ডায়রির ভাঁজ থেকে | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | অয়ন সাঁতরা | Bengali Murder Mystery Story | 9F10
0 (0)

Getting your Trinity Audio player ready...

গতকাল দিশার ফ্ল্যাট থেকে ড.দাসের লেখা ডায়রি নেওয়ার পর মিতাকে বালিগঞ্জে নামিয়ে দিয়ে অংশু যখন বাড়ি ফিরেছে তখন প্রায় রাত ন টা। অংশু ভেবেছিল বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথেই মা হাঁ হাঁ করে ছুটে আসবে, কারন সকাল বেলা বেড়োনোর সময় এটা বলা হয়নি যে ফিরতে একটু রাত হবে। কিন্তু তা হল না। মা ও কিছু বলল না বাবাও না। শুধু খাওয়ার সময় বাবা একবার গম্ভীরভাবে অংশুকে বলল –‘মিতার সঙ্গে কি আজকাল চিঠি-চিঠি খেলা চলছে নাকি?’ বাবার বলার ধরনে অংশুর প্রথমটায় বিষম লাগার জোগাড় হয়েছিল। তারপর মা হেসে ফেলে বলে –‘আরে তুই বেড়িয়ে যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই তোর বাবা লেটার বক্সে দেখে তোর নামে একটা চিঠি। তাতে আবার স্ট্যাম্প ফ্যাম্প কিছু লাগানো নেই। ঠিকানাও নেই। তখনই বুঝলাম ওই চিঠি কে দিতে পারে। দাঁরা, খেয়ে উঠে চিঠিটা নিয়ে নিস। আমার ড্রেসিং টেবিলের উপর পরে আছে’। মা আরো কিছু সুক্ষ রসিকতা করছিল ঠিকই, কিন্তু অংশুর চিঠির প্রসঙ্গটা শোনা থেকেই মনের মধ্যে অন্য সন্দেহ দানা পাকিয়ে উঠেছে। ওর মন বলছে ও চিঠি কিছুতেই মিতার নয়। আর এই যুগে বাধ্যতামূলক কিছু অফিসিয়াল কাজ ছাড়া চিঠি কেউ কাউকে লেখেনা। সুতরাং…

অংশু যা ভেবেছিল তাই। স্রেফ একটা হুমকির চিঠি। কোনো কথা অবশ্য লেখা নেই। কালো কালিতে শুধু একটা পেল্লায় সাইজের ক্রস চিহ্ন দেওয়া। চিহ্নটা প্রায় পুরো এ ফোর সাইজের পেজটাকে কভার করে গেছে। স্পষ্টতই এবার বঝা যাচ্ছে কাল রাতের ঘটনার নায়ক স্বয়ং দিশাকে ফলো করে সকালে অংশুর বাড়ি অবধি এসেছে এবং ওরা বেরিয়েয়ে যাওয়ার পর নিজেই লেটার বক্সে এটা ফেলেছে। চিঠিটা সযত্নে আবার খামে ভরে ড্রয়ারে রেখে দিল অংশু।

পরদিন সকালে অন্যান্য রবিবারের মত মিতা সকালবেলা দশটার মধ্যে এসে হাজির। প্রত্যেক রবিবারই লাঞ্চটা মিতা অংশুর বাড়িতে করে। তারপর বিকেল অবধি আড্ডা। কখনো কখনো সন্ধ্যেবেলা মার্কেটের দিকে যায়, নয়তো ইভনিং শোতে সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরে যায়। আজ মিতা আসার সঙ্গে সঙ্গেই অংশু বলল –‘চল। আজ বাইরে লাঞ্চ করব’। এমনটা কোনো দিনই হয়না। অন্য যেকোনো দিন বাইরে খাবার খেলেও রবিবার লাঞ্চটা ওরা বাড়িতেই করে। কাজেই প্রস্তাব শুনে মিতা প্রথমটা ভুরু কুঁচকে তাকায়। তারপর অবশ্য অংশুর ইশারা বুঝতে পেরে বলে –‘ফাইন। আজ বাইরে কোথাও গেলেই হয়। কোনো দিনও যাওয়া হয়না। আন্টি, তোমরাও বরঞ্চ আজ কোথাও থেকে ঘুরে এস না… একদিন একটু আলাদা রকম হতেই পারে’।

