৮
প্রোফেসার বাগচির ঘরের চৌকিতে বসেছেন ইন্সপেক্টার দত্ত, কৌশিকবাবু। মিতাও বসেছে ওদের পাশে। ঘরের একপাশে বেঞ্চ পাতা হয়েছে। সেই বেঞ্চে বসে আছেন তারা, যারা এইমাত্র কৌশিকবাবুর সাথে এসেছেন। সবাই শ্রোতা। অংশু একটা হাতল ভাঙা চেয়ার টেনে বসেছে। (গোয়েন্দা গল্পের সাবেকি রীতি অনুযায়ী সে এখন বক্তা)
‘গত শনিবার ড.দিশারি বসু আমার কাছে আসেন সাহায্য চাইতে। ওর ধারনা হয়েছিল, দঃআমেরিকা থেকে পাঠানো প্রোফেসার বাগচির কোনো গুপ্তধন চুরির উদ্দেশ্যে কেউ বা কারা এই বাড়িতে হানা দিচ্ছে এবং উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য তারা মিস বসুকেও মারতে পারেন। শুধু পারে নয়, মিস বসুর ধারনা হয় ওকে মারার জন্যই তারা এসেছিল। কিন্তু এ ধারনা যে ঠিক নয় সেটা আমি প্রথম দিনেই বুঝতে পেরেছিলাম। কারন এই বাড়ি থেকে গুপ্তধন সরাতে মিস বসু কে খুন করতে হবে এ ধারনা একেবারেই অচল। হতে পারে গুপ্তধনের খোঁজে দু পক্ষ মাঠে নেমেছে, সেক্ষেত্রে দ্বৈরথে নেমে গুলিগালা চলেছে। সেরকমই ভবেছিলাম এবং পাতি কেস ভেবে আমলও দিইনি। কেসটা আমি নিতামও না। নিলাম অন্য কারনে। কৌশিক আঙ্কেল কাকতালীয়ভাবেই আমাকে ডেকে পাঠালেন এই জায়গায়। তখনি বুঝেছিলাম ঘটনা সোজা নয়। এসে বুঝলাম সত্যিই তাই। বাগানের পাশেই পুকুর আর পুকুরের পারের মাটি নরম। গত রাতের পায়ের ছাপ মুছে মুছে গেলেও এটা বেশ বোঝা যায় এখানে আর যাই হোক, ডুয়েল হয় নি। অর্থাৎ একজনই দু টো গুলি চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, পুকুর পারে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটি গুলি থেকে বাঁচতে জলে পরে যায় এবং বন্দুকধারী চলে গেলে সে পুকুর থেকে উঠে আসার পরেও বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে এই লনে। যার ফলে পুকুর থেকে ওঠার সময়ে তার জুতোয় লেগে থাকা পুকুরপারের কাদা আর জলের পানা লনের একপাশে বেশ কিছুটা লেগে গিয়েছিল।
‘যে ব্যাক্তি জল থেকে উঠে তার রাইভালের অনুপস্থিতিতেও চুরির উদ্দেশ্য সাধন করতে ঘরে ঢুকল না, সে তাহলে চোর নয় এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে? আচ্ছা, এবার তাহলে প্রশ্ন উঠবে সে কে এবং কেন সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিল? এই সব প্রশ্নের উত্তরে আসতে গেলে প্রথমে আমাদের বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে যেতে হবে। কারন সেই ইতিহাস অজানা রয়ে গেলে আজকের এই মূর্তিমান শয়তানের আসল উদ্দেশ্য অজানা থেকে যাবে’।
পুকুরের দিক থেকে মাঝে মধ্যে এক আধটা ব্যাঙের ডাক আর গভীর রাতের দ্যোতক হিসেবে ঝিঁঝিঁর ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না।
কৌশিকবাবু উত্তেজনায় সিগারেট ধরালেন আবার। দত্তবাবু টেপ রেকর্ডার অন করে রেখেছেন, কারন ওনাকেই পরে কেস সাজিয়ে লিখতে হবে।
অংশু আবার বলা শুরু করল –
