়াতে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে রইল জয়ের দিকে যেন মনে হচ্ছিল তার যদি কথা বলার ক্ষমতা থাকতো তাহলে সে কিছু একটা বলতো। সে হয়তো আগাম কোন একটা বিপদের আভাস জয়কে দিয়ে দিত যেন জয়ের সামনে গিয়ে তার হেঁটে যাওয়ার রাস্তাটা আটকে চিৎকার করে বলতো
” সামনে বিপদ আছে সামনে বিপদ আছে।”
জয় হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির কাজটা যখন চলে এলো তখন একবার পেছনের দিকে ঘুরে তাকালো দূরে সেই কুকুরটা তখনো দাঁড়িয়ে আছে ব্যাপারটা জয়ের কেমন অদ্ভুত লাগলো একটা সামান্য হাসি হেসে সে বাড়ির গেট খুলে ভেতরের দিকে ঢুকে কলিং বেলটা টিপলো।
খিদে পেয়েছিল তাই জামা কাপড় বদলে হাতমুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে এসে বস তুই মা যখন খেতে দিল তখন একটা কথা না বলে চুপচাপ খেতে লাগলো খেতে খেতে একসময় তার মা বলে উঠলো
জয়িতা : হ্যাঁরে তোর পরীক্ষা কবে থেকে শুরু হচ্ছে পড়াশোনা সব ঠিকভাবে হচ্ছে তো টিউশনগুলো একটা মিস করছিস না তো।
জয় কোন কথা না বলে চুপচাপ খেতে খেতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। জয়িতা দেবী ও একটু আশ্বস্ত হয়ে রান্নাঘরে নিজের কাজে চলে গেলেন কিন্তু জয় কেউ আমার অন্যমনস্কভাবে খেতে দেখেও তিনি যেন দেখেও দেখলেন না জয় নিজের মত খেয়ে আবার হাত মুখ ধুয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বিছানার উপর শুয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষণ মোবাইলটা তুলে নিয়ে একটা মেসেজ টাইপ করে পাঠালো মিতালির নাম্বারে। তারপর বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকার পরে হঠাৎ কি মনে ওঠে কম্পিউটারের সামনে গিয়ে কম্পিউটারটা অন করল। প্রথমে ভেবেছিল একটু স্টাডি করবে সামনের পরীক্ষার টপিক জয়ের কাছে এখনো ক্লিয়ার হয়নি। সেগুলো নিয়ে একটু খোঁজখবর করে নেবে কিন্তু তার আগেই হঠাৎ করে একটা নোটিফিকেশন এসে ঢুকলো সেটা অন করতে দেখতে পেল আগের দিনের সেই ইমেইল আইডিটা থেকে আবার একটা মেসেজ এসেছে। মেসেজটা অন করতেই দেখা গেল এবার সেখানে লেখা রয়েছে
” ওয়ান্ট টু প্লে এ গেম”
এমন একটা অদ্ভুত ইমেইল দেখে কিন্তু এবার জয় কেমন হতভম্ব হয়ে গেল চেনা নেই জানা নেই একটা অজানা অচেনা ইমেইল আইডি থেকে থাকে একটা গেম খেলার কথা বলছে। এমনিতেই মেজাজটা ভালো ছিল না, তার ওপর এমন একটা অদ্ভুত ইমেইল দেখে সেটা আরো বিগড়ে গেল মেইলটা বন্ধ করে দিয়ে গুগলে গিয়ে আজকে স্কুলে পড়ানো টপিকগুলো নিয়ে একটু সার্চ করে দেখলো। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর যখন বুঝতে পারল বড্ড ঘুম পাচ্ছে তখন কম্পিউটার বন্ধ করে দিয়ে বিছানার উপর এসে একটা বই খুলে বসলো। বইটা পড়তে পড়তে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে তা তার খেয়াল নেই ঘুমটা ভাঙলো সন্ধ্যের দিকে। ঘুমটা ভাঙতেই জয় বুঝতে পারল তার ঘুমটা ভেঙেছে মোবাইলের রিংটোন ঘুমের চোখে মোবাইলটা তুলে নিয়ে কানে চেপে ধরে হ্যালো বলতেই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এল মিতালির গলা।
মিতালী : একটা নোটস পাঠিয়েছি তোকে। একবার চেক করে দেখ তো। ঠিক আছে নাকি? আমি নিজেই তৈরি করেছি নোটসটা।
জয় : এখন একটু ঘুমাচ্ছি রে, একটু পরে উঠে নেওয়া চেক করে নিচ্ছি।
মিতালী : এখন ঘুমাচ্ছিস কেন তোর শরীর ঠিক আছে তো জ্বর আসেনি তো তোকে কতবার করে বললাম আজ বৃষ্টিতে ভিজিস না ভিজিস না শুনলি না তো।
জয় : খুব একটা বীজে নি তো আর জ্বর আসেনি এমনি বড্ড ঘুম পাচ্ছিল তাই ঘুমিয়ে পড়েছি। আমি একটু পরে উঠে নোটসটা চেক করে তোকে জানাচ্ছি।
খুব বলেই অপর প্রান্ত থেকে মিতালীকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলো তারপর সেটা এক পাশে সরিয়ে রেখে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল জয়।
পিনাকী : এটাই আমার ছেলের কম্পিউটার স্যার আপনাদের যা দেখার দেখুন তবে সত্যি বলতে আমি নিজেও কম্পিউটার টা অন করে খুঁজে দেখেছি কেমন কোন গেম কিংবা তেমন কিছু কিন্তু আমি খুঁজে পাইনি।
জিতেন : দেখুন পিনাকী বাবু আপনার ছেলে সারাদিন ঘরেই থাকতো আর কম্পিউটার নিয়েই বসে থাকতো পড়াশোনা ছাড়া ও আর অন্য কিছু করতে বলে আপনারা জানেন না তাহলে তার মৃত্যুর সাথে কম্পিউটারের কোন একটা সম্পর্ক আছেই আর আপনার মেয়েও তো বলেছে তাকে একটা গেম খেলতে দেখেছিল হতেই পারে সেটা অন্য কিছু তবে আমার বলছে কম্পিউটারে কিছু একটা রয়েছে।
দাস : কিন্তু স্যার এমন কোন গেম কি আছে যাতে এমন একটা বীভৎসর ব্যাপার ঘটে যেতে পারে গেমটা একটা খেলা আছে তার সাথে এটার কি সম্পর্ক?