জানালার কাচটা খুলে হাওয়া খাচ্ছিল মিতা। হঠাত করে পাশ দিয়ে একটা লরি যাওয়ায় হাওয়া খাওয়ার দফা রফা হল। চট জলদি কাচটা তুলে দিল মিতা। অংশু মিতার দ্রুত কাচ তোলার ভঙ্গি দেখে হেসে ফেলে। মিতা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকায় অংশুর দিকে। তারপর বলে –‘তোর সঙ্গে তো কথাই বলব না। আগে থেকে কিছু বলা নেই কওয়া নেই, হঠাত করে ‘আজ বাইরে খাব’! কোনো মানে হয়? আর আন্টি নেহাত কিছু বলল না তাই…’

-‘আমি জানতাম মা কিছু বলবে না। আর তাছাড়া আগে থেকে আমি নিজেই কছু ভেবে রাখিনি। হঠাত করেই প্ল্যানটা করেছি’।

-‘কি প্ল্যান সেটা শুনতে পারি? জানিও তো না কোথায় যাচ্ছি। হাউ ইন্টারেস্টিং!’

-‘প্রোফেসারের শ্বশুরবাড়ি’।

-‘হোয়াট? প্রোফেসারের শ্বশুর বাড়ি? কেন?’

-‘কারন আছে’ বলে একটু চুপ থেকে তারপর বলে –‘কাল দিশার কাছ থেকে তো গাড়িতে সবটাই শুনেছিলি। মনে আছে, এক জায়গায় উনি বলেছিলেন যে গ্রামের লোক এক্সাক্টলি বলতে পারেননি প্রোফেসার বাগচির স্ত্রীর কথা। মানে, প্রোফেসারের রাঁচি যাওয়ার পর সেই যে ওনার স্ত্রী বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন, তারপর কি হয়েছে না হয়েছে গ্রামের পুরোনো লোকেরা সেটা জানে না। মনে আছে?’

-‘হ্যাঁ। মনে থাকবে না কেন?’

-‘অথচ ড.দাসের লেখায় প্রোফেসারের শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা নোট আছে। তারমানে উনি নিশ্চয়ই জানতে পেরেছিলেন প্রোফেসারের স্ত্রীর বাকি জীবনের কথা। আর বাকি জীবনের কথা জানতে পারলে এটাও জানতে পারার কথা যে সেই বাকি ডায়ারিগুলো প্রোফেসারের স্ত্রী কোথায় পেলেন? বা আদৌ ওই ডায়ারি রাখতেই পোনেরো বছর পর একদিনের জন্য সেগুলো রাখতে এসেছিলেন কিনা?’

মিতা বড় বড় চোখ করে বলল –‘রাইট’।

-‘হুম, এবার একটা ‘রং’ এর গল্প শোন’

-‘কি? রং এর গল্প? মানে?’

-‘কাল রাতে একটা নিমন্ত্রন পত্র পেয়েছি। কেসটা চালিয়ে যাওয়ার নিমন্ত্রন পত্র’।

-‘কিরকম?’

-‘একটা ক্রস আঁকা এ ফোর সাইজের পেজ কেউ ডাক বাক্সে ফেলে গেছে’।

-‘মাই গড। এটা তো কেউ ইয়ারকি করে করেছে বলে মনে হয়না’।

-‘মনে হতে দিবিও না। কারন আমি ড্যাম সিওর যে এটা পোরশু রাতের নায়কেরই কাজ’।

-‘ও পোরশু রাতের কথায় মনে পরল। কাল তো খুব ঝুঁকে পরে পুকুর পারে কি দেখছিলি। কিছু থিওরি দাঁড় করালি?’

