দিশা বলল, ” সঞ্জয় দা আমার মনে হয় এই চাতালের নিচে কিছু একটা আছে । “
দিশা এর পরে হয়তো আরো কিছু বলতে চাই। কিন্তু তার কথা শেষ হলো না । তার আগে ইন্সপেক্টর সেন চাতালের উপর পায়ের বুট জুতো দিয়ে টোকা দিলেন আর সঙ্গে সঙ্গে উপরের চাতালের এক অংশ নিচে নেমে গেল কিছু । ইন্সপেক্টর সেন টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলেন। ঘটনাটা এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেল যে কেউ কিছু বোঝার সময় পেলো না। এরপর সবাই দেখলো চাতালের একদিক ফাঁক হয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে। আর সেই ফাকের মুখটাতে সিঁড়ি দেখা যাচ্ছে।
সঞ্জয় সিঁড়ির দিকে মুখ করে জোরে চিৎকার করে বলল, ” ইন্সপেক্টর সেন আপনি ঠিক আছেন তো?”
নিচে থেকে ইন্সপেক্টর সেনের গলার আওয়াজ শোনা গেলো। তিনি বললেন , ” হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। তবে নিচে প্রচন্ড অন্ধকার। আলো নিয়ে আসার ব্যবস্থা করুন। “
সঞ্জয় দের সাথে দুটো এলিডি টর্চ ছিল তাই সবার কাছে মোবাইলের ফ্ল্যাশ আছে। এই আলোর উপর ভরসা করে সবাই ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে গেল। সিঁড়িগুলি খুব একটা চওড়া নয়। পাশাপাশি দুটো মানুষ হাঁটতে গেলে একটু কষ্ট হয়। তারা একেক জন করে নিচে নামলো । সবাই নিচে যে জায়গাটায় পৌছালো সেখানে একটা বড় চাতাল। আজ সেই চাতালে এক পাশ দিয়ে জল বেড়ে যাচ্ছে। যেন একটা ছোট নদী। এছাড়া আর এই ঘরে কিচ্ছু নেই যদিও এটাকে ঘর বলা যায় কি না তা নিয়েও সবার সন্দেহ হচ্ছে ।
চারিদিকে শুধু নিরেট দেওয়াল আর এক পাশে বয়ে যাওয়া নদী। এই দৃশ্য দেখে সবাই খুব আশ্চর্য হলো। সবাই বলছিল যে এখানে গুপ্তধন কিভাবে থাকতে পারে? দেওয়াল গুলো সবই নিরেট কোথাও কোন ফাঁক ফাঁকা নেই।
দিশা বললল “নদী দেখে করোনা ভয় নৌকা বয়ে পৌঁছে যাও ইছামতির তীরে। “
দিশা তাকিয়ে দেখলো চাতাল এর অপর প্রান্তে দুটো নৌকা রয়েছে। তবে নৌকো গুলো খুব একটা বড় না ছোট ছোট । সেগুলিকে ছোট ডিঙ্গি নৌকা বলাই ভালো । সে বললো, “আমাদের ওই ডিঙি নৌকা করে ইছামতির তীরে কোথাও একটা গিয়ে উঠতে হবে।”
দিশার কথা সবাই সম্মত হয়ে নৌকায় ঘুরতে যাবে এমন সময় একটা অঘটন ঘটে গেলো। পিছন থেকে একজন লোক এসে সুমনের মাথায় একটা কাঠ বিয়ে বাড়ি কসালো। যদিও আঘাত খুব জোরে ছিল না তবুও সুমন মাটিতে বসে পড়বে সৃজা তাড়াতাড়ি গিয়ে তাকে ধরল। যারা এসেছে তাদের মধ্যে দুজন লোককে তারা চেনেনা একজন চন্দ্রনাথ অন্যজন শেখর। তারা চোখের পলক ফেলার আগে ক্ষিপ্ত বেগে একটা নৌকা জলে নামালো। তারপর সেই নৌকার দাঁড় বাড়িতে শুরু করলো। আর গুপ্তধন আমাদের সম্পত্তি বলে চিৎকার করে হাসতে হাসতে নৌকা চালাতে লাগলো।
