ডায়রির ভাঁজ থেকে | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | অয়ন সাঁতরা | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
0 (0)

বম্বে রোডে আসতেই অংশু গাড়ির স্পিড বাড়ালো। পাশে বসে আছে মধুস্মিতা আর পিছনের সিটে দিশা।

অংশুর ধারনাই ঠিক। গতকাল রাতে গুলি চলার আওয়াজ গ্রামের আরো কেউ কেউ পেয়েছিল। তাদেরই মধ্যে দু একজন দল বেঁধে স্থানীয় পুলিশ স্টেশানে জানায়। কাকতালীয়ভাবে ওই থানার আন্ডারে অন্য একটা কেসের জন্য ডিটেক্টিভ ডিপারটপেন্ট থেকে কৌশিকবাবুকে পাঠানো হয়েছিল দিন দশেক আগে। গতকাল সেই কেস ক্লোসড হয়েছে এবং আজ সকালে উনি এই নতুন কেসের কথা শুনে অংশুকে ফোন করে জানায় –‘কেসটা ইন্টারেস্টিং আছে মনে হচ্ছে। দেখবে নাকি? চলে এস তাহলে ঘন্টা দু একের মধ্যে’। এর উত্তরেই অংশু জানিয়েছিল –‘আমি অলরেডি এই কেসে ইনভল্ভড’। সে যাই হোক, আজ যেহেতু শনিবার আর মধুস্মিতার অফিস ছুটি তাই ওকে সাথে না নিয়ে গেলে তুলকালাম কান্ড বাঁধাবে পরে। তাছাড়া স্পটে যেখানে ওর বাবা স্বয়ং সরেজমিনে আছেন, সেখানে ওকে না গিয়ে উপায় কি অংশুর! তাই গাড়ি ভায়া বালিগঞ্জ হয়ে মধুস্মিতাকে গাড়িতে তুলে এখন গন্তব্য মিছরিপুর।

‘কোলকাতায় আপনি কোথায় থাকেন?’ পিছনে ঘাড় ঘুড়িয়ে দিশাকে প্রশ্নটা করল মিতা। –‘আমার বাড়ি আসলে কোচবিহার। এখানে কোলকাতায় নিউটাউনে একটা ফ্ল্যাট কিনেছি বছর দুয়েক হল’

 –‘ও। তা এখন কি বাবা মা ও এখানে চলে এসেছেন?’ মিতার এই প্রশ্নে দিশা কিছুক্ষন চুপ করে রইল, কোনো কথা বলল না। খানিক্ষন পর অংশু আবার জিজ্ঞেস করল –‘কই কিছু বললেন না যে?’ এবার দিশা বলল –‘না আমি একাই থাকি। আমার বাবা মারা গেছেন বছর সাতেক আগে। আর মা ও নেই’

–‘ও… সরি।’

–‘না না আপনাদের বুঝতে বোধহয় একটা জায়গায় ভুল হয়েছে। আমার বাবা মারা গেছেন ঠিকই, কিন্তু আমার মা নয়। আসলে আমি মায়ের সঙ্গে থাকি না। ’

অংশুরা যখন মিছরিপুরে গিয়ে পৌঁছল, তখন প্রোফেসারের বাড়ির সামনে দু তিনটে পুলিশের ভ্যান সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অংশু বাড়ি থেকে একটু দূরে গাড়িটা পার্ক করল। বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে চার পাঁচ জন কন্সটেবেল দাঁড়িয়ে আছে, তাদের কৌশিকবাবুর কথা বলে অংশু মিতা আর দিশাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকল। কৌশিকবাবু একজন মোটা গোঁফওয়ালা পুলিশের সঙ্গে খুব গম্ভীরভাবে কি যেন কথা বলছিলেন, অংশুকে আসতে দেখে কথা থামিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেল।

-‘এই দেখ, তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম…’ কৌশিকবাবুর কথাটা মাঝপথেই থেমে গেল মিতাকে দেখে। অংশুকে ছেড়ে আগে মিতাকেই বললেন –‘কিরে তুইও এসেছিস?’ মিতা বলল, ‘আজ শনিবার তো। অফিস ছুটি আছে’