জিতেন : হিপনোটাইজ বলে একটা শব্দ আছে জানেন তো দশ বাবু হিপনোটাই শুধু মাত্র মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে কিংবা তাকে ছুঁয়েই করা যায় বলে আমি মানি না এমন অনেক পদ্ধতি আছে যেটা দিয়ে মানুষকে হিপনোটাইস করা যায়। কোন কিছুর প্রতি তারা আসক্তি তৈরি করা কিংবা এমন কিছু একটা করা যাতে সে সেটা ছাড়তে পারবে না তার জন্য সে সমস্ত কিছুই করতে পারবে। আর কম্পিউটার এমন একটাই মাধ্যম কম্পিউটার দিয়ে অনলাইন গেম দিয়ে অনেক কিছুই করা যায়।
কথাটা বলতে বলতে জিতেন কম্পিউটারটা অন করল তারপর অন হতে থাকা স্ক্রিন টার দিকে তাকিয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ কম্পিউটারটা অন হতেই কম্পিউটারের পর্দায় ফুটে উঠলো একটা ছবি। এই ছবিটা এই ছবির ছেলেটাকে কয়েকদিন আগে এই ঘরে কম্পিউটারের সামনে চেয়ারের পাশে উল্টে পড়ে থাকতে দেখা গেছিল। কম্পিউটারের স্ক্রিনে বেশ কয়েকটা আইকন রয়েছে তবে তাছাড়া এমন কিছু নেই যেটা মনে সংশয় জাগাতে পারে আর আরো একটা অদ্ভুত ব্যাপার যেটা সেটা হল কম্পিউটারের আইকনের মধ্যে কিন্তু কোন গেম নেই অতি সাধারণ কোন গেম ও কম্পিউটারের মাঝে মাঝে অনেকেই ইনস্টল করে রাখে কিন্তু এই কম্পিউটারে তেমন কোন গেমও নেই। ব্যাপারটা দেখে জিতেন একটু অবাক হল সে সন্দেহ করেছিল এসব কিছুর সাথে কম্পিউটারের কোন একটা গেম কিংবা অন্য কিছু জড়িয়ে আছে কিন্তু এই কম্পিউটারে তো তেমন কিছু নেই।
বেশ ঘন্টা দুয়েক ধরে কম্পিউটারের সমস্ত ফোল্ডার ফাইল সবকিছু ঘেটে ফেলার পরেও যখন কম্পিউটারে এমন কিছুই পাওয়া গেল না যার সাথে এই খুনের কোন একটা সম্পর্ক থাকতে পারে তখন কেমন যেন হতাশ হয়ে পড়ল জিতে একসময় দাস বাবুর দিকে তাকিয়ে বলল
জিতেন : এখানে তো তেমন কিছুই নেই। আমরা কি তাহলে ভুল পথে হেঁটে চলেছি দাস বাবু আমি ভেবেছিলাম কম্পিউটার থেকে কিছু না কিছু একটা পাওয়া যাবে কিন্তু কিছুই তো পাওয়া গেল না।
দাস : স্যার ছেলেটার মোবাইল থেকে কিন্তু ওই মেয়েটার নাম্বার ছাড়া আর তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। ওই মেয়েটার সাথেই বেশিরভাগ সময় কথা হতো আর বাকি যাদের সাথে কথা হতো তাদের সংখ্যা হাতে গোনা খুব কম তারা তার সাথে স্কুলেই পড়তো।
জিতেন একটু অবাক হয়ে চুপ করে বসে থাকে কম্পিউটারের সামনে তারপর কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করেই কি যেন মনে হতে কম্পিউটারের আইকনের মধ্যে থাকা ফেসবুক প্রোফাইল টা খুলে ফেলে তন্ন তন্ন করে খুলতে থাকে কোন একটা সূত্র যে সূত্র টা তাকে এই কেসের সাহায্য করতে পারে কিন্তু না কম্পিউটারের ফেসবুকের আইকনের ভেতরে ম্যাসেঞ্জার বক্সে তেমন কোনো মেসেজ পাওয়া যায় না। যা আছে তার সমস্ত আনশীন হয়ে পড়ে আছে। কি যেন একটা মনে হতেই হঠাৎ করে যেতেন জিমেল টা অন করে । আর তারপরেই তার চোখের সামনে ফুটে ওঠে বেশ কয়েক দিন ধরে আসতে থাকা কিছুই নেই আর সেগুলোর মধ্যেই জিতেন খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যায় তার কাঙ্খিত একটা বস্তু।
সামনে খুলে রাখা অংক বইটার দিকে তাকিয়ে একটা অংক খাতায় তোকে নিয়ে ছিল জয় আজ সারাদিনে বেশ কয়েকটা এই ধরনের অংক সে করে ফেলেছে। আজ রবিবার ছুটির দিন তাই সে ভেবে নিয়েছিল দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বিকেল পর্যন্ত বসে বসে বেশ কয়েকটা অংক করবে আর এখন সেটাই করে চলেছে। ফোনটা এ সময় সাইলেন্ট করাই থাকে যাতে কেউ বিরক্ত করতে না পারে। আর এ সময় তার ঘরে কেউ আসবে না সে জানে মা এখন রান্না-বান্না সেরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে বোন বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে বাবারা ছুটি কিন্তু এ সময়টা বাবা ঘরে নিজের মত বই পড়ে কাটায় বাবার বই পড়ার নেশাটা তাকেও ধরেছে পড়ার বই ছাড়া সে আরো অনেক বইপত্র পড়ে বাবাই সমস্ত কিছু এনে দেয় তার বইয়ের রেকেট বিভিন্ন। সেই বউয়ের ডাকে ভারত-বাংলাদেশ এমনকি অন্যান্য দেশেরও অনেক লেখকদের বই রয়েছে আর এই বইগুলো তার বাবা খুঁজে খুঁজে এনে তাকে দিয়েছে। সবকটা বই তথ্যে ভরা সেগুলো পড়লে একপ্রকার যেমন বই পড়া হবে তেমন অনেক কিছু জানাও যাবে তবে বেশিরভাগ বই কিন্তু ইংরেজিতে লেখা। হাতের অংকটা শেষ করে খাতাটা বন্ধ করে বই খাতা গুলো তুলে টেবিলের উপরে রাখল জয় তারপর বইয়ের এক থেকে একটা বাংলা কবিতার বই বার করে নিয়ে বিছানার উপর শুয়ে পড়ল বই যেমন অসময়ের সঙ্গে তেমন বই ঘুমেরও সঙ্গী ঘুম না এলে বই পড়তে থাকলে মাঝে মাঝে ঘুম পেয়ে যায় জয়ের এখন একটু ঘুমিয়ে নেওয়া দরকার কারণ বিকেলে পরপর দুটো টিউশন রয়েছে। সেখান থেকে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যাবে। কবিতার বইটা খুলে হাতে নিয়ে সবে পড়তে শুরু করবে এমন সময় তার পাশে রাখা মোবাইলটার দিকে চোখ গেল মোবাইলটা সাইলেন্ট করা থাকলেও মোবাইলের স্ক্রিনের আলো টা জ্বলে উঠতেই সেটা হাতে নিল জয় আর তারপরেই দেখতে পেল একটা ইমেল এসেছে। কি মনে হচ্ছে এই মেলটা খুলতেই দেখতে পেল আগের সেই ইমেইল নাম্বার থেকে ইমেইল টা এসেছে আর এবার সেখানে লেখা
” ওয়ান টু প্লে এ গেম জয়”
এবার কিন্তু একটু অবাক হয়ে গেল জয় ইমেইলটা যে পাঠিয়েছে সে তার নাম জানলো কিভাবে? আর কোন গেম খেলার কথা বলছে সে। কথাটা মনে হতে তাড়াতাড়ি সেই ইমেইলটা রিপ্লাইয়ে জয় লিখল
” হাউ ইউ নো মাই নেম? গেম? হোয়াট গেম?”
জয় ভেবেছিল এবারেও হয়তো সেই ইমেইলের উত্তর সাথে সাথেই আসবে না তাই মোবাইলটাকে বিছানার পাশে এবার উল্টে রেখে কবিতার বই টা খুলে কবিতায় মন দিল। কিন্তু একটু পরেই যে তার ইমেইলের উত্তর চলে এল সেটা সে বুঝতে পারল না। বই পড়তে পড়তে কিন্তু আজ আর জয়ের ঘুম এলো না বারবার তার মনের মধ্যে ঘুরে ফিরে আসছিল ইমেইলের কথাগুলো একটা অজানা অচেনা মানুষ তার নাম জানলো কি করে আর তাছাড়া ইমেইলে তো তার এই নামটা দেওয়া নেই তার নাম দেওয়া রয়েছে অন্য তার ভালো নাম সিতাংশূ। সেই নামটাই দেওয়া রয়েছে তাহলে তার ডাকনাম যে জয় সে কথাটা এই ইমেইল পাঠানো মানুষটা জানলো কি করে?
