এইসব ভাবতে ভাবতে দিশা দোতলার বারান্দায় পায়চারি করতে শুরু করলো। তার একেকবার মনে হচ্ছে, সে টাকি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন ভুল করল না তো? তারা শেষ পর্যন্ত ওখান থেকে সুস্থ অবস্থায় ফিরতে পারবে তো? তার গুপ্তধনের তেমন কোন লোভ নেই তবে গুপ্তধন পাওয়ার ইচ্ছা কার না থাকে। আর সে এটাও জানি সেই গুপ্তধন পেলে তা সরকারের ঘরেই যাবে।
ঠিক সেই সময় সঞ্জয়ের গলার আওয়াজ কে সে পিছন দিকে তাকালো সঞ্জয় ও দোতলার একটা ঘরে থাকে। সেও আজকে রাত জাগছে আজ তারও ঘুম আসছে । দিশা সঞ্জয়ের ডাক শুনে তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। দোতলার ঝুল বারান্দায় দুজন বসলো।
সঞ্জয় বলল,” কি ব্যাপার দিশা তোমার ঘুম আসছে না?”
দিশা বলল , “না সঞ্জয়দা আমার অনেক কথা মনে হচ্ছে আমরা যে টাকি যাচ্ছি এটা তো ওই শেখর আর তার লোকজনেরা যদি জেনে যায় তাহলে, ওরা তো আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারে। “
সঞ্জয় বলল, ” আমরা যে এই কজন মিলে যাচ্ছি এটা তোমাকে কে বললো? শেখর টাকিতে পালাতে পারে এই সন্দেহে হাসনাবাদ থানা কে এলার্ট করে দেওয়া হয়েছে। আর আমার ওখানেও চেনা পরিচিত লোক আছে কাজেই কোন অসুবিধা হবে না। “
দিশা বলল, “তোমার কথায় আমি একটু ভরসা পেলাম সঞ্জয়দা, নইলে আমার একটু ভয় করছিল। সত্যি বলতে আমার সেই ভয়টা এখনো রয়েছে। “
সঞ্জয় দিশা পিঠে একটা বাড়ি মেরে বলল , ” ভয় পেয়ো না। আমরা সবাই সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফিরে আসবো। ”
এরপর দিশা ও সঞ্জয় আরো কিছুক্ষণ এইভাবে বসে রইলো। মৃদু চাঁদের আলো এসে তাদের মুখে পড়লো।চন্দ্রালোকিত রাত্রে এইভাবে বসে থাকতে দুজনেরই খুব ভালো লাগছে কিন্তু কালকে সকালে আবার উঠে অনেক পাওয়া যাচ্ছে তাই দুজনে নিজের নিজের ঘরে শুতে চলে গেলো।
পরদিন সকালে তাড়াতাড়ি উঠে সঞ্জয় প্রথমে গেল থানায়। সেখানে গিয়ে যে খবর পাওয়া গেল তা সঞ্জয়ের মাথা ঘোরানোর জন্য পর্যাপ্ত ছিল। মল্লিকা রায় দক্ষিণ বাড়ির মেয়ে ছিল তার বিয়ে হয়েছিল বাদুড়িয়ার দত্ত পরিবারের চন্দ্রনাথ দত্তের সাথে। চন্দ্রনাথের অ্যান্টিকের ব্যবসা ছিল সেই জন্য মল্লিকা তাকে একদিন একটা সোনার চাবি দেখায়। সেই চাবিতে এমন কিছু খোদাই করা ছিল যা দেখে চন্দ্রনাথ বুঝতে পারে মল্লিকাদের পুরনো বাড়িতে গুপ্তধন আছে। তারপর তার সেই গুপ্তধনের প্রতি লালসা জন্মায়। সেই নিজের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে মল্লিকা কে নিয়ে বঁনগায় চলে আসে আর তাকে একরকম নজর বন্দি করে রেখে দেয়। এইসব খবর মল্লিকার বোন মিতালী ও চন্দ্রনাথের পরিবারের লোকজন জানিয়েছে। মিতালী এখন টাকিতেই আছে। তার বক্তব্য তাকে ছাড়া দক্ষিণ বাড়ির গুপ্তধনের রহস্যের সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে মিতালী ও এখন চাইছে এই রহস্যের একটা সমাধান হোক কারণ তার দিদির মৃত্যুর পর তার মনে হচ্ছে এবার হয়তো তারও প্রাণ সংশয় ঘটতে চলেছে।
সঞ্জয় ঠিক করল সে দক্ষিণ বাড়ি যাবে। সে তার বন্ধু নিখিলকে ফোন করে দিল। নিখিলেশ এখন বসিরহাটে থাকে । নিখিল কে ফোন করার পর সে বলল , সে অফিস থেকে ছুটি নেবে আর তাদের সবাইকে তাড়াতাড়ি চলে আসতে বলে। সঞ্জয় তার কথামতো বাড়ি গিয়ে বাকি সবাইকে রেডি হয়ে নিতে বল । সঞ্জয় দত্ত ভাই সুমনও তাদের সাথে যাওয়ার জন্য জোর করে। কিন্তু সঞ্জয় বারবার বলছিল এতজন একসাথে যাওয়ার ঠিক হবে না কিন্তু কেউ তার কথা শুনবে না সবাই দল বেঁধে টাকি যাওয়ার ঠিক হলো।
ঘন্টাখানেকের মধ্যে তৈরি হয়ে সঞ্জয় , সুমন, তানিয়া , সুস্মিতা , দিশা আর সৃজা বেরিয়ে পড়লো । বনগাঁ থেকে টাকি যাওয়ার দুটো রাস্তা এক বাস রাস্তা দিয়ে যাওয়া আর অন্যটা ট্রেনে বারাসাত তারপর বারাসাত থেকে হাসনাবাদ লোকাল ধরে টাকি। তারা ট্রেনে যাওয়াটাই মনস্থির করলো। প্রথমে তারা বাড়ি থেকে টোটো করে বনগাঁ স্টেশন এর তারপর সেখান থেকে শিয়ালদা লোকাল ধরলো। ট্রেনে সঞ্জয় কাউকে তারা কোথায় কিভাবে যাচ্ছে এ বিষয়ে কথা বলতে বারণ করে দিল। যদিও ট্রেনের মধ্যে এই বিষয়ে কেউ কথা বলেনি। বারাসাত আসার পর তারা তারা নেবে পড়লো।