দক্ষিণ বাড়ির গুপ্তধন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | মৌসুমী দাশ | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
0 (0)

                                 সে মোবাইল নিয়ে নিচে রিসেপশনে চলে এলো।  রিসেপশনে যে মেয়েটি বসেছিল সেই মেয়েটির বয়স বেশি না । খুব বড় জোর পঁচিশ ছাব্বিশ হবে। দিশা ভাবল এই মেয়েটির সাথে গল্প করলে কেমন হয় কিন্তু তার আগে একটু ঘুরে আসতে হবে। সে নদীর ধারের দিকে ঘুরতে গেল। এখানে সুন্দর একটা পার্ক রয়েছে সেখানে অনেক বেঞ্চি।  অনেকে বেঞ্চে বসে রয়েছে , তার মধ্যে বেশিরভাগই কলেজ স্টুডেন্ট। দিশার মনে হল এদের কারোর কাছে দক্ষিণ বাড়ির সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, হয়তো কোন ইনফরমেশন পাওয়া যেতে পারে। ‌

                                 একটু দূরে দাঁড়িয়ে দুটো মেয়ে কুড়কুড়ে খাচ্ছিল।  তাদের দেখে কলেজের স্টুডেন্ট মনে হলো।  দিশা তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,  “আচ্ছা দক্ষিণ বাড়িটা কোন দিকে? এটা কি তোমরা জানো? “

                                 তাদের মধ্যে থেকে একটি মেয়ে বলল, ” মান সিংহ রোডের সোহিনী ভাটার কাছে পড়ে এই দক্ষিণ বাড়ি। আপনি যদি এখান থেকে টোটো ধরেন তাহলে আপনাকে সোজা দক্ষিণ বাড়িতে নিয়ে যাবে। “

                                 দিশা শুনে বলল , “আচ্ছা তুমি কি দক্ষিণ বাড়ির সম্পর্কে কিছু জানো?”

                                 সেই মেয়েটি বলল, ” না আমি তেমন কিছু জানি না । তবে এইটুকু শুনেছি দক্ষিণ বাড়ি মানসিংহের আমলের বাড়ি।”

                                 দিশা মেয়েটিকে থ্যাঙ্ক ইউ বলে সেখান থেকে চলে আসে । হোটেলে এসে দেখে রিসিপশনের সামনে হ আরো অনেক লোকের ভিড় তারা হোটেলে বুকিং করছে । সে নিজের ঘরে না গিয়ে নদীর ধারের দিকে একটু ঘুরতে গেল, বেশ কিছু ছবি তুলল। দেখে আসলো জেটি ঘাট, বিএসএফদের ওয়াচ টাওয়ার এবং সেই ঘাটের পাশে বসে কিছু সেলফি তুলল। তারপর সুন্দর প্রকৃতির বেশ কিছু ছবি তুলে সে হোটেলের ঘরে ফিরে গেল ততক্ষণে বাকি তিনজন ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে।  তাই সে বাথরুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি জামা কাপড় বদলে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলো।

                                 পরের ট্রেন আসলে সঞ্জয় সেই ট্রেনে উঠে পড়লো। তারপর হাসনাবাদ স্টেশনে নেমে নিখিল কে খুঁজে নিলো । তারপর একটা টোটো ধরে দুজন মিলে থানায় গেল। হাসনাবাদ থানার একজন ইন্সপেক্টরের সঙ্গে নিখিলের আলাপ ছিল । সে তার সাথে সঞ্জয়ের আলাপ করিয়ে দিল।  সঞ্জয় নিজের পরিচয় দেওয়ার পর ইন্সপেক্টর সেন তাদের বসতে বললেন। তিনি আর একটা কথা জানিয়ে দিলেন যে মিতালী কাল থানায় অভিযোগ জানিয়েছে । যে তার বাড়িতে দুজন লোক এসে হাঙ্গামা করেছে। সেই জন্য তাদেরকে এখন পুলিশ প্রটেকশন দেওয়া হচ্ছে। গুপ্তধনের কথা জিজ্ঞেস করায় , তিনি বললেন যে তারা মিতালীকে সেই বিষয়ে তেমন কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। তবে তার দিদিকে যে তারা খুন করেছে সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।

                                 সঞ্জয় বলল , ” এই মিতালীর সাথে একবার দেখা করা যায় না ? মানে আমাদের সাথে কি দেখা করতে রাজি হবে?”