মনের মধ্যে চলতে থাকা এই ব্যাপারটা জয়কে কবিতার বইতে মন বসাতে দিলো না তাই তার ঘুম আসলো না এক মনে কবিতা পড়ার চেষ্টা করেও কোন ফল যখন হলো না তখন বইটা বন্ধ করে রেখে উঠে গিয়ে কম্পিউটারটা অন করে কম্পিউটারের সামনে বসলো ততক্ষণে আরো একটা ইমেইলে এসে ঢুকেছে তার ইমেইল বক্সে আর সেটা খুলতেই এবার দেখতে পেলেও তার সামনে ইমেইল থেকে আসা উত্তর এবার কোন মেসেজ নেই এসেছে একটা ছবি আর তার নিচে রয়েছে একটা লিংক।
দাস : স্যার একটা ইমেইল আইডি থেকে আমরা তো কাউকে ধরতে পারবো না সেই ইমেইল টা তো মিথ্যেও হতে পারে অনেক সময় অনেকে মিথ্যে ইমেল আইডি বানিয়ে নিজেদের কাজ করে।
জিতেন : ধরতে পারবো না সেটা ঠিক কিন্তু একটা কাজ তো করা যেতেই পারে, এই ইমেল আইডি থেকে এই শহরে আর কারোর কাছে এমন কোন ইমেইল আসছে নাকি সেটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করা যেতে পারে দেখো এই ইমেইল যারা পাঠিয়েছে তারা একজনকে টার্গেট করেছে মানে এরপর আরো কাউকে টার্গেট করবে আর তাছাড়া এর আগেও তো তারা কাউকে টার্গেট করে থাকতে পারে ব্যাপারটা নিয়ে খুঁজতে শুরু করলে আমরা নিশ্চয়ই কিছু না কিছু পাব।
দাস : কিন্তু স্যার এভাবে খুঁজতে তো অনেকটা সময় লেগে যাবে আর ততদিনে যদি যারা এটা করছে তারা বুঝতে পেরে যায় আমরা তাদের পেছনে আছি তাহলে তো তারা তাদের কাজ বন্ধ করে দেবে?
জিতেন : সেদিকটা আমার ভাবা আছে আমি কাজটা অন্যভাবে করব। তবে হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন এটা অনেকটা সময় লাগবে কিন্তু তাতে আমার আপত্তি নেই। এটা একজনের কাজ না অনেক জনের কাজ সেটা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না যদি তাই হয় তাহলে সময় লাগলেও এদের খুঁজে বার করা দরকার না হলে এরা আবার কাউকে নিজেদের জালে ফাঁসাবে।
দাস : আপনি যেটা ভালো বোঝেন করুন স্যার তবে এটা ছাড়া তো আমাদের হাতে এখন আর কিছুই নেই।
জিতেন চেয়ার ছেড়ে উঠে টেবিলের কাছে হেলান দিয়ে বসে তারপর বলে
জিতেন : একটা শত্রু যখন আমাদের কাছে এসেছে তখন ঠিক কিছু না কিছু আমরা বার করতে পারব। অন্তত একটা কিছু তো আছে আমাদের কাছে এবার দেখাই যাক না কতদূর আমরা করতে পারি।
ঠিক সেই সময় থানার বাইরে একটা গাড়ি এসে থামল আর গাড়ি থেকে নেমে থানার ভেতরে এসে ঢুকলেন এক ভদ্রলোক তার ডান হাতে ধরার একটা ল্যাপটপ। তার পরনে আধুনিক পোশাক জিন্স গেঞ্জি তা ডান হাতে একটা ঘড়ি চোখে সানগ্লাস থানায় ঢুকে সানগ্লাসটা খুলতে খুলতে জিতেন বাবুর দিকে তাকিয়ে ভদ্রলোক হেসে বললেন
রিতম : কি ব্যাপার বলতো? এত তাড়াহুড়ো করে আমায় ডেকে পাঠালি কোন সমস্যা?
জিতেন : বড় একটা সমস্যা হয়েছে একটা খুন হয়েছে তবে সেই খুনের কোন সূত্র আমরা খুঁজে পাচ্ছিনা একটা ইমেইল আইডি আছে শুধু আমাদের কাছে আর সে সেই ইমেইল আইডিটা থেকে কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে মনে হচ্ছে। তাই তোকে ডেকে পাঠালাম দেখ তো তুই কিছু খুঁজে বার করতে পারিস নাকি।
জিতেন তখন গোটা ব্যাপারটা সামনে বসে থাকা রীতমকে খুলে বললো শুনতে শুনতে রিতমের দুটো চোখ গোল গোল হয়ে আসছিল জিতেনের কথা শেষ হতে দিতাম বলে উঠলো
রিতম : এই ধরনের গেমের চল এখন হয়েছে বুঝলি আসলে এরা যে কিভাবে স্বীকারকে ট্রাক করে সেটাই বোঝা যায় না তবে ঘটনাটা কিন্তু মারাত্মক লেভেলে পৌঁছে গেছে। কিছু একটা করা দরকার এখানে বসে তেমন কিছু করা যাবে না আমাকে একবার কম্পিউটারটা দেখতে হবে আর সেই গেমের লিংকটা কিংবা তার সমস্ত কিছুই দেখতে হবে ওই ছেলেটার বাড়িতে নিয়ে চল তারপর আমি দেখে বলছি কিছু করতে পারবো নাকি।
দুজন মিলে পুলিশের জিভ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল পিনাকী বাবুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। সূর্য তখন পশ্চিম দিকে নামতে শুরু করেছে।
কম্পিউটারের সামনে বসে যায় গোটা ঘর অন্ধকার ঘর ঘড়িতে রাত দেড়টা বাজে। পাশে রাখা মোবাইল ফোনটা কয়েকবার ভাইব্রেট করতে সেটা তুলে নিয়ে কানের চেপে ধরে জয় তারপর বলে
জয় : বল?
মিতালী : কিরে পরছিস নাকি? এত রাতে ফোন করে বোধহয় বিরক্ত করে ফেললাম।
জয় : না না তেমন কিছু না এটা গেম খেলছিলাম তুই এখনো ঘুমোতে যাসনি।
মিতালী : ভালো লাগছিল না সামনে পরীক্ষা তার টেনশান আর তার ওপর শরীরটা ভালো নেই তাই ভাবলাম তোকে একবার ফোন করি। তুই ব্যস্ত থাকলে তাহলে এখন রাখছি।
জয় : না না তেমন কিছু না। বড় অদ্ভুত একটা গেম হঠাৎ করে গেমের লিংকটা পেয়েছি কাল তোর সাথে দেখা হলে তখন তোকে বলবো।
মিতালী : সামনে পরীক্ষা এখন শুধু শুধু গেম খেলে সময় নষ্ট করিস না তাড়াতাড়ি শুয়ে পর সকালে উঠে না হয় আবার পড়তে বসবি আর কাল আমি স্কুলে যাব না রে কাল বাড়িতে কিছু লোকজন আসবে একেবারে পরশু দেখা হবে ঠিক আছে এই রাত ছেড়ে মা ঘুম হচ্ছে তো জেগে যাবে কাল কথা হবে।
মিতালী ফোনটা রেখে দিতে ফোনটা পিছনের একপাশে সরিয়ে রেখে কম্পিউটারের দিকে তাকায় যায় কম্পিউটার স্ক্রিনে তখন একটা ছবি ফুটে উঠেছে ছবিটায় ক্রিস ক্রস খেলার মত নটা ঘর আর সেই নটা ঘরের নিচে নটা বিভিন্ন ধরনের চোখের ছবি। এমন একটা অদ্ভুত গেমের মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারে না জয় তবুও চোখগুলো উপর মাউসের ব্যাটার নিয়ে গিয়ে ক্লিক করতেই বোঝা যায় চোখগুলোকে সেখান থেকে তুলে সরানো যাবে তার মানে চোখগুলো সরিয়ে ফাকা জায়গায় বসিয়ে কোনোভাবে গেমটা মেলাতে হবে।
এদিকে গেমটা ছবির পাশে একটা মেসেজ বক্স রয়েছে। সেই মেসেজ বক্সে একটা করে প্রশ্ন আসছে একটা করে প্রশ্নের উত্তর দিলে তাহলে একবার করে ছবিটাকে সরিয়ে যথেষ্ট জায়গায় ঘরে বসানোর সুযোগ পাওয়া যাবে। একবার জয়েন মনে হলো কি দরকার বেকার এসব গেম খেলে সময় নষ্ট করার তার বদলে বরং কম্পিউটারটা অফ করে দিয়ে ঘুমোতে চলে যায় কিন্তু তারপরেই মেসেজ বক্সে আসা প্রশ্নটা দেখে একটু চমকে যায় জয়। এমন একটা অদ্ভুত প্রশ্ন কেউ করতে পারে। কিন্তু তবুও অনিচ্ছা স্বার্থে প্রশ্নের উত্তরটা লিখে দেয় সে আর তারপরেই তোলা একটা কাউন্টিং আছে। সেটা দেখে জয় জয়ের কাছে গোটা গেমটা পরিষ্কার হয়ে যায়। একটা করে প্রশ্নের উত্তর দিলে তার কাছে একটা নাম্বার জমা হবে আর সেই নাম্বার আসলে সে কতবার করে চোখের ছবিগুলো সরাতে পারবে তার জন্য যথেষ্ট নাম্বার। কিন্তু যারা ভালো লাগছিল না তাই সে গেমটা বন্ধ করে কম্পিউটার অফ করে দিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে কাল সকালে উঠে পড়তে হবে কারণ পরীক্ষার আর বেশি দিন বাকি নেই।
জিতেন : কিছু বুঝতে পারছিস?
