সৃজা বলল, ” ওই বাড়িটা নাকি আগে এখানকার একজন কাপড়ের ব্যবসায়িক ছিল কিন্তু এখন সে বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে। বাড়িটা এখন কে কিনেছে তাদের সম্পর্কে আমি সেরকম কিছু জানি না । কারণ আমার ওই দিকে খুব একটা যাওয়া হয়না । তবে দাদা বলতে পারবে। তবে একটা কথা বলো তোমরা কেন এই বাড়িটা সম্পর্কে এত খোঁজ নিচ্ছ?”
সুস্মিতা বলল , “দাদা আসুক তখন একবারে সব বলবো। আসলে ওই বাড়িতে আজ দুটো লোক এসেছে, তারা খুবই সন্দেহজনক। “
তাদের তিনজনের ইচ্ছা ছিল দুপুর বেলা তারা একটু ঘুরতে যাবে । কিন্তু সুস্মিতার বড় মামি তাদের যেতে দিলেন না তিনি বললেন এই রোদ্দুরে আর কোথাও বেরোতে হবে না রোদ কমলে বিকেল বেলা তারা ঘুরতে যাবে। তার কথাই শোনা হলো। দুপুরের খাওয়ায় ছিল এলাহি আয়োজন শাক ভাজা, মাছের মাথা দিয়ে মুড়ো ঘন্টা সঙ্গে আলু ভাজা, বাটা মাছের ঝাল আর মাটান কষা চাটনি। এত কিছু খেয়ে দিশার ভীষণ ক্লান্ত লাগছিল। আসলে একসঙ্গে এত কিছু খাওয়ার অভ্যাস তার নেই সেজন্য সে আর খেতে পারছিল না। খাওয়ার টেবিলে তাদের পরিচয় হয় সঞ্জয়ের সাথে। সঞ্জয় কে দেখতে বেশ সুন্দর। গায়ের রং শ্যামলা লম্বায় প্রায় ছয় ফুট, মাথার চুল হালকা কোকড়ানো। গোফ এবং হালকা দাঁড়িয়ে আছে, তাতে তাকে বেশ হ্যান্ডসাম দেখায়। তারা পাঁচ জন একসাথেই খাচ্ছি আর খেতে খেতে হঠাৎ করেই সুস্মিতা সঞ্জয় কে ওই বাড়িটার কথা জিজ্ঞেস করে। এবং তাকে সব কথা খুলে বলি সব শুনে সঞ্জয় আর সূজা দুজনেই খুব আশ্চর্য হয়ে যায়।
সঞ্জয় বলল, ” বাড়িটা কিনেছে একজন ব্যবসায়ী। তবে কিসের ব্যবসা করে সেটা আমি ঠিক জানি না। তবে সম্ভবত অ্যান্টিকের ব্যবসা তবে আমি শিওর একটু খোঁজ করলে সবটাই জানা যাবে।”
দিশা বলল ,”আর ওদের বাড়িতে যে লোক দুটো এসেছে তাদের সম্পর্কে কি জানার কোন উপায় নেই?”
সঞ্জয় বলল , “এখন জানার কোন উপায় নেই দিশা । তবে একটু সময় লাগবে আমি আশা করছি আজকে সন্ধ্যের মধ্যে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে নিতে পারব। আর তোমরা যেটা শুনেছ আর যেটা বলছো সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে বলতে হবে সমস্যাটা বেশ গুরুতর। তবে তোমরা এ বিষয়ে বেশি ভেবোনা ব্যাপারটা আমি দেখছি। তোমরা বিকেলবেলা ঘুরতে বেরিয়ে।”
সৃজা বলল, ” কিন্তু দাদা আমিও তোদের সঙ্গে যাচ্ছি তুমি যাবে না? “
সঞ্জয় বলল, ” না আমি যাব না তোরা চারজনেই ঘুরে আয়। তোরা আসলে আমি বলব ওই বাড়িতে কি হচ্ছে আসলে!”
বিকেলবেলা তারা চারজনে রেডি হয়ে ঘুরতে বেড়ালো। তাদের যাবার ব্যবস্থা সঞ্জয় করে দিয়েছিল সেই তাদের পাড়ার একটা টোটো ঠিক করে দেয় যেটা তাদেরকে সুন্দর করে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। তারা প্রথমে গেল বনগাঁর পেট্রাপোল বর্ডারে যেখান থেকে বাংলাদেশে খুব কাছে। পেট্রাপোলের গেটের কাছে অনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে সেই গাড়ি গুলো থেকে লাইসেন্স এবং অন্য কাগজপত্র দেখে কাস্টম ডিপার্টমেন্টের লোকজন এবং পুলিশ তাদেরকে এদেশে আনছে আর এ দেশের গাড়িগুলোকেও ঠিক একইভাবে ওই দেশে পাঠাচ্ছে। দিশা এত কাছ থেকে কোন দেশের বর্ডার দেখেনি সেই জন্য সে বর্ডারের এই ব্যবস্থা দেখে খুবই খুশি হল । তারা আশপাশটাও ঘুরে দেখছিল জায়গাটা বেশ ভালই লাগছিল তাদের বেশ কিছুক্ষন এই পেট্রাপোল বর্ডারে ঘোরার পরে তারা গেল নদীর ধারে। বনগাঁর নদীটা খুব একটা সুন্দর না তবুও সেখানে বিকেল কাটানোর জন্য বেশ ভালো। এখন একটু ঘুরে মার্কেটপ্লেসে ঘুরাঘুরি করার করে, তারপর তারা সন্ধ্যেবেলা সিঙ্গারা নিয়ে যখন বাড়ি ফিরল ।
তখন দেখল সঞ্জয় বাড়ি ফিরে এসেছে। সে চায়ের টেবিলে বসে আছে , তার পরনে স্যান্ডো গেঞ্জি আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট । সে চা খাচ্ছে আর মোবাইল ঘাঁটছে। তাকে দেখতে খুবই হট লাগছে তার পেশী বহুল হাতগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। দিশা তো এই অবস্থায় সঞ্জয়কে দেখে মুখের ভাষায় হারিয়ে ফেলে। সে চুপ করে সঞ্জয় কে দেখতে থাকে। সঞ্জয় একবার সবার দিকে তাকালো তবে তার চোখ আটকে গেল দিশার দিকে কারণ দিশা একভাবে তাকেই দেখছে। সঞ্জয় তাকে কিছু বলল না।
সুস্মিতার দিকে ফিরে বলল, ” আচ্ছা তোরা কি একদম শিওর যে ওই লোক দুটো কোন গুপ্তধনের কথা বলছিল ?”
তানিয়া বলল, ” সঞ্জয়দা আমরা ঠিকই শুনেছি। আর ওদের কথা শুনে মনে হচ্ছিল মান সিংহ , দক্ষিণ বাড়ী আর গুপ্তধন এই তিনটের মধ্যে কোন একটা কানেকশন আছে। আর একটা কথা ওরা কোন চাবির কথা বলছিল কিন্তু ওই চাবিটা কি? গুপ্তধনের কোন বাক্সের চাবি এরকম হতে পারে। “