‘পাঁচের দশকে এই গ্রামে জমিদারি ব্যাবস্থা বহাল ছিল। জমিদারের অন্তত ঠাট-বাট ভালোই ছিল। তা সেই জমিদারের মেয়েকে ভালোবাসলেন পরেশ বাগচি। জমিদার বাড়ির পক্ষ থেকে সম্পর্ক মেনে নেওয়া হল না। কিছুদিনের মধ্যে বিয়ে হয়ে গেল সেই জমিদার কন্যার। তবে বিয়ের আগে শেষবারের মত একবার দেখা করে সেই মেয়ে তার প্রেমিককে এক উপহার দিয়ে গিয়েছিল। এই শেষ দেখা আর প্রিয়তমার দেওয়া শেষ উপহার সমীরণবাবুকে তাদের প্রনয়ের মধুর স্মৃতি ভুলতে তো দিলোই না বরং শোকে তিনি উন্মাদ হয়ে গেলেন। সায়েন্স কলেজ থেকে বেরোনো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট এইভাবে নিজের জীবন শেষ করে দেবে সেটা তাঁর দাদা মেনে নেবেন কেন? ভাইয়ের বিয়ে দিল। কিন্তু বিয়ের পরেও ভাইয়ের সংসারের দিকে মোটেই মন নেই। মাঝে একবার কলকাতায় গেল কি না কি রিসার্চের কাজে। দাদা ভাবল যাক তাও কাজে মন ফিরেছে। কিন্তু কলকাতা থেকে ফিরে আসার পর আবার সেই উন্মাদনা। এবার সমীরণের দাদা তাঁকে রাঁচিতে পাঠালেন। কিন্তু সমীরণবাবুর ইতিহাস বাঁক নিল এইখান থেকেই। রাঁচির পাগলা গারোদ থেকে কোনোভাবে তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি সত্যিকারের পাগল হননি দ্বিতীয়বার। রাঁচি থেকে পালিয়ে গিয়ে আর এ দেশে নয়, নানান কৌশলে পারি দিলেন বিদেশে। আর ঠিক এই সময় থেকে শুরু হল তাঁর ডায়রি লেখা। কিভাবে, কার সাহায্যে বিদেশে পারি জমালেন, এ সব কিছু লিখতে শুরু করলেন। ওনার ব্রিটিশ বন্ধু, যার সহায়তায় দেশ ছেড়েছিলেন সমীরণবাবু, সেই উইলস্টন ইংল্যান্ডে নিয়ে গিয়ে নিজের কাছেই রেখেছিলেন বাগচিবাবুকে, সে কথাও ডায়রিতে লেখা আছে। তবে যে পাতা গুলো নেই, মানে ইচ্ছে করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য যে পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলেছিলেন ড.দাস, সেইপাতা গুলোতে লেখা ছিল সমীরণবাবুর প্রেমিকার দেওয়া সেই উপহারের কথা। তাই তো ড.দাস?’
হাতে হাত কড়া পরে বসে থাকা, পা ঘেঁসে গুলি বেড়িয়ে গেলেও ঈষৎ যন্ত্রনার কারনে মুখবিকৃত করে বসে থাকা, ড.দাস কোনো কথা বলতে পারলেন না। শুধু বসে রইলেন মাথা নামিয়ে।
‘প্রোফেসারের শ্বশুরবাড়িতে গেলে পর সেখান থেকে আমাকে প্রথমদিন অপমান করে তাড়িয়ে দেন ওই বাড়ির এক বৃদ্ধ। তবে রেগে গিয়ে উনি অনেক কথা বলেছিলেন, যা আমাকে দ্বিতীয়দিন ওখানে যেতে উৎসাহ জাগিয়েছিল। কাউকে না জানিয়ে আমি আবার গিয়েছিলাম ওনার বাড়ি। তখন জেনেছিলাম, ড.দাস আগে ওখানে গিয়ে প্রফেসার বাগচির পূর্ব প্রনয়ের সব বৃত্তান্ত জেনে আসেন। তখনই আমার সন্দেহ হয়। বুঝতে পারি ডায়রির অনেক মূল্যবান পাতা ড.দাস ছিঁড়ে দিয়েছেন। কিন্তু কেন? আমার ইন্টারেস্টটা গিয়ে পড়ল বাগচিবাবুর পাস্টের উপর। এখানে এসে স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে এখানকার জমিদার বাড়ির খুঁটিনাটি জানতে লাগলাম। কারন আমার স্থির বিশ্বাস জন্মেছিল, আমেরিকার নয় দেশীয় গুপ্তধনের পিছনে কয়েকজন ওত পেতে বসে আছে। আমার সন্দেহ ঠিক হল। জানতে পারলাম এই গ্রামের জমিদারি অনেক পুরোনো। মিরকাশেমের আমলে নবাবদের সঙ্গে সদ্ভাব ছিল এঁদের। ব্যাস! এইটুকু শুনেই দুয়ে দুয়ে চার করে ফেললাম। বুঝলাম কোনো না কোনো ভাবে প্রোফেসারের কাছেও আছে নবাবী আমলের কোনো দামী জিনিস। মিস বসুর থেকে আনা ড.