এই বলে মিতালী ঘরে গিয়ে একটা চাবি এনে তাদের দেখালো। খুব আশ্চর্য কর চাবি না পুরনো তলায় সেরাকমই চাবি। চাবিটার উপর একটা ময়ূরের চিহ্ন এছাড়া চাবিটিতে আর কোনো বিশেষ চিহ্ন নেই। তবে চাবিটা সোনার তৈরি।
সঞ্জয় চাবিটা হাতে নিয়ে বলল, ” এটাই নিশ্চয়ই আসল চাবি, তাই না?”
মিতালী বলল, ” হ্যাঁ এটাই আসল চাবি আর দিদির কাছে যেটা ছিল সেটা নকল। আসল চাবিটা আমার দাদুর কাছে ছিল। আর দাদু তারপরে বাবা আর এখন এটা আমার কাছে আছে। কিন্তু শুধু এই চাবি দিয়ে গুপ্তধন উদ্ধার করা সম্ভব না এর সঙ্গে একটা ছড়ার নাকি প্রয়োজন সেটা দাদু আমাকে বলেছিল।
সবাই উত্তেজিত হয়ে বলল কি ছড়া?
মিতালী বলল, “
যদি পেতে চাও বসন্তের ধন,
তবে মাথা নত করো
সিংহবাহিনীর পদতলে।
শঙ্খনাদ যদি করো,
গুপ্তদ্বারে সন্ধান পাবে তুমি।
নদী দেখে করো না কো ভয়,
নৌকা বয়ে পৌঁছে যাও
ইছামতীর তীরে।
জাহাজ ভরা ধন পাবে,
যদি করো সিংহের মনোরঞ্জন।।
সুস্মিতা বলল, “এর মানে গুপ্তধন পেতে গেলে সিংহের মনোরঞ্জন করতে হবে এটা আবার কি ধরনের কথা। “
মিতালী বলল , ” এর মানে তো আমি জানিনা তবে আমার মনে হয় আমার দাদু এর মানে হয়তো জানতো। “
দিশা বলল, ” মিতালী দি, তুমি যদি বলো তাহলে আমরা এই ঘটনাটার একটা কোন বিহিত করার চেষ্টা করতে পারি । তার মানে আমি বলতে চাইছি আমরা গুপ্তধন খোঁজার চেষ্টা করতে পারি। “
সঞ্জয় বলল, ” আমরা যদি গুপ্তধন পাই তাহলে সেটা আমরা সরকারের কাছে জমা দিয়ে দেব। আর তার থেকে একটা ভাগ তোমরা ও পাবে। “
মিতালী বলল, ” আমরা কোন ভাগ চাই না তবে চাই এই রহস্যটার সমাধান হোক। একবার গুপ্তধন পাওয়া গেলে সবাই গুপ্তধন খোঁজার ছেড়ে দেবে। এর ফলে আমাদের পরিবারও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। “
এরপর তারা সবাই মিতালীদের বাড়ি থেকে চলে আসছি নিখিল রাস্তায় বলছিল মিতালী মেয়েটা বয়সের তুলনায় অনেক বেশি পরিপূর্ণ। তার কথা শুনে সঞ্জয় বলল ছোটবেলা থেকেই এত কিছু তাকে একা সামলাতে হচ্ছে। আগে তাও তার একটা দিদি ছিল এখন তো তাও নেই। তাই তার মধ্যে ম্যাচুরিটি আসাটা তো স্বাভাবিক ঘটনা। তারা ইন্সপেক্টর সেন সমস্ত ঘটনাটা খুলে বলল ইন্সপেক্টর সেন তাদের বললেন আজকে রাত হয়ে গেছে তাই আজ আর দক্ষিণ বাড়ি যাওয়া ঠিক হবেনা। তবে কাল সকালে যেন তারা দক্ষিণ বাড়ি চলে যায়। তিনি নিজে তার দুজন কনস্টেবল এর সঙ্গে দক্ষিণ বাড়িতে যাবেন।
