সৃজা সেই সময় দেখলে তার দাদার সঞ্জয় ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে। তার পাশে একজন পুলিশ অফিসার । তার সাথে সঞ্জয়ের নিচু গলায় কি কথা বলছি স শেষে সঞ্জয় তার সাথে হ্যান্ডসেক করে বেরিয়ে তাদের কাছে চলে আসে।
তাদেরকে দেখে বলে , “তোরা সবকটা এখানে কেন এসেছিস চল বাড়ি যাবি চল। “
দিশা বলল , “সঞ্জয়দা আমার কিছু কথা বলার ছিল। “
সঞ্জয় বলল , ” এখন এখান থেকে চলো এখানকার পরিস্থিতি ঠিক নেই। বাড়ি গিয়ে আমি তোমার সব কথা শুনবো।”
সবাই বাড়ি ফিরে আসে সুস্মিতার বড়ো মামী বাড়ির সামনেই ছিল। তিনি সকলকে দেখে বেশ চটে গেল কারণ তিনি মোটেও পছন্দ করেনি, যে বাড়ির সবাই ওই বাড়ির সামনে যাক। আর সবথেকে বেশি চটলেন সঞ্জয়ের উপরে। যে কদিন ডিউটি থেকে ছুটি নিয়ে এখানে এসে নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, সঞ্জয় তার মাকে বোঝানোর চেষ্টা করলে , সে শুধুমাত্র ওখানে গিয়েছিল। কোন তদন্ত করতে সে ওখানে যায়নি। কিন্তু তিনি সে কথা বুঝলেন না । তিনি সঞ্জয় কে স্নান করে তার পরে ঘরে উঠতে বললেন। সঞ্জয় বাধ্য ছেলের মত কল তলায় চলে গেল।
দিশা ঘরে ঢুকে নিজের মোবাইলটা নিয়ে বসলো। সঞ্জয় ওই লোকটা সম্পর্কে কি ইনফরমেশন জানতে পেরেছে , তা সে জানে না। তবে তার সন্দেহ যে মল্লিকার খুনটা দক্ষিণ বাড়ির গুপ্তধনের চাবির জন্যই হয়েছে। দিশা নেট ঘেঁটে খুঁজে বার করার চেষ্টা করল টাকির দক্ষিণ বাড়ির কোন ছবি পাওয়া যায় কিনা। তবে সেই সেরকম কোনো ছবিই পেললো না , যতবার সে সার্চ করছে কিছু ভাঙাচোরা বাড়ির ছবি দেখাচ্ছে । সে ফেসবুকে তাকে গ্রুপে ঢুকলো, যদি সেখানে কিছু পায়। ফেসবুকে শেষ পর্যন্ত সে একটা পোস্টে দেখতে পেলো । দক্ষিণ বাড়ি নামে একটা বাড়ি একসময় ছিল কিন্তু সেই বাড়ি এখন পুরোটাই ভেঙে দিয়েছে। তবে সেই পোস্টে লেখা ছিল ওই বাড়িতে নাকি একটি পাতাল ঘর ছিল সেই ঘরেই নাকি সমস্ত গুপ্তধন রাখা আছে। যেখানে পুজোর ঠাকুরদালান আছে সেখান থেকে একটা সিঁড়ির নিচে নেমে গেছে। সবাই বলে ওটাই না কি পাতালঘরে যাওয়ায় রাস্তা। তবে ওই রাস্তা দিয়ে যারায় যাওয়ার চেষ্টা করেছে তাদের মধ্যে থেকে নাকি কেউ ফিরে আসে না । সেই জন্য শেষ পর্যন্ত ওই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ইনফরমেশনটা পড়ে দিশার খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো। সে তানিয়া আর সুস্মিতা দুজনকে ডেকে এই পোস্ট টা দেখালো তারা দুজন দেখে এবং পড়ে খুবই উত্তেজিত হয়ে। তানিয়ার সবাইকে বলল যে তারা একবার এই দক্ষিণ বাড়িতে ঘুরতে যাবে। সুস্মিতা আর দিশা মুখে না বললে তাদেরও খুব যাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে হচ্ছিল।
কিছুক্ষণ পরে সৃজা এসে তাদের সুখকে জানালো যে সঞ্জয়দা তাদের সবাইকে ডাকছে। সবাই সঞ্জয় ঘরে গিয়ে দেখলো ল্যাপটপে খুব মনোযোগ দিয়ে কোন কিছু একটা দেখছল । দিশা খুব উত্তেজিত ছিল সেজন্য সে খাটের উপর বসে সে নিজের ফোনটা বার করে সঞ্জয়কে সমস্ত ডিটেলসটা দেখালো। সবকিছু দেখে সঞ্জয় তেমন কিছু বলল না। যেনো সে আগে থাকতেই আন্দাজ করেছিল এইরকম কিছু একটা ঘুরতে চলেছে।
সে দেখে বলল,” এরকম কিছু ঘটতে পারে এটা আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম। আর দক্ষিণ বাড়ির গুপ্তধন এটার বিষয়েও আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি।”
দিশা বলল, ” তুমি কি জানতে পেরেছো সঞ্জয়দা? আমাদেরকেও বল আমরা একটু শুনি। “
সঞ্জয় বলল , “আমি আমার লালবাজারে আমার একটা বন্ধুর কাছে ওই লোকটার ছবি পাঠিয়েছিলাম । ও জানিয়েছে যে তোমরা কালকে যাকে দেখেছ তাদের মধ্যে একজনকে শনাক্ত করা গেছে। সে একজন ক্রিমিনাল। এর আগে একটা ব্যাঙ্ক ডাকাতের কেসে তাকে খোঁজা হচ্ছিল তার নাম শেখর মন্ডল। আমি কালকে ওর ছবি তুলে আমার বন্ধুকে সেন্ট করেছিলাম।”
দিশা বলল, ” আচ্ছা সঞ্জয় দা! তুমি ওদের ছবি তুলে কি করে তুলতে?”