দাসের নেওয়া নোট আর প্রোফেসারের ডায়রি আবার খুঁটিয়ে পড়া আরম্ভ করলাম। খুঁজে পেয়ে গেলাম একটা ছোট্ট সূত্র। ড.দাস সেইসব পাতাগুলো ছিঁড়ে ছিলেন, যেখানে জমিদার কন্যার দেওয়া সেই উপহারের সরাসরি উল্লেখ আছে, কিন্তু প্রোফেসার অন্যান্য আরো অনেক জায়গায় তাঁর পুরোনো প্রেমের কথা স্মরন করতে গিয়ে সেই উপহারের পরোক্ষ উল্লেখ করেছিলেন। যখন আমি বুঝতে পারলাম ড.দাস এই জিনিসের পিছনে ছুটছিলেন, তখন আমার এও সন্দেহ হল উনি কি আদৌ মারা গেছেন? আঙ্কেলকে দিয়ে খোঁজ লাগালাম। দার্জিলিং থেকে জানানো হল, ‘যে ডেডবডিকে ড.দাসের ডেডবডি বলে অনুমান করা হয়েছিল, তার মুখ কিন্তু স্পষ্ট ভাবে সনাক্ত করা যায় নি’। আমার সন্দেহ বিশ্বাসে পরিনত হল। বুঝতে পারলাম উনি ইচ্ছে করে আত্মগোপোন করে আছেন’।
-‘কিন্তু কেন? প্রোফেসারের ডায়রি থেকে শুরু করে সবই তো ছিল ওনার দখলে’।
-‘কারন ছিল দত্তবাবু। সেই কারনটায় আসছি’।
অংশু আবার শুরু করল –
‘দঃআমেরিকায় প্রোফেসার ছিলেন শেষ জীবনে। কিন্তু তার আগে বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন লন্ডনে। আর সেই লন্ডনে উইলস্টনের পারিবারিক সূত্রে বাগচিবাবুর সঙ্গে আলাপ হল এক ভারতীয় তরুনীর। ক্রমে প্রোফেসার জানতে পারলেন সেই তরুনী আসলে তাঁর প্রথম যৌবনের প্রেমিকার মেয়ে। শুরু হল আরেক নতুন অধ্যায়। প্রোফেসার নিয়মিত ওই মেয়েটিকে চিঠি লিখেছিলেন, যে চিঠিগুলোর কয়েকটা ড.দাস সরিয়েছিলেন। কেন সরিয়েছিলেন? কারন সেখানে উল্লেখ ছিল, “আমি চিরকাল তোমার মা কে ভালোবেসে এসেছিলাম। তার দেওয়া শেষ উপহারের প্রকৃত মূল্য পরবর্তীকালে জানার পরেও আমি তা বিক্রি করতে পারিনি। তবে অপরাধ নিও না। একদিন রাতে আমার বিয়ে করা স্ত্রীর জন্য কেমন অপরাধ বোধ হল। আমি গোপনে একটি ছেলের হাত দিয়ে সেই আংটি আমার গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি তার উদ্দেশে। কিছুই তো তাকে…” ড. দাস বুঝলেন আংটি আছে প্রোফেসারের শ্বশুর বাড়িতে। কিন্তু না। আংটি সেখানে নেই। তাহলে? আসলে সেই তরুনী দাবি করে বসে আংটির মালিক সে। কাজেই তার আংটি তাকে ফেরত দিতে হবে। এমন দুর্মূল্য জিনিস তো বেহাত হতে দেওয়া যায় না। প্রোফেসার বাধ্য হন সেই তরুনীকে এই গ্রামের ঠিকানা দিতে। আসলে প্রোফেসার জানতেন না যে তাঁর স্ত্রী ওনার নিরুদ্দেশের পরেই নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কাজেই আংটি পাঠিয়েছিলেন এই বাড়িতেই। যাই হোক, সেই তরুনী প্রোফেসারের স্ত্রীর ছদ্মবেশে এখানে আসেন –যেটা গ্রামের অনেকেই বলেছেন’।
-‘তারমানে আংটি এখানে নেই?’ প্রশ্ন করলেন দত্তবাবু।
-‘আছে। সেই তরুনী তো আংটি খুঁজে পাননি এখানে এসে। তাই না?’ প্রশ্নটা দিশার মাকে করা।
