এরপর তাদের সবার মধ্যে এই বিষয়টা নিয়ে আর কোন কথা হয়নি । তবে সঞ্জয় যে বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিয়েছে সেটা তার হাবভাব দেখি বাকি সকলে বুঝতে পেরেছি। সঞ্জয় ইতিমধ্যে খোঁজ খবর করা শুরু করে দিয়েছে। গোবরডাঙ্গা থানার ইন্সপেক্টর এই অঞ্চলটা খুব ভালো করেই চেনে। তাই তার কাছে ইনফরমেশন জোগাড় করা খুব একটা ডিফিক্যাল কাজ নয়। সে তার অফিসের একজন কে বলল মল্লিকা দত্তের বিষয়ে একটু খোঁজ খবর নিতে, বিশেষ করে ওর বাপের বাড়ির বিষয়ে। আর সে নিজে একবার চন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ির দিকে গেলে।
চন্দ্রনাথের বাড়ির কাছের গলিতে এসে সঞ্জয় তার নেগব্যান্ড হেডফোনটা দুই কানে গুঁজলো। আর মুখে গুনগুন করে গান ধরলো , যেন সে গান গাইতে গাইতে এমনি ঘুরে বেড়াচ্ছে । কিন্তু সে আর চোখে দৃষ্টি রেখেছিল চন্দ্রনাথের বাড়ির দিকে, সে দেখার চেষ্টা করছিল বাড়ির ভিতরে কে কে আছে। হঠাৎ তার চোখ গেলে ছাদের দিকে সে দেখলে সেখানে একটা লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে। ল্যাম্পপোস্টের আলো লোকটির মুখে গিয়ে পড়েছে, ফলে তার মুখ দেখা যাচ্ছে। লোকটির গায়ের রং বেশ কালো । মুখে হালকা চাপ দাড়ি আছে এছাড়া তার মুখে অন্য কোন বিশেষত্ব নেই যার জন্য লোকটিকে একবার দেখেই মনে রাখা যায়। সঞ্জয় খুব কায়দা করে লোকটির একটা ছবি তুলে নিলো। সে জানে এই লোকটি চন্দ্রনাথ দত্ত নয়। তাহলে এ নিশ্চয় সেই দুজনের একজন । যাদের কে সুস্মিতারা ট্রেনে দেখছে। সঞ্জয় সেখান থেকে চলে গেল সে লোকটার ছবি তুলে নিয়েছে। সে এবার তার পরিচয় জোগাড় করতে পারবে।
সঞ্জয় বাড়ি এসে লোকটার ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সার্চ করুল কিন্তু কোন ইনফরমেশন পাওয়া গেলো না। তারপর সঞ্জয় সেই ছবিটা লালবাজারে কর্মরত বন্ধুর কাছে পাঠালো। তাকে বলল ক্রিমিনাল ডাটাবেস চেক করে দেখতে, এই লোকটা কোন ইনফরমেশন পাওয়া যায় কি না। তার বন্ধু জানালো, কাল দুপুর বারোটার মধ্যে লোকটার ইনফরমেশন সে জানাতে পারবে। যদি সে ক্রিমিনাল হয়। সঞ্জয় এরপর বাকিদের সাথে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ল।
পরের দিন সকাল আটটা। দিশা তখনো বেঘরে ঘুমাচ্ছে তার পাশে সুস্মিতা তার ওঠার কোন নাম গন্ধ নেই। ঠিক এমন সময় তানিয়া এসে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে তুললো। তানিয়ার এইভাবে তাদের ঘুম থেকে তোলার কারণ তারা বুঝতে পারল না , কিন্তু তার এই ব্যবহার তাদের মোটেও ভালো লাগবে। সুস্মিতা কে তানিয়াকে প্রায় মারতে শুরু করল , কিন্তু তানিয়া তাকে শান্ত করে কিছু বলার চেষ্টা করছিল।
দিশা ঘুম জানানো গলায় দুজনকে থামিয়ে দিয়ে বলল , “তানিয়া কি বলছিলি বল , আমি আরেকটু ঘুমাবো। “
তানিয়া বলল, ” আরে ঘুমোনোর মতো পরিস্থিতি নেই। গতরাতে চন্দ্রনাথ দত্তের বউ মল্লিকা দত্ত খুন হয়েছে। “