সঞ্জয় একটু হেসে বলল , “ও আমার ছবি তোলার নানান টেকনিক আছে। আমি সেই টেকনিক ইউজ করেই তুলেছি, সেটা বড় কথা না বড় কথা হচ্ছে দক্ষিণ বাড়ির গুপ্তধন। এই দক্ষিণ বাড়ি বলে একটি বাড়ি আছে টাকিতে। সেই মান সিংহ সময় কালের বাড়ি। বুঝতেই পারছো, সেই বাড়ির এখন প্রায় জরাজীর্ণ । সেখানে কেউ থাকেনা কিন্তু লোকমুখে জনশ্রুতি আছে সেই বাড়ির এক পাতালঘরে গুপ্তধন সংরক্ষিত আছে। আর এই চন্দ্রনাথ দত্তের স্ত্রী মল্লিকা ও আসল নাম মল্লিকা রায়। আর এই দক্ষিণ তৈরি হয়েছিল বসন্ত রায়ের তত্ত্বাবধানে সেখানে বসন্ত রায়ের পরিবার কেউ বা বন্ধুদের কেউ একজন থাকতো।”
তানিয়া বলল, ” দাদা তার মানে তুমি বলতে চাইছ যে এই মল্লিকা রায় ।আসলে বসন্ত রায়ের বংশের মেয়ে?”
সঞ্জয় বলল , “এখনো পুরো কনফার্ম নয়। তবে মল্লিকা রায়ের বিষয়ে আমার আরো কিছু ইনফরমেশন দরকার । কারণ এই চন্দ্রনাথ দত্ত লোকটা মোটেও অসুবিধা নেয়। পুলিশ ডিপার্টমেন্টে অনেকেই মনে করছে এই চন্দ্রনাথ তার বউকে মেরেছে, করে ওই দুটো লোকের নামে দোষ চাপাচ্ছে। “
তানিয়া বলল,” সব যদি ঠিক থাকে তাহলে তো আমাদের এই গুপ্তধনের সন্ধান করতে টাকি যেতে হবে?”
সঞ্জয় বলল, ” সেটা যদি হয় তাহলে আমি সেটাই করব তবে তোমরা কি যেতে চাও?”
সবাই এক বাক্যে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। সেই সঙ্গে সবার মনে এই টেনশনও ছিল যে তারা বাড়ি থেকে বলে এসেছে দুদিন পরে ফিরবে তাকে গেলে আরো এক দু দিন পরে তাদের বাড়ি যেতে হবে। তবে সে যাই হোক এত সুন্দর একটা অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ কেউই ছাড়তে চায় না সেই জন্য সবাই রাজি হয়ে গেল।
দিশার রাতে একটু ঘুম হচ্ছেনা । সে ফোন করে বাড়িতে জানিয়েছে সে দুদিন পরে ফিরবে । তারা সবাই মিলে ঠিক করেছে কালকে দুপুরের দিকে টাকির উদ্দেশ্যে রওনা দেব। কিন্তু দক্ষিণ বাড়ির গুপ্তধন খোঁজা কাজটা কি এত সহজ হবে ! কত যুগ যুগ ধরে পড়ে আছে ওই সম্পদ তার পিছনে কতো ছুটেছে তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। তার উপরে শত্রু তাদের পিছনে পড়ে রয়েছে । ওই শেখর মন্ডল আর চন্দনার দত্ত দুজনে মনে হচ্ছে জোট বেঁধে কিছু একটা করতে চাই তার সাথে আরও কে কে আছে তা কে জানে!