তারা সবাই কি করবে তাই এতক্ষণ বুঝতে পারছি না। হঠাৎ সঞ্জয় বলল সৃজাকে বলল যে সুমনকে নিয়ে উপরে যেতে। তার সঙ্গে তানিয়া আর সুস্মিতাকে চলে যেতে বলল। ঠিক হলো সে ইন্সপেক্টর সেন আর দিশা তিনজন মিলে নৌকো নিয়ে ওদের ফলো করবে। কারণ তাদের ধারণা গুপ্তধন হয়তো এই নদীর তীরের কোথাও একটা জায়গায় লুকানো আছে।
সঞ্জয়ের কথা শোনা ইন্সপেক্টর দত্ত আর দিশা বাদে বাকিরা চলে গেলো। ইন্সপেক্টর নৌকার চালাতে শুরু করলেন নদীটা এখানে খালের রূপ নিয়েছে তবে এই খান এঁকেবেঁকে যায় একেবারে সোজা চলে গিয়েছে কিছুদূর যাওয়ার পর একটা বাঁক পড়লো। তারা সেই বাপ পেরিয়ে চন্দ্রনাথের নৌকো দেখতে পেলাম। তারা যাচ্ছে মাটির নিচ দিয়ে কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাসের কোন অসুবিধা হচ্ছে উপরে যে দেওয়ালটা দেখা যাচ্ছে সেটা চুনা পাথরের তৈরি। মনে হয় নদী থেকে এই সুরঙ্গ টা কাটা হয়েছে। তবে এই সুরঙ্গ কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে তা কেউ জানে না । ইন্সপেক্টর ফোনের লোকেশন অন করে রেখেছে, তিনি বলছেন তারা এখন মানসিংহ রোডের নীচ দিয়ে চলেছেন। যদিও তিনি তাদের কনস্টেবলদের বলে দিয়েছেন , তাদের লোকেশন ফলো করতে।
নদীটা এক জায়গায় এসে মূল নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। সেটা একটা নদীর তীর সেটা দেখেই বোঝা যায় কিন্তু সেখানে কোথাও জাহাজ বা সিংহের মতো কিছু নেই যেটা আছে সেটা হচ্ছে পুরনো পরিতক্ত বাড়ি আর তার পাশে একটা ভাঙা স্মৃতিসৌধ। এইসব দেখে সঞ্জয় আর দিশা একেবারে নিরাশ হয়ে গেল কারণ তারা কখনোই ভাবি নি যে তাদের এই গুপ্তধনের অভিযানের শেষটা এরকম কিছু হবে। এদিকে চন্দ্রনাথ তার শেখর কেউ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
ইন্সপেক্টর দত্তের কনস্টেবল টা এখানে চলে এসেছে তার সঙ্গে সুস্মিতা আর তানিয়া। নিখিল আর সৃজা সুমনকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছে। তারা এসে এই জায়গাটা দেখে খুব অবাক হলো। সজয় ভাবছে যদি গুপ্তধন মাটির উপরে এরকম জায়গায় থাকবে তাহলে ওই সুরঙ্গটা কেন বানানো হয়েছিল নদী থেকে। ঠিক সেই সময় একজন কনস্টেবল বলবে এই সৌধের মাথায় নাকি একসময় একটা সিংহের মূর্তি ছিল যেটা বহু বছর আগে বন্যায় ভেঙে গিয়েছে। এই কথা শুনে তার পাশে ঘুরতে শুরু করুলো। তার মাথায় ছড়াটি শেষ দুটো লাইন ঘুরপাক খাচ্ছে জাহাজ ভরা ধন পাবে যদি পড়ো সিংহের মনরঞ্জন।
হঠাৎ দিশা বললো, “আচ্ছা সঞ্জয়দা সিংহ মানে তো মান সিংহ হতে পারে?”
সঞ্জয় বলল , “না রে দিশা ব্যাপারটা এতটা সহজ নয়। সিংহের মনোরঞ্জন এই কথাটার মানে কি?”