রিতম : ইমেইলের সাহায্যে একটা গেম এর লিংক পাঠানো হয়েছিল কিন্তু সেই গেমের লিংকটা সব সময় খুলবে না ইমেইলটা পাঠানোর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে গেমটা অন করতে হবে আর একবার গেমে ঢুকে গেলে গেমটা থেকে যদি বেরিয়ে যায় তাহলে গেমটা অটোমেটিক কম্পিউটার থেকে আনইন্সটল হয়ে যাবে আসলে এই ধরনের গেম গুলোকে ইন্সটল করার প্রয়োজন পড়ে না সরাসরি খেলা যায়। তবে খেলা থেকে একবার বেরিয়ে গেলে গেমটা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না যতক্ষণ না সেই লিংকটা আরো একবার নতুন করে লিংক প্রোভাইডার পাঠাচ্ছি।
জিতেন : তার মানে ইমেইল টা যে করেছিল মানে যে গেমটা লিংকটা পাঠাচ্ছে তাকে আমরা ধরতে পারবো না?
রিতম : একটা সুযোগ যে নেই সেটা নয় তবে ব্যাপারটা খুবই আনপ্রেডিক্টেবল হতেও পারে আবার নাও হতে পারে আসলে ইমেইলের সাথে কিছু এড্রেস কিছু পারসোনাল ইনফরমেশন কানেক্ট করা থাকে আর সেই সূত্রে মাঝে মাঝে কোন পারমিশনের ক্ষেত্রে লোকেশন ব্যবহার করা হয় আর কোনভাবে যদি ইমেইলটা যে পাঠাচ্ছে তার ইমেইল আইডি এমন কোন ডিভাইসে থাকে যার সাথে লোকেশন কানেকশনের কোন একটা সম্পর্ক কোন সময় হয়েছে সেভাবে আমরা ট্র্যাক করতে পারি ইমেল আইডি ব্যবহারকারী তবে সময় লাগবে বস।
জিতেন : সময় নেই তুই সময় নিয়ে সমস্যা নেই কিন্তু আমার ওই ইমেইল ব্যবহারকারীর এড্রেস চাই আর এই মুহূর্তে তাহলে এই গেমটা এই শহরে আরো অনেকে খেলছে?
রিতম : মনে তো হচ্ছে তাই তবে এই শহরে কেউ খেলছে কিনা সেটা বলতে পারছি না এই ধরনের অপরাধীরা একটা শহরে একজনকেই বেছে নেয় তারপর আবার হয়তো কিছুদিন পরে আবার অন্য একজনকে টার্গেট করে আসলে এদেরও ধরা পড়ে যাওয়ার একটা ভয় থাকে তাই এরাও সাবধান থাকে আমার মনে হয় তুই আশেপাশের কয়েকটা শহরে একটু খোঁজ নিয়ে দেখতে পারিস। যদি কিছু পাওয়া যায়।
রিতাম আর জিতেন কে নিজের ছেলের ঘরে বসিয়ে জয়িতা দেবী ওদের জন্য একটু চা আনতে গিয়েছিলেন এবার ফিরে এসে ওদের কথাবাত্রা শুনে বললেন
জয়িতা : ইমেইল তো ইমেইল ওর মোবাইলেও মাঝে মাঝে আসতো এমনকি দু একবার দেখেছি খেতে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে বসেছে ওকে আমি বারণ করতাম তবে বলতো কিছু important email নাকি আসবে।
জিতেন : আপনার ছেলে একটা অদ্ভুত গেম খেলত ম্যাডাম আমি তো আপনাকে আগেই বলেছিলাম আমার মনে হয়েছে কম্পিউটারের সাথে কোন একটা সম্পর্ক আছে কিন্তু কি সম্পর্ক সেটাই খুঁজে বার করতে হবে। তবে আপনি চিন্তা করবেন না আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই কেসে কিছু একটা বার করব আর আসল অপরাধী কে শাস্তি দেব।
রীতম অনেকক্ষণ ধরে কম্পিউটারে বসে কি যেন একটা খোঁজার চেষ্টা করতে লাগলো জিতেন চায়ের কাপ নিয়ে ঘরের মধ্যে পাইচারি করতে করতে মাঝে মাঝে চুমুক দিচ্ছে জয়িতা দেবীর চাটা দিয়ে আবার বাইরে চলে গেছিলেন। মনে মনে তিনি ভীষণ ভেঙ্গে পড়েছেন তাদের ছেলে আর এই পৃথিবীতে নেই এই ব্যাপারটা কেমন যেন তিনি এখনো মেনে নিতে পারছেন না বারবার মনে হয় এক্ষুনি হয়তো বাইরের কলিং বেল বাজবে আর তিনি দরজা খুলে দিয়ে দেখবেন তার ছেলে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছি। কথাটা ভাবতে ভাবতে জয়িতা দেবীর চোখে আবার জল এলো তিনি কাপড়ের একটা কোনায় কোন রকমে জলটা মুছে নিয়ে নিজের মেয়ের ঘরে গিয়ে ঢুকলেন তার মেয়ে মল্লিকা তখন বিছানার উপর বসে কতগুলো নেলপলিশ সরিয়ে রেখে সেগুলো আঙুলে পড়ছে ছোট মেয়ে এখনো তেমন বোঝার মতন বয়স হয়নি আর তাছাড়া মেয়েটা ছোট থেকে মানসিকভাবে একটু দুর্বল এর জন্য তাকে ডাক্তার দেখানো হয় তবে সমাধান এখনো কিছুই বেরিয়ে আসেনি। ডাক্তাররা বলেছে এমনটা হবে ওর মানসিক স্টেবিলিটি বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত এমনই থাকবে তবে আর পরবর্তীকালে এটা ঠিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু সে ব্যাপারে নিশ্চিন্তভাবে তারা কিছুই বলতে পারেনি। ঘরে ঢুকে মেয়ের মাথার উপর একটা হাত রেখে তাকান জয়িতা দেবী মল্লিক অবাক হয়ে মায়ের চোখের দিকে তাকায় মায়ের চোখে জল এর মধ্যে মা কে মাঝে মাঝে কাঁদতে দেখেছি একটা ব্যাপার সে বুঝতে পেরেছে তার দাদাকে শেয়ার দেখতে পাবে না কিন্তু সেটা নিয়ে এই মানুষগুলো এত চিন্তা করছে কেন সেটা এসে বুঝতে পারে না মায়ের চোখের জল দেখে সে বলে
মল্লিকা : মা দাদা তো আর আসবে না তাহলে তুমি দাদার জন্য এভাবে কাঁদো কেন?
জয়িতা ; ওরে তুই যদি সব বুঝতে পারতি তাহলে তুইও বুঝতি আমি কাঁদি কেন। তবে তুই বুঝবি নারে বুঝবে না।
কথাটা বলতেই মল্লিকা অবাক হয়ে আরো একবার বলে
মল্লিকা : কেন বুঝবো না তুমি ভালো করে বুঝিয়ে বলো তাহলে বুঝবো।
জয়িতা দেবী আর কিছু বলেন না তার বদলে মেয়ের ঘর থেকে কান্না চাপতে চাপতে বাইরে বেরিয়ে আসে ততক্ষণে জিতে না বাইরে বেরিয়ে এসেছে। জয়িতা দেবী কোন রকমের সামলে নিয়ে বলেন
জয়িতা : আপনাদের কাজ হয়ে গেছে তাহলে?