–‘ও হ্যাঁ, তাও তো ঠিক। এই ইয়ে কি বলে… হ্যাঁ, আরে তোর মা তো আমাকে এই মাত্র ফোন করে বলল তোর মামা নাকি সিঁড়িতে উঠতে গিয়ে এমন পা মচকেছে যে নারসিংহোমে নিয়ে যেতে হয়েছে’ –‘সেকি… আমি জানি না তো’ –‘তাহলে তুই বেরিয়ে আসার পর জেনেছে। যাক গে যাক, সেই জন্যেই তাড়াহুড়োতে ছিলাম। আমাকে একবার ওইদিকে যেতে হবে।… এই অংশু…’ এবার অংশু বলল –‘হ্যাঁ, বলুন।’

–‘শোনো, আমি অ্যাক্সিডেন্টালি এখানে ছিলাম বলে জাস্ট একবার জায়গাটা দেখতে আসা। আমার আন্ডারে কেসটা নয়। কাজেই বুঝতে পারছ তো… অফিসার তোমাকে খুব একটা নাক গলাতে দেবে না’

–‘ও নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আমাকে অ্যাপয়েন্ট করেছে ড.দিশা বসু। আমি আমার মত কাজ করব’ –‘বেশ। আমি শুধু বলে দিলাম। তবে তোমার একান্তই কোনো দরকার হলে বোলো আমার কোনো অসুবিধে নেই’

–‘ঠিক আছে। আপনাকে অত চিন্তা করতে হবে না’

–‘আচ্ছা, আমি তাহলে চলি। আর তুই কি অংশুর সাথে ফিরবি?’

মিতা সরাসরি বলতে পারছিল না যে ‘আমি অংশুর সাথে ফিরব’, তবে কৌশিকবাবু কথাটা আন্দাজ করে মিতাকে আর না ঘাঁটিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন।

‘আপনি অংশুমান রায়?’ কৌশিকবাবু এতক্ষন যার সাথে কথা বলছিলেন, সেই অফিসার অংশুর দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন।

-‘হ্যাঁ, আমিই অংশুমান’

 –‘আপনার কথা বলছিলেন মি.দত্ত। আপনি প্রাইভেটলি কেসটা নিয়েছেন?’

-‘ইয়েস। আমাকে ড.দিশারি বসু অ্যাপয়েন্ট করেছেন। মানে এই বাড়িতে এখন যিনি থাকেন’

-‘আই সি। তিনি আপনার সঙ্গে আছেন নাকি? তাহলে তো ওনাকে আমাদের কিছু রুটিন জেরা করতে হবে।’

-‘হ্যাঁ, আছেন উনি’ বলে অংশু দিশাকে হাতের ইশারায় এগিয়ে আসতে বলল। অফিসার দিশাকে কিছু প্রশ্ন করার আগে অংশু বলল –‘আচ্ছা আপনি ততক্ষন আপনার ‘রুটিন জেরা’ করুন। আমি গুলিটা যেখানে চলেছে সেটা একটু দেখব। আপনার কোনো কনস্টেবেলকে যদি…’ অংশুর বলার ধরনে ভদ্রলোক আর না করতে পারলেন না। ‘ও সিওর’ বলে একজনকে অংশুর সাথে পাঠালেন।

অংশু বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে গাছের গায়ে দাগ হয়ে যাওয়া অংশটা দেখছিল। তারপর বসে গাছের লাগোয়া পুকুর পাড়টাও নিরিক্ষন করছিল, এমন সময় সেই অফিসারটি এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলল –‘কি বুঝছেন?’

 –‘ওই যতটা বোঝা যায় আরকি…’

–‘কি সিদ্ধান্তে আসছেন?’

–‘পাড়ার কেউ ইচ্ছে করে গুলি ছোঁড়া প্র্যাকটিস করছিল না, এইটুকু বলতে পারি’। অংশু কিছু বলবে না বুঝতে পেড়েই অফিসারটি সরে পড়ল।

বেলা দুটো নাগাদ ওরা বেড়িয়ে এল। পুলিশ অফিসারটি আপাতত দিশাকে ওখানে থাকতে বারন করেছেন। তাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব গুছিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে এসেছে দিশা। ওই বাড়ির কেয়ারটেকার ছেলেটিকে প্রায় দু পাতা প্রশ্ন করার পর অফিসার একেও বলেছেন এখন ওই বাড়িতে না থাকতে। সে যাই হোক, এখন হাই রোডে একটা রেস্টুরেন্ট দেখতে পেয়ে গাড়ি থামিয়ে লাঞ্চ করতে ঢুকল তিন জনে। মেনু কার্ড একটা বোর্ডে লেখা আছে। সেই জরাজীর্ণ মেনুর দিকে তাকিয়ে প্লেন সব্জি-ভাত সব থেকে নিরাপদ হবে বুঝতে পেরে, তাই তিন প্লেট আনতে বলে দিল অংশু।