তানিয়া বলল, ” হয়তো সিংহ কে খাবার এনে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে অনেক ছাগল মাঠে চলে বেড়াচ্ছে সিংহ তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে একটা ছাগল যদি হাত ফসকে বেরিয়ে যায় তাহলে আর একটা ছাগল। এটাও তো এক ধরনের মনোরঞ্জন তো হতে পারে। “
সঞ্জয় বলল , “তুমি যে খুব ভুল বলেছে তা কিন্তু নয় । প্রথম লাইনটার কথা ভাবি জাহাজ ভরা ধন পাবে এখানে কোনোকালে জাহাজ আসতো না। তাহলে জাহাজ ভরা ধন এই শব্দটা কেন ব্যবহার করেছে? “
দিশা বলল , ” হয়তো জাহাজের মতো কোনো কিছু এখানে ছিল সেজন্যই বলেছে জাহাজ ভরা ধন। কিংবা হয়তো গুপ্তধন এখানে নেই এখানে হয়তো গুপ্তধনের নকশা আছে আর সেটা হয়তো কোন জাহাজে আছে।”
সঞ্জয় বলল, ” সেই সময় বসন্ত রায়ের পরিবারের প্রতি অঞ্চলের বাইরে বের করা নিরাপদ ছিল না । তাই এখানে কোথাও আছে । ‘
ঠিক এই সময় চন্দ্রনাথ শেখর আর তাদের লোকজনকে দেখাবেন তারা ওই স্মৃতিসৌধের পিছনে কিছু করছিল একজন কনস্টেবল দৌড়ে গিয়ে একটা লোকের কলার ধরে টান দিলো। চন্দ্রনাথ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছিল কিন্তু ইন্সপেক্টর কাকে বলে তুমি যদি পালানোর চেষ্টা করো তাহলে আমি কিন্তু গুলি চালাবো। চন্দ্রনাথ তবুও পালাতে যাচ্ছি না। ইন্সপেক্টর তখন বন্দুক দিয়ে ফাঁকা আওয়াজ করল। তাতেই কাজ হল চন্দ্রনাথ দাঁড়িয়ে পড়ল একজন কনস্টেবল তার কাছে গিয়ে তার হাতে হাত করা পরালো। ইন্সপেক্টর সেন তাদের সবাইকে জিপে তোলার হুকুম দিলেন।
এরপর ইন্সপেক্টর সেন সঞ্জয় বাকি সবাই মিলে স্মৃতিসৌধের পিছনে এসে দেখলেন এক অদ্ভুত দৃশ্য। স্মৃতিসৌধটা সাদা পাথরের তৈরি কিন্তু পিছনে একদম নিচের অংশটা সম্পূর্ণ আলাদা। এখানকার পাথরের উপর একটা সিংহের মুখ খোদাই পরা রয়েছে আর সেই সিংহের মুখের পাশে পাথর টাই রয়েছে একটা জাহাজ। জাহাজ সিংহ দুটোই দেখা গিয়েছে, তার মানে গুপ্তধনের রহস্যের সমাধান এই স্মৃতিসৌধের মধ্যেই লুকানো আছে এটা সবাই বুঝতে পারল। হঠাৎ দিশা সিংহের হাঁ করা মুখের মধ্যে আঙুল দিয়ে সিংহের মুখটা বন্ধ করার চেষ্টা করল । ঠিক তখনই একটা ক্যাচ করে শব্দ হল। দিশা সঙ্গে সঙ্গে আঙ্গুলটা তুলে নিল। সঞ্জয় বিষয়টা ভালো করে লক্ষ্য করেনি। তবে ক্যাচ করে হওয়া শব্দটা সেও শুনেছিল। সে খোদাই করার সিংহটাকে ভালো করে দেখতে লাগলো। এই সিংহ টা দেখে মনে হচ্ছে এটা পাথরের উপর খোদাই করা হয়েছে নয় পাথরের উপর বসানো হয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হল এই সিংহটা তো তার কোন তালার চাবি হতে পারে । তার মানে এই সিংহের মুখটা বন্ধ করতে হবে বন্ধ করলেই হয়তো