জিতেন : হ্যাঁ ম্যাডাম। ওই ইমেইল আইডির ব্যবহারকারীকে যদি প্রেস করতে পারি তাহলে আমাদের কাজটা সহজ হয়ে যাবে আশা করছি আমরা কিছু জানাতে পারব এবার আজকের মত চলি ম্যাডাম।
ওরা দুজন বেরিয়ে যেতেই দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে জয়িতা দেবীর ছেলের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালেন শূণ্য ঘরের ভেতরটা তাকিয়ে কেমন যেন বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল আস্তে আস্তে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিতে দিতে তিনি বুঝতে পারলেন, তার মনের ভেতর কোথাও যেন একটা বড় শূন্যতা তৈরি হয়ে গেছে এর মধ্যে সেই শূন্যতাটার কোনদিন কোন ভাবেই পূরণ হবে না হয়তো। দুনিয়ার কোন কিছু শূন্যতায় বোধহয় অন্য কোন কিছু দিয়ে পূরণ করা যায় না তবে একটা শূন্যতা পূরণ করার জন্য অন্য একটা কিছু শূন্য করে দিলে অপরাধ হয় না বোধ হয়। জয়িতা দেবী দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে নিজের মেয়ের ঘরের দিকে চলে গেলেন আস্তে আস্তে।
গেমটা গেমটা আস্তে আস্তে কেমন যেন জয়ের ভালো লাগতে শুরু করেছিল আর প্রশ্নগুলো আস্তে আস্তে কেমন যেন বড্ড ব্যক্তিগত হয়ে পড়ছিল। আরো একটা ব্যাপার লক্ষ্য করছিল জয় প্রশ্নের ভুল উত্তর দিলে কিংবা মিথ্যে উত্তর দিলে কখনই পয়েন্টসের পারছিল না আর পয়েন্ট না পেলে চোখের ছবিগুলো সামনের বক্সে সাজানো যাবে না। ভুল উত্তর দিলে প্রশ্নটা বদলে যাচ্ছিল তবে পয়েন্ট কিছু দিয়ে আসছিল না এই ব্যাপারটা জয়ের কাছে বড় অদ্ভুত লাগছিল সে যে সত্যি বলছে না মিথ্যে বলছে সেটা এই গেমের প্রশ্নকর্তা জানতে পারছে কি করে। যত অদ্ভুত লাগছিল তত যেন গেমটার প্রতি একটা আকর্ষণ জয়ের হয়ে আসছিল। এর মাঝে একটা কথা মাঝে মাঝেই বারবার গেমের নিচের দিকে আউটলাইনে লাল রঙে ফুটে উঠছিল।
” If you lose at the end of the game, you have to give an eye”
কথাটা জয়দেব ছিল কিন্তু তার বারবার মনে হচ্ছিল এমনটা আবার হয় নাকি। এটা একটা গেম মাত্র এই গেমটা তার কাছ থেকে তার চোখ কিভাবে নিয়ে নেবে কিন্তু একটা সন্দেহ জয়ের মনে বারবার ঘুরে ফিরে আসছিল গেমটা তার ব্যাপারে যে প্রশ্নগুলো করছে সেগুলোর উত্তর নিয়ে যায় নিজেও মাঝেমাঝে কনফিউজ। আর গেমের লেভেল যত বাড় ছিল তত প্রশ্নগুলো ব্যক্তিগত হয়ে আসছিল আর সেক্ষেত্রে জয়কে এমন কিছু কথা বলে দিতে হচ্ছিল যেগুলো তার একান্ত সিক্রেট। জয় গেমটা খেলতে খেলতে এতই বিভোর হয়ে পড়েছিল যে মিতালীকে পর্যন্ত ইগনোর করতে শুরু করছিল তার ফোন ধরছিল না মেসেজের রিপ্লাই করছিল না এমনকি নিজের পড়াশোনাও ঠিকভাবে হচ্ছিল না যখনই তাকে মা খাওয়ার জন্য ডাকতে আসতো সে বলতো এখন খেতে ইচ্ছে করছে না। জয় বুঝতে পারছিল গেমটা দিনের বেলা খেলা সম্ভব নয় তাই প্রতিদিন রাতে সে কম্পিউটার অন করে সেই নির্দিষ্ট ইমেইল আইডিতে একটা মেসেজ করলে গেমের লিংক চলে আসতো তবে গেমটা থেকে একবার বেরিয়ে এলে কোনোভাবেই সেই লিংক থেকে গেম টা খোলা যেত না। জয় ধীরে ধীরে গোটা রাত সেই গেমটার পেছনে নষ্ট করতে লাগল এমনকি সারাদিনেও যখনই পারতো গেমটা খেলতে শুরু করত কেমন যেন একটা নেশার মতো হয়ে গেছিল আর গেমের ছবিতে দেওয়া চোখ গুলো যেন জীবন্ত একটা চোখের মত বলে মনে হতো। একদিন রাত্রে গেমটা খেলতে খেলতে একটা প্রশ্ন ভেসে এলো তার স্ক্রিনে
” আর ইউ ভার্জিন?”
প্রশ্নটা দেখে হঠাৎ করে কেমন যেন থমকে গেল জয় তারপর নিচে লিখল
“ইয়েস।”
কিন্তু অবাক হয়ে দেখতে পেল গেমটাই কিন্তু তাকে কোন পয়েন্ট দেয়নি অথচ এই ব্যাপারটা তো শেয়ার অন্য একজন ছাড়া আর কেউ জানে না। তারপর হঠাৎ করে কি মনে হতে উত্তরের জায়গায় সে লিখল
” নো”
আর সাথে সাথেই এক পয়েন্ট পেয়ে গেল এই এক পয়েন্টটা না পেলে গেমের লেভেলটা শেষ করা যেত না কিন্তু তারপরেই যে প্রশ্নটা স্ক্রিনে ভেসে এলো সেটা দেখে এবার কিন্তু চমকে গেল জয়। একটু ভয় পেল তার সাথে এতটাই ভয় পেলেও যে তার সাথে সাথেই গেমটা বন্ধ করে কম্পিউটার অফ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল। বাকি রাতটা কেমন যেন ভয়ের মধ্যেই কেটে গেল পরদিন সকালে তার মা তার মুখ দেখে বলল
জয়িতা : কিরে তোর মুখটা আমার শুকনো লাগছে কেন আর চোখ দেখে মনে হচ্ছে সারারাত ভালো করে ঘুমাসনি, সামনে পরীক্ষা বলে সারারাত জেগে পড়তে হবে না একটু ঘুমিয়ে নিতে পারিস তো।
কিছুই বলতে ইচ্ছে করছিল না জয়ের তবুও বলল
জয় : পরীক্ষার জন্য সব তৈরি আছে তবে আর একবার রিভাইস করে নিচ্ছি কাল পড়তে পড়তে কখন যে ভোর হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি।
জয়ের মা ও তার মিথ্যে কথাটা ধরতে পারল না অথচ জয়ের ঠিক তখনই মনে পড়ে গেল কাল রাতে সে গেমে যখন মিথ্যে কথা বলেছিল তখন সে সেটা ধরে ফেলেছিল তবে পরের প্রশ্নটার উত্তর সে নিজে দিতে পারবে না। কিন্তু গেমটার প্রতি একটা আকর্ষণ জয়কে দিয়ে সেদিন বিকেলেই আবার গেমটা খেলালো আর তার কাছ থেকে জেনে নিল সেই নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তরটা।
রিতম : এইসব গেমগুলো একটা ট্র্যাপ তৈরি করে রাখে সেই ট্র্যাপের জালে যে গেম খেলছে সে পা দিলেই হয়ে গেল তার কাছ থেকে সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য এই গেমটা জেনে নেয় তারপর তার দেওয়া তথ্য তার বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়ে এমন কিছু একটা করতে বলে সেটা না করলে সেই ব্যক্তিগত তথ্যগুলো কাজে লাগিয়ে তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়।
জিতেন : তার মানে এই ছেলেটার ক্ষেত্রেও তেমন কিছুই হয়েছে। এই ছেলেটাও তাহলে তার ব্যক্তিগত তথ্য এই গেমের ব্যবহারকারীকে দিয়েছিল আর তারপরে সেই তথ্য কাজে লাগানো হয়েছে তার বিরুদ্ধেই।
রিতম : ব্যাপারটা হতেই পারে তবে আমাদের খোঁজ নিতে হবে এই মুহূর্তে এই শহরে কিংবা কাছাকাছি কোথাও এই গেমটা কেউ খেলছে কিনা তাহলে একটা লিড পেলেও পাওয়া যেতে পারে।
জিতেন : আমি কাছাকাছি সমস্ত থানায় খবরটা পাঠিয়ে দিয়েছি তবে এভাবে কারুর বাড়িতে ঢুকে খেয়ে কোন গেম খেলছে সেটা তো খুঁজে বার করা সম্ভব নয় অন্য কোন রাস্তা তো থাকতেই পারে ওই ইমেইল আইডিটা কে ব্যবহার করে যদি?
