দক্ষিণ বাড়ির গুপ্তধন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | মৌসুমী দাশ | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
0 (0)

                                এরপর সবাই মিলে পাতালঘরের কাছে চলে গেলো । পাতালঘরের সিঁড়ির মুখের থেকে মাটি সরানো হয়েছে হলে দুটো সিঁড়ি খুব স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে।

                                ইন্সপেক্টর সেন প্রথম সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে বললেন, ” কি মনে হয় সঞ্জয়বাবু এই সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলে কি গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া যাবে? “

                                সঞ্জয় বলল , ” না আমার মনে হয় এই পাতালঘর বানানো হয়েছে শুধুমাত্র লোককে ধোকা দেওয়ার জন্য। মানে এখানে যে গুপ্তধন আছে এটা বসন্ত রায়ের বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে সবাই জেনে গিয়েছিল। তাই কেউ যাতে এই গুপ্তধন চুরি করতে না পারে,  সেই জন্য পাতালঘর তৈরি করা হয়েছিল।  এই ঘরে একবার প্রবেশ করলে কেউ জীবিত বেরিয়ে আসতে পারে না। “

                                ইন্সপেক্টর বললেন, ”  তার মানে ওই চাবিটা কিসের ছিল সেটা তো গুপ্তঘরের কোন দরজার তালা খোলার জন্যই ,,”

                                সঞ্জয় বলল কাল আমাকে মিতালী একটা ছড়া বলেছিল আমার মনে হয় সেই ছড়ার মধ্যে গুপ্তধনের সংকেত আছে। ছড়াটা হল,

                                যদি পেতে চাও বসন্তের ধন,

                             তবে মাথা নত করো

                              সিংহবাহিনীর পদতলে।

                              শঙ্খনাদ যদি করো,

                              গুপ্তদ্বারে সন্ধান পাবে তুমি।

                              নদী দেখে করো  না কো ভয়,

                              নৌকা বয়ে পৌঁছে যাও

                               ইছামতীর তীরে।

                               জাহাজ ভরা ধন পাবে,

                               যদি করো সিংহের মনোরঞ্জন।”

                               ইন্সপেক্টর সেন ছড়াটা যতটুকু শুনলেন একটু একটু মনে মনে আওড়ালেন। তারপরে বললেন , “আমি তো এর মানে কিছুই বুঝতে পারছি না সঞ্জয় বাবু। আপনি কি কিছু বুঝতে পেরেছেন?”

                               সঞ্জয় কিছু বলার আগে সৃজা বলল , “আচ্ছা সিংহ বাহিনী মানে তো দেবী দুর্গা আর এ বাড়িতে দুর্গা মায়ের ঠাকুরদালান রয়েছে। “

                               দিশা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, ‘ বসন্তের ধোন যদি পেতে চাও তবে মাথা নত করো সিংহবাহিনীর পদতলে’ তারপর জোরে বললো, ” আচ্ছা সঞ্জয় দা, বসন্তের ধন মানে কি বসন্ত রায়, যার কথা আমরা পড়ছিলাম আগের দিন।”

                               সঞ্জয় বলল , “হ্যাঁ আমার তো তাই মনে হচ্ছে সিংহবাহিনীর পদতলে তার মানে ঠাকুরদালানে যাওয়ার কথা বলছে। নিখিল চলতো ঠাকুরদানা গিয়ে দেখি কিছু পাওয়া যায় কি না! “

                               এ বাড়িতে দুর্গাপুজো বহুদিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঠাকুর দালান এখন পরিতক্ত সেখানে এখন আর সন্ধ্যায় প্রদীপ জলে না বা পালা পার্বণে উৎসব হয় না। তার পরিবর্তে ঠাকুরদালানে কিছু ঘাস আর আগাছা জন্মেছে। নিখিল আর সুমন যত সম্ভব পারল ততটা আগাছা সাপ করে দেখতে চাইলে কিছু আছে কি না। মেঝেতে পা ঢুকে ঠুকে দেখলো মেঝে একেবারে নিরেট কোথাও ফাঁক আছে বলে মনে হয়নি। দিশা আস্তে আস্তে একদম ঠাকুরদালানের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো এবং দাঁড়িয়ে কিছু ভাবার চেষ্টা করছে দেখে, সঞ্জয় বলল, ” দিশা এত মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছো? কোন ক্লু পেয়েছো? “

                               দিশা বলল, ” না আমি বোঝার চেষ্টা করছি যে ঠাকুর দালানের দুর্গা ঠাকুর টা ঠিক কোথায় থাকতো।  স্বাভাবিকভাবে  ঠাকুর দালানের মাঝেই দূর্গাঠাকুর থাকে আর লক্ষ্মী সরস্বতী কার্তিক গনেশ সবাই দুর্গা ঠাকুরের পাশে থাকে আর দুর্গা ঠাকুরটা মাঝখানে থাক থাকাটাই স্বাভাবিক। সেই জন্য আমি এর মাঝখানটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি। “

                               সঞ্জয় বিড়বিড় করে একটা কথা বলল মাথা নত করো সিংহবাহিনীর পদতল।  তারপরে সে সুমন কে বলল একটা নারকেলের পাতা নিয়ে আসতে। কারণ জায়গাটা ভালো করে সাফ করতে হবে। কারণ এখানে প্রচুর ধুলো জমে আছে। গাছ তলায় একটা নারকোলের পাতা পড়ে সময় সেটা তুলে আনলো। সঞ্জয় সেই নারকেলের পাতা দিয়ে জায়গাটা খুব ভালো করে সাফ করতে শুরু করল যাতে একটু ধুলোর আস্তরণ না থাকে। কিছুক্ষণ পর জায়গাটা পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে গেলে সেখানে একটা জিনিসের চিহ্ন দেখা গেল একটা শঙ্খের চিহ্ন সেই শঙ্খটা আঁকানো রয়েছে মেঝের উপর। বহু বছরের ধুলো ঝড়-ঝঞ্ঝার সময় এখন সেটা গরিমা অনেকটাই কমে গেছে, তবে সংকেত নিচের দিকে একটা চাবির গর্তের মতো কিছু একটা আছে যেটা দেখে সবাই খুব অবাক হয়ে গেল। তবে সঞ্জয় বোধহয় কিছু বুঝতে পেরেছিল সেই জন্য সে দিশার কাছ থেকে মিতালীর দেওয়া চাবিটা নিয়ে নিন তারপর শঙ্খের সেই গর্তে চাবিটা ঢোকানোর চেষ্টা করল প্রথমে কিছুই হচ্ছিল না। তারপরে নারকেল পাতার একটা কাঠি দিয়ে সে ওই গর্তটা থেকে ধুলো বার করতে শুরু করলো।  ধুলো সম্পন্ন সাপ করার পর যখন চাবিটা ঢুকিয়ে ঘোরানো হলো তখন একটা ক্যাচ করে শব্দ হবে। যেন পুরো অনেক পুরনো দরজা খুললে ঠিক যেমন শব্দ হয় ঠিক সেই রকম শব্দ। 

Pages ( 15 of 16 ): « এর আগে1 ... 1314 15 16তারপর »

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post ডায়রির ভাঁজ থেকে | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | অয়ন সাঁতরা | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
Next post বিষ্ণুপুরে হত্যাকাণ্ড | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় | Bengali Murder Mystery Story | 9F10