কোন রাস্তা বেরিয়ে আসবে। সে জমিতে পড়ে থাকায় এক টুকরো পাথর নিয়ে সিংহের মুখে দিল তারপর দু আঙুল দিয়ে সিংহের মুখটা বন্ধ করার চেষ্টা করলো। কিন্তু কোন ফল হলো না। সে আবার একটা পাথর সিংহের মুখে যোগ করো এবারে আবার ক্যাচ করে শব্দ হলো সিংহের মুখটা সে চেপে ধরে রাখলো। সে দেখল যে পাথরটার উপর জাহাজ খোদাই করা ছিল সেই পাথরটা আস্তে আস্তে সিংহের মুখের দিকে চলে আসছে। সে সিংহের মুখটা এবার ছেড়ে দিল। তবে সিংহের মুখ থেকে পাথরটা ছিটকে পড়ে গেল মাটিতে আর জাহাজের এক প্রান্ত আসতে আসতে সিংহের মুখের মধ্যে ঢুকে গেল।
সঞ্জয় বলল, ” এটা একটা লক সিস্টেম। সিংহের মুখে এমন একটা নির্দিষ্ট ভোরের ওজন রাখতে হবে, যাতে সিংহের মুখটা বন্ধ করা যায় আর সিংহের মুখ বন্ধ হলে নিশ্চয়ই এর ভিতরের কোনো কল কবজায় প্রেসার পড়ে আর সেই কলকব্জা যুক্ত এই জাহাজটার প্রতিকৃতির সাথে এর ফলে দুটো এক হয়ে মিশে যায়। “
দেখতে দেখতে কিছুক্ষণের মধ্যে জাহাজ আর সিংহ দুটো একদম এক হয়ে গেল তারপর দুটো আস্তে আস্তে স্মৃতি সৌধের ভিতরে বসে যেতে লাগলো। স্মৃতি সৌধটি চওড়ায় দেড় ফুটের বেশি হবে না তাই এইটুকু স্মৃতিসৌধের ভিতরে কি থাকতে পারে এই ভেবে সবাই খুব আশ্চর্য হলো। দেখতে দেখতে অংশ প্রায় আলগা হয়ে গেল। স্মৃতিসৌধের উপরের যে পাথরগুলো ছিল সেই পাথরগুলো আস্তে আস্তে খুলে পড়তে শুরু করল তবে দেখল তারা যে সবকটা পাথরই কোন না কোন কপিকলের সাথে যুক্ত। এর মানে স্মৃতিসৌধ টা যদি এখন অক্ষত অবস্থায় থাকতো তাহলে এই মুহূর্তে একটা বিরাট বিস্ফোরণের সম্ভাবনা ছিল। একদম শেষে স্মৃতিসৌধের জায়গায় নিচে নামার একটা সিঁড়ি দেখা গেলো।
প্রত্যেকে সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নামলো। সেই সিঁড়ি এবার আর কোন কোন নদীর ধারের দিকে নিয়ে গেল না একটা বড় ঘরে নিয়ে গেল। সেই ঘরের দরজা বন্ধ ছিল লোহার বড় দরজা, সঞ্জয় একটু ঠেলা দিতেই দরজাটা খুলে গেল। তারা ঘরের মধ্যে গিয়ে যে দৃশ্য দেখল তাতে তাদের সকলের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। ঘরের মধ্যে সুনা হীরের ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। যেদিকেই তাকাচ্ছে সেদিকে নয় সোনার গয়না ছড়াছড়ি কিংবা হিরে কিম্বা মূল্যবান ধাতুর বাসন। সবাই আনন্দে চিৎকার করে নানান বিস্ময়সূচক শব্দ করতে লাগলো। দিশা এসে সঞ্জয়কে জড়িয়ে ধরে বলল , “এই সেই দক্ষিণ বাড়ির গুপ্তধন যা আমরা খুঁজে পেয়েছি।।”
বিষয় মৌলিকত্ব | |
ভাষা সাবলীলতা | |
কৌতূহল উদ্দীপক ঘটনা প্রবাহ | |
শক্তিশালী চরিত্র চিত্রণ | |
অডিও/ভিডিও রূপান্তর যোগ্য | |
Average
|
|
![]() |