রিতম : সেটার চেষ্টাই করছি?
ওরা দুজনে থানায় বসে কথা বলছিলে এমন সময় দাস বাবু এসে ঘরে ঢুকল তারপর জিতেন কে কাছে ডেকে নিয়ে বেশ কিছু কথা বলতেই জিতেনের চোখটা চকচক করে উঠলো। সে তাড়াতাড়ি রিতমের কাছে এগিয়ে এসে বলল
জিতেন : রিতম একটা লিড পাওয়া গেছে এই গেমটা বেছে বেছে সম্প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক এরকম ছেলেদেরই টার্গেট করছে বলে আমার মনে হয়েছিল তাই স্কুল এবং ১৭-১৮ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে আমি খোঁজ লাগিয়েছিলাম আর তাতেই একটা লিড পাওয়া গেছে। বর্তমানে এমন একজনকে পাওয়া গেছে যে সম্প্রতি কয়েকদিন ধরে তার নিজের বাড়িতে কম্পিউটারে গেম খেলে চলে যতদূর মনে হয় এই গেমটাই।
রিতম : গ্রেট তাহলে তার সাথে তো এক্ষুনি কথা বলা দরকার আর তোরা কিছু ব্যবস্থা করেছিস।
জিতেন : দাস বাবু আপনার মেয়ে ঠিক বলছে তো?
দাস : সেটাই তো বলল আমাকে ওই ছেলেটা নাকি বেশ কয়েকদিন ধরে কোন একটা গেম খেলছে। আর গেমটা নাকি বড় অদ্ভুত আর অমনি বলেছে গেম এর মধ্যে কতগুলো চোখের কোথাও আছে।
রিতম : আর দেরি করা ঠিক হবে না তাহলে আমাদের এক্ষুনি সেখানে যাওয়া দরকার যত দেরি হবে তত যদি কিছু একটা হয়ে যায় তাহলে সমস্যা হবে কিন্তু। চল এক্ষুনি বেরিয়ে পড়ি।
ওদের যেটা দাস বাবু কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল একটা নির্দিষ্ট বাড়ির উদ্দেশ্যে কিন্তু তখন ওরা জানে না সেখানে গিয়ে ওদের কি দেখতে হবে।
নিজের ঘরে কম্পিউটারের সামনে বসে মন দিয়ে মেসেজগুলো পড়তে থাকে জয় বুঝতে পারে প্রতিবার মেসেজের উত্তর দেওয়ার পরই আগের মেসেজগুলো ডিলিট হয়ে যাচ্ছে অটোমেটিক কিন্তু সেটা কিভাবে হচ্ছে জয় বুঝতে পারেনা। এদিকে গেমটা তার ভালোই লাগতে শুরু করছে পরপর নটা চোখের ছবি আর সেই ছবিগুলো দেখে মনে হয় কেমন যেন জীবন্ত। সেই ছবিগুলোকে তিনটে তিনটে করে মেলাতে হবে। মেলাতে পারলেই পরের রাউন্ড তবে সবচেয়ে গোপন যে ব্যাপারটা সেটা হল একটা লেভেল পার করতে পারলেই বেশ কিছুটা টাকা পাওয়া যায় এই গেমটা। আর টাকাটাও সরাসরি চলে আসবে যে কোন একটা ডিজিটাল ব্যাংক একাউন্টে। জয়ের মোবাইলে ডিজিটাল লেনদেনের জন্য অনেকগুলো এপি খোলা আছে তার মধ্যে একটা অ্যাপ সে কানেক্ট করে রেখেছে এই গেমটার সাথে আর বেশ কিছুদিন ধরে খেলার জন্য বেশ কিছু টাকা পেয়েছে সে টাকার নেশাটা কেমন যেন থাকে বারবার পেয়ে বসছিল এমনিতে মা-বাবা তাকে কোন দিক থেকে কমতি রাখেনি তবে তার হাতে কখনোই বেশি টাকা দিতে চায়না। বাবা বলে
বাবা : এই বয়সে বেশি টাকা হাতে পেলে মন অন্যদিকে ঘুরে যাবে বুঝলি তোর যা প্রয়োজন আমাদের বলবি আমরা এনে দেব কিন্তু বেশি টাকা তোর হাতে এখন দেওয়া যাবে না যখন সময় হবে তখন অবশ্যই পাবি।
কিন্তু বাবা তো বুঝতে পারে না তার বয়সী সবার কাছে সবসময় বেশ কিছু টাকা থাকে। যা ইচ্ছে করা যায় যা ইচ্ছে কেনা যায় কিন্তু তার বেলায় সমস্ত কিছু যেন বাধা এই একটা জায়গায় বাবা-মায়ের প্রতি একটা গোপন খোঁপ রয়েছে জয়। আর এই গেমটা খেলার পর থেকে তার সেই চাহিদাটা পূরণ হয়ে যাচ্ছে তবে ব্যাপারটা কাউকে জানায়নি। একমাত্র মল্লিকাকে ছাড়া তবে টাকার ব্যাপারটা মল্লিকা কেউ বলেনি। একটা গেম যেটা খুব ভালো লেগেছে শুধু এটুকুই বলেছে। কিন্তু এর মধ্যে একটা ব্যাপার বুঝতে পারে জয় গেমে লেভেল গুলো যত বার আছে তত প্রশ্নগুলো যেন একটু ব্যক্তিগত স্তরে চলে যাচ্ছে তাছাড়া মাঝে মাঝে এমন কিছু প্রশ্ন ভেসে আসে যেগুলোর উত্তর দিতে রীতিমতো লজ্জাই করে তার। কেমন করে যেন এই গেমটা তার মনের কথা বুঝতে পেরে যায় তাই যখনই সে মিথ্যে কথা বলে তখন ই পয়েন্টার আসে না এই ব্যাপারটা জয়কে প্রচন্ড ভাবায়। সে যে সত্যি বলছে না মিথ্যে বলছে সেটা এই গেমটা কি করে বুঝতে পারে তবে টাকার নেশাটা বড্ড বেশি তাই ওসব ব্যাপার নিয়ে বেশি ভাবতে চাই না সে কিন্তু এখন একটা নতুন সমস্যায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখন আর প্রশ্ন হয় না তারপর দিলে একটা করে টাস্ক দেওয়া হয় আর সেই টাস্কের ছবি তুলে পাঠাতে হয় ওই মেসেজের উত্তর দেওয়ার জায়গাটায় আর তারপরেই পয়েন্ট এসে যায়। এর মধ্যে এমন একটা কাজ করে বসেছে জয় যে কাউকে আর সে কথাটা বলতে পারছে না তবে গেমের ওই লেভেলটায় বেশ কিছু টাকা সে পেয়েছে মোট হিসেব করলে একটা লেভেলের জন্য সে পেয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। জয় বুঝতে পারেনা একটা গেমে এমন কি থাকতে পারে যার জন্য সে এত টাকা পাচ্ছে। কিন্তু এসব ভেবে লাভ কি অনেক গেমে এমন আছে যেগুলো থেকে টাকা উপার্জন করা যায় সেটা ভেবেই জয় ব্যাপারটা তেমন পাত্তা না দিয়ে গেমটা এখনো খেলে চলেছে তবে সামনে পরীক্ষা বলে একমাত্র রাত্রে ছাড়া গেমটা সে চালু করে না। সারাদিন বইপত্র নিয়েই থাকার চেষ্টা করে কিন্তু বা বারবার ইচ্ছে হয় গেমটা খেলতে। আজ রবিবার। সবাই বাড়িতেই ছিল সারাদিন তাই সারাদিনে গেমটা আর খোলা হয়নি তবে এখন অনেক রাত তাই সবাই যে যার মত ঘুমিয়ে পড়েছে, জয় একবার মাথা তুলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে তিনটে বাজতে দশ মিনিট বাকি। মনে মনে ভাবে গেমের এই লেভেলটা শেষ করেই আজকের মত বন্ধ করে দেবে তারপর আবার কাল। খেলাটা শেষ করে কম্পিউটার বন্ধ করে যখন বিছানায় ঘুমোতে যায় তখন দেখে চারটে মিসড কল আর ম্যাসেজ। কিন্তু আজকে আর একটাও মেসেজ করতেও ইচ্ছে হলো না জয়ের তাই সে ঘুমিয়ে পড়ল।
জিপটা আরেকটু স্পিড নিতে ই ঋতম বলল
রিতম : ব্যাপারটা মাঝখানে ধরে চলছে বলছিস তাহলে কিন্তু ছেলেটা একটু রিস্ক কে রয়েছে যেকোনো সময় কোন কিছু হয়ে যেতে পারে তোর মনে আছে আগের যে ছেলেটার বাড়িতে আমরা গিয়েছিলাম ওরাও কিন্তু বলেছিল ছেলেটা মাঝখানে ধরে গেমটা খেলছে। এমন কোন একটা ব্যাপার রয়েছে যাতে মাঝখানেক পরেই এই ব্যাপারটা হচ্ছে।
জিতেন : একবার যদি কোন কিছু হওয়ার আগে গিয়ে পৌঁছানো যায় তাহলে ব্যাপারটা থামানো যাবে আমি বুঝতে পারছি না যে আমরা কি ঠিক সময় পৌঁছাতে পারবো?