                                 ইন্সপেক্টর  দত্ত বললেন , ” হ্যাঁ আমি ওর অ্যাড্রেস আপনাদেরকে দিয়ে দিচ্ছি আপনারা গিয়ে দেখা করে নিন। “

                                টাকির বিষয়ে আরো খানিকক্ষণ কথা বলার পর নিখিল আর সঞ্জয় উঠে পড়লো । ইন্সপেক্টর তাদের জানালেন , যে কোন সমস্যা হলে তারা অবশ্যই যেন তাকে কন্টাক করে। এরপর নিখিলের সঞ্জয় সোজা তাদের হোটেলে চলে আসে এবং এসে সবাইকে সব কথা জানায়। সবাই মিলে ঠিক করে যে একবার মিতালির সাথে দেখা করতে যাবে ।  আর সেটা এখন গেলেই সুবিধা হবে। ইন্সপেক্টর সেন বলে দিলে তাদের বাড়িতে ঢোকার আর কোন বাধা থাকবে না। তবে সবাই মিলে যাওয়া ঠিক হবেনা ।  শেষ পর্যন্ত সঞ্জয় নিখিল দিশা আর সুস্মিতা এই চারজনই যাবে বলে ঠিক হলো।

                                মিতালী রায় এখন শ্মশান ঘাটে বাবু পাড়ার কাছে থাকে তার মায়ের সঙ্গে। তাদের বাড়ির গলির কাছে কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে আছে নরমাল ড্রেসআপে। তবে  তাদের চোখ মুখের হাব ভাব দেখে সঞ্জয় বুঝলে এরা পুলিশের লোক। তবে তারা তাদেরকে বাধা দিল না। তারা একেবারে সোজা মিতালীদের বাড়ির সামনে গেটের কাছে চলে গেল। ইন্সপেক্টর দত্ত আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তাদের বাড়ির নাম দক্ষিণ রায় বাড়ি। দোতলা বাড়িতে বেশ সুন্দর ছিল পুরো বাড়িটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা ।  সামনের উঠানে কিছু ফুলের গাছ রয়েছে। বাড়ির সামনের গেটে একটা বড় তালা ভিতর দিক দিয়ে লাগানো রয়েছে। সঞ্জয় খুব জোরে ডাক দিলে হ্যালো বাড়িতে কেউ আছেন। একটু পরে একজন বাইশ তেইশ বছরের মেয়েকে সামনের বারান্দায় দেখা গেলো।

                                মেয়েটি বলল, ” আপনারা কারা?”

                                সঞ্জয় বলল, ” আমরা বনগাঁ থেকে এসেছি আপনাদের পুরানো বাড়ি সম্পর্কে কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করছিলাম ইন্সপেক্টর সেন বোধহয় আপনাকে আমাদের কথা জানিয়েছিলেন।”

                                মেয়েটি এক মুহূর্ত কিছু ভাবলো। তারপর বারান্দার গেট খুলে চাবি নিয়ে বাইরে  এসে মেন গেট খুলে দিয়ে বলল , “প্লিজ ভিতরে আসুন।”

                                তারা চারজনে ভিতরে সামনের বারান্দাটাই মিতালী তাদের বসতে বলল। তারা চারজন বসলো। মিতালী ঘরের ভিতর গিয়ে কাউকে চা করার কথা বললো।  যদিও তারা সবাই চায়ে আপত্তি জানিয়েছিল কিন্তু মিতালী তাদের কথা শোনেনি।

                                মিতালী বাইরে এসে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ” বলুন আপনারা কি জানতে চান?”