ঘরের মধ্যে বজ্রপাত হলেও তারা দুজন এতটা অবাক হতো না যতটা অবাক তারা তানিয়ার এই কথা শুনে হল। তাদের ঘুম যেন এক নিমেষে উড়ে গেল। বিছানা থেকে দুজনে তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠলো।
সুস্মিতা উত্তেজিত গলায় বলল , “আমাদের এক্ষুনি ওখানে যাওয়া উচিত চল চল সবাই বেরিয়ে পড়ি।”
তানিয়া বলল, ” আরে দাঁড়া। আগে ফ্রেশ হয়ে নি । ঘুম থেকে উঠেছি হাতমুখ ধুয়ে চা-টা খেয়ে তারপর যচ্ছি। “
দিশা বলল, ” আমাদের কাছে এত সময় নেই তুই তাড়াতাড়ি কর । “
পনেরো মিনিটের মধ্যেই তারা তিন জনে রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। আজ তাদের সঙ্গে সৃজা ও যাচ্ছে। বাড়িটা তাদের চেনা কিন্তু তারা তবুও সৃজাকে যেতে বলেছে । সৃজার অবশ্য যেতে কোন আপত্তি ছিল না। সঞ্জয়কে সকালে উঠে তারা কেউ দেখতে পায়নি সঞ্জয়ের কথা জিজ্ঞেস করায় সে বলল সঞ্জয় ওই বাড়িতে চলে গিয়েছে । বনগাঁ থানার একজন ইন্সপেক্টরের সাথে তার চেনা জানা রয়েছে। সেই জন্য সে দেখতে গিয়েছে কেসটা কি ! দিশার মাথায় অনেক রকম চিন্তা খেলা করছিল। কালকে তার মনে হচ্ছিল এই ঘটনাটাকে তার হয়তো নিজেদের কল্পনায় তিল থেকে তাল করছে। কিন্তু এখন মল্লিকার খুনের খবর শুনে তার মনে হচ্ছে , এই বিষয়টা কোন বড় সমস্যার ইঙ্গিত করছে। কারণ ছোটখাটো কারণে কেউ কাউকে খুন করে না। খুন যখন হয়েছে তখন এর পিছনে নিশ্চয়ই কোন বড় কারণ আছে।
ওরা চারজন চন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ির সামনে এসে দেখল বাড়ির সামনে প্রচুর লোক। একটা পুলিশের গাড়ি রয়েছে , আর তার পাশে একটা অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে ওটাতে করে মনে হয় লাশ নিয়ে যাওয়া হবে। বাড়ির সামনে অনেক লোক ছিল। তারা উত্তেজিত হয়ে একে অপরের সাথে কথা বলছিল কারোরই চন্দ্রনাথের পরিবারের সাথে খুব একটা বেশি ভাব ছিল না। তবে তার স্ত্রী মল্লিকা বেশ মিশুকে স্বভাবে ছিল এটা পাড়ার অনেক মহিলাই জানালো। একটা বউকে তারা বলতে শুনলো মল্লিকা অনেক বড় বংশের মেয়ে ছিল। মল্লিকার বাপের বাড়ির কোন আত্মীয়স্বজন আছে কি না তা কেউ জানে না।
ঠিক এই সময় তারা দেখলো দুজন মল্লিকার লাশ নিয়ে বাইরে আসছে। মল্লিকা শরীর পুরোটাই একটা সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা । তার শুধু মুখটাই দেখা যাচ্ছে । মুখটা দেখে মনে হচ্ছে তাকে দেখতে বেশ সুন্দর ছিল। তাকে দেখে সবার মনে খুব দুঃখ হলো, কেউ কোনদিন ভাবতেই পারিনি হাসি খুশি মেয়েটির এরকম পরিনাম হতে পারে। মল্লিকাকে কে কিভাবে মেরেছে সে বিষয়ে এখনো কিছুই জানা যায়নি। তবে চন্দ্রনাথের বক্তব্য কাল সে রাতে বাড়ি ছিল না। বিজনেস এর কাজে তাকে কাজ একটু বনগাঁর বাইরে যেতে হয়েছিল। মল্লিকার দুজন ভাই এসেছিল, মল্লিকা তাদের সাথেই ছিল আর সে আজ সকালে ফিরে এসে দেখে, মল্লিকা বেডরুমে পড়ে আছে মৃত অবস্থায় । তার পেটে কে একটা ধারালো চাকু ঢুকিয়ে দিয়েছে। চন্দ্রনাথ এদিক ওদিক ঘুরে দেখল মল্লিকা সেই খুরতুতো তো ভাই দুটো কোথাও নেই। এখন সকলের সন্দেহ তার ঐ খুরতুতো তো ভাই দুটোই মল্লিকাকে খুন করেছে।