Getting your Trinity Audio player ready...
|
সোমবার সকালবেলায় দিশা আর তানিয়া টেকসি করে রওনা দেয় শিয়ালদা স্টেশনে । সেখানে সুস্মিতা আগে থেকেই তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিল । এরপর তারা শিয়ালদা বনগাঁ লোকালে করে বনগাঁর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শিয়ালদা থেকে বনগাঁ যেতে ট্রেনে প্রায় দু’ঘণ্টা সময় লাগে। দিশা কোনদিন এতটা দূরে রাস্তায় লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করেনি, এতদূর লোকাল ট্রেনে যেতে হবে বলে দিশার একদম ভালো লাগছিল না । আর সে সব সময় শুনেছে বনগাঁ লোকালে খুব ভিড় হয়। ট্রেনে ওঠার সাথে সাথে সে বুঝল ভিড়টা কেমন হয়। তবে তারা তিনজন যেহেতু শিয়ালদা থেকে উঠেছিল, তাই তারা তিনজন বসার জায়গা পেয়েছিল । দিশা জানলার ধারে একটা সিটে বসেছিল তার পাশে বসে ছিল তানিয়া আর অন্যদিকের জানলার ধারে বসে ছিল সুস্মিতা। স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর তারা তিনজন বেশ খানিকটা বাদাম কিনে ছাড়িয়ে খেতে খেতে গল্প শুরু করল।
তানিয়া বলল , ” আরে ভাই আমার এই লোকাল ট্রেনে যেতে একদম ভালো লাগে না। এত ভিড় ট্রেন বাপরে বাপ কখন যে গিয়ে পৌঁছবো ভগবানই জানে, সো বোরিং। “
সুস্মিতা বাদাম খেতে খেতে বলল, ” আরে যতটা বোরিং ভাবছিস ততটা বোরিং নয় । বারাসাত ছাড়ার পর অনেক সবুজ গাছপালা দেখতে পাবি। খুব ভালো লাগবে তোদের।”
দিশা বলল, ” ভালো লাগলেই ভালো নইলে এতটা রাস্তা ট্রেনে ! সত্যি এর থেকে বাসে গেলে মনে হয় ভালো হতো তাই না? “
সুস্মিতা বলল, ” বাস থেকে ট্রেনে যাওয়াই ভালো। কারণ ট্রেনে গেলে আমরা সোজায একটা ট্রেনেই তোর বনগাঁ পৌঁছে যেতে পারবো। কিন্তু বাসে গেলে বাস বদলাতে হতো।”
তানিয়া বলল , ” আচ্ছা আমরা বঁনগায় গিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরব সব লিস্ট করে নিয়েছিল তো?”
দিশা বলল, ” হ্যাঁ আমাদের কিন্তু দু দিনের বেশি থাকা সম্ভব না। বুধবার সকালেই আমাদের কলকাতা ফিরতে হবে। “
সুস্মিতা বলল, ” কোন চিন্তা করিস না। সব প্ল্যান একেবারে তৈরি আছে। আমরা মামার বাড়ি যাব তারপর একটু রেস্ট করব , তারপরে পেট্রাপোল , সাত ভাই কালীবাড়ি আরো দু তিনটে জায়গা ঘুরে ফিরব। তারপর কালকে বনগাঁর ওদিকে একটা পার্ক আছে, সেখানে যাবো। “
তারা ট্রেনে বসে বসে এই সব গল্প করছিল ইতিমধ্যে ট্রেনটা দত্তপুকুর ছাড়িয়ে গিয়েছে। এখন আর শহরের পথঘাট বাজার বড় বড় ফ্লাইওভার, ব্যানার এইসব আর দেখা যাচ্ছে না। এখন শুধু দেখা যাচ্ছে সবুজ পাট ক্ষেত , সবুজ গাছপালা কোথাও বা আমের বাগান দেখা যাচ্ছে। রেলস্টেশনের আশপাশে যে দোকানপাট ঘরবাড়ি গুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো শহরের ঝুপড়ির মতন না। বেশ সুন্দর গ্রাম্য ধাঁচে তৈরি ছোট ছোট ঘর। তানিয়া বা দিশা আগে কখনো ট্রেনে এই রুটে আসেনি, এর আগেও ট্রেনে যেতে তারা গাছপালা সবুজ পাট ক্ষেত দেখেছে কিন্তু একটা আলাদা রুটে আসার মজাটাই আলাদা। সেটা তারা দুজনেই জানে। তাই তারা এখন আর বেশি কথা বলছে না। কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছে আর জানলার বাইরে তাকিয়ে রয়েছে। হঠাৎই তানিয়া কান থেকে হেডফোনটা খুলে ফেলল কারণ তাদের সিটের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু লোকজনের কথা তার কানে এসেছে। ট্রেনে যাওয়ার সময় অনেক লোকে অনেক গল্পই করে। বরং ট্রেনে যেতে যেতে দুনিয়ার সব খবরই শোনা যায়। এই কথা সবাই জানে কিন্তু এই লোকগুলো ঠিক স্বাভাবিক কথা বলছে না। তাদের কথা গুলো খুব ইন্টারেস্টিং। তারা কোন একটা গুরুতর বিষয়ে কথা বলছে সেটা তানিয়া বুঝতে পেরেছে। তানিয়া তাদের কথা আরো মন দিয়ে শুনতে চেষ্টা করলো।