দিশা চমকে তার মায়ের দিকে তাকায়। এতক্ষনে বোধহয় এটাও বুঝতে পারল, কেন সেদিন সন্ধ্যেবেলা অংশু ওকে ফোন করে ওর মায়ের নাম্বার নিয়েছিল। আর তাই আজ পুলিশ অফিসার নিজে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা নিয়ে এল ওর মা কে।
‘সেদিনের সেই তরুনী তো আপনিই। আর আপনারই নির্দেশে অরুনাভ, মানে আপনার দ্বিতীয়পক্ষের ছেলে অরুনাভ এখানে এসে দিশার সঙ্গে ভাব জমায়। কারন আপনি জানতে পেরেছিলেন অ্যাক্সিডেন্টালি প্রোফেসার সমীরণ বাগচির ডায়রির উপর গবেষণায় লিপ্ত আছেন আপনার প্রথম পক্ষের মেয়ে দিশা। আপনি দেখলেন এই সুযোগ। নিজের মেয়েকেই টোপ হিসেবে ব্যাবহার করে সেই নবাবী আমলের কোটি টাকার আংটি আদায় করতে অরুনাভকে মাঠে নামালেন। কিন্তু আপনি এটা বুঝতে পারেননি যে অরুনাভ আরো বড় খেলোয়ার। সে এই বাড়ির কেয়ারটেকারের সাথে হাত মেলালো প্রোফেসারের থিসিস পেপার সরাবে বলে। এমতাবস্থায় ড.দাস সেটা জানতে পেরে ফাঁদ পাতলেন। ঠিক যে ফাঁদে উনি নিজে পা দিয়েছেন আজ, সেই ফাঁদ। আইডিয়াটার জন্য ধন্যবাদ ড.দাস। … যাই হোক, সেদিন রাতে জোড়া খুনের পিছনে আসল ঘটনা ছিল এই –ড.দাস অরুনাভকে গুলি করে এবং অরুনাভর ফলস ফায়ারিঙে মারা পরে কেয়ারটেকার ছেলেটি, যে নিজেও আত্মরক্ষার জন্য একটা ফায়ারিং করেছিল, কিন্তু সফল হয় নি’।
-‘বেশ। বুঝলাম। কিন্তু প্রথম দিনের কেসটা? সেদিনেও কি ড.দাস…’
-‘না দত্ত বাবু। ওটা ড.দাস ছিল না’।
-‘তাহলে কে?’
-‘সেটা বরঞ্চ সম্রাটবাবুর থেকে শোনা যাক!’
এবার সকলের দৃষ্টি ঘুরে গেল সম্রাটের দিকে। দিশার প্রায় কেঁদে ফেলার অবস্থা। এইমাত্র সে জানতে পেরেছে তার নিজের মা তাকে টোপ হিসেবে ব্যাবহার করতে চেয়েছিল। এখন সম্রাটের নামে আর কিছু শোনার মত ক্ষমতা যেন তার নেই। ক্লান্তি, হতাশা ও অবিশ্বাস ভরা চোখে সম্রাটের দিকে সে তাকাল।
সম্রাট এবার বলতে আরম্ভ করল –‘সবই তো জেনে গেছেন। আপনিই বলতে পারতেন। যাক গে… আমিই বলছি। প্রোফেসার বাগচি যখন নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন, তখন ওঁর একটি বাচ্চা মেয়ে ছিল। সেই মেয়েটিকে বাঁচানোর জন্যই ওনার স্ত্রী বাপের বাড়ি গিয়ে তারপর কয়েকদিনের মধ্যে আত্মহত্যা করেছিলেন। আর সেই বাচ্চা মেয়েটি মানুষ হয়েছিল তার মামা বাড়িতেই। তারপর পড়াশুনা করতে ব্যাঙ্গালুরু। সেখানেই বিয়ে থা করেন। আর ওখানেই আমার জন্ম। আমি পড়াশুনা ওখানেই করেছি। রিসেন্ট এখানকার কলেজে একটা কাজে কলকাতায় আসা’।
কথা বলতে বলতে খুব দ্রুত মোড় ঘুড়িয়ে দেওয়ায় প্রথমটা সবাই একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিল। তারপর বুঝতে পারল।
অংশু বলল –‘প্রোফেসারের ডায়ারিতে ওনার নিজের একটা ছবি ছিল, যেটা ম্যাগাজিনেও পরিষ্কার করে ছাপা হয়েছিল। সম্রাটকে দেখার পর থেকেই আমার মনে হত ওই চোখ আমি আগেও কোথাও দেখেছি। পরে বুঝতে পেরেছিলাম কোথায় দেখেছি। তারপর তো প্রোফেসারের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সেখানে ওর সব রকম বয়সের ছবি দেখলাম’।
এবার কৌশিকবাবু বললেন –‘কিন্তু সেদিন রাতে ও এখানে কী করছিল?’