রিতম : খবরটা যদি ঠিক হয় তাহলে আশা করছি রাত্রের আগে কিছু হবে না আর মেয়েটা তো বলেছে কয়েকদিন ধরে ছেলেটার আচরণ একটু অদ্ভুত বলে মনে হচ্ছে কোন কারনে ভয় পেয়ে আছে সে আমার মনে হয় এটা ওই গেমের কারণেই এমন কিছু একটা আছে যেটার জন্য।
জিতেন : দাস বাবু একটু তাড়াতাড়ি চালাতে বলুন সন্ধ্যে হয়ে এসেছে।
একটু আগেই জিপটা গিয়ে ঢুকে একটা বাড়িতে ।পুলিশের জিপের শব্দ শুনে আশেপাশের কয়েকজন বেরিয়ে এসেছে। যে বাড়িটা সামনে জিভটা দাঁড়িয়েছে সেই বাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে এক ভদ্রলোক। পুলিশ দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে
বিপুল : কি ব্যাপার স্যার আপনারা এ সময়?
তার কথার উত্তর না দিয়ে জিতেন একটু চড়া গলায় বলে
জিতেন : আপনার ছেলে কোথায় আপনার ছেলের বিপদ রয়েছে কোথায় আপনি ছিলেন?
লোকটি কেমন যেন থতমতো খেয়ে যায় তারপর বলে
বিপুল : কেন আমার ছেলে তো ঘরেই আছে? কম্পিউটারে কিছু একটা করছিল দেখলাম।
আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে জিতে নিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে
জিতেন : কোনটা আপনার ছেলের ঘর কোনটা?
লোকটা আঙ্গুল তুলে একটা বন্ধু দরজা দেখাতেই তো আমার জিতের মিলে সেখানে গিয়ে দরজার উপর ধাক্কা দেয় ততক্ষণে দাস বাবু চলে এসেছে দাস বাবুকে লোকটা বোধহয় চেনে তাই একটু ইতস্তত করে তার সাথে কিছু বলতে যেতে দাস বাবু কোন কথার উত্তর না দিয়ে সোজা ঢুকে এসে যেতে না রিতমের পাশে দাঁড়ায়। এদিকে ধাক্কা ততক্ষণে বাড়তে শুরু করেছে কিন্তু ভেতর থেকে কোন শব্দ না পেয়ে ওরা বুঝতে পারে দরজা ভাঙতে হবে। সজোরে দরজার ওপর কাজ দিয়ে ধাক্কা মারতে মারতে দরজার ছিটকানিটা একসময় ভেঙ্গে গিয়ে দরজাটা খুলে যায়। আর ঘরের দরজা খুলতেই অন্ধকারে প্রথম ওরা কিছু দেখতে পায় না কিন্তু কম্পিউটারে স্কিনের দিকে তাকাতেই রিতম বলে ওঠে
রিতম : ওই যে ওই যে সেই গেমটা বলেছে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
ততক্ষণে কম্পিউটার স্ক্রিনের বাঁদিকে একটা মেসেঞ্জার এর মত অপশনে একটা ছবি চোখে পড়ে রিতা আমার জিতেনের। সেই ছবিটা আসলে একটা ছেলের ছবিতে ছেলেটা সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই বোঝা যায় ছবিটা ক্যামেরার টাইমার সেট করে তোলা। তবে তারপর আর বাকি কিছু দেখার আগেই হঠাৎ করে কম্পিউটার স্কিন থেকে গেমটা অদৃশ্য হয়ে যায় ঋতম অনেক চেষ্টা করতে থাকে আর তখনই ঘরের আলোটা জেলে দেয় সেই লোকটা আর আলো জ্বালতেই তো আমার জিতেন দেখতে পায় মেঝেতে পড়ে আছে সেই ছেলেটা যেই ছেলেটার ছবিটা এইমাত্র ওরা দেখতে পেয়েছে আর সেই ছেলেটার ডান চোখের ওপর গোজা একটা ছুরি। রক্ত বেরিয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে ছেলেটা বোধ হয় অজ্ঞান হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি তাকে তুলে নিতে দেখা যায় এখনো নিঃশ্বাস পরছে।
জিতেন : সরে যান সরে যান ছেলেটাকে এক্ষুণি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, সরে জান।
তার এমন কথা শুনে পাশের ঘর থেকে ততক্ষণে এক ভদ্রমহিলার একটি বাচ্চা ছেলে এসে দাঁড়িয়েছে। এমন ব্যাপার দেখে ওরা প্রথমে কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ব হয়ে গেল ভদ্রমহিলা কান্নাকাটি শুরু করেন ততক্ষণে রীত আমার জিতেন মিলে ছেলেটাকে পুলিশের জিপে তুলেছে আর তার সাথে সাথে এগিয়ে এসেছে সেই লোকটিও। ওদের জিপটা তখনই ছুটতে শুরু করেছে হাসপাতালের দিকে ঘটনার আকর্ষিকতায় ওরা এতটাই অবাক হয়ে গেছে যে কারো মুখে কোন কথা নেই। জিতেন একবার রিতমের দিকে তাকিয়ে আফসোসের স্বরে কাটা কাটা গলায় বলে ওঠে
জিতেন : ইস একটুর জন্য একটুর জন্য মিস হয়ে গেল এবার ছেলেটাকে যদি বাঁচানোর না যায় তাহলে কোন কিছুই আমরা জানতে পারবো না।
কেউ কোন কথা বলতে পারেনা শুধুমাত্র সেই লোকটা হতভম্বতা কাটিয়ে এতক্ষণ পরে ডুকরে কেঁদে ওঠে দাস বাবু তার কাঁধের উপর একটা হাত রেখে তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তার ছেলের নাম – পলাশ পলাশ এ তোর কি হলো?
একটা কালো অন্ধকার ঘর ঘরের মধ্যে একটা কম্পিউটারের সামনে বসে আছে একটা লোক কালো ছায়া দেখে বোঝা যায় লোকটার বয়স অনেকটাই বেশি লোকটা কম্পিউটারের স্ক্রিনে খুলে রাখা কিছু সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ঘাটতে ঘাটতে হঠাৎ করে একটা ফেসবুকের প্রোফাইলে এসে আটকে যায় তারপর প্রোফাইল টা খুলে ভালো করে দেখতে থাকে বেশ কিছুক্ষণ করে রাখা ইমেইল আইডিটা একটা কাগজে লিখে নেয় তারপর আস্তে আস্তে টাইপ করে
” হাই”
গোটা অন্ধকার ঘরের মধ্যে কম্পিউটারের আলো লোকটার মুখের ওপর এসে পড়েছে সেই আলোয় দেখা যায় লোকটার মুখে একটা হাসি। একটু পরেই মেসেজের রিপ্লাই চলে আসে এবার লোকটা সেই মেসেজের রিপ্লাই তে লিখে
” ওয়ান্ট টু প্লে এ গেম?”