রাত্রে সুস্মিতা আর দিশা সারাদিনে যা যা ঘটেছে তাই নিয়ে কথা বলছি ইতিমধ্যে দিশা বাড়িতে ফোন করে সবকিছু জানিয়ে দিয়েছে তার বাবা মা খুব রাগ করেছে তার কথা শুনে। তার বাবা এও বলেছে সে কালকে আসতে পারবে না কিন্তু পরশুদিন সেখানে আসছে। দিশা বুঝেই গিয়েছে বাড়ি ফিরলে তার খবর আছে। এই ভেবে দিশার মনটা খারাপ হয়ে আছে।
সুস্মিতা দিশাকে দেখে বলল, ” আচ্ছা তোর এক্সাইটেড লাগছে না কাল আমরা পাতালঘরে নামতে চলেছি। “
সুস্মিতা বলল , “পাতালঘরের মুখ অনেকদিন আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আর পাতালঘরে নামা নামা আত্মহত্যা করা দুটোই এক ব্যাপার কারণ ওই ঘরে আজ পর্যন্ত জেগে নেমেছে কেউ বেঁচে ফিরে আসিনি।”
সুস্মিতা বলল, ” এর মানে তুই বলতে চাইছিস পাতালঘরে কোন গুপ্তধন নেই! পাতালঘর তৈরি করা হয়েছিল শুধুমাত্র মানুষকে ধোকা দেওয়ার জন্য ? “
দিশা বলল, ” আমি জানি না। তবে এখন শুয়ে পড় যা হওয়ার কাল সকালে হবে। “
প্রতিদিন সকালে তারা দক্ষিণ বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বেড়িয়ে পড়লো। দক্ষিণ বাড়ি এখন একটা পরিতক্ত বাড়ি। সেখানে কেউ থাকেনা। তবে কিছু লোক মাঝে মাঝে ঘুরতে যায়। যদিও বাড়ি বলতে এখন তেমন কিছু নেই যেটা আছে সেটা কয়েকটা পুরনো ভাঙা দালান আর একটা ভাঙা সিংহদ্বার । সামনের খোলা জমিতে বিকেলে বাচ্চারা ক্রিকেট খেলে। বিকেল বেলায় এই জমিতে এসে অনেকেই হওয়া খায়। একদম নদীর ধারে হওয়ায় জায়গাটা বেশ সুন্দর।
জায়গাটা দেখে তারা সবাই খুব খুশি হল। কিন্তু একটু পরেই তাদের সব খুশি উড়ে গেল তারা দেখলো চন্দ্রনাথের দলের একজন লোক শেখর পাতার ঘরে যাওয়ার রাস্তায় কোদাল দিয়ে আর সাপল দিয়ে খোঁড়াখুড়ি করছে। তার সাথে আরো দুজন লোক রয়েছে। তাদের দলকে আগে দেখে তারা মোটেও খুশি হলো না। কিন্তু সঞ্জয় তাদের সবাইকে লুকিয়ে পড়তে বলল কারণ সে চায় না তারা এদের চোখে ধরা পড়ুক। সঞ্জয় ইন্সপেক্টর সেনকে ফোন করে সমস্ত ঘটনা জানেন তিনি একটু পরেই আসবেন বলে আশ্বাস দিলেন।
আধ ঘন্টার মধ্যেই ইন্সপেক্টর সেন তার টিমের সঙ্গে এসে হাজির হলেন দক্ষিণ বাড়িতে। শেখর তার লোকেদের নিয়ে তখনো পাতালঘরের সেই সিঁড়ির উপর থেকে মাটি সরানোর চেষ্টা করছিল। তারা পুলিশ আসতে দেখে একটু ঘাবড়ে গেল কিন্তু খোড়া বন্ধ করল । ইন্সপেক্টর সেন তাদের এখন সামনে গিয়ে চোটপাট শুরু করলেন। তারপর তাদেরকে সেখান থেকে ভাগিয়ে দিলেন । কিন্তু তার দুজন কনস্টেবল কে তাদের পিছনে লাগিয়ে দিবেন বললেন তারা যেখানেই যাক তাদের উপর যেন নজর রাখা।