                                সঞ্জয় বলল , “আমরা আপনার দিদির কথা শুনেছি এবং শুনে খুবই দুঃখ পেয়েছি আপনার দিদি আমাদের পাড়ায় গিয়েই ছিলেন তার স্বামী চন্দ্রনাথের সাথে,,,”

                                তার দিদি আর  কথা শুনে মিতালীর চোখ ছল ছল করে উঠলো। সে বলল, ” চন্দ্রনাথ একটা শয়তান বাজে অসভ্য লোক। ওই আমার দিদিকে মেরেছে। আমি কতবার মাকে বলেছিলাম ওরকম একটা লোকের সাথে দিদির বিয়ে দিওনা ।‌ কিন্তু মা আমার কথা কিছুতেই শুনলো না। আর এখন তো আমি মাকে কি করে সামলাবো সেটাই ভাবছি। “

                                দিশা বলল, ” কেঁদো না মিতালীদি চন্দ্রনাথ লোকটার ঠিক সাজা হবে। তুমি কি কোথাও জব করো নাকি পড়াশোনা করছো এখনো?”

                               মিতালী বলল , ” আসলে আমি একটা বিউটি পার্লারে কাজ করি আমার মেকআপ আর্টিস্ট হওয়ার খুব শখ। কিন্তু বাবা-মা সবসময় চাইতো আমি সরকারি চাকরি করি সেজন্য সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য আমি পড়ছি। “

                             নিখিল বলল, “খুব ভালো কথা। আসলে আমরা জানতে চাইছিলাম তোমাদের পুরনো বাড়ি। যেটা দক্ষিণবাড়ী নামে পরিচিত।”

                             মিতালী বলল , ” একচুয়ালি আমি এবার ওই বাড়ি বিক্রি করে দেয়ার কথা ভাবছি। কারণ ওই বাড়িটা এখন বর্তমানে আমার নামে হয়ে গিয়েছে। আর আমাদের আত্মীয়-স্বজন বলতে পিসি টিশিরা আছে তবে তাদের ভাগ পায়ে গিয়েছে। আর ওই বাড়ির দেখাশোনা করা এখন আমার পক্ষে সম্ভব না বুঝতেই পারছেন। “

                             সুস্মিতা জিজ্ঞেস করল, ” আচ্ছা মিতালী ওই বাড়িতে কি সত্যি কোনো গুপ্তধন আছে। “

                             মিতালী একটু হালকা হাসি হেসে বলল , “ঠিক বলতে পারবো না তবে আমি ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে ওই বাড়িতে গুপ্তধন আছে। আর সেটা কোথায় আছে তার ঠিকানাও তো জগৎ বিখ্যাত। এই গুপ্তধনের খোঁজ করতে গিয়েই আমার ছোট কাকা খুব অল্প বয়সে মারা যায়। “

                             সঞ্জয় বলল , “কিভাবে মারা যায় তোমার ছোট কাকা?”

                             মিতালী বলল , ” আমার ছোট কাকার ছোটবেলা থেকে গুপ্তধন লাভ করার ইচ্ছা ছিল । আর তার যখন কুড়ি বছর বয়স সে ওই আমাদের পুরনো দক্ষিণ বাড়িতে যায় । আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে আমাদের দক্ষিণ বাড়ির ঠাকুরদালানের নতুন উঠোন থেকে একটা সিঁড়ি পাতালঘরের মধ্যে নেমে গেছে। আমার ছোট কাকা ওই পাতালঘরের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমেছিল। সবাই বলে ওই পাতালঘরের নাকি গুপ্তধন আছে কিন্তু ওই সিঁড়ি দিয়ে যেই নিচে গিয়েছে পরের দিন তার লাশ নদীর ঘাটে দেখা গিয়েছে। আমার ছোট কাকার সাথেও তাই হয়েছে তিনি আর ফিরে আসেনি, একদিন পরে নদীর ছড়ায় তার লাশ ভাসতে দেখা যায়। “

                             নিখিল বলল , ” কিন্তু আমরা শুনেছিলাম যে গুপ্ত ঘরের একটা চাবি ছিল সেটা তাহলে কিসের চাবি। “

                             মিতালী বলল , “আমার ঠাকুরদা ওই চাবির তিনটে ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়েছিল তার মধ্যে একটা এখনো আমার কাছে আছে। আমি সেটা আপনাদের দেখাতে পারে দাঁড়ান নিয়ে আসছি,”

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post ডায়রির ভাঁজ থেকে | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | অয়ন সাঁতরা | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
Next post বিষ্ণুপুরে হত্যাকাণ্ড | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় | Bengali Murder Mystery Story | 9F10