-‘না আপাতত সেরকম কোনো থিওরি দাঁড় করাইনি। তবে যেটুকু মনে হচ্ছে, তা এইরকম, দু’জন ছিল, একজন নয়। তবে কোনো ডুয়েল নয়। একজনই দুটো গুলি চালিয়েছে। আর সম্ভবত শেষ গুলিটা চলার পর যাকে উদ্দেশ্য করে গুলি করা হয়েছে সে পুকুরে পড়ে যাওয়ায় গুলি চালনকারী ওখান থেকে চম্পট দেয়। কিন্তু যাকে গুলি করা হয়েছিল, সে যে মরেনি তা তো বোঝাই যাচ্ছে’।

-‘আর ওই কেয়ারটেকার ছেলেটা?’

-‘ওকে তো ধরতেই হবে। পুলিশ কি জেরা করে ওকে ছেড়ে দিয়েছে কে জানে?’

    মিছরিপুরের আগেই প্রোফেসারের শ্বশুর বাড়ি। দরজায় কড়া নাড়তে প্রথমে কাজের মেয়ে দড়জা খুলল। অংশু তাকে বলল –‘আমরা কাগজের অফিস থেকে আসছি। তোমার বাবুকে একটু ডেকে দাও’। কাজের মেয়েটা পাঁচ মিনিটের মধ্যে একজন মাঝ বয়সি ও একজন বৃদ্ধকে এনে হাজির করল। অংশু বলল –‘আমরা একটা পত্রিকা অফিস থেকে আসছি। প্রোফেসার বাগচির উপর…’ এতটা বলার পরেই বুড়ো লোকটা তেড়ে মেড়ে এল। বলল –‘এখন খুব প্রোফেসার দেখানো হচ্ছে। ক’মাস আগেও তো একটা লোক ওই কাগজের আপিস থেকে আসছে বলে সব নারি নক্ষত্র জেনে নিয়ে গেল। আর একটা কথাও আমরা খরচ করব না। কেন? তোমাদের ওই পাগলা প্রোফেসারের জন্য যখন আমাদের বাড়ির মেয়ে এখানে ফিরে আসার দু দিন পরেই জলে ডুবে মরল তখন সেই প্রোফেসার কোথায় ছিল? এখন আবার তাকে নিয়ে লেখালেখি, আদিখ্যেতা। অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করে…’ বুড়ো আরো মারমুখি হয়ে উঠতে যাচ্ছিল, মাঝ বয়সি ছেলেটা তাকে সামলে নিয়ে অংশুদের হাত জোড় করে বেড়িয়ে যেতে নির্দেশ দিল।

‘অদ্ভূত লোক রে বাবা। কুকুরের মত তাড়িয়ে দিল’ গাড়িতে ওঠার পর বেশ খানিক্ষন গম্ভীর হয়ে থাকার পর মিতা বলল। মিতার এই কথায় অংশু আকাশ থেকে পড়ল। বলল –‘তুই শুধু তাড়িয়ে দেওয়াটা দেখলি? আর উনি কত বড় ইনফরমেশান দিলেন, সেটা দেখলি না?’

-‘ইনফরমেশান? আমি বুড়োর কোনো কথাই মন দিয়ে শুনিনি’।

-‘ঠান্ডা মাথায় ওনার ‘কুকুর খেদানো’ কথাগুলো শুনলেই এটা বুঝতে পারতিস যে আমাদের আগেও এই একই ভাবে ড.দাস ওনাদের কাছ থেকে প্রোফেসারের স্ত্রীর ব্যাপারে ইনফরমেশান নিয়ে এসেছেন’।

-‘ও হ্যাঁ। ফার্স্ট এ বলছিলেন যেন ওই রকম। ক মাস আগেও তো…ব্লা ব্লা ব্লা…’

-‘তারপর?’