-‘আপনি তাহলে ব্যাপারটা দেখছেন তো?’ খেতে খেতে উদ্বিগ্ন গলায় কথাটা বলল দিশা।

-‘কেন, গুলির ব্যাপারটা নিয়ে পুলিশ তো তদন্ত করছেই। তাছাড়া আপনাকে তো আর ওখানে থাকতে হচ্ছে না’।

-‘না তবুও। প্রোফেসারের ওই ডায়ারির কথা তো পুলিশ জানে না’।

-‘জানান তাহলে’।

-‘আমি জানাতে চাই না। আমি ব্যাক্তগত ভাবেই জানতে চাইছি কাল রাতের গুলি চলার সাথে ড.দাসের মৃত্যুর কোনো যোগ আছে কিনা?’

-‘বেশ। ধরুন আমি কেসটা নিলাম। যদি নিই, আপনাকে কিন্তু পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। আমার প্রয়োজনীয় যেকোনো প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আপনাকে দিতে হবে’।

-‘নিশ্চয়ই। আপনি শুধু কেসটা নিন’।

-‘বেশ আপাতত তাহলে কেসটা শুরু করার জন্য একটা ইনফরমেশান দিলেই চলবে। ড.দাস কত তারিখে মারা গিয়েছিলেন? আর কোথাকার পাহাড় থেকে পরে মারা গিয়েছিলেন?’

-‘তারিখটা আপনাকে পরে মেসেজ করে জানিয়ে দেব। আমার ডায়রিতে লেখা আছে। আর উনি মারা গিয়েছিলেন দার্জিলিঙে। প্রপার টুরিস্ট প্লেসে নয়। একটু ভেতরে। গ্রাম সাইড। ওটাও আমি আপনাকে আজ রাতের মধ্যে মেসেজ করে দেব। আর কিছু?’

-‘একটু ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করব। আপনার কোনো প্রেমিক…’

-‘এ প্রশ্ন কেন?’

-‘ধরে নিন দরকার আছে। কারন আপনার নিকট ব্যাক্তিদের পরিচয় পাওয়াটা আমার দরকার। বাবা মায়ের ব্যাপারটা বলেছেন। এবার এটা জানতে পারলে সুবিধে হত’।

-‘আছে। ওর নাম সম্রাট। সম্রাট মিত্র। ম্যাথস নিয়ে রিসার্চ করছে এখন। পড়ায়ও কলেজে। টালিগঞ্জে থাকে। উইক এন্ডে আমি কোলকাতায় গেলে আমার ফ্ল্যাটে এসেও থাকে মাঝে সাঝে’।

-‘বেশ। এছাড়া আপনার আর কোনো আত্মীয় স্বজন?’

-‘দিল্লিতে এক পিসি থাকেন বলে শুনেছি। তার সঙ্গে আমার সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই’।

-‘থ্যাংকস। আর একটা কথা। ড.দাস যদি প্রোফেসার বাগচির উপর কিছু লিখে থাকেন আর দু দিনের জন্য আমাকে সেটা দিলে আপনার যদি কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে ওটা…’

-‘সিওর। আমি কালই ওটা আপনাকে পাঠিয়ে… না কাল না, আজই। আপনি একটু আমার ফ্ল্যাট দিয়ে গাড়িটা ঘোরালে আমি দিয়ে দেব। আর ওটা আমার তেমন কোনো কাজে লাগবে না। আপনি দু দিনের বেশিও রাখতে পারেন’।

-‘বেশ। তাহলে কেসটা আমি নিচ্ছি। তবে কোনো পরিস্থিতিতেই কেস ইউথড্র করার কথা কিন্তু বলবেন না’।

Pages ( 2 of 10 ): « এর আগে1 2 34 ... 10তারপর »

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post ছায়া শরীর | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | কেয়া চ্যাটার্জী | Bengali Thriller Story | 9F10
Next post দক্ষিণ বাড়ির গুপ্তধন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | মৌসুমী দাশ | Bengali Murder Mystery Story | 9F10