তানিয়া বলল, ” কিরে কিছুই তো পাওয়া যাচ্ছে না । এর মানে কি? সুস্মিতার কথা ঠিক যে লোক দুটোর কোন বাজে উদ্দেশ্য নেই।”
দিশা বলল, ” হতেই পারে না। মানসিংহের নাম যখন আছে তখন গুপ্তধনের নিশ্চয়ই কোন হদিশ আছে ।আর সেটা দক্ষিণ বাড়িতেই আছে। আর এই দক্ষিণ বাড়ি কোথায় সেটা এই লোক দুটো থেকেই জানা যাবে। আচ্ছা আমরা তো গোবরডাঙ্গা পার হয়ে এসেছি আর এই লোক দুটোর কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে এরা বনগাঁতে নামতে পারে।”
সুস্মিতা বলল ,”তার মানে বনগাঁয় নেমে আমরা মামার বাড়ি না গিয়ে এই দুটো লোককে ফলো করবো?”
তানিয়া বলল , “তুই এত নিরস কেন, আমি ভেবে পাইনা। আরে আমি তো আর বলতে চাইছি না, যে এদের উপর আমরা হামলা করব শুধু ফলো করবো। আর তাছাড়া এই লোক দুটো তো আমাদের চেনেও না আমাদের উদ্দেশ্য এরা কি করে জানবে। “
সুস্মিতা বলল , “ভাই আমার এই দুটোকে একেবারে বোকা মনে হয় না। কারণ বোকা মনে হলে এরা এই দুটো লোক এই ট্রেনের মধ্যে গুপ্তধন নিয়ে ডিসকাস করত না বুঝলি।”
দিশা বললো, “সুস্মিতার কথাই কিন্তু যুক্তি আছে কারণ এই লোক দুটো যেভাবে গুপ্তধন নিয়ে কথা বলল তাতে মনে হচ্ছে এরা হয়তো কোন গুপ্তধনের গল্প আর সেই জন্যই এই ধরনের ইনফরমেশন জোগাড় করছে।”
তানিয়া বলল,” আচ্ছা ঠিক আছে । তোরা যেটা বলছিস সেটাই হয়তো ঠিক । তবে আমার খুব ইচ্ছা আমি একবার এই লোক দুটোকে ফলো করবো। এছাড়া আমি আর কিছু চাই না। প্লিজ তোরা আমার এই রিকোয়েস্টটা রাখতে পারবি না?”
সুস্মিতা বলল , “ডিস্কাস্টিং তানিয়া। তোর মাথায় মাঝে মাঝে এই সব উদ্ভট আইডিয়া গুলো কোথা থেকে আসে তা আমি ভেবে পাইনা। ঠিক আছে তোর যা ইচ্ছা তাই করিস তবে আমি যদি দেখে ওই লোক দুটো বেশি দূরে যাচ্ছে, তাহলে কিন্তু আমি আর যাব না। ঠিক আছে। “
তানিয়া শুকনো মুখে বলল, ” ওকে তাই হবে।”
ট্রেন বিভূতিভূষণ হল্ট স্টেশন ক্রস করে বনগাঁয় ঢুকছে, লোক দুটো এখনো গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এই লোক দুটো ছাড়া আরও অনেক লোক ট্রেনের দরজার সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে তানিয়াও রয়েছে। সুস্মিতা আর দিশা এখনো তাদের সিট ছেড়ে ওঠেনি। তানিয়া ওদের দুজনের নজর রাখবে, দেখবে ওরা দেখবে ওরা কোথায় যায় তারপর তারা টোটো ধরে ওদের পিছু নেবে। যদিও দিশা বলেছে যে ওদের যদি কেউ নিতে আসে তাহলে তাদের এই প্ল্যানটা পুরো বানচাল হয়ে যাবে। তবে তানিয়ার বিশ্বাস লোক দুটোকে কেউ নিতে আসবে না তারা টোটো ধরেই যাবে।
ট্রেন যখন বনগাঁ স্টেশনে এসে দাঁড়ালো। তখন ওই লোক দুটো ট্রেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে তানিয়া ওদের পিছু নিল । ভাবটা এমন যেন তার কোন কাজ নেই । সে ধীরে সুস্থ যেখানে খুশি যেতে পারে, তার সাথেও এখন কেউ নেই সে যেন একাই এখানে এসেছে। এদিকে সুস্মিতা আর দিশা তাদের পিছনে একটু দূরেই ছিল তারাও তানিয়ার উপর নজর রেখেছে । কারণ সুস্মিতা জানে, যে তানিয়া এখানকার কিছু চেনে না । হঠাৎ করে সে যদি হারিয়ে যায় তাহলে তাকে বাঁচাতে গিয়ে তারা মুশকিলে পড়ে যাবে। লোক দুটো স্টেশনের বাইরে টোটোর লাইনের কাছে চলে এলো। এর মানে তানিয়ার বিশ্বাসই ঠিক হল লোক দুটো টোট করেই যাবে।