-‘তারপর আবার কি?’

-‘প্রোফেসারের স্ত্রীর সুইসাইড টা?’

অংশুর কথা শুনে মিতা মাইন্ডটাকে একটু রিভাইন্ট করল। তারপর বিস্ময়ের সাথে অংশুর দিকে তাকিয়ে বলল –‘তাহলে প্রোফেসারের স্ত্রী সেজে কে গিয়েছিলেন গ্রামে?’

-‘তার চেয়েও বড় কথা কেন গিয়েছিলেন?’

…….

জ্বলন্ত সিগারেটটা অয়স্ট্রেতে চেপে ধরে সম্রাট দিশাকে বলল –‘গত শনিবার অরুনাভ এসেছিল বলে আমাকে আসতে বারন করেছিলি তাই না?’ দিশা এতক্ষন শুয়ে শুয়ে মুঠোফোনের পর্দায় আঙ্গুল চালাতে ব্যাস্ত ছিল, প্রথমে কথাটা ঠিক খেয়াল করেনি। তারপর খেয়াল হতে বিছানার উপর উঠে বসল।

-‘কি বললি? অরুনাভ ছিল মানে?’

-‘ছিল মানে ছিল। এই যেমন আমি থাকি’।

-‘হোয়াট ননসেন্স! অরুনাভর সাথে আমি লাস্ট স্যাটারডে প্রিন্সেপ ঘাটে গিয়েছিলাম এটা সত্যি। আর সেখান থেকে ও আমার ফ্ল্যাটে এসেছিল সেটাও ঠিক। বাট সবই দরকারে। আমি মোটেই ওর সঙ্গে প্রেম করব বলে ঘুরতে বেড়োইনি বা ঘরেও আনিনি’ এক নিশ্বাসে এতটা বলে তারপর সম্রাটের পাশে এসে কেটে কেটে বলল –‘এত ব্যাকডেটেড মেন্টালিটি কেন রে তোর? তোর সাথে প্রেম করি বলে অন্য কোনো ছেলে বন্ধু থাকবে না আমার?’ সম্রাট এবার চেয়ার থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, তারপর বলে –‘বন্ধু আর বিশেষ বন্ধুর মধ্যে তফাত করতে আমি জানি দিশা’।

-‘ফাইন। অরুনাভ আমার বয়ফ্রেন্ড। আর লাস্ট উইক ও আমার সাথে ছিল, যেভাবে তুই থাকিস। এবার খুশি?’

সম্রাট দিশাকে এক টানে নিজের খুব কাছে নিয়ে চলে আসে। তারপর হিসহিসিয়ে বলে –‘আই শ্যাল কিল হিম!’

কথাটা বলেই হনহনিয়ে বেড়িয়ে যায় সম্রাট। দিশা ডাকে পিছন থেকে, কিন্তু সম্রাট শোনে না। বৃষ্টির মধ্যেই বেড়িয়ে যায় সে।

বৃষ্টির বেগ প্রচন্ড। কান ফাটানো শব্দে বৃষ্টির ফোঁটা মাটিতে নেমে আসছে। তার মধ্যেই চলছে ধস্তা ধস্তি। একজনের রিভলভারের গুলি সোজা গিয়ে লাগল আরেকজনের বুকে। তারপর আবার একটা গুলি। এবারেরটা প্রথম জনকে গিয়ে বিদ্ধ করল। দুটো লাশ ভিজতে থাকল সারা রাত।

Pages ( 3 of 10 ): « এর আগে12 3 45 ... 10তারপর »

About Post Author

9F10 DA

Click to rate this post!
[Total: 0 Average: 0]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post ছায়া শরীর | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | কেয়া চ্যাটার্জী | Bengali Thriller Story | 9F10
Next post দক্ষিণ বাড়ির গুপ্তধন | পলক ফেলা নিষেধ 2023 | মৌসুমী দাশ | Bengali Murder Mystery Story | 9F10