সম্রাট বলল –‘শুধু প্রথম দিন নয়। আমি পরের দিনও ছিলাম। অংশু বাবু জানেন সব। আসলে আমি সন্দেহ করেছিলাম দাদুর থিসিস বেহাত হতে চলেছে। আর আমার প্রথম থেকেই সন্দেহের তালিকায় ছিল ওই অরুনাভ। এমনকি… সরি দিশা… আমি দিশাকেও সন্দেহ করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল অরুনাভর সাথে ও-ও জড়িত। যাই হোক, হাতে নাতে ধরার জন্য সেই রাতে এসেছিলাম। কিন্তু অরুনভর কাছে বন্দুক ছিল। পর পর দুটো ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করল। আমিও দিলাম জলে ঝাঁপ। তবে পালাইনি। আমি মরে গেছি ভেবে ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল অরুনাভ। আমি আবার জল থেকে উঠে ভোর অবধি ছিলাম’।
ভোর হয়ে এসেছে। প্রায় সারা রাত ধরেই সবার ধকল যাচ্ছে। তবুও উত্তেজনায় কারুর চোখে ঝিমুনি নেই।
কৌশিকবাবু বললেন –‘আচ্ছা, ওই আংটিটা তাহলে…’
-‘ওটা দত্তবাবুর কাছে আছে’।
-‘আ-আ-আমা- আমার কা.. কি সব যা তা..’
অংশু হেসে ফেলে। ‘আরে মশাই ভয় খাচ্ছেন কেন? আমি কি বলেছি আপনি ওটা চুরি করেছেন? আমি বলেছি আপনার কাছে আছে।’
মিতা এবার ঝাঁঝিয়ে ওঠে –‘যা বলতে চাইছিস, পরিষ্কার করে বল না’।
-‘প্রোফেসারের ডায়রি তো এখন আপনার হেফাজতে?’
-‘হ্যাঁ’।
-‘দেখি ডায়রিটা’।
-‘এই যে…ধরুন’।
অংশু ডায়রিটা নিয়ে সেটার প্রথম পাতা খুলে প্রোফেসার পরেশ বাগচির যে ছবিটা পাতার সঙ্গে আটকানো আছে, সেটা সবাইকে দেখালো। তারপর ঠিক ম্যাজিশিয়নের মত করেই ছবিটা পাতার গোরা শুদ্ধু ছিঁড়তেই ডায়রির মলাটটাও ছিঁড়ে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গেই মলাটের ভিতর থেকে ঠক করে পরে গেল নবাবী আমলের সেই মূল্যবান আংটি।
…..
মিছরিপুর থেকে ফেরার পথে গাড়িতে মিতা জিজ্ঞেস করে, ‘তুই কি করে বুঝলি ওটার মধ্যে আংটি আছে?’
-‘প্রোফেসারের ডায়রি থেকেই। একটা চিঠিতে লেখা ছিল, উনি বন্ধু উইলস্টনের পরামর্শ মত কাউকে একটা বিষয়ে কিছু জানাননি এবং উনি আর বেশিদিন বেঁচে নেই এটা নিজেই বুঝতে পেরে উত্তরাধিকার সূত্রে সেটা কাউকে দিয়ে যেতে চান। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম গবেষণার ব্যাপারেই উনি এই কথা বলছেন। তারপর সম্রাটের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম গবেষনা নিয়ে কোনো লুকোছাপা নেই। অর্থাৎ ‘উইলস্টনের পরামর্শ অনুযায়ী কাউকে কিছু জানাইনি’ এই লাইনে উইলস্টন ভদ্রলোক গবেষণা সংক্রান্ত কোনোকিছু গোপোনে রাখার পরামর্শ দেননি। তাহলে কী হতে পারে? এটা যখন ভাবছি, তখনি চোখে পড়ল রবীন্দ্রনাথ’।
-‘রবীন্দ্রনাথ?’
-‘হ্যাঁ রবীন্দ্রনাথ। দেখিসনি? ডায়রির প্রথম পাতাতেই লেখা ছিল –“আমার শূন্যতা তুমি পূর্ণ করি গিয়াছ আপনি”।
-‘অশিক্ষিত। কী লাইনের কী মানে বের করে… দূর হ!’
মিতার মুখের দিকে তাকিয়ে অংশু শব্দ করে হেসে ওঠে শুধু।
বিষয় মৌলিকত্ব | |
ভাষা সাবলীলতা | |
কৌতূহল উদ্দীপক ঘটনা প্রবাহ | |
শক্তিশালী চরিত্র চিত্রণ | |
অডিও/ভিডিও রূপান্তর যোগ্য | |
Average
|
|
![]() |