Getting your Trinity Audio player ready...
|
হাসনাবাদ লোকাল রাতে এখনো আধঘন্টা দেরি আছে। এখন প্রায় দুপুর একটা বাজে সবাই ঠিক করলে কিছু খেয়ে নেবে। সবাই ঠিক করলে পরোটা তরকারি খাবি প্ল্যাটফর্মের একটা দোকান থেকে পাওয়াটা তরকারি তুমি একটা বেঞ্চিতে বসে সবাই খেতে শুরু করলো। হঠাৎ সুমন সামনের দিকে খানিকটা এগিয়ে গেলো। প্রথমে সবাই ভাববো ও হয়তো চেনা কাউকে দেখতে পেয়েছে সেই জন্যই ওইভাবে উঠে তার সাথে দেখা করতে গেলো। কিন্তু তারপর যখন সুমন ফিরে এলো তখন সবাই দেখুন তার চোখ মুখের ভাব বদলে গিয়ে দিয়েছে।
সঞ্জয় বলল, “কিরে কাকে দেখে তুই এইভাবে চমকে উঠলি?”
সুমন বলল, ” দাদা আমার মনে হল আমি জানি চন্দনাথ দত্তকে দেখলাম। “
সঞ্জয় বলল , “পুলিশ চন্দ্রনাথ কে বনগাঁ ছেড়ে কোথায় যেতে বারণ করেছে। আচ্ছা তুই দাঁড়া তুমি একটু খোঁজ নিচ্ছি। “
সঞ্জয় উঠে গিয়ে কাউকে একটা ফোন করো কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে কথা হয়। তারপর সে এসে জানায় যে চন্দনাথ আজসকালে বাজার করতে গিয়েছিল। তারপর আর বাড়ি ফিরেনি। এর মানে সুমন ঠিকই দেখেছে ওটা চন্দ্রনাথ ছিল । কিন্তু সে কোথায় যাচ্ছে? নিশ্চয় সে মল্লিকাদের পুরানো বাড়িতে যাচ্ছে। সঞ্জয় চেয়েছিল সে চন্দ্রনাথ কে ফলো করবে। কিন্তু চন্দ্রনাথ ততক্ষণে ভিড়ের মধ্যে মধ্যে মিলিয়ে গিয়েছে। আর অন্যদিক থেকে হাসনাবাদ লোকাল ও চলে এসেছে। তারা সবাই ট্রেনে উঠে পড়লো।
হাসনাবাদ লোকালে বেশ ভালোই ভিড়। তাদের কেউই বসার জায়গা পেলো না। সৃজা একটা জানলার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল তার পাশে দিশা দাঁড়িয়ে ছিল। তারা দুজন ফিসফিস করে কথা বলছিল। চন্দ্রনাথ কে ধরতে পারা গেল না বলে তাদের দুজনেরই খুব আফসোস হচ্ছিল। তাদের ধারণা চন্দ্রনাথ পালিয়ে হয়তো যাচ্ছে সুতরাং তাদেরকে চন্দ্রনাথের আগে গিয়ে পৌঁছাতে হবে। তারা দুজনে এটাও বলাবলি করছিল যে চন্দ্রনাথ এই চেনেই আছে। এমন সময় সঞ্জয় তাদের দিকে তাকালে তাদের কথা বন্ধ হয়ে যায়।
ধীরে ধীরে ট্রেন ফাঁকা হয়ে আসে। বসিরহাট আসার পর প্রায় পুরো ট্রেনই একদম ফাঁকা হয়ে গেলো। সঞ্জয় দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছিল। একটু পরে দিশা এসে তার পাশে দাঁড়ালো।
দিশা বলল, “কি ভাবছো সঞ্জয় দা?”
সঞ্জয় বলল, ” নিখিল এই ট্রেনে আসতে পারছেনা ও বলেছে পরের ট্রেনে আসছে। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে এই ট্রেনে চন্দ্রনাথ আছে। সে আমাদের আগে টাকি পৌঁছে যাবে । আর কাজ শুরু করে দেবে।”
দিশা বলল, “কিন্তু সঞ্জয় দা আমরা তো এই ট্রেনেই যাচ্ছি। তাহলে আর অসুবিধা কোথায় আমরা গিয়ে প্রথমে দক্ষিণ বাড়িতে যাব গিয়ে দেখবো সেখানে কি পরিস্থিতি। “
সঞ্জয় বলল, ” সেটা হয়না দিশা। কোন কিছু না জেনে না বুঝে দক্ষিণ বাড়ি যাওয়া, মানে নিশ্চিত বিপদের মুখে নিজেদেরকে ঠেলে সেটা আমরা করতে পারব না। “
দিশা বলল, ” তাহলে আমাদের এখন কি করা উচিত সঞ্জয়দা?”