মেসেজটা লেখার সাথে সাথেই লোকটার মুখের হাসিটা যেন একটু বেশি চওড়া হয়। আর ঠিক তখনই কম্পিউটারের স্কিনের জোরালো আলোতে লক্ষ্য করা যায়, লোকটার ডান চোখটা নেই সেখানে যেমন একটা অদ্ভুত পাথরের চোখ বসানো সেই চোখটা অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে দেখলে মনে হয় যেন কম্পিউটার স্ক্রিনের ভেতরে চোখটা ঢুকে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করছে।
বেশ কিছুক্ষণ কোনো উত্তর আসে না লোকটা কম্পিউটার বন্ধ করে তারপর দরজা খুলে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে। ছোট ঘরের বাইরেটা কিন্তু আলো ঝলমল করছে। সেই ঝলমলে আলোর মধ্যে লোকটা হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যায় একটা ঘরের দিকে আর ঠিক সেই সময় একটা কুকুরের ডাক শোনা যায়। একটা ঘরের দরজা খুলে লোকটা ঘরের ভেতরে ঢুকতেই কুকুরের ডাকটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। লোকটা এগিয়ে যেতে একটা কুকুর এসে লোকটার পায় এর আশেপাশে ঘুরতে ঘুরতে তার শরীরটা চেটে দেওয়ার চেষ্টা করে। লোকটা নিচু হয়ে কুকুরটার মুখটা দুহাতে ধরে আদর করতে করতে তার ডান চোখের পাশে হাত বোলাতে থাকে ঘরের আলোতে ডান চোখের দিকে তাকালে দেখা যায় কুকুরটা ডান চোখটা নেই একটা বীভৎস ক্ষত।সেই ডান চোখের আশেপাশে। দেখে বোঝা যায় সেলাই করা হয়েছে তবে ওই একটা চোখের কুকুরটা বড় অদ্ভুতভাবে আদর করতে থাকে যেন লোকটাকেও তার মুখ তার গাল চেটে দিতে থাকে লোকটা তাকে জড়িয়ে ধরে কেমন অদ্ভুতভাবে হেসে ওঠে আর তারপরেই লোকটার মুখটা আস্তে আস্তে শক্ত হতে শুরু করে।
তিনি উঠে গিয়ে দেয়ালে ঝোলানো একটা কাগজে লেখা পরপর চারটে নামের পাশে দাঁড়ায় তারপর দেখে । সেখানে লেখা দুটো নাম ইতিমধ্যে লাল কালি দিয়ে কাটা হয়েছে।
সঞ্জয় সামন্ত
পলাশ রায়
তাদের নিচে চারটে ছেলের ছবিও রয়েছে। আলোতে তাদের মুখগুলো স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে। তবে লোকটা সেদিকে একবারও ফিরেও তাকালো না তবে সেদিকে চোখ পড়লে দেখা যায় দুটো ছেলের ছবির ডান চোখে লাল কালি দিয়ে হিজিবিজি করা হয়েছে।
এরপর সেই লোকটা তার নিচের আরো একটা নামের পাশে লাল চিহ্ন দিল সেই নামটা লেখা রয়েছে
জয় সরকার।
সেই নামের পেছনে একটা গোল লাল চিহ্ন টেনে দিয়ে লোকটা হাসল। তারপর আবার এগিয়ে গিয়ে কুকুরটার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে গম্ভেশ্বর এ যেন কুকুরটাকে বলে উঠলো
লোক: চিন্তা করিস না আমি তোর প্রতিশোধ ঠিক নেব দুটো হয়ে গেছে আর বাকি রয়েছে দুজন। চিন্তা করিস না আর দুটো মাস তারপরেই।
কথাটা বলতে বলতে সেই ঘরের মধ্যে কুকুরটাকে জড়িয়ে ধরে লোকটা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল কুকুরটা অদ্ভুতভাবে কই কই করতে করতে লোকটার দিকে তাকিয়ে রইল।
গোটা শহর জানতে পারল না একটা মানুষ তার পাতা জল একটু একটু করে গুটিয়ে আনতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে সেই জালে উঠে এসেছে দুটো শিকার আর বাকি রইল দুজন।
হঠাৎ লোকটার চোখের সামনে ভেসে ওঠ ে বছর তিনেক আগেকার একটা দৃশ্য। প্রচন্ড যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে একটা কুকুর রাস্তার একপাশে বসে শুয়ে চিৎকার করছে আর একটু দূরে দাঁড়িয়ে চারটে একই বয়সে ছেলে ব্যাপারটা দেখে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করে চলেছে তাদের একজনের হাতে ধরা একটা লোহার শিক বোঝা যায় সেই লোহার সিটটা দিয়ে কুকুরটা ডান চোখে কেউ ঢুকিয়ে দিয়েছে। আর তাতেই কুকুরটার এই অবস্থা । এমন বীভৎস ও দৃশ্য দেখে রাস্তার অপর প্রান্ত থেকে ছুটে আসে এক ভদ্রলোক তাকে দেখেই ছেলেগুলো দৌড়ে পালাতে যায় কিন্তু তার আগেই তিনি সবাইকে দেখতে পেয়েছেন তিনি ছুটে গিয়ে কুকুরটাকে তুলে ধরেন কুকুরটা ডান চোখ থেকে যখন রক্ত বেরিয়ে আসছে। কুকুরটা প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা তিনি তাড়াতাড়ি কুকুরটাকে তুলে নিয়ে কাছে একটা ডাক্তারখানার দিকে দৌড়াতে শুরু করেন। মনে মনে ভাবেন এই বাচ্চা ছেলেগুলো কত নৃশংস একটা কুকুরের চোখে লোহার শিক ঢুকিয়ে দেওয়াটা কোন মানুষের কাজ হতে পারে না। তবে এখন কুকুরটাকে বাঁচানোটা আগে প্রয়োজন তারপরে এসব ভাবা যাবে তিনি দৌড়াতে থাকেন ডাক্তারখানার দিকে। তারপর সময় তার প্রতিশোধ ঠিক নিয়ে নেবে ঠিক নিয়ে নেবে…
লোকটার দুচোখ থেকে কান্না নেমে আসে, তার একটা পাথরের চোখ সে চোখে জল আসে না কিন্তু তার চোখের কান্না দেখে বোঝায় কুকুরটার একটা চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসছে শুরু করেছে ততক্ষণে সে দুটো হাত দিয়ে লোকটার গলায় জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারে না যদি সে কথা বলতে পারতো তাহলে হয়তো বলতো
” আমার জন্য তুমি এত কিছু করছ কয়েকটা মানুষ আমার একটা চোখ নষ্ট করে দিয়েছে আর তুমি আমার জন্য তাদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছো। ওদের শাস্তি পাওয়া উচিত ওরা শাস্তি না পেলে আমাদের অকারণে শাস্তি পাওয়া যে কমবে না আমরা অবলা জীব কিছুই পড়তে পারি না কিছুই করতে পারিনা তাই আমাদের বারবার আঘাত পেতে হয় কিন্তু তোমার মত কয়েকটা মানুষ থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
একটা অব্যক্ত কান্নায় ঘরের চারপাশটা ভরে ওঠে একটু পরেই লোকটা উঠে দাঁড়ায় তারপর চোখের জল মুছে এগিয়ে যায় নিজের ঘরের দিকে কুকুরটা বুঝতে পারে এখন তাকে একাই থাকতে হবে তাই সে গুটি-শুটি হয়ে শুয়ে পড়ে। লোকটা এগিয়ে যায় তার নিজের পরবর্তী গন্তব্যের দিকে।
বিষয় মৌলিকত্ব | |
ভাষা সাবলীলতা | |
কৌতূহল উদ্দীপক ঘটনা প্রবাহ | |
শক্তিশালী চরিত্র চিত্রণ | |
অডিও/ভিডিও রূপান্তর যোগ্য | |
Average
|
|
![]() |