সঞ্জয় বলল, ” যদি কোনোভাবে আমরা চন্দ্রনাথ আর তার দলবলের আগে মিতালীর সাথে কথা বলতে পারি ! তাহলে কোন উপায় হতে পারে। আর ওই চাবি ?চাবি সম্পর্কে তো আমরা কিছুই জানিনা। অনেকগুলো সুতো আলগা হয়ে আছে দিশা। সবগুলো একসাথে জুড়তে হবে তারপরেই এই রহস্যের সমাধান হবে।”
দিশা কিছু বলল না ।বাইরের দিকে তাকিয়ে সবুজ গাছপালা দেখতে শুরু করলো। আর ভাবছিল সত্যি সঞ্জয়ের বুদ্ধির কথা। সে এক একটা পা ভেবেচিন্তে রাখতে চাইছে সে চাইছে না কোন ভুল হয়ে যাক। যার জন্য তাদের পরে কোনো রকম বিপদ হতে পারে। দেখতে দেখতে ট্রেন নিমদাঁড়ি স্টেশন পার করে টাকিতে ঢুকলো। তারা সকলের ট্রেন থেকে নেমে পড়ল।
বাইরে এসে সঞ্জয় তাদেরকে বলল একটা টোটো ধরে তাদের হোটেলে চলে যাওয়ার কথা। তারা টাকি গেস্ট হাউসে একটা হোটেল নিয়েছে। সেখানেই তারা দুদিন থাকবে। সঞ্জয় এখন একা একা কি করবে, জিজ্ঞেস করে সে বলল , সে এখানে খানিকক্ষণ বসবে নিখিলের আসার কথা। নিখিল তারা দুজন একসাথে থানায় গিয়ে ইন্সপেক্টরের সাথে দেখা করবে। তারা সঞ্জয়ের কথা শুনে টোটো ধরে তাদের হোটেলের উদ্দেশ্যে চলে গেল। টোটোওয়ালা যেখানে টোটো দাঁড় করালো সেই জায়গাটা দেখে তারা খুব খুশি হল। কারণ তাদের সামনে এখন রয়েছে ইছামতি নদী। আর নদীর ধারেই তাদের হোটেল এখানে তারা দুটি ঘর বুক করেছে। একটিতে থাকবে সঞ্জয় সুমন আর নিখিল অন্যটিতে তানিয়া সৃজা সুস্মিতা আর দিশা। তারা হোটেলের রিসেপশন থেকে চাবি নিয়ে যে যার ঘরে চলে গেল।
দিশারা এসে দেখল তাদের রুমটা বেশ সুন্দর, টিভি রয়েছে। আর দুটো খাট রয়েছে তাতে দুজন করে মোটামুটি ভালোভাবে শোয়া যাবে। ঘরে আর একটা ছোট্ট টেবিল রয়েছে। যেটি দুটি বেডের ঠিক মাঝখানে। তানিয়া একবার বাথরুমে উকি দিয়ে দেখল। বাথরুমটাও বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আর সুন্দর। বাথরুমে একটা তোয়ালে ও সাবান রাখা রয়েছে। বাথরুমে হাতমুখ ধোয়ার কল এবং সাওয়ার রয়েছে। তানিয়া এই দেখে আগে স্নান করতে চলে গেল। সৃজা সুস্মিতা খাটের উপর লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল। দিশার কোন কাজেই মন লাগছিল না। সে একবার সঞ্জয় কে ফোন করল, সে জানালো নিখিল এখনো আসেনি। তার আসতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগবে। সে স্টেশনেই ওয়েট করছি এর পরের ট্রেন আসলে সঞ্জয় নিখিলের সাথে একেবারে হাসনাবাদ চলে যাবে। সেখানকার থানায় তাদের একটু দরকার আছে। কথাটা শুনে দিশার বেশ রাগ হল । তাকে ফেলে এইভাবে একা একা তদন্ত করা এটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। সে কি করবে এখন তো তার কিছু করারও নেই ।সে ঠিক করল আশেপাশের নদীর ধারটা একটু ঘুরে আসবে।